ড্রাইভারের কানে মোবাইল দেখলে চিরকাল আমার গলা খুশখুশ করে।
-এইয়ো ভাই, পরে কথা। পরে।
সেদিন দেখলাম স্টিয়ারিং একহাতে ধরে আর এক হাত দিয়ে বুকপকেট থেকে মোবাইল বার করল ড্রাইভার। কিন্তু কিছু বলব কি, খুব জোর একটা ধাক্কায় মাথা ফেটে গেল আমার, আর সেটা ভাল করে বোঝবার আগেই জল উঠে এল ঠিক আমার নাকের তলায়। এক সেকেন্ডের খুচরোতে দেখলাম ঘোলা জল রঙ বদলালো লালে। পাঁকের বিশ্রী গন্ধ, দু পা ওপরে, জলের ভেতর মাথা নিচের দিকে করে পড়ছি তো পড়ছি, যেন একটা বিরাট অন্ধকূপ, যার শেষেও আলো নেই। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কী করলে মুক্তি পাব এই তীব্র শ্বাসকষ্ট থেকে ভাবতে ভাবতে আরও অন্ধকারে জড়িয়ে গেল চুল, পরনের শাড়ি উধাও হল। মামাবাড়িতে দেখা ছোটবেলার অনেক ঘটনাই মনে আছে। যে ঘটনাটা ঠিক এখন উঠে এসে লটকে রইল চোখের পাতায় তা হল লোহার শিকে চারদিক বন্ধ একটা ছোট খাঁচা। ভেতরে একটা নেংটি ইঁদুর। ছোটমামা খাঁচাশুদ্ধ সেটাকে চুবিয়ে ধরেছে পুকুরের জলে। সেটা বার বার খাঁচার ছাদের দিকে উঠে আসছে, কিন্তু পুরু সরের মতো জমা জলে থৈ না পেয়ে আবার নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। ঝকঝকে রোদ ছিল সেদিন। তবু বার কয়েক ওঠানামার পর ওর বুদ্ধিমান চোখদুটোতে অন্ধকার নামা টের পেয়েছিলাম ঠিক। ছোটমামাকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয়েছিল সেদিন, আজও হয়।
আমি মালদায় যাচ্ছিলাম। আমার একমাত্র বোন ওখানে স্কুলে হেড মিস্ট্রেস। খুব কড়া আপোষহীন দিদিমণি, যার সঙ্গে স্কুলের সেক্রেটারির ঝামেলা লেগেই আছে। ডি আইয়ের কাছে তার বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ছাত্রী কমে যাবার আশংকা জানাতে, সাহেব জবাব দিয়েছিলে,
--------আপনি মাইনে পাচ্ছেন তো নাকি ? আমি কি গার্জিয়ানদের বেশিবার করে বাবা মা হতে এডভাইস করব ! আশ্চর্যকথা !
বোন বলেছিল,
-- না, না তা কেন! চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট হোম। আমি জানি সব কাজেই শুধু অ্যাডভাইস করলেই হয় না। যে করে তাকে করে দেখাতে হয়।
ডি আই বাকরুদ্ধ হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেছিল,
- মিসেস দাস, আমি দু'বছর বাদে রিটায়ার করব।
-জানি স্যার। তাই আপনি এভাবে অনেক জুনিয়র এক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলবেন, ভাবতে পারিনি।
দুই মেয়েকে নিয়ে বোনের সংসার। বাইরেটা যতই কঠিন হোক, আমার মতো ব্রহ্মচর্য পালন করবার কঠিন ব্রত তার কোন কালে ছিল না। কিন্তু ঐ যে কপাল। যে গোপালটি জুটল সে মোটেই সুবোধ নয়। তাই সে একা থেকে যাওয়াই পছন্দ করল। আমিও শৈলেন হঠাৎ বিয়ে করে নেবার পর থেকে কাউকে আর ভরসা করতে পারিনি। নিজেকে মাঝেমাঝে মনে হত ফাঁদে পড়ে হাঁসফাস করা সেই ইঁদুরটা। জলে খাঁচা চুবিয়ে ডাঙায় বসে আছে যে মানুষটা তার মুখ অবিকল শৈলেনের মত। ওই হাসফাঁসটা বেশি বেড়ে উঠলে, আর পুজো কি গরমের ছুটি পেলে সোজা ছুট লাগাতাম শুধু মালদা। বোনঝিদুটোর কলকলানি বড় মধুর মনে হত। মোবাইলের মতো রিচার্জড হয়ে ফেরত আসতাম।
ওদের কথা মনে হতেই একটা দীর্ঘশ্বাস পেটের ভেতর থেকে ঠেলে উঠল। দেখি মাথার ওপর উঠে গেল একরাশ বুদবুদ। আমি কতটা জলের নিচে ? ঠাহর করবার জন্য বোজা চোখেই আড়ষ্ট ঘাড় বাঁকাবার চেষ্টা করলাম। হল না। আন্দাজে যা বুঝলাম আমি গড়িয়ে এসেছি একেবারে খাড়াই দাঁড়িয়ে থাকা বাসের পেছনদিকে। আমার ওপরে এসে পড়েছে অনেকগুলো শরীর। একজনের শাঁখাপলা পরা মোচড়ান বাঁহাত আড়াআড়ি ঠেসে ধরেছে আমার গলা। তার ভারী শরীরটাও পড়ে আছে ঐ বাঁদিকেই। আমার নাকের ওপর থেবড়ে আছে যে মাথাটা তাতে একটাও চুল নেই। জলে ভিজে টাক আরও চকচক করছে। এতো কষ্টেও হাসি পেল। শৈলেনকে গতবছর জেলার বইমেলায় হঠাৎ দেখি। ওমনি মাথাজোড়া টাক। ভাঙা গাল। এতো তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে গেলে শৈলেন, অমন সুন্দরী বৌ, ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরভরন্ত সংসার!
পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে। পুরোনো কষ্টও মনকে মনকে মাঝে মাঝে বড় অসাড় করে ! সেই অসাড়তা কাটাবার জন্যই কিনা জানিনা, দিলাম এক মরিয়া মোচড়। পিঠের নিচে ঝনঝন করে মোটা কাচ ভাঙার আওয়াজ হল। বাসের জানালা। নিশ্চয়ই আগে থেকে ভেঙে গিয়ে থাকবে। ভাঙা রক্তাক্ত কনুই, তবুও আমিও সেই ফাঁক গলে ফুরফুরে ভঙ্গিতে দিব্যি বেরিয়ে এলাম। দুর্গন্ধময় পাঁকের আর জলে ডুবে ফুলে ঢোল, সাদা শরীরগুলোর নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতেই আমার শরীরটা প্রজাপতির মতো ভেসে বেড়াতে লাগল। কালচে হয়ে জমে থাকা জলঝাঁঝি আমার ক্ষতস্থানে নরম হাত বুলিয়ে দিতে থাকল। বুঝলাম, আমাদের বাসটা ব্রিজের রেলিং ভেঙে সোজা বুলেটের মতো গেঁথে গেছে খালের ঢেউহীন গভীর মেঝেতে। হয়তো ওপর থেকে ক্রেনে করে তাকে তোলবার চেষ্টা হচ্ছে। সেই সবিরাম চেষ্টার কোন ফাঁকে অর্জিত আমার এই মুক্তি।
কতক্ষণ রাতের অন্ধকারে ভেসে বেরিয়েছি বলা যায় নাকি ! ভেতরটা তো সূর্য না ডুবতেই ছায়া ছায়া। সে ছায়া যখন জমাট হল বুঝলাম বাইরে রাত নেমেছে। শবের উদ্ধারের কোন আশা থাকেনা, উদ্ধার হয়েই বা হবে কি ! আমারও তা ছিল না। উপরন্তু আমার শরীরটা ঘিরে ছিল ঘন শ্যাওলা। ওপরে ঝুপসি এক গাছের আড়াল। লুকিয়ে থাকার আদর্শ জায়গা। তবু একটু একটু ভেসে উঠছি আর ভেসে ভেসে পাড়ের কাছাকাছি চলে এসেছি বোধহয়, কারণ এতক্ষণে কানে আসছে কান্নার আওয়াজ, আর্তনাদ, খুচরো কথা, হাসি, ফাজলামোর শব্দ, বিড়ির গন্ধ। লোকে লোকারণ্য। কেউ একজন হ্যাক করে থুথু ফেলল, একদলা কফ ভেসে গেল আমার কানের পাশ দিয়ে। আমি সরতে গেলাম, কিন্তু সাড় নেই। এসব কি হচ্ছে আমি আবছা হলেও বুঝতে পারছি কী করে তা কে জানে !
নৌকোর ওপরে বসা একটা কমলা জ্যাকেট পরা কালো স্বাস্থ্যবান ছেলে আমার পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া একটা ব্যাগ তুলে ধরল বেড়ালের শিকার ধরার মতো। ফুলে ঢোল। টপটপ জল পড়ছে ব্যাগের গা বেয়ে। ওকে ফাঁকি দিয়ে দূরে চলে গেল একপাটি পুরুষ চটি। তীব্র আলো জ্বলে উঠল ব্রিজের ওপর। এতো তীব্র, আমার বোজা চোখের ভেতরেও ঢুকে পড়ছিল বর্শার মতো। আর কোন কষ্ট ছিল না কিন্তু। কুট কুট করে মাছ কামড়ে দিচ্ছিল যখন আমার বেজায় কাতুকুতু লাগছিল। এই যে শরীরী দুঃখ বেদনার বোধ নেই কিন্তু চেতনা আছে পুরোই, এই অবস্থাটা আমাকে তুরীয় আনন্দ দিচ্ছিল। মেয়ে স্কুলের অবসরের মুখে এসে পড়া বুড়ি মাস্টারনী, বোঝা না বোঝার মাঝামাঝি এইরকম অদ্ভুত অসাধারণ অভিজ্ঞতা তার কখনও হবে কেই বা ভেবেছিল!
সেই আনন্দেই কিনা জানি না, নাকি নৌকোর গলুইএর ধাক্কায় বেশ জোরে নাড়া লাগল আমার শরীরটায়। সঙ্গে সঙ্গে কাছের জটলা থেকে একটা বীভৎস চিৎকার উঠল,
-- অই অই যে আর একটা।
-- হ্যাঁ হ্যাঁ দেখেছি দেখেছি, একটা মেয়েছেলে তো।
---- একটা বুড়ি রে।
হতাশ গলায় কেউ জানাল। আর একজন বলল,
-এহে, এটারও কাপড়চোপড় ঠিক নেই।
এরপর প্রচন্ড চেঁচামেচি। কিছু লোক হাঁটুজলে নেমে পড়ল উৎসাহের আতিশয্যে। নৌকোর মুখ ঘুরিয়ে আনা হল আমাকে আশ্রয় দেওয়া গাছটির গোড়ায়। সেই কমলা জ্যাকেট পরা অল্পবয়সী ছেলেটির চেঁচানি শুনতে পেলাম,
- তেত্রিশ নম্বর।
তারপরেই একটি হ্যাঁচকা টানে উঠে এলাম রাবার র্যাফটের মধ্যখানে। চার জোয়ান ছোকরা এক র্যাফট থেকে হালকা দুলিয়ে চ্যাংদোলা করে আলতো ছুঁড়ে দিল পাশেরটায়। আমি গিয়ে পড়লুম এক তরুণীর পাশে। কী ভাগ্যিস, রাইগর মর্টিসে তার শক্ত দু'হাত গাছের ডালের মতো খাড়া ছিল আকাশমুখো। নাহলে ঐ ডোবা বাসে যেমন, তার শরীর অর্ধেকটাই চেপ্টে যেতো আমার শরীরের ভারে। তার পাশে শুয়ে খানিক বিশ্রাম নিলাম। তারপর মনোযোগ দিয়ে তাকে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলাম। বললে কেউ বিশ্বাস করবে না, একবার যেন তার কানের লতিতে হালকা আতরের গন্ধও পেলাম। প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করবে বলে ভোর ভোর চেপেছিল হয়তো এই বাসটায়। লঝঝর ইঞ্জিন জেনেও যেটাকে জেলা পরিবহণ দপ্তর রাস্তায় ছোটবার অনুমতি দিয়েছিল। ছেলেটি হয়তো এতক্ষণ খবর পেয়েছে। এসে পৌঁছেছে ব্রিজের মাথায়। দেখতে পাচ্ছে না এতো নিচে মেয়েটির আকাশমুখো হাততোলা শবটিকে। আর দেখেই বা কী হবে, সে তো আর তার ভালোবাসার মানুষ নয়, পচনধরা এক মৃতদেহ, যে অপেক্ষা করে আছে মাতাল ডোমের ছুরি ছানাছানির জন্য।
এরপর স্পষ্ট কানে আসছিল মেয়েলি গলার তীক্ষ্ণ কান্না,
- হায় পোড়া কপাল, আমি দাদা বইলব কাকে !
মানে মেয়েটির দাদার মৃতদেহ আগেই পাওয়া গেছে।
অনেক ক্যামেরার আলো আমার শরীরে ঝলকাতে কান্না দ্বিগুণ হয়ে গেল,
- আমাদের কেউ নাই গো।
আমি একটু থতমত খেলাম। জানতাম বোন আর ওর মেয়েরা খবর না পাওয়া অব্দি আমারই কেউ নেই দুফোঁটা চোখের জল ফেলবার। এখন দেখছি কারোরই কেউ নেই, তো এতো লোক এখানে জড়ো হল কোত্থেকে !
এইসব ভাবতে ভাবতে উদ্ধার হওয়া দুই লাশ ঢেউয়ের ওপর নৌকোয় চড়ে মর্গের দিকে রওনা হল।
কিন্তু পাশের আতরদানিটিকে আমার ভারী পছন্দ হয়ে গিয়েছিল।আমার বোনঝিদের মতই বয়স। তখনও ঠোঁটদুটো লালচে। বোজা চোখের দীর্ঘ পাতায় ছোট ছোট জলকণা লেগে আছে যেন ! কি নিষ্পাপ মুখ ! হঠাৎ মনে হল শৈলেন যদি আমাকে ছেড়ে না যেত, বিয়ে হতো আমাদের, প্রেমের সহজ স্বাভাবিক পরিণতি, তাহলে এইরকম একটি মেয়ে থাকতে পারতো আমার। স্পীড বোটের চার জোড়া চোখ এড়িয়ে অনেক কষ্টে এক আঙুলে ছুঁয়ে দিলাম মেয়েটির বাহুমূল।
নাঃ, এ একেবারে মরে হেজে গেছে। তাচ্ছিল্যের থেকেও ঠান্ডা আর অপমানের থেকেও নীরক্ত তার মুখ। চুলে মুখে কাদা মাখামাখি। একটু আদর করে দেখব কিনা ভাবছি, কানে কানে দুটো মিষ্টি কথা,
হঠাৎ একটা রূঢ় ধাক্কায় আমি সরে গেলাম নৌকোর একপাশে। যে নৌকো চালাচ্ছিল সে আমাকে সরিয়ে অন্যজনকে ডেকে বলল,
- একটু চালা ভাই। সাত খেপ মেরেছি। হাত শালা জবাব দিয়ে দিয়েছে। মরাদুটোর মাঝখানে একটু বসি।
ছেলেটা বসতেই ওর হাবভাবে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠল। অনেকক্ষণ থেকে ও নজর করছিল আতরকে। অল্পবয়সী সুন্দরী মেয়ে, লোক তো বেশি দুঃখই পাবে, এইরকম ভেবেছি আমি। আমারও পরনে শাড়ি ছিল না। তবু কি ভাগ্য ব্লাউজ আছে। পেটিকোট হাঁটুর ওপর লেপ্টে থাকলেও, আছে। কিন্তু মেয়েটি প্রায় উলঙ্গ। একটা ন্যাকড়ার মতো কিছু আছে দু পায়ের ফাঁকে, উর্ধ্বাঙ্গ সবটাই উদোম। ভেজা নিটোল স্তন বেরিয়ে আছে। হাত পা শক্ত, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে বুকের কমনীয়তা অটুট। অনেকক্ষণ উদোম ফেলে রাখবার পর আমাদের দুজনকেই ওরা একটা সাদা কাপড়ে ঢেকে দিয়েছিল। লজ্জা নারীর ভূষণ। কিন্তু পাশে বসে সাদা কাপড়ের নীচে হাত ঢোকালে মৃতদেহ কি সে হাত সরিয়ে দিতে পারে !
তাই মাঝে এসে বসা ছেলেটিকে আমার একটুও ভাল লাগছিল না। ওর চোখে ঘোর। নাকের পাটা ফুলে উঠেছে। ডানহাত কোথায় আমি দেখতে পাচ্ছি না। বাঁ হাতের তালু শক্ত করে ছড়ানো নৌকোর মেঝেতে।
ও কিছু একটা করছে। হয়ত ওর আঙুল খেলা করছে মৃত স্তনবৃন্তে। কিংবা অন্য কোথাও। ওর অন্যমনস্ক সঙ্গীটি আলো আঁধারিতে কিছুই খেয়াল করছে না।
আমি চিৎকার করতে গেলাম, টের পেলাম স্বরনালী ভর্তি থকথকে পাঁকে। কিছু করার নেই, এই জীবিতের অনাচারে মৃত একান্ত অসহায়। কিন্তু মৃত্যুর পরেও এই হঠাৎ পাওয়া আত্মজার হেনস্থা দেখতে পারব না। শৈলেনের ডোবানো খাঁচাটা থেকে আমার মুক্তি চাই। সমস্ত চেতনা এক করে গড়িয়ে গেলাম বোটের কিনারায়। তারপর একটু ঝাঁকুনিতেই টুপ, নুনের পুতুল যেন সাগরে। ডোবার আগেই দেখলাম দাঁড় ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে ছেলেটি,
- দেখো দেখো বুড্ডিকা লাশ ফিরসে গির গয়ে। উধার বৈঠকে ক্যা কর রহে হ্যায় তুম!
বসে থাকা ছেলেটিও প্রচণ্ড চমকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াতে গেলে নৌকোটি কাত হয়ে গেল আমার দিকে। আমার গায়ের ওপর এসে পড়ল আমার আতরদানি। তার শক্ত হয়ে যাওয়া হাতে আমার হাত পেঁচিয়ে আমরা দুজন যাত্রা করলাম অনেক গভীরে, বালিখালের একান্ত গহীনে। কোন ডুবুরি সেখানে পৌঁঁছতে পারে না। জলঝাঁঝির বিছানায় শুয়ে মাছেদের খেলা দেখতে দেখতে তাকে আমি অনন্তকাল ঘুমপাড়ানিয়া গান শোনাব। যতদিন ইচ্ছে সে ঘুমিয়ে থাকবে আমার বুকের কাছে।
একত্রিশ, বত্রিশ নম্বর লাশের হিসেব কী করে মেলাবে ওরা বুঝুকগে।
আয় খুকি। আমাদের এই জায়গাটুকু কেউ কাড়তে পারবে না।