ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ফলোয়ার বা সদস্য বলে অমাবস্যার নির্জন রাতে শ্মশানে যেতে ভয় করবে না বা পঞ্চমুন্ডি আসনের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে গায়ে কাঁটা দেবে না – এমন ক্লজের আওতায় মনে হয় ছিলাম না। ফলে খুব খুব ভোরে, আলো ফোটার তখনও অনেক দেরি – এমন অবস্থায় গ্রামের মাঠের পাশের গরাঙ্গে নামক পুকুর এবং ততসংলগ্ন শ্মশানের মাঝে একাকী গিয়ে জবা ফুলের গাছ থেকে ফুল তুলে আনা সম্ভব ছিল না সেই কালে এবং বয়সে। বিশেষ করে যখন খবর ছিল যে রিসেন্ট সাধুর আবির্ভাব হয়েছে গরাঙ্গে শ্মশানে, সে নাকি অঘোরী গ্রুপের বাই নেচার। মানে চিতার আগুন থেকে মাংস তুলে খাওয়া দাওয়া করছে!
তাহলে গরাঙ্গে বাদ – কিন্তু ঠাকুর পুকুরের পাড়? সেই পুকুরের পাড়েও তো পাশের গ্রামের লোকেরা মাঝে মধ্যে মরা পোড়ায়। আর সেখানকার জবাগাছে অনেক অনেক ফুল – তা তো আর সহজে ছাড়া যায় না!
হঠাৎ করে পঞ্চমুন্ডি বা ফুলের গল্প কেন? আসলে এগুলো নষ্টালজিয়া যা কয়েকদিন ধরে অনুভব করছি। পুজোর আর ঠিক এক মাস বাকি – কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম এই দুর্গা পুজোর গল্প গুলো লিখে রাখি। আমার আর অমৃতার দুজনার বাড়িতেই দুর্গা পুজো হয়। আমার বাড়ির পুজোর এবার ৬৯ বছর, এবং এটা এখনও পারিবারিক ভাবেই চলছে। আমাদের গ্রামে মাত্র কিছুদিন আগে পর্যন্ত ২ টো পুজো হত (এখন ৩টে হয়)। একটা আমাদের, মানে ঘোষ বাড়ির আর একটা গ্রামের বারোয়ারির।
অমৃতার বাড়ির পুজো প্রায় চারশো বছরের পুরানো বলে পরিচিত। এক সময়ের জমিদার পরিবারের পুজো ছিল – তবে যা হয়, এখন আর সে জমিদারি আমলের জৌলুস নেই। তবে পুজো কিন্তু বিশাল জাঁকজমক করেই হয় দেবোত্তর সম্পত্তির উপার্জন থেকে। আজকাল সেটা ওদের গ্রামের সবার পুজোই বলা যেতে পারে। দুজনার বাড়িতেই পুজো হবার জন্য হালকা চাপ ছিল কোন দিন কার বাড়িতে কাটানো হবে।
অমৃতার বাড়ির পুজোর গল্প পরের দিন – আজকে আমাদের বাড়ির গল্পই হয়ে যাক। তো ফুল তোলা নিয়ে যা বলছিলাম, আমরা সেই ভোরের বেলায় চা-বাগানে পিঠে যেমন করে ঝুড়ি নিয়ে চা-পাতা তোলে, তেমন বেতের বা বাঁশের বানানো ফুল তোলার ঝুড়ি নিয়ে বেরুতাম ফুল তুলতে। বাসি ফুলে পুজো হয় না, তাই দিনের দিন-ই তুলতে হবে ফুল – একটু বেলায় গেলে অন্য গ্রামের ছেলে যদি তুলে নিয়ে চলে যায় ফুল! ঠাকুর পুকুরের পাড় তখনো ঠিক করে কাটানো হয় নি – বেশ দুর্গম ছিল, কোমর পর্যন্ত জল পেরিয়ে গিয়ে ফুল তোলা। আর একটা জবা গাছ ছিল – ‘কলঘরের’ বাড়ির গোয়ালের পাশে। সেই গাছেও প্রচুর ফুল। কলঘর কেন নাম ছিল ঠিক বলতে পারব না, হয়ত বাড়িতে অনেক দিন আগে কিছু বানাবার কল ছিল! সেই কলঘরের জবা গাছ থেকে পড়ে গিয়েই গদা-কাকু একবার হাত-ফাত ভেঙে একসা। তারপরেই গদা-কাকু অবসর নিয়ে নিল ফুল তোলা থেকে – ভার চলে এল আমার আর পিসির ছেলেদের।
গ্রামের ভিতরেও ফুল তোলা হত – অত ভোরে কে আর দরজা খুলে দেবে, ফলে যাদের উঠোন পাঁচিল দিয়ে ঘেরা থাকত তাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে হত পাঁচিল ডিঙিয়ে। যেমন সামাদ-সাহেবের বাড়ি – প্রচুর ফুলের গাছ। জ্যেঠিমার একটাই রিকোয়েষ্ট থাকত যে গাছ গুলোর সব ফুল তুলে পুরো ন্যাড়া করে দিস না – কিছু ফুল রেখে দিস। আমরা সেই অনুরোধ রাখতাম। যাদের বাড়ি ঘেরা ছিল না, সেখানে তো কোনই প্রবলেম নেই – যেমন বামনার পাড়ে দিবাকরদের বাড়ি। অনেক ফুল পাওয়া যেত সেখানে। আর এই বামনা পুকুরেরই অন্য পাড়ে ছিল সন্তুদের বাড়ি এবং একদম পুকুরের ধারে স্থল পদ্মের গাছ। সেই গাছ এত ফুল দিত আর কি বলব – যেন ঠাকুরকে দেবার জন্যই বেশি করে ফুল ফোটাতো নিজের গাছে! আচ্ছা আর একটা ব্যাপার বলে রাখি, গ্রামের বেশির ভাগ লোকেই কিন্তু পুজোর জন্য ফুল দেওয়া পূণ্যের কাজ মনে করত। অনেকে বলেও যেত – ফুল নিয়ে যাস রে আমাদের বাড়ি থেকে। আমরা যেখানে অ্যাডভেঞ্চার করতে বেরুতাম ফুল তুলতে গিয়ে, সেখানে বাড়ির বোন-দিদিরা সাজি নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দুর্গম জায়গা থেকে ফুল সংগ্রহ করত। এই ভাবেই আমাদের ছোট বেলায় পুজোর জন্য ফুল কোনদিন কিনতে হয় নি – একমাত্র রজনীগন্ধার মালা এবং মাঝে মাঝে সন্ধিপুজোর একশো আটটা পদ্ম ফুল ছাড়া। অনেক সময় আমার এক পিসির ছেলে তাদের গ্রাম থেকে পদ্ম নিয়ে আসত অষ্টমীর দিন।
এতো গেলো ফুলের কথা – আরো অনেক কিছু বাকি। বেলপাতা এবং নবমীর হোমের জন্য যে পাঁচ ধরণের কাঠ লাগে সেগুলোও তো আমাদেরই সংগ্রহ করতে হত! কয়েক বছর আগের কথা – বাড়ি গিয়ে একদিন রাতে নিমো স্টেশনে ভাঁট মারতে গেছি, দেখি ডাউন প্লাটফর্মে রাত আটটার ট্রেনটা ধরবে বলে একজন গাদা-গুচ্ছের পাতা ইত্যাদি গুছাচ্ছে। আমি ভাবলাম শাক টাক ইত্যাদি হবে। কাছে গিয়ে দেখি, ওমা কচি বেলপাতা রেল লাইনের ধারের গাছ গুলো থেকে পেড়ে চটের বস্তায় বাঁধছে জলের ছিটে দিয়ে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এই সব ঝাঁকা ঝাঁকা বেলপাতা কলকাতা যাচ্ছে সেখানকার বাজারে বিক্রী হবে বলে! এই বেলপাতা বিক্রি নিমো থেকে চালু হবার পর আমাদের আর আলাদা করে বেলপাতা পাড়তে হয় না। স্টেশন মাষ্টার আমার জ্যাঠা বলে মুফতে পুজোর জন্য বেলপাতা ওরা দিয়ে যেত টিকিট কাউন্টারে।
কিন্তু ছোটবেলায় তো আমাদের নিজেদেরই গাছে উঠে সংগ্রহ করতে হত এই বেলপাতা! একদিন রেলস্টেশনের পাশে, রেল কোয়ার্টারের পিছনে বেল গাছটায় উঠেছি বেলপাতা পাড়তে। কচি পাতা পাবার জন্য বেশ উঁচুতে উঠে গেছে – একটা ডালে দেখি পাখির বাসা, সেই পাখির বাসা এড়িয়ে হাতটা বাড়িয়েছি কি বেল ডালের ডগাটা ভাঙতে – দেখি সেই পাখির বাসা থেকে একটা সাপ তুলেছে মাথা ছোবল মারবে বলে! বাপের ক্যালানি ছাড়া পৃথিবীতে যে কয়েকটা বাস্তব জিনিসের ভয় খেতাম তখন, তার মধ্যে সাপ অন্যতম। সাপ দেখেই দিয়েছি ঝাঁপ গাছের ডাল থেকে – ভ্যাগিস নীচে কচুবন এবং কাদা-জল ছিল, তাই কিছু না ভেঙে বেঁচে গিয়েছিলাম সেই যাত্রায়। যাঁরা ভাবছেন সাপ কী করছিল সেই গাছে – হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, তিনি পাখির বাসায় গিয়েছিলেন ডিম বা বাচ্ছা খাবার লোভে!
দুর্গা পুজোর নবমীর হোমে আমাদের বাড়িতে হরেক রকমের কাঠ লাগত – অনেক গাছ আজকাল চট করে দেখতে পাওয়াই যায় না। অশোক, পলাশ, যজ্ঞডুমুর ইত্যাদি ইত্যাদি। পলাশ গাছ আমাদের গ্রামে সাকুল্যে ছিল রশিদ চাচার পুকুর পাড়ে এক খানি। রশিদ চাচার সাথে আমাদের ছিল দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্ক। এমনিতে পুজোর জন্য মাটির ঘট, সরা, ধুনুচি ইত্যাদি ডাইরেক্ট কুমোর বাড়ি থেকে আসলেও, বাই চান্স কিছু কম পরে গেলে সেগুলো আসত রশিদ চাচার দোকান থেকেই। রশিদ চাচার বাড়িরই বাইরের দিকের বারান্দায় ছিল চাচার দোকান যা আমরা আজন্ম দেখে আসছি। পুজোর সময় প্রতিবার ঘট কিনতে গেলে চাচা একটাই ফাটা রেকর্ড বাজাত, দ্যাখ বাবারা, রাতের বেলায় যখন তোরা বিসর্জন করতে যাবি, যেন আমার এই বারান্দায় তোদের ওই চকোলেট বা কাদা বোম গুলো ছুঁড়িস না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! চাচার বারান্দায় বেশ ভালো ইকো হত বলে আমাদের সেখানে বোমা ছোঁড়া ম্যান্ডেটরি ছিল। এবার ঘটনা হল আমাদের বাপেরা আমাদের সেই কাজের জন্য ক্যালানি দিতে শুরু করতে, আমাদের অন্য কথাটা বলতে হল বাধ্য হয়ে।
একবার আমরা পলাশ ডাল ভাঙতে গিয়ে দেখলাম, গাছের গোড়ায় এক বিশাল টিবিয়া-ফিবুলা টাইপের কিছু পড়ে আছে। আমরা সাব্যস্ত করলাম যে ইহা হল গরুর হাড়। কেউ বলল যে চাচা পুজোয় ব্যাগড়া দেবার জন্য গাছের ডালেও নাকি গরুর হাড় ঝুলিয়ে রেখেছে। সেটা আমাদের কাছে কোন ব্যাপার ছিল না – সামান্য গরুর হাড় দিতে পুজোর হোম আটকানো যাবে এ আমাদের কল্পনাতেও আসে নি। চাচা প্রথমে গাছে গরুর হাড় ঝুলিয়েছিল নাকি আমরা ওর বারান্দায় বোম প্রথম ছুঁড়েছিলাম, সে এক চিকেন অ্যান্ড এগ সিচ্যুয়েশন। কিন্তু তাতেও কোন প্রবলেম হয় নি কোনদিন – রশিদ চাচা আমাদের গ্রামের এক ইন্টিগ্র্যাল অংশ।
পলাশ ডালের ব্যবস্থা এই ভাবে হয়ে গেলেও যজ্ঞডুমুর গাছের ডাল কালেক্ট করা বেশ চাপের ছিল। কারণ গ্রামের একমাত্র যজ্ঞডুমুর গাছটি ছিল গ্রামের মাঠের পাশের ক্যানেলের ধারে এক ছোট্ট জঙ্গলের মধ্যে পঞ্চমুন্ডি আসনের পাশে। যাঁরা জানেন না তাঁদের বলে রাখি, পঞ্চমুন্ডি আসন নাকি তান্ত্রিক মতে বিশাল পাওয়ারফুল জিনিস – এই আসনের পাশে যাওয়াও চাপ, আর বসা তো দূরের কথা! পঞ্চমুন্ডি আসনে বসতে এলেম লাগে। বুঝতেই পারছেন নাম শুনে যে পাঁচটা মুন্ডু মাটিতে পুঁতে তার উপরে বসে তন্ত্র-মন্ত্র করা। কিসের কিসের মু্ণডু? একটু রিভিসন দিয়ে নেওয়া যাক – ১) চণ্ডালের মাথা, ২) বিষধর সাপের মাথা, ৩) শেয়াল অথবা বেজির মাথা, ৪) হনুমানের মাথা, এবং ৫) অপঘাতে অর্থাৎ কোনো দুর্ঘটনায় মৃত মানুষের মাথা। কেন এই মাথাগুলোই সিলেক্টড হয়েছে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, নিগূঢ়ানন্দকে কনসাল্ট করুন।
এখনো বেঁচে বর্তে আছি পঞ্চমুন্ডি আসনের কনট্যাক্টে আসার পরেও। তবে সত্যি কথা বলতে কি ওই নদীর ধারে যজ্ঞডুমুর গাছ আনতে গিয়ে পঞ্চমুন্ডি আসনের থেকেও আমার বেশি ভয় লাগতো সাপের। “গা ছমছম - কি হয় কি হয়” বাংলা সুপার হিট গান গাইতে গাইতে সেই জঙ্গলে – সাথে আর একজন থাকা মাষ্ট ছিল, একা একা কদাপি নয়। এই ভাবে এই গাছের ডালও সংগ্রহ হয়ে গেল। আমাদের গ্রামে অশোক গাছ ছিল না – ফলে তার গল্প স্থান এখানে নয়।
রইল বাকি আকন্দ গাছ – শিব পুজোর মত না হলেও আকন্দ ফুল বা গাছ দুর্গা পুজোতেও লাগে – কিন্তু তাবলে এমন পরিমাণে নয় যে তার জন্য বস্তা আর শাবল কাঁধে করে রেললাইনের ধার বরাবর আকন্দ গাছের সন্ধানে বেরুতে হবে! দুর্গা পুজোর সময় আমাদের সাথে আকন্দ গাছের সম্পর্ক ছিল মূলত বাজি বানাবার জন্য। সঠিক কাঠকয়লা বাজি বানানোর ক্ষেত্রে খুবই জরুরী যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানবেন। আর কোন পাগলা নাকি বলেছিল সবচেয়ে ভালো কাঠকয়লা হয় আকন্দ গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে!
এক সময় আমাদের দাদারা লায়েক বয়েসে পৌঁছে ঠিক করল বাড়িতেই বোম বাজি ইত্যাদি বানাতে হবে। আমরা তখন খুবই ছোট। কানেকশন এল নেপালদার বন্ধু অদয়দার চেনা সূত্র ধরে – সেই মাষ্টার-এর সাথে। মাষ্টার নাকি কংগ্রেস জামানায় পেটো বানাতো দুরদার – সি পি এম আমলেও বানাতো, তবে খুব খাতির থাকলে তবেই। আমাদের পুরানো বাড়ির ছাদেই সেই বোম-বাজি বানানোর শুরু। তুবড়ির খোল কেনা আসত কুমোর বাড়ির থেকে – বাকি বোম বানানোর মালমশলা মেমারী বাজারের এদিক ওদিক হতে। সোরা, গন্ধক, অ্যালুমিনিয়াম/লোহা চূড়, স্পাইরো পাউডার ইত্যাদি। তখন অতো রেগুলেশন ছিল না সোরা (পটাশিয়াম নাইট্রেট) বিক্রী নিয়ে। পরে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়, লাইসেন্স ছাড়া বিক্রী করা যাবে না এবং বিক্রী করলেও কতটা পরিমাণে ইত্যাদি। তবে সত্যি কথা বলতে কি সবই চেনাশুনা সার্কেলের জন্য জিনিস মার্কেটে থাকলে এবং বেআইনী না হলে মালমশালা পেতে কোনদিন আসুবিধা হয় নি।
এবার খোঁজ আকন্দ গাছ! তখনকার দিনে সবচেয়ে বেশি আকন্দ গাছ ছিল রেল লাইনের গা বরাবর – নিমো রেললাইনের গা ঘেঁষে রসুলপুরের দিকে এগিয়ে গেলে অনেক আকন্দ গাছ। এবার যাও হাতে শাবল এবং কাঁধে বস্তা নিয়ে সেই আকন্দ গাছের গোড়া খুঁড়তে! বস্তা করে আকন্দ গাছের গোড়া এনে তা ঢালা হত খামারে গর্ত করে তার ভিতর – এর পর আগুন জ্বালিয়ে মাল দাও চাপা দিয়ে। ওই যে অন্তর্ধুম পাতন না কি বলে না! এক সময় আকন্দ গাছ কমে আসতে লাগল – তখন শিফট করা গেল কুল গাছের ডালে! সেই ডাল পুড়িয়ে নাকি ভালো কাঠ কয়লা হয়। কুল ডাল পুড়িয়েও কাঠকয়লা বানিয়েছি দেদার।
আমাদের গ্রামে তখনো বিজলী আসে নি – মিক্সার তো দূরের কথা। সোরা বেঁটে দিত দিদিরা শিল নোড়ায়। রঙ মশলার ঠোঙা বানাতাম তখন কাগজ কেটে আমরা। মাষ্টার মশালার ভাগ ইত্যাদি শিখিয়ে দিয়ে গেল গদা-কাকুকে। আমি ছিলাম গদা-কাকুর এক নম্বর সহকারী – গদা কাকু কয়েক বছর সেই দায়িত্ব নিবার পরেই ব্যবসায় সিফট করে গেল। আর পুজোর সময় ব্যবসা ছেড়ে আসা যায় না – ফলে সেই নাবালক বয়েসে আমার ঘাড়ে এসে পড়ল বোম-বাজী তৈরীর গুরু দায়িত্ব! সেই হিসাবে দেখলে আমি যেই বয়স থেকে বাজি বানাচ্ছি, অনেকে সেই বয়সে বাজিতে হাত দিতে ভয় পায়!
একটা খাতা ছিল আমার – চুপিচুপি অনেক কিছু লেখা, সেই খাতাতেই ফর্মুলা লিখে রাখলাম – বোম-বাজির মশালার ভাগ। যত্ন করে চাবি দেওয়া থাকত সেই খাতা আলমারীতে – ইনফ্যাক্ট আমার পর, মানে আমি দেশ ছাড়ার পর ব্যটন তুলে দেবার জন্য তেমন নির্ভরযোগ্য কাউকে পাই নি – ভায়েরা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। আমার আন্ডারে কাজ করত তারা পুজোর সময় ঠিক আছে, কিন্তু নিজেরা আগ বাড়িয়ে পুজোর অনেক আগে থেকে সব কিছু ঠিক করে রাখা – এই সব পারত না। আমি বিদেশ চলে গেলাম – পুজোর অনেক আগে বাড়ি ফেরা আর সম্ভব হত না। ক্রমশ পুজোর খুব গায়ে গায়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করলাম – অত দেরিতে গিয়ে আর বাজি বানানো সম্ভব নয়। এক সময় বাজি বানানো বন্ধ হয়ে গেল বাড়িতে – আমরা দশমীর দিন বাজি কিনতে যেতে শুরু করলাম আমাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরে গৌরীপুরে – চাচার কাছে। এবারেও যাব পুজোর সময় বাজি। এর কিছু বছর পর চাচার বাজি কারখানায় আগুন লেগে মেয়ে, চাচা নিজে অনেক পুড়ে যায় – তবে সে গল্প অন্য কোন সময়ে।
এখনো পুজোর গল্পে ঢুকতে পারলাম না – প্রাক পুজোর ঘটনা দিয়েই চলছে। তবে সেই গল্পই বা কিভাবে শেষ করি দশকর্মার ব্যাপারটা না ক্লীয়ার করে! দুর্গা পুজোর দশ কর্মার বাজার বিশাল জটিল – আপনারে কেউ সেই দশকর্মার ফর্দ হ্যান্ডেল করে দেখেছেন কি? সাত সমুদ্রের জল, গোচনা থেকে শুরু করে ধুনো-গুগুল, সে এক জমজমাট কেস। সঙ্গের দশকর্মার ফর্দের ছবিটি একবার দেখে নিন।
মেমারী বাজারে আমাদের দশকর্মার দোকান – পুজোর সময় বেজায় ভীড়। শুধু মেমারী থেকে নয়, আশে পাশের এবং অনেক দূর দূর গ্রাম থেকেও দুর্গা পুজোর দশকর্মার বাজার করতে আস্ত বা এখনো আসে আমাদের দোকানে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই দশকর্মার বাজার বছরের পর বছর বংশানুক্রমে চলে আসছে। পুজোর আগে জাষ্ট খবর দিয়ে দেওয়া (এবং এখন ফোন করে দেওয়া) যে দশকর্মা মালটা রেডি করে রাখবেন। যারা দশকর্মা কিনতে আসে আসে তাদের আগের বছরের পুজোর ফর্দ রাখা থাকত – ফলে মাল দিতে অসুবিধা হত না আগের বছরের ফর্দ মিলিয়ে। ক্লাবের বা পরিবারের লোকজন এসে পঞ্চমীর বা ষষ্ঠীর দিন সেই দশকর্মা নিয়ে যেত। ওই দিন তারা বাকি থাকা একটাই কাজ শেষ করত – তা হল মালা আর চাঁদমালা পছন্দ করা। আমাদের মাল রাখার গো-ডাউনে সারি সারি মালা চাঁদমালা ঝোলে – এবার নিজের পছন্দ এবং বাজেট অনুযায়ী চয়েসের ব্যাপার।
যাঁরা জানেন তাঁরা জানেন যে যাকে তাকে দিয়ে দশকর্মার ফর্দ মিলিয়ে মাল দেওয়া যায় না – এত বেশি খুচরো জিনিস যে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আমাদের চাকুরিজীবী বাকি কাকা-জ্যাঠারা এই পুজোর সময় হাত লাগাত দশকর্মা মাল দিতে। বার বার মিলিয়ে পুজোর জিনিস পত্র প্যাক করা হত – বিশাল রেপুটেশন ড্যামেজের ব্যাপার ছিল যদি দেখা যায় ঠিক পুজোর সময় কোন একটা ক্রিটিক্যাল জিনিস দিতে মিস হয়ে গেছে।
আমি নিজে দশকর্মার মাল দিয়েছি কি ভাবছেন? দিয়েছি বৈকি! বহুদিন দিয়েছি টুকটাক – তবে আমি ভার নিতাম খেজুর, কিসমিস, মুড়কি এই গুলো ওজনের। চারিদিকে এই সব বস্তার মাঝে দাঁড়িপাল্লার সামনে বসে আছি – কাকা ওদিকে থেকে হাঁক দিল, “সুকান, দুশো গ্রাম খেজুর যাবে”। তখনো পলিপ্যাক আসে নি বাজারে – আমি কাগজের ঠোঙায় দুশো খেজুর ওজন করলান এবং সাথে দুটো মুখে পুরলাম। তবে এঁটোর ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করবেন না – খেজুর এমনিতেই চ্যাটচ্যাটে বলে পাশে জল রাখা থাকত। এঁটো হাতে কি আর ঠাকুরের জিনিস দেওয়া যায় নাকি! এই সব ব্যাপারে খুব স্ট্রীক্ট রুলস ছিল দোকানে।
তো যাই হোক নিজেদের বাড়ির পুজোয় তো নিজেদের দোকান থেকেই দশকর্মা আসত – এতে চাপ নেই। কিন্তু দুর্গা পুজোর বাকি জিনিস পত্র? গামছা – কাপড়, ফল-মূল, মাটির সরা (ধুনো পোড়াবার) ইত্যাদি ইত্যাদি। কাপড় গামছা আসত সুধীর বস্ত্রালয় থেকে – যুগ যুগ ধরে একই জিনিস চলে আসছে। গামছার ব্যাপারে দুকথা বলে নিই।
পুজোর গামছার প্রধান দুই সমস্যা ছিল তাদের দৈর্ঘ্য এবং ঘনত্বের। সবচেয়ে নিকৃষ্টমানের গামছা সাপ্লাই করা হত পুজোর সময় ব্রাহ্মণদের প্রণামীতে। সেই গামছা প্রায় মসলিনকেও হার মানিয়ে দেয়, অনেকে ভয়ে ভাঁজই খুলত না গামছার, এই যদি ফেঁসে যায়! তবে পুজোতে গামছা এক সিম্বলিক জিনিস ছিল প্রায় – ডাঁই করে রাখা গামছার উপরের কয়েকটায় কিছু সিঁদুর এবং ফুল-গঙ্গা জল পড়ত। তাদের তলার গুলো পুজো শেষ হয়ে গেলে ব্রাক্ষণ ঠাকুর নিজে গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে আসত আমরা যেই দোকান থেকে কিনেছি। পরের বছর আবার সেই গামছা আমরা কিনতাম। রিসাইকেলিং কনসেপ্টের আঁতুরঘর। নন্দ ঠাকুর অনেকবার রিকোয়েষ্ট করেছিল নেপালদাকে আমাদের বাড়ির দুর্গা পূজার সময় এই বলে যে, “নেপাল, বাকি গামছা যাই দিস না কেন, উপরের দিকের তিন চারটে গামছা একটু ভালো দেখে দিস, বাড়িতে ব্যবহার করব”। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সেই গামছা গুলি কোমরে জড়াতে গেলে কোনক্রমে সামনে গিঁট বাঁধা যেত মাত্র – গামছার দুই প্রান্তের ওভারল্যাপ বড়জোর থাকত দুই থেকে তিন মিলিমিটার।
ফলমুল আসত মেমারীর ফলপট্টি থেকে আমাদের দোকানের সামনের ফলের দোকান গুলি থেকে – তাতেও অসুবিধে নেই। মাটির জিনিস পত্র আসত কুমোর বাড়ি থেকে – গরুর গাড়ি করে আগে দিয়ে যেত বাড়িতে পুজোর আগে। পুজোয় দেওয়া মুড়কি, নাড়ু এই সব আলাদা করে বানানো হত বাড়িতে। ছোট বেলায় দেখেছি মা-কাকিমারা যেদিন পুজোর নাড়ু বানানো হবে সেদিন স্নান করে কাচা কাপড় পরে নাড়ু, মুড়কি বানাতে বসত। গাছের নারকেল বসে অসুবিধা নেই – কুড়তেই যা একটু চাপ। অন-অ্যাভারেজ ৩০-৪০ টা নারকেলের নাড়ু হত জাষ্ট আমাদের বাড়িতেই।
আনুষঙ্গিক প্রায় কভার করে এনেছি – এবার ঢোকা যাক মূল পুজোর ভিতরে। দুর্গা পুজো ব্যাপারটাই একটু জটিল – মানে আপনি যদি নিয়ম কানুন মেনে সব করতে চান। আশা করি এটা সবাই স্বীকার করবেন যে বাড়ির পুজোর সাথে বারোয়ারির পুজোর যে হালকা পার্থক্যটা থেকে যায় সেটা ওই ‘নিয়ম’ মেনে পুজো করা নিয়ে। অর্থাৎ বারোয়ারি পুজোয় জাঁকজমক বা হই হুল্লোড় করতে গিয়ে একটু সময়ের এদিক ওদিকে বা নিয়ম-রীতির এদিক ওদিকে হলেও বাড়ির পুজোয় সেটা হবার সুযোগ নেই। বাড়ির পুজোয় সবই একদম ঘড়ি ধরে পাঁজির টাইম মেনে। ঠাকুমা, দাদু সহ কাকিমা, জ্যেঠিমা, পিসিমা এদের অতন্দ্র পাহারায় পান থেকে চুন খসবার উপায় ছিল না! এমন হতে পারে যে বামুন মন্ত্র ভুলে গেছে, কিন্তু ঘোষ বাড়ির পাবলিক পাশ থেকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
আমার নিজের সাথে পুজোর খুব ডিটেলসের ব্যাপার গুলোর যোগ ছিল না খুব একটা – কিন্তু অমৃতা এই সব নিয়ে মাথা ঘামাত এবং তার সাথে বাড়ির প্রায় সবাই। ফলতঃ নিজের অজান্তেই পুজো সম্পর্কিত জ্ঞান ঢুকে গেছে মাথার মধ্যে।
আচ্ছা একটা ব্যাপার বলে নিই – আমরা নিতান্তই মধ্যবিত্ত লোক। জলসাঘরের ছবি বিশ্বাস বা প্রাচীন জমিদার বংশ কোনটাই নয় আমাদের ক্ষেত্রে। দাদুরা গ্রামের মধ্যে সম্পন্ন পরিবারের মত ছিল বলে প্রায় ৭০ বছর আগে এই বাড়ির পুজো চালু করে। বাড়ির একপাশে দুর্গা দালান – সেখানেই পুজো হয়। ঠাকুরের মিস্ত্রী, বামুন, ঢাকি, কামার, নাপিত সবই বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। ঠাকুর বানানোর মিস্ত্রী দাদুদের আমলে ছিল মহানন্দ – এখন তার ছেলে প্রাতীক-কা এবং তার ছেলে আমাদের ঠাকুর করে। আমি শিওর যে এখনকার দিনে অন্য জায়গায় ঠাকুর করতে গেলে আমাদের বাড়িতে যা টাকা পাওয়া যায় তার থেকে অনেক বেশি পাবে। কিন্তু টাকার টানে মনে হয় না সেই ঠাকুর করতে আসে – ভালোবাসা কিছু একটা থেকে যায়। সেই একই কথা বামুন, – কামার সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ব্যতিক্রম কি আর নেই? আমাদের পুরানো ঢাকি কেনা-দা যখন অবসর নিল, তার ছেলে দু বছর বাজালো – কিন্তু তার পরের বছর বলল আমি আর বাজাবো না কলকাতার দিকে বাজাতে গেলে যা টাকা দেয় তা না দিলে! এবার কলকাতার কোটি কোটি টাকার বারোয়ারির পুজোর সাথে প্রতিযোগীতা করার ক্ষমতা তো আর আমাদের বাড়ির পুজোর নেই। ফলত সে কলকাতা বাজাতে গেল ঢাক – আমাদের খুঁজে নিতে হল অন্য একজনকে।
আমাদের বাড়ির ঠাকুরের বোধন হয় পঞ্চমীর দিন সন্ধ্যেবেলা – ষষ্ঠির দিন সারা দিন কী সব এটা ওটা রীতি মেনে পুজো হয়। আর আমাদের কাছে আসল পুজো শুরু হত সপ্তমীর দিন থেকে। সপ্তমীর দিন ভোর থেকে সারা বাড়ি জুড়ে হইহই – আগের দিন রাতে পাঁজি দেখে বামুন ঠাকুর জানিয়ে দিয়েছে এই সময় থেকে এই সময়ের মধ্যে ঘট আনতে হবে। পুকুরে গিয়ে কলা বউ স্নান করিয়ে ঘট নিয়ে আসা। আমাদের বাড়ি থেকে সেই পুকুরের দূরত্ব প্রায় ১ কিলো মিটারের মত – গ্রামের দুই প্রান্তে দুই জায়গা। তো সকাল সকাল স্নান ইত্যাদি সেরে নতুন জামা কাপড় পরে সবাই ঘট আনতে চললাম। শান বাঁধানো পুকুরের চত্ত্বরে বসে অনেক ক্ষণ ধরে পুজো হত – বিশাল নিয়ম কানুন মেনে। বামুনের হাতে সঠিক জিনিস যুগিয়ে দেওয়ার জন্য এক্সপার্ট লোক চাই। কারণ বামুন দাদু পুজো করতে করতে মুখ খুলে বলবে না যে এটা দাও – ওটা দাও! তুলনা করতে পারেন সেই অপারেশন থিয়েটারের সাথে – ডাক্তারের ঠিক কোন ছুরি কাচিঁ চাই, সেটা অভিজ্ঞ নার্স-কে বুঝে নিতে হবে।
নীচের ছবিতে সপ্তমীর দিন সকালে পুকুর পাড়ে গিয়ে কলা বউ-য়ের পুজো হচ্ছে আর পাশে রাখা আছে মা-দুর্গার ঘট।
সেই কাজটি আমাদের বাড়িতে প্রায় চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে করে এসেছিলেন মাষ্টার জ্যেঠু। মাষ্টার জ্যাঠুর বাড়ি বর্ধমান শহর থেকে অনেকটা দূরত্ব বাসে করে গিয়ে। বহুকাল আগে আমাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে চাকুরি পেয়ে মাষ্টারি করতে আসেন গুরুপদ মন্ডল। রোজ যাতায়াত করা তো আর সম্ভব ছিল না নিজের বাড়ি থেকে আর গ্রামে বাড়ি ভাড়াও কোথায় পাওয়া যাবে! দাদুরা বলেছিলেন, “মাষ্টার কোথায় আর যাবে, আমাদের বাড়িতেই থেকে যাও – ছেলে গুলোকে একটু পড়িও”। তো সেই থেকে গিয়েছিলেন মাষ্টারমশাই – এর মধ্যে কোন আর্থিক ব্যাপার ছিল না। বাড়ির একজনা বলেই গণ্য করা হত উনাকে। মাষ্টারমশাই অবসর নেবার পর নিজের বাড়িতে ফিরে যান – যাতায়াত তো লেগেই থাকত বলাই বাহুল্য এবং পুজোর ষষ্ঠীর দিন তিনি আসতেন। এই ভাবে প্রায় তাঁর সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত চলল – কিন্তু তার পর শরীর আর দিল না তাঁর – ফলে আমাদের বাড়ির গদা-কাকুকে শিখে নিতে হল সেই কলা বৌ স্নান সহ বাকি রীতিনীতি। একটা ট্রাডিশন ছিল এবং এখনো আছে – সেই কলা বৌ পুজো করতে গিয়ে পুকুর ঘাটে নাকি ‘শঙ্খচিল’ পাখি দেখতে হয়! আমরা ছোটাবেলায় সত্যি দেখেছি – তবে এখন মনে হয় কল্পিত শঙ্খচিল দিয়েই কাজ সারা হয় – সেই পাখি আর কোথায়!
মনে নেই ঠিক কবে থেকে আমার ভার পড়ল মাদুর্গার ঘটটি সেই পুকুর ঘাট থেকে আনা। এটা সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস ব্যাপার – এবং বহুদিন আমি পালন করে এসেছি। আস্তে আস্তে অন্য ভাইদের উপর ভার ছেড়ে দেওয়া হয় অনেক দিন পরে।
পুকুর ধারে পুজোর পর কলা বউ এবং ঘট সমেত আমরা বাড়ি ফিরতাম প্রায় শোভাযাত্রা করে – বাড়ির বড় বৌ-য়ের উপর ভার পড়ত যে প্রধান পুজোর ডালিটি বয়ে আনা। অমৃতাও অনেকদিন সেই দায়িত্ব পালন করেছে নিয়মমাফিক। বাড়ি ফিরে সেই কলাবউকে উঠানে শায়িত করে পুজো করার পর গণেশের পাশে ঠাঁই দেওয়া হত।
অনেকটা লেখা হয়ে গেল – তবুও কেবল সপ্তমীর দিন সকাল পর্যন্তই কভার হল মাত্র। সপ্তমীর দিন বাড়িতে ঠাকুরের সামনে ঘট প্রতিষ্ঠার ছবি দিয়ে আজকের মত ইতি। অন্যে পর্বে টানতে হবে বাকি গল্প, আমি নিরুপায়।
অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ অপরাজিতা ও রঞ্জনদা - লেখার চেষ্টা করব।
আর যারা পড়লেন তাঁদেরও ধন্যবাদ