এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কাব্য

  • দুটি কবিতা

    অমিতরূপ চক্রবর্তী
    কাব্য | ০৭ এপ্রিল ২০২৩ | ৮৪২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)

  • চিঠি

    আমি যে জগতে ভাল আছি, সেই জগতে এখন সেদ্ধ ডিম দিয়ে চটকে ভাত মাখার নরম গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। বাইরে মাথার ওপরে যে অগাধ আকাশ, তাতে ছড়ানো জালের মতো মেঘ, একফাঁকে চাঁদ। চাঁদে কলঙ্কের ছাপ আছে, শুকিয়ে যাওয়া রক্তও আছে। আমি যে জগতে ভাল আছি, সে জগতে একটি শিশুর কান্না ধূপের ধোঁয়ার মতো লতিয়ে লতিয়ে উঠে হাজির বাতাসে ভেঙে মিশে যাচ্ছে। পিঠে ডোরাকাটা দাগ নিয়ে একটি নিজের মধ্যে মগ্ন মানুষ অপরিচিত কোনো স্থাপত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে বার্নারের সামনে। আমি যে জগতে ভাল আছি, সে জগতে এখন বিষণ্ণ আলো জ্বলছে। আর কয়েক ঘণ্টা পরে আমি যে জগতে ভাল আছি, সে জগত অন্ধকার এক সমুদ্রে ডুবে যাবে। শিশুর দেহাভ্যন্তর দিয়ে বয়ে যাবে সেই অন্ধকার সমুদ্রের জল আর একটি তৈলাক্ত পাথরে নগ্নদেহে দুটি উলঙ্গ মানুষ প্রেতের মতো চার হাত-পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে হৃদয় নিংড়ে বন্য পশুর মতো সঙ্গম করবে। সঙ্গমের পর অসাড় হয়ে শুয়ে থাকবে

    আমি যে জগতে ভাল আছি, সেই জগত থেকে তোমার জগত হয়তো- বা কাছেই। তবে অতোটাও কাছে নয় যাতে করে তুমি সঙ্গমের মুহূর্তে যেসব আওয়াজ, শীৎকার ছিটকে ছিটকে ওঠে- তা শুনতে পার। হয়তো এই দূরত্ব সহসা এক হাওয়া এসে একটি গাছকে দুমড়ে-মুচড়ে তার মরা, শুকনো পাতাদের যতদূর উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে- ততটুকু। সশব্দে ঝলসে একপ্রস্ত বিদ্যুৎ কালো প্রেক্ষাপট ছেড়ে বেঁকেচুরে যে দূরত্বে নেমে যায়- ততটুকু। এই ধারণা আমার একদিন একাকী রাতে উঁচু-নিচু নির্জন একটি মাঠ পেরিয়ে আসতে আসতে হয়েছিল। মলত্যাগ শেষে জীবনে ফিরে আসার সময়ে হয়েছিল। আমি যে জগতে ভাল আছি, সে জগতে এভাবেই সব ধারণা, সব অনুমান বা উপলব্ধি ধীরে ধীরে শাখা-প্রশাখা মেলে দেয়। আমি যে জগতে ভাল আছি, সে জগতে বাইরের ঘরে কী কাজের জন্য দেশলাই বা তেমনই কিছু কুড়িয়ে নিতে এসে দেখি, ঘরের বাতাসে সেই সাবেক চিড়িয়াখানার মতো কেমন নোনা নোনা বোটকা ঘ্রাণ

    বাইরে আকাশে তখন জাল জাল মেঘ। তার একফাঁকে চাঁদ। চাঁদে কলঙ্কের ছাপ আছে, শুকিয়ে যাওয়া রক্তও আছে

    তোমার চোখের দিকে তাকালে

    তোমার চোখের দিকে তাকালে দেখতে পাই স্বচ্ছ জলের নীচে কবেকার পুরোনো শ্যাওলা নড়ছে। নুড়িপাথরে হামা দিয়ে কোথাও, কোনো গন্তব্যে এগিয়ে গেল একটি রঙিন কাঁকড়া। পিচ্ছিল পাথরেরা যেন তাদের বংশপ্রদীপ নিয়ে বসে আছে। চোখ সরিয়ে নিই। কয়েক পা পিছিয়ে যে আয়ত দেওয়াল সময়েরও অতীত, তার কাছাকাছি চলে আসি। হয়তো-বা এমন স্থির বায়ুর জগতে কিছুটা মনোরম শব্দ তুলে বসার আসনে বসেও পড়ি। বসার আসনে পুরনো একটি চাদর। তার গায়ে প্রকাণ্ড হিংস্র ফুলের মতো ছাপ। সুতোর বুনোট কঠিন। আমি ক্লান্ত মানুষের মতো নিঃশ্বাস ফেলি। এইসব দেহকে শূন্য করে বেরিয়ে আসা নিঃশ্বাস এই উড্ডীন, আমুদে ছাতার মতো এই একটি দিনের আলোয় নিতান্ত শিশুর মতো মিশে যায়। কখনো তুমি হাসো। যেন ঠিক বুঝতেই পারলেই না, কী এমন বিদ্যুতের রেখা আমার শরীরকে ফুঁড়ে দিয়ে পাতালে মিলিয়ে গেল। আপাতদৃষ্টে সবই তো শান্ত। প্রত্যহের মতোই গোছানো, অভিনবত্বহীন। সেই এক দুই বৃদ্ধার মতো দরজার অবস্থান। লোহার জালের ওপারে মুক্ত শৃঙ্খলার মধ্যে পাখি, লম্বাটে ধরনের গাছ। সেই মুহূর্তে কেউ কেউ হয়তো পৃথিবীকে শাসন করার জন্য অনাঘ্রাত বরফে পা রাখছে, কেউ কেউ হয়তো মুখোমুখি ব্যক্তিটির সামনে কী বলবে তা বুঝতে না পেরে আনত হয়ে আছে। এই তো, এই তো পৃথিবী। প্রত্যহের মতোই গোছানো, অভিনবত্বহীন

    চাদরে প্রকাণ্ড হিংস্র ফুলের ছাপ। আমি ভাবি এরা যেন সব উপবিষ্ট মানুষকেই কিছু একটা বলতে চায়। হতে পারে তাদের মুখের ভাষা চিরদিনের মতো মুছে দিয়েছে কেউ। সযত্নে জিভটুকু তুলে প্রাণভিক্ষে দেওয়া হয়েছে। ঠেলে দেওয়া হয়েছে এক যুগ থেকে অন্য যুগে। মৌটুসি পাখির মতো তুমি বলে ওঠো ‘শোনো না, একটু বসো। আমি এখুনি আসছি। চা তো নিশ্চয়ই খাবে? একটু অপেক্ষা কর লক্ষ্মীটি!’ আমি দেখি তুমি সেই যে কোটি কোটি বছরের অনাঘ্রাত তুষার, তা ভেঙে কোথাও চলে যাচ্ছ। তুষারে চেনা জিনিসের মতো পায়ের ছাপ পড়ছে তোমার। আমি এক ঘোলা অচৈতন্যের মধ্যে বসে থাকি। হয়তো সেই কাঁকড়ার মতো হামা দিই, শ্যাওলার মতো নড়ি, ভাসি। পিচ্ছিল পাথরেরা তাদের বংশপ্রদীপ নিয়ে বসে আছে। তাদের ঝুলো চিবুকের সামনে গিয়ে প্রশ্ন করি ‘বড়োটির বয়েস কত হল? অবিকল যেন আপনারই ছাদ পেয়েছে।‘ কী দিন, কী দিন এইসব! জালের ওপারে মুক্ত শৃঙ্খলার পাখি, লম্বা লম্বা দোহারা চেহারার গাছ। এদের আড়ালে গিয়ে কেউ কাঁদে, এদের মধ্যে কেউ শুয়ে অন্তর্হিত হয়ে যায়। ধরো, ঠিক সেই ঘটনার আগে ওদের সামনে দাঁড়িয়েছিল তোমারই মতো কেউ। সেই লতাবল্লরী ঠিক তোমারই মতো বুঝতে পারেনি কোন এমন বিদ্যুতরেখা তাদের শরীর ফুঁড়ে পাতালে মিলিয়ে গেল। আপাতদৃষ্টে সবই তো শান্ত। শেয়ালের আত্মা তখনো কোথাও নেই


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কাব্য | ০৭ এপ্রিল ২০২৩ | ৮৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন