৭ ঘুণ আর জং পড়ছে, ধরতে পারছিনা রূপ, যেন ক্ষয়াটে কাঠের ফ্রেম আমি তো দীর্ঘ সময় এখানে ছিলাম, এই না বলার মধ্যে, এই হাততালির চটাপট শব্দের মধ্যে, এই পেঁয়াজের খোসার নিবিড়ে দ্যাখো, কুমিরে পোকার বাসা, টিভির প্লাগের পাশে, উৎস থেকে রস টেনে, কেমন লালা দিয়ে দিয়ে সুগঠিত, নিজেকে আকার দিল, ধারণা দিল, মর্যাদা দিল, পার্থিব চড়ার উপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল জয় পরাজয়ের কথা, মেটে রঙের প্রকৃত ম্যাজিক, হাঁসখালির মাঠ পেরিয়ে ঢুকে পড়ল গ্রিলের এপারে... টিলার উপর যেকটা মাথা গোনা যাচ্ছিল, উঁচিয়ে থাকা পতাকা ও মুঠো করা হাত, যত বুট আর টুপির স্পর্ধা, এখন গোপন মন্ত্র, সকলে অনুচ্চার বইয়ের পাতায়, বুকের ঈষৎ বাঁ দিকে ছলছল করছে তরল, এ কি ভালোবাসা! নতুন মোড়কে সংলাপ! তোমার আমার সেই লণ্ঠনের নীচে, জমা পাঠ শেষে বিষ ও বিষাদ! ৮ অপচয়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি, এই রাস্তা খুব সাংকেতিক কয়েকটা ব্যাঙ প্রতিভায়, আধুলির দোষে, দোতলার টেরেস থেকে, ঝুঁকে, কুড়িয়ে নিল আমের মঞ্জরি চায়ের পেয়ালা তখন আরও বেদনার মতো বেজেছে, প্লেট ও চামচ তার সুরটুকু ধরে আছে যদিও কোথাও মীড় নেই, বাগানে, বাজারে হাসি বিনিময়ে নেই তেমন করুণ কে কাকে সনাক্ত করি ! আজ এই বন্ধ দুয়ার থেকে খ্যাপা কুকুরের ডাক, লালা ছিটকে লাগেনা কারো জামার কলারে, উঠে আসেনা বেপরোয়া ঘন সব ইচ্ছেরা কে কার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি ! একলা পথে কারোর সঙ্গে দেখা হবে না জেনে ৯ তোমায় আমি লিখতে পারছি না, বাজার দোকান রান্নাবান্না বাসনকোসনের জঙ্গলে যেন এক বাঘ, বোঁটকা সোঁদা গন্ধের ভিতর এক নিভৃত অঞ্চল যাতে আমি শুয়ে শুয়ে বিছানায় নক্ষত্র শুঁকি, খেয়ে ফেলি তার মিষ্টি আর সুস্বাদ, টক সব গন্ধগুলো পিতলের পাত্রে রাখি,কল্পে যাবার কল্পিত... ভরা জ্যোৎস্না, মরা আবেগে এসবের অনেকটা জানা হলো, আগের চেয়ে বেশি কিছু টাটকা সাগরেরর মা গেছে কাল সন্ধেবেলা, ফিরবেনা বলে কুলোতে তোমার ছবি এঁকে গেছে, আজ দিন নয়, রাতও নয়, অবয়বের বাইরের গন্ধ ভিতরের মজ্জা হাড়হীন আমি শুয়ে আছি, তুমিও কি! আগের অধ্যায় খুঁড়ে বেরিয়ে এসেছো হলুদ কালো ডোরা! ছড়ানো আঁশের মধ্যে শুয়ে আছে জঙ্গল, আর রাতভোর জঘন্য সুন্দর গন্ধে নিজেকে বিছিয়ে আছি বাঘ গুড়িগুড়ি হানা দেবে বলে ১১ সামনে লোহার বীম, টানা টানা চৌকো খুপি আর চারদিকে ঝালাইয়ের কড়া দাগ ওপারে সমুদ্র, নাকি জলের ভূমিকামাত্র, উথলে ওঠা দিনরাত্রি, বেসুর ভরা সকাল, রাত সংকেতময় এদিকে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া মানুষের দাগ, তার সফলতা ক্লান্তি আর কান্নার পরিমাপ ওদিকে পলিথিনের পোশাক, ভিনগ্রহী প্রাণিদের মুখের আদল, নীলবাতির যাতায়াত যতদূর চোখ যায়, ঝাপসা কাদাটে পথ, টায়ারের আল্পনা… কোথায় চলে গেছে ও ? ডাকলে ফিরে তাকাচ্ছে না কেন? ভূমিকা অংশ থেকে পড়া যাচ্ছে না প্রস্তাবনা উপান্তে নদীটি নেই, কালি ঘাম ধুয়ে টাটকা স্নানের মায়া নেই... আজ আমরা কেউই নেই বলে বুনো উটেরা বালি ছড়াচ্ছে, আলো কমে আসছে বসতির ছোটো ছোটো নিভৃত নির্মমে |
ভালোই লাগলো; অনেকটা নরম দৃশ্যকল্প-নির্ভর হলেও যেহেতু তৎসম সুললিত শব্দ ব্যবহারের বদলে, বিশেষত শেষ কবিতাটায়, ঝালাইয়ের কড়া দাগ, পলিথিনের পোশাক, নীলবাতির যাতায়াত প্রভৃতি এসেছে, তাই ভালো লাগল; শুধু টায়ারের আলপনা জাতীয় শব্দবন্ধ মাথার ভেতর কিছু অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ তৈরি করল।
"অপচয়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি, এই রাস্তা
খুব সাংকেতিক"
অদ্ভুত একটা স্টেটমেন্ট। তারপর একটা চলা। মানুষের দূর্বলতা, সে কবিতার ভেতর চেনা মানুষের ছায়া খোঁজে। বিভ্রান্তির দোষ ভালোবাসতে বাসতে কখন সে অচেনা ভাষায় বদলে যায়, টের পায়না।
৭ নং পড়ার সময় সেভাবে টানেনি কিন্তু সে যোগ হল --
"যাতে আমি শুয়ে শুয়ে বিছানায় নক্ষত্র শুঁকি,
খেয়ে ফেলি তার মিষ্টি আর সুস্বাদ, টক সব গন্ধগুলো
পিতলের পাত্রে রাখি"
৯ নং এর এই লাইনগুলোর পরে।
"আমি তো দীর্ঘ সময় এখানে ছিলাম, এই না বলার মধ্যে,
এই হাততালির চটাপট শব্দের মধ্যে, এই পেঁয়াজের
খোসার নিবিড়ে"
"বুকের ঈষৎ বাঁ দিকে ছলছল করছে তরল,
এ কি ভালোবাসা! নতুন মোড়কে সংলাপ!
তোমার আমার সেই লণ্ঠনের নীচে, জমা পাঠ শেষে
বিষ ও বিষাদ!"
অনেকদিন হল আমরা পুরনো ডিয়ারপার্ক আর সেই আধোঘুম চায়ের দোকানের ৪০ ওয়াটের হলদে আলোর ভেতর স্বপ্ন হয়ে ওঠার রাস্তা ভুলেছি। ফুটপাথ বদলের রাতলিপি আমার ছিল না। গরাদে মুখ রেখে বিপথগামীতাকে নিজের মতো সাজিয়েছি। সেখানে আক্ষেপের কুয়াশা নেমে আসতো সন্ধ্যে হলেই।