রেনবো জেলির জন্য যে কটা দিন বা রাত আমরা স্বপ্ন দেখে কাটিয়েছি অতগুলো সময় সম্ভবত এত সিরিয়াসলি কোনোকালে পার করিনি কোনো কিছুর জন্য। সিরিয়াসনেস কাকে বলে? এই প্রশ্নের জবাবে এখন ভগবানকেও বলতে পারি, রেনবো জেলি বানানোর অভিজ্ঞতাকে এক কথায় সিরিয়াসনেস বলে বোঝানো হয়। যখন স্ক্রিপ্ট লেখা চলছিল তখন আমি বিড়বিড় করে প্রতিটা চত্রিত্রের ডায়লগ আউড়াতাম, সঠিক এক্সপ্রেশনটা পাওয়ার জন্য। আমার স্ত্রীর মনে হয়েছিল মাথার ব্যারাম হচ্ছে আমার। সিনেমা আমার মনের পরে মগজটাকেও গিলে খাচ্ছে। কিন্তু হয়ত গিলে খেয়েওছে। আর খাওয়ার পর সাত স্বাদের তৃপ্তিতে যে পেল্লায় ঢেঁকুর তুলেছে তা দিয়ে তৈরী হয়েছে রেনবো জেলি। এগুলো হল আগডুম বাগডুম কথা, কোনো মানে নেই। এ ধরণের লেখা লিখে শুরুতেই একটা চমক দিয়ে অ্যাটেনশন ধরা গেলেও রেনবো জেলির আত্মাকে ছোঁয়া যাবে না। তাহলে কিসে যাবে? যাবে। চুপ করে খানিক ক্ষণ বসে থাকলে যাবে। আকাশের অনেক ওপর থেকে ধীরে ধীরে নেমে আসবে যখন সাতরঙা সত্য, মাথার ভেতর থেকে গিয়ে বাসা বাঁধবে বুকের মধ্যে, তখন যাবে। রেনবো জেলি আমার বুকের ভেতরকার গলিগুলো চুপচাপ ঘুরে, ফুল কোড়ানোর মত নরম আর রঙীন। এই ছবিটা বানানোর প্রক্রিয়া বা অভিজ্ঞতা নিয়ে পত্রপত্রিকায় কথা বলেছি বিস্তর। কীভাবে মৌসুমী ভৌমিকের রেফারেন্সে মহাব্রতকে পাওয়া, কিভাবে তিনমাস অক্লান্ত পরিশ্রমসাধ্য ওয়ার্কশপের পর মহাব্রতর ঘোঁতন হয়ে ওঠা, কিভাবে পুরো স্ক্র্যাপ দিয়ে রোবট বানানো, কীভাবে ধার করে আর স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে প্রোডাকশন করা, সাড়ে চোদ্দ দিনের শিডিউলে পুরো ছবিটা শ্যুট করা...সব। কিন্তু যেটা বলা হয়নি সেটা হ’ল এই গোটা যুদ্ধটায় আমার বুকের ভেতরের ঘোঁতনকে আমি সামলেছি কী করে। সকালবেলা ঘুম ভাঙা প্রতিদিন, তাকিয়ে দেখতাম আলো হয়ে রয়েছে চারধার। বুকের ভেতরকার ঢিপঢিপ বলত আরো একটা দিন বয়ে গেল, ইন্টারেস্ট বাড়ল লোনের। কবে শ্যুট জানিনা, কারণ ডেট দেয়নি সবাই। কম টাকার ছবি বলে সবার ডেট পাওয়ার প্রেফারেন্সও কম হয়। বুকের ভেতর থেকে ঘোঁতন বলত, “কী হবে রে রাজন?” আমি বালিশটা জড়িয়ে ধরে বলতাম, “কিছু হবে না, সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে, দ্যাখ আর তো কটা দিন”। ভয় যে করতে না তা নয় তাই ওয়াসেরপুর ২ -এর ‘মুরা’ গানটা লুপে শুনতাম, শুনেই যেতাম কয়েকশো বার –“ যো ভি রঙওয়া হ্যায় উসে, সেট রাইটওউয়া করোজি, নাহি লুজিয়েজি হোপ থোড়া ফাইটওয়া করোজি, থোড়া ফাইটওয়া করোজি মুরা”।
সেই ফাইটওয়াটা এখনও জারি রয়েছে। যখন ২৭টা হল থেকে ২টো হলে চলে আসে রেনবো জেলি, চার হপ্তা পরও যখন নন্দন মেলেনি কপালে...তখনও স্বপ্ন দেখেছি জুবিলির। রেনবো জেলির হাসি মুখ আমার কাছে সেই সুদিনের স্বপ্ন যা জয় করে এনে দিতেই হবে মনের ভেতরকার দেশটাকে। যেখানে ঘোঁতন বসে আছে এই বিশ্বাস নিয়ে যে সব ‘রাইটওয়া’ করার প্রতিশ্রুতিটুকু সূর্যের মত উজ্জ্বল ও পূর্ণ বৃত্ত হয়ে উঠবে একদিন। খুব শিগগিরি। কারণ সব রূপকথা মিথ্যে হয় না। মাক্কালি।