সে বহু হাজার বছর আগের কথা – মানুষ তখন সবে আগুনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে এনে রান্না-বান্না শিখেছে। স্বাভাবিক ভাবেই যাদের শারীরিক শক্তি বেশী তারা যেত শিকারে বা অন্য খাদ্যের খোঁজে। একদিন সেই এক বাহুবলি, ধরা যাক তার নাম ‘হরিণ-ঘাতক’ খুব ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যেবেলা শিকার করে ফিরল – হরিণ পায় নি সেদিন, মুড বিশাল খারাপ – তার উপর ছুটে ছুটে হয়রান। রান্না করে খাব তেমন আর উৎসাহ নেই। ওদিকে আরেক পুরুষ, যার নাম ‘বরাহ-ঘাতক’ সে একটু আগে ফিরেছে সফল ভাবে শিকার করে। কিন্তু শূয়োর-টাকে রোষ্ট করার এনার্জী পাচ্ছে না, বসে বসে ল্যাদ খাচ্ছে।
সামনে এক মেয়ে বেশ আয়েশ করে রান্না করছিল খাবে বলে। ওদিকে হরিণ-ঘাতকের এত বেশী খিদে পেয়ে গেছে যে সে মেয়েটির কাছে এসে তার রান্না করা জিনিস ছিনিয়ে নিতে চাইল। বরাহ-ঘাতক সেটা দেখতে পেয়ে মাথায় একটা বুদ্ধি খাটাল। মেয়েটির কাছে এসে হরিণ-ঘাতকের সাথে যুদ্ধে লিপ্তে হল এবং আঁচড়-টাঁচড় খেয়ে এবং ঈষৎ ঘাম এবং রক্ত ঝড়িয়ে তাকে ভাগালো। মেয়েটি তো খুব ইমপ্রেসড্ - কাছে এসে গদগদ ভাবে কৃতজ্ঞতা জানেতে গেল বরাহ-ঘাতককে। আর ঠিক তক্ষুণি বৃটিশ চালটি দিল বরাহ-ঘাতক, বলল, “দেখো, আজ না হয় আমি বাঁচালাম তোমাকে। কিন্তু কাল তো আবার আসবে হরিণ-ঘাতক! তখন কে যুদ্ধ করবে? আমিও রোজ শিকার করে এসে নিজে রাঁধবো না তোমাকে পাহারা দেব।! তার থেকে তুমি যদি আমার খাবারটা রোজ রান্না করে দাও, আমি বিনিময়ে তোমাকে শিকারের ভাগ এবং সুরক্ষা দেব”। মেয়েটিও দেখল এতো বেশ ভালো প্রস্তাব – উইন-উইন সিচ্যুয়েশন। রাজী হয়ে গেল সেই প্রস্তাবে।
এই হল গল্প – তো এই নিয়ে আপনি হ্যাজানো গাদা গাদা জার্ণাল পেপার-বই নিজে খুঁজে পড়ে নিতে পারেন, বা আমাকে বললে আমি রেফারেন্স দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু ছেলেদের জন্য মেয়েদের রান্না শুরু করার গল্পটা এতটাই সোজা! ওই যে অ্যানথ্রোপলজিষ্ট নাকি বলে না, তাঁদের তো অনেকে আবার দাবী করেছেন মানুষের মধ্যে যখন পরিবার প্রথা, গোষ্টীবদ্ধ ভাবে বাঁচা ইত্যাদি শুরু হল – তখন ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে বন্ধনের ক্যাটালিষ্ট হিসাবে কাজ করেছিল শুধু বিপরীত লিঙ্গের যৌন আকর্ষণই নয়, তার সাথে জুড়ে ছিল খ্যাদের সুরক্ষা এবং দুবেলা ভরপেট খেতে পাবার গ্যারান্টির ব্যাপারটাও। ইনফ্যাক্ট আরো তলিয়ে দেখতে গেলে, যৌন আকাঙ্খা পূরণের থেকেও বেশী জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছিল আক্ষরিক অর্থে নিজের পেট ভরানো।
মেয়েরা রেঁধেই যাচ্ছে তারপর থেকে – একসময় যা শুরু হয়েছিল দুজনার জন্য উইন-উইন সমঝোতা দিয়ে, তা কালক্রমে এসে দাঁড়ালো ‘সামাজিক নিয়মে’ এবং তার আগুপিছু ট্র্যাডিশনের দোহাই-য়ে। কম কষ্টে পেট ভরাতে কে না আর চায়! তাই ছেলেরা প্রবল চেষ্টা করে যেতে লাগলো তাদের আন্ডারে যা পাওয়ার আছে তার প্রয়োগ করার যাতে করে দুজনে একসাথে অফিস থেকে ফিরে সে নিজে যাবে ফুটবল খেলতে বা বাইরের বারান্দায় বসে সিগারেট ফুঁকবে – আর একই সাথে ফেরা মেয়েটি জামা কাপড় ছেড়ে সোজা কিচেনে।
এ সব চেনা গল্প, নতুন কিছু নয়। প্রচুর লেখা লিখি হয়েছে এবং হয়ে চলেছে এই নিয়ে – ক্রমে ক্রমে মানুষ তলিয়ে দেখতে শুরু করেছে আগেকার দিনের ওই অন্য কোন বলশালী ছেলের খাবার কেড়ে নেবার ভয়টা প্রতিস্থাপিত হয়েছে অর্থনৈতিক পরাধীনতার ভয় দ্বারা। যৌনতার সাথে বহুযুগ ধরেই মিশেছিল খাদ্য আর সেই হিসাবে প্রায় নবীন জুড়ে যাওয়া তাদের সাথে অর্থনীতির। আজকের দিনের এদের সম্পর্ক এতই জড়িয়ে যে খুব কষ্ট করে আলাদা করতে হবে যদি করতে চান আর কি। আর যদি আগে খেয়াল করে না থাকেন, তাহলে এটুকু মনে রেখে দিন যে খাদ্যের সাথে যৌনতা অনেক জীবের লাইফে জুড়ে থাকলেও, মানুষই একমাত্র চীজ যাদের যৌন সম্পর্কের সাথে অর্থনীতি জুড়ে থাকে।
যদিও আমি এই গল্প শুরু করেছি “হাজার-হাজার” বছর আগে বলে, কিন্তু এই যে রান্না-বান্নার ঝামেলাটা এটা ঠিক কতদিন আগে শুরু হয়েছিল? বলাই বাহুল্য আর বাকি এমন অনেক জিনিসের মত এই জিনিসেরও সঠিক মিমাংসা নেই। কোন কোন আর্কিওলজিষ্ট বলেন যে আগুনের সাহায্যে রান্না এটা কিন্তু নিতান্তই নতুন – মাত্র হাজার চল্লিশ বছর আগে এর শুরু। মানুষ তখন এত মাডার্ণ হয়ে গেছে যে রান্না করা খাবার খেয়ে গুহাচিত্র আঁকছে! অন্য একদল বলছে, না ভাই তোমরা সময়টা আন্ডার এষ্টিমেট করছ , নয় নয় করে প্রায় পাঁচ লক্ষ্ বছর তো হয়েছেই যখন থেকে মানুষ আগুন দিয়ে রান্না করছে! যাই হোক এই বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা যায় নি, কিন্তু দলে ভারী গবেষকরা মনে করেন যে যবে থেকে মানুষ আগুন-কে নিজের কন্ট্রোলে এনে ইচ্ছামত ব্যবহার শুরু করেছিল, তবে থেকেই রান্না-বান্নাও শুরু – আর সেই সময়টা প্রায় দুই লক্ষ বছর। মানে প্রায় দুই-লক্ষ বছর ধরে মেয়েরা হেঁসেল ঠেলছে!
আচ্ছা তাহলে মেয়েদের হেঁসেল ঠ্যালার গল্প কি সারা পৃথিবী জুড়েই এক, এমন কি আজকের দিনেও? পাপুয়া নিউ গিনি-র কাছে একটা দ্বীপ আছে যার নাম ‘ভানাটিনাই’ – তো এই দ্বীপটা অনেক অ্যান্থ্রোপলজিষ্ট-দের আগ্রহের বিষয় হয়েছে ইদানিং কালে কারণ এদের সমাজে মেয়েদের যে সম্মান তা নাকি পৃথিবীতে বিরল – এমনকি চরম আধুনিক পশ্চিমা সমাজেও। এদের সমাজে এমন কোন ধারণার বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায় নি যেখান থেকে পুরুষেরা মেয়েদের থেকে শ্রেষ্ঠ তার ইঙ্গিত পায়। মেয়ে এবং ছেলেরা সমভাবেই সব কর্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে পারে – তা সে উৎসবের আয়োজনই হোক, বা নৌকা নিয়ে শিকারে বেরোনোই হোক – বা পশুপালন, চাষআবাদ, যুদ্ধ, জমির উত্তরাধিকার, কোথায় বাড়ি বসতি গড়ে তোলা হবে তার সিদ্ধান্ত, কি বাণিজ্য হবে তা ঠিক করা – সবেতেই। মহিলা এবং পুরুষ যে কেউ নিজেদের দক্ষতায় সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা লাভ করতে পারত। গার্হস্থ্য হিংসা এবং মারপিট প্রায় নেই বললেই চলে – নিজেদের কাজের ব্যালেন্স নিয়েও খুব বোঝাপড়া সেখানকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে। কে কেমন ভাবে সময় কাটাবে তা ঠিক করার স্বাধীনতা আছে সবার – মানে যাকে বলে এক স্বর্গরাজ্য লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে।
বাকি অনেক কিছু কাজ ভাগাভাগি করে নেবার কথা বা নিজেরা বেছে নেবার স্বাধীনতার কথা বললেও, বাড়িতে পারিবারিক রান্না বান্না কে করত তা কিছু এখনো বলি নি! যদি জানতে চাই এবার - আপনার কি মনে হয় সেই ভানাটিনাই সমাজে বাড়ির রান্না কে করত! এখানেই হালকা চমক – এতো কিছু দিকে এগিয়ে থেকেও, প্রায় সবকিছুতেই সম অধিকার পেলেও, বাড়ির রান্না কিন্তু সেই মেয়েরাই করত ভানাটিনাই সমাজে! এর একটা মূল কারণ ছিল সেই সমাজেও রান্না বিষয়টিকে একটা কম মর্যাদার কাজ বলে দাগিয়ে রাখা হয়েছিল! শুধু রান্না নয় – বাসন পত্র ধোওয়া, ঘর মোছা ইত্যাদি কাজও মেয়েরাই করত কেবল কারণ ছেলেরা এই কাজগুলো তাদের মর্যাদার উপযুক্ত বলে মনে করত না, এবং তাই করতেও চাইত না! গল্প সেই একই – ভানাটিনাই এ যে গবেষকরা গিয়েছিলেন ওদের ব্যাপার স্যাপার কাছ থেকে দেখতে তাদের কাছে মেয়েরা নালিশ করেছিল, “এই দ্যাখো না, আমরা সারাদিন মাঠ থেকে খেটে এসে বাড়িতে জল তুলব, রান্না করব, ছেলে-মেয়েদের দেখব – আর বাবুরা বাইরের বারান্দায় বা উঠোনে বসে পান চেবাতে চেবাতে গুলতানি করবে!” তো গবেষক গিয়ে ছেলেদের জিজ্ঞেস করল তোমরা রান্না কর না কেন? সমস্বরে জবাব, “ওটা মেয়েদের কাজ”! গবেষক জিজ্ঞেসা করলেন, তোমরা রান্না করলে ক্ষতি কি? জবাব, “পাগল নাকি? বেশ তো দিন চলছে – মেয়েরা রান্না করছে, খামোকা রান্না করতে যাব কেন?”
তো এই যদি সবচেয়ে ‘সাম্য’ সমাজের নিদর্শন হয়, তাহলে বাকি পৃথিবী জুড়ে যে একই ব্যাপার দেখা যাবে সেটা মনে হয় বলাই বাহুল্য! ১৯৭৩ সাল নাগাদ একটা সমীক্ষা চালিয়েছিলেন গবেষকরা যেখানে তাঁরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ১৮৫টি ভিন্ন সংস্কৃতির/সমাজের মধ্যে ৫০টি ‘কাজ’ কিভাবে সম্পন্ন করা হয় তা দেখতে চেয়েছিলেন – মানে ওই ৫০টি কাজের বিভাজন ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে কিভাবে হয়েছে সেই সব বোঝার চেষ্টা করা আর কি। কি দেখা গেল? সেই সমীক্ষা থেকে গেল যে শতকরা ৯৮ ভাগ সমাজে বাড়ির রান্না-বান্না কেবল মেয়েরাই করে! ছেলেরা যে কিছুই রাঁধে না তা নয়, তবে তাদের রান্না টাইম পাসের মত – বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেল ছেলেরা মাংস রান্না করতে পছন্দ করে! ব্যাপারটা চেনা জানা ঠেকছে? বারবিকিউ এর কথা মনে আসছে বাগানে? মাত্র তিনটি সমাজে দেখা গিয়েছিল ছেলে এবং মেয়েরা ভাগাভাগি বা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ছেলেরাই বাড়ির রান্না করে থাকে।
কিন্তু এখানেও একটা হালকা টুইষ্ট আছে – ওই তিনটি সমাজকে আর একটু ঘেঁটে দেখা গেল যে এদের রান্নার ভাগটা দুই প্রকারের – বাড়ির পারিবারিক রান্না, যেটা করে মেয়েরা, আর সামাজিক (কমিউনিটি) রান্না, যেটা মূলত করে ছেলেরা! তাহলে এখানেও খুব বেশী সুখের সংবাদ নেই। সে তো আমাদের এখানেও সামাজিক রান্না ছেলেরা করে ছেলেরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে! আরো একটু তলিয়ে দেখা গেল ওই তিন সমাজের ছেলেদের রান্নার কেসটা কোন মেয়েদের সম্মান করা বা কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চিন্তা – এই সব থেকে উদ্ভূত নয়। সামোয়ান, মারকিউসানস এবং ট্রুকেসি এই তিন সমাজই খুব প্রত্যন্ত দ্বীপে বসবাস করে পাপুয়া নিউ গিনির কাছাকাছি। এদের নিজেদের মধ্যে কোন সংযোগ না থাকলেও, এটা ব্যাপারে এদের মধ্যে মিল ছিল খুব। আমাদের যেমন ভাত, এদের তেমন প্রধান খাদ্য ছিল ‘কাঁঠাল’ (ব্রেডফ্রুট)। ফুটবলের মত সাইজের এই কাঁঠাল গুলির ভিতরে শাঁসটা বের করলে প্রচুর হ্যাপা পোয়াতে হত এবং কাজটা খুব পরিশ্রম সাপেক্ষ ছিল – অগত্যা খেয়ে পরে বাঁচার জন্য ছেলেদের মাঠে নামতে হয়েছিল। পাড়ার একটা জায়গাতে আগুন জ্বেলে এই ফল রান্না করার আয়োজন হত – কাঁঠালকে ছাড়াও, ছোট ছোট করে কাট, তারপর তাকে সিদ্ধ কর – এই সব পাড়ার সব ছেলেরা মিলে করত।
তাহলে কি এটা বলা যায় যে মেয়েরা রান্না না করে দিলে ছেলেরা না খেয়ে থাকত? ব্যাপারটা মোটেই তা নয় – ছেলেরা বিলকুল রান্না করতে পারে, নিজের কাজ চালিয়ে নেবার মত তো বটেই! সেই হাজার হাজার বছর আগে থেকেই যেখা গেছে যে ছেলেরা যখন শিকারে গিয়ে বাড়ি থেকে বহু দিন বহু দূরে থাকত – তখন তো নিজেরাই রেঁধে খেত! সেটাই স্বাভাবিক ছিল – কিন্তু পাবলিকই বাড়ি ফিরেই ঘোড়া দেখে খোঁড়া! মেয়েদেরই রান্না করে খাবার থালাটা এগিয়ে দিতে হবে ছেলেকে! শুধু হাজার হাজার বছর আগেই বা কেন? আজকের আধুনিক যুগে প্রচুর প্রচুর ছেলে প্রফেশন্যাল ভাবে রাঁধুনী হয়ে উপার্জন করছে, আর এটা আমরা তো প্রায়ই উদাহরণ দিই যে পৃথিবীর বেশীর ভাগ পরিচিত শেফ্-রা পুরুষ! এছাড়াও আজকালকার শহুরে সমাজে যেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনাই চাকুরী করছে, সেখানে রান্নার দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়াটাও খুবই প্রচলিত আজকাল। কিন্তু ওই যে সামাজিক স্বীকৃত স্টেটমেন্ট বা আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে থাকা ধারণা “পরিবারের রান্না মেয়েদের কাজ” এটা সারা পৃথিবী জুড়ে খুব অদ্ভূত ভাবে এক!
বেশীর ভাগ সমাজে এই যে বাড়ির মেয়েদের রেঁধে খাওয়াতে হবে পুরুষকে এই ধারণার সাথে কোন সামঞ্জস্য নেই দুজনার কে কতটা অন্য কাজ করছে বা কে কতটা খাচ্ছে। আগেকার দিনে পুরুষেরা সারাদিন শিকারে গেল, ফিরে এসে বৌয়ের রাঁধা খাবার খেল। আবার দেখা গেছে যদি পুরো পরিবার একসাথে শিকারে যায় সে ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ সময় মেয়েটি একটু আগে ফিরে এসে রান্না চাপাবে, ছেলেটি পরে ফিরে খাবে। এইভাবে বহু যুগ ধরে বাড়ি ফিরে রান্না করা খাবার পাওয়ার অভ্যাস এমন হয়ে গেছে যে আমরা সেটাকে অজান্তেই ছেলেদের ‘অধিকার’ বলে ধরে নিতে শুরু করেছি। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভাষার বিবর্তনও এই ধরনার মধ্যে দিয়েই হয়েছে। যেমন ইংরাজী ভাষায় ‘লেডি’ শব্দটা এসেছে পুরানো ইংরাজী শব্দ hlaefdige থেকে যার মানে যে রুটি বানায় (bread kneader), আর লর্ড এসেছে hlaefweard থেকে যার অর্থ রুটির জিম্মাদার (bread keeper)।
আচ্ছা যদি এমন হয় যে মেয়েটাই বেশী কাজ করছে, বেশীর ভাগ খাবার যোগাড় করছে – তাহলে সে কি দাবী করতে পারত না যে বাড়ির পুরুষটাকে তার জন্য রান্না করে দিতে হবে? উহঁ, সেটাও অত সোজা ছিল না আগেকার সমাজে। যেমন অষ্ট্রেলিয়ার উত্তরে তিউই প্রজাতির ব্যাপারটা – এদের সমাজে মেয়েরাই বেশীর ভাগ খাবার যোগাড় করে, বাড়ির কাজকর্ম করে আবার বাড়ি ফিরে রান্না-ও করে। এক এক জন পুরুষের প্রায় ২০ থেকে ২৫টা করে বউ থাকত এবং সবাই একই বাড়িতে বসবাস। পুরুষটি মন চাইলে খুব কম কিছু শিকার করে আনত – ওই টিকটিকি গিরগিটি টাইপের। এমন এক পুরুষ তো বলেই দিল, “মাত্র একটা বা দুটো বউ নিয়ে ঘর করলে আমি তো না খেতে পেয়েই মরে যাব!” এই তিউই সমাজে যার বাড়িতে যত বেশী খাবার থাকবে, যে যত বেশী উৎসবের আয়োজন করে লোককে খাওয়াতে পারবে, তার প্রতিপত্তি এবং সম্মান বেশী হবে সমাজে। তাই পুরুষটি বউ-দের উপর ডিপেন্ড করত বেশি খাবার বাড়িতে জমা করতে এবং নিজেকে মাথা হিসাবে দেখাতে। এই ক্ষেত্রে মেয়েরা কিন্তু অর্থনৈতিক দিক থেকে সবলম্বী ছিল, এবং এমনকি তাদের জোগাড় করা খাবারের উপর নির্ভর করত পুরুষটির স্ট্যাটাস। তাহলে কি মেয়েগুলি ভালো ভাবে যন্তে থাকত স্বামীর দ্বারা? মোটেও নয়, বরং উলটে মার খেত স্বামীর কাছে প্রায়শয়ই! কি বলবেন আপনি এবার? এসব ডিপ-রুটেড ব্যাপার স্যাপার – আমার আয়ত্বের বাইরে।
অবশ্য আমার স্টেটমেন্ট একটু রেক্টিফাই করে নিতে হবে – আমি নিজের জীবনেও, এমনকি ভারতের বাইরেও অনেক বঙ্গ সন্তান দেখেছি যেনারা জলটি গড়িয়ে পর্যন্ত খান নি কোনদিন! এরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বাইরে এসেছেন পরিবারের সাথে। যদি তাঁরা বাইরে পড়াশোনা করতেন বা বাইরে একা একা চাকুরী করতেন, তাহলে হয়ত তাঁদের সেই লাক্সারীটা থাকত না – রান্না শিখতে হতই, কিন্তু তা যখন হয় নি, নবাবী চালে এগিয়ে দেওয়া চা-য়ে চুমুক দিতে কে আর আটকাচ্ছে!!
এর বেশী জটিলতায় আমি ঢুকতে চাইছি না – কারণ এই নিয়েও অনেক লেখা পত্র হয়েছে। এক বিখ্যাত গবেষক তো দাবিই করেছেন “পরিবারের ভিতর এই যে মেয়েদের রান্না করার রীতি, তা মেয়েদের দাসে পরিণত করেছে”। অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন যে এই যে মেয়েরা বাড়িতে রাঁধবে এবং ছেলেরা বাইরে কাজ করবে এটা একটা পারস্পরিক বোঝাপড়া। এবং এতে করেই নাকি পুরুষের হাতে বেশী সময় থাকে পরিবারের জন্য সম্পদ যোগাড় করার। এর মধ্যে কিছু যুক্তি তো আছেই, কিন্তু ফাঁক ফোকড়ও আছে যুক্তিতে, তাই আরেক গবেষক বলছেন, “বাড়ির ভিতর মেয়েদের শ্রম অবশ্যই সাহায্য করেছে ছেলেদের বেশী সম্পদ উৎপাদন করতে, আর সেই দিক থেকে দেখতে গেলে মেয়েরা সমাজের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু একই ভাবে ভাবলে সমাজে ঘোড়াদের গুরুত্বও তো তাই! --- মিল একটাই, ঘোড়ারা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন নয়, ঠিক যেমন মেয়েরা”! আর এটাই বেশীর ভাগ সমস্যার মূলে।
আগে যেমন বলেছি আমাদের বিবর্তনে খাদ্য সুরক্ষা বেশির ভাগ সময়েই যৌনতার থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখনো অনেক প্রত্যন্ত প্রজাতির মধ্যে সেই ছোঁয়ার দেখা পাওয়া যায়। অনেক সমাজ আছে যেখানে বিবাহিত মেয়ের একাধিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন বিশেষ কোন নিন্দের চোখে দেখা হত না। বিয়ের আগে অনেক মেয়ের অধিকার ছিল নিজের ভাই ছাড়া সমাজের বাকি অবিবাহিত ছেলের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে – কিন্তু কোন মেয়ে যদি কোন বিশেষ পুরুষকে খাদ্য প্রদান করত, তাহলে বুঝে নিতে হত যে তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কে আছে। মানে আমাদের আধুনিক প্রবাদ বাক্যটা আগে সত্যি ছিল “ছেলেদের হৃদয়ের পৌঁছবার সবচেয়ে সহজ পথ হল তার পাকস্থলীর মধ্যে দিয়ে”!
আধুনিক যুগেও আমেরিকাতে দেখা গেছে বিবাহের পর ছেলে এবং মেয়েদের জীবন প্রভাবিত হয়, কিন্তু ভিন্ন ভাবে। বিয়ের পর মেয়েরা বেশি সময় কাজ করতে শুরু করে কারণ তাদের এবার বাড়ির কাজও সারতে হচ্ছে – কিন্তু ছেলেরা বিয়ের আগে যা বাড়ির কাজ করত সেটুকুই করতে থাকে, ছেলেদের কাজের পরিমাণ বাড়ে না! ভিক্টোরিয়ান ইংলান্ডেও একই কেস দেখা গেছে। এক পুরুষ গবেষক এটা দাবী করেছিলেন যে মেয়েদের মধ্যে ‘অর্গানাইজেশন্যাল’ দক্ষতা বেশী, এবং স্বাভাবিক ভাবেই তাদের পক্ষে সম্ভব হয় বিয়ের পর বেশী কার অ্যাডজাষ্ট করে নেওয়া। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে মেয়েরা ছেলেদের থেকে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু এ সত্ত্বেও অন্য গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে মেয়েদের ঠিক ঠাক সম্মান দেওয়া হত না, অন্তত যতটা পাওয়া স্বাভাবিক ছিল, সেটুকুও না। ছেলেরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করত মেয়েদের দমিয়ে রাখার জন্য। আর এই দমিয়ে রাখার ব্যাপারটা শুধু ইংল্যান্ড নয় বরং আরো বাকি সব শিল্প অপ্রধান সমাজের ক্ষেত্রেই সত্যি। তাইতো আমরা দেখেছি সেই ভানাটিনাই সমাজের মেয়েরাও, যারা ছেলেদের উপর নির্ভরশীল ছিল না কোন দিক থেকেই, তারাও বাড়ি ফিরে রাঁধতে বসত ছেলেদের জন্য!
ছেলেদের মধ্যে পারিবারিক রান্নার প্রচলন যে আগের থেকে বেড়েছে সেটা আর একটা গবেষণায় দেখা যায় যেটা চালানো হয়েছিল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে চারটি নর্ডিক দেশগুলি ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে আর সুইডেনে। কিন্তু মানব সভ্যতার রান্না ইতিহাস যেখানে কমপক্ষে দুই লক্ষ বছর – সেখানে মাত্র বিগত তিরিশ-চল্লিশ বছর ঘেঁটে দেখাতে হচ্ছে, তাও খুব কম অনুপাতে যে ছেলেরা বাড়ির জন্য রান্না করছে – এর থেকেই বুঝতে পারছেন সমাজ কতটা একমুখী বাড়ির রান্নায় মেয়েদের উপর নির্ভরশীলতায়। আর তা ছাড়া এই নর্ডিক দেশগুলির সামাজিক সুরক্ষা বা অর্থিনৈতিক সাম্য পৃথিবীর একদম প্রথম সারির দিকে। সেখানেই দেখা যাচ্ছে সমান সমান ভাগ রায়িত্ব নিয়ে রান্না করা তো দূরের কথা, ছেলেদের রান্না করার চল শুধু ‘বেড়েছে’ আগের থেকে! বাই দি ওয়ে, এখানে ‘আগের থেকে’ রেফারেন্স মানে শূন্য-র সাথে তুলনা করা আর কি। তো আর কি দেখা গিয়েছিল সেই সমীক্ষায়? ছেলেদের পারিবারিক রান্নার চল যে আগের থেকে বেড়েছে সেটা তো লিখেছিই – আর যেটা দেখা গিয়েছিল যে এই ‘বাড়ার’ ভাগটা আপেক্ষিক, এবং সেটা নির্ভর করছে কে কেমন অর্থনৈতিক অবস্থায় আছে। দেখা গেছে যে মধ্যবিত্ত ছেলেরা ১৯৯৭ সালের আগে থেকেই বেশ রান্না চালু করে দিয়েছে পরিবারের জন্য এবং তারা এই ব্যাপারে তাদের কাউন্টারপার্ট শ্রমিক/নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত ছেলেদের থেকে এগিয়ে ছিল। কিন্তু শ্রমিক/নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত ছেলেদের দ্বারা রান্না বেশ দ্রুত বাড়তে থেকে ১৯৯৭-২০১২ সালের মধ্যে এবং আজকাল সমাজের সব অর্থনৈতিক ক্ষমতার পরিবারের মধ্যে ছেলেদের রান্নার ভাগ প্রায় একই, কিন্তু তা এখনো মেয়েদের সাথে তুলনা করলে নগণ্য।
আগুনের নিয়ন্ত্রন আনার পরে রান্না ব্যাপারটা মানুষ সমাজে চালু হবার পর মেয়েদের ক্ষেত্রে জিনিসটা হয়ে দাঁড়ালো শাঁখের করাত। একদিকে রান্না মেয়েদের বাড়তি হাতে থাকা সময় তুলে দিল, নিজেদের ছেলে মেয়েদের খাদ্য প্রদানে সাহায্য করল – কিন্তু অন্যদিকে তাদের ঠেলে দিল পুরুষ প্রধান সামাজিক ব্যবস্থার দিকে আরো বেশী করে। লেখক রিচার্ড র্যাঙহাম তাঁর “ক্যাচিং ফায়ার” বইটিতে যানা যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে রান্নার প্রচলন পুরুষ প্রধান এক সমাজ সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে – আর সেই ছবিটা খুব একটা সুখপ্রদ নয়।
ছেলেদের রেঁধে খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে তাদের পরিবার বিশেষ করে তাদের মায়েরা আর একটা সল্যুশন বের করেছিল। বঙ্গ মাতার আঁচলের তলা থেকে বেরিয়ে বিদেশ এমনকি ভারতের অন্য প্রান্তে পড়াশুনা বা চাকুরী সূত্রে গেলে মা-দের প্রধান এবং প্রাথমিক কর্ত্তব্য ছিল “আমার গোপাল কি খাবে” আক্ষেপ করতে করতে ছেলের বিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত করা।
এই “আমার গোপাল কি খাবে”-র খোকা যত তাড়াতাড়ি শুনবে “আজ তাহলে তুমি রাঁধো” - তত তাড়তাড়ি লাইনে আসার সম্ভাবনা। খোকা-কে শক্ দেবার ডোজটা ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে – এবার বলতে হবে, “আজকে তোমার রাঁধার পালা” এবং কালক্রমে ফ্রীজের দরজায় তারিখ দিয়ে প্রিন্ট আউট কে-কোন দিন রাঁধবে। এছাড়া এই খোকারা সোজা হবে না – অন্তত আমার জানা নেই অন্য কোন উপায়।
তাহলে আপনি কি ভাবছেন এই গোপালদের সংখ্যা খুব কম? বিলকুল নয় – ইনফ্যাক্ট এই ধরণের গোপালরাই চারিদিক আলো করে আছে। ভাবছেন তাহলে কি ছেলেরা সত্যিই রাঁধতে পারে না? তাও নয় – ভালো রান্না পারে অনেকে। আর না জানলেও রান্না শেখাটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু ওই যে, রান্না ব্যাপারে গোপালরা আদুরে সেজে থাকবে। কেন রাঁধে না ছেলেরা? এর আগেও উল্লেখ করেছি – কারণটা সেই হাজার হাজার বছর থেকেই একই – এত সহজে রান্নার দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি পেলে, কে খামোকা কষ্ট করতে যাবে বলুন তো! ঔষুধ একটাই – এদের এত সহজে নিষ্কৃতি দিলে হবে না।
কিন্তু এখানে একটা ক্যাচ আছে – ফ্রীজের গায়ে রান্নার লাগানোর রুটিনটায় শুধু রান্নার ডিউটির তারিখ থাকলে হবে না। তার সাথে জুড়ে দিতে হবে দুজনের সারাদিনের রুটিন – কাজের রুটিনে ব্যালেন্স থাকতে হবে। তা না হলে ‘অফিস’ বনাম ‘কিটি পার্টি’-র সিমপ্যাথী লড়াইয়ে কে জিতবে বলাই বাহুল্য। কে কি করবেন সেটা একান্তই নিজের ব্যাপার - তবে যিনি কিটি পার্টি চ্যুজ করবেন, তিনি নিজের অজান্তেই সিমপ্যাথী ভোটটা নিজে দিতেই থাকবেন অফিসগামী গোপালকে। আর গাব্দা গাব্দা পেপার এবং জ্বলাময়ী প্রবন্ধ লেখা হতে থাকবে যার উপসংহারটা আমাদের সবারই জানা।
পরিশেষে যেটা বলার, তেল, নুন, মাইক্রোওয়েভ, লো-ফ্যাট, গর্ডন-সঞ্জীব, আদুরে গোপাল, মলিনা-ছায়া দেবী ছাড়িয়ে আগুন ব্যবহার করে রান্নার কেসটা একটু জটিল। আসলে মনুষ্য সমাজে রান্নার প্রচলন মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ, অগ্রগতি এমনি আমাদের বিবর্তনও বদলে দিয়েছে। রান্নার প্রচলন শুধু আমাদের শরীরের বিবর্তনে প্রভাব রেখেছিল তা নয়, খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখে গিয়েছিল বা এখনো রেখে যাচ্ছে আমাদের মানসিক ক্রমবিকাশে এবং আমাদের সামাজিক সংগঠনেও। গোটা বিষয়টা এতই বিস্তারে বিশাল যে ব্যাপার অনেকটা হাতির মত কেস হয়ে গেছে – আপনি শুঁড় ধরে হাতি ঠাওড়াবেন নাকি ল্যাজ ধরে শূয়োর সেটা আপনার ব্যাপার।
R. Wrangham, “Catching Fire: How Cooking Made us Human”, Profile Books, London, 2009.
লেখাটা খুবই সুন্দর। আপনি বেশ ভালো রান্না করেন -এটা আপনার লেখা পড়েই জেনেছি। কিন্তু এই লেখাটা পড়ে আমি এটা বুঝতে পারলাম না, আপনি ঠিক কোন দলের supporter?
আমাদের পরের প্রজন্মের বেশ কয়েকজনকে দেখছি তোমার প্রস্তাবিত পদ্ধতির ব্যবহার করতে। দুনিয়া এগোচ্ছে।
আমি মহা আলসে। কিন্তু সুকির বক্তব্যের সঙ্গে একমত। চা -ডাল-ভাত-ডিমের ঝোল- আলুসেদ্ধ এবং তরকারি বানাতে পারি। কিন্তু সহজে ছাড় পেলে কে আর --! রুটি পারিনা।
একা থাকার মওকা পেলে তিনদিন হোম ডেলিভারি, চারদিন স্বপাক।
অথচ আমার বাবা বিরিয়ানি থেকে শুরু করে সবই পারতেন।
রান্না ব্যাপারটা ওভারহাইপড। যার যখন খিদে পাবে নিজের মত কিচুমিচু খেয়ে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। রন্ধনশিল্প ইত্যাদি ভারী কথা আমদানি করেই যত কেলো হয়েচে। কেও নিজেকে শিল্পী ভেবে বাড় খাচ্চে, কেও নিজের শিল্পে অক্ষমতা " স্বীকার" করে হাত ধুয়ে ফেলচে।সমস্যা ওই গোড়াতেই।
যে-রকম আমরা হাগতে গেলে নিজের হাগা নিজেই হাগি, সেই এপ্রচে যার পেটে খিদ,সে ফুটিয়ে নিক বা আনিয়ে খাক - এই এটিটিউড দেকালে আর কোন আপদ থাগে না।
অনুপমা, একলহমা, রঞ্জনদা, একক - সবাইকে ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
অনুপমা, আমি ঠিক কোন দলের নই - নিজের কাজ নিজে করে নেবার পক্ষে।
একক - যে কোন শিল্প ব্যাপারেই একটু হাইপ তো ঢুকে থাকবেই। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রশ্ন আরো জটিল, আদৌ এটা শিল্প বলে চালানোর কি দরকার!
এটা শুনে খুব ভালো লাগল। আমিও নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি।
প্রতিবেশীর এবং নিকটাত্মীয়ের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা থাকলে ভাল হত। দু দলই দুঃখকষ্টে মুর্ছা যায় পুরুষ মানুষ রান্নাঘরের কাজ করলে। সে বাড়ির মহিলাদের প্রতি ধিক্কার পাড়া ছাড়িয়ে বিদেশেও শোনা যেতে থাকে।
আপনার লেখাটা পড়ার পর ভাবছি, আমিও বলবো "আজ তোমার রাঁধার পালা"
প্রতিভাদির কথায় ক্ক দিয়ে গেলাম। লেখাটাতে তো বটেই।
এর সংগে জুড়ে দি, সেক্ষেত্রে মেয়েটি কতটা সৌভাগ্যবতী, এজন্য তার কতটা কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এবং অবশ্যই এটা কতটা 'অস্বাভাবিক' ব্যাপার!
আর হ্যাঁ, এর সংগেই সেই পুরানো কথা আরেকবার। মেয়েদেরও বাইরের কি সংসার বাদে অন্য কাজে, উপার্জনের কাজে অংশগ্রহণ ওতপ্রোতভাবেই জড়িয়ে।
এই প্যারাটা আলাদা করেই কোট করব তাই।
"কিন্তু এখানে একটা ক্যাচ আছে – ফ্রীজের গায়ে রান্নার লাগানোর রুটিনটায় শুধু রান্নার ডিউটির তারিখ থাকলে হবে না। তার সাথে জুড়ে দিতে হবে দুজনের সারাদিনের রুটিন – কাজের রুটিনে ব্যালেন্স থাকতে হবে। তা না হলে ‘অফিস’ বনাম ‘কিটি পার্টি’-র সিমপ্যাথী লড়াইয়ে কে জিতবে বলাই বাহুল্য। কে কি করবেন সেটা একান্তই নিজের ব্যাপার - তবে যিনি কিটি পার্টি চ্যুজ করবেন, তিনি নিজের অজান্তেই সিমপ্যাথী ভোটটা নিজে দিতেই থাকবেন অফিসগামী গোপালকে। আর গাব্দা গাব্দা পেপার এবং জ্বলাময়ী প্রবন্ধ লেখা হতে থাকবে যার উপসংহারটা আমাদের সবারই জানা।
সকলকে ধন্যবাদ।
প্রতিভাদি, লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি ইচ্ছে করেই প্রতিবেশী ইত্যাদি নিয়ে কিছু লিখতে চাই নি, কারণ ওতে আমার নতুন করে কিছু লেখার নেই। সেই একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
মধুমিতা, দু-দি - ধন্যবাদ
sm, ধন্যবাদ। শুধু আকা ট্রাইব কেন, আরো অনেক কিছু বাদ আছে এই লেখায়। সব জিনিস তো আর কভার করা সম্ভব নয় এটুকু লেখায়।
দমু-দি, ধন্যবাদ। রিষড়ার কেসটা আলাদা করে কিছু নয়, এমন জিনিস এখনো ছড়িয়ে আছে চারিদিকে এটাই দূর্ভাগ্য।
hu, টিম - তোমাদেরও ধন্যবাদ। ছবিটা ইন্টারনেট থেকে ধার নেওয়া, এই ছবিটা না থাকলেও হত এই লেখায়।
পাই, যেটুকু পড়েছি তাতে করে এটা তো দেখা গেছে যে দু'জনেই চাকরি করলে ছেলেদের রান্নায় অংশ নেওয়ার শতাংশ সময়ের সংগে বাড়ছে এটা ঠিক। কিন্তু কিভাবে বাড়ছে সেটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করছে - তাদের অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড, পরিবারের স্ট্রাকচার, কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি। অনেক গবেষক দেখলাম জিনিসটা 'ইন্ডাষ্ট্রিয়াল' সমাজ এবং তার বাইরের সমাজ (এগ্রিকালচারাল এই সব) এই ভাবে দেখেছেন। 'ইন্ডাষ্ট্রিয়াল' সমাজে ছেলেদের রান্না করার ব্যাপারটা বেশী করে বাড়ছে।
খুব ভালো লেখা। কিন্তু মেয়েরা প্রতিবাদ করে না কেন যেখানে মেয়েরা অর্থনৈতিক ভাবেও অবদান বেশী রাখে?
খুব খুব ভালো লাগলো লেখাটা ... সবাই যেখানে দুঃখী সেখানে আর দুঃখ করে কিি লাভ ...তবে বং মাতার 'আমার গোপাল খাবে কি?' দারুঊঊন
চাষবাস, রান্না, বেবি সিটিং বা অন্যসব ঘরের কাজ, আদিবাসী সমাজেই এখনো নারী-পুরুষ সাম্য আছে, যদিও পুরুষতান্ত্রিক বা মাতৃতান্ত্রিক দুই আদিবাসী সমাজে পুরুষই কর্তা।...
দীর্ঘদিন পাহাড় ও সমতলের নানান আদিবাসী গোষ্ঠীকে খুব কাছ থেকে দেখে এ কথা মনে হয়েছে, আমার ভুলও হতে পারে, বাকীটা সামাজিক গবেষণার বিষয়
লেখাটি উপভোগ্য।
শাহীন আর আমি দুজনেই খাদ্যবিলাসী। আমার দুজনেই রান্না শিখেছি একই সময়ে।কিন্তু যতদিন যাচ্ছে আমাদের রান্নার স্টাইল এতটাই আলাদা হয়ে যাচ্ছে যে আমরা একে অন্যকে রান্নাঘরে একসময়ে সহ্য করতে পারিনা। তাই আমরা অল্টার্নেট উইক জামাইষষ্ঠী/ বউষষ্ঠী করি। একহপ্তা আমি ভালোমন্দ রান্না করে বউকে খাওয়াই। পরের সপ্তাহ শাহীনের পালা।