জানি না আপনারা খেয়াল বা অনুভব করেছেন কিনা, আমাদের ভারতের ভিতরে বা আমরা যখন বাইরে বেড়াতে যাই তখন যে জিনিসটা নিয়ে সবচেয়ে কম মাথা ঘামাই বা একদমই মাথা ঘামাই না তা হল সেফটি বা সুরক্ষা। বাইরের দেশের (বিশেষ করে তথাকথিত প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে) সেফটি রুলস নিয়ে খুব কড়াকড়ি থাকে বলে আপনার অজান্তেই আপনি অনেকটা সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েন। কিন্তু যদি সেই জায়গায় বা দেশের নিয়ম কানুন আমাদের দেশের মত ঢিলেঢালা হয় বা বেশীর ভাগ লোক মেনে চলে না – তাহলে আপনি কিন্তু অনেকটা এক্সপোজ থাকছেন পুরো ট্যুরটাতে। তখন নিজের সুরক্ষার কথা আপনাকে নিজেই ভাবতে হবে।
অনেক আন-সেফ কাজ কর্ম করার মূলে প্রধানত আছে আমাদের মধ্যে সচেতনার অভাব। আবার অনেকে আছেন জ্ঞান-পাপী, মানে অনেক কিছু জেনেশুনেও নিয়ম মেনে চলব না – নানাবিধ কারণ থাকে এর পিছনে, বেশীর ভাগ সময় নিজেকে ‘ম্যাচো’ প্রমাণের চেষ্টা। যদি আপনি শিওর থাকেন যে ভ্রমণের সময় সুরক্ষা নিয়ে কি কি ভাবা উচিত সে সব আপনি ভালো করে জানেন, তাহলে এই লেখা আপনার না পড়লেও চলবে। আর যদি মনে করেন, “আরে, এটা নিয়ে তো কোনদিন ভাবি নি তেমন ভাবে!”, তাহলে বড় বলে আমার অন্য কোন লেখা না পড়লেও আজকের লেখাটা পড়ে দেখার অনুরোধ করব পুরোটা – অন্তত কিছুটা আঁচ পেয়ে যাবেন বলেই আমার মনে হয়।
কতগুলো একদম স্বাভাবিক প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি – এই প্রশ্ন গুলো নিজেই নিজেকে করুন মনে মনে –
- আপনি নিজে একা বা ফ্যামিলি নিয়ে বেড়াতে গিয়ে যখন কোন হোটেলে ওঠেন, তখন কোনদিন সেই হোটেলের ‘ফায়ার-এসকেপ’ ব্যবস্থা নিয়ে ভেবেছেন? মানে ধরুণ আপনি সেই হোটেলের পাঁচতলায় আছেন, হঠাৎ রাতের বেলা আগুন লেগে গেল কোন কারণে! কি করবেন আপনি? এটা আমরা সবাই জানি যে আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার করা উচিত নয় (আর এমনিতেই আগুন লাগলে লিফট অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবার কথা) – তাহলে আপনি কিভাবে নামবেন নীচে? বেশী সময় নেই কিন্তু আপনার হাতে – আগে থেকে দেখে রেখেছেন কি সিঁড়িটা কোন দিকে যাতে বিপদের সময় আপনাকে খুঁজতে না হয়!
খুব ছেঁদো কথা বলছি মনে হচ্ছে? তাহলে একটা পরীক্ষার কথা বলি – আমি তখন ইংল্যান্ডে থাকতাম। একবার বি বি সি চ্যানেল টিভিতে একটা পরীক্ষার আয়োজন করেছিল। ইংল্যান্ডে পুরানো দিনের অনেক বাড়িই কাঠের তৈরী – আর কে না জানে এই কাঠের বাড়িতে আগুন লাগলে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটা। এরা দেখতে চেয়েছিল যে স্থানীয় দমকল কত তাড়াতাড়ি ফায়ার কল এর রেসপন্স দিতে পারে। আর বাড়ি থেকে সেফলি বেরুতে লোকজনের হাতে কেমন সময় থাকে। দোতলা কাঠের একটা বাড়ি বানানো হয়েছিল এই পরীক্ষার জন্য – কিন্তু স্থানীয় দমকল-কে আগে থেকে বলে নি যে পরীক্ষা করতে চলেছে। দোতলা সেই বাড়িতে আগুন লাগায় – সেই এলাকায় দেখা গেল দমকলের রেসপন্স টাইম খুব ভালো – মিনিট দশেকের মধ্যে চলে এসেছিল।
এবার দমকল কতক্ষণে সাড়া দেয় শুধু সেই পরীক্ষা করার জন্য বাড়িতে আগুন লাগানো হয় নি, কারণ সেটা ফলস্ অ্যালার্ম তৈরী করেও দেখা যায়। এরা যেটা দেখতে চেয়েছিল এক দোতলা কাঠের বাড়ির আগুন দমকল কতক্ষণে আয়ত্ব করতে পারে। যা দেখা গেল খুব একটা আশাপ্রদ নয় – আগুন লাগার মোটামুটি মিনিট দশেকের মধ্যে নেভানো না গেলে প্রায় অসম্ভব সেই বাড়িকে বাঁচানো। তার মানে আপনার হাতে আছে মিনিট দশেকের থেকেও কম সময় আছে সেই বাড়ি থেকে সেফলি বেরিয়ে আসার। অনেকে মনে আবার ভুল ধারণা আছে কেবল আগুনের তাপটাই মারাত্মক – এটা অনেকটা সত্যি হলেও পুরোটা সত্যি নয়। কারণ আগুনে ঝলসে মরার থেকেও বেশী মানুষ মারা যায় দমবন্ধ হয়ে – কারণ কার্বন মনোক্সাইড খুবই বিষাক্ত গ্যাস। অনেক দেশে এখনো শীতের সময় আগুনের থেকে (লম্ফ বা হ্যারিকেন ইত্যাদি থেকে) নির্গত কার্বন মনোক্সাইডের জন্য ঘুমের মধ্যেই অনেকে মারা যায়!
হোটেলে আগুন লাগে কেন? অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে এর চারটি প্রধান কারণ হল – হোটেলের রেষ্টুরান্টের রান্না ঘরের আগুন, ধূমপান করার আগুন, ইলেকট্রনিক অ্যাপ্লায়েন্স (যেমন জল গরম করার কেটলি, ফ্রীজ, ওয়াটার হিটার ইত্যাদি), আর রুম হিটিং সিষ্টেম।
- বেড়াতে গিয়ে চার চাকার গাড়িতে যাতায়াতের সময় আপনি কি সব সময় নিজের সীট বেল্ট লাগান? আমি শিওর বেশীর ভাগ জনাই সীট বেল্ট লাগান না – এমনকি বেশী ভাগ ভাড়া গাড়িতে সীটবেল্টই নেই! অনেকে মনে করেন এখানে তো পুলিশ নেই বা ট্রাফিক ক্যামেরা নেই, তাহলে আর সীট বেল্ট কি লাগানো দরকার। একই ভাবনা আসে দুচাকার মোটর বাইকে হেলমেটে পরা নিয়ে। আমরা খুব বেসিক জিনিস ভুলে যাই – এগুলো আমাদের সুরক্ষার জন্য, পুলিশের সুরক্ষার জন্য নয়! নিজের জন্যই সীট বেল্ট লাগিয়ে চলুন।
২০১৮ সালে ভারতে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায় প্রায় দেড় লক্ষ লোক! ভাবতে পারছেন? মানে প্রতি ঘন্টায় ভারতে গড়ে ১৭ জন লোক রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে! আমি এটা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাবার কথা বলছি, গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটছে যেখানে লোক কেবল আহত তার সংখ্যা এর প্রায় দশ গুণ। তদন্ত করে দেখা গেছে এর মধ্যে প্রায় ৭৮% লোক সীটবেল্ট পরে ছিল না আর ৯০% ক্ষেত্রে ড্রাইভারের ভুলেই এই দুর্ঘটনা। সীট বেল্ট পড়লেই কি তাহলে এরা সবাই বেঁচে যেত? সবাই হয়ত বাঁচত না – কিন্তু প্রচুর স্টাডি করে দেখা গেছে গাড়ির সামনের সীটে বসে সীটবেল্ট পড়ে থাকলে অ্যাক্সিডেন্টে মরার চান্স কমে যায় প্রায় ৪৫%।
এটা একটু মনে রাখবেন এখন কার গাড়িতে অনেক সেফটি ফীচার দেওয়া থাকে, নিজে চালালে সেগুলো ঠিক ঠাক কি ভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখে নিন। আর যদি ড্রাইভার ভাড়া করেন তাহলে তাকেও শিখিয়ে দিন কি ভাবে সেফটি ফিচারগুলো ব্যবহার করতে হয়। শুধু সীট বেল্টের দিকেই নজর দিলে হবে না, খেয়াল রাখবেন যে হেড-রেষ্ট (যেটা মাথার পিছনে থাকে) টাও ঠিক পজিশনে থাকে। আমরা সবাই ছোটবেলায় নিউটনের গতি/স্থিতি জাড্য পড়লেও অনেকে ভুলে গেছি – সেই সূত্র অনুসারে ধরুণ আপনি জোরে গাড়ি চালাতে চালাতে ব্রেক কষলেন, যদি সীট বেল্ট বাঁধা না থাকে তাহলে সামনের সীটে থাকলে আপনি গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে দূরে ছিটকে পরবেন – আর পিছনের সীটে বসে থাকলে বাইরে হয়ত ছিটকাবেন না, কিন্তু গাড়ির মধ্যেই সজোরে ধাক্কা খাবেন। এবার ধরুণ আপনি সীট-বেল্ট পরে আছে, ব্রেক কষে দেখেছেন হয়ত যে শরীর সামনের দিকে ঝুঁকতে চায় কিন্তু সীট বেল্ট আটকে রাখে। শরীর না হয় আটকে দিল সীট বেল্ট, কিন্তু মাথা আর ঘাড়টা কে আটকাবে? শরীরের সাথে সাথে ঘাড় আর মাথাও এগিয়ে যাবে, ধাক্কা খেয়ে থেকে গাড়ি গেলে ওই ঘাড় আবার মাথা নিজের জায়গায় ফিরতে চাইবে – ফলে হেড রেষ্ট থাকলে সেটাতে গিয়ে মাথা ধাক্কা খাবে – আর যদি হেড রেষ্ট না থাকে? তাহলে ঘাড় ভেঙ্গে মানুষ মারা যাবে সীট বেল্ট পরা থাকলেও! ঠিক এই কারণগুলির জন্যই সামনের সীটে বাচ্চা কোলে নিয়ে বা নিজে বসে আর সামনে বাচ্চাকে দাঁড় করিয়ে গাড়িতে চাপবেন না। এটা ভারতে খুব কমন দেখেছি – কিন্তু খুব বিপদজনক।
তবে আমি ভারতে এই ব্যাপারে যেটা নিয়ে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছি তা হল ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার কথা না শুনলে – মানে সে ড্রাইভার মোবাইলে কথা বলবেই! অনেক ক্ষেত্রে আমরা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যাই – যেমন গত বছর একবার রাতের বেলা অনেক কষ্টে উবের এ করে ফিরছি, ড্রাইভার মোবাইলে কথা বলেই যাচ্ছে গাড়ি চালাতে চালাতে! তাকে বারণ করলাম – সে বলে “আপনার না পোষালে আপনি নেমে যান”! এই সব ক্ষেত্রে আপনাকে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে – কারণ গভীর রাতে আপনি মাঝ রাস্তায় এই ভাবে নেমে পড়লে আরো বেশী বিপদে পরে যাবেন। তবে আমি যে দেশেই গাড়ি ভাড়া করে ট্যুরে গেছি, ড্রাইভারের সাথে কথা বলে নিয়েছি যে গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইলে কথা বলা যাবে না – জরুরী হলে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে কথা বলতে হবে। এতে রাজী হলে তবেই সেই গাড়ি ভাড়া করেছি – তবুও খানিক পরেই এরা ভুলে যায় – তেমন হলে মনে করিয়ে দিতে ইতস্তত করলে হবে না।
রোড সেফটি আর আগুন নিয়ে তো আলোচনা হয়ে গেল – এবার খেয়াল করে বলুন তো বেড়াতে গিয়ে রিস্কের দিক থেকে এই দুইয়ের পরে কি আসতে পারে? অনুমান করতে পারছেন? বেড়াতে বা ভ্রমণে তৃতীয় বৃহত্তম রিস্ক হল চুরি/ডাকাতি/রাহাজানির/জিনিস হারিয়ে যাবার ভয়।
তাহলে এবার তৃতীয় প্রশ্ন আপনি নিজে নিজেকে করুন
- চুরি/ডাকাতি/রাহাজানির/জিনিস হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করার জন্য আপনি ঠিক কি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?
কিছু না কিছু ব্যবস্থা আমরা সবাই নিই – সবচেয়ে কমন হল, ব্যাগে চাবি লাগানো, ভালো করে নাম লিখে রাখা ব্যাগেজ ট্যাগে আর টাকা পয়সা বেশ যত্ন করে রাখা। যারা বেড়ানোয় পোক্ত, বিশেষ করে বিদেশ বেড়ানোয়, তাঁদের মধ্যে একটু বেশী সচেতনতা দেখেছি ‘ডকুমেন্ট’ (পাসপোর্ট ইত্যাদি) এর সুরক্ষা নিয়ে। এগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ – এছাড়া আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আপনি স্টেপ আপনি নিতে পারেন – যেমন
- সব কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, যেমন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, পাসপোর্ট, টিকিট, হেলথ ইনসিওরেন্স – এগুলো সব ফটোকপি করে নিজের কাছে রাখুন। এবং এগুলো হারিয়ে গেলে কোথায় কনট্যাক্ট করতে হবে সেই ফোন নাম্বারগুলিও নোট করে রাখবেন।
- কোথায় যাচ্ছেন, কোন হোটেলে থাকছেন – পুরো ট্রাভেল আইটেনারী ফ্যামিলি বা অফিসের কারো কাছে রেখে যান।
- এয়ারপোর্ট বা ট্রেন থেকে নেমে কোথায় যাবেন, হোটেলের অ্যাড্রেস সব প্রিন্ট বা ডিটেলসে লিখে হাত ব্যাগে রেখে দিন। যদি এমন জায়গায় যান সেখানে ভাষার প্রবলেম হতে পারে আগে থেকে জানেন, তাহলে তো এই স্টেপটা খুবই জরুরী।
- হাতের কাছে যেন এমারজেন্সী নাম্বার গুলো নোট করা থাকে – যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার পুলিশ, ফায়ারবিগ্রেড বা অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর নোট করে নেওয়া তো মিনিমাম।
হোটেলের আগুন লাগা নিয়ে তো আগেই লিখেছি। কিন্তু আগুন লাগা ছাড়াও হোটেলের আরো কিছু সেফটির দিকে নজর রাখা উচিত যখন বেড়াতে যাবেন। হোটেল এমন চ্যুজ করুন (জায়গা বিশেষে, যদি সুযোগ হয়) যেখানে রুমে সেফটি লকার আছে, আছে দরজায় পিপ-হোল এবং ডেডবোল্ট। সব এলিভেটারে হয়ত সি সি টি ভি ক্যামেরা থাকে না, যদি না থাকে তাহলে সন্দেহজনক দেখতে মনে হলে তেমন লোকেদের সাথে লিফটে একসাথে উঠবেন না। সাথে যদি বয়ষ্কা কেউ থাকে – তাহলে হোটেলে এমন রুম বেছে নিন যেগুলো ছয় তলা বা তার নীচের। কারণ দমকলের মই ছয় তলা পর্যন্ত উঠতে পারে, সেক্ষেত্রে উদ্ধার কার্যে সুবিধা হবে।
ডকুমেন্ট নিয়ে খুব সচেতন থাকুন – খুব ইমপরট্যান্ট ডকুমেন্ট (পাসপোর্ট) ছোট প্যাকে আলাদা করে ভরে তবে বড় ব্যাগে রাখুন। কারণ অনেক মিউজিয়াম বা প্যালেস ইত্যাদিতে ঢুকতে হলে বাইরে ব্যাগ জমা দিয়ে যেতে হয় – কোন ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নথি কাউন্টারে জমা দেবেন না। ব্যাগ জমা দেবার আগে সেই ছোট পাউচ বের করে নিজের কাছে রেখে দিন। একদম অচেনা জায়গায় বা রাতের বেলার দিকে গ্রুপে পরিভ্রমণ করুন। কোন রকম বিপদে পরলে আশেপাশের লোকজনের কাছে সাহায্য চাইতে একদম ইতস্তত করবেন না।
ভালই । কিন্তু কতলোক ঠিকঠাক মেনে চলবে ?
খুব ভালো লাগল,প্রতিটি লেখায় বেশ লাগে পড়তে,কিন্তু আজকের লেখাটাই শুধু লিসবনের ছবি পেলাম,অন্য ছবি আর পেলাম না.....
আপনাদের ধন্যবাদ।
নিজের কাজের সূত্রে সেফটি নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করতে হয় - প্রচুর ইন্ডাষ্ট্রি দুর্ঘটনার তদন্তেও যুক্ত থাকতে হয়।
আমাদের দেশে সেফটি নিয়ে সচেতনতা এত কম আর রোড সেফটি নিতে তো না বলাই ভালো। একটু সচেতনতা গড়ে তোলা কিছু এমন বিশাল কিছু ব্যাপার নয় - কিন্তু আমরা বেশীর ভাগই উদাসীন! খুব খারাপ লাগে এটা দেখে - কত চেনা জানা আত্মীয় পরিজনকে হারাতে হয় এমন অসচেতনার জন্য
খুবই কাজের কথা সব।
দুটো ঘটনা আমার মনে পড়ছে। বেশ কিছুদিন আগে শ্রীলংকার ক্যান্ডি শহরে আমার কোলের উপর রাখা ক্যামেরাটি সিটবেল্টে জড়িয়ে যাওয়ায় সিটবেল্ট একটু খুলে ক্যামেরার বেল্টটি বার করে নিচ্ছিলুম। কয়েক সেকন্ডের ব্যাপার। অত্যন্ত সপ্রতিভ পুলিশ পলকের মধ্যে গাড়ি থামালেন। চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করার আদেশ হলো। তখন আমি একজন বিদেশী হিসেবে ক্ষমা প্রার্থনা করে চালককে বিপন্মুক্ত করলুম। এসব ব্যাপার আমাদের দেশে ভাবা যায় না।
আরেকটি গল্প। গিয়েছিলুম ভুজ। ফেরার সময় দেখি চালক যাত্রার শুরু থেকেই ঘুমগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। আমি বার বার বলায় তিনি গাড়ি থামিয়ে চোখেমুখে জল দিলেন। দুবার চা খেলেন। কিন্তু মিনিট দশের মধ্যেই দেখি গাড়ি টাল খাচ্ছে। আমি পাশের হ্যান্ডব্রেক টেনে গাড়ি থামালুম। চালককে বললুম, আপনি পাশে এসে বসুন। আমি গাড়ি চালাবো। কিছুতেই রাজি নন। যখন বলি পুলিশকে ফোন করছি। তখন অত্যন্ত অনিচ্ছার সঙ্গে এসে পাশের সিটে বসলেন। আমি ভুজ থেকে সানন্দ পর্যন্ত তিনশো কিমি নিজেই চালিয়ে আনলুম। এদেশে এই ব্যাপারটা 'চলতা হ্যাঁয়'....
ধন্যবাদ শিবাংশুদা - আমি আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, ভারতের উত্তর দিকের গাড়ি চালাবার সময় রাস্তায় লোকজন যেন অনেক বেশী অ্যাগ্রসিভ দক্ষিণ ভারতের তুলনায়। জানি না এটা কেবল আমারই মনে হয় নাকি এটা সর্বজন স্বীকৃত!
@সুকি,
ঠিকই বলেছো। একজন আগমার্কা উত্তরভারতের 'লঠমার' কালচারের লোক আমি এবং দীঘদিন দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় থেকেছি। বিন্ধ্যের উত্তর দক্ষিণে অনুশাসন সংস্কৃতিটি বেশ খানিকটা আলাদা।