শিক্ষাক্ষেত্রে elitism চিরকাল ই একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর দ্বারা শুধুমাত্র বিশেষ মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী ভালো ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে পরিগণিতরা সুবিধা ভোগ করে। এবং তাদের ধারণা হয় পরীক্ষায় পিছনে থাকা ছাত্রছাত্রীদের কোনো দাবি বা বক্তব্য গ্রাহ্য করা উচিত নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিখ্যাত দর্শন শিক্ষক ক্লাসে প্রায়ই বলতেন "সরস্বতীর রাজ্যে সাম্যবাদ চলে না।" এই জাতীয় বক্তব্য অধিকাংশ সময়ই বহুল সমর্থিত। সমস্যা হলো একই সাথে এটি inclusive education বা সকলের জন্য শিক্ষা এর পরিপন্থী। স্বাভাবিক যুক্তিতে নো ডিটেনশন নীতির জন্যই আজকে স্কুলে স্কুলে শিক্ষার এই হাল। এবং এই যুক্তিতেই এই এলিটদের কেউ কেউ টেস্টে পাস করানোর দাবিতে স্কুল ঘেরাও করা ছাত্রছাত্রীদের সাথে এই এসএসসি আন্দোলনকারীদের কোনো পার্থক্য দেখতে পারছেন না। দুটি দাবিই অযৌক্তিক এবং সেজন্য পূরণ করা অসম্ভব। সত্যি কি তাই?
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম বিজ্ঞপ্তি তে ১১-১২ স্তরে শূন্যপদ ৬২১৩, আর তার দুবছর বাদে ইন্টারভিউ এর আগে হলো ৫৭১২। তৃতীয় কাউন্সেলিং এর জন্য রাখা ৮২২ টা পদ কমে হলো ৪৯০। কি বললেন?ও সেই কনভার্সন? দারিভিট? তার মানে আপনি বলছেন ওই ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া পদগুলোর একটা বড় অংশই আমরা নবম দশম এ দেখতে পাবো? একই সাথে বলতে চাইছেন যে দারিভিট কাণ্ডের মতো ঘটনার জন্য যাদের গাফিলতি দায়ী তারা সবাই দুস্টু ছেলে তাই শূন্যপদ নিয়ে ছেলেখেলা বা পৃথিবীর ইতিহাসে নজির সৃষ্টি করে ঘোষিত বিজ্ঞপ্তির চেয়ে শূন্যপদ কমে যাওয়া কোনো অপরাধ নয়? আপনি আজকের পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়িয়ে বলতে চাইছেন যে নিয়োগে 'হয়তো' দুর্নীতি হয়েছে? ১২ কিংবা ১৫ লাখে সিট বিক্রির কথাটা গুজব? দীর্ঘদিন এসএসসি এর সাথে যুক্ত শিক্ষক অধ্যাপকের ফেসবুকে এবারের পরীক্ষা থেকে ইন্টারভিউ নিয়ে সর্বত্র নিজেদের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা সব রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা নিয়ে নেমেছেন? বেশ সব মেনে নিলাম। কিন্তু একটা কথা বলুন তো দ্বিতীয় কাউন্সেলিং এ ১০৪১ জন স্কুল পছন্দ করেনি, সেগুলো কেন ছয়মাস বাদেও তৃতীয় কাউন্সেলিং এ যুক্ত হলো না? ওয়েটিং লিস্ট তো এই জাতীয় কাজের জন্যই তৈরি করা হয় বলে জানা ছিল।
কে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করলো আর কে পরেশ অদিকারীর মেয়েকে হটাৎ করে লিস্ট এ এক নম্বরে নাম নিয়ে এলো তা নিয়ে বরং ভাবা বন্ধ করুন। নিজের ও পাড়ার ছোট ভাইবোন গুলোর দিকে তাকিয়ে বরং একটা কাজ করুন। বাংলার শিক্ষা ডট গভ বলে ওয়েব পোর্টাল এ সমস্ত স্কুল কে তাদের ছাত্র ছাত্রীদের সমস্ত তথ্য তুলতে বলেছে সরকার। চলুন দাবি করি যে ওখানে প্রত্যেক স্কুলের স্টাফ প্যাটার্ন আর রোস্টার আপলোড করার জায়গা রাখতে হবে যা সকলেই দেখতে পারবেন কিন্তু একমাত্র প্রধান শিক্ষক রাই এডিট করতে পারবেন। কোনোদিন আর কোনো শূন্যপদ এর হিসেব নিয়ে ঝামেলা হবে না।করবে বলে মনে হয় এই সরকার? না ? তবে কি হাতে রইলো পেন্সিল? আজ্ঞে হ্যাঁ ওই আপাত অদ্ভুত দাবিতে অনশন আসলে এই সমস্ত অদ্ভুত কান্ড কারখানার গালে সপাটে চড়। দন কিহোতের কথা মনে পড়ে- "Perhaps to be too practical is madness. To surrender dreams — this may be madness. Too much sanity may be madness — and maddest of all: to see life as it is, and not as it should be!"