(নেফারতিতি)
১.
(ক্রিস্টপূর্ব ১৩৭০ অব্দ: জন্ম)
হু হু মিশরীয় এই ফুলেল বিকেল।
যেন শান্ত কথাগুলো ফুরিয়ে এসেছে।
আকাশ এবেলা নীল, স্নেহের মতন
নীল... নদখানি।
জোনাকিটি, যে জন্মাল এখন, ক্রমশ ধ্রুবতারা
হবে। প্রস্তরে লিখিত নাম। এই স্বপ্ন
আসন্নপ্রসবা হল...এত আলো এত আলো!
অথচ আঁধার, তীব্র, নাড়ীর ভেতর!
মিতানী রানীর আত্মা স্তব্ধ, জলের ভেতর খাঁচা-
জোনাকিটি, যে জন্মাল এইমাত্র, তার
সৌন্দর্য অক্ষরে লেখা হবে নবযুগ।
জগৎ দেখছে মায়ামুগ্ধ, যেন কতদিন পর
দেবী হাত দিল তার বুকে। হাত দিল বুকে তবে!
২.
(ক্রিস্টপূর্ব ১৩৫৪ অব্দ: আখেনাতেনের সহিত বিবাহ)
যাবতীয় খবরের পথে নির্লজ্জ কাঙালিনীর
মতো বিজ্ঞাপন বসে থাকে। ঐ বিবাহ বিনোদন,
আড়ালে ইঙ্গিতে খুলে যায়। অবহেলা আছে বটে-
তবু এই হেঁটে আসাটুকু....
অথচ নেফারতিতি, স্বপ্নকে লক্ষ রেখে আপনি
এগোলেন বিপ্রতীপে। বিবাহ চুক্তিমাত্র, বিমূর্ত
বিজ্ঞাপনও, অমরত্ব-কথায় শ্বাসাঘাত গভীর
হয়। খবরের আমেজে কয়েক ঘন্টার বিপ্লব,
বিজ্ঞাপন দীপ্ত মূর্তি, চাহিদার .... এইসব ভাবি।
সাহসের কথা থেকে কাঁহাতক সরে আসে যায়!
কলস উপুড় করি, এমত মনের জোর, এই...
কালে, যুগে বজ্রপাত হয়।
৩.
(ক্রিস্টপূর্ব ১৩৫৩-৪৪ অব্দ: আখেনাতেনের প্রধানা রমণী)
রাজা এবং প্রজার মাঝখানে তফাৎ ফ্রেমের।
ছবি থাকে মনে, প্রজা চোখ বুজলে দেখতে পায়
পেরেতীয় অনসূয়া রোদ। প্রেয়সী তার ঘরেতে,
বাড়ি ফিরলেই লুফে নেবে তোমায়, হে মহাত্মন-
ওসব অমরত্বের সন্ত্রাসটুকু সরিয়ে ফেল।
শেষ পর্যন্ত যেখানে পৌঁছলেন রানী, সে আশ্চর্য
গ্রহ। সূর্যদেবতাকে অগ্রাহ্য করে উপাস্য কর
স্বয়ং সূর্য! আতেন! ভোর হল - আমান- আ-মে-ন!
৪.
(ফ্যারাও হিসেবে আখেনাতেনের সহিত সহরাজত্ব, ক্রিস্টপূর্ব ১৩৩৫ অব্দ-৩৪ অব্দ: আখেনাতেন পরবর্তীকালে ফ্যারাও স্মেনখ্যায়ার হিসেবে আত্মজা মেরিতাতেনের সহিত শাসনকাল)
এযাবৎ নিয়মেরা, আমার না ভাঙতে পারারা
আপনি কোন প্রাচীনে ভেঙেছিলেন দেখে অবাক
লাগে। চারিদিকে এত শব্দ, ষড়যন্ত্রগল্প
ঝাপসা হয়ে ক্রমশ, ধুয়ে যেতে যেতে মুখ, ছায়া...
ক্লান্ত না হওয়া কী শক্ত! নিজেকে ঈশ্বর ভেবেছেন
কখনও? বশ্যতার ভূমে সব স্নেহ গোপনীয়...
প্রাচীন কামান পড়ে আছে বহুদিন; ঈশ্বরের
সাথে গোলাহীন,
একটি আয়নার নামে সম্পর্ক বাঁচিয়ে দেব তবে।
৫.
(ক্রিস্টপূর্ব ১৩৩৫ অব্দ: নেফারতিতির মৃত্যু)
তারার কথায় আলো বেশি। সাফল্য 'তারা', উজ্জ্বল
উদযাপন, তার দিকে মুখ করে ছুটি, পুজো দিই
বার বার মরি, আলো-সাগরে অনাহুত আঁধার....
'আকাশের তারা হয়ে গেছে', এই প্রবাদ মোড়কে
শিশু ওড়ালে মৃত্যুর শোক, খুঁড়ি আর খুঁড়ি।
ভালবাসা তীব্র হয়, মোহও, আলুলায়িত পথে
পাগলিনী হানতে, জট এই, ঘোরতর, ঘোরাঘুরি....
এ মৃত্যুপথ, রহস্য, আপনার অন্তর্ধানখানি
ইতিহাস থেকে মুছে গেল অতর্কিতে
ঠিক এর পরে জটাধারী রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে
নক্ষত্রের পত্রগুচ্ছ, শিশুটি সাবালক এখন
এই মনে আকাশের মায়া নেই কোনো
তারা খসে গেছে ভেবে এ সামান্য জন্ম
জাতিস্মর হল....