এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অসীম নন্দনের ছোটগল্প: আমার কক'টার চামড়া কিন্তু ছিলায়া দিতে হবে

    asim nondon লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ মে ২০২৫ | ৩৭ বার পঠিত
  • [ শুধুমাত্র প্রাপ্তমনস্কদের জন্য! সাধু সাবধান!!] 

    সারাদিন বইসা থাকি। আর খাই। আর ডাকাডাকি করি। সেক্সের জন্য পার্টনার খুঁজি। সুরেলা ডাকে তাহাদের খুঁজি। তাহারা আমার ডাকে দেয় না তো সাড়া। তবু ডাকি। তাছাড়া আমার কোনো কামকাজ নাই। মানুষের জীবনের তো কত মহৎ উদ্দেশ্য থাকে। মাগার আমার জিন্দেগীতে কোনো এইম নাই। এইমলেস হওয়াটা অবশ্য এই জমানায় ফ্যাশন হয়া গেছে। কেউ যদি নিজেরে এইমলেস ডিক্লেয়ার করে ফেলে, তাহলেই সে হয়া যায় মোটিভেশান স্পিকার। মাগার আমি তো স্পিকারও হইতে পারবো না। কারণ মানুষ যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষা আমি তো কইতে পারি না। আর আমি যে ভাষায় ডাকাডাকি করি, সেই ভাষা মানুষ বোঝে না। আমার জন্ম কেমনে হইছে? বলতে পারবো না। তবে মরণ কেমনে হইবো, তা আমি প্রতিদিন চোখের সামনে দেখি।

    তবে সারাদিন আমার যেহেতু কোনো কাজ কাম নাই, তাই ভাবা প্র্যাকটিশ করাই আমার একমাত্র কাজ হয়া গেছে। এই প্রকান্ড বাজারটাতে বইসা বইসা নানান কিসিমের মানুষ দেখি। কত খানকি আসে আর কত যে ভদ্দরলোক আসে এই বাজারে; তার কোনো হিসাব নিকাশ নাই। খানকিগুলার পাছা অপুষ্ট। তবে ভদ্দরলোকগুলার পাছাগুলা অমায়িক। পোল্ট্রি মুরগির মতো নাদুসনুদুস। বাজারে তেনারা বেসাতি করতে আসেন। কেউ কেনে আর কেউ বেচে। দৃশ্যগুলা অমায়িক। কত ভদ্দরলোকরে দেখলাম ভিড়ের মধ্যে আচানক কোনো খানকির পাছায় হাত বুলায়া দিতে। এগুলা প্রতিদিনই হয়। খানকিগুলা অবশ্য তেমন কিছু বলার সাহস পায় না। চুপচাপ সহ্য করে। আমি বুঝি না ওরা এইরকম করে কেন? 

    তো এই বিরাট অনন্ত বাজারে আলু বিক্রি হয়। বিক্রি হয় বেগুন আর সরিষার তেল। সরিষার তেল ছাড়াও আরো বহুত তেলের প্রকারভেদ আছে। সেগুলাও বিক্রি হয়। মগজের দাম এইখানে খুব কম। মগজ তো মানুষ কিনতেই চায় না। মুরগির মগজগুলা ফেলানোই হয়। এইখানে দামী জিনিস হইলো হাড্ডিছাড়া গোস্ত। এইটার বিশাল ডিমান্ড। আরেকটা জিনিসের ডিমান্ড আছে। সেইটা হইলো আইডিওলজি। আর আইডিওলজি'র অপর নাম গড। এই গডের অফুরন্ত ক্ষমতা! গডের বিশাল ডিমান্ড আছে বাজারে। তার নামেই বেচাবিক্রি চলে আরকি। 

    আমি এই বাজারটায় ২১ দিন হইলো আসছি। আমার পাছা অপুষ্ট বইলা কেউ আমারে পুছে না। যাদের সাথে এই বাজারে আমি আসছিলাম তারা কেউই আর বর্তমান নাই। শুধু একজন আছেন। তিনি আমার মালিক। আমার জানমালের একমাত্র অধিকারী। তিনি খুব সুন্দর কইরা গলা কাটেন। বিসমিল্লাহ বইলা এক পোঁচে কামিয়াবি হাসিল করেন। মানুষের ভাষা খুব কঠিন একটা জিনিস। এরা বলে আই লাভ চিকেন। কিন্তু আসলে এরা বলতে চায় চিকেন খায়া আমার বেধড়ক আনন্দ হয়। এইরকম ডাবল মিনিং মনুষ্য বাজারে প্রচলিত আছে। ২১ দিনের অভিজ্ঞতায় আমি দেখছি এগুলা। মানুষেরা পলিটিক্স করে। এই পলিটিক্স জিনিসটা মজার। টাউট বাটপারি করাকেই এরা পলিটিক্স বলে। যেমন এই বাংলাদেশের বাজারে পাকিস্তানি কক খুবই জনপ্রিয়। শ'য়ে শ'য়ে হাজারে হাজারে কোটিতে কোটিতে পাকিস্তানের কক বেচা হয় এই বাজারে। তবে বাঙালিগুলার বিরাট অংশ মানুষ পাকিস্তানরে লাইক করে না। কিন্তু আবার এইরকম নজিরও আছে যারা পাকিস্তানের ক্রিকেটার আফ্রিদিরে বিবাহ করতে চায়। পুরাই গুবলেট একটা অবস্থা। মানুষরে বুঝতে পারা কঠিন বিষয়। তার থেকে আমাদের মুরগি-জীবন সহজ। অন্তত এত প্যাচগোছ নাই। জন্ম নিব এবং মইরা যাবো। মানুষগুলা খায়া ফেলবে আমাদের। যেইরকম কইরা আমার ভাই ব্রাদারগুলারে খাইছে সেইভাবেই।

    আজকের দিনটা খুবই ঝলমলে। পাক-পবিত্র। সুবেহ-সাদিকের পর থেকেই বাজার স্বর-গরম। মানুষজন ভিড় করে হাড্ডি-ছাড়া গোস্ত কিনতেছে। ১০০০ কেজির একটা বিরাটকায় নিরিহ গৃহপালিত জন্তু জবেহ হইছে বাজারে। মগজ বাদে সবই মানুষ কেনার জন্য দাঁড়ায়া আছে। দোকানের মালিকগুলা ভিড় কমাইতেই পারতেছে না। বাচ্চাগুলা খালি চিল্লাপাল্লা করতেছে। সমীক্ষা করে দেখলাম, আজকে বাজারে শসা আর বেগুনের দাম চড়া। তাই মানুষ গোস্তই বেশি করে কিনতেছে। আর কিনতেছে আলু। 

    অনেকক্ষণ যাবত একটা ভদ্রলোক আমার দিকে তাকায়া আছে। লোকটা লাল টিপ আর শাদা শঙ্খের চুড়ি পরা। লোকটারে দেখে মনে হইতেছে, সে কনফিউজড। মেবি আমার অপুষ্ট পাছা লোকটারে কনফিউশানে ফেলে দিছে। লোকটা আস্তে আস্তে দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো।

    মালিক বললেন, কী লাগবো বউদি বলেন? পাকিস্তানি কক দিব? নাকি পোল্ট্রি? 

    বউদি বললেন, নাহ পাকিস্তানি ককে মজা নাই। পোল্ট্রিও কেমন প্লাস্টিকের মতো হয়ে গেছে।

    মালিক বললেন, তাইলে দেশি দেই? ৫  কেজি?

    বউদি বললেন, ওরে বাবা! এত নিয়ে কী করবো? মানুষ তো আমি একা। তার থেকে আপনি ঐ ককটা মেপে দেখেন তো কত কোজি হয়? আর আমার কক'টার চামড়া কিন্তু ছিলায়া দিতে হবে।  

    মালিক আমারে ঘাড়ে ধইরা মেশিনে বসাইলো। আমি তো ইশারা দেখেই বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারলেই তো আর হয় না। আমাদের জীবনের মূল্য আর কত! মনুষ্য জীবনে পলিটিক্স আছে, মুরগি-জীবনে তো নাই। তাই মুরগির কোনো সোস্যাল রাইটও নাই। আমরা তো ভোট দেই না। আমাদের জাতিসংঘও দেখে না। আমাদের মানবাধিকারও নাই! 
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ২৫ মে ২০২৫ ২০:৩৮731670
  • বেশ ভাল লাগল। চালিয়ে যান ভাইজান!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন