
আজ কদিন থেকেই মানুষ কোরান্টিনে থাকছেন,বলতে গেলে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। বাড়িতে থাকতে থাকতে একঘেয়েমি গ্রাস করছে মানুষকে। বিশেষত পুরুষ মানুষ এবং বহির্জগতে কর্মরত নারীদের সবাইকে ঘরবন্দী থাকতে হচ্ছে। হাঁসফাঁস লাগছে।পুরুষরা কেউ কেউ সোস্যাল মিডিয়ায় মিম বানিয়ে বলছেন যে দয়া করে বাড়িতে বরকে শান্তিতে থাকতে দিন,ঝগড়া করবেন না।
বক্তব্যটা আজ তাদের নিয়ে যারা তিনশো পঁয়শট্টি দিনের তিনশো ষাটদিনেই হোম কোরান্টিনে থাকেন। মুসলমান পরিবারের মেয়ে হিসেবে তাই মুসলমান সমাজকে রোজ অনেক কাছ থেকে দেখি। এখান থেকে কয়েকটা চিত্র তুলে ধরছি,এই চিত্রগুলো অন্য সমাজ ও পরিবারেও যে পাওয়া যাবে না তা নয়,হয়ত অল্পকিছু হেরফের হবে।ধরুন, একটা পরিবারে একটা তেরো বছরের ছেলে ও একটা বারো বছরের মেয়ে আছে,ছেলেটি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে খেলার মাঠে যায় ব্যাট হাতে নিয়ে কিন্তু মেয়েটিকে বাড়িতে বসে থাকতে হয়, সে মেয়ে বলে বাড়ির বড়রা তাকে ন'বছর বয়স থেকেই বাড়ির বাইরে,মাঠে খেলতে মানা করেছে,অসহ্য গরমেও চূড়িদার আর মাথায় ওড়না চাপা দিয়ে থাকতে হবে তাকে সবসময়, অথচ ছেলেটি দিব্যি হাফ-প্যান্ট পরে,হাফ-হাতা টিশার্ট পরে তারই বয়সী বোন বা দিদিকে হুকুম করবে জল দিতে,খাবার দিতে,তার জামাকাপড়গুলো কেচে দিতে।এ তো গেল বাচ্চাদের কথা,এই পার্থক্যটা বড়দের ক্ষেত্রে আরও বড়। এখানে একটা পরিসংখ্যান বলে রাখি,আমাদের আশেপাশে মোটামুটি এগারোটা মুসলমান গ্রামে বড়জোর তিন-চারজন মেয়ে স্নাতকোত্তর আর গোটা সাত-আটজন স্নাতক উত্তীর্ণ মেয়ে পাওয়া যাবে,বাকিরা কিছুজন উচ্চমাধ্যকের পর পড়াশোনার ইতি টানে,কেউ মাধ্যমিকের পর। পরিসংখ্যান দিলাম এটা বোঝাতে যে মেয়েদের বাইরে যাওয়া বলতে ওই স্কুলটুকুই।কলেজে উঠলে অনেকে তো শুধু পরীক্ষার সময় যায়,ওদের ধারণা কলেজে শুধু প্রেম করতে যায় ছেলেমেয়েরা,পড়াশোনা হয় না সেখানে। তারপর সেইসব মেয়েরা,মহিলারা বাড়িতেই থাকবে,গ্রামে হয়তো কেউ কেউ নিকটবর্তী পুকুরঘাটে গিয়ে স্নান ও বাড়ির লোকের কাপড় কাচা সেরে আসবে। তারপর সারাদিন হোম কোরান্টিনে... না তারা পাড়ার দোকানে যেতে পারে না,ইচ্ছে করলেও ওই মাঠটায়,নদীর ধারটায় গিয়ে বসতে পারে না বিকেলবেলা। অথচ গ্রামের পুরুষরা পঞ্চাশোর্ধ হয়ে গেলেও দিব্যি হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলে,আর চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষমানুষটাও দুটো ছক্কা পিটে দেয় ব্যাট হাতে।আর অর্থ উপার্জন করার মতো কোনো কাজ সে বাড়ির বাইরে গিয়ে করতে পারবে না: পুরুষ মানুষদের,সমাজের তাতে বিধিনিষেধ।যদি কেউ সরকারি চাকরি পায় তাহলে ঠিক আছে কিন্তু সেটা হাতেগোনা দু'একজন ছাড়া কেউ পায় না তাই তাদের সবসময়ের জন্য জায়গা হল হোম কোরান্টিনে,গৃহবন্দী থেকে বাড়ির পুরুষের জন্য রান্নাবান্না,গৃহস্থালীর কাজ এসব করা। বাড়িতে ধর্মীয় নিষেধে টিভি থাকে না,আর যদিও কোনো মহিলার কাছে স্মার্টফোন থাকে তবে সেটাতে ফেসবুক খুলতে পারবে না,কারণ খারাপ মেয়েরা ফেসবুকে থাকে আর হোয়াটসঅ্যাপ খোলা থাকলেও সেটা চলবে পুরুষের তত্ত্বাবধানে। কেউ কেউ ফেসবুক খুললেও সেটাতে নিজের ছবি দেওয়া যাবে না,কিংবা নিজের ইচ্ছেমতো পোস্ট দেওয়াও চলবে না,প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা বলে রাখি তারা নিজের ইচ্ছেতে নিজের ভোটটাও দিতে পারে না,আমাদের এখানকার একটি গ্রামে মহিলাদের ভোট দিতেই দেওয়া হয় না। তাদের বাইরে যাওয়া বলতে কখনো-সখনো আত্মীয়বাড়ি আর ডাক্তারখানা, ওইটুকু। তাও সেটা একাএকা নয়, একজন পুরষসঙ্গী চাই।বৃদ্ধা কিংবা প্রৌঢ়ারা হয়ত কেউ কেউ একাএকা যাতায়াত করেন। নইলে সবার জায়গা ওই চারদেওয়ালের ঘর।
এখন যে 'শাহীনবাগ' আন্দোলনে মহিলারা সমর্থন পাচ্ছেন, লোকজন যে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু ওদের ওখানে আসাটাও কি এত সহজ ছিল? আমি দিল্লী যাইনি,পার্ক সার্কাসের মহিলাদেরও এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়নি। কিন্তু অন্য একটা জেলা শহরের এনার্সি বিরোধী সভায় দেখেছিলাম মুসলিম গৃহবধূরা তাঁদের পুরুষসঙ্গী পরিবেষ্টিত হয়ে বোরখা পরে এলেন এবং তাদের লিখে আনা বক্তৃতা দিলেন, তারপর সন্ধ্যা নামতে না নামতেই সভা শেষ হবার আগেই সঙ্গীদের সাথে হুড়মুড় করে বাড়ি চলে গেলেন। এখান থেকে চিত্রটা খুব পরিষ্কার, তারা বাড়ির বাইরে কতক্ষণ অবস্থান করবেন তা পুরুষরাই ঠিক করে দেবেন। এবং পুরুষরাই তাঁদের হোম কোরান্টিনে রাখবেন। তারপর নিজেদের স্বার্থ বিঘ্নিত হলে তাদেরকে নিয়ে এক আদিম চিড়িয়াখানা 'পরিবার'-এর অংশ করা হবে, তবুও তাদেরকে কোনোকিছু থেকেই আজাদী দেওয়া হবে না। তাই শাহিনবাগে তারা 'মনুবাদ সে আজাদী' স্লোগান দিলেও কখনই বলবে না যে 'শরিয়তি সে ভী আজাদী'।
Dolon | 162.158.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০০:২৮92076
সে | 162.158.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৩:১৭92078
অপু | 162.158.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৪:০৫92079
সোহান শরীফ | 162.158.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫৮92080
de | 162.158.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ২০:১৬92099
pathak | 172.69.***.*** | ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০১:২০92106
স্বাতী রায় | 172.69.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৪:৫০92133
abhijit roy | 162.158.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৬:১৬92136
r2h | 162.158.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪৯92138
Abhijit Roy | 162.158.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৭:০০92139
r2h | 162.158.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৭:০৫92140
Abhijit Roy | 162.158.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৫৫92141
r2h | 14.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ২৩:৫৮92496স্পষ্ট কথার জন্য লেখককে ধন্যবা।। ছবিটা মনে হয় একটু একটু করে হলেও পাল্টা।। আরো লেখার অনুরোধ রইল।
এপারেও গ্রাম থেকে শহরে খুব যে অবস্থার বদল হয়েছে, তা নয়। বরং সরকারি আস্কারায় মৌলবাদ আরও জেঁকে বসছে।
অন্য একটি লেখায় কল্লোল দা'কে বলেছিলাম, সেটাই আবার বলি।
বেশ আগের কথা। এক ছুটির দিনে আমি আর অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ মা টিভি নিউজ দেখছিলাম। খবরে কোনো একটি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিজাবী ছাত্রীদের বক্তব্য দেখাচ্ছিল।
হঠাৎ মা বলে উঠলেন, গরমের মধ্যে এরা কি সব পড়েছে রে!
আমি বললাম, মা, আমরা বোধহয় আবার পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছি।
মা সংগে প্রতিবাদ করে বললেন, নাহ, পাকিস্তান আমলে এসব গোড়ামী ছিল না। তখন সিরাজগঞ্জের মতো মফস্বলে কলেজে পড়ার সময় আমরা রীতিমতো স্লিভলেস ব্লাউজ পড়েছি, ছেলেমেয়ে একসাথে মঞ্চ নাটক করেছি, মিছিল মিটিং লেগেই থাকতো। এতো বোরখা, হিজাব, নেকাবের বালাই ছিল না!
সাবিহা,
আরও লিখুন। রোকেয়ার "অবরোধবাসীনি" রা যে ভেতরে ভেতরে বোরখা পোড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে সব লেখাও পড়তে চাই। শুভেচ্ছা
এপারেও গ্রাম থেকে শহরে খুব যে অবস্থার বদল হয়েছে, তা নয়। বরং সরকারি আস্কারায় মৌলবাদ আরও জেঁকে বসছে।
অন্য একটি লেখায় কল্লোল দা'কে বলেছিলাম, সেটাই আবার বলি।
বেশ আগের কথা। এক ছুটির দিনে আমি আর অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ মা টিভি নিউজ দেখছিলাম। খবরে কোনো একটি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিজাবী ছাত্রীদের বক্তব্য দেখাচ্ছিল।
হঠাৎ মা বলে উঠলেন, গরমের মধ্যে এরা কি সব পড়েছে রে!
আমি বললাম, মা, আমরা বোধহয় আবার পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছি।
মা সংগে প্রতিবাদ করে বললেন, নাহ, পাকিস্তান আমলে এসব গোড়ামী ছিল না। তখন সিরাজগঞ্জের মতো মফস্বলে কলেজে পড়ার সময় আমরা রীতিমতো স্লিভলেস ব্লাউজ পড়েছি, ছেলেমেয়ে একসাথে মঞ্চ নাটক করেছি, মিছিল মিটিং লেগেই থাকতো। এতো বোরখা, হিজাব, নেকাবের বালাই ছিল না!
সাবিহা,
আরও লিখুন। রোকেয়ার "অবরোধবাসীনি" রা যে ভেতরে ভেতরে বোরখা পোড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে সব লেখাও পড়তে চাই। শুভেচ্ছা
Du | 172.69.***.*** | ১৯ এপ্রিল ২০২০ ২২:০১92545