
চাকরির অফার লেটার হাতে পাওয়া। এমন কোর্সের কোনও লুকনো চ্যাপ্টারে কি শেখানো আছে ইন্টারভিউ প্যানেলের লোকজনদের খুশি করার আরও নানা টিপস? জানতে বড় সাধ হয়।
টেলিভিশন-রিমোটের মিউট বোতাম টিপলে যেমন স্তব্ধ হয়ে যায় সবকিছু, আমরা সবাই মিলে হয়তো মুখে কুলুপ এঁটেছি তেমনই। কত হাজার পরীক্ষার্থী টাকার জোরে চাকরি পেয়েছেন, তা অজানা। আলকাতরায় চোবানো আসল পরিসংখ্যান কোনওদিন প্রকাশ্যে আসবে কিনা জানা নেই তাও। বিশ্বকবির নোবেল উদ্ধারের রূপকথার মতো যদি কোনওদিন সেই তালিকা আমাদের সামনে আসে, তা হলে সফল প্রার্থীদের জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, ‘লক্ষ লক্ষ টাকা আপনারা দিয়েছিলেন কেন?’ হলফ করে বলা যায়, এই টাকা যোগানোর জন্য তাঁদের অনেকে বাস্তুভিটে বন্ধক রেখেছেন, জমি বিক্রি করেছেন। ধরা পড়ে গেলে ক্যামেরার সামনে তাঁরা হয়তো মাথা নীচু করে, দুগালে অশ্রুধারা নিয়ে বলবেন, ‘একটা চাকরির বড় দরকার ছিল স্যার।’ আর মুখের সামনে থেকে বুম সরে গেলেই বিড়বিড় করবেন, ‘টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি, কষিয়ে থাপ্পড় মারতে পারিনি বলেই।’
গ্যাস সিলিন্ডারের ভর্তুকি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া নিয়ে যেমন প্রচার দামামা বাজে, বিনা পয়সায় সাইকেল বিতরণ নিয়ে যেভাবে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে বার্তা রটিয়ে দেয় সরকারি মহল, মনে হয়, একই পরিমাণ অর্থ খরচ করা উচিত নিয়োগ দুর্নীতি রুখতে, ঘুষের ঘুষঘুষে সংস্কৃতি রুখতে। ছোটবেলায় বড়দের মুখ থেকে শুনেছি, ‘এক কথা বার বার বলে কান পচিয়ে দিলি একেবারে।’ সরকারি মহল থেকে, ঠিক একই রকম ভাবে এ কথা প্রচার করে আমাদের কান পচিয়ে দেওয়াটা দরকার। টাকার বিনিময়ে যে চাকরি বিক্রি হয় না, এই শুভ বোধ যেন মনের সার্কিটবোর্ডে, বোধের মজ্জায় আমরা গেঁথে ফেলতে পারি, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো। ঘুষ নেওয়াটা যেমন অপরাধ, আমরা যেন বুঝতে শিখি, ঘুষ দেওয়াটাও তেমন। এই খাদ্য-খাদকের সম্পর্কের সমূলে বিনাশ জরুরি।
বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থা রেখে আশা করতে পারি, নিয়োগ দুর্নীতির কান্ডারী যাঁরা, ঘুষ খেয়ে যাঁরা জয়ঢাক তাঁরা ধীরে ধীরে সংশোধনাগারে আসবেন। সংশোধিত হবেন কি না সময় বলবে।
যাঁরা আসছেন, তাঁরা সকালে চায়ের সঙ্গে বিস্কিট খেলেন কি খেলেন না, তা জানার চেষ্টায় আপাতত সময় নষ্ট করে লাভ নেই।
santosh banerjee | ১১ আগস্ট ২০২২ ১৪:৩৪510921