এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সোহারাব হোসেনের 'সওকাত আলির প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি' উপন্যাসের আলোচনা

    PURUSATTAM SINGHA লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ মে ২০২৫ | ২২ বার পঠিত
  • মুসলিম আত্মপরিচয় সংকটের মধ্য দিয়ে এক মানবিক আখ্যান
    পুরুষোত্তম সিংহ

    বহুত্ববাদী ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতি, খাদ্যাভাস, রুচির দেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দেশ আত্মাকে স্পর্শ করতে চেয়েছেন সোহারাব হোসেন ‘সওকত আলির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি’ (২০০৯) উপন্যাসে। যুগ যুগ ধরে এদেশে বিবিধ জাতি, ধর্ম, সংস্কৃতির সম্মিলনে বিভেদ, অসহিষ্ণুতায় ভাঙন যে ধরেনি তা নয় তবুও ভারতীয় কোথায় যেন এক ছিল, টিকে ছিল। কিন্তু দেশভাগ পরবর্তী বিশেষ রাজনৈতিক দলের উত্থানে ধর্মীয় বিভাজনের সীমারেখা এমন ঊর্ধ্বগতিতে তরান্বিত হল যে আজ সমগ্র দেশ বিপন্ন, সমগ্র দেশ আত্মপরিচয়ের সন্ধানে ভুগছে। আজ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে দাঁড়িয়ে কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ধর্মের নামে এমন ন্যারেটিভ গড়ে দিচ্ছে, কাউকে পাশে রাখতে গিয়ে অপরাধকে এমনভাবে আড়াল করছে, এমনকি মিডিয়া সত্য-মিথ্যার যাচাইয়ের বদলে নিরপেক্ষতার ভান করে স্পষ্টত পক্ষ নিয়ে যে কৃত্রিম ন্যারেটিভ গড়ে তুলছে তা হিন্দু-মুসলিম নয় প্রকৃতপক্ষে ধর্মকেই সন্দেহের বেড়াজালে ফেলে দিচ্ছে। প্রকৃত ধার্মিক, যিনি সারাজীবন প্রত্যয়শীলভাবে শুধু আপন ধর্মকেই পালন করে গেছেন, অন্য ধর্মকে হেয়, লাঞ্চিত, বিকৃত কিছুই করেননি তিনি চরম সংকটে পড়ে গেছেন। প্রত্যেক অঞ্চলের সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘুকে আক্রমণ করছে, সন্ত্রাসবাদের নামে মুসলিম বিরোধিতা, আক্রমণের বদলে সহনাগরিকের প্রতি বীভৎস ক্রোধ, বক্র দৃষ্টিতে সামাজিক স্থিতাবস্থাকেই ভেঙে ফেলেছে। এই বিপন্ন সময়ে সংখ্যালঘু মুসলিমের করণীয় কী বা সংখ্যাগুরু হিন্দুরই করণীয় কী? সোহারাব হোসেন দৃঢ় প্রত্যয়ে, সংবেদনশীল চিত্তে, যথার্থ কার্যকারণ শৃঙ্খলে উত্তর খুঁজেছেন ‘সওকত আলির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি’ আখ্যানে।

            আখ্যান শুরু হয়েছে বৈঠকী রীতিতে। মোজাফফর, মোস্তক, ইতিকণা, রেজাউল, প্রভাতী, সামাদ, জয়ন্তরা তর্ক-বিতর্ক, সমালোচনা, যুক্তিতর্কে মেতেছে। ধর্মীয় উদার-অনুদার, গ্রহণ-প্রত্যাখ্যান, সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে কোন ধর্ম বেশি উদার, এমনকি তার ছিদ্র কোথায় তা নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে বাদ-বিবাদ চলছে। হিন্দু এলাকায় মুসলিম ভাড়াটের সমস্যা, মুসলিম বাড়িতে হিন্দু কি ভাড়াটে হিসেবে যাবে? আবার মুসলিম পুরুষ হিন্দু নারীকে বিবাহ করেছে, কিন্তু হিন্দু পুরুষ কি মুসলিম নারীকে বিবাহ করেছে? না মুসলিম নারী সমাজ বিচ্যুতির ভয়ে যায়নি? হিন্দু নারী কি মুসলিম নারীর থেকে বেশি প্রগতিশীল? কে উদার, কে অনুদার? কে গ্রহণে সমর্থ, কে ভীরু, কে নির্ভিক? কে সমাজত্যাগের ভয়ে পিছিয়ে এসেছে? মোজাফফর, ইতিকণা, মোস্তাক প্রত্যেকেই প্রত্যেকের যুক্তিকে কাউন্টার করছে, যুক্তির বিরুদ্ধে বক্তব্য সাজাচ্ছে। আসলে তারা সমস্যার অন্তর্গহ্বরে পৌঁছতে চাইছে। কেউ উত্তেজিত, কেউ নিস্পৃহ নির্বাক। তারা এই যে আলোচনা করছে এর দ্বারা স্পষ্টতই বোঝা যায় ভাঙন একটা ধরেছে। যে ফাটল দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘদিনের সামাজিক স্থিতাবস্থা ভেঙে যাচ্ছে।

            একই পরিবারে কেউ ধর্মান্ধ, কেউ ধর্ম নিরপেক্ষ উদার। কারণ কী? মানবিক বোধ চেতনার জন্ম হয় কোথা থেকে? গ্রন্থপাঠ, শিক্ষা না পারিবারিক চেতনা? যদি পারিবারিক চেতনা ধরি তবে মোজাফফর, মোস্তাকের পিতা শিক্ষক সওকাত আলি উদার, মানবিক, ধর্মীয়ভাবে প্রাজ্ঞ এক মুসলিম। তাঁর দুই পুত্রের বড় পুত্র মোজাফফর উদার, মানবিক, ছোটপুত্র আপাতভাবে ধর্মান্ধ। ধর্মান্ধ বলা ভুল, মুসলিম ধর্মীয় বেশকে সে সত্য বলে মানে। একি প্রাপ্ত-অপ্রাপ্তির লড়াই? প্রেম প্রেমহীনতার লড়াই? সংখ্যালঘু জাতি বরাবরই অপ্রাপ্তির স্বীকার। তাই মনে ক্লেদ, যন্ত্রণা, ভিন্ন ধর্মের প্রতি বক্র দৃষ্টি আছে। সেই ধর্মের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ অপ্রাপ্তি, বিভেদ ভুলে শূন্যতাকে বরণ করে মানবিকতার জয়গান গেয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের বুকে ঝরনা থাকে। কিন্তু সেই ঝরনা সর্বদা দেখে যায় না। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির লড়াই নিয়ে বৃদ্ধ সওকাত আলি যৌবন থেকেই দুই পুত্রকে নানা নৈতিক শিক্ষা দিয়েছেন। গ্রহণ-প্রত্যাখ্যানের ভাষ্যে দুই পুত্র গেছে দুই মেরুকরণে। বড় পুত্র মোজাফফর উদার মানবতাবোধে ধর্মের ঊর্ধ্বে সম্প্রীতির সত্যে বাঁচছে। ছোটপুত্র মোস্তক সাচ্চা মুসলমান হওয়ায় আপাতভাবে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদীচক্রে ডুবে যাচ্ছে। গোটা পৃথিবীর উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ আজ মুসলিমকে ব্যবহার করছে। মুসলিম হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসবাদের ধর্ম। বয়ানে পাই—
    “দেশজোড়া, শুধু দেশ জোড়াই-বা বোলি ক্যান, দুনিয়াজোড়া যে উগ্রবাদী চক্র ধর্মকে ব্যবহার কোরে ইসলামের গায়ে কলঙ্ক লাগাতে চাইছে, লাগিয়ে মুসলমানদের গায়ে কলঙ্কের ছাপ্পা মেরে দিচ্ছে, মোস্তাক কি তালে তাদের খপ্পরে পোড়লো আব্বা?” (সওকাত আলির প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি, সোহারাব হোসেন, মিত্র ও ঘোষ, প্রথম প্রকাশ, বইমেলা ২০০৯, পৃ. ২৩)
    এই উগ্রবাদী, সন্ত্রাসবাদীদের হাত থেকে মুসলিমকে বাঁচাবে কে? জীবন, সমাজ, সভ্যতার অপ্রাপ্তিতেই কি এই উগ্রতা, জেহাদে ডুবিয়ে দিচ্ছে? জানে না পিতা সওকাত আলি, পুত্র মোজাফফর। তবে জানে পরিণতি ভয়ংকর। যার জন্য গোটা পরিবারকে দোষী হতে হবে, জেলে যেতে হবে।

            সচেতন মানবিক সম্পন্ন সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবারের সন্তান মোস্তক এমন উগ্রবাদী, জেদি, একরোখা, বেপোয়ারা মুসলিম হয়ে উঠল কেন তা নিয়ে পরিবারের সকলে চিন্তিত। এর উৎস কোথায়? অপ্রাপ্তি, সুখহীনতা, সংখ্যাগুরু দ্বারা প্রত্যহ প্রত্যাখ্যানের ভাষ্য না অন্যকিছু? নাকি চেতনাহীনতা? ব্যক্তির চেতনাও দুইভাগে বিভক্ত। একটি সদা কার্যকারী, চিন্তাশীল, অন্যটি সুপ্ত, মগ্ন। সওকাত আলির কাছে তা ঝরনা স্বরূপ। প্রতি পাহাড়েই ঝরনা আছে কোনটি দেখা যায়, কোনটি দৃশ্যহীন। আবার ব্যক্তির মগ্ন চৈতন্য কখন কার্যকারী হয়ে উঠবে ব্যক্তি নিজেই জানে না। দশদিন পর গৃহছাড়া মোস্তক ফিরে আসে। বুঝতে পারে সেই পথ সম্পূর্ণ ভুল। সেখানে মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ বিকৃত করে ভিন্নপথে চালনা করা হয়। আখ্যান যত এগিয়ে যায় তত বোঝা যায় মোস্তকের লড়াই উগ্রবাদী, সন্ত্রাসবাদী লড়াই নয়। নিজেদের বঞ্চনা, নিপীড়ন, শূন্যতার বিরুদ্ধে লড়াই। সে লড়াইয়ের পথ অনির্দিষ্ট। দীর্ঘদিনের সংখ্যাগুরুর শাসনে সংখ্যালঘু তার অপ্রাপ্তি নিয়ে যে লড়াই করেছে তা নানাসময়ে নানাভাবে বাঁক নিয়েছে। কখনো স্বার্থবাজ, ধর্মান্ধ মানুষ তাকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, তার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো যোগ নেই। বরং কোরান নিরাপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুকে ঘৃণা করেছে। তবে গোটা বিশ্বের সন্ত্রাসবাদীরা ইসলাম হল কেন? কিছু ধর্মান্ধ, উগ্রবাদী, স্বার্থবাজ মানুষ ইসলামকে সে কাজে ব্যবহার করছে। মুসলিম সমাজের পক্ষ থেকে সেই সন্ত্রাসবাদীদের প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি। মোস্তক বিরুদ্ধতার আন্দোলন গড়তে গিয়ে সে পথে অগ্রসর হয়েই বোঝে ভুল পথ। মানবিক, উদার চেতনাসম্পন্ন মুসলিম পরিবারের সন্তান মোস্তককে অন্ধবিশ্বাস, ভিত্তিহীনতা, দেশ দ্রোহীতা ও অকারণ বিদ্বেষে ডুবিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না। সে অচিরেই বেরিয়ে এসেছে—
    “দেশের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, তাই বোলো?’—আমি রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। বোলেছিলাম—‘জানেন তো দেশপ্রেম তো ইমানের অঙ্গ?’ এর বিরোধিতা ঠিক না। আমার কথা শুনে উনি বোলেছিলেন—‘এ দেশ সেদেশ নয় যার প্রেম ইমানের অঙ্গ।’ লিডারের কথা আমি মেনে নিতে পারিনি। আমার আজন্ম বিশ্বাস তো তা নয়। ফলে বেধে গিয়েছিলো তুমুল তর্কাতর্কি। ঘণ্টা দুয়েকের জন্য সমস্ত ট্রেনিং সিডিউল থমকে গেছিলো। ঐ ব্যাচে আমরা জনা পঞ্চাশেক ট্রেনিং নিচ্ছিলাম। সব্বাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো আমার বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি অ্যামন পর্যায়ে উঠে গেছিলো যে আমি টার্গেট হয়ে গেলাম।” (তদেব, পৃ. ৩৪-৩৫)

    এ উপন্যাসে যুক্তিতর্কের ভাষা আছে। বৈঠকী রীতিতে মোজাফফর-মোস্তাক নিজেদের ধ্যানধারণা, জ্ঞান, চেতনা থেকে যুক্তি সাজাচ্ছে। দেশকাল, ধর্ম, সমাজকে সামনে রেখে তর্কে বিতর্কে মেতেছে। কেউ আগে মুসলিম হয়ে ভারতীয় হতে চাইছে, কেউ আগে ভারতীয় হয়ে পরে মুসলিম হতে চাইছে। কেউ মুসলিম জাতিতত্ত্বে বিশ্বাস রেখে মুসলিমের উন্নতি চাইছে। কেউ বাঙালি মুসলিম, প্রান্তিক মুসলিমকে মূলস্রোতে ফেরাতে চাইছে। কেউ ধর্মের ঊর্ধ্বে গিয়ে ভাষাভিত্তিক, দেশকালভিত্তিক আদব কায়দায় বাঁচতে চাইছে, কেউ ধর্মীয় আদব কায়দায় বাঁচতে আগ্রহী। লেখক অত্যন্ত যুক্তিসংগতভাবে বাঙালি মুসলিমের আত্মপরিচয়ের সংকটকে ব্যক্ত করেছেন। কেউ ধর্ম পরিচয় হারিয়ে দেশের মূলস্রোতে ফিরতে চাইছে, কেউ ধর্ম পরিচয়ে বাঁচতে আগ্রহী। দুইভাইয়ের বয়ানে শুনতে পাই—
    “মোস্তাক গড়গড় বোলে যায়—আমাদের হতে হবে প্রথমত মুসলমান, দ্বিতীয়ত মুসলমান এবং তৃতীয়ত বাঙালি আর ভারতীয়।
    আমার ঠিক উল্টো মনে হয়। আমাদের প্রত্যেককে হতে হবে প্রথমত বাঙালি, দ্বিতীয়ত ভারতীয় এবং তৃতীয়ত মুসলমান।” (তদেব, পৃ. ৪১-৪২)

    তাই বলে মোস্তাককে দেশদ্রোহী বলা যায় না। সেও দেশকে ভালোবাসে। কিন্তু ধর্মপরিচয়কে বড় বলে জানে। মোজাফফর ধর্ম পরিচয় অপেক্ষা দেশমাতার সন্তান হিসেবে বাঁচতে উদগ্রীব। তাত্ত্বিক সত্যে, শিল্পের সত্যে বয়ানকে বরাবার টেনে নিয়ে গেছেন সোহারাব হোসেন। দেশের আত্মা, ধর্মীয় সুর কোনটাই তিনি বাদ দেননি। ঘৃণা করেছেন বিভেদ, মনের কলুষতা, খণ্ড দৃষ্টিকে। শিক্ষক পিতা সওকাত আলি বড় পুত্র মোজাফফরকে ভর্তি করেছিলেন বিদ্যালয়ে, ছোট পুত্র মোস্তাককে মাদ্রাসায়। বিশ্বাস ছিল দুই নদী দুই স্রোতে চলবে, কোনদিন মিলে যাবে মোহনায়। সেই মোহনায় স্বামী-স্ত্রী সওকাত-মরিয়াম নৌকা ভাসিয়ে স্বর্গসুখ অনুভব করবেন। কিন্তু মাঝে মাঝেই পুত্রদের মধ্যে বিভেদ, খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যাচ্ছে। তবে কি সওকাত আলির জীবনবিশ্বাস ভুল ছিল? না সন্তানদের জীবনচিন্তা, জীবনভাবনায় কোথাও ভুল ঘটে যাচ্ছে। বিভেদ ভুলে তারা নিজেরাই সতর্ক হয়। ভাবনাচিন্তার মাঠ কোথায় ক্ষুদ্র হয়ে আসছে, কোথায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, কোন ফাটল দিয়ে ধর্মান্ধ, বিদ্বেষী, উগ্রপন্থীরা মুসলিম রক্তে মিশে যাচ্ছে তা নিয়ে চিন্তামগ্ন হয়। সোহারাব হোসেন বাংলা কথাবলয়ের সেই মানবিক লেখক যিনি দেশজ ধারাকে সঙ্গী করে শিল্পের সত্যে পৌঁছতে চেয়েছেন। ধর্ম, বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে মানবিকতার মর্মবীণাকে মুসলিম চৈতন্যে বাজাতে সক্ষম হয়েছেন। মুসলিম সমাজ কোন পথে, কোন দাবানলে দ্রবীভূত হচ্ছে কোন নাশকতায় পা দিয়ে ডুবে যাচ্ছে তা চিহ্নিতকরণ করেছেন। শুধু চিহ্নিতকরণই নয় মুসলিমকে ফিরিয়েছেন শুদ্ধতার স্বরে, জীবনচেতনার সত্য আয়ুধে।

            সমস্ত সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য শিক্ষিত নিরপেক্ষ মানবিক দেশাত্মবোধক মুসলিমকেও আজ বাসে ট্রেনে কটু কথা শুনতে হচ্ছে। ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরের পেহেলগাঁ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন সরাসরি সামাজিক দিক থেকে বয়কট করা হয়েছে। সংখ্যাগুরুর তীব্র ঘৃণা, বিদ্বেষ, আগ্রাসী মানসিকতা, সংখ্যালঘুকে কটাক্ষ, ব্যঙ্গ, হিংসাত্মক বলে চিহ্নিত করার ঔদ্ধত্যের মধ্যে সামাজিক স্থিতাবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে। সংস্কৃতির যুগ্ম সম্মিলনের বদলে আধিপত্যের সংস্কৃতি, সংস্কৃতির একমুখী ইস্তেহারে দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হচ্ছে। আজকের এই অন্ধকার সময়ে মোজাফফর হয়ে ওঠে সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল মানবতাবাদী উদারচেতন, সম্প্রীতির সত্যে বিশ্বাসী শিক্ষিত মুসলিমদের প্রতিনিধি। যাদের শুধুমাত্র মুসলিম জন্ম পরিচয়ের জন্য অপরাধী করা হচ্ছে। মোজাফফর যথার্থ যুক্তিতে সন্ত্রাসবাদীর ধর্ম, শৃঙ্খল বর্ণনা করেছে। নিত্যযাত্রীদের ভিত্তিহীন বিতর্ক, অযথা ঘৃণা, কুযুক্তি তার বিশ্লেষণের কাছে উড়ে গেছে।

            মোজাফফর মোস্তাকের শিক্ষা ভিন্ন পরিকাঠামোয় হলেও জীবনচেতনায় কিন্তু তফাত নেই। দ্রোহচেতনায় প্রভেদ আছে। মোজাফফর কখনোই ক্রোধ, দ্রোহসত্তার প্রকাশ ঘটায়নি। মানবিকতা, মূল্যবোধ, ভালোবাসা দিয়ে সে জীবনচেতনার বিকাশ ঘটিয়েছে, সহনাগরিক হিসেবে দেশ, সমাজের ভালো চেয়েছে। মোস্তাকের মধ্যেও দেশচেতনা, সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতা থাকলেও সে নিজেকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখেছে। অপ্রাপ্তি, শূন্যতার আড়াল দিয়ে সে কখনো ক্রোধী হয়ে উঠেছে। মোজাফফরের জন্ম মুসলিম ঘরে হলেও সে স্বভাবে আচরণে বক্তব্যে চলাফেরায় মুসলিমত্ব নেই, একজন আটপৌর বাঙালি। মোস্তাক জাতিসত্তা, ধর্মসত্তাকে বিসর্জন দেয়নি। জীবনের ক্ষেত্রে দু’জনই সত্য। এক্ষেত্রে জরুরি সংখ্যাগুরুর দৃষ্টিভঙ্গি। সংখ্যাগুরুর কাছে মোজাফফর যতটা গ্রহণযোগ্য, ততটা নয় মোস্তাক। কেউ নিজের ধর্মসত্তা, জাতিসত্তা বিসর্জন না দিয়ে যদি দেশকে ভালোবাসে, স্বদেশের উন্নতি চায়, নিজের অধিকার লড়াইয়ের জন্য লড়ে তবে কি অন্যায়? রাজনৈতিক দলের তৈরি করা ন্যারেটিভ, সংখ্যাগুরুর একমাত্রিক ধর্মচেতনা, অন্যকে বাতিল করে দেবার উন্নাসিকতার মধ্য দিয়ে ভারতে এক নতুন ধর্মান্ধতার জন্ম হয়েছে। যা ভারততীর্থের মূল সুর নয়। অথচ একরৈখিক মনোভাব, অন্যকে হেয় করার কুৎসাবৃত্তি, এমনকি সমস্ত ভোগদখল নিজের দিকে টানার দুরারোগ্য ব্যাধির মধ্যে ভারত আত্মা দংশিত হচ্ছে।

            শিক্ষক সওকাত আলির সময়, সমাজ, মূল্যবোধ ছিল পৃথক। মনেপ্রাণে মুসলিম হয়েও ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে মুক্তমনা, উদার চিন্তা, প্রগতিশীল ভাবনায় ডুবে থাকতেন। সন্তানের সময়, সমাজ, মূল্যবোধ, রাষ্ট্রব্যবস্থা, শ্রেণিচেতনা পৃথক। সওকাত আমি একভাবে প্রগতিশীলতার কথা ভেবেছে, সন্তানরা ভিন্নভাবে। পথ আলাদা। সময় অন্তর পথ, সময়ের প্রত্যাশা পৃথক হয়ে গেছে। সন্তানদের কার্যকলাপ প্রতিবেশীদের কাছে সন্দেহজনক। সমাজ অতিক্রম করে গেলেও সমাজ যেমন মেনে নেয় না তেমনি ধর্মীয় গোঁড়ামিকে আঘাত করলে নেমে আসে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ। সওকাত আলির ভারত আর মোজাফফর, মোস্তাকের ভারতের কার্যকলাপের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। জীবনচিন্তাও তাই পৃথক। এই নব্য ভারতের কাছে সওকাত আলি কেমন যেন বাতিল মানুষ। কণ্ঠে ঝুলে থাকে বিষাদব্যথা—
            “ক্যান ক্যান? আমরা কি বাতিল ওদের কাছে? কিছু করার আগে কেউ আর জানায়ও না পর্যন্ত?
            হ্যাঁ তাইই। আমরা বাতিল। শুধু বাতিল না বোধহয় নষ্ট মানুষও। আমি নষ্ট-বাপ আর তুমি নষ্ট-মা!
            মানে?
    যে বাপ-মার সন্তান সুপথে চলে না, সুধারা সৃজন করেনা, তারা তো বাতিল। নষ্টই।—সওকাতের কণ্ঠে কান্নার রেণু এসে জড়ো হয়।
    এ কী হলো বলো তো?—হঠাৎ মরিয়ম গুমরে ওঠে।
    শুকিয়ে গেছে। দুই ধারা, দুই নদী, চোরাবালিতে পরিণত হয়েছে।
    মানে?
    মানি খুব সাংঘাতিক, নদী-অববাহিকায় গ্রাম গোড়ে ওঠে। সবুজ দানা বাঁধে। জীবন বেঁচে থাকে। কিন্তু নদীধারা যখন শুকিয়ে গিয়ে বাতিলে ভোরে যায়, তখন বুকে চোরাবালি ধারণ করে, তখন সে হয় নরঘাতী, প্রাণঘাতী। তোমার দুই ছেলে দুই চোরাবালি হয়ে গেছে মরিয়ম।” (তদেব, পৃ. ৭৮)

    সরকার রাজনীতির মঞ্চে মুসলিমকে ব্যবহার করছে। মুসলিমের দুঃখ দরিদ্র, বেদনা, বঞ্চনায় সহানুভূতি দেখিয়ে অতিরিক্ত কিছু পাইয়ে দিচ্ছে। কিছু কিছু মুসলিম নেতা হবার অছিলায় সমগ্র মুসলিমকে নাচিয়ে তুলছে। বিরোধী পক্ষ, সরকার পক্ষ সকলেই মুসলিমকে হাতে রাখতে চাইছে। স্থায়ী উন্নয়নের বদলে, দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের বদলে নানামাত্রিক ঘোষণা, ভাতা, সহানুভূতি সংখ্যাগুরুর চোখে মুসলিমকে শত্রু করে তুলছে। সরকার, রাজনৈতিক দল স্থায়ী উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বদলে মুসলিমকে ভোটের রসদে যত তোল্লা দিচ্ছে তত সংখ্যাগুরুর মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোজাফফরের বয়ানে পাই—
    “মানেটা পরিষ্কার। তারা ভাবছে সরকার অ্যাখন মুসলিম-তোষণে মেতেছে। সব কোরছে মুসলমানদের দিকে তাকিয়ে। ফলে পাল্টা ক্ষোভ জমছে তাদের মনে। এই ক্ষোভের ফল ভালো হবে না। সংখ্যাগুরু যদি দলবদ্ধভাবে কেবল হিন্দু-হিন্দু করে তো সব রসাতলে যাবে। তখন দাঁড়াবার মতো ভূমি পাবি না কোথাও। শুধু মুসলমান-মুসলমান করাটা ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীতই হবে!” (তদেব, পৃ. ৮৪)

    লেখক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভাঙনের কারণ খুঁজেছেন। বিশ্লেষণের পরম্পরায় মুসলিমরা কীভাবে ব্যবহৃত ব্যবহৃত হতে হতে পর্যুদস্ত হচ্ছে তার কারণ অনুসন্ধান করেছেন। পাইয়ে দেওয়া রাজনীতিতে মুসলিম সমাজের অগ্রগতি, আধুনিকতা আসতে পারে না। চাই শিক্ষা দ্বারা সমযোগ্য হবার লড়াই। প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সহনাগরিক হিসেবে বৃহত্তর জীবনে প্রবেশ, চাকরি ও মর্যাদা লাভের অধিকার। মোজাফফর, মোস্তাক কেউই সম্পূর্ণ সঠিক বা ভুল নয়। কিছু কিছু দিকে সঠিক, কিছু কিছু দিকে ভুল। ব্যক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে, সময়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে। প্রগতিশীলতার দুয়ার খুলতে গিয়ে অধিক প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পরে। বিভেদ ঘটে ভাইয়ে ভাইয়ে, হাতাহাতি হয়। দু’জনেই দু’জনের পথকে কিছুটা সমর্থন করে, কিছুটা বাতিল করে দেয়। সময়ের অস্থির সত্য নিয়ে ব্যক্তির দংশনক্ষত চিত্রনাট্য হয়ে ওঠে আখ্যানের মূল সুর।

            পুত্রদের জীবনচিন্তা, কার্যকারণ, হঠকারিতা নিয়ে পিতা-মাতা চিন্তা করছে। একস্রোত থেকে আরেক স্রোতে ফিরেছে আখ্যান। সওকাত আলির জীবনচিন্তা, জীবনবিশ্বাস কোনোভাবেই ফলছে না। দুই পুত্রকে দুই শিক্ষায় শিক্ষিত করে নব্যজীবন বিন্যাসের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে দুই সন্তান সফল হলেও পরবর্তী জীবনে বিভ্রান্ত। বলা ভালো শিক্ষা যে চেতনার জন্ম দিয়েছে তা নিয়ে তারা অগ্রসর। সওকাত আলির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি দুইই আছে। কিন্তু তিনি যে মিলনসেতু, বৃহৎ জীবনচেতনার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা অপূর্ণ। সময়ের কুচক্রান্তে হেরে যাচ্ছে দুই সন্তানের প্রকৃত প্রয়াস। মোজাফফর যে জীবনবোধ আয়ত্ত করেছিল, জীবনস্বপ্ন গড়ে তুলেছিল তা ভেঙে যায় ইতিকণাকে বিবাহ করতেই। সমাজ, রাজনীতি, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কেউই পাশে দাঁড়ায়নি। ভোটের ইস্যুতে সকলেই পিছিয়ে গেছে। মেরুবিভাজনের রাজনীতি ভেঙে দিয়েছে ভালোবাসর জোয়ার।

            জীবন তো নদীর মতো। তা বইতে জানতে হয়। সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতা, ঢেউ, ভাঙন আসে। নদীখাত, পার্শ্ববর্তী মানুষ সমস্ত নিয়েই নদী। মানুষও ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি সমস্ত মিলিয়েই। প্রগতিশীলতার নামে অধিক প্রতিক্রিয়াশীল হলে সমাজ বিচ্যুতির আশঙ্কা প্রবল। সমাজের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে থেকেই সমাজের অগ্রগতি ঘটাতে হবে। কেননা সকলে মুসলিম সমাজ নিয়ে খেলছে। মোজাফফর ইতিকণার বিবাহ টিকে গেলে ভালোবাসা, প্রেম জয়ী হত কিন্তু আর্ট, সমাজ পরাজিত হত। রক্ষণশীল সমাজে আঘাত আনলে যে প্রতিক্রিয়া জন্ম নেয় তা ব্যক্তিকে বিচ্যুত করে ফেলে, পরিবারকে একঘরে করে দেয়। সেখানে যুক্তি, শৃঙ্খলা কাজ করে না। লেখক সামাজিক সত্য, রাষ্ট্রীয় সত্য, ধর্মীয় সত্যকে গ্রহণ করেই অগ্রগতির ইস্তেহার ঘোষণা করেছেন। জনপদ, লোকালয়, মানুষের কীর্তিকলাপের সবটা জানে নদী। তাই কোন সুরে কোন স্বরে, কোন গ্রহণ-প্রত্যাখ্যানের বয়ানে বইতে হবে সেটাও জানতে হবে। এক মানবিক আখ্যান রচনা করেছেন সোহারাব হোসেন। সওকাত আলির জীবনদর্শনের মধ্য দিয়ে মুসলিম মধ্যবিত্তের জীবনসংকট, স্বদেশচেতনা, ধর্ম-ধর্মহীনতার বয়ান নির্মাণ করেছেন। তিনি মানুষকে লালনের ধর্মহীন দেশে ফেরাতে চান। সাধনক্রিয়া, যাপনের জন্য ধর্মকে সঙ্গী করে উদার মানবতাবোধের দীক্ষা দিতে চান। কিন্তু তা ডুবে যায় সময়ের অন্ধকারে, রাজনীতির দ্বন্দ্বচরিতে, ব্যক্তির বিভ্রান্তবোধে। সেখানে সংখ্যালঘু বেরিয়ে আসার জন্য প্রাণপণ লড়াই চালায়। কিন্তু পরাজিত হয়। পরাজিতের জীবনদর্শন দ্বারা মানবমুক্তির পথ এঁকে দেন লেখক।
     
    যেসব পাঠক পড়তে আগ্রহী নন তাদের জন্য শোনার আয়োজন রইল
     


    সওকাত আলির প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি। সোহারাব হোসেন। মিত্র ও ঘোষ। প্রথম প্রকাশ ২০০৯। মূল্য ৫০ টাকা।
    পুরুষোত্তম সিংহ। ঘোষপাড়া, সুভাষগঞ্জ, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর। ৭৩৩১২৩। ৮৭৫৯১০৪৪৬৭।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন