উত্তরপ্রদেশের গ্রামগুলিতে এখনো শোনা যাচ্ছে মানুষের হাহাকার। মহামারী এই সব অঞ্চলে এক অভুতপূর্ব গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে দিয়েছে যা সহজে উপশম হবার নয়। উনবিংশ শতাব্দীতে আমাদের দেশ বারবার মারীর প্রকোপে ছারখার হয়েছে। কলেরা, প্লেগ বাদে বেশির ভাগ ব্যাধিই মানুষের অজানা হওয়ার কারণে সেই রোগ ‘অজানা জ্বর’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। সেই অজানা জ্বর আবার ফিরে এসেছে। মানুষের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, হঠাৎ শারীরিক অবনতি হচ্ছে এবং তারপর হাঁসফাঁস করতে করতে পরিবারের সকলের সামনে মারা যাচ্ছে। নিরুপায় স্বজন এই মৃত্যু দেখছেন এবং উপলব্ধি করছেন এটা সেই ‘শহর কি বিমারি’, কোভিড ১৯।
মাত্র পনেরো কুড়ি দিন আগেও রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে মৃত্যুর মিছিল। বুলন্দশহর জেলা শহর থেকে ৪০ কিমি দূরে বানাইল গ্রাম। এটি একটি ভিআইপি গ্রাম, কারণ এটি আরএসএসের রাজিন্দার সিং ওরফে রাজ্জু ভাইয়ার জন্মস্থান। তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সংগঠনের সরসঙ্ঘচালক ছিলেন। এখানে হঠাৎ দেখা গেলো মানুষ মাছির মতো মারা যাচ্ছেন। স্থানীয় মানুষের হিসাবে দুসপ্তাহে গ্রামে পনেরো জনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত, ডাক্তার নিখোঁজ। আর তিনি থেকেই বা করবেনটা কী? এখানে অক্সিজেন নেই, কোভিড পরীক্ষা করার কোনও ব্যবস্থা নেই। এই কারণে গ্রামে কতজন সংক্রমিত তার কোনও পরিসংখ্যান নেই। টিকাকরণ চূড়ান্ত অনিয়মিত। গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রামটির এই বিপর্যস্ত অবস্থা সত্ত্বেও স্থানীয় বিধায়ক এখানে আসার প্রয়োজন বোধ করেননি। জেলা শহর ১৮ কিমি দূরত্বে আরেকটি গ্রাম পারওয়ানা। সংক্রামণের কারণে এখানে বাইরের লোকের প্রবেশ করার পথগুলি বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। এখানে পনেরো দিনে আঠেরো জন মারা গিয়েছেন, যার মধ্যে এক ষোলো বছরের কিশোরও ছিল। আরেকটি গ্রাম দীঘি, যেখানে দু সপ্তাহে চোদ্দ জন মারা গিয়েছেন। এই জেলায় গ্রামের পর গ্রামে একই চিত্র। প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং অক্সিজেন না থাকার দরুণ ছটফট করতে করতে মানুষ মারা যাচ্ছেন। গ্রামের মানুষ বলছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় (১৫ থেকে ২৯ এপ্রিল) মারী ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের বক্তব্য নির্বাচনের প্রচার, ভোটদান, গণনা কোনও সময়েই করোনা বিধি মানা হয়নি। মিরাট জেলার ইকরি গ্রামের মানুষের বক্তব্য তিন দিন ধরে গণনা হয়েছে এবং কোনও কোভিড বিধি মানা হয়নি। ঐ সময়েই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এখানে তবু অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়েছে। মানুষ দাবি করছে RTPCR টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কিট নেই। চল্লিশ জনকে টেস্ট করে একুশ জন পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। ওষুধ নেই, স্যানিটাইজেশনের কোনও ব্যবস্থা নেই, হাসপাতালে বেড পাওয়ার তো কোনও প্রশ্নই নেই। এখানে এক সপ্তাহে আটজন মারা গিয়েছেন যাঁদের মধ্যে ছজন কোভিড পজিটিভ ছিলেন। বাকি দুজনের টেস্ট হয়নি।
এ তো গেলো পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের চিত্র, যে অঞ্চল অর্থনৈতিক ভাবে উন্নততর অঞ্চল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিজের কেন্দ্র বারাণসীতে অবস্থা আরও খারাপ। চিরাইগাওঁ ব্লকের তিলামপুর গ্রাম। এখানে দৈনিক একজনের মৃত্যু হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারে একজন করে রোগী। উপসর্গ একই- জ্বর, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট। কোনও টেস্ট হচ্ছে না তাই সবাই শুধু অনুমানই করেন, কিন্তু অসুখটা কী সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন। কাছেই আশাপুর গ্রামে পনেরো দিনে বারো জনের মৃত্যু হয়েছে। অল্পবয়সীরাও মারা যাচ্ছেন। দুটি গ্রাম বারাণসী থেকে মাত্র ২৫ কিমি দূরে। ব্লকের প্রমুখ বলছেন রোজ তিনি প্রচুর ফোন পাচ্ছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে আরও বেশি ফোন আসছে, কিন্তু তিনি অসহায়। ব্লকের মূল স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মারীর দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর থেকে বন্ধ। চারটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে যার মধ্যে একটিতে কোভিড পরীক্ষা হয়। ব্লকের জনসংখ্যা ২.৩১ লাখ, দৈনিক টেস্ট হয় একশোর মতো। দুটি হাসপাতাল আছে। মেরিডিয়ান বন্ধ হয়ে গেছে। তারা গেটে পোস্টার ঝুলিয়ে দিয়েছে যে বেড, অক্সিজেন, ওষুধ, ভেন্টিলেটর কিছুই নেই। আরেকটি হাসপাতাল রোজ তিনজন করে রোগী দেখে, কারণ ঐ একই। প্রমুখের বক্তব্য খুব সাফ। যারা মারা যাচ্ছেন তাঁরা তো কোভিডে মারা যাননি। কোভিডে যে মারা গিয়েছেন তার প্রমাণ কই, টেস্টই তো হয়নি? সুতরাং এগুলো সরকারি পরিসংখ্যানে কোভিডে মৃত্যু হিসাবে গণ্য হয় না। শাহজাহানপুরের পাঠান বস্তিতে নিয়মিত মানুষ মারা যাচ্ছেন। এখানেও টেস্ট হচ্ছে না এবং আরও অনেক গ্রামের মতো এখানেও মানুষের প্রশ্ন টেস্ট করে হবেটা কী? প্রথমত রিপোর্ট আসতে ৫-৬ দিন লেগে যায়, ততদিনে রোগী মারা যান। দ্বিতীয়ত যদি রিপোর্ট পজিটিভ হয় তাহলে চিকিৎসা কীভাবে বা কোথায় হবে?
উত্তরপ্রদেশে মহামারীর বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে স্বরাজ পার্টির যোগেন্দ্র যাদবের অনুমান ভয়ঙ্কর। তিনি বলছেন তাঁর সমীক্ষাটা মোটা দাগের কিন্তু এটাও আমরা জানি ভোট সমীক্ষায় তিনি যথেষ্ট দড় ছিলেন এবং এই বিজ্ঞানটি সম্পর্কে তিনি ভালোই অবহিত। তিনি বলছেন রাজ্যে প্রতি হাজারে ৩.০০৫ জন মারা যাচ্ছেন। এ তথ্য সঠিক হলে রাজ্যের সরকারি মৃত্যুর সংখ্যার (২০৩৪৬) চেয়ে মৃতের সংখ্যা আরও ৪.৭ লক্ষ অতিরিক্ত হয়। তিনি বলছেন যদি হাজার প্রতি ২.৫ জন মারা যায় তাহলেও মৃতের সংখ্যা এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে সাত লক্ষ বেড়ে যাবে। রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা মে মাসের মাঝামাঝি ছিল ১৬০০০, এখন তা ১৯০৮ এ নেমে এসেছে, যেটা অবিশ্বাস্য এবং হাস্যকর, কারণ আসল সংখ্যাটা এর অন্তত কুড়ি গুণ, যেহেতু গ্রামাঞ্চলে এবং ছোট শহরগুলোতে কোনও টেস্টই হচ্ছে না। সরকারি পরিসংখ্যানে যে হিমালয়সম গরমিল আছে এটা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। মিরাটে সিএমও অফিস মৃতের যা সংখ্যা দেখাচ্ছে, শ্মশানগুলোর হিসাব তার সাত গুণ বেশি! কানপুরে ১৯-২৪ এপ্রিল সরকারি মৃতের সংখ্যা ৬৬। অথচ শহরের দুটি বৃহত্তম শ্মশান ভৈরোঘাট এবং ভগোওয়াত ঘাটে ঐ সময়ের মধ্যে দাহ হয়েছে যথাক্রমে ৪০৬ ও ৫৬ জনের, এখানেও সরকারি হিসাবের সঙ্গে সাতগুণ ফারাক! পরিসংখ্যানে এই বিপুল গোঁজামিল প্রায় নজিরবিহীন।
প্রধানমন্ত্রী বলে খালাস যে গ্রামে পঞ্চায়েত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মানুষের দেখভাল করবে। কোথা থেকে করবে? ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার! চিকিৎসার নূন্যতম ব্যবস্থা নেই। গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলে ভারতবর্ষে কবে কখনো কি কিছু ছিল না আছে? মানুষ তুকতাক, জড়িবুটি, গ্রামীণ চিকিৎসকের ওপর ভরসা করে কোনও রকমে টিকে আছেন। ওষুধের দোকানের কর্মচারী উপসর্গ শুনে তাঁর ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা মনে হয় তাই ওষুধ দিচ্ছেন। তার ওপর হিন্দু ধর্মের এই মহান কাণ্ডারী কুম্ভমেলার ঢালাও আয়োজন করার নিদান দিয়ে দিলেন। পুণ্যার্থীরা গ্রামে গঞ্জে সংক্রমণ ছড়ালেন। ক্ষমতার লোভে মত্ত দেশের প্রধান সেবক আগামী বছরে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে চার দফা পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে দিলেন। সারা দেশ জুড়ে সংক্রমণ তখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শিক্ষক সংগঠনগুলি ২৯ এপ্রিলের শেষ দফা ভোট এবং ২ মের গণনা পিছিয়ে দেবার একান্ত অনুরোধ করলো, শাসকের পদলেহী নির্বাচন কমিশন কোনও পাত্তাই দিলো না। ফলাফল - ৫৭৭ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বেঘোরে মারা গেলেন। তাঁদের ঘনিষ্ঠরাও সংক্রমিত হলেন। তাও এটা পূর্ণাঙ্গ হিসাব নয়, কয়েকটি জেলার তথ্য আসেনি। মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি ঠিকই বলেছেন, এটা গণহত্যার শামিল। কে দায়ী এর জন্য?
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর প্রশাসন নির্বিকল্প সমাধিতে নিমজ্জিত। তাঁদের একটাই কথা- সব ঠিক হ্যায়। অক্সিজেনের কোনও কমতি নেই, হাসপাতালে শয্যার অভাব নেই, ওষুধও প্রচুর; কিছু কালোবাজারি হচ্ছে, প্যাঁদালেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আর নেই নেই করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যে বলবে এটা নেই ওটা নেই তাকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে জেলে পুরে দাও!সমাজ মাধ্যমে কোনও নেগেটিভ পোস্ট করা বরদাস্ত করা হবে না। লখনউয়ের সান হাসপাতাল ঘোষণা করে দেয় যে তাদের কাছে কোনও অক্সিজেন মজুত নেই। প্রশাসন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর ঠুকে দেয়। হাসপাতাল এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। তাদের যুক্তি ড্রাগ ইন্সপেক্টর স্বয়ং তাঁদের বলেছেন লখনউ শহরে কোনও সিলিন্ডার নেই। এটা হচ্ছে রাজধানীর অবস্থা! দমনপীড়ন কিন্তু পুরো মাত্রায় চলছে। একটি হাসপাতালে চারজন নার্সকে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সুপারিন্টেন্ডেন্ট পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন গর্ভাবস্থায় ছুটি দেওয়ার কোনও নিয়ম তাঁদের নেই। উন্নাওয়ে চোদ্দ জন ডাক্তার পদত্যাগ করেছেন কারণ চিকিৎসার অপ্রতুলতার জন্য তাঁদের দায়ী করা হচ্ছে, তাঁরা হয়ে গিয়েছেন বলির পাঁঠা। লখনউ ও গোরখপুরের শ্মশানে ফটো ও ভিডিও তোলা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যেন তেন প্রকারণে তথ্য গোপন করার বিপুল প্রচেষ্টা চলছে। অবস্থা এতোটাই সঙ্গিন যে বিজেপি দলের নিজেদের লোকেরাই ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না কিন্তু কোনও প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছেন। রাকেশ রাঠোর নামে এক বিধায়ক তো বলেই দিলেন যে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে বেশি কিছু বলতে ভয় পাচ্ছেন কারণ তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত করা হতে পারে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন এখন এতো মুড়ি মুড়কির মতো ব্যবহার হচ্ছে যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় উপহাস করলেন যে দেখবেন মৃতদেহ ব্রিজ থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে এটা দেখানোর কারণে যেন কোনও টিভি চ্যানেলকে রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত করা না হয়!
খবরে প্রকাশ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দু হাজারের কম হয়ে যাওয়ার কারণে রাজ্যে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। যে রাজ্যে কোনও সংবেদনশীল প্রশাসন নেই, নেই নূন্যতম স্বাস্থ্যব্যবস্থা সেখানে লকডাউন থাকলেও বা কী না থাকলেও বা কী? এখনো অক্সিজেন, বেড, ওষুধ অমিল তেমনই দাহ করার কাঠের চূড়ান্ত অভাব। পাওয়া গেলেও দাম এতো চড়া যে গরিব মানুষের পক্ষে তা কেনা দুঃসাধ্য। এখনো মৃতদেহ কোনও রকমে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে, কুকুর বিড়াল তা নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছে। কোথাও প্রিয়জনের দেহ জঞ্জালের ট্রাকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, কোথাও সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এখনো কিছু জায়গায় গণচিতা জ্বলছে। সুপ্রিম কোর্ট মৃতদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান করার কথা বলছেন, কিন্তু এই নেই-রাজ্যের জড়ভরত মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের কাছে এসব কথা মূল্যহীন। উত্তরপ্রদেশে নীরবে যা ঘটে গেল তা এক কথায় নরমেধ। মানবতার বিরুদ্ধে এই চূড়ান্ত অপরাধ ইতিহাস মনে রাখবে। সব কুছ ইয়াদ রাখা যায়েগা।
আচ্ছা পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে কেউ বা কোন এজেন্সি কাজ করছে জানেন? হিন্দুতে শুধু কলকাতার উপর স্টাডি করে যা দেখিয়েছিল সে ত সরকার স্বীকৃত সংখ্যার চারগুণ। গোটা রাজ্য জুড়ে একটা স্টাডিভত খুব জরুরী।
ভয়াবহ চিত্র।
কোভিডে বঙ্গের গ্রামাঞ্চলের কী অবস্থা? কলকাতার খবর জানি, গ্রাম তো খবরে আসে না
মৃত্যু কিছু হয়েছে। শ্মশান উপচে পড়া কিছু নয়। সব মৃত্যুর ক্ষেত্রে করোনা টেস্ট করা হয়েছে এমনও হয়নি। তবে মৃত্যুর সার্টিফিকেটে ডাক্তাররা নিশ্চিন্তে মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনা লিখতে পেরেছেন,
এ বাবদ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি। আমি পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকার ভিত্তিতে বলছি।
এনিয়ে দু'টি কথা বলার ছিল, লিখব সময় পেলে।
আপাতত চট করে, উপুবের বড় রাজ্যটিতে শোনা যাচ্ছে কোমর্বিডিটি থাকলেই তাকে নন কোভিড ডেথ রিপোর্ট করা হচ্ছে।৷ পব তে গত বছর প্রথম এক মাসে যা হয়েছিল আর যা নিয়ে এত হাল্লাগোল্লা হল, তারপর নিয়ম বদলাল। এ নিয়ম কিন্তু অন্য একাধিক রাজ্যেই চলছে, হইচই প্রায় নেইই।
এচহাড়া কোভিড নেগেটিভ এসে যাওয়ার পর মৃত্যু হলে বোধহয় কোথাও কোভিড ডেথ বলছে না। কোভিড, পব তেও তাই তো?
এদিকে কাল বিহারে একদিনে প্রায় ৪০০০ কোভিড মৃত্যু রিপোর্টেড, বলছে এতদিনের হিসেব না করা কোভিড মৃত্যু। জানিনা, এগুলোও এরকম কো মর্বিডিটি ডেথ কেস এর রিক্যাটেগরাইজিং নাকি একেবারেই রিপোর্ট না হওয়া। মহারাষ্ট্রে প্রায়ই থেকেই এক এক দিনে অনেক ব্যাকলগ ডেথ জুড়ে দেয়। মহারাষ্ট্রে মনে হয় সবচেয়ে ঠিকঠাক ব্জাবে রেকর্ড রাখে।
এটা ইন্টারেস্টিং, মহারাষ্ট্রে হিসেব অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি কেস, ডেথ অথচ মহারাষ্ট্রে কোভিড অব্যবস্থা নিয়ে হইচই প্রায় সবচেয়ে কম!
আর এখন গ্রামে আরো ছড়াচ্ছে। গ্রামের কত টেস্ট কত রিপোর্ট হচ্ছে খুবই সন্দেহ। আমাদের জাসট পাশের, গেট থেকে বেরলেই যে গ্রামগুলো, যেখান থেকে প্রচুর লোকজন আসেন, শুনছি অনেকেরই জ্বর। কারুরই তেমন টেস্ট করার আগরহ নেই । আশা র টিম এসে র্যাপিড টেস্ট করতে চাইলেও এক এক পাড়ায় হাতে গোণা ৫-৬ জন করাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ৫০% র বেশি র্যাপিডেই পজিটিভ। rt pcr এর গল্পও নেই, থাকলেও লোকের অজ্ঞাত। আশেপাশে প্রায় রোজই শুনছি কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন।
রবীশকুমার পেরুর উদাহরণ দিয়ে একাধিকবার বলেছেন সবকটা রাজ্যের রিকাউন্টিং করা উচিৎ যেহেতু সন্দেহ্ম্ম প্রকাশ করা হয়েছে।
এখানে মানে কোন্নগরের আশেপাশে কোভিড নেগেটিভ হবার ৩-৪ দিনের মধ্যে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে, তাকে কোভিড বলে নি। কোভিড প্রোটোকল মেনে সৎকারে খুব ঝামেলা ও টাকা বেশী লাগবে বলে বাড়ির লোকও চায় নি কোভিড লেখা হোক।
মহারাষ্ট্রে অক্সিজেন পরিস্থিতি প্রায় উত্তরপ্রদেশের কাছাকাছি ছিল। কিন্তু সেভাবে নিউজে আসে নি।
'এচহাড়া কোভিড নেগেটিভ এসে যাওয়ার পর মৃত্যু হলে বোধহয় কোথাও কোভিড ডেথ বলছে না। কোভিড, পব তেও তাই তো'
ওটা অভি হবে। অভিকে কীকরে কোভিড লিখলাম কে জানে ঃ(
এটাও থাক।
পশ্চিমবঙ্গের ডেঙ্গু এপিসোডে যেমন চাপ দেখা যেত, বা গত বছর যেমন কেন্দ্রীয় কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছিল প্রতিটি ডিসি লেখার জন্য - সে বস্তু এখন নেই। স্থানীয় লেভেলে লোকজন যা হোক লিখছেন। এর বাইরে অনেক টেস্ট হচ্ছে না, বা কোভিড সেরে যাওয়ার পরে মৃত্যু হলে অনেকসময় লেখা হচ্ছে না, সেসব তো আছেই।