এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা

  • রবীন্দ্রনাথের জনশিক্ষার আদর্শ ও শ্রীনিকেতন

    সীমান্ত গুহঠাকুরতা
    আলোচনা | ১৮ মে ২০২১ | ৩৯৭১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (৪ জন)
  • ১.
    “যে বিদ্যা পুঁথিগত, যাহার প্রয়োগ জানা নাই, তাহা যেমন পণ্ড, তেমনি যে শিক্ষাপ্রণালীর আমাদের আয়ত্তের অতীত তাহাও আমাদের পক্ষেন তেমনি নিষ্ফল।“ --- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লর্ড কার্জন প্রবর্তিত ইউনিভার্সিটি বিলের বিরুদ্ধতা করে লেখা, ১৩২১ বঙ্গাব্দে।)
    তারের জাল দিয়ে ঘেরা, প্রতিটা প্রবেশপথে সিকিউরিটি গার্ডের কড়া নজরদারি (এবং খবরদারি) এবং রাজনৈতিক দুর্বত্তায়নে কলুষিত শান্তিনিকেতনকে দেখে ইদানীং যাঁরা যারপরনাই হতাশ হয়ে পড়েন, তাদের জন্য লেখার শুরুতেই রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি দিই। ১৯৩০ সালে সোভিয়েত রাশিয়া ভ্রমণের সময় সেখানকার একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মুখোমুখি কথোপকথন হয়। সেখানকার শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ছিল, ‘আপনার ছাত্ররা সমাজের কোন অবস্থা থেকে এসেছে? চাষী-মজুর প্রভৃতি ঘরের শিশুরা আছে কি?’ এর উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেন,”আমাদের ওখানে কোনো বাধা নেই। পাশের গ্রামগুলোতে যে আদিবাসীরা থাকে, তাদের মধ্যে থেকে কিছু ছাত্র নেবার চেষ্টা একবার করেছিলাম। কিন্তু আমাদের ছাত্রদের সঙ্গে তাদের রাখা খুবই কঠিন … কিন্তু পাশের যে গ্রামে আমরা কাজ করছি সেখানে গ্রামবাসীদের জন্য একটি বিশেষ ইস্কুল খোলা হয়েছে। এই তফাৎটা কেন করলেম এ প্রশ্ন আপনারা করতে পারেন। উচ্চশ্রেণীর লোকেদের জন্য যে ইস্কুল, গ্রামের ছেলেমেদের কেন সেখানে পড়তে দিলেম না? তার কারণ অপেক্ষাকৃত ধনী ঘর থেকে যারা আসে তারা সবাই জীবিকা নির্বাহের জন্য পরীক্ষা পাশ করে ডিগ্রী নিতে উৎসুক। তাই তাদের আদর্শ শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। যেমন হাতের কাজ এমন কি সঙ্গীত আর শিল্পকলায় তারা সময় নষ্ট করতে চায় না। তারা চায় পড়া মুখস্থ করে কোন রকমে পাশ করে বেরিয়ে যেতে। আমাকে এ জিনিস কিছুটা মেনে নিতে হয়েছে, তা না হলে আমার ইস্কুলে একটি ছাত্রও থাকত না। … সেই কারণেই আমি আরেকটি ইস্কুল খুলি। সেটি গ্রামের যাদের সরকারি বা সওদাগরি অফিসে চাকরির উচ্চাশা নেই তাদের জন্য।“

    যে প্রতিষ্ঠানটি তার মহান শিক্ষাদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ছে বলে আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে আমরা হা-হুতাশ করছি, দেখা যাচ্ছে যে, তার প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং তাঁর জীবদ্দশাতেই সেটিকে নিয়ে রীতিমত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বলতে গেলে প্রায় শুরুর দিনগুলো থেকেই তৎকালীন বাংলার সমাজের অভিজাত উচ্চবর্ণীয়দের কায়েমি স্বার্থতন্ত্রের চাপে পড়ে গিয়েছিল শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রম। ‘শিক্ষা’ ব্যাপারটাকে যেভাবে দেখতেন ও বুঝতেন, রবীন্দ্রনাথ, সেই স্বার্থতন্ত্র তার ফলিত প্রয়োগে পদে পদে বাধা দিচ্ছিল। জেনে অবাক লাগে যে, ব্রহ্মচর্যাশ্রমের একেবারে শুরুর দিকেই ছাত্রদের জাতি অনুযায়ী বিভিন্ন রঙের পোশাক পরতে হত। ব্রাহ্মণেরা পরত সাদা পোশাক, বৈদ্য-কায়স্থরা লাল আর বৈশ্যরা হলুদ। (শূদ্র ছাত্র তখনও একটিও ছিল না, তাই তার জন্য পোশাকের রঙ নির্দিষ্ট করারও প্রয়োজন পড়েনি।) খাবার সময়েও ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ ছাত্রদের পৃথক পংক্তিতে বসতে হত। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার রীতি থাকলেও মাতব্বরদের প্রবল বিরোধিতায় প্রথম অব্রাহ্মণ শিক্ষক কুঞ্জলাল ঘোষকে হাত জোড় করে নমস্কার করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন রবীন্দ্রনাথ।

    এ তো গেল সামাজিক আচার-বিচার সংক্রান্ত চাপ, যা রবীন্দ্রনাথকে সামলাতে হয়েছিল। কিন্তু এর পাশাপাশি শিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাটাকেই ভিতর থেকে বদলে দেবার জন্য রীতিমত অন্তর্ঘাত চলতে থাকে। বস্তুত রবীন্দ্রনাথের নোবেল পাওয়ার পর থেকেই শান্তিনিকেতনে এই মারণ-জীবাণু প্রবেশ করে। নোবেল-প্রাপকের বিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়িয়ে আত্মপ্রসাদ ও সামাজিক গরিমাবৃদ্ধির তাড়নায় সেখানে সামাজিকভাবে উচ্চ আর ধনী অভিজাত শ্রেণীর ভিড় বাড়তে থাকে। এই শ্রেণীটির অর্থ এবং তজ্জনিত ক্ষমতার জোর ছিল প্রবল। মূলত তাঁদের চাপেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক অবাঞ্ছিত পরিবর্তনেও সায় দিতে বাধ্য হন। আগে এখানে মণ্ডলীপ্রথায় শিক্ষা হত, অর্থাৎ ছাত্র-শিক্ষক একই সঙ্গে মাটিতে বসে পড়াশুনা হত। তিরিশের দশকেই তার পরিবর্তে শিক্ষকদের জন্য উঁচু মাটির বেদী তৈরি হয়। খাওয়াদাওয়ার পর ছাত্রদের নিজেদের বাসন মেজে নেবার রীতিও উঠে যায়। ছবি আঁকা, গান, হাতের কাজ, গ্রামসেবা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মূল পাঠক্রম থেকে সরিয়ে ‘আনুষাঙ্গিক পাঠক্রমে’ পরিণত করা হয়। ১৯৩১ সালে বিশ্বভারতীর তরফে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাতে শান্তিনিকেতন ওই সময় কী কী বিষয়ে পঠন পাঠন হয় এবং কী কী পরীক্ষা বা ডিগ্রি দেওয়া হয়, তার উল্লেখ ছিল। তাতে এও জানানো হয়েছিল যে, বিশ্বভারতীর ছাত্রদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আই.এ এবং বি.এ পরীক্ষা দেবারও ব্যবস্থা আছে। মহান রাবীন্দ্রিক শিক্ষাদর্শ থেকে মুখ ঘুরিয়ে এই যে বিশ্বভারতীর কেরানী-গড়ার প্রথাগত শিক্ষার দিকে চলন, তা-ই রবীন্দ্রনাথকে হতাশ করে তুলেছিল। ১৯২৫ সালে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানাচ্ছেন, “একদিন এই কলেজের বিরুদ্ধে মাথা তুলেই একলা আমার তরী ভাসিয়েছিলুম --- কিন্তু তরী ঘুরেফিরে এলো সেই কলেজের ঘাটেই। বসে বসে দেখছি … শান্তিনিকেতন আপন আইডিয়ালের গর্ব ভাসিয়ে দিয়ে ছেলে পাশ করাচ্ছে। … ভাগ্যে ছিল আমার কলাভবন এবং শ্রীনিকেতন। আমার শেষ বয়সের সমস্ত চেষ্টা যদি ঐ কলাভবন সংগীত ভবনের জন্য দিতে পারতুম … মনে করতুম জীবন সার্থক হয়েছে।“

    বস্তুত বিশ্বভারতীর এই চরিত্রগত পরিবর্তনই রবীন্দ্রনাথকে শিক্ষার প্রশ্নে ‘বিশেষ’ থেকে ‘সাধারণে’ নিয়ে যায়। চরিত্রগতভাবেই কিন্তু শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম বা বিশ্বভারতী কোনোদিনই ‘সাধারণের জন্য’ ছিল না। প্রশ্নটা ঠিক জাতপাতের নয়। পরবর্তীকালে সুদূর পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর থেকে মুজতবা আলি শান্তিনিকেতনে পড়তে আসতে পেরেছিলেন, কারণ জাতপাতের বন্ধন ততদিনে সেখানে অনেকটাই শিথিল। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, মুজতবা আলী ছিলেন রীতিমত ধনী শিক্ষিত অভিজাত ‘সৈয়দ’ বংশীয় মুসলিম। যখন মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়ছেন, তখনও কিন্ত বোলপুরের কোনো গ্রামের প্রান্তিক কৃষক পরিবারের বা আদিবাসী সমাজের কোনো বালক সেখানে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে এ ছিল রবীন্দ্রনাথের কাছে স্বপ্নভঙ্গের সামিল। কারণ আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত অথবা ইতিমধ্যে জ্ঞানের আলোকপ্রাপ্ত শ্রেণির জন্য তিনি ইস্কুল তৈরি করেননি।

    ভারতীয় শিক্ষার আদর্শটিকেই তিনি বদলাতে চেয়েছিলেন। কেরানি তৈরির পাঠক্রম থেকে বার করে এনে ভারতবাসীকে আত্মশক্তিতে জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন তিনি। ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ লিখেছিলেন বটে রবীন্দ্রনাথ, তবে তিনি সেই সেই অর্থে জাতীয়তাবাদী ছিলেন না। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির যে প্রবল স্রোতে তখন আসমুদ্র হিমাচল ভাসমান, নিজের শিক্ষাকেন্দ্রটিকে তার বাইরেই রাখতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি লিখেছিলেন, ‘I refuse to waste my manhood in lighting the fire of anger and spreading it from house to house” এবং পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, “Santiniketan must be saved from the whirlwind of the dusty politics”. পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধী শান্তিনিকেতনে পদার্পণ করলেও সেখানে গৃহীত হয়েছিলেন, একজন অতিথির পূর্ণ মর্যাদায়, তার বেশি কিছু নয়। শিক্ষার মাধ্যমে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে এক বিশ্বমানব তৈরির আদর্শে বিশ্বাস করতেন তিনি। বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার গিয়ে কবি সেই শিক্ষার মাধ্যমে শ্রেণিচেতনাহীন বিশ্বমানব তৈরির কার্যক্রমকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন, সেই শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ ভাষা পাচ্ছে, আত্মশক্তিতে বলীয়ান হচ্ছে। সোভিয়েত রাশিয়ার সেই শিক্ষাপ্রণালী দেখে রবীন্দ্রনাথ জনশিক্ষার আদর্শ সম্পর্কে নিজের ধারণার সমর্থন পান, তিনি লেখেন, “এখানে এসে দেখলুম, এরা শিক্ষাটাকে প্রাণবান করে তুলেছে। তার কারণ এরা সংসারের সীমা থেকে স্কুলের সীমাকে সরিয়ে রাখেননি। এরা পাস করবার কিংবা পণ্ডিত করবার জন্য শেখায় না – সর্বতোভাবে মানুষ করবার জন্য শেখায়।“

    ২.
    “Education be conceived as life, and not as prepartion for life” – L.K. Elmhirst.
    শিক্ষার এই আদর্শ থেকে যখন শান্তিনিকেতন বিচ্যুত হতে শুরু করল, তখনই রবীন্দ্রনাথের মন তার থেকে উঠে গেল এবং তিনি মনোনিবেশ করলেন শ্রীনিকেতনে। অথচ ইতিহাসের দুর্ভাগ্য এই যে, আন্তর্জাতিক খ্যাতিতে সমুজ্জ্বল ‘শান্তিনিকেতন’-এর আড়ালেই থেকে গেছে শ্রীনিকেতন, বরাবরই। প্রদীপের নিচের অন্ধকারটুকুর মতন। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই শান্তিনিকেতনে পূর্বোক্ত অভিজাত শ্রেণির দাপাদাপি, যারা সবসময়ই যাবতীয় প্রচারের আলোকে নিজেদের দিকে টেনে নিতে দক্ষ। দ্বিতীয় কারণ সম্ভবত এই যে, শ্রীনিকেতনের যাবতীয় কাজকর্ম কেন্দ্রীভূত ছিল তথাকথিত ‘ছোটলোক’-দের নিয়ে। এবং তাতে কোনো মহান সমাজবিপ্লবের প্রতিশ্রুতিও ছিল না। এমনিতেই রবীন্দ্রনাথ মানুষটি অন্তঃসারশূন্য আড়ম্বর বা দেখানাপনার বিরোধী ছিলেন বরাবরই। তাই নোবেল-প্রাপকের ইস্কুল হিসেবে শান্তিনিকেতন যে ‘মহত্ত্ব’ অর্জন করতে পেরেছিল, শ্রীনিকেতনের বরাদ্দে তার কিছুই জোটেনি।

    শ্রীনিকেতনকে কেন্দ্র করে যে বিপুল কর্মকাণ্ড রবীন্দ্রনাথ শুরু করেছিলেন, তার পিছনে কোনো রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা যে তাঁর ছিল না, তা মোটামুটি পরিষ্কার। তবে জাতি হিসেবে বাঙালি তথা ভারতীয়দের আত্মশক্তিতে জাগরিত করার যে বৃহত্তর লক্ষ্য তার ছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সেই উদ্দেশ্যে রীতিমত আটঘাট বেঁধেই তিনি নেমেছিলেন। তাঁর পল্লী-উন্নয়ন সংক্রান্ত ভাবনার মূল নীতি ছিল তিনটি – আত্মশক্তি, সমবায় ও উন্নয়ন। শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই ১৯০৮ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গে শিলাইদহ, পতিসর ইত্যাদি এলাকায় তিনি সমাজ ও পল্লি পুনর্গঠনের কিছু কিছু কাজ শুরু করেছিলেন। সঙ্গী ছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও কয়েকজন উৎসাহী যুবক। এরই মধ্যে ১৯১২ সালে শান্তিনিকেতনের নিকটবর্তী সুরুল গ্রামের একটি পরিত্যক্ত কুঠিবাড়ি কিনে রাখেন রবীন্দ্রনাথ এবং এখানেই ১৯২১-এ প্রতিষ্ঠা করেন ‘পল্লীসংঠন কেন্দ্র’। ১৯২২ সালে ইংল্যান্ড থেকে এসে লেনার্ড নাইট এলম্‌হার্স্ট এই সংস্থার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তী বছরগুলোতে এই এলম্‌হার্স্টেরই উদ্যোগে এবং পরিকল্পনায় শ্রীনিকেতনের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে।

    এলম্‌হার্স্টের উদ্যোগে প্রথমেই শান্তিনিকেতন সন্নিহিত গ্রামগুলির বাসিন্দাদের নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা চালানো হয়। সেই সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে গ্রামগুলির বাসিন্দাদের প্রাথমিক এবং মৌলিক চাহিদাগুলোকে জেনে বুঝে নেওয়া হয়। তারপর একে একে প্রতিষ্ঠা হয় ‘লোকশিক্ষা সংসদ’, শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্র ’শিক্ষাচর্চা’, কৃষি-কলেজ ‘পল্লীশিক্ষাসদন’, ‘শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র’ ইত্যাদি সংস্থা। দরিদ্র ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে যে শিক্ষাসত্র নামের আলাদা শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি করেছিলেন, সেটিকেও তিনি তুলে নিয়ে যান শ্রীনিকেতনে। এছাড়াও পল্লীসংগঠন কেন্দ্র ও শিল্পসদন সংযুক্ত হয়ে তৈরি হয় ‘পল্লীসংগঠন বিভাগ’, এর অন্তর্গত ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন, গো-পালন ইত্যাদি। ছিল বয়স্কশিক্ষার জন্য ‘নৈশ বিদ্যালয়’। এছাড়াও মেয়েদের সমস্যা সমাধানের জন্য স্থাপিত হয়েছিল ‘মহিলা সমিতি’। শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধের জন্য দাইয়ের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শ্রীনিকেতনের তরফে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হল ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার ‘চলন্তিকা’। এই পাঠাগার গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাসিন্দাদের বই বিলি করত। এইভাবে যাদের পক্ষে বিদ্যালয়ে আসা সম্ভব হত না, শিক্ষাকে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করা হয়।

    তবে রবীন্দ্রনাথের যে দুটি বিশেষ উদ্যোগের কথা আলোচনা না করলে জনশিক্ষা প্রসারে তাঁর ভূমিকার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যেই দুটি হল ব্রতীদল সংগঠন এবং গ্রন্থপ্রকাশনা। শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আশেপাশের গ্রামগুলিতে মানুষের বিপদে আপদে ছাত্রদের যোগদানের জন্য এই ব্রতীদল গঠন করেন রবীন্দ্রনাথ। শুধু ছাত্রদেরই নয়, ১৯২৩ সালে স্নেহলয়া সেন ও মিস গ্রেচেন গ্রীনকে নিয়ে মেয়েদেরও গাইড দল গঠিত হয়। গার্ল গাইডদের প্রশিক্ষণের জন্য কলকাতার আন্তর্জাতিক গার্ল গাইডের পরিচালিকা মিস মৌলকে শানিতিকেতনে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসা হয়। রবীন্দ্রনাথ এই দলের নাম রাখেন ‘গৃহদীপ’। পরে এই দলের নাম দেওয়া হয় ‘সহায়িকা’। এই ব্রতীদল ও গৃহদীপ গ্রামে গ্রামে ঘুরে আবর্জনা সাফাই, জঙ্গল পরিষ্কার থেকে থেকে শুরু করে শিশুদের শিক্ষাদান – সমস্ত কাজই করত। ১৯৩০ সালের শ্রীনিকেতনের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে বিনুরিয়া, লোহাগড়, বাহাদুরপুর, ভুবনডাঙা ও বাঁধগড়া – এই পাঁচটি গ্রামে ৫০৫৯২ গ্রেন কুইনাইন বিলি হয়, ১১৯ টি ডোবাতে ৫৪ পাউন্ড কেরোসিন ছেটানো হয় এবং ৭৮টি ডোবা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এই পুরো কাজটাই করেছিল ব্রতীদলের সদস্যরা। ব্রতচারী এবং স্কাউটের আদলে কঠোর নিয়মবিধির মধ্যে ব্রতীদলের সদস্যদের জীবনযাপন করতে হত। প্রতিদিন নিয়ম করে তাদের নানা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রশিক্ষণ নিতে হত। সেই শিল্পের তালিকায় বেতের ঝুড়ি বোনা থেকে চামড়া ট্যান করা পর্যন্ত অনেক কাজই ছিল। ব্রতীদলের আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি সেই সময় গ্রাম-বাংলায় এতটাই সারা ফেলেছিল যে, ১৯২৪ সালে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলায় কুড়িটিরও বেশি কেন্দ্র তৈরি হয় ব্রতী দলের এবং সর্বমোট সভ্যসংখায় ছশো ছাড়িয়ে যায়।

    ইউরোপ পরিভ্রমণকালে রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন যে, ইউরোপের স্বল্পশিক্ষিত শ্রমজীবী জনসাধারণের জন্য উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয় সহজ ভাষায় এবং সুলভে পৌঁছে দেবার জন্য ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেও দরিদ্র জনসাধারণের জন্যও একই ব্যবস্থার প্রসার জরুরি বলে মনে করেছিলেন তিনি। সেই উদ্দেশ্যেই ‘লোকশিক্ষা সংসদ’ থেকে ‘বিশ্ববিদ্যা প্রকাশন’-এর পরিকল্পনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যা প্রকাশনে ছয়টি বিভাগ ছিল আলাদা আলাদা সম্পাদকবৃন্দের অধীনে – দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস-ভূগোল-অর্থনীতি, সাহিত্য-সাহিত্যের ইতিহাস-ভাষা, কলা এবং শিক্ষাবিজ্ঞান। স্থির হয়েছিল যে বিশ্ববিদ্যা সংগ্রহে বইগুলির ২০০ থেকে ২৫০ পাতার বেশি দীর্ঘ হবে না এবং দাম ১২ আনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যা প্রকাশনের পরিকল্পনা নানা কারণে কিছুদিনের জন্য স্থগিত থাকে এবং পরে এই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই প্রকাশিত হয় ‘লোকশিক্ষা গ্রন্থাবলী’। সর্বমোট ১৩৩টি বই প্রকাশিত হয়েছিল সেই লোকশিক্ষা-গ্রন্থমালায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা’, প্রমথনাথ সেনগুপ্তের ‘পৃথিবীর পরিচয়’, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রাণতত্ত্ব’, উমেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘ভারতদর্শন সার’, নির্মলকুমার বসুর ‘হিন্দু সমাজের গড়ন’ ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর অনেকদিন পর পর্যন্ত এই লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা বা বিশ্ববিদ্যা সংগ্রহের বই প্রকাশের কাজ অব্যাহত থাকে।

    আমাদের সমস্যা হল, রবীন্দ্রনাথকে আমরা আটকে ফেলেছি শান্তিনিকেতনের চৌহদ্দিতে, আর শান্তিনিকেতনকে আটকে ফেলেছি রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাবিষয়ক হাতে-গোনা কয়েকটি প্রবন্ধের চৌখুপীতে। ফলে প্রবল বেসরকারিকরণের হওয়া শিক্ষাকে যখন সমাজের উপরিতল এবং মধ্যতলের মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ করে ফেলছে, তখন রবীন্দ্রনাথ বা তাঁর শিক্ষাচিন্তা আমাদের বিশেষ কোনো কোনো দিশা দিতে পারছে না। সত্যি কথা বলতে কি, শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতী নিয়ে আমাদের যতই মাতামাতি থাকুক না কেন, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে কোনোদিন খাপ না খাওয়া একটা উল্লেখযোগ্য এবং আদৌ-অনুসরণ-যোগ্য-নয় এমন একটি ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবেই থেকে গেছে। অথচ শান্তিনিকেতনের বদলে তুলনামূলক কম আলোচিত শ্রীনিকেতনকে আমরা যদি আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থার মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমাদের দেশের জনশিক্ষার এমন করুণ দশা হত না।

    তথ্য-সহায়তা ও ঋণ: ১.রবীন্দ্রনাথের পল্লিপুনর্গঠন প্রয়াস, দীক্ষিত সিংহ ২. রবীন্দ্র-স্মারকগ্রন্থ (প্রবন্ধ সংকলন), বিশ্বভারতী, ১৯৯১ ৩. রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা, ড. আতাউর রহমান (বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৮ মে ২০২১ | ৩৯৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মানব মন্ডল | 2409:4061:211f:36c3:216:2364:9b92:***:*** | ১৯ মে ২০২১ ১০:৩০106181
  • খুব সুন্দর লাগল। লেখকের বলার ভঙ্গিটি চমৎকার। ব্যক্তিমানবের আত্মকেন্দ্রিকতা এবং বিশ্বমানবের সার্বজনীনতা এই দুইয়ের মধ্যে সংশ্লেষ রবীন্দ্রনাথের ভাবনাকে একাধিকবার প্রভাবিত করেছে। তাঁর রচনায় এই ভাবনার নির্দশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

  • Kallol Dasgupta | ১৯ মে ২০২১ ২৩:১১106190
  • এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। আমার কিছু শিক্ষাবিদ বন্ধুরা পাউলো ফ্রেইরীর শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে স্কুল চালাতেন। কিন্তু দিনের শেষে সেই সিব ছাত্রদের মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য "তৈরী" করতেই হতো। বিশ্বভারতী ডিগ্রি দিতো না। মুজতবা আলির দেশে বিদেশের সেই কিস্যা। কাবুলের বাদশাহ বড়বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিওয়ালাদের ছেড়ে মুজতবাকে নিয়োগ করলেন, যার ডিগ্রিই নেই। কেননা তার শংসাপত্রে যার সই আছে, তিনি রবীন্দ্রনাথ। আজ সেই বাদশাহী নেই। আজ কেউ ডিগ্রির বদলে সত্যজিত রায় বা আইনস্টাইনের সই করা কাগজ দিয়ে লোয়ার ডিভিশন ক্লার্কের চাকরীও পাবেন না। তাহলে ? সব ছাত্রই প্রমথনাথ বা মুজতবা বা কণিকা কি সুচিত্রা হয় না। ৯০% ছাত্রই চাকরী করবে, তা সে ক্লার্কের চাকরী বা অধ্যাপকের, যেটাই হোক না কেন তাকে ডিগ্রি দেখাতে হবে। তাই বিশ্বভারতী টেঁকে না। সে ঐ নামে "আর একটা বিদ্যাপ্রতিষ্ঠান" হয়ে যায়। যেখানে গোটা ব্যবস্থাটা এক নিয়মে চলে, সেখানে অন্য এক নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আর নয়তো মেনে নিতে হবে ঐ প্রতিষ্ঠানে পড়লে স্বনিযুক্ত হয়ে পেটের ভাত জোটাতে হবে। 


    কথা হোক।  

  • Samar Kumar Bagchi | 103.42.***.*** | ২১ মে ২০২১ ০০:০৬106218
  • সুদীপ্ত ভাই,
    অতীব সুন্দর লেখা পড়লাম আজ সকালে। মন ভালো হল আবার বিষণ্ণও হল। অনেক বিশেসজ্ঞকে জিজ্ঞেস করি রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীর শিক্ষাদর্শ দেশ নিলনা কেন? সেরকম কোন সদুত্তর পাইনি। আমি যেটুকু বুঝেছি তা হল যে ওঁদের শিক্ষাদর্শকে তাঁদের সমাজ চিন্তার থেকে আলাদা করলে এই বিচ্ছেদ বোঝা যাবে না। আমি দেখছি দশ বছর পূর্ব বাংলায় জমিদারী দেখতে গিয়ে  তাঁর গ্রাম জীবনের যে অভিজ্ঞতা হল তা রবীন্দ্রনাথকে একেবেরে পাল্টে দিয়েছিল। ১৯০৪ সালে লিখছেন 'স্বদেশী সমাজ'। ধীয়ে ধীরে তাঁর ভোগবাদ (১৯০৫-এ 'বিলাসের ফাঁস'), নগর জীবন  (১৯৩০-এ শান্তিনিকেতনে বাৎসরিক উৎসবে গ্রামবাসীদের কাছে বক্তৃতা ), যন্ত্র সভ্যতা ( ১৯২২-এ 'মুক্তধারা',১৯২৪-এ 'রক্তকরবী') এবং সর্বশেষে পশ্চিমী সভ্যতা ( ১৯৪১ সালে, যে বছর মারা যাচ্ছেন 'সভ্যতার সংকট') ইত্যাদি সম্বন্ধে মোহভঙ্গ হচ্ছে। 'সভ্যতার সংকট'-এ লিখছেন, " জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলুম ইউরোপের সভ্যতার দানকে। আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল"। সভ্যতা সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলছেন। কাকে সভ্যতা বলব? সত্যজিৎ রায় তাঁর শেষ ছবি আগন্তুকেও এই প্রশ্ন তুলেছেন। ১৯২৪ সালে চিন দেশ ভ্রমণকালে এক বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ বলছেন,  "We have for over a century been dragged by the prosperous West behnd iits chariot choked by the dust, deafened by the noise, humbled by our own helplessness and ovewhelmed by the speed. We agreed to ackno;edge thar this chariot drive is progress and that progress is civilization. If anyone ventured to ask ' progrss towards what and progess for whom" it was considered to be peculiarly and ridiculously oriental to entertain such doubts about the absoluteness of progress. Of late a voice has come to us biding us to take count of not only the scientific perfection of the chaiot but also of the depth of ditches lying across its path "। .এই chariot ও depth of ditches.কিসের রুপকালঙ্কার? ঐ রথ হছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চালিত আজকের ভোগবাদী সমাজ এবং খানাখন্দ হচ্ছে আজকের সমাজ ও প্রকৃতির ভেঙ্গে পড়া।বিজ্ঞানীরা বলছেন ষষ্ঠ গ্ণবিলুপ্তি আসছে এবং যে প্রজাতি সবথেকে আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হবে তা হচ্ছে মানব প্রজাতি। ভারতে রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধী বহুদিন আগেই একথা বুঝেছিলেন। গান্ধীজী লিখছেন, " God forbid India should ever take to industrialization in the manner of the West. A tiny island kingdom is today keeping the whole world in chains. If an entire nation of 300 million took to similar kind of economic exploitation the whole world will be bare like locust"। আজ যদি ভারত ও চিনের প্রায় ২৭০ কোটি লোক আমেরিকার মত বাস্তুতান্ত্রিক পায়ের ছাপ (Ecological Footprint) লাগায় তাহলে কয়েক দশকেই পৃথিবী পঙ্গপাল পড়ার মত নিঃস্ব হয়ে যাবে।
        ওঁরা দুজনেই এক সহজ সরল কিন্তু উন্নত গ্রাম সমাজ নির্মাণ এবং সেই সমাজের শিক্ষার কথা ভাবছেন। রবীন্দ্রনাথ বলছেন,  "Simplicity is the hallmark of the civilized, excess of barbarism"।তাইতো গান্ধী পশ্চিমী জামা কাপড় খুলে ভারতীয় " Naked Fakir" হলেন। তাই রবীন্দ্রনাথ শিক্ষাসত্র খুলছেন এবং গান্ধী "নই তালিম"-এর কথা বলছেন। মানুষ এক খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। " প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য , ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা"।
  • Pijus Sarkar | 2409:4061:2d94:be65:2c6f:7c5d:83f1:***:*** | ২১ মে ২০২১ ২৩:২৬106259
  • Duto lekhai porlaam. mataamat debar aage kichhu aalochanaa darkaar.

  • π | ২২ মে ২০২১ ১৩:৫৪106279
  • ভেবেছিলাম হাসপাতাল থেকে ফিরলে এই লেখাটা সলিলকাকুকে পড়াব, কল্লোলদার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে লিখতেও বলব। কিছুই হল না। 

  • Yala Yolo | ২২ মে ২০২১ ১৮:৪৮106298
  • লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো। লেখাটিতে তিনটি খুবই  বেদনাদাযক তথ্য প্রকাশিতহয়েছে যা সকলের জানা দরকার


    1. ... "ব্রহ্মচর্যাশ্রমের একেবারে শুরুর দিকেই ছাত্রদের জাতি অনুযায়ী বিভিন্ন রঙের পোশাক পরতে হত। ব্রাহ্মণেরা পরত সাদা পোশাক, বৈদ্য-কায়স্থরা লাল আর বৈশ্যরা হলুদ। (শূদ্র ছাত্র তখনও একটিও ছিল না, তাই তার জন্য পোশাকের রঙ নির্দিষ্ট করারও প্রয়োজন পড়েনি।)"


    2. 2. "খাবার সময়েও ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ ছাত্রদের পৃথক পংক্তিতে বসতে হত। "


    3. 3. "বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার রীতি থাকলেও মাতব্বরদের প্রবল বিরোধিতায় প্রথম অব্রাহ্মণ শিক্ষক কুঞ্জলাল ঘোষকে হাত জোড় করে নমস্কার করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন রবীন্দ্রনাথ।"


    এই তিনটি তথ্যের সূত্র (specific reference) লেখক জানালে খুব ভালো হয়

  • Yala Yolo | ২২ মে ২০২১ ১৮:৫৬106300
  • লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো। লেখাটিতে তিনটি খুবই  বেদনাদাযক তথ্য্ প্রকাশিত হয়েছে যা সকলের জানা দরকার


    1. ... "ব্রহ্মচর্যাশ্রমের একেবারে শুরুর দিকেই ছাত্রদের জাতি অনুযায়ী বিভিন্ন রঙের পোশাক পরতে হত। ব্রাহ্মণেরা পরত সাদা পোশাক, বৈদ্য-কায়স্থরা লাল আর বৈশ্যরা হলুদ। (শূদ্র ছাত্র তখনও একটিও ছিল না, তাই তার জন্য পোশাকের রঙ নির্দিষ্ট করারও প্রয়োজন পড়েনি।)"


    2. 2. "খাবার সময়েও ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ ছাত্রদের পৃথক পংক্তিতে বসতে হত। "


    3. 3. "বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার রীতি থাকলেও মাতব্বরদের প্রবল বিরোধিতায় প্রথম অব্রাহ্মণ শিক্ষক কুঞ্জলাল ঘোষকে হাত জোড় করে নমস্কার করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন রবীন্দ্রনাথ।"


    এই তিনটি তথ্যের সূত্র (specific reference) লেখক জানালে খুব ভালো হয়

  • Prabir Panda | 103.87.***.*** | ২২ মে ২০২১ ১৯:৩৯106304
  • লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো। লেখাটিতে তিনটি খুবই  বেদনাদাযক তথ্য্ প্রকাশিত হয়েছে যা সকলের জানা দরকার 

    1. ... "ব্রহ্মচর্যাশ্রমের একেবারে শুরুর দিকেই ছাত্রদের জাতি অনুযায়ী বিভিন্ন রঙের পোশাক পরতে হত। ব্রাহ্মণেরা পরত সাদা পোশাক, বৈদ্য-কায়স্থরা লাল আর বৈশ্যরা হলুদ। (শূদ্র ছাত্র তখনও একটিও ছিল না, তাই তার জন্য পোশাকের রঙ নির্দিষ্ট করারও প্রয়োজন পড়েনি।)"

    2. 2. "খাবার সময়েও ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ ছাত্রদের পৃথক পংক্তিতে বসতে হত। "

    3. 3. "বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার রীতি থাকলেও মাতব্বরদের প্রবল বিরোধিতায় প্রথম অব্রাহ্মণ শিক্ষক কুঞ্জলাল ঘোষকে হাত জোড় করে নমস্কার করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন রবীন্দ্রনাথ।"

    এই তিনটি তথ্যের সূত্র (specific reference) লেখক জানালে খুব ভালো হয় 

     

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন