ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের গড়ে ওঠার পর্যায়ে কংগ্রেসের কর্মপ্রণালীতে রবীন্দ্রনাথ খুবই সক্রিয় ছিলেন। এই গড়ে ওঠার পদ্ধতির অনিবার্য ধাপ ছিল চরমপন্থী-নরমপন্থী বিভাজন। আবেদন নিবেদনমূলক পার্লামেন্ট-প্রতিম বিতর্ক থেকে আন্দোলনের আঙিনায় ঢোকার পর্যায় সেটি। ১৯০৭-এ সুরাট কংগ্রেস দুইভাগ হয়ে যাওয়ার পরের বছর পাটনায় বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে কংগ্রেসের বিভাজন রুখতে রবীন্দ্রনাথ সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন, তেমনিই সর্বজনবিদিত হয়ে রয়েছে ভারতের প্রথম গণ-রাজনৈতিক আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ-রদে তাঁর ভূমিকা। এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ স্বাভাবিকভাবেই প্রভূত লেখালেখি করেছেন, সেগুলোর মধ্যে খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল “স্বদেশী সমাজ” প্রবন্ধটি। এই প্রবন্ধটি ১৯০৪ সালে তিনি দুবার যথাক্রমে মিনার্ভা ও কার্জন হলে পাঠ করেন, পরবর্তীকালে একটি পরিশিষ্টসহ প্রবন্ধটি আত্মশক্তি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়। দেখা যায় সেই সময়ের চরমপন্থীদলের আন্দোলনের রূপরেখা, বিশেষতঃ স্বদেশী, পল্লীসংস্কার এবং জাতীয় বিদ্যালয়স্থাপনের কর্মসূচীতে এই প্রবন্ধের স্পষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল। এই প্রবন্ধে উল্লেখিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে জাতীয় আন্দোলনের প্রধান নেতাদের, যেমন অরবিন্দ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন বা গান্ধিজিকে পরবর্তীকালে চিন্তাভাবনা করতে দেখা যায়। এবং আমরা এও দেখব, যে আজকের দিনেও এই বিষয়গুলি সম্ভবতঃ অধিকতর গুরুত্ব দাবি করে। আমরা এই প্রবন্ধের শুরুতে স্বদেশী সমাজ রচনার সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষিত আলোচনা করতে চাই, এবং দেখতে চাই স্বদেশী সমাজের উল্লেখযোগ্য বক্তব্যগুলি কী এবং কীভাবে সেগুলি পরবর্তী ইতিহাসে প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে।
পূর্বপ্রেক্ষিত
১৭৫৭-য় পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে প্রতিরোধমাত্রার তারতম্যে ভারতের একের পর এক অঞ্চল ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হতে শুরু করে। ব্রিটিশ শাসনের বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদানের মধ্যে একটি ছিল ভারত থেকে সম্পদ আহরণ করে ব্রিটেনে চালান করা। সেই লুণ্ঠনের প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে দেশের বিশাল অংশের মানুষ অবর্ণনীয় দুরবস্থার স্বীকার হন এবং বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন প্রতিরোধসংগ্রাম গড়ে ওঠে। এর মধ্যে কয়েকটি লড়াইয়ে সংগঠিত উদ্যোগের ছায়া দেখা যায়, কিন্তু সেইভাবে রাজনৈতিক চরিত্র, রাষ্ট্রক্ষমতাকে প্রশ্ন করা বা তাকে প্রতিস্থাপিত করার ধারা দেখা যায় না। কেবলমাত্র রায়বেরিলির সৈয়দ আহমদের নেতৃত্বে যে জিহাদ পরিচালিত হয়, তা সার্বিকভাবে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদকল্পে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল। এরপর সিপাহি বিদ্রোহ হয়, যা খুব অল্পসময়েই তার প্রবল অভিঘাতে ব্রিটিশপূর্ববর্তী শাসকের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার কাছাকাছি চলে গেছিল। কিন্তু, এই সমস্ত বিদ্রোহই স্বাধীনতাসংগ্রামের মূলধারাগুলির থেকে পৃথক। রাজনৈতিক আন্দোলন বলতে আমরা যা বুঝি (সশস্ত্র বা অহিংস) তার প্রায় কোনও চিহ্নই এই বিদ্রোহগুলিতে ছিল না। এবং এই বিদ্রোহগুলিতে দেশের মানুষের একাংশ অংশগ্রহণ করলেও, শিক্ষিত-স্বচ্ছল-উচ্চমধ্যবিত্তর হাতে এই আন্দোলনগুলির রাশ ছিল না, অথচ এই শ্রেণিটিই স্বাধীনতা আন্দোলন এবং তার পরবর্তী পর্যায়ে ভারতভাগ্যবিধাতা হয়েছে। আমরা দেখব, সিপাহি বিদ্রোহের সময়ও শিক্ষিত শ্রেণির মোটের উপর ভূমিকা ব্রিটিশিদের কোলাবরেটরেরই। তাঁরা মনেপ্রাণে এও বিশ্বাস করতেন যে ব্রিটিশ শাসন দেশের জন্য আশীর্বাদ এবং ঐ ব্রিটিশশাসকদের দাক্ষিণ্যেই তাঁদের জীবিকা অতিবাহিত হত। ১৮৭৫ সালের পর থেকে বাংলার শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী আলোড়ন উঠতে শুরু করে। নবীনচন্দ্র সেনের পলাশীর যুদ্ধ, চণ্ডীচরণ সেনের নন্দকুমার প্রভৃতি সাহিত্য ব্রিটিশ শাসনের কল্যাণমণ্ডিত রূপটিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করে। এর পরের দশকে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ প্রকাশ এবং কংগ্রেসের পত্তন। যে কংগ্রেসের মঞ্চ ভারতের শিক্ষিত স্বচ্ছল শ্রেণিকে প্রথম সুযোগ দিল, রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতিসমূহ সমালোচনা করতে, বা ভারতের উচ্চশ্রেণীর কাছে প্রথম রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের জন্ম দিল। উল্লেখ্য, এই একই সময়ে কলকাতা শহরের এক প্রান্তে, এক সদ্যনির্মিত মন্দিরচত্বরে বসে প্রায়-নিরক্ষর বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এক পুরুতঠাকুর নবজাগরণের আলোকপ্রাপ্ত সন্তানদের ধাঁধায় ফেলছেন, ব্রিটিশদের ইস্কুলে পড়ানো মিল আর কোঁৎ-এর দর্শনের বাইরে গ্রাম্য বিশ্ববীক্ষার কথা তুলে আনছেন। এইসমস্ত মিলিয়ে শিক্ষিত বাঙালি তরুণপ্রজন্ম সরকারি চাকরি আর শহর-বিলাসের থেকে বেরিয়ে এসে দেশের কথা নতুন করে ভাবছেন। আমরা বুঝতে পারি, রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক জীবনও এই পটভূমিকাতে শুরু হচ্ছে।
কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই দেশহিত চিন্তনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠল। সেইখান থেকে অনেকেই দেখতে পেলেন যে দেশের বড় অংশের মানুষের সঙ্গে কংগ্রেসের প্রায় জল-অচল বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। এর পাশাপাশি এটাও অনেকের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, পার্লামেন্ট বক্তৃতার ঢঙে আলোচনা করে ব্রিটিশ শাসকের পলিসি পরিবর্তন করা যাবে না। এর মধ্যে ভারতে প্লেগ এল, বোম্বের প্লেগ কমিশনার র্যান্ড হত্যার মধ্য দিয়ে ভারতে গুপ্তহত্যার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হল। তেমনিই প্লেগ ত্রানের কাজে বাংলার প্রকৃত নবজাগরিত শিক্ষিত যুবসমাজ দেশহিতের কাজে নামল। দেশের মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হল। এই সময়েই আবার রমেশচন্দ্র দত্ত ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস দুইখণ্ডে প্রকাশ করলেন, যেখানে তিনি দেখাতে সক্ষম হলেন যে, ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে ভারত এক স্বচ্ছলতর দেশ ছিল, ব্রিটিশ শাসন ভারতের মানুষকে লুণ্ঠন করে তাকে এই দারিদ্রের মুখে এনে ফেলেছে। এইভাবে ভারতে রাজনীতির ধারা তৈরি হচ্ছিল, যে ধারা সম্পূর্ণ পরিণতি পায় সম্ভবতঃ বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে। একথা আগেই বলা হয়েছে, উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগেই প্রথম রাষ্ট্র পরিচালনার পলিসি নিয়ে ভারতবাসী মতামত রাখতে শুরু করে, এর আগে যে বিদ্রোহগুলো হয়েছে সেগুলি স্থানীয় সমস্যার প্রতিক্রিয়ায়, কিম্বা মুঘল শাসককে পুনঃস্থাপিত করতে চেয়ে। এবং শিক্ষিত সমাজের অংশগ্রহণ সেইখানে নগণ্য। ভারতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের এই উন্মেষলগ্নে, তৎকালীন নেতাদের যে কটি বড়প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সেগুলি নিম্নরূপঃ
১) কীভাবে দেশের ব্যাপক মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা আনা যাবে? কীভাবেই বা কংগ্রেসের কার্যকলাপ দেশের সাধারণ মানুষের হিতের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে। এইকথা এই পর্বের উদ্যোগীদের কাছে ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে তাঁদের আশু স্বার্থ আর লোকহিত ঠিক এক সুতোয় বাঁধা না।
২) রাজনীতির উদ্দেশ্য কী হবে? ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশীয় শাসকের হাতে ক্ষমতা দেওয়া? সেই ক্ষমতার চরিত্র কী হবে?
৩) ভারতে কি কোনও জাতীয়তা-নির্মাণ সম্ভব? ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জাতীয় সত্তার জাগরণ ভারতের শিক্ষিত সমাজকে মুগ্ধ করেছিল, কিন্তু বহু জাতি, বহু ভাষা, বহু উপাসনা-পদ্ধতি সমণ্বিত ভূখণ্ডে অনুরূপ জাতীয়তার চিহ্ন পাওয়া সম্ভব কি না, তা তাঁরা খুঁজেছিলেন। আমরা কয়েক দশক পরে ১৯২২-এর গয়া কংগ্রেসে সভাপতি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে এই নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে দেখব। কিন্তু, এই প্রশ্ন হয়ত, আজও সমাজ জাগরুক।
৪) হিন্দু-মুসলিম সমস্যা। এর পাশাপাশি ব্রিটিশ বা খ্রিস্টানদের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সমঝোতা কেমন হবে এই প্রশ্নও আসত।
চরমপন্থীরা, যাঁরা রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশবাসীর হাতে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র সরানোর পক্ষপাতী ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই এই প্রশ্নগুলি নিয়ে বিব্রত হয়েছিলেন। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ জায়মান রাজনীতির হাতে সরাসরি একটা এজেন্ডা তুলে দেয় এবং তাকে সংগঠিত চেহারা পেতে সাহায্য করে। স্বদেশী, বয়কট কিম্বা গুপ্তসমিতি সমস্ত রাজনৈতিক ফর্মই এই সময় থেকে জন্ম নেয়। এই সময়েই কংগ্রেসের চরমপন্থী ধারার নেতৃস্থানীয় হিসেবে আমরা রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পাই, যিনি নরমপন্থী বা মডারেটদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে ফেলছেন এবং আবেদন-নিবেদনের রাজনীতিকে বারম্বার প্রত্য্যাখান করছেন। চরমপন্থী দলের শীর্ষস্থানীয় তিলক, বিপিনচন্দ্র বা অরবিন্দের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য ছিল এ মেনে নিয়েও, চরমপন্থী রাজনীতির বিভিন্ন পরিসরে তাঁর উপস্থিতি দেখতেই পাওয়া যায়। এই রাজনীতির পুরোভাগে ছিল বাংলা, বাংলায় যে তিনটি মূল প্রোগ্রাম এই সময়ে নেওয়া হয়েছিল, তা হল- বয়কট, স্বদেশী এবং জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন। এর মধ্যে শেষদুটিতে তাঁর প্রভাব যথেষ্ট ছিল এবং বলতে গেলে স্বদেশী সমাজ প্রবন্ধটি যেন তারই ইস্তেহার।
জাতীয় আন্দোলন ও স্বদেশী সমাজ প্রবন্ধ
এইবার আমরা প্রবন্ধটির চুম্বকসার নিয়ে আলোচনায় ঢুকি। প্রবন্ধের শুরুতে তিনি সুস্পষ্টভাবে লিখছেনঃ
“আমাদের দেশে যুদ্ধবিগ্রহ রাজ্যরক্ষা এবং বিচারকার্য রাজা করিয়াছেন, কিন্তু বিদ্যাদান হইতে জলদান পর্যন্ত সমস্তই সমাজ এমন সহজভাবে সম্পন্ন করিয়াছে যে, এত নব নব শতাব্দীতে এত নব নব রাজার রাজত্ব আমাদের দেশের উপর দিয়া বন্যার মতো বহিয়া গেল, তবু আমাদের ধর্ম নষ্ট করিয়া আমাদিগকে পশুর মতো করিতে পারে নাই, সমাজ নষ্ট করিয়া আমাদিগকে একেবারে লক্ষ্মীছাড়া করিয়া দেয় নাই। রাজায় রাজায় লড়াইয়ের অন্ত নাই-- কিন্তু আমাদের মর্মরায়মাণ বেণুকুঞ্জে, আমাদের আমকাঁঠালের বনচ্ছায়ায় দেবায়তন উঠিতেছে, অতিথিশালা স্থাপিত হইতেছে, পুষ্করিণী-খনন চলিতেছে, গুরুমহাশয় শুভংকরী কষাইতেছেন, টোলে শাস্ত্র-অধ্যাপনা বন্ধ নাই, চণ্ডীমণ্ডপে রামায়ণপাঠ হইতেছে এবং কীর্তনের আরাবে পল্লীর প্রাঙ্গণ মুখরিত। সমাজ বাহিরের সাহায্যের অপেক্ষা রাখে নাই এবং বাহিরের উপদ্রবে শ্রীভ্রষ্ট হয় নাই।”
অর্থাৎ, পরপম্পরাগতভাবে এই দেশ পরিচালিত হত দুটি অক্ষ থেকে, প্রথমটি কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং দ্বিতীয়টি তুলনায় বিকেন্দ্রীভূত, স্বায়ত্ত্বশাসিত সমাজ। আর মানবকল্যাণের প্রায় সমস্ত কাজই এই দ্বিতীয় এবং প্রধানতর অক্ষ অর্থাৎ সমাজের উপর ন্যাস্ত ছিল। রাষ্ট্রপরিচালকদের এই ব্যাপারে ভূমিকা গ্রহণের অবকাশ কম ছিল। রবীন্দ্রনাথ একে সমাজতন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। পরবর্তীকালে অন্য বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর চিন্তার ভিন্নমতি দেখা গেলেও, ভারতে ‘সমাজতন্ত্র’ ছিল এই ধারণায় তিনি স্থিত ছিলেন, এর দুদশক পরে লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত’ প্রবন্ধেও একই কথা তিনি লেখেন। স্বদেশী সমাজের পরিশিষ্টে আরেকটি প্রবন্ধ লেখেন তিনি, সমালোচকদের প্রশ্নের উত্তর সমন্বিত করে, সেখানে লেখেনঃ
“য়ুরোপের যেখানে বল আমাদের সেখানে বল নহে। য়ুরোপ আত্মরক্ষার জন্য যেখানে উদ্যম প্রয়োগ করে আমাদের আত্মরক্ষার জন্য সেখানে উদ্যমপ্রয়োগ বৃথা। য়ুরোপের শক্তির ভাণ্ডার স্টেট অর্থাৎ সরকার। সেই স্টেট দেশের সমস্ত হিতকর কর্মের ভার গ্রহণ করিয়াছে-- স্টেটই ভিক্ষাদান করে, স্টেটই বিদ্যাদান করে, ধর্মরক্ষার ভারও স্টেটের উপর। অতএব এই স্টেটের শাসনকে সর্বপ্রকারে সবল কর্মিষ্ঠ ও সচেতন করিয়া রাখা, ইহাকে আভ্যন্তরিক বিকলতা ও বাহিরের আক্রমণ হইতে বাঁচানোই য়ুরোপীয় সভ্যতার প্রাণরক্ষার উপায়।
আমাদের দেশে কল্যাণশক্তি সমাজের মধ্যে। তাহা ধর্মরূপে আমাদের সমাজের সর্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া আছে। সেইজন্যই এতকাল ধর্মকে সমাজকে বাঁচানোই ভারতবর্ষ একমাত্র আত্মরক্ষার উপায় বলিয়া জানিয়া আসিয়াছে। রাজত্বের দিকে তাকায় নাই, সমাজের দিকেই দৃষ্টি রাখিয়াছে। এইজন্য সমাজের স্বাধীনতাই যথার্থভাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। কারণ, মঙ্গল করিবার স্বাধীনতাই স্বাধীনতা, ধর্মরক্ষার স্বাধীনতাই স্বাধীনতা।”
অর্থাৎ, দেশের সচলতার ভার এদেশে সমাজের উপর, ইউরোপে রাষ্ট্রের উপর। আমরা আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাস, ইউরোপের কলোনি ও যুদ্ধ-বাণিজ্য বিস্তারের ইতিহাস, সমস্ত কিছুতেই এই রাষ্ট্রধারণার প্রাবল্য দেখি। এমন কী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকেও রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হয়। কিন্তু, ভারতীয় দেশগুলিতে যেহেতু এই রাষ্ট্রচেতনা গণমানসে খুবই ক্ষীণ, তাই রাষ্ট্রপরিচালনার নীতিসমূহ নিয়ে আলোচনা-আন্দোলনে জনতার উৎসাহও কম। সম্ভবতঃ, আজকের ভারতেও আমরা দেখতে পাই, এই চেহারাটা। রাজনৈতিক দলগুলির ভাগাভাগি, একই এজেন্ডা নিয়ে একাধিক নামে দল তৈরি হওয়া, ব্যক্তিগত প্রভাবের প্রাচুর্য সবই পলিটিকালাইজেশোনের অভাবকে একভাবে সূচিত করে। এমন কী, রাজনৈতিক দলগুলিও সেখানেই সফল যেখানে তারা রাষ্ট্রনীতির পরিসর, পার্লামেন্টারি ডিবেটের বাইরে এসে ব্যাপকভাবে সামাজিক সংযোগ করতে পেরেছে। যাই হোক, রবীন্দ্রনাথ এই দেশে পলিটিক্স-এর অচলতার কারণ বুঝেছিলেন, এই প্রবন্ধগুলিতে বেশ বিশদে তা আলোচনা করেছে। সমসাময়িক চিন্তাবিদ-কর্মীদের অনেকেই এই অসারতা নিয়ে লিখেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন পলিটিক্স নিয়ে দরজায় গেলে ভারতের মানুষ সাড়া দেবেনন না, কিন্তু ধর্ম নিয়ে গেলে, যে ধর্মই হোক না কেন, প্রচারককে সম্মানের সঙ্গে আসন পেতে দেবেন। অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন বলেন, এই আন্দোলন মানুষকে টানবে কারণ এটি রাজনৈতিক নয়, সামাজিক আন্দোলন। শ্রী অরবিন্দ রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পরে পণ্ডিচেরি থেকে চিঠিতে বারীন্দ্রনাথকে লেখেন যে রাজনীতি, এমন কী, গুপ্তসমিতিও, ইউরোপের জিনিস, এই দেশে তা অসার। আর, রাজনীতির পরিমণ্ডলে গান্ধিজির অস্বাচ্ছন্দ্যের কথা আমরা সকলেই জানি। এই প্রসঙ্গে এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ দুটি প্রস্তাব দেনঃ
ক) রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী না হয়ে সমাজকে নিজের উন্নতিসাধনের কাজ করতে। আমরা এই পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রভৃতি উদ্যোগগুলি দেখি যা গভর্নমেন্টের সমান্তরালে সামাজিক উদ্যোগ হয়ে দেশের সম্পদ বিকাশের কথা ভাবে। এই সামাজিক ক্ষমতানির্মাণের মধ্য দিয়ে ক্রমশঃ গভর্নমেন্টকে অকিঞ্চিৎকর করে দেওয়া যায়। এবং খতিয়ে দেখলে, সরকারকে উপেক্ষা করে সমাজের পরিচালনায় এই কাজগুলো করলে সরকার বস্তুত ‘বয়কট’ হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, সমাজ নিজের দায়িত্ব বুঝে নিলে বিদেশি সরকারের হাত থেকে দেশের কল্যাণসম্বন্ধ দেশের মানুষের হাতে ফিরে আসবে, তা দেশের সম্পদ বিদেশের লুঠ থেকে রক্ষার মন নয়।
খ) পরম্পরাগত সামাজিক উদ্যোগ, সেমন মেলাগুলিকে, তিনি এই সামাজিক আদানপ্রদানের জায়গা হিসেবে তুলে আনতে বলছেন। ঐতিহাসিকভাবেই এদেশে এজাতীয় উদ্যোগ সার্থক এবং দেশের ব্যাপক মানুষকে স্বীয় হিতের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে গেলে কংগ্রেসি পলিটিকাল প্ল্যাটফর্ম নয়, এই মেলার মাঠে ফিরে যাওয়ার কথা তিনি বলছেন।
এই চিন্তাভাবনা আমরা গান্ধিযুগের রাজনীতিতেও দেখতে পাই, এবং ভারতের মুক্তি-আন্দোলনে সামাজিক গঠনকার্যের গুরুত্ব নিয়ে আমরা আবারও আলোচনা করব।
আগেই বলেছি, জাতীয়তার প্রশ্ন ভারতের রাজনীতিকে বারবার বিদ্ধ করছিল। ইউরোপের দেশগুলোর মতন, এমন কী জাপান বা তুর্কির মতনও জাতিসত্তা এইদেশে নেই। অথচ, জাতীয় আন্দোলন, যা সারা ভারতের সুরকে এই সুতোয় বাঁধবে, তার জন্য এই সত্তাটির নির্মাণ আবশ্যক হয়ে পড়ছিল। রবীন্দ্রনাথ এই সত্তার চেহারা পেতে ধর্মের কথা বলছেন, সেই সময়ের বাকি নেতারাও ধর্মই ভারতের জাতিসত্তা, এই কথা লিখছেন। কিন্তু, এই ধর্ম অর্থে তাঁরা মূলতঃ হিন্দুধর্মকেই (প্রসারিত অর্থে হলেও) বুঝছেন-
“বহুর মধ্যে ঐক্য-উপলব্ধি, বিচিত্রের মধ্যে ঐক্যস্থাপন-- ইহাই ভারতবর্ষের অন্তর্নিহিত ধর্ম। ভারতবর্ষ পার্থক্যকে বিরোধ বলিয়া জানে না, সে পরকে শত্রু বলিয়া কল্পনা করে না। এইজন্যই ত্যাগ না করিয়া, বিনাশ না করিয়া, একটি বৃহৎ ব্যবস্থার মধ্যে সকলকেই সে স্থান দিতে চায়। এইজন্য সকল পন্থাকেই সে স্বীকার করে-- স্বস্থানে সকলেরই মাহাত্ম্য সে দেখিতে পায়।
ভারতবর্ষের এই গুণ থাকাতে, কোনো সমাজকে আমাদের বিরোধী কল্পনা করিয়া আমরা ভীত হইব না। প্রত্যেক নব নব সংঘাতে অবশেষে আমরা আমাদের বিস্তারেরই প্রত্যাশা করিব। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রীস্টান ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে পরস্পর লড়াই করিয়া মরিবে না-- এইখানে তাহারা একটা সামঞ্জস্য খুঁজিয়া পাইবে। সেই সামঞ্জস্য অহিন্দু হইবে না, তাহা বিশেষভাবে হিন্দু। তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যতই দেশবিদেশের হউক, তাহার প্রাণ, তাহার আত্মা ভারতবর্ষের।”
হিন্দুধর্মের এই চেহারাটি শ্রীরামকৃষ্ণ কিছুকাল আগেই প্রচার করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ এই মূল কাঠামো ধরেই ভারতের শিক্ষিত যুবসমাজকে ডাক দিয়েছেন বিদেশি শাসকের তাঁব ছেড়ে দেশের কাজে আসার। গান্ধিজিও এর কিছু পরে হিন্দ-স্বরাজে লিখবেন, ভারতে জাতীয়তার প্রশ্ন কৃত্রিম নয়, ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে পরিব্যাপ্ত ধর্মস্থানগুলিই জানান দেয় যে ধর্মতঃ সারা ভারতবাসী একটি সত্তা ধারণ করে। কিন্তু, এই প্রসঙ্গে দুটি সমস্যা আসে- এক, হিন্দুধর্মের মধ্যে সত্যিই এই সাধারণ পরিচিতি আছে নাকি? বিবেকানন্দ হিন্দুদের মধ্যে গোমাংস ভোজনে নিষেধ ছাড়া আর কোনও সাধারণ অভ্যাস দেখতে পান নি। কংগ্রেসের একটি অধিবেশনে লালা লাজপৎ রাই বলেন প্রথমে হিন্দুদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে হবে, সেইটে হবে জাতীয়তা নির্মাণের প্রথম ধাপ, তার পরে মুসলমানদের জাতীয়তায় সামিল করার পদ্ধতি শুরু করতে হবে। রবীন্দ্রনাথকেও এর আগে ভারতবর্ষীয় সমাজ প্রভৃতি প্রবন্ধে এই সমস্যা উত্থাপন করতে দেখি, এবং যতমত ততপথের হিন্দুধর্মকেই সমাধান হিসেবে পাওয়া যায়। কিন্তু, দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল মুসলমান বা অন্যান্য সম্প্রদায়গুলি এই হিন্দু-জাতীয়তার সমাধানে সামিল হবে কী না? রবীন্দ্রনাথ পুনরায় সমাজের নিজস্ব ডায়নামিক্সে দেখান সমাজের নিচুতলায় সাম্প্রদায়িক ঐক্য ধর্মসমন্বয়ের মধ্য দিয়েই ইতিহাসে সাধিত হয়েছিল।
এইখানে একটু ইতিহাস পর্যালোচনার দরকার। সৈয়দ আহমদের উদ্যোগ, ওয়াহাবি-ফরায়েজি সংগঠনের মধ্য দিয়ে এদেশের মুসলমানরা জাতীয় আন্দোলন শুরু করে দিয়েছিলেন বহু আগে থেকেই। আন্দামানে দ্বীপান্তরপর্বের সূচনা হয় তাঁদের মধ্য দিয়েই। হান্টার তাঁর ইন্ডিয়ান মুসলমানস বইয়ে এই সংগঠনের কথা বলছেন, যেখানে বাংলা থেকে হাজার হাজার মুসলমান স্বাধীনতাযোদ্ধা উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে ব্রিটিশবিরোধী যুদ্ধে যোগ দিতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মুসলমান জাতীয়তা আগেই নির্মিত ছিল, সম্ভবতঃ। সেই জাতীয়তার চরিত্র রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দের হিন্দু জাতীয়তার থেকে পৃথক ছিল, তিলকের থেকে পৃথক তো বটেই। কিন্তু ভারতের প্রকৃত জাতীয়তার নির্মাণে প্রয়োজন ছিল এই দুই জাতীয়তাবোধকে এই মঞ্চে আনা। খেয়াল করলে দেখা যায় ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের ফসল হিসেবে যেমন জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (পরবর্তীকালে যেখান থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) তৈরি হয়, তেমনি মুসলমান সমাজ থেকে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়। আমরা বলব, অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে খিলাফতকে যুক্ত করার উদ্যোগই ছিল এই দুই জাতীয়তাকে মিলানোর প্রয়াস। দুর্ভাগ্যবশতঃ, এই মিল রাজনৈতিক থেকে গিয়েছিল, সামাজিক হয় নি। ফলতঃ দুই জাতীয়তাকে পরস্পরবিরোধীস্বার্থে পুষ্ট করতে সাম্রাজ্যবাদীদের বেগ পেতে হয় নি।
জাতীয়তার প্রশ্নকে ধর্মপরিচিতির সংকীর্ণতর সংজ্ঞার ঊর্ধ্বে তোলার প্রয়োজন দেশের নেতারা বুঝতে শুরু করেন। বিশেষতঃ অসহযোগ খিলাফত আন্দোলনের পরিসমাপ্তির পর এই সংজ্ঞার পুনর্নির্মাণ আবশ্যক হয়ে পড়ে। আকর্ষণীয় ভাবে ১৯২২-এর কংগ্রেস সভাপতি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনেন। ভারতের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য যেহেতু সমাজের হাতে ক্ষমতার পুনরার্পণ হওয়া উচিৎ, তাই গান্ধি-নির্দেশিত গঠনমূলক কর্মসূচী, অর্থাৎ সমাজগঠন পল্লীসংস্কারের কাজই এই জাতীয়তার পরিচয়, এই অভিমত তিনি রাখেন। অর্থাৎ, ধর্মপরিচয় নয়, সমাজের কল্যাণে এই ভূখণ্ডের রাজনীতি বিকশিত হবে, এইটাই হবে ভারতের জাতীয়তা। ভারতে গান্ধিযুগের প্রকৃত অভিষেক এই অধিবেশন থেকেই। ইতিমধ্যে সমাজের এক বিশাল অংশের মানুষের কাছে নেতা হিসেবে গান্ধিজি অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
স্বদেশী সমাজ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ এই নেতার অধিষ্ঠান নিয়ে উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সমাজ চলতে সমাজপতির প্রয়োজন।
“সমাজে অবিচ্ছিন্নভাবে সকল সময়েই শক্তিমান ব্যক্তি থাকেন না, কিন্তু দেশের শক্তি বিশেষ-বিশেষ স্থানে পুঞ্জীভূত হইয়া তাঁহাদের জন্য অপেক্ষা করে। যে-শক্তি আপাতত যোগ্য লোকের অভাবে কাজে লাগিল না, সে-শক্তি যদি সমাজে কোথাও রক্ষিত হইবার স্থানও না পায়, তবে সে সমাজ ফুটা কলসের মতো শূন্য হইয়া যায়। আমি যে সমাজপতির কথা বলিতেছি, তিনি সকল সময়ে যোগ্য লোক না হইলেও সমাজের শক্তি সমাজের আত্মচেতনা তাঁহাকে অবলম্বন করিয়া বিধৃত হইয়া থাকিবে। অবশেষে বিধাতার আশীর্বাদে এই শক্তিসঞ্চয়ের সহিত যখন যোগ্যতার যোগ হইবে, তখন দেশের মঙ্গল দেখিতে দেখিতে আশ্চর্যবলে আপনাকে সর্বত্র বিস্তীর্ণ করিবে। ”
কিন্তু সমাজে সমস্ত সময়ে সমাজপতি থাকে না। ভারতের ইতিহাস থেকে তিনি অনুধাবন করেছিলেন, এই নেতার গড়ে ওঠার একটা পর্যায় আছে। গোপবালককে ভগবান কৃষ্ণ করে তুলতে দেবব্রত ভীষ্ম বা মহর্ষি গর্গের উদ্যোগের পাশাপাশি বৃন্দাবনের পরিমণ্ডল লাগে, সন্দীপন মুনির পাঠশালা লাগে চৈতন্য অবতারের আবাহনে গৌর আনা গোঁসাইকে পেতে হয় মাধবেন্দ্রপুরীর মন্ত্র, সেই মন্ত্রের সাধন লাগে। তেমনি, সমাজের নেতার আবাহনের জন্যও বাকি উদ্যমীদের জমি তৈরি করতে হয়। -- “আপাতত আমাদের কাজ-- দপ্তর তৈরি রাখা, কাজ চালাইতে থাকা; যেদিন মহাপুরুষ হিসাব তলব করিবেন, সেদিন অপ্রস্তুত হইয়া শির নত করিব না-- দেখাইতে পারিব, জমার ঘরে একেবারে শূন্য নাই।” গান্ধিযুগের পরের শতাব্দীতে, যখন দেশ প্রকৃত অর্থেই রাজনৈতিক দিশাহীনতা ভুগছে, সমাজগঠনের এই কাজের প্রয়োজন আবারও অনুভূত হচ্ছে।
সরি, বাজে ভুল হয় গেছিল
@b, তিনটেই আলাদা মনে হয়, আমার ওয়াহাবি-ফরাজি গুলিয়ে যায় আবার, ব্রিটিশরাও গোলানোর চেষ্টা করেছে। শুধু এটুকু বলছিলাম যে মুসলমানরা স্বাধীনতা সংগ্রাম অনেকদিন আগেই চালু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা সেভাবে "পলিটিকাল" মুভমেন্ট ছিল না, পলিটিকসকে যেভাবে ইউরোপ ডিফাইন করেছে।
পার্থবাবুর দুটো লেখা মনে পড়ছে। দেবেশ বাবুর উত্তরে একটা লিখেছিলেন।
দীপাঞ্জন,
আপনার প্রশ্নের উত্তর হয়ত জানিনা।
তবে বাংলার সবচেয়ে বড়ো জননেতা (অন্ততঃ এপার বাংলার) প্রায় একশ বছর আগে যে পয়েন্টগুলো লিখেছিলেন, সেটার লিঙ্ক দিলাম-
সরি, একটা লিংক দুবার গেছে, এটা যাবে-
দীপাঞ্জন, ওনার আর একটি প্রবন্ধ- আমাদের শিক্ষা দীক্ষার কথা তে এই নিয়ে বিশদে লিখেছেন, পরে কখনও স্ক্যান করে পাঠাতে পারি, মোটের ওপর বক্তব্য যে সমাজই এই কাজগুলো করবে, সেইটা করার জন্য পল্লীসমাজ থেকে শুরু করে তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেলাসমাজ অবধি কাঠামো বানাবে, এরকম। কমিউনাল কাউন্সিল বা সোভিয়েতের মতন একটা ব্যাপার বলেই মনে হল। পার্লামেন্টের বদলে গ্রামসভা থেকে সিদ্দান্ত উঠে আসবে।
যাই হোক কংগ্রেসের সভাপতির অধিবেশনে জাতীয়তা নিয়ে দেশবন্ধুর উক্তির একটুও রেখে যাই, প্রাসঙ্গিক হবে-
@b, অফিস খুললে স্ক্যান করে দেব।
@b,
দাও ফিরে অরণ্য, কিম্বা গ্রামস্বরাজ আত্মনির্ভরতার দাবি বরাবরই জনসমাজের এক গরিষ্ঠ অংশে গুরুত্বপূর্ণ থেকেছে। গান্ধি, দেশবন্ধু প্রমুখ বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এগুলো বলেছিলেন বলেই। বাকি নেতারাও ঠেকায় পড়ে এসব বলেন।
সরি সরি, ওটা dcকে বলা