এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  পরিবেশ

  • পুনর্ভাবনায় পরিবেশের বিজ্ঞান ও রাজনীতি (শেষ পর্ব)

    পার্থ চক্রবর্তী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | পরিবেশ | ১৩ জুন ২০১০ | ১০৭৩ বার পঠিত
  • (প্রথম পর্বের পর)

    অনেকান্ত-প্রকৃতি না কি প্রকৃতি-বিজ্ঞান?

    তিন নম্বর উদাহরণটির ফ্যাসিনেটিং গল্পটি থেকে আমরা চলে যেতে চাইছি দ্বিতীয় প্যারাডক্সের আলোচনায়। পশ্চিমি নাগরিক সভ্যতায় প্রকৃতির বৈজ্ঞানিকীকরণ ইতিপূর্বেই হয়ে গেছে; ল্যাবরেটরীর মধ্যস্থতায় একটিমাত্র প্রকৃতিই, একটিমাত্র প্রকৃতির জ্ঞানই, এক বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক জ্ঞানই সামাজিকভাবে বৈধ, স্বীকৃত ও স্বত:সিদ্ধ। তাই প্রকৃতির বৈজ্ঞানিক ভাষ্য কোন "সাধারণ' মানুষের রাজনীতির বিষয় হয়ে উঠতে পারে না। এই বিজ্ঞানকে ব্রুনো লাতুর সংজ্ঞায়িত করেছেন এক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে যেখানে বিজ্ঞান তার একীভূত প্রকৃতির জ্ঞানতত্ত্বের মধ্যস্থতায় প্রকৃতির অনেকান্ত ভাষ্যকে অক্ষম করে "সাধারণ' মানুষের রাজনীতির সম্ভাবনাকে অসম্ভব করে তোলে (লাতুর, ২০০৪)। আজকের পরিবেশবাদেও প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞানের শুদ্ধ বনে হাজির হয়, পরিবেশের সমস্যার আলোচনা ঘুরে বেড়ায় প্রকৃতির এক প্রশ্নাতীত জ্ঞানতত্ত্বের চারপাশে। লাতুর মজা করে বলবেন পরিবেশবাদীরা যেন প্রোটন, জিন বা কৃষ্ণগহ্বরের সবুজায়ন করতে চাইছেন।

    পরিবেশের আলোচনায় বিজ্ঞান আমাদের কাছে এক বিসংবাদী পরিসর। আমরা তর্কটাকে নিয়ে যাব বিজ্ঞানের অন্দরমহলে (আজকের প্রাকৃতিক-জ্ঞান কি "প্লেটোর গুহা' ছেড়ে ল্যাবরেটরীর অন্ধকারে?); আমরা বিজ্ঞানের জ্ঞানের এবং তার উপজাত প্রযুক্তির নির্মাণের পদ্ধতিকে প্রশ্ন করব, তাকে সমস্যায়িত করব। আমরা প্রাথমিকভাবে দ্বিতীয় প্যারাডক্সের কনটেক্সেটে বায়লজির এবং বায়টেকনলজির জ্ঞানোৎপাদনের তাত্ত্বিক অবস্থানকে প্রশ্ন করব। আলোচনার প্রস্থানবিন্দু হিসেবে বায়লজির জ্ঞানের নির্মাণে শুদ্ধতার ধারণাকে নিয়ে আসব, দেখব শুদ্ধতা কেমন ভাবে বিজ্ঞানের জ্ঞানে অন্তর্লীন। যেমন আমরা দেখি ক্লাসিক্যাল জেনেটিকসে মেন্ডেলের জেনেটিক সূত্র কিভাবে "শুদ্ধ প্রজাতি'-এর ধারণাভূমিতে অবস্থিত। তিনি একটা মটর ক্ষেতকে ল্যাবরেটরী বানিয়ে মটরগাছের "স্বাভাবিক' প্রজনন বন্ধ করে বিভিন্ন রকম শুদ্ধ প্রজাতি তৈরী করেছিলেন; তারপর তাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত প্রজনন ঘটিয়ে কিভাবে তিনি তার বিশ্লেষণ করতে পেরেছিলেন। একই ধারণাগত অবস্থান থেকে মলিকুলার বায়লজিতে প্লানেরিয়ার পরিবর্তে সি-এলিগ্যান্স নামের এক কৃমির গবেষণা জনপ্রিয় হয়েছে; কারণ, সি-এলিগ্যান্সে প্রতিটি জিনের কার্যকলাপ আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়, ম্যানিপুলেট করা যায়- বিজ্ঞানীদের চিন্তাজগতে তাই সি-এলিগ্যান্স যেন জেনেটিক নির্ধারণবাদের এক সিম্বল। অপরদিকে প্লানেরিয়া যেন এক মূর্ত জৈব বিশৃঙ্খলা; যদি তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলাও হয়, প্রতিটি টুকরো আবার রক্তবীজ অসুরের মতো নতুন প্লানেরিয়ার জন্ম দেয়। এখানে কোন সরল একমাত্রিক জিন-ফিনোটাইপের কার্যকারণ সম্পর্ক নেই, শরীরের অংশ-সমগ্রের কোন ভেদ নেই, প্রতিটি অংশ যেন সমগ্রের এক সম্প্রসারিত সত্তা। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও এই শুদ্ধতার ধারণায় সীমাবদ্ধ; অনাধুনিক চিকিৎসার অন্যতম বৈজ্ঞানিক ক্রিটিক তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রথাগত ওষুধের রাসায়নিক শুদ্ধতার দাবিতে আটকে যায়। বৈজ্ঞানিক শুদ্ধতার এই যুক্তিতে প্লানেরিয়ার মতো কর্মী মানুষের অভিজ্ঞতায়, পারিপার্শিকতায়, বিনিময়ে গড়ে ওঠা এক অনুপম কৃষি-সংস্কৃতিও রেলিগেটেড হয়, বাদ পড়ে যায়।

    বায়লজির জ্ঞানে শুদ্ধতার প্রচলনের দাবী অনেকদিনের; বায়লজিকে অন্যান্য প্রকৃতি বিজ্ঞানের মত হয়ে ওঠার, তাদের ভাষায় কথা বলার তত্ত্বায়নও হয়েছে বিজ্ঞানের দর্শনে। আমরা দেখি শুদ্ধতার ধারণা অন্তরঙ্গভাবে সর্বজনীন, সুশৃঙ্খল, অভ্রান্ত এক অধিবিদ্যক পৃথিবীর এবং প্রকৃতি বিজ্ঞানের ধারণায় মিশে যায়; কারণ, ঈশ্বরের তৈরী পৃথিবীর নিয়ম তো কখনোই নৈরাজ্যমূলক, বিভ্রান্তিকর হতে পারে না। বায়লজি যেন বিজ্ঞান হিসেবে এই ধারণার বাইরে। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত বায়লজিতে এবং তার জ্ঞানতত্ত্বে সম্ভবত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকেছে ডারউয়িনের বিবর্তনবাদকে ঘিরে। বার্ট্রান্ড রাসেল থেকে কার্ল পপার, বিবর্তনের তত্ত্বকে না-বিজ্ঞান বলে নাকচ করেছেন; বার্নাড বার্বার তার "সায়েন্স অ্যান্ড সোশ্যাল অর্ডার'(১৯৫২) বইয়ে যেমন বলেছেন- "বায়লজি এখনো ফিসিক্যাল সায়েন্সের মত ধারণাগতভাবে সাধারণীকরণের বিন্যাসে সফল হতে পারে নি; তাই বিজ্ঞান হিসেবে বায়লজি অনুপযুক্ত'। ফলে উত্তরে/পশ্চিমে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত বিজ্ঞানের দর্শনে বায়লজি একরকম প্রান্তিক ছিল। ষাটের দশক থেকে মলিকুলার বায়লজির গবেষণা আর তার ভাবাদর্শের উদ্বৃত্ত হিসেবে জেনেটিক নির্ধারণবাদ বায়লজিকে বিজ্ঞানের অন্দরে ও বিজ্ঞানের দর্শনে এক কৌলিন্য দিয়েছে।

    DNA
    -এর আবিষ্কারক ফ্রান্সিস ক্রিক যেমন বললেন -বিজ্ঞানের পরম উদ্দেশ্যই হল সকল বায়লজির ধারণাকে ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রির ভাষায় ব্যাখ্যা করা। জীবকূলের আপাত ভিন্নতায় নিহিত সর্বজনীন "

    DNA
    কোড' যেমন বায়লজিতে "ফিসিক্যাল সায়েন্সের মত ধারণাগতভাবে সাধারণীকরণের বিন্যাসে' এক "সফল' প্রকল্পনা; অর্থাৎ, মলিকুলের বা

    DNA
    -এর সাপেক্ষে সকল জীব অভিন্নসত্তা। সুতরাং, একটি

    DNA
    বা জিন প্রতিটি অরগ্যানিজমে হুবহু অনুরূপ প্রোটিন এবং শেষ পর্যন্ত অভিন্ন ফিনোটাইপ তৈরী করবে। এই ধারণাগত অবস্থান থেকেই এক অরগ্যানিজমের সমগ্রতা জিনের কার্যকারিতায় খর্বিত হল; বায়টেকনলজিতে বিশেষত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ জিনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে (জিএমও) অরগ্যানিজমের ভবিষ্যৎ স্থিরীকৃত হল। ল্যাবরেটরীর বাস্তবতা দার্শনিক বৈধতায় যেন সম্প্রসারিত হল একীভূত প্রকৃতিতে। আমরা আগে তেপান্তরের পাতায় আলোচনা করেছি কি ভাবে ল্যাবরেটরীর এই খর্বিকরণ, শুদ্ধিকরণ, বিজ্ঞানের অন্ত:শায়ী প্রক্রিয়ায় সবসময়ই প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতায় অন্য বাস্তবতা নির্মাণ করে চলে (চক্রবর্তী, তেপান্তর ৭)।

    প্রকৃতি-সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের অবশ্যম্ভাবিতা?

    আমরা দেখেছি পরিবেশবাদের বনে নৃকেন্দ্রিকতা কিভাবে প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বকে বজায় রেখে দেয়; সংস্কৃতির আধিপত্যকে উলটে দিয়ে সে প্রকৃতিকে প্রাথমিক বর্গ হিসেবে তত্ত্বায়িত করে। আমরা দেখলাম দ্বিত্ত্বের ধারণাকে প্রশ্ন না করলে, দ্বিত্ত্বের ধারণা থেকে বেরুতে না পারলে পূর্বোল্লেখিত প্যারাডক্সগুলির আলোচনা করা অসম্ভব। তাহলে কিভাবে বেরুব এই তত্ত্বাবস্থান থেকে? আপাতত, জাঁক দেরিদা-কৃত প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্ব্যনুকের সমস্যায়ণকে ধরে আমরা আলোচনাটা শুরু করতে চাইব। আধুনিকতার অন্তর্বীক্ষণের একটি ধারায়, ইউরোপের স্ট্রাকচারালিজমে ভাষাতত্ত্ব (স্যসুর, রুশো) ও নৃতত্ত্বের (লেভি-স্ত্রোস) সন্দর্ভে দেরিদার পাঠ এই দ্বিত্ত্বকে সমস্যায়িত করে। রুশোর ভাষাতত্ত্বে লিখন (সংস্কৃতি) ও বাচন (প্রকৃতি), এই দুই দ্বিত্ত্বে বাচনই প্রাথমিক বর্গ, লিখন তার সাপ্লিমেন্ট। রুশোর দর্শনে (ইউরোপীয়)মানুষ তার প্রাকৃতিক সাবলীলতা থেকে সভ্যতায় অধ:পতিত হয়েছে আর "লিখনের হিংস্রতা' যেন এই পতনের বাহন। লেভি-স্ত্রোস তাঁর নাম্বিকওয়ারা উপজাতির নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে রুশোর ভাষাতত্ত্বকে নিয়ে এলেন। তিনি দেখলেন উপজাতির "লিখনের পাঠে'র মধ্যে দিয়ে কিভাবে হায়ারার্কি, রাজনৈতিক ক্ষমতা ক্রমশ আকার পেতে থাকে। লেভি-স্ত্রোসের বনে লিখন, নিষ্পাপ বাচনিক নাম্বিকওয়ারা সমাজে হিংস্রতা আর শোষণ অনুমোদন করে। দেরিদাও মেনে নেন লিখনের হিংস্রতা, কিন্তু তিনি লেভি-স্ত্রোসের বর্ণনার মধ্যেই আবিস্কার করেন নাম্বিকওয়ারাদের "স্পেকটাকুলার' হিংস্র সামাজিক কাঠামো; তিনি আরো দেখান এই সমাজে কিভাবে নামকরণ, নিষেধাজ্ঞা, জ্ঞাতিত্ব ইত্যাদি সীমাবদ্ধকারী সামাজিক নীতি

    always already
    "লিখিত'; যাকে তিনি বলবেন প্রত্নলিপি (

    arche-writing
    )। "লিখনের হিংস্রতা' তাই দেরিদার মতে সামাজিক সন্দর্ভের শুরুর কথা, নৃতাত্ত্বিকের দৃষ্টিপাত বা বিশ্লেষণের আগের কথা। দেরিদার বিশ্লেষণে তাই কোন বাস্তবতাই "সোসাইটি উইদাউট রাইটিং', এই ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

    রুশো আর লেভি-স্ত্রোসের সন্দর্ভে আমরা দ্বিত্ত্বের কাঠামোটি স্পষ্টতই দেখতে পাই, শুধুমাত্র কার্তেসীয় কেন্দ্রটি (লোগোস) পালটে যায়। দেরিদার ক্রিটিক প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের বর্গ দুটিকে ভেঙ্গে ফেলে; এখন বর্গ দুটির পার্থক্যীকরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোন একটি বর্গকে তাই প্রাধান্য দেওয়ার প্রশ্নটিও অর্থহীন হয়ে যায়; চিন্তার এই কাঠামোয় আর কোন কেন্দ্র থাকে না। ভাষাতত্ত্বের পরিভাষায় কোন কেন্দ্রীয় দ্যোতিত (সিগনিফায়েড)-কে আর ভাবা সম্ভব নয়, প্রেক্ষিত সাপেক্ষে সব কিছুই দ্যোতক (সিগনিফায়ার)।

    অনেকান্ত বিজ্ঞানের সম্ভাবনা !

    আমরা শুরুতে বিজ্ঞানের সন্দর্ভে একীভূত, সমদর্শী ভাবনার গড়ে ওঠার আখ্যান লিখেছি। এবার খুঁজে দেখতে চাইব বিজ্ঞানের অন্য পাঠের সম্ভাবনার কথা; বিজ্ঞানের এই সর্বজনীন, অপরিবর্তনীয়, অনৈতিহাসিক প্রকল্পের প্রতি ঝোঁক থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাব্যতার কথা। আমরা প্রশ্ন করি, বায়লজির অনুসন্ধানে সর্বজনীন, সমধর্মী, সদৃশ প্রাকৃতিক সূত্র খোঁজার প্রকল্পের প্রবণতা কি অবশ্যম্ভাবী? কোনো র‌্যাডিকাল বায়লজি কি ভাবা সম্ভব যেখানে জীবজগতে পার্থক্যের পাঠ, জীবজগতের বিভিন্নতা, বিভেদন, অভিযোজন বায়লজির প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে? আমরা র‌্যাডিকাল বিজ্ঞানচিন্তার উদাহরণ হিসেবে স্টিফেন গুল্ড, রিচার্ড লেভিনস আর রিচার্ড লিয়নটিনের অনেকত্ববাদী, যৌন-সংবেদী, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী বিবর্তনের সন্দর্ভকে নিয়ে আসছি। প্রকৃতি বা সমাজ-বিজ্ঞানে অনেক উদ্ভাবনায়, অনেক প্রচেষ্টায়, এক্সপেরিমেন্ট বা রাশিবিজ্ঞানের মধ্যস্থতায় বিজ্ঞানীরা ভ্যারিয়েশনের উৎপাত কমিয়ে বা বন্ধ করে "মূল' ফলাফল আর তার পরিণতি খোঁজেন, বিশ্লেষণ করেন। গুল্ড আর লিয়নটিন এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে কল্পনা করবেন এক অন্য বিজ্ঞানের; প্রকৃতিতে ভ্যারিয়েশনের উৎপাতই তাঁদের ভাবনার প্রস্থানবিন্দু। তাঁদের ভাবনায় মূলধারার বিজ্ঞানে পরমপ্রার্থিত সর্বজনীন সূত্র যেন বিবর্তনের ধারণার এক অপর; যে অনিয়ত, ক্ষুদ্র পার্থক্যসমূহ, যা মূলধারার বিজ্ঞানে বাতিল হয় আর বাতিল না হলে বিজ্ঞানকেই দূষিত করে, তারাই তাঁদের তত্ত্বে এক ধারক মুহূর্ত, এক আবশ্যিক শর্ত। তাঁরা বিবর্তনকে দেখবেন বিজ্ঞানের প্রচলিত জ্ঞানতত্ত্বে একটা ফাটল, বিরতি হিসেবে। বিজ্ঞানের গণিত এতদিন "গড়'-এর হিসেব কষেছে, সেন্টারের ভাষায় কথা বলেছে; বিবর্তনের ভাষ্যে গড়ের "বিচ্যুতি' যেন "গড়'-এর আধিপত্য এবার কিছুটা কমিয়ে দিল।

    ইকলজিতেও কি আমরা অরগ্যানিজম আর তার বহি:স্থ প্রকৃতির দ্বিত্ত্বের ধারণা থেকে বেরুতে পারি? অরগ্যানিজমের ভাবনায় কি তাকে প্রাকৃতিক কুলুঙ্গির বাইরে নিয়ে আসতে পারি? লিয়নটিন আর লেভিনস আমাদের ভাবনায় পুষ্টি দিয়েছেন, শক্তি দিয়েছেন। তাঁরা আমাদের এক অন্য প্রকৃতির ধারণা দিলেন, অরগ্যানিজমের জীবনে, জীবনশৈলীতে আশ্লিষ্ট, অবিচ্ছিন্ন এক প্রাণবন্ত "প্রাণীসত্ত্বার প্রকৃতি'র (

    organism’s environment
    ) কথা বললেন। তাঁরা দেখালেন কিভাবে ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া থেকে বৃহৎ তিমিমাছ সবাই তাদের প্রকৃতিকে প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তন করে চলেছে, নির্মাণ করে চলেছে। তাঁরা আরো দেখাবেন কি ভাবে অরগ্যানিজম বেঁচে থাকার মধ্যে দিয়েই তাদের প্রাসঙ্গিক প্রকৃতিকে নির্ধারণ করে চলে। এবং অবশ্যই বহি:স্থ প্রকৃতিও তার পরিবর্তনশীলতার মধ্যে দিয়ে অরগ্যানিজমের জীবন, জনন প্রভাবিত করে চলে। তাই অরগ্যানিজম আর তার প্রকৃতিকে আলাদা করা যায় না, তারা এক অতিনির্ণীত সম্পর্কে বিধৃত। কোন প্রকৃতি ছাড়া যেমন প্রাণীসত্ত্বা টিকে থাকতে পারে না, ঠিক সেই কারণেই জীব-নিরপেক্ষ কোন প্রকৃতির অস্তিত্বও সম্ভব নয়। লিয়নটিন তাই অভিযোজনের মেটাফর বাতিল করে "নির্মাণ'-এর মেটাফরের প্রস্তাব করবেন। জৈব বিবর্তনের তত্ত্বকে বিস্তৃত করে প্রাণ-প্রকৃতির এক সমবিবর্তনের ধারণা দেবেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা কোন মাতৃসমা প্রকৃতির গল্প অস্বীকার করবেন (যেমন

    Gaia
    তত্ত্ব); কোন অনড়, স্থানু প্রকৃতির ধারণাকে বাতিল করবেন; হয়তো বা "পরিবেশবাদ'কেও পাশে সরিয়ে রাখবেন। তাঁরা প্রকৃতির গতিময়তার, পরিবর্তনের কথা বলবেন, পরিবেশকে এক ডায়নামিক নন-ইকুইলিব্রিয়ামের মেটাফরে ভাববেন। ইকলজির এই পুন:পাঠে প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের বর্গ দুটি ভেঙ্গে যায়; বর্গ দুটির স্বতন্ত্রীকরণ অসম্ভব হয়ে পড়ে।

    প্রকৃতি-সংস্কৃতি দ্বন্দ্ব পেরিয়ে......

    ""

    What is to be done with political ecology? Nothing. What is to be done? Political ecology
    '' ব্রুনো লাতুর, পলিটিক্স অফ নেচার।

    আমরা ভাবতে চাইছি এক যৌথ সম্ভাবনার কথা যা প্রকৃতি-সংস্কৃতির দ্ব্যনুকের অন্য পাড়ে - আমরা প্রকৃতির কোন নতুন জ্ঞানতাত্ত্বিক নির্মাণের কথা বলছি না, প্রকৃতির বিদ্যমান জ্ঞানের নতুন পাঠের কথাও বলছি না, কারণ "নতুন' তো আমাদের আবার নতুন/পুরাতন দ্বিত্ত্বের মধ্যেই নিয়ে যাবে। আমরা তো দ্বিত্ত্বকেই পেরিয়ে যেতে চাইছি - দ্বিত্ত্বের অবশ্যম্ভাবীতাকেই আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। আমাদের ভাবনা মানুষ/না-মানুষের এক যৌথতার কল্পনা - যেখানে না-মানুষের অধিকার, রক্ষা, পৃথগীকরণ বা দখল আমাদের কাছে না-প্রশ্ন। না-মানুষের সাবজেকটিভিটিতে উত্তরণ বা অবজেকটিভিটিতে হ্রস্বীকরণের বাইরে আমরা ভাবতে চাইছি। আমরা পশ্চিমি "প্রকৃতি' নিয়ে উৎসাহীও নই, উদ্বিগ্নও নই; কারণ আমরা প্রকৃতি নামক ধারণার আধারটিকেই বাতিলের প্রস্তাব করছি।

    বিজ্ঞানের সন্দর্ভকে আমরা আলোচনায় নিয়ে এসেছি একটি প্রস্থান বিন্দু হিসেবে; কারণ সমকালীন ধারণাভূমিতে প্রকৃতি আমাদের কাছে অনেকসময়ই উপস্থিত হয় বিজ্ঞানের জ্ঞানের মধ্যস্থতায় - প্রকৃতি আমাদের কাছে মূর্ত হয় প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞানের এক বিমূর্ত সমাহার হিসেবে। প্রকৃতির জ্ঞান তো বৈজ্ঞানিক জ্ঞান - প্রোটন, প্রিয়ন, অ্যাসবেসটস, কোষ-কলা, টেকটোনিক প্লেট বা ওজোন স্তরের ফুটো। বিজ্ঞানের নির্মিত এই প্রকৃতি আজকের পরিবেশ ভাবনায় এক স্বত:সিদ্ধ। পরিবেশ ভাবনায় বৈজ্ঞানিক প্রকৃতি প্রশ্নাতীত - বৈজ্ঞানিক প্রকৃতি এক লোগোস, ঈশ্বর, আত্মা। পশ্চিমি উদারবাদে আমরা তাই একেশ্বরী স্বত:সিদ্ধ প্রকৃতির আধারে শুধু সংস্কৃতির বহুত্ববাদের (

    multiculturalism
    ) কথা (অবাক হয়ে) শুনি। আমরা দেখেছি বৈজ্ঞানিক প্রকৃতি কিভাবে পশ্চিমি সনাতনী দ্বিত্ত্বের নির্মাণের অংশ হিসেবেই সক্রিয় থেকেছে- মানুষ/না-মানুষের বিভাজনের নির্মাণ করেছে; এক "বক্তা-নিরপেক্ষ' প্রকৃতির নির্মাণ করেছে। হয়তো বা এই বিভাজন না থাকলে আধুনিক বিজ্ঞানের জ্ঞানতাত্ত্বিক বৃদ্ধিই হতো না। হয়তো বা এই বিভাজন বিজ্ঞানের জ্ঞানের এক পূর্বশর্ত। হয়তো বা না-পশ্চিমে এই বিভাজন সংস্কৃতিতে সক্রিয় ছিল না বলেই সেখানে আধুনিক বিজ্ঞানের বাড়বৃদ্ধি হয় নি১০

    লিয়নটিন, লেভিনস আর গুল্ডের হাত ধরে আমরা এই লেখায় বিজ্ঞানকে অনুমোদন বা বাতিলের দ্বিত্ত্বের বাইরে ভাবতে চেয়েছি। প্রচলিত বিজ্ঞান ভাবনার বাইরে অন্য সম্ভাবনার কল্পনা করতে চেয়েছি, ভাবতে চেয়েছি আমাদের যৌথতার প্রকল্পনায় বিজ্ঞানের কোন ভিন্নতর স্পেস হতে পারে কি না। আমরা যেমন বিজ্ঞানের "শুদ্ধতা'র ধারণাকে প্রশ্নের মধ্যে এনেছি, আবার একই সাথে বিশেষতার অনন্যতায় ডুবে থেকে বস্তুজগতের কোন প্যাটার্ন দেখতে এমনকি অনন্যতারও প্যাটার্ন দেখতে না চাওয়ার প্রবণতা থেকেও নিজেদের দূরে রেখেছি। আমরা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অসম্পূর্ণতা, অনিত্যতা আর ভ্রমপ্রবণতা সম্পর্কে অবহিত, কিন্তু এই কারণেই আমাদের কাছে তা জ্ঞানের বৈধতার নেগেশন নয়; হয়তো বা বিজ্ঞানের ভ্রমপ্রবণতাই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বক্তা-নিরপেক্ষ দৃঢ় ভিত্তিকে দুর্বল করে; অনিশ্চিত, উন্মুক্ত, পরিস্থিতি সাপেক্ষ যৌথতার কল্পনায় হয়তো বা এক নমনীয় বিজ্ঞান সাথী হতে পারে; ইকলজির অন্যতর অনেক ভাবনা হয়তো বা আকার নিতেও পারে সেই নমনীয়তায়, আমাদের (অ)চেনা প্রকৃতি পেতেও পারে কোন অন্য ভাবনার ছোঁয়া।

    আমরা দেখলাম দেরিদিয় বিনির্মাণে দ্বিত্ত্বের নির্মিতি, প্রকৃতি/সংস্কৃতি-এর নির্মিতি কিভাবে ভেঙে পড়ে। কিন্তু "বি-নির্মাণের' প্রাকশর্তই হল "নির্মাণ'; নির্মাণ না থাকলে বিনির্মাণ তো বিষয়হীন হয়ে পড়ে, বিনির্মাণকে তাই নির্মাণের "বাস্তবতা' স্বীকার করেই কাজ শুরু করতে হয়। বাস্তব নির্মাণের কাঠামো, সংগঠন ইত্যাদির রোগনির্ণয় করে বিনির্মাণ তাকে মৃত্যুর প্রত্যায়নপত্র দেয়। প্রকৃতি আর সংস্কৃতি দুজনেই এখন মৃত; তাদের প্রেত যেন "চিহ্নায়কের সাম্রাজ্যে' অনন্ত চিহ্নায়কের মধ্যে ভেসে বেড়ায়। চিহ্নায়কের এই সাম্রাজ্যে সবাই যেন সম্পর্কবিহীন, কেউ কাউকে চিঠি লেখে না। আমরা দেখেছি আধুনিকতায় নির্মাণের মধ্যে "সম্পর্ক' ছিল আধিপত্যের, প্রাধান্যের; তাই মেধা আর তাঁর সাথীরা দাঁড়িয়ে থাকেন নর্মদার জলে, হিমালয়ে গাছের সাথে চিপকো মানুষও খুন হন, সুন্দরবনে দ্বীপ লুপ্ত হতে থাকে, আবার কোন দ্বীপ মনে হয় সস্তায় নিলাম হবে "কেমিক্যাল হাব'-এর জন্য। কিন্তু আমাদের যৌথতার কল্পনায় "সম্পর্ক'-এর, "সম্পর্ক'-এর বাস্তবতার ধারণা গুরুত্বপূর্ণ; আমাদের কল্পনায় ভেসে বেড়ানো চিহ্নায়কগুলি এক অবিশ্রান্ত সম্পর্কে সংযুক্ত; পরিবেশের পুনর্ভাবনা, আমাদের কাছে সম্পর্কেরও পুনর্ভাবনা।

    ""এই সম্পর্কস্থাপনই তো রাজনীতি।

    রাজনীতি তো এই সম্পর্কস্থাপনই''। অঞ্জন চক্রবর্তী-অনুপ ধর; কথোপকথনে মার্ক্স ও রবীন্দ্রনাথ

    সম্পর্কস্থাপন কার কার মধ্যে? মানুষ/না-মানুষের মধ্যে সম্পর্কস্থাপন? আমরা এই সম্পর্কস্থাপনের এক বয়ান দেখি পশ্চিম/উত্তরের তূলনামূলক নৃতত্ত্বে। সেখানে আমরা প্রাচ্য/দক্ষিণের নির্মাণ হতে দেখি - প্রাচ্য/দক্ষিণের মানুষ (সংস্কৃতি) যেন প্রকৃতির সাথে এক সঙ্গতিতে, হারমনিতে অবস্থান করছেন। প্রাচ্য/দক্ষিণের মানুষ যেন প্রকৃতির সন্তান - প্রকৃতির কোন এক কুলুঙ্গিতে তাদের ঠাঁই। এই ভাষ্যে প্রকৃতি/সংস্কৃতির বিভাজন স্বত:সিদ্ধ কারণ, এই বিভাজনের বাস্তবতা ব্যাতিরেকে দুটি ক্যাটিগরীর সঙ্গতির গল্প বলাই যায় না। আমরা পাশ্চাত্যকে শনাক্ত করি আমাদের নিজেদের বনে; মিজো পাহাড়ের আদিবাসী মানুষের নৃতাত্ত্বিক নির্মাণে। আমরাও তাঁদের ভাবতে চেয়েছি প্রকৃতির সন্তান হিসেবে, প্রকৃতির ভারসাম্যের তূলায় বাটখারা হিসেবে। লেভি-স্ত্রোসের ভূত চেপেছে আমাদের ঘাড়ে। "নাম্বিকওয়ারা'-দের মতো মিজো মানুষ "লিখনের পাপ' জানে না, তাঁরা "প্রাকৃতিক' অবস্থায় আছেন। আমাদের নির্মাণেও তাই আদিবাসী জনগোষ্ঠী, পশু (প্রকৃতি) আর মানুষের (সংস্কৃতি) কোন মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হলেন। আমরা একে প্রাচ্যবাদী নির্মাণ বলছি (চিত্র ২, বাম প্যানেল)। আমরা দেখেছি এই প্রাচ্যবাদী নির্মাণ অনিবার্যভাবেই ভেঙ্গে পড়ে দেরিদিয় বিনির্মাণে। কিন্তু লোগোসের অনুপস্থিতিতে "এভরিথিং বিকাম ডিসকোর্স', সেখানে শুধুমাত্র অনন্ত "প্লে অফ সিগনিফিকেশন' ঘটে চলে। ফলে আমাদের পক্ষে শক্ত হয়ে যায় অর্থনীতিতে বিদর্ভের চাষীর আত্মহত্যা, পদার্থবিদ্যায় পরমাণু(বোমা)-এর বিকিরণ বা বায়লজিতে ক্লোন হওয়া "ডলি'-কে টেক্সট, ডিসকোর্স বা রেটরিকে খর্ব করা। আমরা বিনির্মাণের সন্দর্ভ থেকে তাই শুধু প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্বিত্ত্বের অসম্ভবতাকে ভাবতে চেয়েছি।

    আমরা এমন এক সম্পর্কের কল্পনা করতে চাইছি যেখানে দ্বিত্ত্ব এক অসম্ভবতা, যেখানে প্রকৃতি/সংস্কৃতি দুটি বিচ্ছিন্ন বর্গ নয়। ইউরোপীয় লাতুর পশ্চিমি ভাবনার প্রেক্ষিতে এক সঙ্করের, হাইব্রিডিটির কথা বলেছেন (লাতুর, ১৯৯৩, ১৯৯৯)। আমরা প্রাচ্যের পরিসরে, প্রাচ্যের প্রেক্ষিতে সম্পর্ককে ভাবতে চাইছি। যেমন রাধাকমল মুখার্জীর ভাবনায় সংস্কৃতি আর ইকলজি পারস্পরিকতায় সংহিত এক "কমপ্লেক্স ওয়েব অফ লাইফ দ্যাট কমপ্রাইজেস বোথ দি লিভিং অ্যান্ড নন-লিভিং রেলমস' (মুখার্জী, ১৯৩০, ১৯৩২)। রাধাকমল ভাবছেন একটি জটিল সমাহারের সম্ভাবনার কথা যেখানে জীবিত/মৃত একসাথে যেন মিথোজীবিতায় আশ্লিষ্ট। আমাদের ভাবনা অবশ্যই কোন একীভূত, নিবিড়, স্বয়ংসম্পূর্ণ তত্ত্বাবস্থান নয়; আমাদের ভাবনায় কোন সত্য খোঁজার দাবী নেই, আমরা এক অনিশ্চিত, উন্মুক্ত, ভূগোল ও পরিস্থিতি সাপেক্ষ যৌথতার কল্পনা করতে চাইছি। সম্পর্ককে ভাবছি এক অনিয়ত, নমনীয় বহুমাত্রিকতায় যেখানে কোন উঁচু নিচু ধাপ নেই, এক দুইয়ের ভাগ নেই; এই সম্পর্ক চলচ্ছবির মতো গতিময়, প্রাণবন্ত। চলচ্ছবির কোন এক মুহুর্তের ফটো তুলে রাখার চেষ্টা করলাম এখানে (চিত্র ২, ডান প্যানেল)১১



    মন্তব্য :

    ৭। পপার বায়লজির দর্শন নিয়ে কখনই খুব বেশি উৎসাহী ছিলেন না; তবে তাঁর বিখ্যাত বই "লজিক অফ সাইন্টিফিক ডিসকভারি'-তে (১৯৭৪) তিনি অবশ্য মন্তব্য করেন "

    I have come to the conclusions that Darwinism is not a testable scientific theory but a metaphysical research programmme- a possible framework for testable scientific theories’
    । আমরা এখানে পপারের ধারণার অনুপুঙ্খ ক্রিটিক করছি না, তাঁর লেখার সত্তর বছর আগে এক পদার্থবিদের লেখা শুধু উদ্ধৃত করছি- "

    ..from all we have learnt about the structure of living matter, we must be prepared to find it working in a manner that cannot be reduced to the ordinary laws of physics. And that not on the ground that there is any "new force’ or what not directing the behavior of single atoms within a living organism, but because the construction is different from anything we have yet tested in the physical laboratory’
    (শ্রোয়েডিঙ্গার, হোয়াট ইজ লাইফ, ১৯৪৪)।

    ৮। জাঁক দেরিদা-এর প্রকৃতি/সংস্কৃতি দ্ব্যনুকের আলোচনা দেরিদার "স্ট্রাকচার, সাইন, অ্যান্ড প্লে ইন দি ডিসকোর্স অফ দি হিউম্যান সায়েন্সস' (রাইটিং অ্যান্ড ডিফারেন্স), "ভায়োলেন্স অফ দি লেটার: ফ্রম লেভি-স্ত্রোস টু রুশো' (অফ গ্রামাটোলজি) এবং ক্রিস্টোফার নরিস (১৯৮২) থেকে অনুসরণ করা হয়েছে।

    ৯। প্রচলিত বিবর্তনবাদের ক্রিটিক, গুল্ড আর লিয়নটিনের অসংখ্য লেখার মধ্যে বহুবার আলোচিত হয়েছে। এই লেখা তার সারাংশকেও প্রতিনিধিত্ব করে না। "সারভাইভ্যাল অফ দি ফিটেস্ট' ধারণাবলম্বী রেসিস্ট, পুরুষতান্ত্রিক, খর্বিত, নির্ধারণবাদী বিবর্তনের ধারণার আলোচনায় স্টিফেন গুল্ডের "

    Darwin’s Untimely Burial’( Philosophy of Biology, 1998, Ed. Michael Ruse, Prometheus Books, New York
    ) একটি ক্রিটিক্যাল প্রতিবেদন।

    ১০। না-পশ্চিমে ইউরোপীয় মডেলে বিজ্ঞান ভাবনা গড়ে না ওঠার কারণ সন্ধানে যোসেফ নিডহ্যামের বিশ্লেষণের একটি নমুনা তাঁর "গ্রান্ড টাইট্রেশন' (১৯৬৯) গ্রন্থটি। তিনি প্রাচ্যের, বিশেষত চীনদেশীয় বিজ্ঞান ভাবনায় প্রকৃতিকে যান্ত্রিক রূপকে না ভেবে তাকে তার জটিলতার মধ্যে থেকেই ভাবার চেষ্টাকে বিজ্ঞানের বাড়বৃদ্ধির অন্তরায় হিসেবে দেখেছিলেন -- "

    With their appreciation of relativism and the subtlety and immensity of the universe, they were groping an Einstenian world-picture without having laid the foundations for a Newtonian one. By this path science could not develop’.
    ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে কাঞ্চা ইলাইয়া তাঁর আকর্ষনীয় বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন যে শূদ্রের প্রকৃতি-বিজ্ঞানের অনুশীলন ব্রাহ্মণ্য কুলীন অধিবিদ্যায় কখনৈ স্বীকৃতি পায় নি, শূদ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নষ্ট হয়েছে, হারিয়ে গেছে নানান ঐতিহাসিক মুহূর্তে।

    ১১। এই লেখার ধমনীতে আরো দুটি মানুষের ভাবনা প্রবাহিত হয়েছে/হচ্ছে। এই লেখার মধ্যে দিয়ে ভাবনার যৌথতার যেন এক রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। তাই অরূপ ঢালী আর দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় এই লেখার সহ-লেখক/সহ-পাঠক।

    গ্রন্থপঞ্জী :

    Gadgil, M and Guha, R. 1993, This Fissured Land: An Ecological History of India. University of California Press.

    Guha, R. 2000, Environmentalism: A Global History. Longman, New York.

    Latour, B. 1993, We Have Never Been Modern. Harvard University Press.

    Latour, B. 1999, Pandora’s Hope: Essays on the Reality of Science Studies. Harvard University Press.

    Latour, B. 2004, Politics of Nature: How to Bring the Sciences into Democracy. Harvard University Press.

    Lewontin, RC and Levins L. 2007, Biology Under the Influence: Dialectical Essays on Ecology, Agriculture and Health. Monthly Review Press, New York.

    Lewontin, RC. 2000a, The Triple Helix. Harvard University Press.

    Lewontin, RC. 2000b, It Ain’t Necessarily So: The Dream of the Human Genome and Other Illusions. New York Review Books, New York.

    Lewontin, RC and Levins L. 1985, The Dialectical Biologist. Harvard University Press.

    Meyer, JM. 2001, Political nature: Environmentalism and the Interpretation of Western Thought. The MIT press.

    Mukerjee, R. The Regional Balance of Man. The American Journal of Sociology, 1930, 36: 455-460

    Mukerjee, R. The Ecological Outlook in Sociology. The American Journal of Sociology, 1932, 38: 349-355

    Norris, C. 1982, Deconstruction: Thoery and Practice. Methuen, New York.

    Soper, K. 1995, What is Nature? Culture, Politics and the non-Human. Blackwell, Cambridge, USA.

    Sterelny, K and Griffith, PE. 1999, Sex and Death: An Introduction to Philosophy of Biology. Cambridge University Press.

    **(লেখাটি তেপান্তর পত্রিকায় পূর্বপ্রকাশিত)

    ১৩ই জুন, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৩ জুন ২০১০ | ১০৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন