দেখাদেখি তো অনেক পরে। কুমুদিকে চেনা কেবলির গল্প দিয়ে। গুরুর অগণিত পাঠক, ডাকসাইটে জয়ন্তী অধিকারীকে আদৌ চেনেন কিনা সন্দেহ। তাঁরা কুমুদিকে চেনেন। আর তাঁরা চেনেন কেবলিকে। যে, টিঙটিঙে রোগা আর মুখচোরা,থাকার মধ্যে মাথায় ঘন চুল। পড়ে কেমিস্ট্রি, কিন্তু প্র্যাকটিকালে ভয়। পাকপাড়া থেকে বেলগাছিয়া এসে ট্রামে করে কলেজ যায়। এ সবই সেই সত্তরের দশকের শেষের গল্প। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক উথালপাথাল শেষ হয়ে এসেছে। চলছে জীবন। যুবক-যুবতীরা কলেজে যাচ্ছে। পড়ছে। প্রেম করছে। তখন ট্রাম চলত শহরে। মিনি বাস ছিল দামি যানবাহন। তাতে দাঁড়িয়ে যাওয়া যেতনা। এই সেই সাদা-কালো সময়ের গল্প, যখন মেয়েরা শাড়ি পরে বেণী দুলিয়ে কলেজে যেত। তাদের কাঁধে ঝুলত ব্যাগ, আর বুকের কাছে ধরা থাকত চিত্রলিপি খাতা। এই সেই জ্যান্ত সময়ের গল্প, উত্তম ও সুচিত্রা তখনও মহানায়ক ও মহানায়িকা। কুমুদির পাঠক ও পাঠিকারা অনেকেই এ সময় চোখে দেখেননি। যারা দেখেছেন, তাদের কাছে এ সবই নস্টালজিয়ার জলছবি। কুমুদির লেখা তাঁদের কাছে পুরোনো বায়োস্কোপ। চোখ দিলেই খুলে যায় সেই সত্তরের দশকের রূপকথার দৃশ্যাবলী। ছোটো, কিন্তু, আহা কী মনোরম। কী অপার্থিব কিন্তু সত্য।
এ নয়, কুমুদি, অর্থাৎ জয়ন্তী অধিকারি, কেবল কেবলীর কথাই লিখেছেন। আসলে তো তিনি কেমিস্ট্রির পন্ডিত। ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। রীতিমতো গম্ভীর প্রবন্ধও লিখেছেন বিস্তর। গুরুতেই লিখেছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী, কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে নিয়ে। কিন্তু তিনি এমনই কেবলীময়, যে, চোখে দেখার আগে, এসব বিশ্বাস করা ছিল কঠিন। যেমন কঠিন ছিল বিশ্বাস করা, যে, কুমুদি আর নেই। জলজ্যান্ত জয়ন্তী অধিকারী হঠাৎই একদিন দিল্লি শহরে নেই হয়ে গেলেন। দিল্লি শহর দাঁড়িয়ে রইল শুধু খটখটে কুতুবমিনারকে নিয়ে।
যিনি গেলেন, তিনি অবশ্য ডঃ জয়ন্তী অধিকারী। ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। কেবলি তো অজর অমর অক্ষয়। তার মৃত্যু নেই। নামে কেবলী হলেও আসলে যে স্মার্ট, স্কলারশিপ পেয়ে রিসার্চ করে। কটকট করে কথার উত্তরও দেয়। সত্তরের দশকের সবুজ শাড়ি পরা সেই মেয়েটি কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের পাশ দিয়ে এখনও তো হেঁটেই যাচ্ছে, সবুজ শাড়ি পরেই। অবিকল একই রকম ভঙ্গীতে।