"আমরা জাতিভেদ প্রথা মানিনা। একই বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান। হেথা অনার্য হেথায় আর্য এক দেহে হল লীন।"
এইসব মিথগুলি এবার ভাঙা দরকার। ভণ্ডামিগুলো । ডাঁটসে বলুন হ্যাঁ। আমরা বর্ণবৈষম্যবাদী। হ্যাঁ। আমরা জাত পাত মানি। আমরা যেমন পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্য মেনে চলি তেমনি ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজব্যবস্থা মেনে চলি।তাহলে অন্তত মুখে এক কাজেও এক, এই সত্য প্রতিভাত হয়।
আমাদের কলোনিয়াল হ্যাং ওভার আজো কাটেনি।কবে কাটবে তার ঠিকও নেই। আমাদের ছেলেরা বিদেশিনী বিবাহ করলে বা মেয়েরা বিদেশি বর ঠিক করলে আমাদের অদৃশ্য কলার উঁচিয়ে কথা বলতে দেরি হয় না।আফটার অল, সাহেব বলে কথা।সাদা চামড়ার জৌলুষ। ম্লেচ্ছ টেচ্ছ বলে কিছু হয় না।আমরা ভাই গ্লোবাল- দেশি ইন্ডিয়ান।
তাই আদিবাসী বা সাঁওতাল শব্দগুলোর কনোটেশন ডিরোগেটরি ছিল এবং আছে। কারণ এঁরা " পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষ"। প্রযুক্তির ঘাড়ে চেপে এগিয়ে যাওয়া আর পিছিয়ে পড়ার তর্কে ঢুকলে পয়েন্টর বাইরে চলে যাব। কিন্তু এটা বলতেই হবে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য যা, বৌদ্ধিক ও মানবিক উৎকর্ষ, সেটা সংরক্ষিত বা অসংরক্ষিত বিচার করে ঘটে না। দীর্ঘকাল ধরে যাদের শিক্ষার সুযোগই ছিল না, একটি ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজব্যবস্থা শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিজেদের কুক্ষিগত করে রেখেছিল, সেও তো এক প্রকারের সংরক্ষণ। নয়?
একটি ঘটনা মনে পড়লো। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ব্রাহ্মণ। তায় কুলীন ব্রাহ্মণ। আমরা কথা বলছিলাম বিয়ের পরে মেয়েদের পদবি পাল্টানো বা না পাল্টানোর প্রসঙ্গে। আমাদের এক প্রিয় অধ্যাপক তাঁর স্বামীর পদবি ব্যবহার করতেন। তাঁর বিবাহপৃর্ব পদবি কায়স্থ জাতিভুক্ত। বিবাহ পরবর্তী পদবি ব্রাহ্মণ। তিনি আদ্যন্ত নারীবাদী।কথায় ও কাজে। তবু কেন স্বামীর পদবি ব্যবহার করেন? আমার বন্ধু চপ খেতে খেতে অবলীলায় বলল, "সিম্পল। জাতে ওঠার জন্য।"
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ইংরিজি বিভাগ। তাহলে এই তথাকথিত ভদ্রলোক সমাজ , যারা নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী বিভাগে পড়ে, চণ্ডালিকা দেখে হাততালি দেয়, তারা আদতে বিশ্বাস করে যে জাতে উঠতে হয়।
সূতপুত্রদের গলায় পাঞ্চালকন্যারা মালা দেন না। একলব্যকে গুরু ফিরিয়ে দেন নিষাদ হবার অপরাধে।শিক্ষা, সে অস্ত্র হোক বা বিদ্যা , সে তো শুধু উচ্চবর্ণের জন্য। তারপর পুঁজির দৌলতে অর্থবানের জন্য। এই সংরক্ষণ সম্পর্কে সংরক্ষণ বিরোধীরা কী বলেন জানতে ইচ্ছা করে। বৎস।শুধু ব্রাহ্মণের আছে অধিকার, মেনে চলতে হবে?
প্রসঙ্গত মেরুনা মুর্মু একটি পরিচিত নাম।স্বীয় মেধাবলে তিনি চাকরি এবং সুনাম অর্জন করেছেন। অতিমারী পরিস্থিতিতে এই বছর পরীক্ষা না নেওয়া হোক।এই তাঁর বক্তব্য। এই একই কথা আমি ব্রাহ্মণ পদবীর মানুষের কাছেও শুনেছি। ফেসবুকেও দেখেছি। অথচ মেরুনার বক্তব্যের প্রতিবাদে এই ট্রোলিং কেন। তাঁকে " আদিবাসী" , "সাঁওতালি " সম্ভাষণে ডেকে, প্রতিবাদকারী কি প্রমাণ করতে চাইলেন? সংরক্ষণে নিম্নমানের নিম্নমেধার ছাত্র হয়ে চাকরি পেয়েছেন তিনি?
অতিমারী পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কতজন ছাত্রী অনলাইন শিক্ষা নিতে পারছে সে বিষয়ে সংরক্ষণ বিরোধী কী বলেন? অনলাইন পদ্ধতি নিঃসন্দেহে স্বাগত।আমাদের কলেজেও আমরা প্রচুর অনলাইন ক্লাস নিয়েছি।কিন্তু বহু ছাত্রী সে ক্লাস অ্যাটেন্ড করতে পারেনি প্রত্যন্ত জায়গায় থাকার কারণে। এ বিষয়ে একটি পোস্ট আমি শেয়ার করেছিলাম।সেটি এখানে দিচ্ছি।
এই বছরকে "জিরো অ্যাকাডেমিক ইয়ার" ঘোষণা করতে কী অসুবিধে? কোনরকমে পাশ করে 'ইয়ার' বাঁচানো, নাকি ভালোভাবে শিখে সেই শিক্ষাকে কাজে লাগানো। কোনটা দরকারি? লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষার সুযোগ পেল না। তারা কি বানের জলে ভেসে এসেছে?
এক বছর 'নষ্ট' হলে সারা জীবনের তুলনায় সেটা কিছুই নয়। এই সংকট জীবনের সংকট, পৃথিবীর সংকট। তাই বিশেষ অবস্থাকে স্বীকার করে নিতে হবে। এই সহজ কথাকে মানতে কি মানুষের ইগোতে লাগে? নাকি শিক্ষার্থীরা সবাই খেলার পুতুল? শিক্ষা উদ্দেশ্য নয়, পরীক্ষাই উদ্দেশ্য তাহলে?
এটি লিখেছেন অরুন্ধতী ব্যানার্জি।
আমার মনে হয়েছে তিনি সঙ্গত কথা বলেছেন।যেখানে আমরা প্রাণভয়ে সদা শংকিত, অন্য কোনো অসুখ এমনকি দাঁতে ব্যথা হলে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছি না, সেখানে এই মত গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করি। ওপেন বুক সিস্টেমে পরীক্ষা হলে সবাই যদি পরীক্ষা দিতে পারে , তবে তা স্বাগত।সেই গ্যারান্টি আছে তো? যেই বলা হবে , যে যারা অনলাইনে পরীক্ষা দিতে পারবে না ওরা পরে পরীক্ষা দিক, তখন দেখবেন রব উঠে যাবে যে এরা সময় বেশি পেল।ওরা কম পেল।আন্দোলন চলে আসবে।
মেরুণার বিপরীত মত পোষণ করতেই পারেন কেউ। সেটিকে শিষ্ট ভাবে প্রকাশ করা কি তাঁর অসংরক্ষিত মেইনস্ট্রিম কালচারের প্রতি সুবিচার হত না? এই ট্রোল আর মিমের জন্য ভাবি ফেসবুক ছেড়ে দেব।শুধু কিছু ভালো লেখা পড়তে পাই বলে আছি।নিজের দুটো মনের কথা লিখতে পাই বলে আছি।
এই ফাঁকিবাজ শিক্ষক সম্পর্কে ট্রোল গোষ্ঠীর খুব অজ্ঞানতা রয়েছে। ইন ফ্যাক্ট অনলাইন ক্লাস, প্রশ্ন করা, পরীক্ষা, ইভ্যালুয়েশান, লেসন প্ল্যান ইত্যাদি অনেক বেশি পরিশ্রমসাধ্য। চোখের বিরাম নেই। তার সঙ্গে অনলাইন মিটিং , অ্যাডমিশন, আই কিউ এসি ইত্যাদি জুড়ে প্রচুর চাপ যায়। বসে বসে মাইনে খাবার দিন নেই।ইউ জি সি র ক্যাশে পাশ করতে গেলে খাটনি আছে রেগুলার কোর্সে রিফ্রেশার বা ওরিয়েন্টেশন ছাড়াও। এগুলি এখন অনলাইন হচ্ছে। তরুণ শিক্ষকরা কোর্স ও ক্লাস, দুইই করছেন।
মেরুণার সাহসী প্রতিবাদকে আমি কুর্নিশ জানাই। ট্রোলে যা পড়েছি তার নিম্নরুচির বহর নিয়ে কিছু বলব না। তবে অশালীন আচরণ যিনি করেন, তাঁর পরিচয়টাই বহন করে। দুঃখের কথা, এখানে একজন আসলে বহুস্বর।
এই ব্রাহ্মণ্যবাদী বহুস্বর গায়ের রঙ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে। অন্ত্যজ বলে মানুষকে ব্রাত্য করেছে।শিক্ষাকে শ্রেণীবৈষম্যের হাতিয়ার বানিয়েছে।যেটা ঠিক উল্টো হওয়া উচিত ছিল। গাত্রবর্ণ আর নাক চোখ মুখের মাত্রাভেদে মেধার নির্মাণ হয় না।সেটা হলে অভিযোগকারী বুঝতেন যে শিক্ষাকে একটা বিশেষ শ্রেণীভুক্ত করে রাখার প্রাচীন সংরক্ষণ প্রথা কতটা নির্লজ্জ শোষণ চালিয়ে এসেছে। আর অর্থনৈতিক সংরক্ষণ? মানে এই টাকাপয়সা দিয়ে ভর্তি হওয়া, চাকরি পাওয়া?
মেইনস্ট্রিম আর মার্জিনালের বাইনারি ভাঙতে এখনো বহু দেরি, বেশ বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা এত হিংস্র হয়ে উঠছে দেখে ভয় না, ঘৃণা বোধ হয়।
দ্যাখ, মেয়েটাকে ঠিক সাঁওতালদের মত দেখতে। দিস ইজ মেইনস্ট্রিম ল্যাংগোয়েজ অ্যান্ড অ্যাটিটিউড।তাহলে খামোখা নিজেদের প্রগতিশীল বলে লাফানো কেন?
প্রগতি মানে কী?
চুণী কোটাল।
রোহিত ভেমুলা।
পায়েল তাদভি।
আরো বহু নাম। জানা বা অজানা। লাঞ্ছিত হচ্ছেন অপমানিত হচ্ছেন। কী হিংস্র মানসিকতা! মেয়ে হলে তো আরো ভালো।
সাঁওতালি মেয়ে মানেই সহজলভ্য। শহরের বাবুদের ফুর্তির উপাদান। অরণ্যের দিনরাত্রি পর্যন্ত এই ফর্মূলা মেনে নিল।কী সাহিত্যে কী ফিল্মে। এক বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বললেন, " তুই ছাড়া এই দেহ কেউ ছোঁবে না"। এই কমিটমেন্ট অবশ্য'এখন মেইনস্ট্রিম সিরিয়াল কালচারে অচল।
মিম।ট্রোল।বুলি বন্ধ হোক।এই নির্লজ্জতা আর সহ্য হচ্ছে না।এত নিকৃষ্ট সংস্কৃতি থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।
ছোটবেলায় আমরা সাহিত্যিকদের নামের তালিকা বানাতাম। দেখতাম সব বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়তে ভর্তি। মানে ভট্টাচার্য, চক্রবর্তীর সংখ্যাও কম।শিবরাম অবশ্য একাই একশো।
কৌলিন্যের এমন দাপট। "ঢোঁড়াই চরিত মানস" টাও ভাদুড়িতে চলে গেল।ঐ একজন বুদ্ধদেব বসু বা বিমল কর বা রমাপদ চৌধুরি পেলে "ঐ তো রে আছে" মার্কা এক্সপ্রেশন। এটি সংগীত শিল্পীদের ক্ষেত্রেও তাই।
এ তো গেল মজার কথা।কিন্তু তত মজা নয়। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি যে সাহিত্য বহন করে আমরা শুধু তাই জেনেছি সিস্টেমের চাপে। আমরা ঢোঁড়াইদের আসল গান শুনিনি।চাপা পড়ে গেছে।শেষ হয়ে গেছে।এথনিক বলে মিউজিয়ামে সাজিয়ে রাখলে আহা বাহা পাওয়া যায়।
ক্ষমতা কে ছাড়তে চায়? এখন যে ট্রোলিং হচ্ছে, তা ঐ ক্ষমতা চলে যাবার আশংকায়।
কস্তুরী মুখোপাধ্যায়ের একটি লেখা ব্যবহার করছি
ঘটনা: ধরা যাক চম্পা বেসরা ও শ্রীতমা চট্টোপাধ্যায় উভয়েই খুব খারাপ পড়ালেন ক্লাশে।
সিদ্ধান্ত: শ্রীতমা অলস, ঠিকমত তৈরি হয়ে আসেননি। চম্পার তো কোটায় চাকরি।
ঘটনা: সুজন হাঁসদা ও তৃষা গোস্বামী উভয়েই সরকার বিরোধী মতামত পোষণ করেন।
সিদ্ধান্ত: তৃষার সাহস আছে। সুজন তো ঐ সরকারি কোটায় চাকরি নিয়েছে। আখের গুছিয়ে এবার বিরোধিতায় নেমেছে।
ঘটনা: রুমেলা হেমব্রম ও তপন সেনগুপ্ত উভয়েই লোকসাহিত্য নিয়ে গবেষণা করেন।
সিদ্ধান্ত: তপনের জনজীবন সম্পর্কে অগাধ আগ্রহ। বড় স্কলার। রুমেলার আবার আলাদা করে পড়ার কী আছে... ঐ জগতেই তো বড় হয়েছে। ওর পক্ষে যেটা সহজ, সেই বিষয়ই নিয়েছে।
ঘটনা: পেশেন্ট পার্টি এসে ডাক্তারের নাম তালিকা দেখছে হাসপাতালের চার্টে।
ঘটনার অন্তরাল: নাম নয়, পদবী তালিকা দেখছেন আদতে। ড. মুর্মু অ্যাভেলেবল কিন্তু রোগীকে একদিন অপেক্ষা করিয়ে ড. মুখোপাধ্যায়কেই দেখাবেন তাঁরা।
- আশপাশটা একটু মিলিয়ে নেবেন। এঁদের সবাইকে "মানসিক রোগী" বললে তো ঠক বাছতে গাঁ উজাড়।
কে কোথা থেকে কী সুবিধা পায় আর পায় না, কার মেধা কতদূর যায় এ বড়ো' জটিল রসায়ন।আদিবাসী মানেই সাঁওতাল। এইরকম ধারণা নিয়ে বেঁচে থাকা ভদ্রলোক সম্প্রদায় কতবার আমাকে আমার অপ্রচলিত পদবি নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। কুন্ডকে কুন্ডু বানিয়েছেন। সার্টিফিকেট দেখে জেনারেল জেনে ক্ষান্ত দিয়েছেন। আমাদের পরিবারের গুরুজনদের নিজেদের কায়স্থপন প্রতিপন্ন করতে ও বজায় রাখতে বারবার প্রমাণ দিতে হয়েছে। নিজে মাথা ঘামাই না বলে যে যা বলে তাতে মাথা নেড়ে দিই। যা মানি না তা নিয়ে তর্ক কিসের। সাপ ব্যাঙ বললেও অসুবিধে নেই।
কিন্তু আমাদের যাবতীয় সভ্যতা, টেকনোলজি, পড়াশোনা, কবিতা উৎসব, নাট্যোৎসব, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ইন্টেলেকচুয়াল সম্মেলনের বিশাল বিশাল সুমহান সুগন্ধি ফুলের তোড়ার নিচে একটি চরম ক্ষতিকর কীট আছে।
সে সর্বদা ফিসফিস করে বলে" কোন জাত? তুমি কোন জাত? "
তার বিষনিঃশ্বাসে সব ফুল মরে যায়।
বেঁচে থাকার জন্য মেরুনা মুর্মু বা অনন্যা চট্টোপাধ্যায় বা নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়ের মত মহিলাদের নামগুলো শক্তিদায়িনী।
এই যে মেয়েরা ভয়ে গুটিয়ে থাকে, ইতর অসভ্যের দল টিটকিরি দিয়ে চলে যায়, বর বলে , ছেড়ে দাও, ঝামেলাতে যেও না, এই প্রতিবন্ধী মানসিকতার গালে এঁরা চড় মেরেছেন।সিস্টারহুড বলে যে টার্মটা এখন বহুচর্চিত, এঁরা তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অপরাধ আটকাতে। পাশ কাটিয়ে চলে যান নি। হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়ে আঘাত করেছেন।
আমরা অবাক বিস্ময়ে প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দারের কাহিনি পড়তাম। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অসমসাহসী সেই সোনার মেয়েরা।যারা রিভলভার চালানো শিখতেন। যাঁরা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনে সামিল ছিলেন। অনন্ত সিংহ নিজে যাঁদের রিভলবার রাইফেল চালানো শেখাতেন! গায়ে কাঁটা দেয়। কল্পনা দত্ত। আপাত শান্ত।অন্তরে আগুন সেইসব লড়াকু মেয়ে।
আজ প্রগতি কোথায় এসে ঠেকেছে? শপিংমল আর হুক্কাবারে! তা নয়তো : ঐ যে। ও দলিত।মার ওকে" এতে?
এঁরা হয়তো অরুন্ধতীর " গড অব স্মল থিংগস" পড়ে, হাউ কিউট বলবেন। আশ্চর্য নয় কিছুই!
ভেলুথারা কী আর সাধে মরে যায়?
প্রগতি কাকে বলে? অবাক হয়ে তরুণ দীনেশ দাসের মা' কে লেখা চিঠি পড়তাম। বিনয়, বাদল, দীনেশ। এত আধুনিক। এত উদার! এত উন্নত!
তাই এখন প্রগতির নামে যা চলে, তার সব কিছুকে গ্রহণ করতে পারি না।
গ্রহণ করি মেরুনার প্রতিবাদ।নীলাঞ্জনার প্রতিবাদ। গাড়ি থামিয়ে একটি ধর্ষিতা মেয়েকে উদ্ধার করেছেন এই দম্পতি।নীলাঞ্জনার পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে গেছে। তাঁর অস্ত্রোপচার সফল হোক।
সত্যি এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের যথার্থ মানুষ বলে অভিবাদন জানাই। অনন্যাও একা লড়েছিলেন। হাতের ব্যাগ দিয়ে পিটিয়েছিলেন দুর্বৃত্তদের।
উপন্যাস আর ছবি আপসের গল্প বলেছে।আমরা জানি জীবন অন্য কথা বলে।
মেরুনা, নীলাঞ্জনা, আপনারা জয়যুক্ত হোন। কেউ আপনাদের নারী বলে গাল দেবে। কেউ বলবে দেবী।কেউ বলবে ডাইনি। কেউ বলবে আদিবাসী। কেউ বলবে সুবিধাভোগী। বলতে দিন।ততক্ষণ বলে যাক যতদিন মুখ ব্যথা হয়ে বন্ধ না হয়। আপনাদের শক্তি আরো তীব্র করতে সঙ্গে আছি।অনেকে।
দুর্দান্ত লেখা। এখনো অনেক পথ চলা বাকি সভ্য হতে।
Brambhin somprodae nie onek kichu lekha hoeche kintu aj to brambhinrai bivinno khetre nijjoso joggota thaka sotteo pichie porchen ba chance pachen Na. Sarkari bivinno khete economically strong hoeo sc/st/obc haoate bahu sujog pachen. Amra mone hoe sanrakhon hok economic situation dekhe. Na hole ei tarkobitorko choltei thakbe .
আদিবাসী আবার কী? বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছুদিন হলো ঘোষণা করেছে, এদেশে “আদিবাসী” বলে নাকি কিছু নাই। তবে “উপজাতি” আছে, আর তারা “বহিরাগত”!
রাষ্ট্রীয় এমন প্রচারণায় বিরক্ত হয়ে লিখেছিলাম, “এদেশের ভিন্ন ভাষাভাষী ৭৫টি ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠী ১৯৭১-এ স্বাধীনতার লড়াইয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েও আজো “উপজাতি”! আজো বহিরাগত!! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, “নাক চেপ্টারা” বহিরাগত হয়ে, বিদেশী হয়ে এদেশে স্বসন্মানে প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মতোই মার্যাদা পাবেন! তাদের পাসপোর্টও হবে আলাদা!”
আর আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আমার এক চাকমা বন্ধু লিখেছিলেন, “বাঙালিরা যদি আদিবাসী হন, তাহলে এবার আদিবাসী দিবস না হয় তারাই পালন করুক!”
আরেক পাহাড়ি বন্ধু লিখেছেন, “হাউ ফানি! বাঙালিরা আদিবাসী হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্র! ইউনেস্কো কী খবর পায় নাই? হি হি হি…”
#
লেখাটি ভীষণ ভাবাচ্ছে। আরো লিখুন
পুনশ্চ : রাষ্ট্রীয় বিবৃতি, “`বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী”!!
Each human action may have non identical reasons. Generalisation often did not work. Though I agree with the general tune of the writeup, but we can neither say with guarantee that one does not use surname for Petty advantage. I have seen same.
Even the mental framework is changed. Newly upgraded ones due to marriage often act like Kalapahar. :) Humans like upgrading, even if it is a Fake concept
ভারতীয়দের থেকে বেশী রেসিস্ট জাতি পৃথিবীতে বিরল। গত ছয় মাস আমার ভাই নিউটাউন একশন এরিয়াতে ফ্ল্যাট কিনবে বলে খুঁজছে। ওর নাগালের মধ্যের সব কটা সোসাইটিতেই স্রেফ মুসলিম বলে শেষ মুহূর্তে তাড়িয়ে দিচ্ছে। একই অভিজ্ঞতা আমার আগে হয়েছিল। বাড়িভাড়া পাইনি একাধিক জায়গায়। সব কটা শিক্ষিত লোকজন। শেষে মুসলিম এরিয়াতেই গিয়ে থাকতে হয়েছিল। খোদ কলকাতায় আমার এক ব্রাহ্মণ বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। যে থালায় খেতে দিয়েছিল সেটা ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এটা আমার সেই বন্ধুই লজ্জার সঙ্গে বলেছিল। ভারতের সরকারি চাকরীতেও ব্রাহ্মণ বা উচ্চবর্ণের মানুষদের দখল। 11% মুসলিম দেশে থাকলেও সরকারি চাকরিতে মাত্র 1% মুসলিম। আর এর সব দোষ না কি মুসলিমদেরই। যেমন একসময়ের বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী হলেও স্রেফ মুসলমান অধ্যুষিত বলে মুর্শিদাবাদে স্বাধীনতার 73 বছর পরেও বিশ্ববিদ্যালয় হয় না। দলিত বা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের সংরক্ষণ দিলেও তাদের উঠতে দেওয়া হয়না। 73 বছরেও ক্ষমতার অলিন্দে নিচুজাত বা মুসলমানের সং্খ্যা 10% এর কম সম্ভবত।
আর ফরসা কালোর বৈষম্য তো আমাদের মজ্জাগত। ইউরোপিয়ান ভিখারি হলেও তার সাথে সেল্ফি নিতে ছুটবে। আবার আফ্রিকান নিগ্রো কাউকে দেখলেই কালুয়া, কেলো এসব বলে তাচ্ছিল্য করবে নির্দ্বিধায়।
এইপ্রসঙ্গে একটা মজার কথা মনে পড়লো। বাঙালী বা ভারতীয়রা বিদেশে সাদা লোক বিয়ে করলে তার বাড়ীর লোক বাইরে একটু ম্লেচ্ছ ম্লেচ্ছ বলে কপট বিরক্তি দেখায়, কিন্তু মনে মনে ভারী খুশী আর তৃপ্ত হয়। কিন্তু কমলা হ্যারিসের মায়ের মতো ক্কচিৎ কদাচিৎ কেউ কালো লোক বিয়ে করলে কী হয় কেউ দেখেছেন? বাড়ীর লোকের একেবারে এক গাল মাছি - না পারে গিলতে, না পারে উগরোতে !!!
এখানে এসব ব্লগ না লিখে একটু বর্তমানে বেকারত্ব নিয়ে সঠিক তথ্য ও তার জন্য কারা দায়ী সেসব নিয়ে লিখলে আমার মতে ভালো হয়। এসব জাত,পাত,বর্ণবৈষম্য নিয়ে লিখে অনেকটা মোদিজির স্ট্র্যাটেজি নেন আপনারা। অর্থাৎ আসল ব্যার্থতা ঢাকতে গিয়ে অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে রাখা।