এই ভীরু মৃৎপাত্রে
এই ভীরু মৃৎপাত্রে তুমি যখন নতুন ধূপের মতো সতেজ, সুন্দর ফুলগুলি সাজিয়ে রাখ, চারপাশে যখন অতিকায় তাঁবুর মতো ভোররবেলা নামে, রাস্তায় মানুষের টুংটাং শব্দ দুলে ওঠে, অদ্ভুত সব নিশ্চুপ বাড়ির গর্ভে খলবল করে ওঠে অতিবাহিত জীবন, তোমার লম্বা, তন্বী হাতের শেষে যখন চোখে পড়ে দরজার মাথায় সেই কবেকার পুরোনো একটি চিত্রলিপি, তখন জমাট শূন্যতা আমার নড়ে ওঠে। চারপাশে দেখি অপরূপ ভোর। যেন একদল স্কুলপড়ুয়া কিশোরীর সমবেত উষ্ণ, অনুরাগমাখা হাসি। ঘরের মেঝেয়, দেওয়ালে তোমার দৃঢ় শরীরের ছায়া সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে ভেঙেচুরে পড়ে। সে ছায়া তখন শীতল। ফুলগুলি সাজিয়ে তুমি ধীরে হেঁটে যাও আরেক প্রান্তে, আরও কিছু এই স্বয়ম্ভুব ভোরের মৃদু, শান্ত কাজে। আমি নীল, বিহ্বল চোখে তোমার ধীরে হেঁটে যাওয়া দেখি। দেখি কীভাবে তোমার দৃঢ় শরীরের ছায়া বিছানা, আসবাব, কাঠের পুতুল পেরিয়ে তোমার সঙ্গে সঙ্গে চলে। কখনো রাস্তায় মানুষের টুংটাং শব্দ শুনি। কী এক আবেগে আমার কান্না পায়, গা শীত শীত করে ওঠে। এই ভীরু মৃৎপাত্র ভরে কী এক সাদা পদার্থ যেন, যেন ঘন দুধের মতো উথলে উঠতে চায়
আমারও ত্বকে সেই অপরূপ ভোরবেলার আলো। কাচের জানালা দিয়ে আসে। ভোরবেলা, ভোরবেলা তখনো অসংখ্য মানুষ ঘুমিয়ে আছে, ভাবি আমি। পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে আছে। ইটের নোনায় পোকারা উড়ছে, নর্দমার শীর্ষে প্রজাপতি। এমন অস্ফুট আধো ঘুম, আধো জাগরণের ভোরে শুধু তুমি কী অদ্ভুত প্রাণবন্ত। কোষ্ঠে, পাঁজরে নির্মল। দু’পায়ে ঢলোঢলো ঘেরের পাজামা, আঁটো কামিজে সোনালি সুতোর কাজ। তোমার ভেতরে এখন কোনো ব্যথা- যন্ত্রণা নেই, অস্বস্তি নেই। এই যে এখন তুমি ভোরের দিকে চেয়ে হাতে এক কাপ চা নিয়ে অনন্ত, সুদূর বসে আছ, তোমাকে ঘিরে এই ছাদের নীচে কী এক স্নেহের কারণে অযুত শিশিরে বোনা কুয়াশার ঢল নামছে, আমি নীল, বিহ্বল চোখে সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে আরও এক হাওয়ার মধ্যে ডুবে যাই। কত মানুষ এখনো ঘুমিয়ে আছে। ধূর্ত, নরমাংসখাদকেরও এখন শিশুর মতো মুখ। পাশে স্ত্রী, সন্তান। ঘাটে বাঁধা সব কাজের নৌকো। একটি সফেদ ফুলের গাছ থেকে কখনো ফুল, কখনো শুকনো পাতা টুপ করে খসে পড়ছে। এরা কারা? তুমি কি এদের অস্তিত্বের কথা জান? তুমি চা হাতে ভোরের দিকে তাকিয়ে রয়েছ
নীরবে। একখণ্ড পাথরের মতো তাকিয়ে রয়েছ