
একে বলে বজ্র আঁটুনি। ফস্কা গেরোর ব্যাপারই নেই কোনো। কয়েক লক্ষ সেনা, পঞ্চাশ হাজার আধা সেনা তো ছিলই, এবার আরো সত্তর হাজার আধা সেনা মোতায়েন। নির্বিচার ধরপাকড়, নেতাদের অন্তরীন দশা। খবরের কাগজ, টিভি, ইন্টারনেট, ফোন সব বন্ধ। লাগাতার কার্ফিউ। বাড়ির দরজায় দাঁড়ালেও ছুটে আসছে ছররা গুলি। যেন একটা বিশাল কালো শ্বাসরুদ্ধকর কম্বলে মুড়ে ফেলা হয়েছে উপত্যকাকে।
১৯শে আগস্টের টেলিগ্রাফ কাগজ বলছে, কতো উর্বর মস্তিষ্ক শাসকের যে বিভিন্ন গ্রামে পাথর ছুঁড়তে পারে এমন তরুণদের ধরপাকড়ে গিয়ে যদি দেখে তারা আত্মগোপন করেছে, তাহলে তাদের বাবা কাকাকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তুরন্ত আত্মসমর্পণের এ এক কৌশল। সেই তুই জল ঘোলা করিসনি তোর বাবা করেছিল, সেই গল্প। গাড়ির বনেটে বেঁধে রেখে পাথরবাজি এড়াবার অছিলা তো আমরা সবাই জানি।
উদাহরণস্বরূপ দু ডজন তরুণকে পাথরবাজ সন্দেহে এরেস্ট করা হয়েছে তিনটি গ্রামে, কাউকে কাউকে পাবলিক সেফটি এক্টে, যাতে বিনা বিচারে দুবছরের কারাবাস নিশ্চিত। খ্রিউ গ্রামে সামির আহমেদকে এরেস্ট করবে বলে গভীর রাতে দরজায় লাথি মেরেছিল আর্মি। সামির ছিল মাসির বাড়িতে, আর এক গ্রামে। তাই তার বুড়ো বাপকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হলো। বাপের টানে পরদিন সকালে সামির সারেন্ডার করল এবং হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। পাক্কা ছ'দিন পরে সেন্ট্রাল জেলে তার খবর পাওয়া গেল,জানা গেল পাবলিক সেফটি এক্টে তাকে ধরা হয়েছে। যদি ধরে নেওয়া যায় সামির পাথর ছোঁড়ার দোষে সত্যিই দোষী তাহলেও কি তাকে দুবছর বিনাবিচারে জেলে পচানো যায় ! যদি পাথর ছোড়ার শাস্তি এই হয়, তাহলে পেলেট বা ছররা ছোঁড়ার শাস্তি কী হওয়া উচিত ? আরোও আশ্চর্য, এতো লোককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যে জম্মু-কাশ্মীরের জেলগুলিতে এখন স্থানাভাব। অস্থায়ী ডিটেনশন সেন্টারে গাদা লোক ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নয়তো পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে উত্তর প্রদেশ বা পাঞ্জাবের জেলখানায়।
এতো বাঁধাবাঁধি, এতো কর্মকান্ড,তবুও কতজন গ্রেপ্তার হলো তার হিসেব চেপে রেখে দেওয়া হচ্ছে। যে সরকার ঈদের প্রার্থনায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বলে দেয় গড়গড়িয়ে, সে কেন বন্দীর সংখ্যা কতো এই প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকে ? গত জুন মাসেই কিন্তু এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই পাবলিক সেফটি এক্টকে lawless law বা আইনহীন আইন আখ্যা দিয়েছিল।
মানবাধিকারের এই হাল কি শুধু এখনই? ধারা ৩৭০ উঠিয়ে দেবার আগে কাশ্মিরীরা কি বাস করতো এক গণতান্ত্রিক ভূখন্ডে যেখানে মানবাধিকার নিয়ে ন্যুনতম সম্মানবোধ অবশিষ্ট আছে ?
এ প্রশ্ন তো সহজ আর উত্তরও তো জানা। তবু কেন মহামান্য ভারত সরকারের গোঁসা হয় কাশ্মীরিদের মানবাধিকার সম্বন্ধে গত জুনমাসে প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস, ইউনাইটেড নেশনসের রিপোর্টে ? কি ছিল সেখানে ? ঐ রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছিলো শারীরিক মানসিক অত্যাচারকে ভারতীয় শাসক বাগে আনবার কায়দা হিসেবে ব্যবহার করে। কোন যুক্তি, চুক্তি, গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ধার না ধেরে শুধু আধিপত্যকামিতা যেরকম ক'রে অভ্যস্ত আর কি ! কিন্তু একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র তার নাগরিকের সঙ্গে এমন করবে এটা কিন্তু ভয়ানক অস্বাভাবিকতা।
অত্যাচারগুলির বিবরণ শুনলে এই পয়েন্টটি পরিষ্কার হবে। অন্য অত্যাচারের সঙ্গে বন্দির নাক মুখের ওপর কাপড় বেঁধে তোড়ে জল ঢালা, যাতে ডুবে যাবার মতো অনুভূতি হয়(waterboarding), একনাগাড়ে জাগিয়ে রাখা এবং যৌন অত্যাচার আকছারই করা হচ্ছে। আবু ঘ্রাইব বা গুয়ান্তানামো বে থেকে মাস্টারমশাইদের আমদানি করা হয়েছে বলে মনে লয়।
রিপোর্টে এ ছাড়াও উল্লিখিত হয়েছে কালকুঠুরীতে একলা থাকা, লংকাগুঁড়ো মেশানো জলের ড্রামে উল্টোবাগে বন্দীর মুন্ডু চুবিয়ে রাখা। ল্যাংটো করে শক দেওয়া, গরম লোহার রড দিয়ে পেটানো এবং হিটার অথবা সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া। শুয়োর মারার পদ্ধতিতে গুহ্যদেশ দিয়ে লোহার রড ঢোকানোও জায়েজ। ভেতরটায় সব ছিঁড়েখুঁড়ে যায়। রিপোর্টের ৪৩২ টি প্রামাণ্য টেস্টিমনির মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে মঞ্জুর আহমেদ নাইকু নামে এক হতভাগ্যের কথা। রড ঢোকানো ছাড়াও তার পেনিসে ন্যাকড়া বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
যাদের ওপর এই অত্যাচারগুলি হয় তারা কিন্তু বেশির ভাগই সিভিলিয়ান।
আমরা জানি অথবা জানি না ইউনাইটেড নেশনসের হিউম্যান রাইটস চিফ নিজে আহবান জানান একটি কমিশন অব এনকোয়ারি (COI) গঠনের। যাতে কাশ্মীরে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেসগুলি নিয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক ইনভেস্টিগেশন হতে পারে।
COI হচ্ছে ইউনাইটেড নেশনসের সর্বোচ্চ ধাপের তদন্ত যা প্রয়োগ করা হয় সিরিয়ান ক্রাইসিসের মতো ভয়ংকর ঘটনায়।
AFSPA তোলার দাবী তো বহু পুরনো। সে সব না করেই ইউএপিএ আইন আরো জোরদার করা হলো। ডকুমেন্টসে উঠে এলো ভয়াবহ অত্যাচারের কাহিনী। শুয়োরছানাকে চটকাতে বাধ্য করা যাতে ধর্মে ঘা পড়ে। দু পা চিনির জলে ভিজিয়ে ট্রাউজারের ভেতর নেংটি ইঁদুর ছেড়ে দেওয়া। মল মূত্র, লংকা গুঁড়ো খেতে বাধ্য করা।
বেশ হিন্দি ফিল্ম মতো লাগছে, না ? সবই বাস্তব। আর বাস্তবের অত্যাচার তো তিন ঘন্টায় শেষ হয় না। বার বার তুলে নিয়ে যাওয়া, বার বার অত্যাচার করা, আবার অত্যাচারের কাহিনী বাইরে বললে বেশি অত্যাচারের সম্ভাবনা থেকেই যায়। ফলে অত্যাচারিতের মন মানসিকতার কী অবস্থা হয় সহজেই বোঝা যায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে ৪৩২ জন সাক্ষ্যদাতার অর্ধেকই অত্যাচারের পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ২৪ জন নারী। তাদের ১২ জন আটক অবস্থায় ধর্ষণের শিকার।
আমার দেশ কিন্তু ১৯৯৭ সাল থেকেই ইউনাইটেড নেশনসের কনভেনশন আগেইন্সট টরচারের একজন সিগনেটরি। অথচ নিজের ভূখন্ডেই তা প্রয়োগ করেনি এ দেশের কোনো সরকারই। ফলে রমরমিয়ে চলছে অমানবিক মধ্যযুগীয় অত্যাচার।
পেলেট গান নিয়ে এখন অনেক কথা। কিন্তু উপত্যকায় এই অস্ত্র চলছে ২০১০ সাল থেকে। এটা ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল হোম মিনিস্ট্রির ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে কম ক্ষতিকারক অস্ত্র হিসেবে। সত্যি তো, একটা শটগান বল বেয়ারিং ছোঁড়ে সেটা আর কতো মারাত্মক হবে। কিন্তু প্রচন্ড গতিতে ধেয়ে আসা অজস্র ছোট ছোট লোহার বল যদি রক্তমাংসে গেঁথে যায় বা চোখ তাক করে মারলে অন্ধত্ব অনিবার্য হয়, তাহলে কম ক্ষতিই তো হয়, তাই না ? গত এক বছরে প্রায় ১৭ জন খুন হয়েছে এই ছররা বন্দুকে, অসংখ্য অন্ধ হাসপাতালের বেডে। কবি কহিয়াছেন, শরীর দিলে বর্মও দেওয়া উচিত ছিলো।
কাশ্মীরি অত্যাচারের মনোরম বর্ণনা পড়ে যাদের পন্ডিতদের কথা মনে পড়ে যাবে এবং সমস্বরে কেন পন্ডিতদের কথা লিখিনি সেই কৈফিয়ত দিতে হবে, তাদেরকে বলি মনুষ্যত্বের অবমাননা নিয়ে অনেক লেখা, অনেক আলোচনা বাকি। হরি সিংয়ের বিলাস ও দুর্বলতা, জম্মুতে মুসলমানদের ম্যাসাকার, জগমোহনের আমলে পন্ডিত বিতাড়ন, অনেক লেখাই লিখতে হবে। কারণ পেলেট গানের ছররা যখন চোখের বা মাংসের গভীরে ঢুকে যায় তখন কাশ্মিরী পন্ডিত আর কাশ্মিরী মুসলমানে কোন ভেদ করে না অগুনতি লোহার বল। শাসকের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া যারা সমর্থন করবে খুব শিগগিরই তারা দেখবে সেইসব অস্ত্র তাদের নিজেদের দিকেই তাক করা হয়েছে।
শিবাংশু | unkwn.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১৯ ০৩:৪১78939
Swati Ray | unkwn.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১৯ ০৩:৫৪78940
দ | unkwn.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১৯ ০৫:১২78941
দ | unkwn.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১৯ ০৫:১৩78942
দোবরু পান্না | unkwn.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৩১78943
S | unkwn.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১৯ ০৮:৩৩78944
Amit | unkwn.***.*** | ২০ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৫৯78945
aranya | unkwn.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১৯ ০৪:২৯78946
সিএস | unkwn.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১৯ ০৬:৫৬78947
কুশান গুপ্ত | unkwn.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১৯ ০৮:২৭78948
Rouhin Banerjee | unkwn.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১৯ ০৮:৫৫78949
bye | unkwn.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৪১78950
i | unkwn.***.*** | ২১ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৫৬78951
i | unkwn.***.*** | ২২ আগস্ট ২০১৯ ০১:৩২78952
Atoz | unkwn.***.*** | ২২ আগস্ট ২০১৯ ০১:৫৯78953
সিএস | unkwn.***.*** | ২২ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৪১78954
Atoz | unkwn.***.*** | ২৩ আগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৯78957
প্রতিভা | unkwn.***.*** | ২৩ আগস্ট ২০১৯ ০৫:৩৪78955
র২হ | unkwn.***.*** | ২৩ আগস্ট ২০১৯ ০৬:২০78956