এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  পরিবেশ

  • পুনর্ভাবনায় পরিবেশের বিজ্ঞান ও রাজনীতি

    পার্থ চক্রবর্তী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | পরিবেশ | ০৬ জুন ২০১০ | ২২৩৮ বার পঠিত
  • আরো একটি পরিবেশ দিবস পেরিয়ে যাচ্ছি। একটু ফিরে দেখা, কাটা-ছেঁড়া, পরিবেশের বিজ্ঞান ও রাজনীতি নিয়ে প্রচলিত তত্ত্বের পরিসরকে। রইল প্রথম কিস্তি।

    পরিবেশবাদ এখন পৃথিবী জুড়েই রাজনীতির মূলধারায় বয়ে চলেছে। পরিবেশবাদ আজ আমাদের স্কুলপাঠ্যে, যাপিত জীবনে, রাজনৈতিক দর্শনে, রাজনীতির কল্পনায়। সমকালীন পরিবেশের সমস্যার সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ কিংবা সমর্থন এই লেখার উদ্দেশ্য নয়; আমরা পরিবেশকে ঘিরে গড়ে ওঠা ধারণাসমূহ এবং তাদেরকে ঘিরে গড়ে ওঠা পরিবেশবাদ, আমাদের রাজনৈতিক চর্চা/চর্যায় কিভাবে প্রতিফলিত হয়, তা দেখার চেষ্টা করব। এই লেখায় আমরা পরিবেশবাদের প্রচলিত তত্ত্ব-পরিসরগুলোকে ফিরে দেখব, সমকালীন রাজনৈতিক ভাষ্যের এবং তার অনুসঙ্গে বিজ্ঞানের জ্ঞানের সম্পর্ক দেখার চেষ্টা করব; পরিবেশবাদের ধারণাভূমিকে প্রশ্ন করব, প্রশ্নগুলোকে প্রেক্ষিতে বুঝতে চাইব। কিন্তু কেন এই অনুশীলন? কারণ, পরিবেশবাদের পরিচিত সন্দর্ভ আমাদের কিছুটা সংশয়ী, অনিশ্চিত করে তুলেছে। অনেক ভাবনারা ঘিরে রয় আমাদের; আপাতত আমরা কিছুটা সংক্ষেপিতভাবেই, এই লেখায় পরিবেশবাদের ভাবনার অভ্যন্তরে দুটি প্রশ্নকে, দুটি প্যারাডক্সকে চিহ্নিত করে আলোচনাটা শুরু করতে চাইছি। এই আলোচনা আবার একই সাথে নিজেদের সঙ্গেও।

    প্রথম প্যারাডক্স - আমাদের কাছে "পরিবেশ' নামের ধারণাটি আসে এক নেতির মধ্যস্থতায়; পরিবেশকে আমরা বুঝি না-মানুষের এক নৃকেন্দ্রিক ধারণাভূমিতে। পৃথিবীতে যা কিছু না-মানুষ, না-সমাজ, না-সংস্কৃতি ইত্যাদি, তাই হল প্রকৃতি বা পরিবেশ। অন্যভাবে বললে, প্রকৃতি যেন মানুষ/সমাজ/সংস্কৃতি ইত্যাদি বর্গ বা ক্যাটিগরিগুলির অপর; প্রকৃতি আর সংস্কৃতি যেন এক দ্বৈতবাদী জলবিভাজিকায় দুটি পৃথক ধারণাপ্রবাহ। পরিবেশের সমস্যাগুলিও আমরা দেখি এই নির্মিত দ্বিত্ত্বের মধ্যে দিয়ে প্রতিসরিত হয়ে আসা আলোতে। আমরা যেমন জেনেছি যে সংস্কৃতির দূষিত প্রবাহটি কলুষিত করেছে নিষ্কলুষ প্রাকৃতিক প্রবাহটিকে। অপরদিকে এই সমস্যার সমাধানে, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে/সন্দর্ভে, আবার মানুষ/সমাজ/সংস্কৃতিরই হস্তক্ষেপের আবেদন আমরা শুনেছি। যেন প্রকৃতির সাথে আরো বেশী (এবং সঠিক) সাংস্কৃতিক নিবিড়তা, সংশ্লিষ্টতা, প্রকৃতিকে সংস্কৃতির দূষণ থেকে রক্ষা করবে। মানুষই না-মানুষকে মানুষের (অ)মানবিকতা থেকে মুক্ত করবে। আমরা প্রশ্ন করি, প্রকৃতি যদি সংস্কৃতির অপর হয়, তা হলে মানবিক সংস্কৃতি দিয়ে কিভাবে এক না-মানবিক প্রকৃতির কল্যাণ হবে? মানবিক সংস্কৃতি কি ভাবে সংজ্ঞায়িত করবে না-মানবিক প্রকৃতির কল্যাণ? মানবিক সংস্কৃতি তবে কি আদৌ না-মানবিক প্রকৃতির কল্যাণ করতে পারে? তা হলে আমরা কিভাবে ভাবব প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বকে? দ্বিত্ত্বকে কি নতুনভাবে ভাবব, না কি দ্বিত্ত্বের ধারণাটিকেই প্রশ্ন করব, না কি বহুত্বের কথা বলব, না কি দ্বিত্ত্বের ধারণাকে অতিক্রম করে অন্য কোথাও অন্য কোনখানে যাওয়ার কথা ভাবব?

    দ্বিতীয় প্যারাডক্স - পরিবেশের অবনমনের বাস্তবতা আমরা জেনেছি বিজ্ঞানের পাঠ থেকে (দূষণ, উষ্ণায়ন, ওজোন স্তরের ফুটো ইত্যাদি), আবার একই সাথে পরিবেশের অবনমনের কারণ হিসেবে বিজ্ঞান/প্রযুক্তিকেই জেনেছি এবং আরো জেনেছি যে এই সমস্যার চিকিৎসাও বিজ্ঞান/প্রযুক্তি দিয়েই হবে। তা হলে আমরা কোন বৈজ্ঞানিকতাকে "সঠিক' বলে ধরব? না কি দু-রকম (না কি অনেক রকম) বিজ্ঞান/প্রযুক্তি আছে? না কি বিজ্ঞান এইভাবেই কাজ করে, সমস্যা তৈরী করে আর তার "সমাধান' করে?

    চলতি ধারণার প্রয়োগে পরিবেশবাদ আর বিজ্ঞান

    যেহেতু এই লেখা দুটি আপাত বিচ্ছিন্ন প্রশ্নকে ঘিরে, প্রথমেই আমরা পরিবেশবাদ আর বিজ্ঞানকে মিশিয়ে দেব, দেখতে চাইব প্রচলিত ভাবনায় এই দুই বিভেদিত ধারণা কিভাবে মিলেমিশে যায়। যদিও লেখার পরবর্তী অংশে এই দুই ধারণার পৃথকভাবে আলোচনা থাকবে, কিন্তু আমরা দেখাতে চাইব তারা কেমনভাবে অনেকসময়ই মিথোজীবিতায় সম্পর্কিত। নীচের দুটি উদাহরণে আমরা পরিবেশ আন্দোলনের কয়েকটি ধারণাগত অবস্থান ও তার বৈজ্ঞানিক বৈধতার ভিত্তি খুঁজে দেখতে চাইব।

    ধারণা ১ – পৃথিবী মা (

    mother earth
    )-এর ধারণা। এই ধারণায় প্রকৃতি যেন এক জড় অচেতন আধার, যার মধ্যে গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ ঠিক মাপে মাপে লেগে আছে; জীবজগৎ যেন এক অপরিবর্তনীয় মাতৃসমা প্রকৃতির কোলে শিশুর মতো লালিত। জীবজগতের সৃষ্টি এবং নিয়তি প্রকৃতি দ্বারা পূর্বনির্ধারিত; মানুষের নির্মম প্রাকৃতিক লুন্ঠন তাই আদতে মাতৃহত্যার সামিল। এই আপাত মরমি মেটাফর অবশ্যই শুধুমাত্র এক অধিবিদ্যা সঞ্জাত ধারণা নয়, আমরা দেখি সে তার বৈজ্ঞানিক বৈধতাও পেয়েছে ইকলজির সন্দর্ভে। এই ধারণার প্রতিবিম্বিত বৈজ্ঞানিক পরিভাষা হল "ইকলজিক্যাল নিচ' (

    ecological niche
    -এর বাংলা কি তবে "বস্তুতন্ত্রের কুলুঙ্গি'? ইকলজিও অবশ্য সব বিজ্ঞানের টেক্সট-এর মতো মেটাফরের মহামারীতে সংক্রামিত); বিজ্ঞানের ভাষ্যেও জীবজগৎকে যেন প্রকৃতির এক কুলুঙ্গিতে স্থান দেওয়া হল। আমরা দেখি এই কুলুঙ্গির ধারণা বিবর্তনবাদেও প্রসারিত, যেখানে তার পারিভাষিক নাম অভিযোজন বা অ্যাডাপটেশন।

    ধারণা ২ - আর একটি আকর্ষণীয় ধারণা প্রকৃতির ভারসাম্য (

    balance of nature
    )। এই ধারণায় প্রকৃতি বিভিন্নতায় সমৃদ্ধ এক অত্যন্ত জটিল সংস্থান বা সিস্টেম; এবং সিস্টেমের সামান্য পরিবর্তন হলে তা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। প্রকৃতি চলমান পরিবর্তনশীলতার পরিবর্তে যেন কিছু অন্তর্নিহিত সুস্থিত সম্পর্কের মধ্যেই ক্রিয়াশীল। মানুষের অনিয়ন্ত্রিত অপব্যবহারে এই ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে; প্রকৃতি এই মানবিক অবিচার সহ্য করবে না, "প্রকৃতির প্রতিশোধ' অবশ্যম্ভাবী, মানবসভ্যতার মৃত্যু আসন্ন। বিজ্ঞানেও ভারসাম্যের ইকলজির (

    [equilibrium ecology]
    ) ধারণায় বৈধতা পেয়েছে প্রকৃতির ভারসাম্যের রূপক।

    দ্বিত্ত্বের বিপরীতমুদ্রা: সংস্কৃতি/প্রকৃতি থেকে প্রকৃতি/সংস্কৃতি

    ""

    In its commonest and most fundamental sense, the term ‘nature’ refers to everything which is not human and distinguished from the work of humanity”
    কেট সোপার; হোয়াট ইজ নেচার? কালচার, পলিটিক্স অ্যান্ড দি নন-হিউম্যান

    কেট সোপার তাঁর বইটি শুরু করেছেন প্রকৃতির এই সংজ্ঞা দিয়ে যা পশ্চিমে প্রকৃতির ভাবনায় এক আধিপত্যমূলক ধারণা। এই ভাবনা অবশ্যই পশ্চিমে প্রকৃতির একমাত্র ধারণা নয় এবং এই ধারণা আবার শুধুমাত্র পশ্চিমের ভূগোলেই সীমাবদ্ধ নয়। এই ধারণায় প্রকৃতি কল্পিত হয়েছে মানুষের, মানবিক সংস্কৃতির অপর হিসেবে, আরো অনেক দ্বৈতবাদী (

    dualist
    ) ধারণার আধারে প্রকৃতি/সংস্কৃতির দ্বিত্ত্বে। আধুনিকতার সন্দর্ভে দ্বৈতবাদী ধারণায় মানুষকে আদিম প্রকৃতিকে বশ্যতায়, জয় করায়, নিয়ন্ত্রণে, মনুষ্যত্বের উপযুক্ত করে তোলার তত্ত্বায়ন হয়েছে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ, উৎপাটন এবং ধ্বংস তাত্ত্বিক বৈধতা পেয়েছে। সমাজতাত্ত্বিকরা পরিবেশবাদের ইতিহাসের আলোচনায় আমাদের জানিয়েছেন পশ্চিমি সংস্কৃতির প্রকৃতির ওপর আধিপত্যকামিতার শিকড় সম্ভবত ছড়িয়ে আছে আরো প্রাচীন ঐতিহাসিক মুহূর্তে। প্রাক-আধুনিক যুগেও ইউরোপে প্রকৃতির ধ্বংসের তত্ত্বায়ন উঠে এসেছিল জুডিয়-খ্রীষ্টীয় নৃকেন্দ্রিক ধারণার মধ্যে থেকে--যে ধারণায় ঈশ্বর সৃষ্টি করেছে আলো আর অন্ধকার, গ্রহ-নক্ষত্রের সাথে পৃথিবী এবং তার সাথে সেই পৃথিবীতে সকল গাছপালা, পশুপাখি আর মানুষ (পুরুষ অ্যাডাম)। ঈশ্বর সৃষ্ট মানুষের (পুরুষের) অবয়ব/শরীর তৈরী হয়েছে ঈশ্বরের আদলে, যেখানে মানুষই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আর না-মানুষের জন্ম মানুষের ব্যবহারের জন্য; ফলত, না-মানুষ প্রকৃতির মানবিক লুন্ঠন এক বৈধতা খুঁজে পেয়েছিল। পাশ্চাত্যের খ্রীষ্টীয় সংস্করণ পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে নৃকেন্দ্রিক ধর্মবিশ্বাস। ভারতবর্ষেও ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ভাষ্যে প্রকৃতির ধ্বংসের বৈধতা নির্মাণ করা হয়েছিল ঈশ্বরের ইচ্ছাপূরণে মানবিক কর্মকাণ্ড হিসেবে। মহাভারতে যমুনানদীর তীরে (আজকের দিল্লি) খাণ্ডববন দহন করে অগ্নিদেবের খিদে মেটানোয় যথেচ্ছ বনাঞ্চল ধ্বংস করে কৃষিসভ্যতা পত্তনের গল্প আমরা তো শুনেছি

    ইউরোকেন্দ্রিক আধুনিকতা, প্রকৃতির এই খ্রীষ্টীয় ধারণায় এক বিচ্ছেদ নিয়ে আসে, যাকে "বিজ্ঞানের বিপ্লব'-ও (

    [scientific revolution]
    ) বলা হয়। ধারণাগতবভাবে এই বিপ্লবে অবশ্য না-মানুষ প্রকৃতির ধ্বংসের খ্রীষ্টীয় কাঠামোটি থেকেই গেল, প্রকৃতির সৃষ্টিতত্ত্বের নতুন সন্দর্ভ লেখা হল। বিজ্ঞানের বিপ্লবে প্রথমসারির অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন রেনে দেকার্ত, যিনি খ্রীষ্টীয় প্রকৃতিকে পুন:সংজ্ঞায়িত করলেন মন/শরীরের দ্ব্যনুকে। প্রকৃতি হল সেই শরীর যাকে মানুষের মন পর্যবেক্ষণ করতে পারে, পাঠ করতে পারে। এই পাঠে মনই প্রাথমিক বা এসেন্স আর শরীর শুধুমাত্র তার অংশসমূহের এক সম্মিলনী। এই পাঠ একভাবে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নির্মাণকে বাতিল করে প্রকৃতিকে যন্ত্রের রূপকে, যন্ত্রাংশের রূপকে দেখতে শেখার পাঠ। কার্তেসীয় ধারণায় প্রকৃতি এক বস্তু বা অবজেক্টে খর্বিত হল। অন্য এক বিপ্লবী ফ্রান্সিস বেকন তো প্রকৃতিকে মানুষের দাসীতে রূপান্তরের দাবী তুললেন। পশ্চিমি আধুনিকতার সন্দর্ভে প্রকৃতি/সংস্কৃতি তাই শুধুমাত্র দুটি পৃথক বর্গ নয়, তারা এক ক্রমবিভক্ত কর্তৃত্বের ভিত্তিতে সংগঠিত। ভাবনার এই কাঠামোকে আমরা এঁকেছি গাণিতিক লব/হর-এর রূপকে (চিত্র ১, বাম প্যানেল; যেখানে লব এবং হর যথাক্রমে প্রাথমিক ও গৌণ বর্গ)।

    প্রকৃতির যান্ত্রিক রূপকে কার্তেসীয় খর্বীকরণ (

    [Cartesian reductionism]
    ) এবং তার পরিব্যাপ্ত বিচ্ছিন্নতা ও হতাশা পশ্চিমি চিন্তায় নানান প্রতিক্রিয়ায় আকার পেতে থাকে। খ্রীষ্টীয় বিশ শতকের ষাটের দশক থেকে আধুনিকতার অন্তর্বীক্ষণের বিভিন্ন ধারার মধ্যে পরিবেশচিন্তা ও আন্দোলনেরও সূচনা হয়েছে এবং ক্রমেই তা অন্যত্র ছড়িয়েও পড়েছে। এই অন্তর্বীক্ষণের এক প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃতি-সংস্কৃতি দ্ব্যনুককে উলটে দেবার কথা এসেছে, প্রকৃতিকে এসেন্স হিসেবে ভাবার চেষ্টা হয়েছে, প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার কথা হয়েছে (চিত্র ১, ডান প্যানেল)।



    মানুষকে কার্তেসীয় নৃকেন্দ্রিক ধারণা থেকে বেরিয়ে প্রকৃতি-কেন্দ্রিক (

    ecocentric
    ) ধারণায় অন্তর্ভুক্তির রাজনীতি আজকের পরিবেশবাদের স্লোগান। মানুষকে প্রকৃতির "নিয়ম' মেনে তার মতো হয়ে উঠতে হবে (

    [back-to-the-land, deep ecology]
    ) অথবা বৈজ্ঞানিক সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে তাকে মানুষের নাগালের, আয়ত্বের বাইরে রাখতে হবে অথবা যে পরিবেশে মানুষ এখনো বসতি গড়ে নি, তাকে সেইভাবেই পৃথক করে রাখতে হবে (

    [wilderness idea]
    )। প্রকৃতি-কেন্দ্রিকতায় নিহিতার্থে মানুষের কর্মপরায়ণতাই যেন অ-প্রাকৃতিক; তাই প্রকৃতিকে মানুষ থেকে আলাদা করতে হবে, মানুষকে বাদ দিয়ে প্রকৃতির সংরক্ষণ করতে হবে। জীববৈচিত্র (

    biodiversity
    ) সংরক্ষণ করতে হবে, তদের মানুষের এক্তিয়ারের বাইরে রাখতে হবে, সংরক্ষণের রাজনীতি করতে হবে। পশ্চিমে/উত্তরে বামপন্থী উদারনৈতিক রাজনীতিতে এই সংরক্ষণবাদ সক্রিয়; পশুপ্রেমী, ভেগান, নিরামিষী রাজনৈতিক কর্মীর সংখ্যা আজ ক্রমবর্ধমান।

    আত্মসমীক্ষায় তিন উদাহরণ

    প্রকৃতি/সংস্কৃতির দ্ব্যনুকের ধারণা থেকে আমাদের রাজনৈতিক সৃজন ও অবস্থান কখনো সমস্যায়িত এবং কখনো কখনো কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনটি পৃথক উদাহরণে প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের ভাবনা কিভাবে আমাদের চর্চা আর চর্যায় জড়িয়ে যায়, তা এবার বুঝতে চেষ্টা করি। প্রথম উদাহরণে আমরা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াকে ফিরে দেখব, দ্বিতীয়টিতে এক পরিবেশবাদীর ভাবনার বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করব আর শেষটিতে শুধুমাত্র একটি আকাদেমিক ভাবনা উদ্ধৃত করব।

    উদাহরণ ১ - আমরা মিজো পাহাড়ের দুর্ভিক্ষের খবর জেনেছি, জেনেছি তার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা, দেখেছি ১৯৫৯-এর দুর্ভিক্ষের পরে "মিজো ন্যাশনাল ফেমিন ফ্রন্ট' থেকে "মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট'-এর রাজনৈতিক পালাবদল, লালডেঙ্গার নেতৃত্বে মিজো রাষ্ট্রের দাবীর আন্দোলন। আমরা বলি, লিখি আদিবাসী মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা- প্রগতিশীল রাজনীতিক হিসেবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের প্রতি সমব্যাথী হই, তাঁদের প্রতিবাদের শরিক হই। কিন্তু কেন এই দুর্ভিক্ষ? কেন প্রতি পঞ্চাশ বছরে আদিবাসী মানুষেরা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েন? এর একটা বায়লজিক/ইকলজিক উত্তর তাঁরাও জানেন- তাঁরাই আমাদের জানিয়েছেন, প্রতি অর্ধশতাব্দীতে মিজো পাহাড়ের বাঁশবনে ৩/৪ মাসের জন্য একবার করে ফল আসে। এই ফল মাটিতে পড়ে নতুন বাঁশগাছের, বাঁশবনের জন্ম দেয়। আবার সেই ফল খেয়েই প্রতি ৪৮ বছরে একবার করে বাঁশবনের ইঁদুরের অসম্ভব দ্রুত কিন্তু ক্ষণস্থায়ী বংশবৃদ্ধি হয়। আর বাঁশের ফলনের পর ইঁদুরের খাবারও ফুরিয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলবেন যে এই প্রাকৃতিক নিয়মে বাঁশগাছ আর ইঁদুরের সহাবস্থান তাদের দুই প্রজাতির বেঁচে থাকা এবং বিবর্তন নিশ্চিত করে। এবার যখন আদিবাসী মানুষ এই প্রাকৃতিক "ভারসাম্য' নষ্ট করে চাষবাস শুরু করলেন তখন লক্ষ লক্ষ ইঁদুর আর ৩/৪ মাসের বাঁশফলের ফলনের পরে মারা গেল না - তারা দিব্যি মানুষের তৈরী ধান খেয়ে বহাল তবিয়তে বেঁচে রইল। মিজো পাহাড়ের মানুষ এবার এক ভয়াবহ খাদ্যসঙ্কটে পড়লেন, দুর্ভিক্ষের কবলে পড়লেন। সমস্যা হল এই ইকলজির রাজনীতিতে আমরা শিকারকে জানি কিন্তু শিকারীকে চিনি না; আমাদের চেনা শিকারীরা এখানে নেই, এখানে পুঁজি নেই, কর্পোরেট স্বার্থ নেই, মডার্নিজম নেই, এমনকি রাষ্ট্র-ও সেভাবে নেই। সঙ্গতভাবেই মনে হয় যেন আদিবাসীরা নিজেরাই তাঁদের অবস্থার জন্য দায়ী। তাঁরাই যেন প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করেছেন, তাকে ধ্বংস করেছেন।

    উদাহরণ ২ - পরিবেশবাদী ভাবনা কিভাবে এক স্ববিরোধী রাজনৈতিক ভাষ্যে আটকা পড়ে, ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে তা আমরা বন্দনা শিভার উদাহরণে বুঝতে চেষ্টা করব। খাদ্য নিরাপত্তার পক্ষে এবং কৃষিতে বহুজাতিক পুঁজির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বন্দনা শিভার ক্রিটিক আমাদের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ দলিল। শিভার পরিবেশবাদের পাঠ একদিকে যেমন র‌্যাডিকাল লোকায়তিক কিন্তু কখনো কখনো তাঁর স্বদেশী জাতীয়তাবাদী অবস্থান আমাদের সংশয়ী করে। তিনি যেমন লোকায়তিক অবস্থান থেকে বিদেশী পুঁজির বিরুদ্ধে দেশীয় প্রচলিত কৃষিকে দাঁড় করান, আবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগ্যানাইজেসনের বিরুদ্ধে স্বদেশিয়ানার পক্ষে দাঁড়ান। তাই ১৯৯৮ সালের বিজেপি সরকারের অর্থনৈতিক স্বদেশিয়ানার ধারণা বন্দনা শিভার কাছে বিশ্বায়িত পুঁজির বিরুদ্ধে আকর্ষণীয় হাতিয়ার বলে মনে হয়। একই ভাবে গত দু'শ বছরে পৃথিবী জুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে তিনি কৃষি সভ্যতার অন্তর্নিহিত প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙ্গে পরার যুক্তি দেন। এই যুক্তির অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে তিনি বিজ্ঞান/প্রযুক্তিকে পরিবেশের সকল সমস্যার কারণ স্বরূপ কাঠগড়ায় দাঁড় করান, আবার একই সাথে পরিবেশের সমস্যার ব্যাখ্যায় বৈজ্ঞানিক তথ্য/তত্ত্ব ব্যবহার করেন। এমনকি যখন "স্টোলেন হারভেস্ট' বইতে ট্রাডিশনের পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন - প্রদীপের সরষের তেলের ধোঁয়া এনভিরনমেনটাল পিউরিফায়ার, তখন তিনি এক যৌক্তিক বিজ্ঞানবাদকেই বৈধতা দিয়ে দেন।

    আবার পরিবেশ আন্দোলনের অংশ হিসেবে পরিবেশবাদ স্বদেশী/সংরক্ষণবাদের সাথে ধারণাগতভাবে জীববৈচিত্র রক্ষার কর্মকাণ্ডে মিশে যায়। এই ধারণাতেও এক অপরিবর্তনশীল প্রকৃতির কল্পনা করা হয় যেখানে বহুবিচিত্র জীবজগতের অস্তিত্ত্ব যেন শুধুমাত্র মানুষের কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমিত। এই ধারণায় স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়ে যায় ইকলজির বিবর্তনের সম্ভাব্যতার কথা, ইকলজির চলমান গতিশীলতার কথা। বাদ পড়ে যায় সেই সব জীবাশ্মের কথা যারা আমাদের অন্তত কিছুটা দুর্বলভাবে হলেও জানিয়েছে যে বিবর্তনের ইতিহাসে পৃথিবীতে মানুষ আসার আগেই ৯৯.৯ শতাংশের বেশী জীবকূল লুপ্ত হয়ে গেছে। লক্ষ বছরের প্রাণের ইতিহাস থেকে সরে এসে আমাদের সন্নিহিত ইকলজির দিকে ফিরলেও জীববৈচিত্রের ধারণা সমস্যায়িতই থাকে, এমনকি উলটেও যায় কখনো। আমরা দেখতে পাই, আজকের জীববৈচিত্র শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফল নয়, এটি ভীষণভাবেই মানুষের কার্যক্রমের ফসলও। মনস্যান্টো বা ডিউপন্ট-এর কর্পোরেটীকরণের অনেক আগে থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের "স্থানীয়' পশু-গাছপালা বিশ্বায়িত হয়েছে, সংস্কৃতিতে আত্তীকৃত হয়েছে। আলু, টমেটো, তেলাপিয়া, কাঁচালঙ্কা তবে কি প্রাকৃতিক, না কি সাংস্কৃতিক? যখন শিভা দেশীয় (প্রাকৃতিক) বীজ-ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার কথা বলেন, তখন কোনটা দেশী আর কোনটা বিদেশী বীজ, কি ভাবে তা নির্ধারিত হবে?

    শিভার পরিবেশবাদের আলোচনায় সম্ভবত সবচেয়ে হতাশাজনক প্রবণতা হল আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অসম্পূর্ণ তথ্যের পরিবেশন। তিনি "স্টোলেন হারভেস্ট' বইয়ে জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত সয়াবীনের আলোচনায় মন্তব্য করেন -"

    infants fed with soy-based formula are daily ingesting a dose of estrogens equivalent to that of 8 to 12 contraceptive pills’
    । রিচার্ড লিয়নটিন এই বইয়ের আলোচনায় দেখান, শিভা যে লেখা থেকে এই তথ্য পেয়েছেন, সেই লেখাতেই স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে এই হরমোন আদতে স্টেরয়েড নয় এবং মানবশরীরে তার সক্রিয়তা অত্যন্ত সীমিত (লিয়নটিন, ২০০০

    b
    )।

    সমকালীন পরিবেশবাদে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তার উৎপাদিত জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অরগ্যানিজম (জিএমও) আরো একটি বিসম্বাদী পরিসর। পরিবেশবাদীদের বায়লজির প্রসঙ্গে জিএমও সম্পর্কিত মূল আপত্তি সবসময়ই থেকেছে প্রকৃতির "স্বাভাবিক' বংশগতির নিয়ম ভেঙ্গে তার ম্যনিপুলেশন করানোর মধ্যে। সমস্যা হল এই ক্রিটিক সংজ্ঞার্থেই কৃষিরও ক্রিটিক। ইতিহাসের প্রথম চাষ এবং পশুপালনের দিন থেকেই মানুষ জীবজগতকে জিনগতভাবে পরিবর্তন ও নির্বাচন করে এসেছে। একভাবে কৃষি আর গৃহপালনের ইতিহাস তো জিনের ম্যানিপুলেশনের "অস্বাভাবিক' ইতিহাস। আজকের চাষবাস হাজার বছরের জেনেটিক নির্বাচন আর তাদের সংকরে তৈরী হওয়া এবং কোন যুক্তিতেই এই নির্বাচন আকস্মিক নয়; মানুষের সক্রিয় ও সুচিন্তিত অংশগ্রহণের (এক্সপেরিমেন্ট?) মধ্যে দিয়ে এই সব হাইব্রীড তৈরী হয়েছে। কৃষি তো শুধুমাত্র "কাজ' নয়, কৃষি এক মানবিক সংস্কৃতিও (হয়ত, ইংরেজি এগ্রিকালচার কথাটা এখানে বেশী উপযুক্ত); জিএমও সৃষ্টি করা রামা কৈবর্ত্ত, রহিম শেখ, গফুর মিঞা কিংবা উপেন আর তাদের পূর্বপুরুষ/নারীদের সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা এক অনুপম (বি)জ্ঞান।

    তা হলে কি আমরা জিএমও -কে বুঝছি, ভাবছি? প্রশ্নাতীতভাবেই কর্পোরেট লালিত বিটি-তূলো চাষ আর কৃষক-কৃষকীর (আত্ম)হত্যার সম্পর্ক প্রথাগত কৃষিসংস্কৃতি থেকে ভিন্ন; শিভা আমাদের দেখিয়েছেন কৃষক-কৃষকীর মৃত্যুতে কর্পোরেট পুঁজির আয়োজন, অংশগ্রহণ আর সম্পাদনের সক্রিয় ভূমিকা। আমরা এখানে শিভার ভাবনাকে আরো একটু প্রসারিত করতে চাইব; আমাদের ভাবনায় জিএমও শুধুমাত্র এক "অস্বাভাবিক' প্রাণ নয়, জিএমও-কে আমরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-অর্থ ও অর্থনৈতিক উদ্বৃত্ত আহরণ-বৌদ্ধিক সম্পত্তির অধিকার (

    intellectual property rights
    ) ইত্যাদির নেটওয়ার্কে গড়ে ওঠা উৎপাদন হিসেবে দেখছি। এই লেখার পরিসরে জিএমও সম্পর্কীত ভাবনার বিস্তারিত আলোচনা করছি না, পরের অংশে আমরা শুধু বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রসঙ্গটি ছুঁয়ে যাব।

    উদাহরণ ৩ - প্রকৃতি-সংস্কৃতি দ্বিত্ত্ব আর বৈজ্ঞানিক নির্ধারণবাদের এক (অ)সুন্দর সমাপতন হতে দেখি বিজ্ঞানের ইতিহাসের ভাষ্যে। ভারতবর্ষে এখন তার বৈজ্ঞানিক অতীতকে খোঁজার চেষ্টায় অনেক বই লেখা/সম্পাদনা হচ্ছে। বি ভি সুব্বারায়াপ্পা সম্পাদিত "মেডিসিন অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস ইন ইন্ডিয়া' (

    Volume IV, part 2 of History of Science, Philosophy and Culture in Indian Civilization
    ) ম্যাগনাম ওপাসটি সুব্বারায়াপ্পা শুরু করছেন এই ভাবে- "

    The struggle for existence and the survival of the fittest that characterised the biological evolution leading to the emergence of man, were external and internal alike. The incessant human struggle, from pre-historic times to the present, for existence as a distinct biological species overcoming often the hostile environment on the one side and, on the other, the diseases that afflict him both externally and internally has been indeed a fascinating story’.
    সুব্বারায়াপ্পার ভাষ্যে "আমাদের' বিজ্ঞানের ইতিহাসও পশ্চিমের মতোই প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে, তাকে পরিবর্তন করে এক স্থূল ডারউয়িনিয় বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে "এগিয়েছে'। লেখার শেষে এই প্রাচ্যবাদী (

    orientalism
    ) নির্মাণকে আমরা আবার ফিরে দেখব।

    *(পরবর্তী পর্বে সমাপ্য)

    **(লেখাটি তেপান্তর পত্রিকায় পূর্বপ্রকাশিত)

    মন্তব্য:

    ১। এই লেখায় যা সরাসরি নেই - প্রথমত, পরিবেশের রাজনীতিতে পুঁজিবাদ ও পরিবেশের অবনমনের সম্পর্ককে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রশ্নগুলি। পুঁজিবাদী কনজামসনের উদ্বৃত্ত হিসেবে যদি পরিবেশের অবক্ষয় হয়ে থাকে, তা হলে মেইনস্ট্রীম পুঁজিবাদ পরিবেশ শোধন নিয়ে আজ এত উৎসাহিত কেন? এই অনুরাগ কি পুঁজিবাদের "মানবিক মুখ' না কি নমনীয় পুঁজিবাদ এক নতুন বাজারের সন্ধান পেয়েছে? সবুজ-প্রযুক্তি কি পুঁজিবাদী ইউটোপিয়ার নতুন আবিষ্কার? জিজেক যেমন পুঁজিবাদের নমনীয়তার কন্টেক্সটে বলবেন, কুমেরুর বরফ গলে গেলে পুঁজি সেখানে হয়তো একদিন রিয়েল এসটেট-এর দালালি শুরু করবে। তাই পরিবেশ-ব্যবসায়ী আল গোর যখন আমাদের "পীড়াদায়ক সত্য'-এর গল্পে বলেন পৃথিবীর উষ্ণায়ন (রাজ)নৈতিক প্রশ্ন, এবং বলে নোবেল প্রাইজ পান, তারপর প্রাইজ পেয়ে বলেন পরিবেশের রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল "কার্বন ক্রেডিট' প্রণয়ন করা, তখন আমরা সংশয়ী হই, ক্রিটিক্যাল হই। ক্রিটিক্যাল হওয়া আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান হয়ে দাঁড়ায় (সম্পূর্ণ বক্তৃতাটি এখানে দেখুন-

    http://nobelprize.org/nobel_prizes/peace/laureates/2007/gore-lecture_en.html
    ) । দ্বিতীয়ত, প্রকৃতি-ভাবনার কাঠামোয় এবং পরিবেশ ধ্বংসের প্রেক্ষিতে নারীবাদী বিসম্বাদী ক্রিটিক। সরাসরি উদ্ধৃত না করলেও নারীবাদী ভাবনা অনেকসময়ই ছুঁয়ে থেকেছে এই লেখাকে। শেফালি মৈত্রের "নৈতিকতা ও নারীবাদ' (২০০৩) বইতে "নারী-নিসর্গনীতি' প্রবন্ধটি নারীবাদী পরিবেশ ভাবনার একটি সুন্দর সারসংক্ষেপ।

    ২। প্রকৃতির ধ্বংসের ইতিহাসে খ্রীষ্টীয় ভাবনার প্রভাব নিয়ে লিন হোয়াইটের (

    1967
    ) বহুল পরিচিত "

    The Historical Roots of Our Ecological Crisis’ Science 155, 3767-3772.
    পশ্চিমে, বিশেষত আমেরিকায় হোয়াইট ও অন্যান্যদের চিন্তা কিভাবে পরিবেশবাদের ভাবনাকে প্রভাবিত করেছে, তার আলোচনায় দেখুন জন মেয়ার (২০০১)। এই বিষয়ে একটি সমন্বিত সাম্প্রতিক লেখা,

    Phillip Pattberg
    (

    2007
    ), "

    Conquest, Domination and Control: Europe’s Mastery of Nature in Historic Perspective’, Journal of Political Ecology, 14, 1-9.

    ৩। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে কৃষিসভ্যতা পত্তন "আদিবাসী' মানুষ আর তার সভ্যতার পতনের ইতিহাস। এই পতনের ইতিহাস সম্পৃক্ত হয়ে আছে বনাঞ্চল তথা প্রকৃতির ধ্বংসের ইতিহাসে (মাধব গ্যাডগিল ও রামচন্দ্র গুহ (১৯৯৩))।

    ৪। পশ্চিমি ভাবনায় প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের ইতিহাস ও তার বিশ্লেষণ করেছেন অনেকেই। এঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নারীবাদী ক্রিটিক ডোনা হারাওয়ে, ভ্যাল প্লামউড, কেট সোপার। নৃতত্ত্বের প্রেক্ষিতে ব্রুনো লাতুরের (১৯৯৩) দার্শনিক বিশ্লেষণ; প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের সর্বব্যাপী ও অত্যধিক প্রয়োগের একজন ক্রিটিক জন মেয়ার (২০০১)।

    ৫। পরিবেশবাদের বিভিন্ন ধারার তথ্য রামচন্দ্র গুহ-র "এনভিরনমেন্টালিজম: এ গ্লোবাল হিস্টরি' থেকে অনুসরণ করা হয়েছে।

    ৬। বিজেপি সরকারের অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে দেখুন বন্দনা শিভার "

    Power Shift in India’ http://www.yesmagazine.org/article.asp?ID=841
    । জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে শিভা একটি সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন-

    In India, 1800 is the watershed for the consolidation of colonial regimes. For centuries before 1800 our population had been stable. When you depend on the land, you know there are five people who can be supported. You work your society out so you have five. When you are selling your labor power on an uncertain basis, in an unstable wage market, you know that having ten is better than having five. So dispossession from the Earth's natural wealth is at the root of instability and population growth.
    সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি এখানে দেখুন-

    http://www.yesmagazine.org/article.asp?ID=570

    ৫ই জুন, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৬ জুন ২০১০ | ২২৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন