এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি

  • সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর কার্যকারিতার এলাকা বৃদ্ধি

    পার্থ সিংহ
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৩ নভেম্বর ২০২১ | ২৬২৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • --
    আরএসএসের গোলওয়ালকরীয় এককেন্দ্রিক স্বৈর-ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ভাবনার প্রতিফলন


    উত্তরবঙ্গের প্রায় পুরোটা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা আর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার অর্ধেকের বেশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর নজরদারির আওতায় চলে এলো এবার। সীমান্তের কাঁটাতার থেকে দেশের ভেতরে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফ জওয়ানরা অনায়াসে, রাজ্য-সরকারের প্রশাসনের তোয়াক্কা না করেই, তাদের সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে যেকোনো সময়, যে কোনও স্থানে ঢুকে গ্রেফতার করতে, খানাতল্লাশি চালাতে এবং অভিযুক্তের যেকোনো জিনিস বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। গত ১১ই অক্টোবর গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্য পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বিএসএফের কার্যক্ষমতার পরিসীমা ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই সাথে অধুনা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের পুরোটাই তাদের নজরদারির আওতায় এসেছে। এর আগে ২০১৪ সালে, ক্ষমতায় এসেই বিজেপি সরকার ঠিক এমনই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে উত্তর-পূর্বের ৫টি রাজ্যকে বিএসএফের আওতায় এনেছিল আর গুজরাত, রাজস্থানে নজরদারির সীমা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৮০ এবং ৫০ কিলোমিটার করেছিল। একই সঙ্গে ফৌজদারি আইনের (CrPC, 1973) কয়েকটি ধারা প্রয়োগের উপরোক্ত ক্ষমতাও তুলে দিয়েছিল তাদের হাতে। পশ্চিমবঙ্গের তিন ভাগের এক ভাগ এবং পাঞ্জাবের অর্ধেকের বেশি এলাকা বিএসএফের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের আওতায় চলে আসছে। মজার ব্যাপার হল, নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও পাচারকারী, নাশকতাকারী বা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশ সীমানা থেকে ৫০ কিমির মধ্যে, অর্থাৎ উত্তর দিনাজপুর জেলার সীমান্ত পেরিয়ে বিহারে পৌঁছে গেলে, তখন আর বিএসএফের কোনও কার্যকারিতা এবং দায় থাকছে না।

    বস্তুত, ১৯৬৫ সালে গুজরাতের কচ্ছ এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হামলার পর, দেশের সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত একটি সশস্ত্র সুরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজন হওয়ায়, ১৯৬৮ সালে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স আইনটি পাশ করেছিল দেশের আইনসভা। আইনটির মুখবন্ধে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘An Act to provide for the constitution and regulation of an Armed Force of the Union for ensuring the security of the borders of India and for matters connected therewith’. বাহিনীর সংবিধানের প্রথমেই [৪(১) ধারা] বলা হয়েছে, ‘There shall be an armed force of the Union called the Border Security Force for ensuring the security of the borders of India’. বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে, ‘For the purpose of sub-section (1) of section 4, the Force shall:- (i) promote a sense of security among the people living in the border area, (ii) prevent trans-border crimes, unauthorised entry into or exit from the territory of India, (iii) prevent smuggling and any other illegal activity’ [৫(১)ধারা, বিএসএফ রুলস, ১৯৬৯]। বাহিনীর ক্ষমতা এবং দায়িত্ব প্রসঙ্গে প্রাথমিকভাবে আইনে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট আইন, বিদেশী-নাগরিক পঞ্জীকরণ আইন, কেন্দ্রীয় আবগারি আইন, বিদেশী-নাগরিক আইন, বিদেশী মুদ্রা বিনিময় আইন, কাস্টমস আইন এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় আইনের আওতায় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে বিএসএফ (১৩৯(১)(১) ধারা)। ১৩৯(১) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্দেশিকা জারি করে বাহিনীর কার্যকারিতার সীমা ঠিক পারবে, তবে নির্দেশিকা জারি করার তিরিশ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় আইনসভার দুই কক্ষে সেটি পাশ করাতে হবে (১৩৯(৩) ধারা)।

    সংবিধানের ২৪৬ ধারায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের আইন প্রণয়ন করার এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা আছে। সপ্তম তফসিলের ২য় তালিকার (রাজ্যের বিষয়) প্রথমেই বলা আছে, ‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। এমনকি, তফসিলের ১ম তালিকায় (কেন্দ্রের বিষয়) বলা আছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সামলাতে শুধুমাত্র রাজ্যের সাধারণ প্রশাসনকে সহায়তা করতেই (in the aid of the civil power) কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাজ্যে বহাল করা যেতে পারে (২ক, ১ম তালিকা)। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, ১৯৯৭ সালের ২৭শে নভেম্বর, নাগা পিপলস মুভমেন্ট অফ হিউম্যান রাইটস বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিমকোর্ট রায় ছিল (রিট পিটিশন ৫৫০/১৯৮২), ‘The expression "in aid of the civil power" in Entry 1 of the State List and in Entry 2-A of the Union List implies that deployment of the armed forces of the Union shall be for the purpose of enabling the civil power in the State to deal with the situation affecting maintenance of public order which has necessitated the deployment of the armed forces in the State. The word "aid" postulates the continued existence of the authority to be aided. This would mean that even after deployment of the armed forces the civil power will continue to function. The power to make a law providing for deployment of the armed forces of the Union in aid of the civil power in the State does not comprehend the power to enact a law which would enable the armed forces of the Union to supplant or act as a substitute for the civil power in the State. ...... In our opinion, what is contemplated by Entry 2-A of the Union List and Entry 1 of the State List is that in the event of deployment of the armed forces of the Union in aid of the civil power in a State, the said forces shall operate in the State concerned in cooperation with the civil administration so that the situation which has necessitated the deployment of the armed forces is effectively dealt with and normalcy is restored.’

    ইতিপূর্বে, ২০১২ সালের মার্চে, ইউপিএ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম রাজ্যসভায় একই রকমের মারাত্মক একটি সংশোধনীর (বিএসএফ অ্যামেণ্ডমেন্ট বিল, ২০১১) মাধ্যমে দেশের যেকোনো অংশে বিএসএফের কার্যকারিতার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে উদ্যোগী হলে, গুজরাতের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার তীব্র বিরোধিতা করে এই উদ্যোগকে “create a state within a state” বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপর, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, “This is another attempt by the Centre to weaken the federal structure of the country. The present central government is hell bent to snatch powers of the state and is conspiring to weaken the federal structure.” দেশের সংবিধানের ফেডারাল রাষ্ট্র কাঠামোকে রক্ষার জন্য তাঁর এমন বক্তব্যে চমৎকৃত হতে হয়। বিলটি তখনকার মত মুলতুবি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালে বিজেপি সরকার সেটি তুলে নেয় (টু অ্যামেণ্ড বিএসএফ অ্যাক্ট, সেন্টার টু ড্রপ ইউপিএ বিল, ব্রিং ইটস ওন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১৯/০১/২০১৫)।

    অথচ প্রধানমন্ত্রী হয়েই তাঁর সরকার ২০১৪ সালের ৪ঠা জুলাই এক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যে নজরদারির এলাকা বাড়িয়ে, ফৌজদারি আইনে বিএসএফকে ক্ষমতাশালী করে, সন্দেহভাজন যে কোনও ব্যক্তিকে ইচ্ছেমত গ্রেফতার করার, খানাতল্লাশি চালানোর, অভিযুক্তের জিনিস বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল। এজন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলোর মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। যদিও বিএসএফ আইনেই বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের মতামতের ভিত্তিতে রাজ্যের কোনও আইন ব্যবহার করতে তাদের ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে (১৩৯(২) ধারা)। মাত্র দু’বছর আগের অবস্থান থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে তাঁর সরকার রাজ্যের স্বতন্ত্র ক্ষমতায় অন্যায্য হস্তক্ষেপ করে আঘাত করল সংবিধানের ফেডারাল রাষ্ট্র কাঠামোয়।

    বস্তুত, সশস্ত্র আধা-সামরিক বাহিনীর কাজের সঙ্গে রাজ্য নিয়ন্ত্রিত পুলিশবাহিনীর দায়বদ্ধতা এবং কার্যক্ষেত্র অনেকটাই আলাদা। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মূল দায়িত্ব সমরশিক্ষিত সশস্ত্র বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের নাগরিকদের আশু সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, আন্তর্জাতিক চোরাচালান রোখা। বেপরোয়া শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের আচরণ কঠোর এবং অস্ত্রনির্ভর। অপরপক্ষে পুলিশ, জনসমাজের মধ্যে থেকে, সুস্থ নগর-জীবনকে অনাবশ্যক বিব্রত না করে, সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ, অপরাধ দমন করে থাকে। যে দায়িত্ব অনেক বেশি সংবেদনশীল। অহরহ স্বদেশের নিরীহ নাগরিকদের উপরেই সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর নৃশংস অত্যাচার, হত্যা, অমানবিক অস্ত্র নির্ভর আচরণের ভুরি ভুরি নজির উঠে এসেছে (ট্রিগার হ্যাপি: এক্সেসিভ ইউজ অফ ফোর্স বাই ইন্ডিয়ান ট্রুপস অ্যাট বাংলাদেশ বর্ডার, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ডিসেম্বর, ২০১০)। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তেই গত দশ বছরে ১০৫টি হত্যার অভিযোগ উঠেছে এপার বাংলার একটি অ-সরকারি সংস্থা, মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের প্রতিবেদনে (দ্য হিন্দু, ০৯/০২/২০২১) । বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’, তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, গত কুড়ি বছরে (২০০০ – ২০২১), ১২৩৮টি হত্যা, ১১৪৯টি জখম, ১৪০৮টি অপহরণ, ১৫টি ধর্ষণ, ১৫৭টি লুঠ সংঘটিত হয়েছে বিএসএফ-এর দ্বারা (হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন বাই ইন্ডিয়ান বিএসএফ এগেন্সট বাংলাদেশি সিটিজেন, ২০০০-২০২১, অধিকার)। অন্যদিকে, মানুষ এবং গরু পাচার, চোরাচালানে সক্রিয়ভাবে বাহিনীর পদস্থ আধিকারিকদের যুক্ত থাকার ঘটনা একের পর এক প্রকাশিত হচ্ছে (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ০৭/০১/২০১৯, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ৩১/০১/২০১৮) । বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমী গণতন্ত্রে, আধাসামরিক বাহিনীকে পুলিশি দায়িত্বে নিয়োগের নিরন্তর সমালোচনা হয়ে চলেছে। সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীকে পুলিশি ক্ষমতায় বলীয়ান করার বিপদ সম্পর্কে ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনাল জাস্টিস-এর অধ্যাপক ডঃ ওটউইন মেরেনিন, ২০০৩-এর জেনেভাতে এক কনফারেন্সে, তাঁর ‘ডেমোক্রেটিক ওভারসাইট অ্যান্ড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক বক্তৃতায় বলেছিলেন, জাতীয় সুরক্ষার বিষয়টি যুক্ত থাকার জন্য, সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর কাজকর্মে স্বচ্ছতার বদলে গোপনীয়তা বজায় থাকে, তাদের সংঘটিত নানান কুকর্মের বিরুদ্ধে তারা সর্বদাই সুরক্ষা পেয়ে থাকে। মনে পড়বে, ২০০১ সালে বিএসএফের গুলিতে নিহত সীমান্তের কাঁটাতার থেকে ঝুলে থাকা ফেলানি খাতুনের মৃতদেহর শিউরে উঠা ছবিটি। পরবর্তীকালে, অভিযুক্ত বিএসএফের জওয়ান বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। সুতরাং, এই তথ্যসমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, নেহাত চোরাচালান, পাচার রুখতে কিংবা সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বিএসএফকে পুলিশি ক্ষমতায় বলীয়ান করে তাদের কাজের এলাকা অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেওয়াটা আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং একাধিক রাজ্যে, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ শাসিত রাজ্যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত সমান্তরাল আরেকটি আরক্ষা প্রশাসন গড়ে তুলে, রাজ্য প্রশাসনকে এড়িয়ে, সরকারের সমালোচক ও রাজনৈতিক বিরোধী শত্রুপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ তথা নিকেশ করাই অন্যতম উদ্দেশ্য।

    স্মরণে থাকবে, ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার জান্তব সংখ্যা গরিষ্ঠতায় ক্ষমতা দখলের পর, বিজেপি ঠিক একই ভাবনা থেকে দু'টি কুখ্যাততম কালাকানুন, ইউএপিএ(আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট) এবং এনআইএ(ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) আইনের ভয়াবহ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটিয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইতে জঙ্গি হামলার পর তড়িঘড়ি তদানীন্তন ইউপিএ সরকার, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে নতুন এক তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি গঠন করে। দেশের যেকোনো স্থানে সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত তদন্ত করতে পারবে। আইনটিতে তালিকাভুক্ত (Scheduled) আতঙ্কবাদী অপরাধ নিবারণমূলক কয়েকটি নির্দিষ্ট আইনের আওতায় দেশের ভেতরে ঘটা সার্বভৌমত্ব, সুরক্ষা ও ঐক্য বিঘ্নকারী কোনও অপরাধের তদন্ত করতে পারে এই তদন্ত সংস্থা। সংশোধনীটির ভয়াবহতা বুঝতে এগুলো উল্লেখ করা দরকার। প্রাথমিকভাবে, এনআইএ যে সমস্ত আইনের আওতায় অপরাধের তদন্ত করার দায়িত্বে ছিল তা হল, (১) আণবিক শক্তি আইন, (২) ইউএপিএ, (৩) অ্যান্টিহাইজ্যাকিং আইন, (৪) বেসামরিক বিমান পরিবহন সুরক্ষায় বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইন, (৫) সার্ক সম্মেলন (আতঙ্কবাদ প্রতিরোধী) আইন, (৬) নৌপরিবহন সুরক্ষায় বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধী আইন, (৭) গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র ও তার পরিবহন (বেআইনি কার্যকলাপ নিবারণ) আইন এবং (৮) (ক) দেশের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা, যুদ্ধ ঘোষণার প্ররোচনা দেওয়া ও (খ) জাল নোট সংক্রান্ত (ভারতীয় পেনাল কোড) অপরাধ। ২০১৯-এর সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট অপরাধের তালিকায় যোগ করা হল, (ক) বিস্ফোরক আইন, (খ) অস্ত্র আইন, (গ) তথ্য প্রযুক্তি আইন এবং (ঘ) মানব-পাচার বিরোধী আইন (আইপিসির অন্তর্গত)। এছাড়া, জাতীয় তদন্ত সংস্থা এখন থেকে তালিকাভুক্ত আইনের আওতায় শুধু দেশের মধ্যে নয়, অন্য দেশে ঘটা অপরাধ, যা কেন্দ্রীয় সরকারের চোখে দেশ বিরোধী কাজ, সে সবই তদন্ত করতে পারবে। কিন্তু, সেটি যে অপর একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বে অনাবশ্যক হস্তক্ষেপ করা হবে, সে ব্যাপারে অবশ্য সরকার নিরুত্তর। যদিও সংবিধান অনুসারে, দেশের গণ্ডির বাইরে কাজ করবে এমন আইন প্রণয়ন অসিদ্ধ (২৪৫(২) ধারা)।

    একইভাবে, মোদী সরকার ২০১৯-এ ইউএপিএ আইনের সবচেয়ে মারাত্মক সংশোধনীটি আনে। এযাবৎকাল, সরকার শুধুমাত্র কোনও সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে পারত। কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনানুগ পদ্ধতিতে বিচার করে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করার এক্তিয়ার ছিল আদালতের। কিন্তু, ২০১৯-এর সংশোধনীর বলে সরকারের অধীনস্থ একজন কর্মচারীই সন্দেহবশে কোনো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে দিতে পারে। ফলে, এক্ষেত্রে সংবিধানের মর্ম বস্তু ‘ক্ষমতার স্বাতন্ত্র্য’ (Separation of Power)-র তত্ত্বকে নস্যাৎ করে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বিচারব্যবস্থার স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ক্ষমতাটিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিস্ত সরকারের রাজনৈতিক প্রভুদের বশংবদ একজন প্রশাসকের মর্জিতে কোনও ব্যক্তির স্বাধীনতা, সামাজিক মর্যাদা নির্ভর করছে। যা নাৎসি জমানার স্বেচ্ছাচারী পুলিশ রাষ্ট্রের কথা মনে করিয়ে দেয়।

    ক্ষমতায় আরোহণের পর, নিজের বক্তব্যের উল্টো পথে গিয়ে, রাষ্ট্রের ভেতর আরেকটি একচ্ছত্র স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার অতি-রাষ্ট্র (Deep State) গঠন করার দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে তাঁরই সরকার।

    দ্বিতীয়বার দিল্লির মসনদ দখল করেই ক্ষমতান্ধ বিজেপি সরকার, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার তথা জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য উপেক্ষা করে, সে রাজ্যটিকে দু’খণ্ড করে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের জায়গির গড়ে তুলল। নিতান্তই অসাংবিধানিক এই পদক্ষেপ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল আগামী দিনে এমন অনেক অসাংবিধানিক, গণতন্ত্র ও ফেডারালিজমের কাঠামো ধ্বংসকারী আইনকানুন হতে থাকবে। একই পথ ধরে, এবছর ২৪শে মার্চ, দিল্লি সরকার সংশোধনী (GNCTD Ammendment Bill) এনে, দিল্লি রাজ্য সরকারের সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে রাজ্যটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের আর একটি উপনিবেশ বানিয়ে ফেলা হল। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপ-রাজ্যপাল সে উপনিবেশের মনসবদার।

    সংবিধানের সপ্তম শিডিউল অনুযায়ী কো-অপারেটিভ সোসাইটি একেবারেই রাজ্য সরকারের বিষয় হওয়া সত্ত্বেও (৩২ নং, লিস্ট ২, ৭ম শিডিউল), এবছর ৬ই জুলাই, কেন্দ্রীয় সরকার ‘সহযোগিতা মন্ত্রক’ (মিনিস্ট্রি অফ কো-অপারেটিভ) নামে একটি নতুন একটি মন্ত্রক তৈরি করল। সহযোগিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধি (সহকার সে সমৃদ্ধি)- এমনই নাকি মহৎ উদ্দেশ্য তার। সারা দেশে ৩৩টি রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা রাজ্য নিয়ন্ত্রিত স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক এবং ডিসট্রিক্ট সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলোতে জমা আমানতের পরিমাণ যথাক্রমে, ১,৩৫,৩৯৩ কোটি টাকা এবং ৩,৭৮,২৪৮ কোটি টাকা। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, রাজ্যের এক্তিয়ারে অনাবশ্যক হস্তক্ষেপ করে আদতে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলোর নিয়ন্ত্রণের উপর কেন্দ্রের দখল নেওয়াই তার মুখ্য উদ্দেশ্য (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১৫/০৭/২০২১)

    লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই সমস্ত ঘটনাগুলো মোটামুটি একই সূত্রে গাঁথা। ভারতীয় গণতন্ত্রে সংবিধানের মর্ম বস্তু ফেডারালিজমের কাঠামোটিকে ধ্বংস করে, রাজ্যগুলির সাংবিধানসম্মত স্বতন্ত্র ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে ক্রমশ ভয়াবহ এবং একচ্ছত্র স্বৈর ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে চলেছে বিজেপি নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় সরকার। প্রকৃত উদ্দেশ্য, সংবিধানের ফেডারেলিজমের ধারণার বিপ্রতীপে অবাধ এবং একচ্ছত্র পুঞ্জিভূত ক্ষমতার একটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠন (Unitary Nation State)। দেশের রাজ্যগুলো হবে যার অধীনস্থ, আজ্ঞাবাহী মনসবদারের অধীনে এক একটি করদ রাজ্য (The Third Reich was divided into 42 Gaue, each headed by a gauleiter chosen for his personal loyalty to Hitler, Britannica) । বিজেপির মাতৃ সংগঠন আরএসএসের কাছে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয়তা তথা জাতীয়তার ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের কাছে এক দেশ, এক আইন, এক প্রশাসনের অধীনে সমগ্র দেশ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রীভূত অবাধ ও প্রশ্নাতীত ক্ষমতার এক রাষ্ট্রব্যবস্থা আর হিন্দুত্ব- এসবই এক সুরে বাঁধা। এমনই এক ধারণা থেকে জন্ম নিয়েছে তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রীয়তা, দেশভক্তির তত্ত্ব। তাদের প্রকল্পিত সেই অদ্ভুত রাষ্ট্র কাঠামোয় সরকারের কোনও রকম সমালোচনা, বিরোধিতা, ভিন্নমত মানেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এই তত্ত্বের উৎস সন্ধান করতে গেলে বুঝতে হবে আরএসএসের গুরুজী মাধব সদাশিব গোলওয়ালকরের প্রবল বিতর্কিত বাঞ্চ অফ থটস গ্রন্থটি। বইটি আরএসএস পরিবারের সদস্যদের কাছে বেদ স্বরূপ। এটি পড়লে বোঝা যাবে, গুরুজীর চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত বিজেপি সরকার এবং সঙ্ঘের পরিবারভুক্ত অন্যান্য সংগঠনের সুপরিকল্পিত কাজকর্ম। ভারতের গৃহীত সংবিধানের তীব্র বিরোধী ছিলেন গোলওয়ালকর। বিশেষত ফেডারাল রাষ্ট্র কাঠামো তাঁর কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। বাঞ্চ অফ থটসের প্রথম খণ্ডের উনিশ অধ্যায় ‘ওয়ান্টেড এ ইউনিটারি স্টেট’ (প্রয়োজন এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা)-এ গোলওয়ালকর বলছেন, “বর্তমান সংবিধান আমাদের দেশকে এক রকম আলাদা বেশ কিছু এককে রূপান্তরিত করেছে, প্রত্যেকটি এককের আছে একটি করে নিজস্ব রাজ্য এবং সেই রাজ্যগুলো একটি কেন্দ্রে সংঘীভূত (ফেডারেশন)। ভারত বা এই নামে পরিচিত অবশিষ্ট যেটুকু আছে তাকে এক একাত্ম অখণ্ড রাষ্ট্রের অভিব্যক্তি রূপে গণ্য করে এক দেশ, এক আইন সত্তা, সম্পূর্ণ দেশে প্রশাসন পরিচালনরত এক কার্যকরী কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারত”। স্বাধীনোত্তরকালে ব্রিটিশ শাসনের অর্থনৈতিক, সামরিক কৌশলগত সুবিধার্থে ভারতে ৯টি প্রদেশ, ১৯টি রাজন্য শাসিত রাজ্যসমূহ ক, খ, গ এই তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। ধর্মীয় বিভাজনে ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত স্বাধীন দেশে সময়ের দাবী ছিল অপেক্ষাকৃত কম বিতর্কিত ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের। ১৯৫৩ সালে প্রাক্তন বিচারপতি ফজল আলি, কূটনীতিক সর্দার কে.এম. পানিক্কর এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সাংসদ এইচ.এন. কুঞ্জরুকে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশ নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছাড়া ১৪টি রাজ্য গঠিত হয়। কমিশনের এই রিপোর্টের তীব্র সমালোচনা করেন গোলওয়ালকর। সংবিধানের ফেডেরাল কাঠামোর বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য ছিল, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পদক্ষেপ হবে, আমাদের দেশের সংবিধানের সংঘীয় কাঠামোর সমর্থনকারী (ফেডেরাল) যাবতীয় কথাবার্তার চিরতরে ইতি টানা, ভারত নামে এক রাষ্ট্রের অধীন সমস্ত স্বশাসিত বা আধা-স্বশাসিত রাজ্যের অস্তিত্ব বিলোপ করা এবং এক দেশ, এক রাষ্ট্র, এক আইনসভা ও এক প্রশাসনের কথা ঘোষণা করা যাতে খণ্ডাত্মক, আঞ্চলিক, সাম্প্রদায়িক, ভাষাগত বা আমাদের সংহত সম্প্রীতি বিনাশের সুযোগ সৃষ্টিকারী অন্য কোনো ধরনের অহমিকার চিহ্নমাত্র না থাকে। এই এককেন্দ্রিক ধাঁচের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান আবার পর্যালোচনা এবং নতুন করে রচনা করা হোক” (বাঞ্চ অফ থটস) । এই বিরাট দেশের ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের’ বিপুল বৈচিত্রময় সংস্কৃতির কোন গুরুত্বই ছিল না তাঁর এক ছাঁচে ঢালা 'হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থানের' স্বপ্নে।

    কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসীন গোলওয়ালকরের মতাদর্শের নিষ্ঠ অনুসারীরা এখনও ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, ফেডারাল রাষ্ট্র কাঠামোর সংবিধানকে বাতিল করে উঠতে পারেননি। সংবিধানের উপরি কাঠামো অক্ষত রেখে, দেশে গুরুজীর স্বপ্নের বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর তাঁরা। সমস্ত রাজ্যকে সম-গুরুত্ব দেওয়া, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে সমস্ত রাজ্যের, সকল রাজনৈতিক সত্ত্বার প্রতিনিধিদের নিয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা বিরোধী রাজনৈতিক মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি সাংবিধানিক মর্ম বস্তু এবং নৈতিকতাকে ধ্বংস করে, সমগ্র দেশটিকে এক আইনসভা, এক প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত করতে চান। উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক বরাদ্দ, বিশেষ করে সুরক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ- এ সবই তাঁদের স্বেচ্ছাচারী, একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং রাজ্যগুলো কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আজ্ঞানুবর্তী এক একটি করদ রাজ্যে পরিণত হবে। এই লক্ষ্যে তাঁদের সুচিন্তিত পরিকল্পনা দেখা গেছে জম্মু-কাশ্মীরকে বিভাজন করে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় আনা, পূর্ণ রাজ্য দিল্লির সমস্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা একতরফা-ভাবে কেড়ে নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রের জায়গীরে পরিণত করা, ইউএপিএ, এনআইএ, বিএসএফ আইন, নয়া কৃষি আইন, নতুন শ্রমকোড, নতুন শিক্ষানীতি ইত্যাদি আইন প্রণয়নে। সাম্প্রতিককালে বাংলাকে ভাগ করার একটি সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত বিতর্ক উস্কে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে গোলওয়ালকর প্রকল্পিত এককেন্দ্রিক, এক প্রশাসনের আওতাধীন প্রবল স্বৈর ক্ষমতাধর হিন্দু রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কয়েক মাস আগে, তামিলনাড়ু রাজ্য প্রশাসন তাদের রাজ্যের সমস্ত সরকারি নথিপত্রে ‘কেন্দ্রীয় সরকার’ শব্দ গুচ্ছকে সংবিধান সম্মত ভাবে ‘ইউনিয়ন সরকার’ বলে উল্লেখ করার সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিজেপি (স্ক্রল, ১৫/০৬/২০২১)। কারণ, ফেডারালিজমের ধারণাটিই তাদের কাছে অসহনীয়।

    ভারতীয় ফ্যাসিস্ত শাসকদের সুপরিকল্পিত উদ্যোগে বর্তমান সংবিধান বজায় রেখেই একটি কেন্দ্রীভূত অতি রাষ্ট্রিক ক্ষমতার (Deep State) রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে। তাদের পথপ্রদর্শক গোলওয়ালকর প্রকল্পিত মনুস্মৃতি অনুসারী স্বৈরাচারী, বর্ণ-দ্বেষী, ধর্মদ্বেষী, ব্রাহ্মণ্য-বাদী, প্রবল কেন্দ্রীভূত স্বৈর ক্ষমতাধর হিন্দু রাষ্ট্র গড়ে তোলাই একমাত্র লক্ষ্য। কল্যাণকামী চরিত্রটি ধ্বংস করে দেওয়া দায় হীন সে রাষ্ট্রে নিম্নবর্ণের, নিম্নবর্গের আর অহিন্দু মানুষদের থাকবে না নূন্যতম মানবাধিকার। অনুপ্রবেশকারী, দেশের শত্রু তকমা দেগে দিয়ে কেড়ে নেওয়া হবে তাদের জীবনের সমস্ত অধিকার। গণতান্ত্রিক ভেকধারী সেই ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রে, দেশ এবং সরকার সমার্থক। সরকারের সমালোচনা কিংবা বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন- এসবই দেশদ্রোহিতার সমতুল্য। তাদের লক্ষ্য পূরণে, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র বাহিনীসমূহ অন্যতম সহায়ক হওয়া তেমন অস্বাভাবিক নয় (জোশী জোসেফ, দ্য সাইলেন্ট ক্যু: এ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়াজ ডিপ স্টেট – রিভিউ, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, ১৭/০৯/২০২১)। সাম্প্রতিককালে, সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগটি সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ারই আর একটি পদক্ষেপ মাত্র।

    সূত্র:
    (১)ভারতের সংবিধান, (২)বিএসএফ অ্যাক্ট, (৩)এনআইএ অ্যাক্ট, (৪)ইউএপিএ, (৫)ইউএপিএ অ্যামেণ্ডমেনট অ্যাক্ট, ২০১৯, (৬)গেজেট নোটিফিকেশন ০৪/০৭/২০১৪ (সংখ্যা ১৪১৪), (৭)গেজেট নোটিফিকেশন ১১/১০/২০২১ (সংখ্যা ৩৮৫৩), (৮)লাইভ ল, ১৫/১০/২০২১, (৯)দ্য ওয়্যার, ১৪/১০/২০২১, (১০)ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১৯/০১/২০১৫, (১১)বাঞ্চ অফ থটস- এমএস গোলওয়ালকর, সাহিত্য সিন্ধু, ব্যাঙ্গালোর (চিন্তাচয়ন (বাঙলা অনুবাদে- রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়), রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, আলিপুরদুয়ার), (১২)ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য কন্সটিটিউশন অফ ইন্ডিয়া- ডঃ দুর্গাদাস বসু।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৩ নভেম্বর ২০২১ | ২৬২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • santosh banerjee | ১৩ নভেম্বর ২০২১ ১২:০৫501105
  • ঐতিহাসিক সত্য কথা বলার জন্য ধন্যবাদ। দেখা গেল, সমান্তরাল ভাবে এই দুটি রাষ্ট্র ভাবনা ( ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ তান্ত্রিক ভারত আর "হিন্দি হিন্দু হিনদোসথান "ভারত) এ দেশে লালিত এবং পালিত হয়ে চলেছে।যে শক্তি এতদিন তার শতবর্ষী অহিংস নীতি এবং সঙখ্যা র জোরে দেশ শাসন করলো , সেই পথে ই তো ঐ ফ্যাসিসট রা এলো। গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে !! এর পর শুরু হলো খেলা। কিন্তু, কোন মহৎ পার্থক্য আছে বা ছিল কি ? এই সাদা টুপি আর গৈরিক বসনে ? গান্ধী বাদের চোলাই মিশিয়ে দেয়া হলো সাভারকর/গোল ওয়াল করের কারণ বারি তে। সবকিছু ই তো হচ্ছে গান্ধী বাবার জোড়া চশমার ছবি কে সামনে রেখে। নাৎসি বাদের নতুন রূপ!! 
  • Ranjan Roy | ১৪ নভেম্বর ২০২১ ১০:০০501152
  • পার্থবাবু,
      আপনার বিশ্লেষণ ও তথ্য সাজানোর জন্য টুপি খুললাম। এ নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া দরকার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন