নূতন ধর্মের উদ্ভবের সঙ্গে সৃষ্টি হয় পরলোক সম্পর্কে নূতন বিশ্বাস আর তার প্রতিফলন দেখা যায় অন্ত্যেষ্টিশিল্পেও। নূতন ধর্মমতের মানুষের সাথে আসে নূতন শিল্পরীতি এবং প্রযুক্তিও। ভারতবর্ষ সংক্রান্ত আগের দুই পর্বে আমরা দেখেছি বৌদ্ধ স্তূপ আর হিন্দু ও জৈনদের হীরো স্টোন (বীরশিলা)। আজ আমরা দেখব ভারতবর্ষের মুসলিম সমাধিশিল্পের ইতিহাস। এই ইতিহাসকে আমরা পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করে শিল্পের ক্রমবিকাশ দেখব।
১) প্রথম পর্যায়- প্রাক-সুলতানী যুগ (৬৩০-১১৯২ অব্দ)। এই সময়ের মুসলিম সমাধিগুলো বেশ অনাড়ম্বর। মসজিদগুলোও খুব বড় নয়। এই যুগে ইসলাম মূলতঃ কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলা, সৌরাষ্ট্র, সিন্ধু এইসব এলাকায়ই সীমাবদ্ধ। মুসলিম শিল্পের পৃষ্ঠপোষক মূলতঃ বণিক সম্প্রদায়- আরব বণিক এবং স্থানীয় মুসলিম বণিক। তাই খুব আড়ম্বর নেই। এই যুগের দক্ষিণ ভারতের মসজিদগুলি সম্ভবত স্থানীয় শৈলীতেই নির্মাণ হত। উদাহরণ হল- চেরমান জুমা মসজিদ (ত্রিশূর, কেরালা), জীনত বক্স মসজিদ (ম্যাঙালোর, কর্ণাটক)- এগুলি কেরালা-প্যাগোডা শৈলীর। তামিলনাড়ুতে ঐযুগের দ্রাবিড় শৈলীর মসজিদ দেখা যায়। অবশ্য গত পাঁচশো বছরে এদের নূতন করে সংস্কার হয়েছে, তবে এদের পুরোনো রূপও মোটামুটি ঐরকমই ছিল বলে ধারণা করা হয়। তখনও পারসিক বা আরব শিল্পরীতি এবং বাস্তুকলা ভারতে তেমনভাবে আসেনি। মুসলিম বণিকরা স্থানীয় কারিগর, স্থানীয় শিল্পরীতি এবং স্থানীয় প্রযুক্তিই ব্যবহার করতেন।
২) দ্বিতীয় পর্যায়ে দেখব সুলতানি যুগের প্রথম দিক- ঘোরি, মামলুক (দাস) এবং খলজি বংশের সময়কাল (১১৯২ থেকে ১৩২০)। আগের যুগের সঙ্গে দুটো পার্থক্য। এক, এই যুগে শিল্পের পৃষ্ঠপোষক দিল্লীর সুলতানেরা, তাই বিনিয়োগও বেশী। দুই, পারসিক ও রোমান শিল্পের প্রভাব যেটা আগের যুগে ছিল না, এই যুগে দেখা যায়। ঘোরিরা তাজিক (মতান্তরে ইরানীয় বংশোদ্ভুত) ছিল, আর বাকী দুটি বংশ তুর্কী- এবং এরা সবাইই পারসিক শিল্পরীতির ব্যবহার করত। খিলান (আর্চ) আর গম্বুজ রোম সাম্রাজ্যের অবদান, এইযুগেই ভারতে আসে। ভারতের মন্দিরশিল্পে এগুলোর ব্যবহার ছিল না। এই যুগের শিল্পের বিবর্তন, দুটি সমাধির মাধ্যমে দেখানো যায়।
এক, ইলতুতমিসের সমাধি: পারসিক ধাঁচে নির্মিত, ত্রয়োদশ শতকের প্রথমদিকে। মজার ব্যাপার হল এই সমাধির চারদিকে যে আর্চগুলো দেখা যায় সেগুলো প্রকৃত খিলান বা ট্রু আর্চ নয়। এগুলো কর্বেল আর্চ, যেটা প্রযুক্তিগতভাবে আলাদা। খিলানের মত দেখতে হলেও প্রযুক্তিগতভাবে খিলান নয়, এরা টেনসাইল ফোর্সকে অন্যভাবে ধারণ করে। কর্বেল আর্চের ওজন সহন করার ক্ষমতা কম, এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় প্রবেশদ্বার বা বড় গম্বুজ বানানো যায় না। সুলতানরা তাদের সমাধি পারসিক ধাঁচে নির্মাণ করতে চাইলেও কারিগররা ছিল ভারতীয়, যারা তখনও ট্রু আর্চ নির্মাণ শেখেনি। তাই কর্বেল আর্চ। মাথায় গম্বুজ ছিল, সেটাও কর্বেল পদ্ধতিতেই তৈরী- ট্রু ডোম নয়। দৃশ্যগতভাবে পারসিক, প্রযুক্তি ভারতীয়। সমসাময়িক দুটি উল্লেখযোগ্য মুসলিম শিল্পকর্ম ছিল রাজস্থানের আড়াই দিন কা ঝোঁপড়া মসজিদ আর দিল্লীর কুতুব কম্প্লেক্সের কুওয়ত-উল-ইসলাম মসজিদ- এখানেও কর্বেল আর্চ আর কর্বেল ডোম দেখা যায়। স্থাপত্যের অলংকরণের জন্য ক্যালিগ্রাফির বিশদ ব্যবহার ভারতীয় বাস্তুশিল্পে একটা নূতন সংযোজন যা ইলতুতমিসের সমাধি এবং ঐযুগের কুতুব মিনার এবং আড়াই দিন কা ঝোঁপড়ায় দেখা যায়। সামান্য হিন্দু প্রভাবও দেখতে পাই- বৃত্তাকার পদ্মফুল, থামের ডিটেলিং- এগুলোর মধ্যে। ইসলাম ধর্মে মানুষ এবং প্রাণীর চিত্রণ নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে ক্যালিগ্রাফি আর ফ্লোরাল, ভেজিটাল, জ্যামিতিক মোটিফই দেয়ালের অলংকরণে ব্যবহার করা হত।
দুই, বলবনের সমাধি: ত্রয়োদশ শতকের শোষার্ধে তৈরী। এখানে দেখা যায় ট্রু আর্চ- এখনও অবধি টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো ভারতীয় ট্রু আর্চ। ভারতের প্রাচীনতম গম্বুজও সম্ভবতঃ এটিই, এখন ভেঙেচুরে গেছে। অর্থাৎ এই যুগে প্রকৃত খিলান আর গম্বুজ তৈরী শুরু হয়েছিল- ছোট আকারে, সতর্কভাবে।
পাঠকদের সুবিধার জন্য বলি কর্বেল আর্চ আর ট্রু আর্চের পার্থক্য। কর্বেল পদ্ধতিতে একটা আনুভূমিক ইঁটের উপর আরেকটা বসিয়ে বসিয়ে দুটি তীর্যক রেখা বানানো হয়, যারা আর্চের মাথায় গিয়ে জোড়া লাগে। ট্রু আর্চে ইঁটগুলো গোল করে এমনভাবে বসানো হয় যেন তাদেরকে কাল্পনিকভাবে প্রসারিত করলে একটা বিন্দুতে এসে মিলিত হয় (ছবি নিচে)। গুপ্তযুগের ভিতরগাঁও মন্দিরের প্রবেশদ্বার যেটাকে কানিংহাম 'হিন্দু আর্চ' বলেছেন, সেটি কর্বেল আর্চ। ট্রু আর্চের ত্রিমাত্রিক রূপ হল ট্রু ডোম, কর্বেল আর্চের ত্রিমাত্রিক রূপ হল কর্বেল ডোম কিংবা হিন্দু মন্দিরের শিখর। মনে রাখবেন আর্চকে তার উল্লম্ব অক্ষের (vertical axis) চারিদিকে ঘোরালে সেটা গম্বুজের আকার নেয়। প্রযুক্তিগতভাবে তারা প্রায় একই। একটা দ্বিমাত্রিক অন্যটা ত্রিমাত্রিক। নিচের তিনটি ছবিতে ঠিক দরজার উপরের ইঁট বা পাথরগুলোর অভিমুখ লক্ষ করলে কর্বেল আর্চ আর ট্রু আর্চের পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
ছবি: ইলতুতমিসের সমাধি
Image Credit: By Khanshahab06 - Own work, CC BY-SA 4.0,
https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=77463504
ছবি: বলবনের সমাধি
Image Credit: By Anupamg - Own work, CC BY-SA 4.0,
https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=51396710
ছবি: ট্রু আর্চ (বামদিকে) আর কর্বেল আর্চ
Image Credit: By No machine-readable author provided. Anton~commonswiki assumed (based on copyright claims). - No machine-readable source provided. Own work assumed (based on copyright claims)., CC BY-SA 2.5,
https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=351587
এই নিয়ে আমার ধারাবাহিকে পঞ্চমবার রোমের কথা বলব, কারণ সব পথই রোমের দিকে যায়। বিশ্বের দরবারে ট্রু আর্চ আর গম্বুজ- এই দুটি প্রযুক্তি রোমানদের অবদান। রোমানরা ট্রু আর্চ নির্মাণ এট্রাস্কানদের কাছে শিখেছিল- যাদের নিয়ে আগের পর্বে আলোচনা হয়েছে। চলুন এই প্রযুক্তির গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করি।
হিন্দু মন্দিরের মণ্ডপ (বা হল) অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত থাকত- অর্ধমণ্ডপ, মণ্ডপ, মহামণ্ডপ, গর্ভগৃহ- ইত্যাদি। ভাস্কর্যমণ্ডিত পিলার বা থাম ছিল মন্দিরের সৌন্দর্যবর্ধনের একটা মাধ্যম, সিলিং-কে অবলম্বন দেয়ার মাধ্যমও এরাই। পোস্ট অ্যান্ড লিন্টেল পদ্ধতিতে হিন্দু মন্দিরের মণ্ডপ তৈরি হত, তাই হলের ভিতরে কয়েক ফুট অন্তর অন্তর পিলার অপরিহার্য। রোমের প্যান্থেওন কিন্তু এরকম নয়। এটি দেড় হাজার বর্গমিটারের একটা হলঘর যার মাঝখানে কোনও পিলার নেই! এটা একমাত্র প্রকৃত গম্বুজের মাধ্যমে সম্ভব। প্রাচীন ভারতে রোমের প্যান্থেওনের থেকে উচ্চতায় ও প্রসারে অনেকগুণ বড় মন্দির থাকলেও প্যান্থেওনের মত পিলারহীন বিশাল হলঘর কোথাওই ছিল না। তেমনই বিশাল উঁচু দরজা তৈরীর জন্য প্রয়োজন ট্রু আর্চের, তাই হিন্দু মন্দিরের দরজা খুব বড় হত না। তাজমহলের মূলসৌধটির দরজা আটতলা বাড়ীর সমান উঁচু, যা ট্রু আর্চের দ্বারা সম্ভব। প্যান্থেওন তৈরীর প্রায় ১১৫০ বছর পর ট্রু আর্চ আর প্রকৃত গম্বুজ দেখা গেল ভারতবর্ষে- বলবনের সমাধিতে। রোমান প্রযুক্তি ভারতে এল পারসিক আর তুর্কীদের হাত ঘুরে। বৌদ্ধস্তূপ গম্বুজের মত দেখতে হলেও, প্যান্থেওনের চেয়ে অনেকগুণ বড় হলেও, এগুলি কিন্তু গম্বুজ নয়, কারণ এগুলি ফ্রী-স্ট্যান্ডিং নয়।
ভারতে যখন সুলতানী যুগ, তখনও পৃথিবীর বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ১২৮ অব্দে নির্মিত রোমের প্যান্থেওন। দ্বিতীয় বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ইস্তানবুলের আয়াসোফিয়া (তখন গীর্জা)। আয়াসোফিয়ার গম্বুজ ইঁটের। প্যান্থেওন ইঁটের গম্বুজ ছিল না, কংক্রীটের, তবে একই পদার্থবিদ্যার নিয়মে তৈরী। প্যান্থেওনের সমতুল্য মাপের গম্বুজ ভারতে তৈরী হয় অনেক পরে- সপ্তদশ শতকে- সেটিও একটি সমাধি, যার কথা আমরা পরে বলব। প্যান্থেওনের আরএকটা বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এটিই এই বিশ্বে একমাত্র বাড়ী যা টানা ১৯০০ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে- আগে রোমান মন্দির ছিল, পরবর্তীকালে গীর্জা।
৩) তৃতীয় পর্যায় - তুঘলক শাসনকাল (১৩২০-১৪১৩)। এই যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমাধি হল গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের তৈরী সুফী সন্ত শাহ রুকন-এ-আলমের সমাধি। পাকিস্তানের মূলতানে অবস্থিত। কাঠ, মণিমুক্তো, গ্লেজড টালি- ইত্যাদি ব্যবহার করে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ব্যয়বহুল একটি স্মৃতিসৌধ। পারসিক এবং মধ্য এশীয় শিল্পরীতির একটি উল্লেখযোগ্য পরাকাষ্ঠা এই সমাধি। এটি গিয়াস নিজের সমাধি হিসাবে বানিয়েছিলেন, তবে পরে উনি নিজের জন্য অন্য একটি সমাধিসৌধ তৈরী করান, দিল্লীতে। সেটি একটু কম আড়ম্বরপূর্ণ। দুটিতেই প্রকৃত গম্বুজ ও খিলান দেখা যায়। দুটিরই মাথায় দেখা যায় হিন্দু মন্দিরের অনুকরণে আমলক আর কলস। আমলক হল মন্দিরের মাথায় যে চাকতি থাকে। সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সমাধিতেও একটা হিন্দু প্রভাব দেখা যায়- দরজার উপরে হিন্দু মন্দিরের মকর-তোরণের মত খিলান- যেটা পারস্য বা মধ্য এশিয়ায় দেখা যায় না।
৪) চতুর্থ পর্যায়- সৈয়দ ও লোদী বংশের শাসনকাল (১৪১৩-১৫২৬): সবার প্রথমে বলব মহম্মদ শাহ সৈয়দের সমাধির কথা। কিছু হিন্দু প্রভাব তুঘলক যুগেও দেখেছি, এখানে সেটা আমরা আরও প্রকটভাবে দেখব। মহম্মদ শাহ সৈয়দের সমাধিতে আমরা দেখতে পাই দরজার উপরে দু'পাশে হিন্দু মন্দিরের মকর-তোরণের মত স্প্যান্ড্রেল, এবং আরেকটা দৃশ্যমান হিন্দু প্রভাব হল গম্বুজের মাথায় উল্টোনো পদ্মফুল। পদ্মফুল হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন শিল্পে এতটাই বহুপ্রচলিত যে এর উপস্থিতি আমরা অনেকসময় দেখতেই পাই না! প্রায় সব প্রাচীন হিন্দু-মন্দিরের সিলিংএ উল্টোনো পদ্মফুলের ভাস্কর্য আমরা পাই। ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতীক হল উল্টোনো পদ্মফুলের উপর চারটি সিংহ। এই যুগে আমরা মুসলিম সমাধির গম্বুজেও উল্টোনো পদ্মফুল দেখব- সৈয়দ ও লোদী বংশের একাধিক সমাধিতে। উল্টোনো পদ্মফুলকে অনেকে পদ্মপাতা হিসাবেও ধরে থাকে।
এছাড়া ঐ মহম্মদ শাহ সৈয়দের সমাধিতেই দেখা যায় মূল গম্বুজের চারিদিকে ছোট ছোট ছাতার মত গম্বুজ (এগুলিকে ছত্রী বলা হয়)- এটিও নাগর শৈলীর হিন্দু মন্দিরের উরুশৃঙ্গের (মূল শিখরের চারিদিকে একাধিক ছোট শিখর) সঙ্গে তুলনীয়। ছজ্জার উপস্থিতিও হিন্দু প্রভাব। ছজ্জা হল চালা আর দেয়ালের মাঝখানে ঝুলন্ত অবলম্বন। আর ছিল গুলদস্তা অর্থাৎ পদ্মফুলের মত শীর্ষদেশযুক্ত স্তম্ভ- মূল গম্বুজ আর ছত্রীদের মাঝখানে। পারসিকরা পরে এই গুলদস্তার অনুকরণ করে। লোদী বংশের কিছু সমাধিতে ঝরোখা দেখা যায়- এটাও হিন্দু মন্দিরশিল্পের প্রভাব।
অর্থাৎ এই যুগে আমরা হিন্দু মুসলিম শিল্পরীতির সমন্বয় দেখি। এর আগেও কিছু সমন্বয় হয়েছে। প্রথম দিকের সুলতানি যুগে যে সমন্বয় আমরা দেখি সেটা শান্তিপূর্ণ সমন্বয় ছিল না। আড়াই দিন কা ঝোঁপড়া মসজিদ আর দিল্লীর কুতুব কম্প্লেক্সের কুওয়ত-উল-ইসলাম মসজিদে আমরা যে হিন্দু শিল্পরীতির ছাপ আমরা দেখি, তার একটা কারণ হল এই দুটি তৈরি করা হয়েছিল অনেক হিন্দু ও জৈন মন্দিরের থাম, পাথর এমনকি সিলিং লুণ্ঠন করে এনে। এছাড়া এগুলোর কারিগররা যেহেতু হিন্দু ছিল, তার ফলেও হিন্দু ও জৈন প্রভাব দেখা যায়। সৈয়দ ও লোদী শাসনকালে একটা শান্তিপূর্ণ শৈল্পিক সমন্বয় আমরা দেখি। একটা লক্ষণীয় বিষয় হল, এর দু'শো বছর আগে ইলতুতমিসের সমাধিতে আমরা দেখি ভারতীয় প্রযুক্তি (কর্বেল) ব্যবহার করে পারসিক সৌন্দর্যবোধের প্রদর্শন, কিন্তু সৈয়দ ও লোদীদের সমাধিতে আমরা দেখি উল্টোটা- পারসিক (ও রোমান) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতীয় সৌন্দর্যবোধের প্রদর্শন।
লোদী যুগে আরএকটা নূতন প্রযুক্তি দেখা যায়। ডবল ডোম বা দ্বিস্তর গম্বুজ। অর্থাৎ গম্বুজের ভিতরে গম্বুজ। এর কারণ গম্বুজ খুব নিচু হলে সৌধের বাহ্যিক বিশালত্ব হ্রাস পায়, আর উঁচু হলে ভিতরটা অন্ধকার দেখায় আর সিলিংএর কারুকার্য ভালভাবে দেখা যায় না। এর সমাধান হল দ্বিস্তর গম্বুজ। সিকন্দর লোদীর সমাধিতে এটি দেখা যায়। এটি অবশ্য নূতন প্রযুক্তি নয়, ইরানে এর ভালই ব্যবহার হত। সুলতানি যুগের ইতিহাসে সৈয়দ ও লোদী বংশকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়না ঠিকই, কিন্তু মনে রাখতে হবে- ভবিষ্যতে আমরা তাজমহলে যেসব শিল্পকৃতি দেখব- যেমন দ্বিস্তর গম্বুজের প্রযুক্তি, গম্বুজের মাথায় পদ্মফুল, আমলক, আনুষঙ্গিক ছত্রী, গুলদস্তা- এগুলোর আদিরূপ কিন্তু আমরা এই যুগেই দেখি।
পরবর্তী পর্বে আমরা দেখব ভারতীয় মুসলিম শিল্পকলার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুগ- মোগল যুগ। সবচাইতে আড়ম্বরপূর্ণ, ব্যয়বহুল ও শিল্পসুষমামণ্ডিত সমাধিশিল্প আমরা মোগল যুগেই দেখব।
ঋদ্ধ হলাম। অসামান্য ইতিহাসের পরিভ্রমণ! আরও লিখুন
অত্যন্ত মূল্যবান লেখা। সাগ্রহ অপেক্ষা রইল।
অসাধারণ লাগলো