এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  বিবিধ

  •  সুকিয়ানা – ২১ পর্ব (নিজের জন্য, নিজেদের জন্য – ভ্রমণে সুরক্ষা)       

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | বিবিধ | ০৮ মে ২০২১ | ৩১৩০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)

  •  

    জানি না আপনারা খেয়াল বা অনুভব করেছেন কিনা, আমাদের ভারতের ভিতরে বা আমরা যখন বাইরে বেড়াতে যাই তখন যে জিনিসটা নিয়ে সবচেয়ে কম মাথা ঘামাই বা একদমই মাথা ঘামাই না তা হল সেফটি বা সুরক্ষা।  বাইরের দেশের (বিশেষ করে তথাকথিত প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে) সেফটি রুলস নিয়ে খুব কড়াকড়ি থাকে বলে আপনার অজান্তেই আপনি অনেকটা সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েন।  কিন্তু যদি সেই জায়গায় বা দেশের নিয়ম কানুন আমাদের দেশের মত ঢিলেঢালা হয় বা বেশীর ভাগ লোক মেনে চলে না – তাহলে আপনি কিন্তু অনেকটা এক্সপোজ থাকছেন পুরো ট্যুরটাতে।  তখন নিজের সুরক্ষার কথা আপনাকে নিজেই ভাবতে হবে। 

     

    অনেক আন-সেফ কাজ কর্ম করার মূলে প্রধানত আছে আমাদের মধ্যে সচেতনার অভাব।  আবার অনেকে আছেন জ্ঞান-পাপী, মানে অনেক কিছু জেনেশুনেও নিয়ম মেনে চলব না – নানাবিধ কারণ থাকে এর পিছনে, বেশীর ভাগ সময় নিজেকে ‘ম্যাচো’ প্রমাণের চেষ্টা।  যদি আপনি শিওর থাকেন যে ভ্রমণের সময় সুরক্ষা নিয়ে কি কি ভাবা উচিত সে সব আপনি ভালো করে জানেন, তাহলে এই লেখা আপনার না পড়লেও চলবে। আর যদি মনে করেন, “আরে, এটা নিয়ে তো কোনদিন ভাবি নি তেমন ভাবে!”, তাহলে বড় বলে আমার অন্য কোন লেখা না পড়লেও আজকের লেখাটা পড়ে দেখার অনুরোধ করব পুরোটা – অন্তত কিছুটা আঁচ পেয়ে যাবেন বলেই আমার মনে হয়।  

     

    কতগুলো একদম স্বাভাবিক প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি – এই প্রশ্ন গুলো নিজেই নিজেকে করুন মনে মনে –

     

    -               আপনি নিজে একা বা ফ্যামিলি নিয়ে বেড়াতে গিয়ে যখন কোন হোটেলে ওঠেন, তখন কোনদিন সেই হোটেলের ‘ফায়ার-এসকেপ’ ব্যবস্থা নিয়ে ভেবেছেন? মানে ধরুণ আপনি সেই হোটেলের পাঁচতলায় আছেন, হঠাৎ রাতের বেলা আগুন লেগে গেল কোন কারণে! কি করবেন আপনি? এটা আমরা সবাই জানি যে আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার করা উচিত নয় (আর এমনিতেই আগুন লাগলে লিফট অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবার কথা) – তাহলে আপনি কিভাবে নামবেন নীচে? বেশী সময় নেই কিন্তু আপনার হাতে – আগে থেকে দেখে রেখেছেন কি সিঁড়িটা কোন দিকে যাতে বিপদের সময় আপনাকে খুঁজতে না হয়!   

     

    খুব ছেঁদো কথা বলছি মনে হচ্ছে? তাহলে একটা পরীক্ষার কথা বলি – আমি তখন ইংল্যান্ডে থাকতাম।  একবার বি বি সি চ্যানেল টিভিতে একটা পরীক্ষার আয়োজন করেছিল।  ইংল্যান্ডে পুরানো দিনের অনেক বাড়িই কাঠের তৈরী – আর কে না জানে এই কাঠের বাড়িতে আগুন লাগলে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটা।  এরা দেখতে চেয়েছিল যে স্থানীয় দমকল কত তাড়াতাড়ি ফায়ার কল এর রেসপন্স দিতে পারে।  আর বাড়ি থেকে সেফলি বেরুতে লোকজনের হাতে কেমন সময় থাকে।  দোতলা কাঠের একটা বাড়ি বানানো হয়েছিল এই পরীক্ষার জন্য – কিন্তু স্থানীয় দমকল-কে আগে থেকে বলে নি যে পরীক্ষা করতে চলেছে। দোতলা সেই বাড়িতে আগুন লাগায় – সেই এলাকায় দেখা গেল দমকলের রেসপন্স টাইম খুব ভালো – মিনিট দশেকের মধ্যে চলে এসেছিল। 

     

    এবার দমকল কতক্ষণে সাড়া দেয় শুধু সেই পরীক্ষা করার জন্য বাড়িতে আগুন লাগানো হয় নি, কারণ সেটা ফলস্ অ্যালার্ম তৈরী করেও দেখা যায়।  এরা যেটা দেখতে চেয়েছিল এক দোতলা কাঠের বাড়ির আগুন দমকল কতক্ষণে আয়ত্ব করতে পারে।  যা দেখা গেল খুব একটা আশাপ্রদ নয় – আগুন লাগার মোটামুটি মিনিট দশেকের মধ্যে নেভানো না গেলে প্রায় অসম্ভব সেই বাড়িকে বাঁচানো।  তার মানে আপনার হাতে আছে মিনিট দশেকের থেকেও কম সময় আছে সেই বাড়ি থেকে সেফলি বেরিয়ে আসার। অনেকে মনে আবার ভুল ধারণা আছে কেবল আগুনের তাপটাই মারাত্মক – এটা অনেকটা সত্যি হলেও পুরোটা সত্যি নয়। কারণ আগুনে ঝলসে মরার থেকেও বেশী মানুষ মারা যায় দমবন্ধ হয়ে – কারণ কার্বন মনোক্সাইড খুবই বিষাক্ত গ্যাস।  অনেক দেশে এখনো শীতের সময় আগুনের থেকে (লম্ফ বা হ্যারিকেন ইত্যাদি থেকে) নির্গত কার্বন মনোক্সাইডের জন্য ঘুমের মধ্যেই অনেকে মারা যায়!  

     

     তাই যদি পরের বার বেড়াতে যান একটু ফায়ার এসকেপটা দেখে রাখবেন হোটেলের। আর যদি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন যেখানে রান্নার ব্যবস্থা আছে, তাহলে দেখে নেবেন সেখানে হাতের কাছে ছোট হলেও ফায়ার-এসটিংগুইসার আছে কিনা, বা আগুন ঢাকা দেবার জন্য ফায়ার ব্ল্যাঙ্কেট আছে কিনা।  ভালো হোটেল/অ্যাপার্টমেন্ট হলে এগুলো থাকার কথা।  আবার ফায়ার এসকেপ থাকলেই সেটা দূর থেকে না দেখে একবার টেনে খুলে দেখে নেবেন সেটা আদৌ খোলে কিনা।  এটাও শিক্ষনীয় – আমাদের এক কলিগ একবার অফিসের কাজে গিয়ে খুব জখম হয়েছিল – তাও ইউরোপের এক দেশে।  এমনিতে আমরা বিজনেস ট্রাভেল  গেলে সাধারণত থাকে কোম্পানীর অ্যাপ্রুভড কিছু হোটেল থাকি যেগুলোকে প্রত্যেক বছর সেফটি অডিট করা হয়।  সেদিন রাতে আগুন লেগে যায় মারাত্মক এমনই এক কোম্পানী অ্যাপ্রুভড হোটেলের বহুতলে। আমাদের কলিগ রুম থেকে বেরিয়ে ফায়ার এসকেপের সিঁড়িতে গিয়ে দেখে দরজা ঠেললে খুলছে না! হয়েছে কি দরজার পিছনে রুম পরিষ্কার করার যে ট্রলি গুলো থাকে তেমন অনেক গুলো রাখা স্টোরেজ হিসাবে! বেশ খানিকক্ষণের চেষ্টায় একটু ফাঁক করে যখন বেরুতে পেরেছিল তখন বেশ দেরী হয়ে গেছে, মারাত্মক যখম হয়েছিল – তবে ভ্যাগিস সেন্সলেস হয়ে যায় নি। 

      

    হোটেলে আগুন লাগে কেন? অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে এর চারটি প্রধান কারণ হল – হোটেলের রেষ্টুরান্টের রান্না ঘরের আগুন, ধূমপান করার আগুন, ইলেকট্রনিক অ্যাপ্লায়েন্স (যেমন জল গরম করার কেটলি, ফ্রীজ, ওয়াটার হিটার ইত্যাদি), আর রুম হিটিং সিষ্টেম। 

     

     এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন করুন নিজেকে

     

    -                     বেড়াতে গিয়ে চার চাকার গাড়িতে যাতায়াতের সময় আপনি কি সব সময় নিজের সীট বেল্ট লাগান?  আমি শিওর বেশীর ভাগ জনাই সীট বেল্ট লাগান না – এমনকি বেশী ভাগ ভাড়া গাড়িতে সীটবেল্টই নেই! অনেকে মনে করেন এখানে তো পুলিশ নেই বা ট্রাফিক ক্যামেরা নেই, তাহলে আর সীট বেল্ট কি লাগানো দরকার।  একই ভাবনা আসে দুচাকার মোটর বাইকে হেলমেটে পরা নিয়ে। আমরা খুব বেসিক জিনিস ভুলে যাই – এগুলো আমাদের সুরক্ষার জন্য, পুলিশের সুরক্ষার জন্য নয়! নিজের জন্যই সীট বেল্ট লাগিয়ে চলুন।

     

    ২০১৮ সালে ভারতে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায় প্রায় দেড় লক্ষ লোক! ভাবতে পারছেন? মানে প্রতি ঘন্টায় ভারতে গড়ে ১৭ জন লোক রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে! আমি এটা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাবার কথা বলছি, গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটছে যেখানে লোক কেবল আহত তার সংখ্যা এর প্রায় দশ গুণ।  তদন্ত করে দেখা গেছে এর মধ্যে প্রায় ৭৮% লোক সীটবেল্ট পরে ছিল না আর ৯০% ক্ষেত্রে ড্রাইভারের ভুলেই এই দুর্ঘটনা।  সীট বেল্ট পড়লেই কি তাহলে এরা সবাই বেঁচে যেত? সবাই হয়ত বাঁচত না – কিন্তু প্রচুর স্টাডি করে দেখা গেছে গাড়ির সামনের সীটে বসে সীটবেল্ট পড়ে থাকলে অ্যাক্সিডেন্টে মরার চান্স কমে যায় প্রায় ৪৫%। 

     

    এটা একটু মনে রাখবেন এখন কার গাড়িতে অনেক সেফটি ফীচার দেওয়া থাকে, নিজে চালালে সেগুলো ঠিক ঠাক কি ভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখে নিন। আর যদি ড্রাইভার ভাড়া করেন তাহলে তাকেও শিখিয়ে দিন কি ভাবে সেফটি ফিচারগুলো ব্যবহার করতে হয়।  শুধু সীট বেল্টের দিকেই নজর দিলে হবে না, খেয়াল রাখবেন যে হেড-রেষ্ট (যেটা মাথার পিছনে থাকে) টাও ঠিক পজিশনে থাকে।  আমরা সবাই ছোটবেলায় নিউটনের গতি/স্থিতি জাড্য পড়লেও অনেকে ভুলে গেছি – সেই সূত্র অনুসারে ধরুণ আপনি জোরে গাড়ি চালাতে চালাতে ব্রেক কষলেন, যদি সীট বেল্ট বাঁধা না থাকে তাহলে সামনের সীটে থাকলে আপনি গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে দূরে ছিটকে পরবেন – আর পিছনের সীটে বসে থাকলে বাইরে হয়ত ছিটকাবেন না, কিন্তু গাড়ির মধ্যেই সজোরে ধাক্কা খাবেন।  এবার ধরুণ আপনি সীট-বেল্ট পরে আছে, ব্রেক কষে দেখেছেন হয়ত যে শরীর সামনের দিকে ঝুঁকতে চায় কিন্তু সীট বেল্ট আটকে রাখে।  শরীর না হয় আটকে দিল সীট বেল্ট, কিন্তু মাথা আর ঘাড়টা কে আটকাবে? শরীরের সাথে সাথে ঘাড় আর মাথাও এগিয়ে যাবে, ধাক্কা খেয়ে থেকে গাড়ি গেলে ওই ঘাড় আবার মাথা নিজের জায়গায় ফিরতে চাইবে – ফলে হেড রেষ্ট থাকলে সেটাতে গিয়ে মাথা ধাক্কা খাবে – আর যদি হেড রেষ্ট না থাকে? তাহলে ঘাড় ভেঙ্গে মানুষ মারা যাবে সীট বেল্ট পরা থাকলেও! ঠিক এই কারণগুলির জন্যই সামনের সীটে বাচ্চা কোলে নিয়ে বা নিজে বসে আর সামনে বাচ্চাকে দাঁড় করিয়ে গাড়িতে চাপবেন না।  এটা ভারতে খুব কমন দেখেছি – কিন্তু খুব বিপদজনক।   

     

     তাই পুলিশ আছে কি নেই, ফাইনের ভয় আছে কি নেই – এই সব না ভেবে নিজের সুরক্ষার জন্য গাড়ির সেফটি ফিচারে কম্প্রোমাইজ করবেন না।  বেড়াতে গিয়ে আমরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই গাড়ি ভাড়া করে ঘুরি – সেখানেও নজর দিন যেন গাড়ির সেফটি ফীচার গুলো ঠিক ঠাক থাকে।  কয়েকশো টাকা কম ভাড়া দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিজের সুরক্ষার ঘাটতি টেনে আনার কোন মানে হয় না।  কিন্তু মুশকিল কি জানেন? মানুষ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই জেনে বুঝেও এগুলো ফলো করে না – যদি কেউ একবার দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরে তাহলে তাকে আর বলতে হবে না এগুলো, সে নিজেই বুঝতে পারবে। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের আর দ্বিতীয় সুযোগ থাকে না নিজেদের ভুল শুধরে নেবার।

     

     আপনারা যারা পাহাড়ে বেড়াতে যান গাড়ি ভাড়া করে বা নিজের গাড়ি নিয়ে তারা প্লীজ এগুলো নজর দেবেন।  নিজের সেফটির দিকে নজর দেওয়া মানে ভীরুতা নয়! যদি কেউ পাশ থেকে টিপ্পনী কাটে ভীতু বলে বা সাজেশন দেয় ‘কাটা এই সব সেফটি নিয়ে ন্যাকামো’ তাদের কথায় প্রভাবিত হবেন না।  অভিজ্ঞ ড্রাইভার চ্যুজ করুন সুযোগ থাকলে – সাবধানে গাড়ি চালাতে বলুন তাকে।  জোরে গাড়ি চালিয়ে থ্রীল নেওয়া আর ডেসপারেশ বা ফুলিশনেসের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে।

     

     সীট বেল্টে না পরে গাড়ি চালানোর মতই আর এক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইলে কথা বলা!  এই নিয়েও অনেক সমীক্ষা হয়েছে – আর সেই সমীক্ষার ফল অনুযায়ী আজকের দিনে প্রায় ৩৫% গাড়ি দুর্ঘটনা হয় গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ব্যবহারের জন্য! নিজে যদি গাড়ি চালান দয়া করে এটা মেনে চলুন – মোবাইলে হাত লাগাবেন না। আধুনিক গাড়ি গুলিতে হ্যান্ডস ফ্রী মোবাইলে কথা বলার ব্যবস্থা আছে ব্লু-টুথের সাহায্য।  আপনার গাড়িতে সেই ফিচার থাকলে ব্যবহার করুন – শুধু লং ড্রাইভের ক্ষেত্রেই নয়, বাড়ির বাইরে আল্প দূরত্ব বেরোলেও সেই একই নিয়ম পালন করুন। কারণ মনে রাখবেন গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট প্রায়শঃই সেকেন্ডের ভাগ্নাংশের ভুলে।  গাড়ি চালাতে চালাতে যদি গুরুত্বপূর্ণ কল আসার আপেক্ষা করেন তাহলে মোবাইল পাশের সহযাত্রীকে (বা স্ত্রী বা ফ্যামিলি) রিসিভ করতে বলুন, এবং পরে কল ব্যাক করবেন বলে দিন। যদি খুবই আর্জেন্ট হয় তাহলে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কল রিসিভ করুন।

     

    তবে আমি ভারতে এই ব্যাপারে যেটা নিয়ে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছি তা হল ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার কথা না শুনলে – মানে সে ড্রাইভার মোবাইলে কথা বলবেই! অনেক ক্ষেত্রে আমরা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যাই – যেমন গত বছর একবার রাতের বেলা অনেক কষ্টে উবের এ করে ফিরছি, ড্রাইভার মোবাইলে কথা বলেই যাচ্ছে গাড়ি চালাতে চালাতে! তাকে বারণ করলাম – সে বলে “আপনার না পোষালে আপনি নেমে যান”!  এই সব ক্ষেত্রে আপনাকে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে – কারণ গভীর রাতে আপনি মাঝ রাস্তায় এই ভাবে নেমে পড়লে আরো বেশী বিপদে পরে যাবেন।  তবে আমি যে দেশেই গাড়ি ভাড়া করে ট্যুরে গেছি, ড্রাইভারের সাথে কথা বলে নিয়েছি যে গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইলে কথা বলা যাবে না – জরুরী হলে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে কথা বলতে হবে।  এতে রাজী হলে তবেই সেই গাড়ি ভাড়া করেছি – তবুও খানিক পরেই এরা ভুলে যায় – তেমন হলে মনে করিয়ে দিতে ইতস্তত করলে হবে না। 

     

     বেড়াতে যদি গাড়ি ভাড়া করেন সেই ড্রাইভার হয়ত দিন-রাত ডিউটি দিয়ে যাচ্ছে – ফলে সে ক্লান্তি নিয়েই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে পেটের দায়ে বা একটু বেশী ইনকামের জন্য।  আমি নিশ্চিত যে আপনাদের সবারই এই অভিজ্ঞতা হয়েছে যে ড্রাইভারের চোখ প্রায় ঢুলে আসছে বা হাই তুলছে! তেমন হলে ততক্ষণাৎ তাকে গাড়ি থামাতে বলুন – এর দাওয়াই হচ্ছে ‘পাওয়ার ন্যাপ’, মানে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মিনিট কুড়ি ঘুমিয়ে নেওয়া।  আপনার এই প্রস্তাবে হয়ত সেই ড্রাইভার অবাক হবে – কিন্তু নিজের সার্থেই এটুকু বিলম্ব আপনি অ্যাডজাষ্ট করে নিলে ভালো হয়।  তবে সবচেয়ে ভালো হয় যখন গাড়ি ভাড়া করবেন তখন যদি একদম ফ্রেস দেখে ড্রাইভার চিহ্নিত করতে পারেন। কাজটা সহজ নয় – তবে সেই ড্রাইভারের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে যদি টের পান সে খুব ক্লান্ত, তাহলে তাকে হায়ার না করাই ভালো।  ও হ্যাঁ, আর একটা কথা – সামনের সীটে ড্রাইভারের পাশে বসে প্লীজ ঢুলবেন না বা ঘুমাবেন না। ঘুম খুব ছোঁয়াছে জিনিস – আপনার থেকে সেই জিনিস সংক্রামিত হবে ড্রাইভারের মধ্যেও। তাই যদি একান্তই ঘুম পেয়ে যায়, পিছনের কারো সাথে সীট পালটে নিন, বা নিজে পিছনের দিটে চলে আসুন। 

     

     এরোপ্লেনের রানওয়ের মত লম্বা কালো পীচের রাস্তায় একপ্রান্তে গাড়িতে আমি – পাশে একজন ট্রেনার।  সেবারেই প্রথম ‘ডিফেনসিভ ড্রাইভিং’ ট্রেনিংটা নিচ্ছি। আরো অনেক অনেক ট্রেনিং এর মত আমাদের কোম্পানী থেকে এই ট্রেনিংটাও দেওয়া হয় – প্রথম বার ট্রেনিং নিলে দুইদিনের কোর্স, আর তার পরে প্রতি দু বছর অন্তর রিফ্রেসার কোর্স একদিনে। যাই হোক, প্রথম দিন থিওরির সব ক্লাস হয়েছে – সেফ ড্রাইভিং কাকে বলে, গাড়ির নানা বিধ সেফটি ফিচার ইত্যাদি ইত্যাদি – এবার হাতে কলমে করে দেখার পালা। আমি আর ট্রেনার তাই সেই বিশেষ ভাবে অ্যাডাপ্ট করা ট্রেনিং গাড়িটায় ঢুকেছি প্র্যাক্টিক্যাল করব বলে।  আমাদের সামনে অনেক দূরে সেই রানওয়ের মত রাস্তাতেই পর পর কয়েকটা খড়ের বস্তা দিয়ে পাঁচিলের মতন করা আছে।  ৫ মিটার অন্তর অন্তর এমন গোটা পাঁচেক খড়ের বস্তার পাঁচিল।  এই টাস্কটা আর কিছুই নয় – ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে গাড়ি চালিয়ে একসময় পুরোপুরি ব্রেক (ফুল ব্রেক যাকে বলে) করে প্রথম খড়ের পাঁচিলটার কত কাছে এসে থামাতে পারবে গাড়ি। যে সবচেয়ে কাছে থামাতে পারবে খড়ের পাঁচিলের, সেই জিতবে – আমরা ট্রেনিং এ ছিলাম ১৫ জন ছেলে-মেয়ে।  এই ট্রেনিং-টা ডিজাইন করা হয়েছে একটা ফিলিং পাবার জন্য যে গাড়িতে ব্রেক মারলেই তো আর গাড়ি থামবে না! যত জোরে গাড়ি যাবে তত দূর লাগবে গাড়ি থামতে পুরোপুরী ব্রেক মারার পরেও।

     

     এবার একটা প্রশ্ন করি আপনাদের – যদি মনে করুন ৫০ কিমি/ঘন্টা বেগে গাড়ি চালাচ্ছেন, তাহলে মোটামুটি কতদূরত্ব যাবে গাড়িটা আপনি ফুল ব্রেক মারলেও? পদার্থ বিদ্যার সূত্র দিয়ে গণনা করা যায় – অবশ্য একটা ব্যাপার আছে, রাস্তা কেমন তার উপর নির্ভর করবে, রাস্তা শুকনো বা ভিজে তার উপরেও।  শুকনো পীচের রাস্তা হলে ৫০ কিমি/ঘন্টা বেগে গাড়ি চালালে ব্রেক করার পর সেই গাড়ির পুরোপুরি থামতে মোটামুটি চল্লিশ মিটার মত লাগবে! এটা আমরা থিওরিতে শিখেছিলাম – তাই সেই দিন প্র্যাকটিসে গাড়ি চালিয়ে আইডিয়া করে ৮০ মিটার আগে থেকে ব্রেক করে খড়ের পাঁচিলের আগে থামতে হবে। এটাও অনেকে পারে না ঠিক ঠাক – অনেকে তো দেখলাম দুই তিনটে খড়ের পাঁচিল ধাক্কা মেরে তবে থামলো।  এটা জানা কেন জরুরী জানেন? এই আইডিয়া থাকলে আপনি মেনটেন করার চেষ্টা করবেন একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব আপনার আগের গাড়িটার থেকে।  অবশ্য এই ক্ষেত্রে আপনাকে ওই ৪০ মিটার পিছনে যেতে হবে না – ঠিক ততটাই দূরত্বে যাওয়া উচিত যেখান থেকে আপনি সামনের গাড়িতে কিছু হলে রিয়্যাক্ট করতে পারবেন।  সামনের কোন দৃশ্য দেখে তা আমাদের মস্তিষ্কে যাবে – তারপর মস্তিষ্ক সেটা অ্যানালিসিস করে আপনার গাড়ি চালাবার হাত বা ব্রেক দেবার পা কে নির্দেশ দেবে কি করতে হবে। মোটামুটি যদি ধরা যায় পুরো ব্যাপারটা ১.২ সেকেন্ড মত সময় লাগবে, তাহলে আপনি বের করতে পারবেন আপনার রিয়্যাকশন ডিসট্যান্স কি হওয়া উচিত।  ৫০ কিমি/ঘন্টা বেগে গেলে সেই ডিসট্যান্স হওয়া উচিত ২০ মিটার মত।  তাই হাইওয়েতে গাড়ি চালাতে গেলে গোল্ডেন রুল হচ্ছে দুটো গাড়ির মধ্যে যেন পাঁচখানা গাড়ি ঢুকে যাবে এমন ফাঁক থাকে। কি মনে হয় – এটা আমরা মেনে চলি ভারতে? দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে তো দেখেছি একদম পিছনে পিছন ঠেকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে পাবলিক! কিন্তু যে কোন উন্নত দেশে দেখবেন তারা এই দূরত্ব মেনটেন করে চলে।  আমাদের সেই দিনের ট্রেনিং-এ শুকনো রাস্তায় ব্রেকিং করার ট্রেনিং হল এবং তার পরে রাস্তায় জল ঢেলে সেই ভিজে রাস্তায়। বুঝলেই পারছেন ভিজে রাস্তায় ফুল-ব্রেক দাবাবার পর গাড়ি আরো বেশী দূরে গিয়ে থামবে শুকনো রাস্তার থেকে।

     

    রোড সেফটি আর আগুন নিয়ে তো আলোচনা হয়ে গেল – এবার খেয়াল করে বলুন তো বেড়াতে গিয়ে রিস্কের দিক থেকে এই দুইয়ের পরে কি আসতে পারে?  অনুমান করতে পারছেন? বেড়াতে বা ভ্রমণে তৃতীয় বৃহত্তম রিস্ক হল চুরি/ডাকাতি/রাহাজানির/জিনিস হারিয়ে যাবার ভয়। 

     

    তাহলে এবার তৃতীয় প্রশ্ন আপনি নিজে নিজেকে করুন

     

    -                     চুরি/ডাকাতি/রাহাজানির/জিনিস হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করার জন্য আপনি ঠিক কি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? 

     

    কিছু না কিছু ব্যবস্থা আমরা সবাই নিই – সবচেয়ে কমন হল, ব্যাগে চাবি লাগানো, ভালো করে নাম লিখে রাখা ব্যাগেজ ট্যাগে আর টাকা পয়সা বেশ যত্ন করে রাখা। যারা বেড়ানোয় পোক্ত, বিশেষ করে বিদেশ বেড়ানোয়, তাঁদের মধ্যে একটু বেশী সচেতনতা দেখেছি ‘ডকুমেন্ট’ (পাসপোর্ট ইত্যাদি) এর সুরক্ষা নিয়ে।  এগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ – এছাড়া আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আপনি স্টেপ আপনি নিতে পারেন – যেমন

     

    -                     সব কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, যেমন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, পাসপোর্ট, টিকিট, হেলথ ইনসিওরেন্স – এগুলো সব ফটোকপি করে নিজের কাছে রাখুন।  এবং এগুলো হারিয়ে গেলে কোথায় কনট্যাক্ট করতে হবে সেই ফোন নাম্বারগুলিও নোট করে রাখবেন।

     

    -                     কোথায় যাচ্ছেন, কোন হোটেলে থাকছেন – পুরো ট্রাভেল আইটেনারী ফ্যামিলি বা অফিসের কারো কাছে রেখে যান। 

     

    -                     এয়ারপোর্ট বা ট্রেন থেকে নেমে কোথায় যাবেন, হোটেলের অ্যাড্রেস সব প্রিন্ট বা ডিটেলসে লিখে হাত ব্যাগে রেখে দিন।  যদি এমন জায়গায় যান সেখানে ভাষার প্রবলেম হতে পারে আগে থেকে জানেন, তাহলে তো এই স্টেপটা খুবই জরুরী।

     

    -                     হাতের কাছে যেন এমারজেন্সী নাম্বার গুলো নোট করা থাকে – যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার পুলিশ, ফায়ারবিগ্রেড বা অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর নোট করে নেওয়া তো মিনিমাম। 

     

    হোটেলের আগুন লাগা নিয়ে তো আগেই লিখেছি। কিন্তু আগুন লাগা ছাড়াও হোটেলের আরো কিছু সেফটির দিকে নজর রাখা উচিত যখন বেড়াতে যাবেন।  হোটেল এমন চ্যুজ করুন (জায়গা বিশেষে, যদি সুযোগ হয়) যেখানে রুমে সেফটি লকার আছে, আছে দরজায় পিপ-হোল এবং ডেডবোল্ট।  সব এলিভেটারে হয়ত সি সি টি ভি ক্যামেরা থাকে না, যদি না থাকে তাহলে সন্দেহজনক দেখতে মনে হলে তেমন লোকেদের সাথে লিফটে একসাথে উঠবেন না।  সাথে যদি বয়ষ্কা কেউ থাকে – তাহলে হোটেলে এমন রুম বেছে নিন যেগুলো ছয় তলা বা তার নীচের। কারণ দমকলের মই ছয় তলা পর্যন্ত উঠতে পারে, সেক্ষেত্রে উদ্ধার কার্যে সুবিধা হবে। 

     

     দামী জিনিস পত্র হোটেলের লকারে রেখে বের হোন।  হোটেলের দরজায় কেউ কড়া নাড়লে আগে পিপ-হোল দিয়ে দেখে তবেই খুলুন আর তখন যেন ডেড-বোল্ট লাগানো থাকে।  এটা মনে রাখবেন যে যদি ‘মেক আপ মাই রুম’ সাইন বাইরে ঝুলিয়ে দেন তাহলে এটা বোঝায় যে রুমে কেউ নেই। সেই মত ভেবে কাজ করবেন।  হোটেলের আশে পাশের জায়গা যদি চেনা না হয়, তাহলে রিসেপশনে জিজ্ঞেস করে নিতে ভুলবেন না যে আশেপাশের ‘সেফ’ বা ‘আনসেফ’ জায়গা কোনগুলি। 

     

     পরিশেষ কতকগুলি জেনারাল পরামর্শ – স্ক্যামের হাত থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন।  কিছু কিছু দেশের কিছু জায়গা এই ধরণের স্ক্যামের জন্য বিখ্যাত।  যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন তার সম্পর্কে ইন্টারনেটে একবার সার্চ দিয়ে দেখে নিতে পারেন তেমন কিছু স্ক্যাম রিপোর্টেড আছে কিনা।  জানা থাকলে সেই সব স্ক্যামের থেকে দূরে থাকুন – বাহাদুরি করার কোন দরকার নেই, বা আমি ওদের থেকে চালাক এমন প্রমাণ করার জন্য জেনেশুনে তাদের ফাঁদে পড়ারও কোন দরকার নেই। মনে রাখবেন ওই যারা স্ক্যাম করে তাদের ওটাই ফুলটাইম কাজ – কাজেই খোদার উপর খোদ্গিরি করবেন এমন ভাব দেখাবেন না।  আপনার থেকে ওরা সর্বদাই এক স্টেপ এগিয়ে থাকে।  সর্বদা মনে রাখবেন সেই বিখ্যাত ইংরাজী প্রবাদ বাক্য “ইফ ইট সাউন্ডস টু গুড টু বি ট্রু, ইট প্রবেবলি ইজ”!

     

     ঘুরতে গিয়ে একদম তন্ময় হয়ে ভাবসমুদ্রে ডুবে যাবেন না পুরোপুরি – এমন অনেক জায়গা আছে যা হয়ত আপনার অনেক দিনের স্বপ্নের জায়গা, তাই সেখানে গিয়ে বাস্তবকে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু মনে রাখবেন সেটা যদি ভীড় যায়গা হয় তাহলে আপনার আশেপাশে অনেক মহাপ্রভু সিঁধিয়ে আছেন যারা আপনার ভাবলোকে হালকা হয়ে যাবার অপেক্ষা করছেন – আপনি ভাবে হালকা হবেন, আর তারা আপনার পকেট বা ব্যাগ হালকা করবে!  গ্রুপে বেড়াতে গেলে দেখবেন কিছু সবজান্তা টাইপের লোক থাকবেই গ্রুপে যারা কোন কিছু দেখেই বিষ্মিত হয় না, তা সে মোনালিসার ছবিই হোক, বা নায়াগ্রা জলপ্রপাত, বা মিশরের পিরামিড।  অন্য সময় এদের এড়িয়ে চললেও ভীড় জায়গায় এদের আশেপাশে থাকার চেষ্টা করবেন। কারণ এরা কোন কিছুতেই বিষ্মিত না হয়ে জাগতিক জিনিসের ব্যস্ত থাকবেন – ফলে সচেতন। 

     

     খামোকা বিনা দরকারে কথায় কথায় পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করবেন না, বা পাউচ থেকে টাকা। দরকার হলে কিছু টাকা আলাদা করে জাষ্ট পকেটে এমনি রেখে দিন – দরকারে সেগুলি ব্যবহার করুন।  হাতে ট্রাভেল গাইড বুক বা ম্যাপ খুল্লাম-খুল্লা নিয়ে ঘুরবেন না। কারণ এগুলো দেখে চোরেরা চট করে টার্গেট করে ফেলে কে টুরিষ্ট সেখানে আর কে স্থানীয় লোকজন! একটা খবরের কাগজে মুড়িয়ে নিন বইটা, বা ম্যাপটা কাগজের আড়ালে রেখে ক্যারি করুন।  যদি এ টি এম থেকে টাকা তুলতে চান, তাহলে সেই কাজ দিনের বেলাতেই সেরে নিন।  রাতের বেলা ফালতু ঝুঁকি নেবেন না টাকা তুলে। 

     

    ডকুমেন্ট নিয়ে খুব সচেতন থাকুন – খুব ইমপরট্যান্ট ডকুমেন্ট (পাসপোর্ট) ছোট প্যাকে আলাদা করে ভরে তবে বড় ব্যাগে রাখুন। কারণ অনেক মিউজিয়াম বা প্যালেস ইত্যাদিতে ঢুকতে হলে বাইরে ব্যাগ জমা দিয়ে যেতে হয় – কোন ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নথি কাউন্টারে জমা দেবেন না।  ব্যাগ জমা দেবার আগে সেই ছোট পাউচ বের করে নিজের কাছে রেখে দিন।  একদম অচেনা জায়গায় বা রাতের বেলার দিকে গ্রুপে পরিভ্রমণ করুন।  কোন রকম বিপদে পরলে আশেপাশের লোকজনের কাছে সাহায্য চাইতে একদম ইতস্তত করবেন না। 

     

     আরো অনেক কিছু লেখা যায় – তবে এর বেশীর ভাগই কমন সেন্স, তাই আর আলাদা করে লিখলাম না।  রাস্তার দুর্ঘটনার তদন্তে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় ৯০% এর বেশী ড্রাইভার নিজেকে ভালো ড্রাইভার মনে করে অন্যজনের থেকে।  তবুও দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে – দুটো ভালো ড্রাইভারও এড়াতে পারছে না সেটা।  আমাদের মানুষের মধ্যেও অনেকটা সেই ভাব আছে – আমরা প্রায় সবাই নিজেদের বেশী বুদ্ধিমান ভাবি অন্যদের তুলনায়।  আমার ক্ষেত্রে এটা হতে পারে না – এই ধারণাই অনেক ক্ষয়-ক্ষতির জন্য দায়ী হয়ে যায়।  তাই বলি কি সুরক্ষার ব্যাপারে অতি চালাক না হয়ে বা ফাঁকি বাজি না দিয়ে একটু বেশী ভাবলেনই না হয়! নিজের জন্য – নিজের কাছের মানুষদের জন্য! 

     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৮ মে ২০২১ | ৩১৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Manoj Ray | 202.8.***.*** | ০৮ মে ২০২১ ১৯:১৩105713
  • ভালই । কিন্তু কতলোক ঠিকঠাক মেনে চলবে ?

  • @2c | 2402:3a80:1152:935f::4f8:***:*** | ০৮ মে ২০২১ ১৯:৪৪105716
  • খুব ভালো লাগল,প্রতিটি লেখায় বেশ লাগে পড়তে,কিন্তু আজকের লেখাটাই শুধু লিসবনের ছবি পেলাম,অন্য ছবি আর পেলাম না.....

  • সুকি | 49.207.***.*** | ০৯ মে ২০২১ ০৮:১৭105730
  • আপনাদের ধন্যবাদ।


    নিজের কাজের সূত্রে সেফটি নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করতে হয় - প্রচুর ইন্ডাষ্ট্রি দুর্ঘটনার তদন্তেও যুক্ত থাকতে হয়।  

    আমাদের দেশে সেফটি নিয়ে সচেতনতা এত কম আর রোড সেফটি নিতে তো না বলাই ভালো। একটু সচেতনতা গড়ে তোলা কিছু এমন বিশাল কিছু ব্যাপার নয় - কিন্তু আমরা বেশীর ভাগই উদাসীন! খুব খারাপ লাগে এটা দেখে - কত চেনা জানা আত্মীয় পরিজনকে হারাতে হয় এমন অসচেতনার জন্য

  • শিবাংশু | ০৯ মে ২০২১ ১২:৫৩105755
  • খুবই কাজের কথা সব।


    দুটো ঘটনা আমার মনে পড়ছে। বেশ কিছুদিন আগে শ্রীলংকার ক্যান্ডি শহরে আমার কোলের উপর রাখা ক্যামেরাটি সিটবেল্টে জড়িয়ে যাওয়ায় সিটবেল্ট একটু খুলে ক্যামেরার বেল্টটি বার করে নিচ্ছিলুম। কয়েক সেকন্ডের ব্যাপার। অত্যন্ত সপ্রতিভ পুলিশ পলকের মধ্যে গাড়ি থামালেন। চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করার আদেশ হলো। তখন আমি একজন বিদেশী হিসেবে ক্ষমা প্রার্থনা করে চালককে বিপন্মুক্ত করলুম। এসব ব্যাপার আমাদের দেশে ভাবা যায় না। 


    আরেকটি গল্প। গিয়েছিলুম ভুজ। ফেরার সময় দেখি চালক যাত্রার শুরু থেকেই ঘুমগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। আমি বার বার বলায় তিনি গাড়ি থামিয়ে চোখেমুখে জল দিলেন। দুবার চা খেলেন। কিন্তু মিনিট দশের মধ্যেই দেখি গাড়ি টাল খাচ্ছে। আমি পাশের হ্যান্ডব্রেক টেনে গাড়ি থামালুম। চালককে বললুম, আপনি পাশে এসে বসুন। আমি গাড়ি চালাবো। কিছুতেই রাজি নন। যখন বলি পুলিশকে ফোন করছি। তখন অত্যন্ত অনিচ্ছার সঙ্গে এসে পাশের সিটে বসলেন। আমি ভুজ থেকে সানন্দ পর্যন্ত তিনশো কিমি নিজেই চালিয়ে আনলুম। এদেশে এই ব্যাপারটা 'চলতা হ্যাঁয়'....   

  • সুকি | 49.207.***.*** | ১০ মে ২০২১ ১৭:৩৬105829
  • ধন্যবাদ শিবাংশুদা - আমি আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, ভারতের উত্তর দিকের গাড়ি চালাবার সময় রাস্তায় লোকজন যেন অনেক বেশী অ্যাগ্রসিভ দক্ষিণ ভারতের তুলনায়।  জানি না এটা কেবল আমারই মনে হয় নাকি এটা সর্বজন স্বীকৃত!  

  • শিবাংশু | ১১ মে ২০২১ ১১:১৪105857
  • @সুকি, 


     ঠিকই বলেছো। একজন আগমার্কা উত্তরভারতের 'লঠমার' কালচারের লোক আমি এবং দীঘদিন দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় থেকেছি। বিন্ধ্যের উত্তর দক্ষিণে অনুশাসন সংস্কৃতিটি বেশ খানিকটা আলাদা। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন