কাল রাত একটা বেজে গেলেও ওরা কেউ সহমতে আসতে পারে নি। খাওয়ার টেবিলে তিতির তো চীৎকার চেঁচামেচি করে কিছু না খেয়েই উঠে গেল। তিতিরের এক কথা, ‘কবে থেকে বলছি পাসপোর্টটা বানাতে দাও। আরে বাবা, বরফ যদি দেখতেই হয় ইংল্যান্ড কিংবা সুইজারল্যান্ড চলো। তা না সেই কবে থেকে কাশ্মীর, কাশ্মীর করে হেঁদিয়ে যাচ্ছে।’
পাঞ্চালী মেয়েকে ধমক দিয়েছিল, ‘ওকি তিতির! বাবার সঙ্গে কীভাবে কথা বলছিস? কি সব শব্দ বলছিস, হেঁদিয়ে মানে?’
তিতির একটু মুখ গোঁজ করে থাকে। তারপর ছড়িয়ে, ছিটিয়ে একটু খেয়ে উঠে যায়।
শোভন বলে, ‘আহা ওকে বকছো কেন?’
পাঞ্চালী এ বার সত্যি সত্যি রেগে যায়, ‘দেখো তিতিরের বাবা তুমি সেই ছোটো থেকে ওর সবকিছুকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলছো’।
তাতান তিতিরের থেকে আট বছরের ছোটো। স্বভাবেও দিদির সম্পূর্ণ বিপরীত। ছোটো থেকেই অন্তর্মুখী, স্বল্পভাষী। রুটি বেগুনভাজা তাতানের খুব প্রিয়। সে একটুকরো রুটি মুখে দিয়েছিল। পাঞ্চালী বলে, ‘আর একটা বেগুন ভাজা নিবি তাতান?’
তাতান ঘাড় নেড়ে জানায়, ‘না’। দু’ঢোক জল খেয়ে দিদির সমর্থনে যুক্তি দেখায় - ‘মা, তুমি কিন্তু দিদির উপর মিথ্যে মিথ্যে রাগ করছো। গতমাসে তুমি যখন সমুদ্র দেখতে যেতে চাইলে, দিদি বললো আন্দামান চলো। কিন্তু তোমার বহুদিনের শখ আরাকুভ্যালিতে গিয়ে দু’রাত্রির থাকবার। আর তাই গতবারের ট্যুরটা যেহেতু তোমার পঁয়তাল্লিশতম জন্মদিনের উপহার ছিল আমরা সবাই তাই খুশিমনে তোমার প্রস্তাবটাই মেনে নিয়েছিলাম। এবার দিদির আব্দারটাও তোমার মেনে নেওয়া উচিৎ’।
পাঞ্চালী ফোঁস করে ওঠে, ‘কেন ভাইজাগ গিয়ে তোদের মনে হয় ভালোলাগে নি? অমন নীল জল ভারতবর্ষের আর কোথাও দেখেছিস?’
তাতান বড়োদের মতো করে একটু মোটা গলায় বলে, ‘আমরা দীঘা, পুরীর সমুদ্র ছাড়া আর কি অন্য কোথাও গিয়ে সমুদ্র দেখেছি? অবশ্য আমরা বেড়ানো শুরু করলাম তো মাত্র এই কয়েকমাস হল’।
শোভন একটু আহত স্বরে বলে, ‘আসলে এতো খরচ, এভাবে যে বেড়ানো সম্ভব সেটা আগে কখনও তো ভাবতেই পারি নি’।
পাঞ্চালী শোভনের কথায় চুপ করে যায়। বুকের ভেতর কি যেন টাটায়। মুখ নিচু করে এঁটো বাসনগুলো টেবিল থেকে তুলতে থাকে। পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেছে দেখে তাতান বেশ জোর দিয়ে বলে ওঠে, ‘আমি আরাকুভ্যালী দারুন এনজয় করেছি’।
পাঞ্চালীর মুখ থেকে হঠাৎ করে মেঘ সরে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বলে, ‘উফ ভাবলেই মনে হয় এক ছুটে চলে যাই’।
শোভন বলে, ‘প্রকৃতির কি অদ্ভুত লীলা। বছরের পর বছর ধরে চুনাপাথর মেশানো জল গড়িয়ে অদ্ভুত, অদ্ভুত সব দেব-দেবীর আকার নিয়েছে’।
এঁটোবাসনগুলো রান্না ঘরে রেখে আবার ডাইনিং-এ ছুটে এসেছে পাঞ্চালী। তিতিরও উঠে এসেছে নিজের ঘর থেকে। দুম করে রেগে যাওয়াটা যেমন মেয়েটার মহাদোষ তেমনি টুপ করে রাগ পড়ে যাওয়াটা মেয়েটার একটা মহাগুণ। তিতিরকে দেখে মুখটিপে হাসে পাঞ্চালী। শোভন ঈশারায় তিতিরকে রাগাতে বারণ করে। তিতির হাত নাড়িয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে বলতে থাকে, ‘ভারতের সবথেকে বড়ো গুহা বরোকেভ। লক্ষ, লক্ষ বছর ধরে চুনাপাথর মেশানো জল পড়ে তৈরী হয়েছে অসংখ্য স্ট্যালাগাইট’।
শোভন বাঁ হাত দিয়ে মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে বলে, ‘চুনাপাথরের স্তম্ভ হল এই বোরো অর্থাৎ ফাঁকা। আর কেভ মানে গুহা। দুই মিলে, বোরোকেভ। প্রকৃতির গড়া স্থাপত্যকলার স্বপ্নপুরী। রহস্য, রোমাঞ্চে ভরা পাতালরাজ্য ভারতের এই বৃহত্তম বোরোগুহা’।
তিতির দু’হাত দিয়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘১৮০৭ সালে ব্রিটিশ জিওলজিস্ট উইলিয়াম কিং আবিষ্কার করেন এই গুহা। তারও একশো বছর পরে পর্যটকদের আসা শুরু হয়’।
তাতান এবার গম্ভীর গলায় বলে, ‘গুহাটা ৭২২মিটার উঁচু, ৩০০মিটার চওড়া, ৪০ মিটার গভীর আর ১১৮টা সিঁড়ি নেমেছে’।
শোভন ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘ওগুলোকে ধাপ বলে তাতান। সিঁড়ি হল মানুষের হাতের তৈরী। আর এ হল প্রকৃতির’।
পাঞ্চালী তাতানের চুল ঘেটে দিয়ে বলে, ‘তুমি সবসময় ওর ভুল ধরবে না তো। আমার তাতান সবকিছু কেমন মনে রেখেছে বলতো। আমার তো ভাবতে অবাক লাগে শ্রীরামচন্দ্র, সীতামা, লক্ষ্মণ বনবাসে থাকার সময় এই গুহায় অনেকদিন ছিল। ঐ শিবলিঙ্গ যার শিরে এখনও আপনা আপনি জল পড়ে, সেখানে পুজো করতো। আমরাও এখনও সেখানে প্রণাম করি, মনের ইচ্ছার কথা জানাই’।
তিতির বলে, ‘ওগুলো মিথ মা’।
শোভন মেয়েকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘মিথ ব্যাপারটা মাথায় নিয়ে সবকিছু দেখলে কিন্তু রোমাঞ্চের মজাটাই হারিয়ে যাবে। এই পৃথিবীর সবকিছু যুক্তি-তর্কের জালে না জড়িয়ে দেখতে হয়। তাহলে দেখবি মনের ক্ষতে আরাম পাবি’।
তিতির বাবার কথার পৃষ্ঠে উত্তর করে না। পাঞ্চালী স্বামীর সমর্থন পেয়ে হাসিমুখে বলে, ‘গুহার পাশ দিয়ে বয়ে চলা গোস্তানী নদীটা কি সুন্দর বলো তো?’
তিতিরও বলে ওঠে, ‘ঠিক বলেছো মা। ঠিক আমাদের এখানকার তিস্তা নদীর মতো। দেখলেই কাছে যেতে ইচ্ছা করে’।
শোভন বলে, ‘মনে হয় যেন নদীটা আমাকে ডাকছে। এসো আমার কাছে এসো’।
তাতান উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘আমাদের সমস্যাটার কিন্তু সমাধান হল না। এবার কোথায় যাব আমরা?’
পাঞ্চালী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ও বাবা বারোটা বেজে গেছে। আজ আর না কাল ঠিক করা যাবে। ওঠো, ওঠো সবাই উঠে পড়। তিতিরের বাবা তো অনেক রাতে শুয়েছি এই অজুহাতে কাল মর্নিংওয়াকে যাবে না নিশ্চয়ই’।
তিতির রাতের নিঃস্তব্ধতাকে ভেঙে খিলখিল করে হেসে ওঠে, ‘এটা তুমি একদম ঠিক বলেছো মা’।
শোভন নকল রাগ দেখিয়ে বলে, ‘এটা কিন্তু সেমসাইড গোল হয়ে গেল তিতির’।
তিতিরের ডান গালের টোলে তখনও দুষ্টু হাসিটা উঁকি দিচ্ছে।
কৃষ্ণপক্ষের রাত। বসন্তের ঝুরঝুরে বাতাস বইছে। আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকালে মনে হয় একটা বিশাল শ্লেটের উপর কেউ বুঝি একমুঠো বরফকুচি ছড়িয়ে দিয়েছে। কি অপূর্ব! বাতাসে সজনে ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে মাঝে মাঝে। চারপাশের প্রকৃতি নিঃশ্চল, নিঃস্পন্দ। দেখে মনে হয় যেন অজগরবৃত্তি পেয়ে বসেছে তাকে। শোভন শুয়ে শুয়ে অন্ধকার ঘরে ঘুরন্ত সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে নিজের সঙ্গে সন্ধি করে। পাঞ্চালী সংসারের দিনলিপিতে ক্ষয়ে যাওয়া ডানহাতটা স্বামীর বুকে রাখে। শাখা, পলা, চুরির একটা মৃদু ধাতব শব্দ হয়। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে শোভন বলে, ‘আমায় তোমরা ক্ষমা করো পাঞ্চালী। আমি অক্ষম, অপদার্থ এক পুরুষ’।
পাঞ্চালী স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ছিঃ ওভাবে বলো না। তুমিই তো আমায় শিখিয়েছিলে সত্যিকারের কিছু দেখতে গেলে চোখ বন্ধ করে দেখতে হয়। মনে আছে তখন তিতির সবেমাত্র জন্মেছে, তুমি আমাকে একদিন ভরা চৈত্রের খটখটে শুকনো গরমে বললে, এসো পাঞ্চালী আজ আমরা ঘরের ভেতর থৈ থৈ বর্ষার জল আনি। দরজা, জানলা বন্ধ করে দিয়ে আমরা টেপরেকর্ডারে মেঘমল্লারের সুর বাজাতে লাগলাম আর শুধু ভাবতে লাগলাম বৃষ্টির কথা। ব্যস কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাঁদ ফুঁড়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলো। আমরা দুজনেই সেই বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম। তিতিরকে ছাতা দিয়ে ঢেকে রাখি। দেখতে দেখতে ঘরের মেঝেতে জল জমতে লাগলো। ক্রমশঃ সেই জল বাড়তে বাড়তে আমাদের পায়ের পাতা ডুবিয়ে দিল। আমার এত আনন্দ হচ্ছিল যে খাটে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলি - ঝাপটা পুটি / পানের পুটি / পা ধুয়ে দে / ওপার নিবি না এপার নিবি / তা বলে দে’।
শোভন বলে, ‘তারপর, খবরের কাগজ দিয়ে নৌকো বানিয়ে ভাসিয়ে দিলাম সেই জলে। তুমি শাড়ী বাঁচিয়ে পা টিপেটিপে রান্না ঘরে গিয়ে খিচুড়ী বসিয়ে দিলে। পরদিন বাড়িওয়ালা জেঠীমার চৈত্রের কুটকুটে গরমে খিচুড়ি খেয়েছি শুনে চোখ কপালে উঠে যায়’।
শোভনের বুকে মুখ রাখে পাঞ্চালী। একটু আদুরে স্বরে বলে, ‘ওরা তো জানেই না আমাদের ঘরের মেঝেতে সত্যিসত্যি বৃষ্টির জল জমে ছিল’।
শোভন পাঞ্চালীর গলায় মুখ রাখে, ‘আমরা চাইলে এখনই আবার বৃষ্টি হতে পারে, তাই না পাঞ্চালী?’
পাঞ্চালী অস্ফুটে সম্মতি জানায়, ‘হু’।
তিতির আর তাতান একই ঘরে থাকে। দুটো জানলার পাশাপাশি দুটো খাট। মাঝখানে দু’জনের জন্য দুটো ডেস্ক। ছোটো ছোটো দুটো টেবিল আর চেয়ার। দেখলে মনে হবে যেন কোনো হোস্টেলের ঘর। তাতানের দিককার দেওয়ালে জীবনানন্দ দাশের বড়ো একটা ছবি ল্যামিনেশান করে বাঁধিয়ে রাখা। আর তিতিরের দিককার দেওয়ালে একটা বিশাল সাদা কাগজে অসংখ্য ছবির কোলাজ ফেভিস্টীক দিয়ে লাগিয়ে দেওয়ালের গায়ে সেলুটেপ দিয়ে লাগানো। কে নেই সেখানে! মারাদোনা, পেলে থেকে মেসি। অপর্ণা সেন থেকে রাইমা। ওদিকে অমিতাভ বচ্চন থেকে বাংলার হালের দেব। ওয়ার্ডসওয়ার্থ থেকে শ্রীজাত সকলেই সেখানে অসম সহাবস্থানে মিলেজুলে দিব্যি বিরাজ করছে। পাঞ্চালী একদিন ছবিটা দেখে মজা করে বলেছিল, ‘বুঝলে তিতিরের বাবা তিতিরের দেওয়ালের এই ছবির জঙ্গলটা দেখলে বোঝা যায় - যদি হই সুজন তো তেঁতুল পাতায় ন’জন’।
তিতির রেগে গিয়েছিল - ‘দেখছো বাবা আমার সব কিছুতে লেগপুল করা মার একটা স্বভাব হয়ে গেছে’।
শোভন মেয়েকে প্রশ্রয় দিয়ে হেসে বলে, ‘সত্যি তিতিরের মা এটা তোমার ভারী অন্যায়। ছবিটা দেখে তুমি ওর ভালো গুণ কিছু খুঁজে পেলে না! আমাদের তিতিরের একান্নবর্তী পরিবারে বিয়ে হলেও কত সুন্দর সংসার সামলাতে পারবে এটা তারই বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন’।
তিতির কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে, ‘বাবা তুমিও......’।
একই ঘরে দুই ভাই, বোন থাকলেও স্বভাবে দু’জন সম্পূর্ণ বিপরীত। পাঞ্চালী তো সবসময় বলে মেয়েটা আমার ছেলে হতে হতে মেয়ে হয়ে গেল আর ছেলেটা মেয়ে হতে হতে ছেলে হয়ে গেল। দুজনের দিককার দেওয়ালের রঙও ভিন্ন। ফ্ল্যাট কেনার পর দেওয়ালের রঙ করানোর সময় তিতির বলে দেয়, ‘মা, আমার দিককার দেওয়ালের রঙ হবে লাল’। আর তাতান জানায় তারটা স্কাই ব্লু। তাতান জঙ্গল ভালোবাসে। তিতির বরফে ঢাকা সুউচ্চ গিরিরাজকে। তাই গতবার যখন ভাইজাগ যাওয়া হল তখনই তিতির বলে রেখেছিল, ‘পরের ট্রিপ কিন্তু পাহাড় এবং অবশ্যই বরফ থাকবে সেই পাহাড়ে’।
শোভন একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাঝারি গোছের চাকরি করে। প্রতিষ্ঠানটিও খুব বড়ো নয়। পাসকোর্সের কমার্স গ্রাজুয়েট শোভনের এর থেকে বেশি কিছু হবে না সেটা কোথাও বুঝে গিয়েছিল শোভন। তাই আর চাকরির ইঁদুর দৌড়ে নিজেকে সামিল না করে বহুদিন ধরে একই পোস্টে জাবর কেটে যাচ্ছে। অবশ্য এ জন্য পাঞ্চালীও কিছুটা দায়ী। বিয়ের পর বৌয়ের যদি একটু আধটু দাবীদাওয়া না থাকে পুরুষ মানুষ তরতর করে এগোবে কি করে। শখ আহ্লাদ যাই বলো পাঞ্চালীর একটা ব্যাপারেই আছে তা হল বেড়াতে যাওয়া। নতুন নতুন জায়গা, নতুন নতুন ঘর-বাড়ি, সেখানকার গাছপালা, মানুষজন সবকিছু পাঞ্চালীকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। আর শোভন তো জন্ম থেকেই ভ্রমণপিপাসু। অজানাকে জানবার জন্য সব সময় একবুক পিপাসা নিয়ে বেঁচে থাকে। পাঞ্চালীকে জীবনসঙ্গিনী পেয়ে মনের আগল খুলে গেছে। তাই মনের ভেতর ওদের এখন চাকা লাগানো। বিয়ের পর ওরা সত্যিসত্যি হানিমুনে গিয়েছিল দিঘা। সেই প্রথম ওদের সমুদ্র দেখা। ত্রিশ আর ছাব্বিশের দুই যুবক, যুবতী এই প্রথম সমুদ্র দেখলো বিশ্বাস করা কঠিন। মধুচন্দ্রিমার মধুর থেকেও ওরা অনেক বেশি উপভোগ করেছিল সমুদ্রের নোনাজলকে। সেই যে নুন জলকে দেহে মনে সঙ্গী করে ওরা ফিরে এল তারপর থেকে সমুদ্র ওদের হাতের মুঠোয়।
ছেলেমেয়ে দুটোও হয়েছে তেমন। বাবা, মায়ের ভ্রমণ সংক্রামক ব্যাধি ওদেরও শিরা, উপশিরায় ছড়িয়ে গেছে। বেড়াতে যাওয়ার নামে দু’জনেই এক পায়ে খাড়া। তিতিরের যখন তিন বছর বয়েস শোভন তখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উচ্চতম গিরিশৃঙ্গের ছবিওয়ালা একটা ডেট ক্যালেন্ডার কিনে এনেছিল। ব্যাস মেয়ে নাওয়া-খাওয়া, পুতুল, রান্নাবাটি সব ফেলে সর্বক্ষণ সেই ক্যালেন্ডারের সামনে হা করে দাঁড়িয়ে থাকতো। মাকে একবার শুধু আঙুল দেখিয়ে আধো আধো স্বরে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘এটা কি?’ পাঞ্চালী ‘পাহাড়’ বলে দেওয়ার পর ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়ালো টেবিল ক্যালেন্ডারের ঐ ছবির পাহাড়গুলো। টিভিতে সিনেমা, নাচগান, ডিসকভারি চ্যানেল কোনো কিছুতেই পাহাড় পর্বত দেখলেই তিতির ছুটে যেত টিভির সামনে। আঙুল দেখিয়ে বলতো, ‘উই যে উই যে পাহাল’। সেকারণেই শোভন আর পাঞ্চালী মেয়ের পাঁচ বছরের জন্মদিনে সত্যিকারের পাহাড় দেখতে নিয়ে গিয়েছিল দার্জিলিঙে।
আর তাতান সে তো গাছ গাছ করে একেবারে পাগল। দু’কামরার ছ’শো তিরিশ ফুট ফ্ল্যাটে ততোধিক ছোটো ব্যালকনিটায় বসানো টব, ঝোলানো টবে নানান ফুল, পাতাবাহার গাছে এমন ভাবে ভরিয়ে রেখেছে যে দূর থেকে দেখলে যে কেউ ব্যালকনি না ভেবে ছোট্ট একটা বাগান বলেই মনে করবে। তাতানের ছ’বছর বয়েস পর্যন্ত সোনারপুরের একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতো ওরা। ছোটোবেলায় খাওয়া নিয়ে খুব ঝকমারি ছিল। ভীষণ ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবেরও ছিল তাতান। হঠাৎ তখন পাঞ্চালী আবিষ্কার করে গাছ-গাছালির কাছে নিয়ে গেলে ছেলে একদম চুপ করে থাকে। বড়ো বড়ো নরুনচেরা চোখদুটোয় গাছপালাদের অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো। গাছ দেখতে দেখতে মুখের খাবার থুঃ করে ফেলে না দিয়ে বিনা বাধায় খেয়ে নিত। তাতানের পাঁচ বছর বয়েসে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়। সে বছর সাংঘাতিক এক কালবৈশাখীর ঝড়ে শোভনদের সেই ভাড়াবাড়ির ছোট্টো বাগানটায় বেশ ক’টি গাছ উপড়ে ভেঙে পড়ে। ডালও ভাঙে অনেক। ঝড় থামলে সকলের সঙ্গে তাতানও বাগানে যায়। কিন্তু বাগানে গিয়ে ঐটুকু ছেলের সেকি আকুল কান্না। ছুটে ছুটে ভেঙে পড়া গাছগুলোর কাছে যাচ্ছে আর গায়ে হাত বোলাচ্ছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আধো আধো স্বরে বলছে, ‘ব্যাথা লেগেছে? ব্যাথা লেগেছে?’ সে বছরই শোভোন আর পাঞ্চালী ঠিক করে ছেলের এ বছর জন্মদিনের উপহার, সুন্দরবন বেড়াতে যাওয়া।
তিতির অনেকদিন ধরেই একটা ল্যাপটপের বায়না করে যাচ্ছিল। বায়নাটা শুধুমাত্র বাহানা না প্রয়োজনও আছে। আধুনিক প্রযুক্তি তো এখন মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। আর সেই প্রযুক্তির মাধ্যমে শোভনের পরিবার এখন সব পেয়েছির আসরের প্রথম সারির একজন। ল্যাপটপে নেট ক্যানেকশান জুড়ে দিলেই হয়ে গেল। সবকিছু হাতের মুঠোর মধ্যে। তাই স্বপ্ন মেখে ওরা এখন ভাত-রুটি খায়।
তিতির পরের দিন জানায় কি কারণে যেন ওদের সেমিস্টার পরীক্ষা এগিয়ে এসেছে। এখন সুইজারল্যান্ড, কাশ্মীর কোথাও যাওয়া যাবে না।
তাতান বলে, ‘এমা আমি কত আশা করে আছি’।
শোভোন বলে, ‘ও ঠিক আছে দু’দিনের জন্য কোথাও গেলে কিছু হবে না’।
তাতান বলে, ‘তাহলে ঘাটশিলা চলো’।
তিতিরও আর খুঁতখুঁত করে না। বলে, ‘ডাটাগুলো নিয়ে নিস ভাই’।
তাতান হাসিমুখে বলে, ‘সে আমার নেওয়া হয়ে গেছে। তবে একটা সোমবার আমাদের ওখানে থাকতে হবে’।
তিতির ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কেন?’
তাতান উত্তর দেয়, ‘প্রতি সোমবার গালুডি পাহাড়ের নীচে আদিবাসিদের হাট বসে’।
তিতিরের চোখমুখ উজ্বল হয়ে ওঠে। পাঞ্চালীও উৎসাহের সঙ্গে বলে ওঠে, ‘বেশ বেশ আমরা তাহলে এই শনিবার না রবিবার যাব। শুনছো তুমি ট্রেনের নামটাম জেনে নিও’।
শোভন ‘হুঁ’ বলে উঠে পড়ে। তারপর ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ে বলে, ‘ওখানে সুবর্ণরেখা নদী আছে। ওখানকার কিছু লোক সারাদিন আজলা ভরে জল তুলে ছেঁকে ছেঁকে সোনা খুঁজে চলে। এটাই ওদের জীবিকা’।
তিতির জিজ্ঞাসা করে, ‘পায় বাবা?’
‘কখনও পায় কখনও পায় না’, ম্লান হাসে শোভন।
পাঞ্চালী গর্বিত চোখে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সত্যি মানুষটা কত কিছুর খোঁজ রাখে।
শনিবার শোভন ওদের জানিয়ে দেয়, ‘কাল সকালবেলাই ট্রেন’।
পাঞ্চালী ওদের ঠিকে কাজের মেয়েটিকে ছুটি দিয়ে দেয়। সেই কোন ভোরে উঠে যা হোক কিছু রান্না সেরে নিয়েছে পাঞ্চালী। তিতির আজ মায়ের হাতে হাতে অনেক কাজ করেছে। ওরা প্ল্যানচেট করবার মতো খাটের ওপর ল্যাপটপটাকে ঘিরে গোল হয়ে বসেছে। তাতান মোডেম গুঁজে নেট অন করে। আই.আর.সি.টি.সি.-তে গিয়ে হাওড়া থেকে ঘাটশিলা ট্রেনের যাত্রাপথ বার করে। ঐ তো ছটা পঞ্চাশে হাওড়া ছাড়লো ইস্পাত। পাঞ্চালী অভ্যাস বশে কপালে হাত ছোঁওয়ায়। ফিসফিস করে বলে, ‘মাত্র তো তিন সাড়ে তিন ঘণ্টার রাস্তা’।
তাতান, তিতিরের দুজনেরই জানলার পাশে সিট। শোভন বলে, ‘তোদের মা ভাগ্যিস এসির টিকিট কাটতে নিষেধ করেছিল। নতুবা প্রকৃতির এই সুন্দর ঝিরঝিরে বাতাসের স্পর্শই পেতাম না’।
দেখতে দেখতে ওরা বাউড়িয়া, উলুবেড়িয়া, বাগনান, মেচেদা, পাঁশকুড়া, বালিচক স্টেশনগুলো পার হতে থাকে। খড়গপুর আসার পর পাঞ্চালী লুচি, তরকারি বার করে। তিতির, তাতান দুজন মিলে স্টেশন থেকে ফ্রুটি কিনে আনে। পাঞ্চালী কফি আর শোভন লিকার চা খায়। তিতির বলে, ‘বাবাকে বললাম সরাসরি গালুডি চলো, তা না ভাইয়ের কথা শুনে প্রথমে ঘাটশিলায় এল’।
শোভন বলে, ‘ঘাটশিলায় ‘অপুর পথ’ এর ওপর বিভূতিভূষণের বাড়ি না দেখে আগে কোথাও যাওয়া যায়’?
ঘাটশিলা এসে বিভূতিভূষণের ব্যবহার করা জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো সংগ্রহশালাটা দেখে তাতান বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কোনোরকমে বলে, ‘বাবা আমি ভাবতেই পারছি না এগুলোয় আরণ্যকের লেখকের হাতের ছোঁওয়া আছে। ওনার হাতের স্পর্শ আছে এসবের ভেতর’।
তবে ফুলডুংরি পাহাড়ে গিয়ে চারজনেরই মন খারাপ হয়ে যায়। এমা! প্রকৃতিকে ধ্বংস করে পার্ক টার্ক বানিয়ে যা তা করে রেখেছে সভ্য দুনিয়ার মানুষ। তবে লাল মোরামের রাস্তা, আর কালটা বসন্ত হওয়ায় দু’ধারে পলাশের লাল আগুনের হাতছানি ওদের মুগ্ধ করে। তিতির বলে ওঠে, ‘অসম। জাস্ট ভাবা যায় না’।
দু’পাশের সবুজ বনানীর হাতছানি ওদের বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়ে ওরা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় বুরুন্ডি জলাধার হয়ে ধারাগিরি জলপ্রপাতের তীরে। পাঞ্চালী বলে, ‘হ্যাঁগো, সুবর্ণরেখা নদী দেখালে না তো?’
শোভন বলে, ‘দেখাবো, দেখাবো। চলো আগে হোটেলে গিয়ে স্নান খাওয়া করে নিই। উল্টোদিকে যাদুগোড়া রাস্তার উপর রুক্ষ্মিনী মন্দির আছে। পুজো দেবে না? খুব জাগ্রত’।
ব্যস অমনি পাঞ্চালী বলে, ‘তালে আগে পুজো দেব তারপর খাব’।
তিতির, তাতান বিদ্রোহ করতে যাচ্ছিল। শোভন বলে ওঠে, ‘উহু, কর্ত্রীর ইচ্ছায় কর্ম’।
রুক্ষ্মিনী দেবীর মন্দিরে ওরা পুজো দিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
তিতির বলে, ‘বাবা, হোটেল আগে থেকে বুক করা উচিৎ ছিল’।
শোভন বলে, ‘এখনই করে নিচ্ছিরে’।
তাতান বলে, ‘বাবা ঐ যে হোটেল বাতাস ওখানে ক্লিক করো’।
তিতিরের গলায় আব্দার ঝরে পড়ে, ‘বাবা প্লীজ দুটো রুম নাও। এসি’।
শোভন হেসে সম্মতি জানায়।
পাঞ্চালী অবাক হয়ে গিয়ে বলে, ‘ওমা! কি সুন্দর হোটেল। বাবা ঝরণা, সুইমিং পুল সব আছে। ঘরের ভেতরটাও কি সুন্দর গো! এত সুন্দর হোটেলে এই প্রথম থাকলাম’।
তাতান বলে, ‘আমি এখন আর কোথ্থাও যাব না’।
তিতির বলে, ‘আমিও। সেই একেবারে কাল গালুডি যাব’।
পাঞ্চালী যেন কি বলতে যাচ্ছিল। শোভন পাঞ্চালীর ডান হাতের পাতায় চাপ দিয়ে মৌনতায় কিছু বলে।
আজ সোমবার। গালুডির হাট আছে। আজ অবশ্য পাঞ্চালী কাজের মেয়েটিকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। উমার এ বাড়ীর লোকগুলোর রকমসকম ভারী অদ্ভুত লাগে। কোথাও কোনোদিন যায় না। কিন্তু মাঝেমাঝেই উমাকে ছুটি দিয়ে বলে, ‘উমা ক’দিন আমরা থাকবো না। তোমার ছুটি’। প্রথম, প্রথম কেমন সন্দেহ হতো। এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। শোভন ওদের বলে, ‘আজকের জন্য গালুডি রিসর্ট বুক করে দিলাম’। অফিসে সত্যিসত্যি ছুটির দরখাস্ত দিয়েছে সে।
তন্ময় বলছিল, ‘বেশ আছো তোমরা। এই তো ক’দিন আগে কোথায় যেন ঘুরে এলে’।
অর্ক আড়ালে বলে, ‘কোথায় টাকা পায় এত কে জানে! আমাদের তো দু’বছরে একবার কোথাও যেতে গেলে পেছনের কাপড় ফেঁসে যায়। আর শোভোন সেখানে পুরো সেলিব্রিটির লাইফ লীড করে’।
গালুডি রিসর্টের বিভিন্ন ছবি ঘুরিয়ে, ফিরিয়ে দেখতে দেখতেই ওদের বেলা কাবার হয়ে যায়। এখন ঋতুরাজের অনবদ্য সাজে সেজে আছে গালুডির প্রকৃতি। তিতির নাকি সুরে বলেই চলেছে, ‘দূঁর বাবা এরা রিসর্ট থেকে বেরই হতে চাইছে না। ওঁদিকে হাট বসে গেছে’।
মাহুলিয়ার পাশ দিয়ে পায়ে চলা পথ বেয়ে ওরা নেকরেওডুঙ্গরি পাহাড়চূড়োয় পৌঁছে যায়। যতদূর দেখা যায় সবুজ আর সবুজ। তাতানের মনে হয় সে বুঝি আনন্দে পাগল হয়ে যাবে। পাহাড়ের উপরে ছোট্টো কালীমন্দিরে দাঁড়িয়ে পাঞ্চালীর আনন্দে চোখে জল চলে আসে। পাঞ্চালী বলে, ‘তোমরা ঘুরে এসো। আমি এখানে কিছুক্ষণ বসবো’।
তাতান বলে, ‘মা, পাহাড়ের নীচ দিয়ে ঐ যে পুরুলিয়ার দুয়ারসিনির দিকে যে পাহাড়, জঙ্গলের ঘেরাটোপের ভেতর দিয়ে রাস্তাটা চলে গেছে, ঐ রাস্তাটা দিয়ে আমি একা একটু হেঁটে আসছি’।
তিতির বলে, ‘দাঁড়া ভাই, আমি তোর সঙ্গে গিয়ে সাতগুরুম নদীটা দেখে একটু হাটে যাব’।
শোভন বলে, ‘তাতান বেশিদূর একা একা যেও না। ঐ দিকটা মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা। তাড়াতাড়ি হাটে চলে যেও। তিতির তুই যা একটু পরে আমি তোর মাকে নিয়ে হাটে আসছি’।
গালুডির হাটে সাধারণতঃ আদিবাসী দেহাতী মানুষেরই ভীড় বেশি। তার মধ্যে ট্যুরিস্টদের আলাদা করে চিনে নিতে কোনো অসুবিধা হয় না। মাথায় পলাশফুল গুঁজে, বেশিরভাগ লালপেড়ে সাদা শাড়ি অথবা জংলীছাপার শাড়ি পরে মেয়েরা দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিতিরের খুব ইচ্ছা করে ওদের মতো করে সেজে ওদের সাথে ঘুরতে। মাটির হাঁড়িতে করে হাঁড়িয়া বিক্রী হচ্ছে। শোভন আর পাঞ্চালীও ওদের কল্পনার সিঁড়ি বেয়ে গুটি গুটি পায়ে হাটে এসে পৌঁছেছে। শোভন পাঞ্চালীকে চিমটি কেটে বলে, ‘খেলে হত’।
পাঞ্চালী চোখ পাকায়। কিন্তু তাতান কই? ওমা, ঐ তো তাতান। তন্ময় হয়ে ঐ শাল গাছটার তলায় বুড়ো বাঁশিওয়ালার বাঁশি শুনছে। শোভোন বলে, ‘ওকে ডেকো না। শুনতে দাও’।
খানিকদূরে আদিবাসিদের মাদল বাজতে শুরু করে। দ্রিম...দ্রিম...দ্রিম। কিন্তু আদিবাসি মেয়েগুলোর মাঝখানে ও কে! তিতির না? হ্যাঁ তিতিরই তো! পাঞ্চালী আঙুল তুলে বলে, ‘দেখো, দেখো আমাদের মেয়েটা কেমন সেজেছে!। লালপেড়ে সাদা খোলে শাড়ি। মাথায় ফুলও গুঁজেছে আবার। কি সুন্দর লাগছে ওকে। ঠিক যেন বনদেবী’।
একদল ছেলের মাদলের বোলের সাথে মেয়েগুলো একে অপরের কোমর ধরে ধরে নাচছে। তিতিরও ওদের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে ঝুঁকে ঝুঁকে কেমন সুন্দর নাচ্ছে। পাঞ্চালী হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখে শোভন নেই। পাঞ্চালী পাগলের মতো শোভনকে খুঁজতে খুঁজতে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে পোঁছোয়। ঐ তো শোভন। কিন্তু হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে নিচু হয়ে কি করছে! পাঞ্চালী কাছে যেতেই শোভন ফিসফিস করে বলে, ‘পাঞ্চালী আমি রুমাল দিয়ে নদীর জল থেকে বালি ছেঁকে ছেঁকে সোনা খুঁজছি। তুমিও বুকের থেকে শাড়ির আঁচল নামিয়ে দাও। বালি ছেঁকে সোনা খুঁজতে থাকো’।
বুকের আঁচল ফেলে স্বামীর কথা মতো পাঞ্চালীও স্বামীর সাথে সোনা খুঁজতে থাকে। কিন্তু জলের তলা থেকে ফুঁপিয়ে ওঠা একটা কান্না শোনা যায়। কে কাঁদছে অমনভাবে ওখানে!