স্বপ্নের দুঃস্বপ্ন
বাদুরে খেয়ে ফেলা লিচুর খোসার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্ধকারে ফচকাটা ঝলসে ওঠে! রাত্তির সবে গভীর হতে শুরু করেছে। ঘন-দুধের সর হয়ে তখনো তা পুরু হতে পারে নাই! অথচ শলাগুলোর তীক্ষ্ণ আগা আয়শা খাতুনের দিকে তাক করা! খানিক পরই তা ধাই করে বুকে বিঁধে যাবে। একেবারে বাম পার্শ্বে। বাম পাশ, না ডান? ডান পাশ, না বাম? যেনো ভয়ানক তাল-বেতালের ভেতর পড়ে আয়শা খাতুন উদ্দিশ করতে পারে না! কিন্তু সে নিশ্চিত জানে তাক করে থাকা ফচকাটা তাকে বিদ্ধ করবে। করবেই। ফচকার ধারালো শলা বুকের মাংসপেশিতে ঠিক ইঞ্চি তিনেক গেঁথে যাবে। মুহূর্তে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটবে। আর আয়শা খাতুন তখন আর্তনাদ করে উঠবে। তীব্র-তীক্ষ্ণ আর্তনাদ। অতঃপর মরিয়া হয়ে সুইচ বোর্ড হাতড়াবে। কাঠের বোর্ডটা হাতে ঠেকলে খুট করে সুইচ জ্বালাবে।
এই পর্যন্তই।
তারপর সবকিছু শান্ত। স্থির। নিরব। নির্জন। নিথর। একেবারে গোরস্থানের মতো থই থই নির্জনতায় ভরে যাবে ঘরখানা। আয়শা খাতুন ধীরে সুস্থে এই নির্জনতায় পা ডুবাবে। বালিশের কাছে রাখা চশমাটা চোখে পড়বে। চশমা চোখে নিজের বুক-পেট ভালো করে দেখবে। হাতিয়ে হাতিয়ে রক্তচিহ্ন খুঁজবে। অতঃপর ফচকার তীক্ষ্ণধার শলাগুলো খুঁজবে। কিন্তু কোথাও কিনা ওইসবের আলামত নাই! সব যেন ভোজবাজির মতো মিলিয়ে গেছে!
আয়শা খাতুন চোখ থেকে চশমা খুলে ফেলবে। আঁচলের কোণা দিয়ে ভালো করে মুছে-টুছে ফের পড়বে। এবং পুনরায় দেখার চেষ্টা করবে। কোথায় সেই ক্ষত? কোথায় রক্তের প্রপাত? ঝলসে ওঠা ফচকা? এই সবের চিহ্নও কোথাও নাই!
এই রকম অযাচিত বিপদে আয়শা খাতুন কালে-ভদ্রে পড়েছে। অবশ্য এ বিষয়টাও তো নিশ্চিত নয়। জীবন যদি মস্তক হয় তাহলে তার লেজ হলো বিপদ! ফলে যতদিন জীবন ততদিন বিপদ। ধড় থেকে লেজ আলাদা করা যায় না। জীবন আর বিপদ তাই আষ্টে-পৃষ্টে বাধা থাকে!
আয়শা খাতুন এতসব জেনেছিল প্রায় বালেগ না হয়েই। কিভাবে-অতটুকু বয়সে এইসব জীবন-বিপদ, মস্তক-লেজ তার মনে এসেছিল তাও এক ধন্দ বটে!
বয়স পাকার আগেই আয়শা খাতুনের বুদ্ধি অনেকটা পেকে গিয়েছিল।
হয়তো অভাব-অনটন বা নানান ঝুট-ঝামেলার পাহাড় ডিঙাতে ডিঙাতে আয়শা খাতুনের বুদ্ধি পরিপক্ক হয়েছিল।
প্রথম স্বামী সৈয়দ ইরফান উল্লাহর প্রবাসী জীবন আয়শা খাতুনকে আরো বেশি পরিপক্ক হতে সাহায্য করেছিল। জীবন বা যৌবনকে হেলায়-ফেলায় নষ্ট করার মতো বোকা সে কোনোকালেই নয়। ছিল না। ফলে প্রবাসীর টাকায় বাবার সংসারে সে ভালোই ঠেক দিয়েছিল। আর প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে প্রণয় ছিল নির্ধারিত।
জীবন আর বিপদের বুক-পিঠ বেঁধে চলার পরও বিপদ অগ্রগতি পেয়েছিল। ফলে প্রথম স্বামী কর্তৃক তালাকনামাও ছিল অবধারিত। আয়শা খাতুনের জীবনের প্রান্তে। অর্থাৎ লেজে। কন্যা জুলেখাকে নিয়ে তাকে ফিরতে হয়েছিল বাপের বাড়ি। ফেরার আগে যতোটা সম্ভব টাকা-কড়ি হাতিয়ে নিয়েছিল। প্রবাসীর টাকার ঠেক হেলায়-ফেলায় ফেলে আসা বুদ্ধিমতীর কাজ নয়।
তালাক হোক আর যাই হোক আয়শা খাতুন তখন দুপুর যৌবনা। একেবারে খাড়া সূর্যের তাপ-ভাপ তার গতরে। আলোর বাড়াবাড়ি যেমন ছায়ার রহস্যও কম ছিল না তার। কন্যা জুলেখার জন্মে সে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। ঠিক এই দুপুর যৌবনে আয়শা খাতুনের দেখা হয়ে গেল মীর হাকিমুল হকের সঙ্গে।
মীর হাকিমুল হকের উচ্চতা ছয় ফুট। টকটকে গৌরবর্ণ। বিদ্যা-বুদ্ধিতে পেট ঠাসা। আর ছিল পাঁচবিবির সাথে পাঁচ রকমের অভিজ্ঞতা। মীর সাহেব পুরুষ মানুষ বলে জীবন আর বিপদের ফেরে পড়ে নাই।
মীর হাকিমুলের পাঁচবিবির একজন মৃতা। তিনজন তালাকপ্রাপ্ত। আর একজন বর্তমান। বর্তমান বিবির সূচি-ভরা অন্তর। চারবিবির স্পর্শ পাওয়া স্বামীর উপর সে নাখোশ। ফলে মীর হাকিমুল হক যদি আয়শা খাতুনের আলো-ছায়ার রহস্য দেখে বেদিশা বনে যায় দোষ তেমন নয়।
আয়শা খাতুনের বক্র ভ্রু-ভঙ্গিমা গত পাঁচবিবির ধারে কাছে ছিল না। কার্তিক-অঘ্রানের গুগলি শামুক গেলা হাঁসির মতো ওজনদার চর্বি সর্বস্ব পাছা তার। ফলে মীর হাকিমুল হক বেসামাল। জীবনের সব বিপদ আগ্রাহ্য করে সে আয়শা খাতুনকে ঘরে আনলো।
এখন জীবন তার আর আয়শা খাতুনের। বিছানা-বালিশ-কাঁথা আর গু-মুতে বছর বিয়ানীর সংসার হলো তাদের!
ফি-বছর আয়শা খাতুনের ধামার মতো পেট দেখে মীর হাকিমুল হক আহলাদিত হতো!
চ্যালা কাঠের ঠ্যাঙানি বাদ দিলে আয়শা খাতুনের আলো-ছায়াঘেরা রহস্যময় গতর বড় লাগসই ছিল! মীর সাহেবের ছয় নম্বর বিবি আয়শা খাতুন। তারপর সে আর এদিক-ওদিক নড়তে পারলো না! আয়শা খাতুনের তেলতেলা হাতের তালু ফসকানো তার জন্য দায় হয়ে উঠলো! ফলে সাত নম্বর বিবির আশা-দুরাশা হয়েই রইলো।
এইসব দাম্পত্য জটিলতা দেখে কয়জন? জানেই বা কয়জন? বেবাক মানুষ দেখে গোলার ধান, দরদালান, পুকুরের রুই-কাতলা আর ফটফটা কাপড়-চোপড়ের বাহার। দেখে বছর বিয়োনী। বছর বিয়োনী হলে তো দাম্পত্যের হাঁসফাঁসও অন্তরীণ হয়ে যায়। লোকচক্ষুর সামনে আয়শা খাতুন আর মীর হাকিমুল হকের দাম্পত্য জীবন নিখাঁদ। সোনার মোড়ানো। আয়শা খাতুনের তেলতেলা হাতের চ্যালাকাঠ-দৌড়ানি নাকি আড়াল-আবড়ালের খবরা-খবর।
সাত-আট ছেলে-মেয়ের মা হওয়ার পরও নাকি ওই দৌড়ানি বহাল ছিল!
দৌড়ানি-দাবড়ানি যাই থাক মীর সাহেবের জীবনদ্দশায় আয়শা খাতুন দিন বা রাতের পরিক্রমা টের পায় নাই।
কিন্তু তার দেহাবসান হওয়া মাত্রই তেলেসমাতির শুরু!
আয়শা খাতুন দুই চক্ষু বুজলেই কি সব ভুতুড়ে নাকি অদ্ভুতড়ে কাণ্ড শুরু হয়।
মাছ মারার ফচকা ভেসে ওঠে চক্ষের সম্মুখে। তার ধারালো শলাগুলা ধাই করে ঢুকে পড়ে হৃৎপিণ্ডে!
আবনামা-খাবনামা
মীর হাকিমুল হকের ছায়া পর্যন্ত কোথাও নাই। কিন্তু কথাবার্তা শোনা যায়! গজাড় মাছ জলের ভেতর খলবলিয়ে যেমন শব্দ ওঠায়, মীর সাহেবের কথা শোনার আগে সেরকম শব্দ শোনে আয়শা খাতুন। অতঃপর চাপা গোঙানি। যেন কেউ কাউকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলছে!
কোনো কোনো রাতে ইটভাঙ্গার শব্দ। যেন কেউ ক্রমাগত হাতুড়ি পিটিয়ে ইট ভেঙে চলেছে!
আয়শা খাতুন তখন ঠাহর পায় না সে তন্দ্রায় না জাগরণে না ঘুমঘোরে। তার গতর কুলকুল ঘামে ভিজে একেবারে জবজবে হয়ে ওঠে।
মীর সাহেবের সাথে তার তেমন উনিশ-বিশ ছিল না। শুধু ধানী জমিগুলো আর ভিটেবাড়ির দলিল-দস্তখত ছিল আয়শা খাতুনের নামে।
এই রকম ঘন ঘন বিয়োনীর পর এই সবের দাবী তো আর জোর-জারের ভেতর পড়ে না। যদিও মীর সাহেবের অপরাপর স্ত্রীদের সন্তান-সন্তদিরা ভাগীদার ছিল। কিন্তু তারা কেউ তো নিদান সারে নাই!
আয়শা খাতুন মীর হাকিমুল হকের নিদানের সময় অল্প-বিস্তর তদারকী করেছে। এই যেমন ফল-পাকুড় গুছাবার সময় এক-আধটা তাকে দেয়া। মাস কাবারি গরম জলে গোসল দিয়ে প্রায় আধমরা বুইড়াকে সাফ-সুতরো করে দেয়া। বা মতি ভালো থাকলে বুইডার বিনবিনানো কথাগুলো শোনা।
আয়শা খাতুন ঘটনা চক্রে যেন তবদা মেরে যায়!
মরার আগে যে বুইড়া রা করতে পারে নাই তার হিসহিসানো কথাগুলোও কিনা মাঝ রাত্তিরে মধুর স্বরে বেজে ওঠে!
এ কোন আপদ রে বাপ!
মরে যেয়ে হাড়ও জুড়োতে দিচ্ছে না দেখি!
এই সুনসান রাত, কাকপক্ষী জেগে নেই-মীর সাহেব কথা শুরু করলো কি ফুলভরা কামেনি গাছের উপর দিয়ে বাতাস নেচে গেল! আর অমনি ঝুরঝার ঝরে পড়লো ফুলদল। তেমনি প্রণয় নিঃশব্দ কোমল কথামালা!
এদিকে বড়শির জিয়ালায় কোনো বড় মাছ আটকা পড়লে যে আছাড়ি-বিছাড়ি এমন দশা কিনা আয়শা খাতুনের!
মীরের কোমল প্রায় অস্পষ্ট কণ্ঠ-
আশু, আর পারতেছি না!
আয়শা খাতুন ঝাঁজিয়ে ওঠে-
কি পারতেছেন না?
এইরম কষ্টে কি বহুকাল শুইয়া থাকা যায়?
কি সব বলতেছেন? মরা মাইনষের আবার বসা-শোয়া কি?
হুম!
হুম কি? কি বলতেছেন?
বলতেছি তো অনেক দিন। তুমি তো শুনতেছ না?
মীর হাকিমুল হক কি বলে আর আয়শা খাতুন কিইবা শোনে? নাকি শোনে না?
আদতে আয়শা খাতুন মীর সাহেবের সব কথাই তো শোনে।
ইনানো কথা। বিনবিনানো কথা। মিনমিনানো কথা।
ফের কি যেন উলট পালট হয়! জলের ভেতর খলবল করে গজাড় মাছ উল্টায়। আর আয়শা খাতুন ভয়ে কেঁপে ওঠে।
এইডা কিমুনতর কিসিম শুরু হইল রে বাবা? বুইড়ার চামড়া-মাংস মাটিতে মিলায়া গেছে-হাড্ডিও যায়-যাবে! আর সে কিনা আয়শা খাতুনের যন্ত্রণা করে এমন!
ফের মীর হাকিমুল হক অনুনয় করে-
আশু কষ্ট হইতেছে খুব!
কিরূপ কষ্ট?
আয়শা খাতুন প্রশ্ন শেষ করতে পারে না। হাড়-গোড় মটমটিয়ে ওঠার শব্দ হয়।
বদুরে খেয়ে ফেলা লিচুর খোসার মতো ছড়ানো-ছিটানো অন্ধকার তখন জেঁকে বসে! আর আয়শা খাতুনের বুকের বাম পার্শ্বে ফচকার শলা এসে বিদ্ধ হয়। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে।
হররোজ এমন ভুতুড়ে আলামত! কাহাতক সহ্য করা যায়? বয়স তো আয়শা খাতুনকে মাফ করে নাই। আগের সেই তাগাদ কি আর তার আছে? আলো-ছায়ার রহস্যও কি আছে? কিছুই তো আগের মতো নাই।
বরং মীর সাহেবের প্রয়াণ তাকে একাকী করেছে। কিন্তু ফি রাতেই সে ফিরে আসে। কেন আসে কে জানে!
জলের ভেতর তখন অজস্র গজার মাছ দাপাদাপি করে!
বড় ছেলে মীর কাসিমুল হক মন দিয়ে আয়শা খাতুনের বৃত্তান্ত শোনে। শুনে-টুনে আবনামা-খাবনামা জানা বুজুর্গের সন্ধান এনে দেয়। এবং আয়শা খাতুন বুজুর্গ হুজুরের দ্বারস্থ হয়।
সকল কাহিনী শোনার পর পীরজাদা নবাবআলি কোরাইশি চুপ মেরে থাকেন। অতঃপর পরামর্শ দেন-কব্বর খুইল্যা দিতে হবে।
শুনে আয়শা খাতুন ভয়ে কেঁপে ওঠে!
কব্বর খুইল্যা দেয় কেমনে বাবা?
কব্বর বান্ধাইয়া থুইছেন না?
হ বাবা। ইট-বালু-সিমেন্ট দিয়া ঘেইরা দিছি।
হ, বুঝলাম।
কি করতে হইবে বাবা?
সেইটা খুইল্যা দিতে হইব।
আয়শা খাতুনের মনে হয় সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে।
বাঁধানো কবর থেকেই কি রাতে উঠে আসে মীর হাকিমুল হক। আর কবর খুলে দিলে কি উপায় হবে?
শোনেন, তিনি কি লাশভারি মানুষ ছিলেন?
জ্বি বাবা।
তার কব্বরটা ছোট হইয়া গেছে। তার জায়গা হয় না ওই খানে। কব্বরের মাপ নেওনের সময় ঠিকমতো নেওয়া হয় নাই। ফলে তাকে কুণ্ডলী পাকাইয়া সেইখানে থাকতে হইতেছে। তার আজাব হইতেছে। যান গিয়া কব্বরটা খুইল্যা দেন গিয়া।
আয়শা খাতুন পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলিয়ে নেয়। আমতা আমতা করে ফের জানতে চায়-
কব্বর কেমনে খুলতে হয় বাবা?
কব্বরের শিথান আর পৈথানের দিকের ইট-সুরকি তুইল্যা ফেলান গিয়া।
আস্তাকফিরুল্লা রাব্বি মিন কুল্লি...
নিদ্রাকাল
ঝুমকো জবা গাছটা প্রায় নুয়ে পড়েছে মাটির উপর। ফুলের ভারে ডালগুলো যেন ভেঙে পড়তে চাইছে!
সজনে গাছটা এই বর্ষায় সবুজ পেল। বিস্তর কচি সজনে সরু সাপের মতো দোল খাচ্ছে মৃদু-মন্দ হাওয়ায়। জবার পাতা জোড়া দেওয়া টুনটুনি পাখির বাসায় দুটো ছানা ফুটেছে। খিদে পেলেও তারা তেমন আওয়াজ করে না। আসলে ঘুমন্তদের ব্যাঘাত ঘটাতে চায় না তারা।
মীর হাকিমুল হকের কবরটা দূর্বা ঘাসে ছেয়ে গ্যাছে অনেকদিন। কিছু ঘাস মাথা বাড়িয়ে ঘের ডিঙাতে চেয়েও যেন থমকে গেছে, যদি ঘাসের ডগা গড়িয়ে যাওয়ার শব্দে কেউ জেগে ওঠে!
দূর্বাঘাসের পরতে পরতে লাল পিঁপড়র বাসা। বাসা থেকে তারা বেরোয় না। এত বিশাল গোরখানায় পিঁপড়াদের খাওয়া-দাওয়ার অভাব নাই।
গোরখানার উপর কাঁচামিঠে আমগাছে ছাতার মতো ছায়া। পাশে একটা ডুমুর। ডুমুর-ফল লালচে-হলদে হয়ে পেকে আছে।
আর একটা হরিতকী সদ্য অঙ্কুর মেলেছে! সোমত্ত হতে তার ঢের বাকি।
কাঁচামিঠের ডালে পাখির ঝাঁক বসেই উড়ে যায়।
গলা নামিয়ে ডাকে।
হিস্সস! হিস্সস!
টিররিরির টির, টিররিরির টির।
হাকিমুল হকের গোর থেকে একটা চালকুমডোর লতা কাঁচামিঠে আমগাছে যেয়ে পড়েছিল। তাতে সাদা-সাদা ফুল ধরে আছে। দুই একটা কচি জালি পাছায় ফুল ঝুলিয়ে হেসে উঠছে।
এইসবের ভেতর একদিন শাবল-গাঁইত-কাঁচি নিয়ে দুইজন কামলা এলো। খুটর-খাটুর শব্দে কবরস্থানের নির্জনতা সরে যেতে লাগল। আর মীর হাকিমুল হকের পৈথান আর শিথান থেকে ইট-বালির আস্তর খসে যেতে লাগল। ফুল ধরা চালকুমড়ার গাছটা এই ফাঁকে কাটা পড়লো।
সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে আয়শা খাতুন কবর খুলে ফেলা দেখছিল।
একজন কামলার হাতে সদ্য কেটে ফেলা কুমড়োলতা। আয়শা খাতুনের ফের বিভ্রাম পড়লো।
ঝুলন্ত লতাটি সাপ না গাছ? গাছ না সাপ?
এই বিভ্রান্তির ভেতর আয়শা খাতুন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো...
চিত্রঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়