অসাধারন লেখা, সুকান্ত বাবুর অন্য অনেক লেখার মতোই এটাও পড়তে দারুন লাগলো। ঘুরতে গিয়ে নানারকম ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে। এর মধ্যে সবচে মজার দুটো মনে পড়ছে। ফ্যামিলি নিয়ে একটা ডে ট্রিপে গিয়েছি, আমাদের গাইড ছিলেন একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। এই দুজনের সাথে আমার খুব আলাপ হয়ে গেছিল, আমার মেয়ের সাথেও ওদের ভালো জমেছিল। বেশ খানিকক্ষন পরে মেয়েটি জিগ্যেস করেছিল, তোমরা কোন দেশের? আমি যেই বলেছি ইন্ডিয়ান, মেয়েটি বলে উঠেছে, ইন্ডিয়ান? কিন্তু ইন্ডিয়ানরা তো!...এই অবধি বলে মেয়েটি ঢোক গিলে বলে, মানে তোমরা তো খুব ভদ্র আর ভালো, তাই ভাবছিলাম....
আমি পরিষ্কার বুঝলাম কি বলতে গেছিল, তো বললাম, সব ইন্ডিয়ান কি আর এক রকম? আর আমরা আসছি ইন্ডিয়ার সাদার্ন পার্ট থেকে, সেখানের লোকজন খুব ভালো হয়।
আরেকবার অনেক বছর আগে, স্কিপোল এয়ারপোর্টে লে-ওভারে বসে বসে এক ইজরায়েলির সাথে আলাপ হয়েছে। সেও আমাকে জিগ্যেস করেছে, তুমি কোন দেশের? আমি যেই বলেছি ইন্ডিয়ান, বলে ও, তুমি আইটি গাই? ইন্ডিয়ান মানেই আমি জানি আইটি। তাতে আমি বল্লাম, তাহলে কি তুমি মোসাদ, কারন আমি জানি ইসরায়েলি মানেই মোসাদ আর অপারেশান থান্ডারবোল্ট। তখন দুজনেই খুব হাসলাম। আর হোটেলে দোকানে কফি শপে কতোরকম বিচিত্র অভিজ্ঞতা যে হয়েছে সে আর বলার নয়। একবার এক হোটেলে লাইভ ব্যান্ড শেকিন স্টিভেন্স এর গান গেয়ে শুনিয়েছিল, পরে গিয়ে লিড সিঙ্গার এর সাথে আলাপ করেছিলাম, বলেছিলাম এটা আমার খুব প্রিয় গান, ছোটবেলার অনেক কথা মনে পড়লো। তারপর অনেকক্ষন আড্ডা মেরেছিলাম।
সুকান্তবাবুকে ধন্যবাদ :-)
গ্রেট সুকি!
ভারতের হোটেলেও তোয়ালে ইত্যাদি মেরে দেওয়া, স্টাফদের ধমকানো দুর্ব্যবহার অনেকবার চোখে পড়ে। লাইনে এগিয়ে যাওয়া, বুফেতে হাভাতেপনা, লাউড ব্যবহার বাঙালি পর্যটকদের মধ্যে বেশি দেখেছি। অবশ্য আমার স্যাম্পলই যে রিপ্রেজেন্টেটিভ এমন দাবি করছিনা। কিন্তু করণীয় এবং অ-করণীয় কাজের লিস্টটি মূল্যবান।
অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যাণ্ডে কেউ টিপস দেয় না, বেয়ারারা টিপস পাবে এমন আশাও করে না। তবে কাফেতে খেতে গেলে খাওয়া শেষ হলে কাপ প্লেট কাউন্টারে রেখে আসাটাই রীতি। তা একবার কলকাতায় একটি কাফেতে খাওয়া শেষ করে আমি কাপ প্লেট কাউন্টারে নামিয়ে রাখতে গেছি অভ্যাস বশত। কাউন্টারের ছেলেটি অবাক । পরে দু একবার যাবার পর খুব ভাল ব্যবহার করতেন ।
আসলে দেখবেন যা লিখেছেন সবটাই বেসিক কার্টসির ব্যাপার । অনেকে মানে না, অনেকে জানে না।
এ বিষয়ে পুরু শেষ কথা বলে গেছেন--্যেমন ব্যবহার আপনি আশা করেন সেরকমটাই অন্যের সাথে করবেন।
এয়ার বি এন্স বির ক্ষেত্রে আরেকটু যত্নবান হবেন বিশেষত কারুর বাড়ি
a একেবারে খাঁটি কথাটা বলে দিয়েছেন :-) আর এটা শুধু বেড়ানোর সময়ে না, যেকোন জায়গাতেই সত্যি। যেমন ব্যবহার আমি নিজে আশা করি, সেরকমই ব্যবহার আমি অন্যদের সাথে করি। অনেকবার দেখেছি, অন্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেই তারা খুব খুশী হয়ে ভালো ব্যবহার ফেরত দেয়।
সুকির লেখা যেরকম হয়, মোস্টলি খুব ভাল আর দুর্দান্তর মাঝামাঝি। আর টপিকগুলোও বাছে খাসা।
আমার এই কার্টসি, আদব-কায়দা এসব নিয়ে একটা থিওরি আছে। দেখেছি খেটে যায়। যে যত হাই-পপুলেশন ঘিঞ্জি জায়গায় বড় হয়েছে, তার কার্টসি-সেন্স তত অ্যাগ্রেসিভ। এ ব্যাপারে ভারতীয়দের খুব কাছে থাকবে চীনেরা।
পপুলেশন দাদা, পপুলেশন। লড়াই না করলে যেখানে রেশনের চাল অব্দি মেলে না, সেখানে ভদ্রতা চুলোয় যাক। রক্তে মিশুক 'লড়কে লেঙ্গে বুফেকা আইটেম'।
খুব প্রাসঙ্গিক লেখা। এখানে বিদেশী অনুষঙ্গগুলি বেশি এসেছে। দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের পর্যটকদেরও মধ্যেও অনেক ধরনের ব্যবহারবিধি দেখা যায়। কিছু মজার, কিছু দুঃখজনক। আমাদের রক্তে আছে বর্ণাশ্রম আর অনুশাসনহীনতা।
ডিসি, রঞ্জনদা, অরিন-দা, ন্যাড়াদা, এ, শিবাংশুদা এবং আরো যারা পড়লেন তাঁদের ধন্যবাদ
ডিসি, আপনার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবার জন্য ধন্যবাদ। অনুরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার নিজেরও। তেমন কিছু করার নেই বলে প্রবোধ দিয়েছি নিজেকে।
অরিন-দা - একমত। বেশীর ভাগটাই বেসিক কার্টসি এবং কমন সেন্সের ব্যাপার। তাই সেটার উল্লেখ করে দিয়েছি আলাদা করে লেখায়।
রঞ্জন-দা, আপনার পর্যবেক্ষণ সত্যি বলে আমিও শুনেছি। বাঙালি টুরিষ্টের তেমন ভালো নাম নেই। তবে এই ব্যাপারে আমার নিজের অভিজ্ঞতা কম। খুব বেশী কাছ থেকে দেখা হ্য় নি ।
ন্যাড়াদা - আমার নিজেরও অন্যালেসিস একই সিদ্ধান্তে পৌঁছাছে যে কম্পিটিশন থাকলে অনেক সময় অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং সেটা প্রায় 'স্বাভাবিক' ইনস্টিঙ্কট হয়ে ওঠে একসময়। সিম্পল একজাম্পেল, বিদেশে অনেক জায়গায় ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেছি যে একটা স্বাভাবিক সরল কাজ করতে এত সময় নেয় যে এদের দিয়ে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক একবেলা চালানো দুষ্কর হয়ে উঠবে! বা এরা নিজেরাই রিজাইন করে দেবে! তবে কম্পিটিশনের ব্যাপারে আউটলেয়ার তো আছেই - এই এশিয়াতেও। যেমন সিঙ্গাপুর বা জাপান। এত বেশী কম্পিটিটিভ, কিন্তু বেসিক কার্টসী মেনেই চলে সবাই মোটামুটি।
শিবাংশু-দা, আসলে ভারতের ভিতর আমার বেড়াবার অভিজ্ঞতা খুব বেশী নয় - আপনার তুলনায় তো কিছুই নয়। তাই লেখায় নিজের দেখাটা বলতে গিয়ে বিদেশের গল্প চলে এসেছে।
ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে সুকি। খুব দরকারি পয়েন্ট সবকটাই। বিশেষ করে ইন্ডিয়ানদের পাবলিক প্লেস বা ইভেন অফিস বিহেভিয়ার এটিকেটস এতো বাজে যে বলার নয়। মাল্টিন্যাশনাল বা মাল্টিকালচারাল জায়গা বা অফিসে কয়েকটা ইন্ডিয়ান এক হলেই জোরে জোরে হিন্দিতে বা নিজের মাতৃভাষায় কথা বলা যে বাকিদের কাছে কতোটা ইরিটেটিং - সেটা বোঝার কমন সেন্সই নেই বেশির ভাগের।
খুব ভালো লাগল সুকি। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। :)
তিনটি দশক ধরে বাইরে থেকে পরবাসকেই স্বদেশ করে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় এই কমনসেন্সের চর্চাটা বড় প্রাপ্তি।
ন্যাড়াদার পয়েন্টের সাথেও নিজেকে মেলাতে পারি।
ভারতীয়দের এই কমন সেন্সগুলো না থাকার আরেকটা কারণ কোথাও এগুলো শেখানো হয় না বা বলা হয় না। স্কুলেও বা এই সহজ সরল কথা গুলো কোথায় সেখান হয়? কানাডায় দেখি স্কুল এর প্রাইমারি ক্লাস গুলো তে পড়াশোনা তো কিছুই হয় না বরং শিষ্টাচার, স্বাস্থ্য ,জীবনবোধ, ইমোশন ম্যানেজমেন্ট, কালচারাল ডাইভারসিটি এইসব শিক্ষাতেই বেশ কয়েক বছর লেগে থাকে। এই ধরণের লেখা বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ হওয়া খুব জরুরি।
আমেরিকায় গিয়ে লোকেদের সুভদ্র ব্যবহারে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে যেতে যেতে একবার গ্রেহাউন্ড চেপে পেন স্টেশনে নেমে এক্কেবারে অ্যাট হোম ফিল করেছিলাম, ন্যাড়াদার তত্ত্বটা রিয়েলাইজ করেছিলাম।
তবে সবাই ভারতীয়দের এত গাল দিচ্ছেন, খবিশ সাহেব কী আর নেই? বিলিতি জোকবুকগুলোতে তো তোয়ালে নিয়ে যাওয়া টাওয়া হামেশাই থাকতো।
জাতিগত বৈষম্য, প্রোফাইলিং - যত তিক্ত পূর্ব অভিজ্ঞতাই থাকুক, কোন কিছু দিয়েই জাস্টিফাই করার আমি ঘোরতর বিপক্ষে। আন্তর্জাতিক খদ্দের নিয়ে ব্যবসা করতে হলে কালচারাল কন্ডিশনিং, ডেমোগ্রাফিক মাথায় রেখেই করতে হবে।
আরেকটা আমার বিরক্তি লাগে আমেরিকায় টিপের দাবি। আমি এমনিতে ঘোরতর সাধ্যবিত্ত এবং, ফলতঃ কিপ্টে হলেও হাত খুলে টিপ দিতে ভালোবাসি, ছোটবেলায় একটা গল্প পড়েছিলাম, একটা বাচ্চা ছেলে আইস্ক্রিমের দোকানে গিয়ে দোকানীকে দাম জিজ্ঞেস করে করে ব্যতিব্যস্ত করে দিয়েছে, তারপর সব্চে সস্তা আইস্ক্রিমটা কিনেছে, কিন্তু তারপরও তার কাছে পয়সা আছে দেখে দোকানী অবাক হওয়াতে সে বললো, তোমাকে টিপ দিতে হবে যে! - তো ঐটা মাথায় থাকে। কিন্তু আমেরিকায় টিপের দাবীর পক্ষে যুক্তি দেয় ওয়েটারদের মাইনে কম। তো মালিকদের বলনা বাপু মাইনে বাড়াতে! বড় বড় কর্পো চেনে তো ছেয়ে আছে, ওরা এত কম মাইনে দেয় কেন?
সর্ষের তেল মেখে সুইমিং পুলে নামা বা বেয়ারাকে ধমকানো খুবই খারাপ, তবে প্রথম বিশ্বের সাহেবসুবোরাও আমাদের পাড়ায় গিয়ে কম বেয়াদপি করে না। তাই এটিকেট শেখা ভালো এবং জরুরী তবে ভারতীয়দের গাল দেওয়ার মানে নেই।
এই প্রসঙ্গে মনে পড়লো, একটা উচ্চ্মার্গের মিটিংএ ক্রেতাপক্ষ সব (দক্ষিণ) ভারতীয় আর বিক্রেতাপক্ষ আমেরিকান। আমেরিকানরা বারবার দক্ষিনী উচ্চারন বুঝতে পারছে না, মাপ করুন মাপ করুন বলছে। বিক্রেতাপক্ষের দলপতি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, দেখো বাপু, আইটি মার্কেটে টিকে থাকতে চাইলে ভারতীয় উচ্চারনে একটু অভ্যস্ত হয়ে এসো।
দক্ষিণীদের মাথা নাড়ানো সায়েবদের বেজায় ঘেঁটে দেয়।
কিন্তু সুকি তো বলেনি বাকিরা সবাই ভালো। জাস্ট এটা যেহেতু মেনলি বাঙালি আকা ভারতীয়দের ফোরাম, তাই আমাদের জেনারেল ড্র-ব্যাক গুলোই জাস্ট পয়েন্ট আউট করছে মনে হলো। ঠিকই লাগলো ।
একলহমাদা, কাকতাড়ুয়া, হুতো - ধন্যবাদ।
অরিনদা, এটা কিন্তু ঠিক বলেছেন - আমি নিজে এটা অনেকদিন খেয়াল করি নি। একবার আমার বন্ধু শন্ বলছিল যে ওকে এক ইন্সপেকশন ম্যানেজার রিপোর্ট করে, সে সাউথ ইন্ডিয়ান। শন বলে সে মাথা নাড়ালেই আমি বলি - উহঁ, ওই ফাঁদে আমি আর পা দিচ্ছি না - মাথা নাড়াবে নাড়াও, কিন্তু মুখে বল কাজটা হবে কি হবে না :)
হুতো, আমি ভারতীয়দের গাল দিচ্ছি না। অমিতাভদা যে বলল, এটা বাঙালি-ভারতীয় ফোরাম বলে এবং আমি নিজে ভারতীয় হিসাবে প্রোফাইলিং এর শিকার হই বলে এই প্রসঙ্গ এসেছে। এমন কোনই দাবী নেই যে বাকি দেশের টুরিষ্ট সবাই ভদ্র - এবং সেটা লিখেওছি। ভালো-মন্দ সব মিলে মিশেই আছে সব দেশে - অনুপাতের তফাত আর কম্পিটিশনের (ন্যাড়াদা উল্লিখিত) এই যা।
অনেকে ব্রেকফাস্টে সবার আগে ডেসার্ট সেকশনে দুহাতে দুই প্ল্যাটার নিয়ে সব ডিলেকটেবল জিনিস বোঝাই করে টেবিলে নিয়ে এসে অন্যান্য খাবার আনে!