জানি সব মরণ নয় সমান। কিন্তু লাল টী শার্ট পরা এক ষাটোর্ধ বৃদ্ধকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মুখ দিয়ে ভলকে উঠছে তাজা গরম রক্ত, মুচড়ে দেওয়া হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষটার রুক্ষ ধুলো মাখা হাত পা।
কী দোষ তার? কেন, কোন দোষে পথের কুকুরের মতো এই নিষ্ঠুর মৃত্যু তার পাওনা হলো? খুনে ডাকাত, নির্মম শিশু ধর্ষক বা নিষিদ্ধ খাদ্যভক্ষণ কোন দোষে দোষী ছিল সে?
ভীড় ঠেলে একটু এগোন যাক। ধুলোর ওপর মোচড়ানো ঘাড়, নাকের নীচে লাল রঙ মাখামাখি, শুধু কী আশ্চর্য ছিন্ন বস্ত্রে জ্বলজ্বল করছে ক'টি কথা - হাম লেকে রহেঙ্গে আজাদি।
এবার নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে লাশটা বেগুসরাইয়ের ফাগো তাঁতীর, বুড়ো হলেও যার আজাদির তৃষ্ণা মরেনি। বরং পরাধীন সারা জীবনের গ্লানি মোচনের জন্য সে এবার বেছে নিয়েছিল কানহাইয়া কুমারের প্রতি আনুগত্য। সারা নির্বাচন তরুণ নেতার জন্য চষে বেড়িয়েছে গোটা বেগুসরাই। পাগলের মতো গলা মিলিয়েছে আজাদির গানে আর ভোটের দিন সবার আগে আঙুলে দাগ নিয়ে মাতিহানি ভোট কেন্দ্রের বাইরে এসে উল্লাসে ফেটে পড়েছে -- হাম লেকে রহেঙ্গে আজাদি।
ঘাতকের চোখ তাকে অনুসরণ করছিল প্রচার পর্ব থেকেই। ফাগো তাঁতীর লিডার বনবার শখ হয়েছে তো খুব - তো দেখ নতিজা। ঘর থেকে তুলে নিয়ে গেল বাহুবলীরা, পারলো তোর কানাহাইয়া তোকে বাঁচাতে ? ঘরে ফিরল কাটাছেঁড়া করা প্রায় নাঙ্গা লাশ। ডুকরে কাঁদতেও ভয় পায় বালবাচ্চা বৌ।
শুধু কী আশ্চর্যকথা, চিতায় তুলবার সময় ফাগুয়ার জ্যালজেলে নববস্ত্র ফুঁড়ে বুকের ওপর যেন জ্বলজ্বল করে উঠলো সেই কথাক'টি। আর চারপাশে গোল হয়ে ঘিরে থাকা ছোটলোকেরা রামনাম সৎ হ্যায় বলতে বেমালুম ভুলে গেল। ঘড়ঘড়ে নীচু গলায় তারা ভুতে পাবার মতো চিতা ঘিরে অনবরত জপ করতে থাকলো - হাম লেকে রহেঙ্গে আজাদি - আজাদি।
ফাগো তাঁতী বেগুসরাইতে কানাহাইয়া কুমারের সমর্থনে ভোটের কাজ করবার জন্য খুন হয়েছে। এইটুকু ঘোর বাস্তব, বাকী টুকু আমার কল্পনা। কানাহাইয়া কুমারের দেশ এখন তোলপাড় হচ্ছে এই মৃত্যু নিয়ে। ফাগো তাঁতীর ভাই রামচন্দ্র তাঁতী সব ভয় কাটিয়ে উঠে জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় মাহাজি গ্রামে নিজের ঘরে ফেরবার সময় অপহৃত হন। অনেক খুঁজেও পাবার আশা যখন দুরাশা হলো, তখনই রক্তনদীর ভেতর চিত হয়ে শোওয়া লাশটা কারো চোখে পড়ে। লাশের গায়ে লাল টী আর ঐ লেখাটার গপ্পোটা কিন্তু সত্যি। পুলিশই এটা সত্যি বলে জানিয়েছে আর ফাগোকে সিপি আই কর্মী বলে স্বীকারও করে নিয়েছে।
কাল ভোটের শেষ পর্ব। তেলের দাম বাড়বে কাল ঠিক রাত বারোটায়। তাই এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে পেট্রোল পাম্পে চলুন দেখি। যেটুকু পারা যায় আখের গোছাই। আজাদি কি অতো সস্তা, মশাই! রাম শ্যাম যদু মধু, সবাই আজাদির কাঙাল হয়ে উঠলে আমাদের হবে কী!