
ভাবনা বাতাসে ভাসে (কেউ বলেছিল- ব্লোয়িং ইন দ্য উয়িন্ড), আমরা শ্বাস নিই, ভাবনার পরিপাকে পুষ্ট হয় আমাদের শরীর-মন। আর আমাদের উপমহাদেশীয় উপনিবেশের শরীর-মনে বড় বেশি বাতাস ঢোকে প্রশান্ত/অতলান্ত পেরিয়ে। ভাবনার নাকি তত্ত্বভূমি থাকে আর তা থেকেই নাকি ভাবনা পুষ্টি পায়। তত্ত্ব, ভাবনার বাতাসে ভর করে আমাদের ছাপোষা (ছিপোষা নয় কিন্তু) জীবনের আধো-অন্ধকার গলির মধ্যে ভেসে বেড়ায়; আমাদের ভাবনা-সঞ্জাত যাপিত জীবন তো তাই তত্ত্ব অভ্যাসও। সকালে উঠে দাঁত মাজা থেকে শুরু করে ইস্কুল, হাসপাতাল, আদালত ঘুরে রাতের শৃঙ্গারের স্বাভাবিকতায় আমরা সন্তানপালনের মতো তত্ত্বপালন করে চলি, চলেছি (মিশেল ফুকো তো সেইরকমই বলেছেন)। উত্তর উপনিবেশের ইতিহাসে আর ভূগোলে স্বাভাবিকতার এই অনুষ্ঠান এক বিশেষ তত্ত্ব-অবস্থান- এক রাজনৈতিক অবস্থানও। এই লেখাতে এইরকম একটা স্বাভাবিক ব্যাপার নিয়ে একটু ঘোঁট এবং/অথবা কোন্দল পাকাতে চাইব; ‘ভালো ছেলে’দের স্বাভাবিকভাবে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠা, তাদের বিজ্ঞান পড়ার/করার রাজনীতিটা বুঝতে চাইব। আমাদের বাবারা1 যখন বেত হাতে ছেলেদের আঁক কষা শিখিয়েছেন পরম মমতায়, তখন তাঁরাও তো নিজেদের সমর্পণ করেন কোন এক তত্ত্বমন্দিরের দেউলে। আর স্বাভাবিকভাবেই ইস্কুলের বেতগ্রস্ত ‘ভাল ছেলে’ হয়ে আমরা ফিজিসিস্ট, কেমিস্ট কিংবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি, হতে চেয়েছি- তখনোও কোনও তত্ত্বপালন করি আমরা2। এই লেখায় রাজনীতি অপরের (রাষ্ট্র, মৌলবাদ, পুঁজি, পার্টি ইত্যাদি পরিচিত ক্যাটীগরিগুলো) সমালোচনা নয়, বরং কিছুটা নিজের, নিজেদের সমালোচনা হিসেবে আসবে; আত্মসমালোচনা কি রাজনীতি হতে পারে, এই প্রশ্নটাও একটু রেখে গেলাম এখানে।
আমরা প্রশ্ন করতে চাইছি আমাদের নিজেদের আচরণের এক স্বাভাবিকতাকে- আমাদের বিজ্ঞান পড়ার প্রবণতাকে। কেন বিজ্ঞান পড়া? শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে? নাকি অনর্থ-নৈতিক কারণও আছে? শহরের দেয়ালে দেয়ালে বিজ্ঞান না পড়া কম-রেডরা স্লোগান লেখেন--‘মার্ক্সবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা বিজ্ঞান’ অথবা ‘মার্ক্সবাদ সত্য, কারণ ইহা বিজ্ঞান’; আমার বৈজ্ঞানিক ডিডাকটিভ যুক্তি স্বাভাবিকভাবেই বলে-- ‘বিজ্ঞান সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা সত্য’। বিজ্ঞানের এই সন্দর্ভ শুধু কম-রেডদের একচেটিয়া নয়; বিজ্ঞানবাদ প্রবাহিত হয়ে চলে দৈনন্দিন রাজনীতির, অর্থনীতির, যৌন এবং অযৌন জীবনযাত্রার নানা হেজিমনিক, আধিপত্যকারী ভাবনার স্রোতে। বাবাদের ফিজিক্স/ডাক্তারি আর মায়েদের হোম সায়েন্স/নার্সিং কিংবা বাবাদের বড় নদীবাঁধ আর মায়েদের ‘চিপকো’ কিংবা বাবাদের ইস্পাত কারখানা (বা কেমিক্যাল হাব) আর মায়েদের গ্রামসভ্যতা- সর্বশক্তিমান বিজ্ঞান বাবাদের ‘অরাজনৈতিক’ বর্গগুলিতে নানাভাবে ঢুকে পড়ে, ঢুকে যায়। মনে হয়, কোথাও যেন বিজ্ঞান আর না-বিজ্ঞান আলাদা এবং শুধুমাত্র আলাদা নয়, বিজ্ঞান যেন হায়ারার্কিতে না-বিজ্ঞানের উপরে কোথাও সত্যকে ধারণ করে রেখেছে। আমাদের ভাবনায় বিজ্ঞান কখন যেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, সকল সত্যের আধার হয়ে রয়ে গেছে, আমাদের নাস্তিক বৈজ্ঞানিক মনন যেন অ(ন)ন্য এক ঈশ্বরকে খুঁজে পেয়েছে। ভগবানকে আগে পুরোহিত, মোল্লা কিংবা পাদ্রীর ভোকাল কর্ডের মধ্যে দিয়ে কথা বলতে হত, এখন যেন তিনি বিজ্ঞানীর গলায়, পেপারে অভিযোজিত হলেন।
কিন্তু বিজ্ঞান ব্যাপারটা কী? কাকে বলব বিজ্ঞান আর কেই বা না-বিজ্ঞানের দলে? কিভাবে ঠিক হবে তাদের সীমা, সীমানা? এই প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ, বিজ্ঞান কি আর তার বৈশিষ্ট্যই বা কি, এটা না বুঝলে বিজ্ঞানের আধিপত্যের রাজনীতিটা বোঝা মুশকিল। এই প্রশ্নটা নতুন নয়, আদতে বেশ পুরোনো দার্শনিক প্রশ্ন। এখন একটু দেখে নেওয়া যাক বিজ্ঞানের বিশেষত্বকে প্রশান্ত/অতলান্তের অপর পাড়ের পন্ডিতেরা কিভাবে দেখেছেন, ভেবেছেন।
আমরা দেখাটা শুরু করছি বিশ শতকের তিরিশের দশক থেকে, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে যখন একদল দার্শনিক প্রবল্ভাবে এই আলোচনাটা শুরু করেন। এই ‘ভিয়েনা সার্কল’-এর প্রধান দুই হোতা হলেন রুডলফ কারনাপ আর অটো নিউরাথ। এঁদের প্রাথমিক সমস্যাটা ছিল বিজ্ঞান চর্চার ছত্রভঙ্গ অবস্থাটা - অনু-পরমাণুর গঠন, আকাশের চাঁদ-তারা, ভূমিকম্প, জৈব বিবর্তন, মানুষ আর জন্তু-জানোয়ারের আচার-আচরণ থেকে ডি এন এ, সবকিছুই বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। বিজ্ঞান যেন একইসাথে শক্ত/কঠিন (hard) আর নরম (soft)3। তাহলে কোনটা আসল বিজ্ঞান আর কোনটা ততটা আসল নয়? সমস্যাটা অবশ্যই মূলত নরমকে নিয়ে, কারণ শক্ত তো always already প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান। তাই তাঁরা এমন একটা তত্ত্ব তৈরী করতে চাইলেন যা দিয়ে সবরকম বিজ্ঞানকে একসাথে বেঁধে ফেলা যাবে। এক কথায় তাঁরা বিজ্ঞানের সার বা এসেন্সকে ধরতে চাইলেন। অনেক ভাবনা চিন্তা করে একটা ম্যাগনাম ওপাস সম্পাদনা করলেন--ইন্টারন্যাশানাল এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইউনিফায়েড সায়েন্স। এই বইয়ের মূল বক্তব্য তার শিরোনামেই রয়েছে; তাঁরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার ইউনিটি বা ঐক্যের কথা বললেন। কিন্তু কিভাবে হবে এই ঐক্য? তাঁরা দুটি প্রস্তাব করলেন; প্রথম, একটি একীভূত বৈজ্ঞানিক ভাষার মধ্যে দিয়ে এবং দ্বিতীয়, বিজ্ঞানের সূত্রগুলির ঐক্যের মধ্যে দিয়ে। তাঁদের মত ছিল যে ফিজিক্স সেই আদর্শ বৈজ্ঞানিক ভাষা। তাঁদের প্রকল্পে অন্যান্য সমস্যার মধ্যে একটি ছিল জীববিদ্যা, কারণ জীববিদ্যা তাদের শর্তানুযায়ী সঠিক বিজ্ঞান নয়। তাঁদের সহজ সমাধান ছিল যে জীববিদ্যাকে বিজ্ঞান হয়ে উঠতে হবে আর সেই জন্য জীববিদ্যাকে ফিজিক্সের ভাষায় কথা বলতে পারতে হবে, জীববিজ্ঞানীকে ফিজিক্সের সূত্র-টূত্র শিখতে হবে ইত্যাদি প্রভৃতি। অপরদিকে বিজ্ঞানের সূত্রগুলির ঐক্যকেও ভাবতে হবে একীভূত নিয়মের মধ্যে। যেমন, কেমিস্ট্রির সমস্ত ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মূল বা সার হল অনু-পরমাণুর আন্তঃক্রিয়া। সেই নিয়মেই যেমন বলা যেতে পারে মানুষের মনন যেহেতু রাসায়নিক ক্রিয়ার ফল, তাই মন ব্যাপারটাও অনু-পরমাণুর আন্তঃক্রিয়া। পরমাণুর কার্যকলাপ যেহেতু ফিজিক্সের নিয়মে চলে, তাই সমস্ত জীববিদ্যা আদতে ফিজিক্সের বয়ানে বোঝা সম্ভব।
এবার দেখা যাক বিজ্ঞান আর না-বিজ্ঞানকে কিভাবে আলাদা করা যায়। এই বিষয়টা নিয়েও প্রচুর দার্শনিক তর্কাতর্কি হয়েছে। তর্কাতর্কি হয়েছে কারণ, যখনই কেউ বিষয়টা তলিয়ে ভাবতে চেয়েছেন, তখনই বিভাজনের রেখাটা অস্পষ্ট হয়ে গেছে। একটা উদাহরণে বিষয়টা দেখে নেওয়া যাক; অনেকেই যেমন দাবি তুলেছেন যে বিজ্ঞান আর না-বিজ্ঞানের পার্থক্য হল বিজ্ঞানের একটি বিশেষ মেথডলজি বা পদ্ধতিতন্ত্র, যা না-বিজ্ঞানের নেই। ভিয়েনা সার্কল বলেছিল ইনডাকটিভ বা আরোহ নীতির কথা; এই পদ্ধতিতন্ত্রে বিজ্ঞান কোন একটি বিষয় বা তত্ত্বপ্রস্তাব (হাইপোথিসিস) বার বার যাচাই করে চলে যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধ কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সমস্যা হল যে ‘সব হাঁস সাদা’ এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ততক্ষণই সত্যি যতক্ষণ না একটি কালো হাঁস দেখা যাচ্ছে। ফলে আরোহ নীতিতে যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই সমাজতত্ত্বের মতো যে কোন মুহুর্তে বাতিল হয়ে যেতে পারে। তা হলে উপায় কি? এর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলেন কার্ল পপার। তিনি বললেন আরোহ নয়, বিজ্ঞানের বিশিষ্টতা হল তার ডিডাকটিভ বা অবরোহ নীতিতে। অবরোহ নীতিতে প্রথমেই থাকে একটি তত্ত্বপ্রস্তাব। এই তত্ত্বপ্রস্তাবটি তখনই সত্য হবে যখন তাকে কোন যুক্তিতেই খন্ডন বা ফলসিফাই করা যাবে না। যেমন, ‘ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রি’, এই তত্ত্বপ্রস্তাবটি বৈজ্ঞানিক হবে তখনই যখন এই বক্তব্যটিকে কোনপ্রকার জ্যামিতি দিয়ে বাতিল বা নেগেট করা যাবে না।
এই যুক্তিতে তিনি মনে করেছিলেন যে ডারউয়িনের ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ তত্ত্বটি একটি অপ-বৈজ্ঞানিক বা সিউডো-সায়েন্টিফিক প্রকল্পনা কারণ ঈশ্বরের মতোই উদ্বর্তনের কোন অবরোহ বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়।
কিন্তু কয়েক দশক ধরে অনেক চেষ্টা করেও নানাবিধ দার্শনিক যুক্তিতে এবং বিজ্ঞানের সন্দর্ভে ক্রমেই নানা অনিশ্চিত তত্ত্বের সংক্রমণের ফলে সঠিক বৈজ্ঞানিক ভাষা/সূত্র খুঁজে পাওয়া গেল না। অপরদিকে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতন্ত্রের প্রশ্নটিও জটিল হয়ে পড়ল; বিজ্ঞানের প্র্যাকটিস, বিশেষত ল্যাবরেটরির প্র্যাকটিস ক্রমেই আরোহী-অবরোহীর এক অসমসত্ত্ব বিমিশ্র দৈনন্দিনতার মধ্যে জড়িয়ে পড়ল। অনেক দার্শনিকই শেষপর্যন্ত এই প্রজেক্টের আর কোন ভবিষ্যৎ নেই বলে সরে পড়লেন। যেমন, পল ফেয়েরাবেন্ড শেষমেষ বলেই ফেললেন বিজ্ঞানের কোন বিশেষ পদ্ধতিতন্ত্র বলে কিছু নেই; anything goes। এইভাবে ক্রমেই দর্শনের অন্দরে পজিটিভিজম থেকে রিলেটিভিজমের দিকে সরে আসার ঝোঁক বেড়ে চলল।
রিলেটিভিজমের এই বাড়বাড়ন্ত গত শতকের পঞ্চাশ ষাটের দশকে বিজ্ঞানের হেজিমনিকে বেশ কিছুটা দুর্বল করে তোলে। তখন বিজ্ঞানকে আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন অতলান্তিকের পাড়ে এক সাহেব হিলারি পুটনাম। তিনি বললেন যে বৈজ্ঞানিক ভাষার দরকার নেই বিজ্ঞানের সার খোঁজার জন্য- তার বদলে বিজ্ঞান যে বিষয়বস্তু নিয়ে কাজকম্ম করে তাদের একটা তালিকা বানানো যেতে পারে; বিভিন্ন রকম বিজ্ঞানের তালিকাটা হবে একটা হায়ারার্কির ভিত্তিতে। ফিজিক্স যেহেতু এলিমেন্টারি পার্টিকল নিয়ে ভাবে, তাই সে থাকবে সবার উপরে আর সোস্যাল সায়েন্স থাকবে সবার নিচে। তালিকাটা এইরকম—
৬—সামাজিক গোষ্ঠী
৫—(বহুকোষী) জীব
৪—কোষ
৩—অনু
২—পরমাণু
১—এলিমেন্টারি পার্টিকল4
এবার ফেরা যাক ভারতবর্ষে, দেখা যাক উপমহাদেশে বিজ্ঞানভাবনা কেমন থেকেছে। আমরা উপলব্ধি করি পুটনামের (অ)সাধারণ তালিকা কেমনভাবে সাগর পেরিয়ে (উত্তর)কলোনির শরীর-মনে প্রবেশ করে, তাকে চালনা করে। ‘ভাল ছেলে’র দল তাই পুটনামের নাম না শুনেও ক্রমেই ভিড় বাড়াতে থাকে ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টগুলোতে। একই নিয়মে জীববিদ্যার মধ্যে মলিকুলার বায়লজি কুলীন আর ইকলজি, বিবর্তন ইত্যাদিরা নিম্নবর্গ হয়ে যায়। একই ভাবনা চারিয়ে যায় কলোনির বাবাদের মনে। তাই সদ্য স্বাধীন ভারত যখন বিজ্ঞানে উন্নতি করতে চায় তখন যেন স্বাভাবিকভাবেই কলোনির বিজ্ঞান পুটনামীয় ১ থেকে ৩ নং ধাপের মধ্যে তার বৈধতা আর জাতিসত্তা খুঁজে পেতে চায়। সেই কারণেই ‘শ্রীনিকেতন’-এর পরিবর্তে ফান্ড পায় ‘আই আই টি’ বা ‘বি এ আর সি’।
ঐতিহাসিক ধ্রুব রায়না ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ হিস্টরি অফ সায়েন্স’-এর প্রায় তিরিশ বছরের লেখাপত্তরের একটা হিসেব করে দেখেছেন যে প্রায় সব লেখাই মূলত ভিয়েনা সার্কলের ভাবাদর্শকে ঘিরে থেকেছে; বেশিরভাগ লেখাই প্রাচীন ভারতের অংক বা জোতির্বিদ্যা নিয়ে, ‘শক্ত’ বিজ্ঞান নিয়ে। সাহেবরা যদিও চলে গেছে বিশ শতকের চল্লিশের দশকেই, আমাদের বাবাদের বিজ্ঞানের ধারণা অবশ্য পশ্চিমের চল্লিশের দশকেই থমকে আছে। আর আমাদের মনের সদরে অন্দরে এখনও ভিয়েনা সার্কলের ভিয়েন পাক হয়ে চলেছে। অবশ্য ভিয়েনের পাক যে ঠিকমতো হচ্ছে না, এই কথাটা কিন্তু মনে হয়েছিল কিছু ভাবুক মানুষের। যেমন, গান্ধী তাঁর ‘হিন্দ স্বরাজ’-এ ভাবতে চেয়েছিলেন এক অন্য বিজ্ঞানের সম্ভাবনার কথা, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘মুক্তধারা’, ‘রক্তকরবী’, ‘পল্লিপ্রকৃতি’ ইত্যাদিতে ভাবছিলেন বিজ্ঞান আর ট্রাডিশনের সংশ্লেষের কথা, রাধাকমল মুখার্জি তাঁর ‘বর্ডারল্যান্ডস অফ ইকনমিক্স’, ‘রিজিওনাল সোসিওলজি’ ইত্যাদিতে ভেবেছেন ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি বিজ্ঞানের সম্ভাবনার কথা, বিনয়কুমার সরকার তাঁর ‘মগজ মেরামতের হাতিয়ার’-এ এক নব্য নব্য-ন্যায়ের চর্যার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা অন্তত আমাদের বিজ্ঞানের ভাষ্যে কোন নতুন ভাবনা নিয়ে আসে নি, ‘কর্তার ভূত’-কে আমরা কিছুতেই ছাড়তে পারি নি, পারছি না এখনোও। রবীন্দ্রনাথ সেই ভৌতিক গল্প আমাদের শুনিয়েছেন -
মোদ্দা কথাটা হচ্ছে, বুড়ো কর্তা বেঁচেও নেই, মরেও নেই, ভূত হয়ে আছে। দেশটাকে সে নাড়েও না, অথচ ছাড়েও না।
দেশের মধ্যে দুটো-একটা মানুষ, যারা দিনের বেলা নায়েবের ভয়ে কথা কয় না, তারা গভীর রাত্রে হাত জোড় করে বলে, “কর্তা, এখনো কি ছাড়বার সময় হয় নি।”
কর্তা বলেন, “ওরে অবোধ, আমার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।”
তারা বলে, “ভয় করে যে, কর্তা।”
কর্তা বলেন, “সেইখানেই তো ভূত।”
1 বাবাদের চমৎকার বিবরণ দিয়েছেন দেবপ্রসাদ বন্দোপাধ্যায় তাঁর যযাতি কমপ্লেক্সের আলোচনায়। দেখুন, ‘হে প্রণম্য পিতৃদেব, তুমি তো বন্ধু নও/হও!’ তেপান্তর ৭; জানুয়ারী, ২০০৯। বাবা নামটা নিয়ে আপত্তি থাকলে দেখুন রবীন্দ্রনাথের ‘কর্তার ভূত’। এখানে শুধু বাবাকে কর্তা দিয়ে রিপ্লেস করে দিন।
2 এই প্রসঙ্গে বলে রাখি এই লেখা ছেলেবেলা, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান ইত্যাদি পৌরুষীয় বিষয় নিয়ে; এখানে মেয়েদের খবরটা পাওয়া মুশকিল- আমরা তো শুধু ১ কোটি শরীরি কন্যাভ্রূণ মেরেই কাজ শেষ করিনি, জ্যান্ত কন্যাদের ভাবনার ভ্রূণও মেরেছি অনেক।
3 নরম-শক্তের সামাজিক নির্ধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগে শক্ত বিজ্ঞানে ছেলেদের আর নরম বিজ্ঞানে মেয়েদের আপাত সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেমন যেন এক স্বাভাবিকতায় প্রতিষ্ঠিত। বিলেতের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই বোধহয় ছেলেরা সত্তরের দশকে প্রতিবাদ করেছিল ক্লাসে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে।
4 Putnam, H and Oppenheim, P (1958), Unity of science as working hypothesis in R. Boyd, P. Gasper, and JD. Trout (eds.) The philosophy of science, p 405-427, (MIT press, 1991)
কৃশানু | unkwn.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৩ ০৭:০৩75959
anirban basu | unkwn.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ০৪:৩৬75961
কান্তি | unkwn.***.*** | ১২ এপ্রিল ২০১৩ ০৫:৪৩75960
তাতিন | unkwn.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০১৩ ০২:০৫75962
তাতিন | unkwn.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০১৩ ০২:২৩75963
partha | unkwn.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৫:৩৮75964
ranjan roy | unkwn.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৬:০০75965
তাতিন | unkwn.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৬:১৪75966
তাতিন | unkwn.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৬:১৬75967
anirban basu | unkwn.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৬:৫৯75968
anirban basu | unkwn.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৭:১০75969
anirban basu | unkwn.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৭:৪৯75970
anirban basu | unkwn.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০৭:৫০75971
partha | unkwn.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৩ ০২:০২75972
pi | unkwn.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০১৩ ০৩:১০75973
লেপ্পচা | unkwn.***.*** | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৫৬75975
হৃদয় মালাকার | unkwn.***.*** | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ১০:৪৯75974