ঝড়ঝঞ্ঝার কারণে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু কলেজেই নিয়মিত অনলাইন ক্লাস ব্যাহত হয়েছে এই সপ্তাহে। বহু অঞ্চল এখনও জলমগ্ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপন্ন, ফোনের টাওয়ার আসা-যাওয়ার মাঝে। এরই মধ্যে সামনের সপ্তাহ থেকে আবার শুরু করতে হবে ক্লাস, কারণ খাতায় কলমে ঝড় থেমে রোদ উঠে গেছে; অথবা যে-যার বাড়িতে বসেই তো ক্লাস করবে, জমা জলে বেরোতে তো হবে না। কিন্তু কলেজগুলির আসল অসহায়তা অন্যত্র -- ইউনিভার্সিটির শাসনাধীন থাকার সবচেয়ে বড় দায়, সামনে সেমিস্টার পরীক্ষা চলে আসবে দেখতে দেখতে। কাজেই পাঠক্রম শেষ করার দৌড়ে এক সপ্তাহ ঝড়জলে ভেসে যাওয়া নেহাৎ সস্তা নয়!
বহু ছাত্রছাত্রী হয়তো ইন্টারনেট পরিষেবার অনুপস্থিতির কারণেই এখনও কিছুদিন ক্লাসে আসতে পারবে না। কিন্তু যারা আসবে অনেক সমস্যার মধ্যেও, তাদের পরিস্থিতিও কি ভেবে দেখেছি কখনও আমরা?
যখন সবকিছু স্বাভাবিক থাকে, সে সময়ই কলকাতার বাইরে, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক ভাবে প্রান্তিক লোকালয়ের কলেজে শহুরে উচ্চশিক্ষার পাঠক্রম যথেষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ। সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য সারস্বতচর্চার মডেলে গড়ে ওঠা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নির্মিত পাঠক্রম কি আদৌ শহর-বহির্ভূত জীবনযাত্রা, চাহিদা ইত্যাদিকে ধর্তব্যের মধ্যে আনে? বরং বিপরীতমুখী প্রচেষ্টাই বেশি --- যেন তেন প্রকারেণ মফঃস্বল বা গ্রামের স্বতন্ত্র প্রয়োজনগুলির টুঁটি চেপে শহুরে চাহিদাকে অনুসরণ করতে বাধ্য করা। পাতার পর পাতা থিওরি, গবেষণামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ইংরাজি সাহিত্যে ইংলণ্ডের সমাজব্যবস্থার পাঠ, বার্নার্ড শ'য়ের নাটক --- এগুলির প্রয়োজনীয়তা ঠিক কী?
স্বাভাবিক সময়ই যা এত অযৌক্তিক, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে তা রীতিমতো হাস্যস্পদ হয়ে উঠবে, এতে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। ছাত্রছাত্রীরা (যারা আসতে পারছে বা পারছে না) এখন ঠিক কেমন পরিস্থিতিতে আছে?
চতুর্দিকে জল; এখনও বহু জায়গায় দু'বেলার জোয়ারে এলাকা ভাসছে। দু দিন আগে নদীতে বাঁধ দিতে গিয়ে অনেকের ঝড়ে জলে জ্বর এসেছে, আর এখন জ্বর এলে তার সঙ্গে কী কী চিন্তা আসতে পারে, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে ভালোই জানি আমরা। অথচ জলের মধ্যে তারা না পারছে ডাক্তারের কাছে যেতে, না ডাক্তার পারছেন বাড়িতে এসে দেখতে। যে-সব ছাত্রছাত্রীর পরিবারের চাষজমি ছিল, তারা কেমন আছে? এতক্ষণে তারা নিশ্চিত হয়ে গেছে, সামনের তিন বছরের জন্য সেই জমিতে কোনও ফসল ফলবে না। যাদের মিষ্টিজলের পুকুরে মাছের কারবার ছিল, লোনা জলে সমস্ত মাছ ভেসে উঠেছে; গতকালই এক ছাত্রীর কাছে খবর পেলাম, জলাশয়ের ধারে বড় চিংড়ি চাষের যে বন্দোবস্ত ছিল, সে সব পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু উঁচু জমিতে ডীপ টিউবওয়েল যদিও বা ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় আছে, বহু জায়গায় সেই পরিস্থিতি নেই, ফলত পানীয় জলের বিষম ক্রাইসিস।
এর সঙ্গে কোভিডের সংক্রমণ, লকডাউন ইত্যাদি তো সঙ্গী হয়ে আছেই। কোভিডে মৃত্যুর ওঠা-পড়ার গ্রাফেও বড় শহরের উপস্থিতি, লাইমলাইট কেড়ে নেওয়ার প্রবণতা এত প্রবল যে আমরা অনেকেই জানতে পারছি না, গ্রামে এই মুহূর্তে কোভিডের বাস্তব পরিস্থিতি কেমন। আমরা আন্দাজ করতে পারছি না, গ্রামে ঘরে ঘরে পানীয় জলের সরবরাহ থাকে না বলে বাইরে একই টিউবওয়েল থেকে জল নিতে হয় --- এই যুক্তিতেই কোভিড-রোগীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কিভাবে একপ্রকার অচ্ছুৎ করে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ সচেতনতা ও স্পষ্ট সুরক্ষাবিধির অনুপস্থিতিতে। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে এই 'স্টিগমা' তথাকথিত 'সচেতন', 'যুক্তিবাদী' শহরবাসীর ঘুম কেড়েছিল; গ্রামে সেই 'স্টিগমা' কতগুণ বেশি হবে, আমরা কি ধারণা করতে পারছি?
ছাত্রছাত্রীদের পরিবারে কোভিড হয়ে থাকুক বা না থাকুক, তাদের ঘর জলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়ে থাক বা না থাক, তাদের যে এই পরিস্থিতি চাক্ষুষ করে এখন প্রতিদিন কাটাতে হচ্ছে, লকডাউন বেড়ে চলার ভয় যে তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে, আগামী দু-তিন বছর তাদের জীবনধারণের, উপার্জনের পন্থা কী হবে তা নিয়ে কোনই সিদ্ধান্তে যে আসা যাচ্ছে না --- এইই কি যথেষ্ট নয়? যে সময় তাদের অনেকেরই আশু লক্ষ্য যেভাবে হোক পরিবারের একজন উপার্জনকারী হয়ে উঠে ব্যয়ভার কিছুটা হলেও বহন করা, সে সময় তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কিভাবে পাশে থাকবে? কী শেখাবে? কঠিন গাণিতিক সূত্রসমূহ? জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া? মধ্যযুগের ইতিহাস? আমেরিকার পার্লামেন্ট ব্যবস্থা? অমিত্রাক্ষর ছন্দ?
শিক্ষকতার চাকরি করি, সেই অবস্থান থেকে লজ্জিতবোধ করলেও, স্বীকার করতে কোনও বাধা নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে, বিশেষত কেন্দ্রীয় সংস্থা ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাঠক্রমকে এত অপ্রাসঙ্গিক ও হাস্যকর আগে মনে হয়নি। চারিদিক যখন বালির প্রাসাদের মতো ভেঙে পড়ছে, তখন দেশের শহরকেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা এমনই আচরণ তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পাঠক্রমের সঙ্গে তিলমাত্র আপসে না গিয়ে, যেন অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার অসহয়তাটুকুকে বাদ দিলে বাদবাকি সব একদম স্বাভাবিক আছে; এমনকি উন্নতিও করছে।
শুধু আজ বলে নয়, বিকল্প, ব্যবহারিক পাঠক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল বহুদিনই। কারণ কোভিড, সাইক্লোন ইত্যাদি সরিয়ে রাখলেও শহরের ঔপনিবেশিক বাস্তবতা ও শহর-বহির্ভূত লোকালয়ের বাস্তবতার ফারাক বিপুল। শাসকের সুবিধার জন্য বরাবরই এই দুই বাস্তবতাকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং সেখানে ক্ষমতাসীন শহরের দিকেই বরাবর এগিয়ে আসতে হয়েছে গ্রামকে। কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী প্রান্ত হিসেবেই সে পরিচিতি পেয়েছে বরাবর; নিজের স্বতন্ত্র জীবন পায় নি।
আজকের এই পাঠক্রম, শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যাহত না করেও কিন্তু বিকল্প পাঠক্রম আনা যেতে পারতো। সত্যিই তো, কারুর যদি শহুরে পাঠক্রমের দাবি দাওয়ায় মানিয়ে নিতে অসুবিধে না হয় একটুও, সে'ই বা কেন বঞ্চিত হবে! কিন্তু পাশাপাশি ব্যাবহারিক পাঠক্রম কি শুরু করা যেত না --- সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা লেভেলে অন্তত যে'সব কোর্স করলে কঠিন সময়ে উপার্জনের একটা পথ খোলে, সেটুকু কি পাঠক্রমে এনে কলেজগুলিকে 'স্টাডি সেন্টার' করে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া যেত না? না হয় এই সময় অনলাইন ক্লাসই হতো, কিন্তু শিক্ষার্থীরা অন্তত এই আশ্বাসটুকু পেত যে কোর্সের শেষে স্বল্প মাইনের হলেও একটা চাকরি, জীবননির্বাহের একটা ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে। কিন্তু তার বদলে এখন তাদের পাতে সেই এক অনিশ্চয়তা --- গ্র্যাজুয়েশন করে, তার পর? উচ্চতর শিক্ষা? কে টাকা দেবে কোর্সের? নাকি চাকরির চেষ্টা? তার জন্যই বা কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?
এই বিকল্প, ব্যবহারিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কি আমাদের দেশে কেউই কখনও সরব হন নি? হয়েছিলেন; অন্তত আশেপাশে তাকালে একজনকে তো দেখতেই পাই। সালটা ১৯১৯ (১৩২৬ বঙ্গাব্দ); আজ থেকে ১০২ বছর আগের কথা। শান্তিনিকেতনে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠছে, তার নাম প্রস্তাবনার সভা বসেছে সেদিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন --
"আমাদের দেশে কেবলমাত্র কেরানিগিরি ওকালতি ডাক্তারি ডেপুটিগিরি দারোগাগিরি মুন্সেফি প্রভৃতি ভদ্রসমাজে-প্রচলিত কয়েকটি ব্যবসায়ের সঙ্গেই আমাদের আধুনিক শিক্ষার প্রত্যক্ষ যোগ। যেখানে চাষ হইতেছে, কলুর ঘানি ও কুমারের চাক ঘুরিতেছে, সেখানে এ শিক্ষার কোনো স্পর্শও পৌঁছায় নাই। অন্য কোনো শিক্ষিত দেশে এমন দুর্যোগ ঘটিতে দেখা যায় না। তাহার কারণ, আমাদের নূতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দেশের মাটির উপরে নাই, তাহা পরগাছার মতো পরদেশীয় বনস্পতির শাখায় ঝুলিতেছে। ভারতবর্ষে যদি সত্য বিদ্যালয় স্থাপিত হয় তবে গোড়া হইতেই সে বিদ্যালয় তাহার অর্থশাস্ত্র, তাহার কৃষিতত্ত্ব, তাহার স্বাস্থ্যবিদ্যা, তাহার সমস্ত ব্যবহারিক বিজ্ঞানকে আপন প্রতিষ্ঠা-স্থানের চতুর্দিকবর্তী পল্লীর মধ্যে প্রয়োগ করিয়া দেশের জীবনযাত্রার কেন্দ্রস্থান অধিকার করিবে। এই বিদ্যালয় উৎকৃষ্ট আদর্শে চাষ করিবে, গোপালন করিবে, কাপড় বুনিবে এবং নিজের আর্থিক সম্বল-লাভের জন্য সমবায়-প্রণালী অবলম্বন করিয়া ছাত্র শিক্ষক ও চারিদিকের অধিবাসীদের সঙ্গে জীবিকার যোগে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হইবে।
এইরূপ আদর্শ বিদ্যালয়কে আমি 'বিশ্বভারতী' নাম দিবার প্রস্তাব করিয়াছি।" (বিশ্বভারতী, পৃষ্ঠা : ৯-১০)
সূচনাপর্বের এই আদর্শ থেকে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীও চ্যূত হয়েছে; কবির জীবদ্দশাতেই প্রতিষ্ঠানের সেই আপসের, স্খলনের শুরু। পরবর্তীতে শিক্ষাক্ষেত্রে এই বিকল্প ভাষ্য ধরে রাখতে অসমর্থ হয়েছে বিশ্বভারতী। আজ আমরা যে বিশ্বভারতীকে চিনি, সে আর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই সেমিস্টার-সিজিপিএ-NAAC প্রদত্ত স্বীকৃতির চক্রে বাঁধা।
কিন্তু বিশ্বভারতী কেন পেরে উঠলো না, প্রশ্ন আজ সেটা নয়। প্রশ্ন হলো, এই বিকল্প পাঠক্রমের কি আর প্রয়োজন নেই আজকের দিনে? সমাজে কি এমনই সাম্য চলে এসেছে? না, বরং পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে আমাদের, এর প্রয়োজনীয়তা এই মুহূর্তে সর্বাধিক। তাহলে কেন এই শিক্ষাদানের পক্ষে সওয়াল উঠছে না প্রতিনিয়ত? প্রযুক্তিগত এমন উন্নতির যুগে, এমন নমনীয় সেমিস্টার-সিস্টেমের যুগে পরিস্থিতি ও ভৌগোলিক অবস্থানগত চাহিদা অনুযায়ী কি প্রায়োগিক শিক্ষার পাঠক্রম নিয়ে আসা, বা কিছু স্থায়ী কোর্সের ব্যবস্থা করা এতই দুরূহ? গ্রামাঞ্চলে জায়গায় জায়গায় কিছু প্রাইভেট অর্গানাইজেশন এরকম স্বল্প কিছু কোর্স করায় ঠিকই, কিন্তু তা অস্থায়ী এবং যে কোনও সরকারি উদ্যোগের চাইতে তাতে খরচ বেশি। স্থায়ী, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের 'প্রপার চ্যানেল' মারফৎ এরকম ব্যবস্থা কবে হবে? চিন্তাভাবনার স্তরেও কি আদৌ আছে বিষয়টি? নাকি এখনও, সামনের একশো বছর ধরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব বারো বগি টানার ইঞ্জিনে জোর করে আরও আটচল্লিশ বগি জুড়ে দেওয়ার?
জরুরী লেখা
খুবই গুরুত্বপূর্ণ লেখা, আর শুভংকর বাবুর সাথে অনেকাংশেই একমত। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আর সংস্কার করা দরকার। সমস্ত দেশে যেভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং আর ডাক্তারি পড়ার নেশা বেড়েছে, সেটা পরিবর্তন করা দরকার। ছাত্রছাত্রীরা যেন নিজেদের পছন্দের সাব্জেক্ট পড়তে পারে, নিজেদের পছন্দের কাজের জায়গায় বেছে নিতে পারে, সেরকম শিক্ষাব্যবস্থা আর পাঠক্রম বানানো দরকার। আর্টস, কমার্স, ইতিহাস, ভূগোল, সমস্ত সাবজেক্ট বা স্ট্রিমের সমান অধিকার হওয়া উচিত। আর লেখক যেটা বলেছেন, রিইয়নাল পাঠক্রম তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। কিছুটা কমন পাঠক্রম, বাকিটা একেক রিজিয়ন এর নিজের মতো পাঠক্রম, এরকম সিস্টেম তৈতি করা ভীষনভাবে দরকার। আর রাইট টু এডুকেশান বা আরটিই র ওপরে আরও জোর দেওয়া উচিত। অফলাইন / অনলাইন মিলিয়ে পড়ানোর পদ্ধতি চালু করা উচিত, যাদের যেটা সুবিধে তারা সেটা বেছে নেবে। শিক্ষায় সরকারের রোল অনেক বেশী হওয়া উচিত, শিক্ষায় বাজেট অ্যালোকেশান অনেক বাড়ানো উচিত।
"পরিস্থিতি ও ভৌগোলিক অবস্থানগত চাহিদা অনুযায়ী (কি) প্রায়োগিক শিক্ষার পাঠক্রম নিয়ে আসা, বা কিছু স্থায়ী কোর্সের ব্যবস্থা করা" - সম্পূর্ণ একমত।
@aranya ধন্যবাদ অরণ্য বাবু, আপনার মতামতের জন্য।
@dc অনেক ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য। Exactly, শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ না এলে, বাজেট ঠিকভাবে না ঢুকলে, শুধুমাত্র প্রাইভেট অর্গানাইজেশনের sporadic কাজকর্মে কিছুই হবে না। পরিস্থিতিভেদে যে চাহিদা বদলাবেই, এটুকু realize করলে, aclnowledge করলেই এই কাজের দিকে আরও সুসংবদ্ধ ভাবে এগোনো যায় বলে মনে করি।
শিক্ষা আর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সরকারের সরাসরি অংশগ্রহন করা খুব বেশী দরকার। জিডিপির অন্তত ৭-৮% করে এই দুই ক্ষেত্র থেকে আসা উচিত। সরকারের উচিত সবার জন্য বিনামূল্যে অন্তত ক্লাস ১২ অবধি শিক্ষা আর অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তবেই হিউম্যান ক্যাপিটাল ফর্মেশান সম্ভব। তবে সেসব আমাদের দেশে কখনো হবে বলে তো মনে হয়না।
আমরা রাষ্ট্র বা কর্পোরেট নির্মিত ও নির্ধারিত গণ সামাজিক মানসিকতায় অবগাহন করি অধিকাংশ সময়ে। এখানে কেবলমাত্র বিকল্প সম্ভব কিনা বা প্রয়োজনীয় কিনা এ প্রশ্ন তোলাই নিতান্ত জরুর।।
বিকল্প শিক্ষাও এর একটি। ধন্যবাদ! বিকল্পের অনুসন্ধানে আছেন। আমরাও আছি। নিরন্তর চলুক এই অনুসন্ধা।।
জয়ন্ত বাবু, অনেক ধন্যবাদ। আপনার মতামত পেয়ে ভালো লাগলো। নিঃসন্দেহে এই অনুসন্ধানে থাকাই একমাত্র পথ। প্রশ্ন করা ছাড়া উপায় নেই।
বুঝলাম না, 'সাহিত্য' যে পড়তে আসছে সে কি জানে না যে সে কী পড়তে আসছে 'উচ্চশিক্ষায়'? তার ইস্কুলের শিক্ষক কি তাকে কোনো ধারণা না দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে টুয়েলভ অব্ধি?
আর আই.টি.আই'গুলো তো রয়েইছে কর্মমুখী শিক্ষার জন্য, ভোকেশনালও রয়েছে ক্লাস টুয়েলভ থেকে।
'সাহিত্য' পড়তে এসে কেউ যদি মোবাইল, ফ্রিজ মেরামতি, বাঁধরক্ষা, ইকো-সিস্টেম সংরক্ষণ নিয়ে পেশাদারি শিক্ষালাভ করবে ভেবে থাকে, তাহলে তো খুব মুশকিল।
আর্ট ও কালচার চর্চা একটি প্রিভিলেজ পজিশনালিটি--- এই তেতো সত্যিটা মানতে লোকের এত অসুবিধা কেন আমি বুঝি না।
জি বি শ'কে লেখক মনে করেছেন অপ্রাসঙ্গিক। জিবিশ পড়িয়েই নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার কথা শেখানো যায় প্রান্তিক ছাত্রটিকে। শেক্সপিয়ারের সনেট পড়িয়ে ক্লাসের হোমোসেক্সুয়াল ছেলেটিকে ভরসা দেওয়া যায় যে তুমি 'অসুস্থ' নও। এইগুলিকে অপ্রাসঙ্গিক ঠেকছে!!!!
অনেক ধন্যবাদ সীমন্তবাবু, আপনার মতামত জানানোর জন্য। যে বিষয়গুলি উল্লেখ করলেন, পরবর্তীতে চেষ্টা করবো লেখার সময় সেগুলি মাথায় রেখে এগোতে। আবারও, ধন্যবাদ।
অভিষেক বাবু, আপনি যে বিষয়দুটি তুলে ধরলেন, শ' এবং শেক্সপিয়র নিয়ে, আমি তাকে একেবারেই খণ্ডন করছি না। বরং স্বাভাবিক সময়ে হয়তো সহমতই পোষণ করবো।
কিন্তু এই মুহূর্তে যেহেতু খুব কাছ থেকে প্রাত্যহিক ক্ষয়ক্ষতি ও হেরে যাওয়া দেখছিই এই অঞ্চলের (প্রতি বছরই একবার করে দেখতে হয় এখন), সেখানে দাঁড়িয়ে বার্নার্ড শ দিয়ে অধিকার ছিনিয়ে নিতে শেখানোটাও আমার কাছে তাত্ত্বিক ও সময়ের অপচয় বলে মনে হচ্ছে। প্রয়োজনের অভিমুখ, dimension হয়তো আমার কাছেই কিছুটা বদলে গেছে। সেই জায়গা থেকে লেখা।
আমি নিজে সাহিত্যেরই ছাত্র, পড়াইও। কাজেই সাহিত্যকে খাটো করা একেবারেই আমার উদ্দেশ্য নয়। শুধু এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমার এগুলিকে misplaced priorities বলে মনে হয়েছে, এটুকুই।
আপনার মতামত পেয়ে ভালো লাগল, অনেক ধন্যবাদ। যে বিষয়গুলি উল্লেখ করলেন, অবশ্যই পরবর্তীতে আরও সচেতন ভাবে খেয়াল রাখবো, সেগুলি আমাকে কোনও নির্দেশ দিচ্ছে কিনা।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লেখকের সঙ্গে সহমত। পাঠক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলি , প্রশ্নটা সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন পাঠক্রম বা বিকল্প নিয়ে বোধ হয় নয়। এখানে গ্রাম শহরের পরিপ্রেক্ষিত এবং আর্থসামাজিক পার্থক্য প্রধান বিভাজক। জীবনমুখী শিক্ষা এবং জীবনধারণের শিক্ষা আমাদের পাঠক্রমে অনুপস্থিত। যেমন বলা যেতে পারে , প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার শিক্ষা উন্নত দেশে স্কুল পাঠক্রমে থাকে , আমাদের দেশে বাচ্চারা কিন্তু শেখেই না। কেবল বই মুখস্ত পড়াশুনা দিয়ে তৈরি করার চেষ্টা হয় বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই।
অনিন্দিতা দি, সঠিক। সমস্যাটা বিকল্পের সন্ধান নিয়ে যত না, তার চেয়ে বেশি বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে বিকল্পের প্রয়োজনীয়তাকে মান্যতা দেওয়া। সেটা পড়াশুনার ক্ষেত্রে খুবই প্রকট।
আপনার মতামত পেয়ে ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।