চারদিকে বড় হইচই। বিষয় ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বিল। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের মেডিকেল শিক্ষার ব্যাপারটা দেখছিলেন এমসিআই, অর্থাৎ মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। এমসিআই নিয়ে অভিযোগ ছিল বিস্তর - বিশেষত, তাঁদের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার হালটিও ঠিক পাঁচজনকে নেমন্তন্ন করে জানানোর মত নয়।
কিন্তু, দেশের মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা থেকে উৎপাদিত চিকিৎসকদের জ্ঞানগম্যি বা দক্ষতার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন সেরকম ওঠেনি। অন্তত, দেশবিদেশের বড় বড় হাসপাতাল বা চিকিৎসাশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে এদেশ থেকে ডাক্তারবাবুরা কাজ করে এসেছেন - করছেনও। তাঁদেরকে স্বল্পশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বা অদক্ষ মনে করা হয়েছে বলে শুনিনি। হ্যাঁ, দেশের বেশীর ভাগ মানুষের যেসব সমস্যা - যেমন অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, সাপে কাটা, পাতলা পায়খানা ইত্যকার রোগব্যধি - সেসবের মাঠে নেমে চিকিৎসার জন্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ফসলেরা কতখানি প্রস্তুত, এমন বেয়াড়া প্রশ্ন কিছু কিছু সময় উঠে এসেছে - কিন্তু, এইধরনের প্রশ্নে একেবারে সরকারবাহাদুর নড়েচড়ে বসবেন, এমন সম্ভাবনা কম।
যাইহোক, এইবার একেবারে বড়সড় রদবদল। এমসিআই বাতিল করে তার জায়গায় ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন, সংক্ষেপে এনএমসি। দেশজুড়ে চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এদেশে চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন আইএমএ প্রতিবাদে দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালন করলেন। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র ডাক্তারদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন চলছিল - সরকারবাহাদুরের রীতিমতো হুমকির সামনে কর্মবিরতি প্রত্যাহৃত হয়। তা এত শোরগোলের কারণটা কী? ডাক্তারবাবুরা আপনার স্বার্থ রক্ষা করতে একেবারে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, এমনটা ভাবতে আপনার কিঞ্চিৎ অস্বস্তি হয়, জানি। তাহলে? তবে কি এই বিল ডাক্তারদের পেশাগত স্বার্থে প্রবল অসুবিধের সৃষ্টি করবে? নিজেদের লেজে পা পড়াতেই কি ডাক্তারবাবুরা এমন ফোঁস করে উঠেছেন? আর আপনার? আপনার পক্ষে সমস্যা হতে পারে, এমন কিছু নেই তো এই বিলে?
প্রথমে যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের প্রতিবাদের কারণগুলো একটু শুনে নিই। চিকিৎসকদের প্রথম আপত্তি, ব্রীজ কোর্স নিয়ে। দেশে নাকি চিকিৎসকের আকাল। অতএব, তথাকথিত মডার্ন মেডিসিন বাদ দিয়ে চিকিৎসাবিদ্যার বাকি সব ধারা, যেমন আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি ইত্যাদি, যাঁদেরকে একসাথে আয়ুশ বলা হয়ে থাকে, তাঁদের অল্পকিছুদিনের জন্যে ট্রেনিং দিয়ে মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসকে পরিণত করা হবে। যদিও বিলে সরাসরিভাবে এই ব্রীজ কোর্স চালুর কথা বলা নেই, কিন্তু পথটি খোলা রাখা আছে নিশ্চিত।
পাশাপাশি, তিন লক্ষের বেশী বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর কথা ভাবা হয়েছে, যাঁরা কিনা মুখ্যত প্রাথমিক ও নিবারণী চিকিৎসাটুকু দেবেন। অন্যান্য চিকিৎসা যদি তাঁদের করতে হয়, সেক্ষেত্রে তাঁদের থাকতে হবে মডার্ন মেডিসিনের পাস-করা ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে। প্রস্তাবটি আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ শুনতে লাগলেও, কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়।
যেমন, দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যের হাল খারাপ। বিভিন্ন স্বাস্থ্যসূচকে আশেপাশের বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমরা পিছিয়েই চলেছি। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। যেটুকু বরাদ্দ হচ্ছে, তার সিংহভাগই যাচ্ছে হাই-টেক হেলথকেয়ারের পেছনে। দেশের হেলথকেয়ার পুরোপুরিই ইলনেস-কেয়ার। অর্থাৎ মুখে স্বাস্থ্য শব্দটি বলা হলেও, প্রায় পুরো ফোকাসটাই চিকিৎসার পেছনে। মানুষ ঠিক কোনপথে সুস্থ ও নীরোগ থাকতে পারেন, সেই নিয়ে চিন্তা না করে খরচ ও মনোযোগের বেশীর ভাগটাই বরাদ্দ হয় অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার পেছনে। এর ফলে মানুষ অসুস্থ হন বেশী, খরচ হয় আকাশছোঁয়া - এবং বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ এমনিতেই কম, খুবই কম - বরাদ্দ দেশের জিডিপির এক শতাংশের কিছু বেশী, উন্নত দেশে যার পরিমাণ চার কি পাঁচ শতাংশ - এই কম বরাদ্দে এত বিপুল অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব।
সেইখানে, টিমটিম করে চলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর্মীর হাতে সঁপে দিলে আগামীদিনে ভালো কিছুর আশা কম। হ্যাঁ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু, এই এনএমসি বিলের কিছুদিন আগেকার নয়া জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে যেভাবে ঢালাও বেসরকারিকরণের কথা বলা হয়েছে, তাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকে লাটে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন আশঙ্কার কারণ যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, দেশে যদি ডাক্তারের আকালই হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের তত্ত্বাবধানের জন্যে যথেষ্ট চিকিৎসক আসবে কোত্থেকে। এই স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরিষেবা বাদ দিয়ে যদি অন্যান্য চিকিৎসা শুরু করেন, নজরদারি করবেন কে?
স্বাস্থ্যখাতে এই ছিঁটেফোটা বরাদ্দের থেকে নজর ঘোরাতে, বারবার ডাক্তারের আকালের কথাই সরকার তুলে ধরেন। বেশ কথা। একটু তাহলে জেনেই নেওয়া যাক, দেশে ডাক্তারের আকালটা ঠিক কতোখানি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেন, সুষ্ঠু স্বাস্থ্যপরিষেবার জন্যে, প্রতি হাজার জনসংখ্যা পিছু কমপক্ষে একজন ডাক্তার থাকা জরুরী। বছরদুয়েক আগে, দুহাজার সতেরো সালে, লোকসভাকে সরকার তথ্য দিয়েছিলেন, দেশে রেজিস্টার্ড এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছেন প্রায় সোয়া দশ লক্ষ। জনসংখ্যা কমবেশী একশ তিরিশ কোটি। হাজারে এক হিসেব করতে হলে, প্রয়োজন কমসেকম তেরো লক্ষ। অর্থাৎ, প্রায় তিন লক্ষের কমতি। এঁদের মধ্যে অনেকে আবার ডাক্তারি করেন না, হয়ত অন্য পেশায় যুক্ত আছেন, অনেকে বিদেশে রয়ে গিয়েছেন - কাজেই এই ঘাটতির পরিমাণ আরো বেশ কিছুটা বেশী। সুতরাং, প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার রয়েছেন কম। কিন্তু, সরকারবাহাদুরের এই তথ্য যদি মেনে নিই, তাহলে কি আয়ুশ ডাক্তারদের হিসেবের মধ্যেই আনবো না? এঁরা পড়ছেন সরকারি কলেজে, এঁরা নিযুক্ত হচ্ছেন সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় - কিন্তু, সরকার যখন ডাক্তারের সংখ্যা গুণবেন, আয়ুশ চিকিৎসকরা সেইখানে হিসেবে আসবেন না? এ কেমন দ্বিচারিতা!!
প্রশ্ন এইটাই, সরকারবাহাদুর স্বয়ং যখন আয়ুশ ব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখছেন না, এবং যেনতেনপ্রকারেণ এঁদের দিয়ে মডার্ন মেডিসিন প্র্যাক্টিস করাতে চাইছেন - হ্যাঁ, বিলের মধ্যে তেমন প্রস্তাবের বীজ আলবাত রয়েছে - তাহলে সরকার সরাসরি এইসব চিকিৎসাপদ্ধতি, বিশেষত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি তুলে দিয়ে সেই অর্থ মডার্ন মেডিসিনের কলেজ তৈরীর পিছনে ঢালছেন না কেন? ব্রীজ কোর্সের প্রস্তাব বা সরকারি খতিয়ানে আয়ুশ চিকিৎসকদের অনুল্লেখ বা দায়সারা উল্লেখ যে এই চিকিৎসাপদ্ধতির প্রতি নিদারুণ অপমান, তা তো বলে দিতে হবে না। বিল অনুসারে মডার্ন মেডিসিনের উচ্চতর নিয়ামক কর্তৃপক্ষ নিয়মিত কথোপকথন চালু রাখবেন বাকি সব ধারার চিকিৎসাপদ্ধতির নিয়ামক কর্তৃপক্ষের সাথে। সেইখানে কিন্তু ঘুরপথে ব্রীজ কোর্স চালুর সম্ভাবনা রয়েছে - কেননা, এই বিল অনুসারে মেডিকেল কমিশনের দুচারজন বাদ দিলে বেশীর ভাগ সদস্যই হবেন সরকার মনোনীত, এবং অনুমান করাই যায়, সরকার যেমন চাইছেন, তাঁরা তদনুযায়ী আচরণই করবেন।
বিলের মধ্যেই বলা হয়েছে, মেডিকেল প্লুরালিজমের কথা, অর্থাৎ সরকারের ভাবনা তেমনই। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই শত-ফুল-বিকশিত-হোক কতোখানি কাজের কথা, সেই নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। দেশের চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে বিভিন্ন চিকিৎসাদর্শনের সমন্বয়ের সপক্ষে কিছু যুক্তি নিশ্চয়ই রয়েছে - কিন্তু একই ব্যক্তিচিকিৎসক এমন বহুমুখিনতার সাধনা করবেন, এমন প্রত্যাশাটা বাড়াবাড়ি নয় কি?
অনেক বছর আগে, সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী বলেছিলেন, বাড়ি বলতে আমরা যদি শুধু ইঁট-সিমেন্ট-কংক্রিটের বাড়ি বুঝি, তাহলে আমরা কোনোদিনই দেশের সব মানুষের মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা করে উঠতে পারব না। মাটির বাড়ি ইত্যকার প্রথাগত আবাসকেও আমাদের হিসেবের মধ্যে আনতে হবে। সেরকমই, চিকিৎসা বলতে শুধুই যদি পশ্চিমী চিকিৎসাই বুঝি, তাহলে দেশের সব নাগরিকের কাছে চিকিৎসাপরিষেবা পৌঁছানোর কাজটি দুরূহ হয়ে যাবে।
মোটামুটি এই ধরণের ভাবনাক্রম অনুসরণ করেই দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় ঠাঁই পেয়েছিলেন প্রথাগত চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো। এঁদের চিকিৎসার পাঠ, এমনকি চিকিৎসার দর্শন, সবকিছুই মডার্ন মেডিসিন, চালু ভাষায় যাকে অনেকে অ্যালোপ্যাথি বলে থাকেন, তার থেকে অনেকখানিই আলাদা। সরকারবাহাদুর এঁদেরকে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ঠাঁই দিলেও এইসব চিকিৎসাপদ্ধতি বা গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগ করেন নি। কাজেই, এইসব চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকগুলোই বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।
এখন, এঁদেরকে কয়েক মাসের ট্রেনিং দিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিকিৎসাভাবনায় অভ্যস্ত করে ফেলার ভাবনাটি হাস্যকর ও বিপজ্জনক।
বিল নিয়ে চিকিৎসকদের দ্বিতীয় বড় আপত্তির জায়গাটা এই মেডিকেল কমিশনের সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে। সাবেক এমসিআই নিয়ে হাজার অভিযোগের মধ্যেও একটা স্বস্তি ছিল - সেফটি ভালভ-ও বলতে পারেন - যে, তার প্রতিনিধিরা নির্বাচিত, চিকিৎসকদের ভোটে নির্বাচিত। ঠিক যেমন, দেশের হাল নিয়ে যত আক্ষেপই করি না কেন, গণতন্ত্রের শক্তির উপর আমাদের আস্থা সদা অটুট। আমরা আশা রাখি, বেশী বাড়াবাড়ি করলে সেই নেতাকে আমরা ভোটে হারিয়ে ক্ষমতাহীন করে ফেলতে পারব - না, শেষমেশ পেরে উঠি না হয়ত - কিন্তু, এই আশাটা একটা বড় জোরের জায়গা, এবং নেতারাও কোনো এক জায়গায় সচেতন থাকেন, যে, পরের দফায় তো ভোটে জিতে আসতে হবে। এনএমসি বিল সেই আস্থার জায়গাটাই ভেঙে দিয়েছে। প্রস্তাবিত কমিশনের বেশীর ভাগ সদস্যই হবেন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক মনোনীত। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্ত্বেও সেই কমিশনে নিয়মিত ভিত্তিতে অধিকাংশ রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব থাকার অবকাশ নেই। রাজ্যের প্রতিনিধিরা যেখানে থাকবেন, তাঁদের ভূমিকা মূলত পরামর্শদাতা বা উপদেষ্টার - সেই পরামর্শ অনুসারে চলতেই হবে, কমিশনের এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
ছোট করে বললে, মেডিকেল কাউন্সিলের জায়গায় আসবে মেডিকেল কমিশন। সেই কমিশনকে পরামর্শ দেবেন মেডিকেল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল। রাজ্যের কথা বলার জায়গা মূলত এই অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল। অবশ্য হ্যাঁ, সব রাজ্য মিলিয়ে জনাকয়েক সৌভাগ্যবান প্রতিনিধি থাকবেন কমিশনে, আংশিক সময়ের সদস্য হিসেবে, কিন্তু, সেখানে তাঁদের গুরুত্ব নামমাত্র। অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের কাজ মেডিকেল কমিশনকে পরামর্শ দেওয়া, পরামর্শ শুনতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা কিছু নেই। কিন্তু কমিশনের সব সদস্যই আবার অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের সদস্য হবেন। এমনকি, মেডিকেল কমিশনের চেয়ারপার্সন-ই হবেন অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন। অর্থাৎ, পরামর্শদাতা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে থাকবেন তাঁরা যাদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, এমনকি পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারপার্সনই পরামর্শগ্রহীতা কমিটির চেয়ারপার্সন। মানে, কিছু মানুষ নিজেরাই নিজেদের পরামর্শ দেবেন। ব্যবস্থাটি কিন্তু বেশ, তাই না !
সুষ্ঠু পরিচালনার জন্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ যেখানে শ্রেয় বলে সর্বত্র মেনে নেওয়া হচ্ছে, সেইখানে এই বিল ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের পক্ষে। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভাব-অভিযোগের চূড়ান্ত নিয়ামক এই কমিশন, এবং রাজ্যের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ কমিশনের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য। ইন ফ্যাক্ট, এই বিল অনুসারে স্বাস্থ্যশিক্ষা তো বটেই, স্বাস্থ্যব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রেও ক্ষমতাটা মুখ্যত কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে চলে যাচ্ছে - রাজ্য সরকারের ভূমিকা দাঁড়াচ্ছে সহযোগীর।
চিকিৎসকদের তৃতীয় বড় আপত্তির জায়গা, চিকিৎসাশিক্ষার বেসরকারিকরণের ইঙ্গিতটি নিয়ে। ডাঃ দেবী শেঠি প্রমুখ বহুদিন ধরেই বলে আসছেন যে, আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশার অন্যতম কারণ নাকি আমাদের মেডিকেল শিক্ষা। এবং, উন্নতির জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উৎসাহদান সরকারের অবশ্যপালনীয় দায়। সরকারের কানে ইদানিং বেসরকারি কণ্ঠস্বরটি মধুর শোনায়। তাই, তথাকথিত বিশ্বমানের চিকিৎসা শিক্ষার হাত ধরে আপনাআপনিই আমাদের স্বাস্থ্য পৌঁছে যাবে বিশ্বমানে, এই তাঁদের আশা। কিছু অর্বাচীন যদি বলতে থাকেন, প্রাথমিক স্বা্স্থ্যে, জনস্বাস্থ্যে কিংবা স্বাস্থ্যবিধানে মনোযোগী হতে, বিধিনিষেধের বিষয়ে একটু নজর দিতে, তাতে তাঁদের ভারী বয়েই গেলো। দেশ এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এগোচ্ছে, কাঁচারাস্তার কথা ভাবাও পাপ।
তা সেই চক্ষুলজ্জা কাটিয়ে সরকারবাহাদুর এইবার খুল্লমখুল্লা পথে নেমেছেন। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ খোলার ব্যাপারে ঢালাও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে - মাত্র একবার খতিয়ে দেখার পরেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাড়পত্র মিলবে। পরিকাঠামো ঠিকঠাক আছে কিনা, বারবার খুঁটিয়ে যাচাই করা হবে না। কলেজ চালু হওয়ার বছরকয়েকের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ সিট বাড়াতে পারবেন, খুলতে পারবেন নতুন পোস্টগ্র্যাজুয়েট কোর্স - নতুন করে পরিদর্শন বা ছাড়পত্র লাগবে না। আসনসংখ্যার পঞ্চাশ শতাংশের ফীজ বেঁধে দেবেন কমিশন, বাকি পঞ্চাশ শতাংশের ক্ষেত্রে মালিক-কর্তৃপক্ষ যথেচ্ছ অর্থমূল্য ধার্য করতে পারেন।
পাশাপাশি মাথায় রাখুন, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বেসরকারী কলেজ থেকে কৃতকার্য হওয়া ছাত্রের সংখ্যা ছিল লক্ষ্যণীয়ভাবে কম - কারণ অনুমানযোগ্য। ডাক্তারি পাস করার কমন এক্সিট টেস্ট-এর ফলের সাথে পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে ঢোকাকে জুড়ে দিয়ে সেই বাধা অতিক্রম করার প্রয়াস কেন?
দেখুন, নতুন এই যে এনএমসি বিল, তার প্রস্তাবগুলিকে যদি আলাদা আলাদা করে, একটি একটি করে দেখেন, খুব একটা অযৌক্তিক বলে, হয়ত, বোধ হবে না। প্রাথমিক স্বাস্থ্যে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না, তাই প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা। তাই আরো বেশী ডাক্তার তৈরী করে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খোঁজা। বেশী ডাক্তার তৈরী করতে বেসরকারী উদ্যোগের দ্বারস্থ হওয়া, "লাইসেন্সরাজ" এড়িয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ। কিন্তু, একটি একটি করে গাছের দিকে চেয়ে দেখতে থাকলে এই অরণ্যের ভয়াবহতার রূপটি আপনার চোখের আড়ালেই রয়ে যাবে।
দেশে ডাক্তারের অভাব কতখানি, সেইটা তর্কযোগ্য হলেও, গ্রামাঞ্চলে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডাক্তারের অভাব নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। কিন্তু, সেইসব অঞ্চলে স্বাস্থ্যপরিকাঠামোর হাল? প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে ক্ষতস্থানের মুখটা ব্যান্ডেজ দিয়ে লুকানো হয়ত যাবে - তারপর? সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত ডাক্তারেরা দুর্গম জায়গায় পোস্টেড হলেও যেতে আপত্তি করেন না - কিন্তু, সরকার গ্রামের জন্যে ডাক্তার পান না কেন? শুধু ডাক্তারদের উপর দোষ চাপালে হবে?
গ্রামাঞ্চলে ডাক্তার পাওয়া যায় না। সমস্যা ডাক্তারের সংখ্যা, নাকি শহরাঞ্চলের মধ্যেই প্রায় সব চিকিৎসকের রয়ে যাওয়া? সমাধানের পথটা ঠিক কী? অল্প কিছুদিনের ট্রেনিং-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হাতুড়ে তৈরী করে গ্রামের মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা? নাকি, ডাক্তার পাঠানোর ব্যবস্থা করা? লক্ষ লক্ষ বা কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা ডাক্তারেরা প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যপরিষেবা জোগাবেন?
ডাক্তাররাই বা গ্রাম-মফঃস্বলে যেতে চাইছেন না কেন? সেই রহস্য খুঁড়ে দেখা হয়েছে কি? অন্তত চেষ্টা করা হয়েছে? ডাক্তারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থা কী? দেশে ডাক্তারের অভাবের থেকেও অনেক বেশী করে নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব। অথচ, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীরা সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে আগ্রহী হলেও, সরকার বিগত এক দশকে ঠিক কেমন সংখ্যায় তাঁদের নিয়োগ করছেন? খোঁজ নিয়ে দেখেছেন কি? সরকারবাহাদুর প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান বা নার্সদের চাকরিতে নিয়োগ করছেন না - কিন্তু, স্বাস্থ্যকর্মীদের নতুন করে ট্রেনিং দিয়ে ডাক্তারি করিয়ে গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা মজবুত করবেন?
দেশের নাগরিকের স্বাস্থ্যের দায় কে নেবে? সরকার, নাকি কর্পোরেট মুনাফাভোগীর দল? চিকিৎসা যদি পণ্যই হয়, মনে রাখুন, তা এক অত্যাবশ্যক পণ্য - আপনার ক্রয়ক্ষমতা অনুসারে বেছে নেওয়া রেস্টুরেন্টের খাবার বা হোটেলের স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে তুলনীয় বিলাসিতার সামগ্রী নয়। এই মুনাফার চক্করে স্বাস্থ্যচিকিৎসা সাধারণ মানুষ তো বটেই, চলে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের হাতের নাগালের বাইরে। মানুষের মধ্যে বেড়েই চলেছে ক্ষোভ - দিকে দিকে চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন, নিগৃহীত হচ্ছেন। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ভেবেছেন, চিকিৎসকরা যে প্রতিবাদ করছেন, তা তাঁদের নিতান্ত পেশাগত স্বার্থের দিকে তাকিয়েই। এখন আপনার ভাবার সময় এসেছে, চিকিৎসকদের স্বার্থের থেকে আপনার স্বার্থটি কি খুব পৃথক?
আপাতনিরীহ কিছু প্রস্তাবনার মাধ্যমেই খুলেছিল শিক্ষার বেসরকারিকরণের পথ। তার সম্পূর্ণ সামাজিক অভিঘাত এখনও পুরোপুরি দগদগে হয়ে প্রকাশিত না হলেও অনেকখানিই অনুভব করা যায় - আরো অনুভূত হবে আগামী প্রজন্মে। পাশাপাশি, স্পষ্টতই দেখা যায় সরকারী স্কুলের বেহাল দশা। অনুমান করা কঠিন নয়, স্বাস্থ্যশিক্ষার বেসরকারিকরণের পথে হাঁটার অভিঘাত হবে আরো অনেক বেশী গভীর।
কিন্তু, দিনের শেষে প্রশ্ন এটাই, এসব নিয়ে আপনার ভাবার প্রয়োজন আছে কি? আপনি মোটামুটি স্বচ্ছল মানুষ, ছোট সংসার, দায়দায়িত্ব কম। মাসে এক-দুবার সপরিবারে শপিং মলে যান, মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখেন, ফুড-কোর্টে খাবার খান। আপনার ছেলে পড়ে প্রাইভেট ইস্কুলে, ইংলিশ মিডিয়াম। দেশে গরীব-টরীব কিছু আছে বলে আপনারই বিশ্বাস হয় না - আর আপনার ছেলে তো সেসব চোখেই দেখে নি। এক পাঁচিলের এপাশে আপনি রয়েছেন - যার ওপাশে অনেক অনেএক মানুষ, হ্যাঁ, তাঁরাই দেশের বেশীর ভাগ - কিন্তু, পাঁচিল পেরিয়ে তাঁদের দিকে আপনার চোখ যায় না।
চিকিৎসার জন্যে আপনি যেসব পাঁচতারা হাসপাতালে যান, সেইখানে, এমনিতেই, "ওদের" জন্যে নো-এন্ট্রি। কাজেই, এই বিল নিয়ে আপনার ভাববার মানে হয় না। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে যে ফিটফাট তরুণ আপনার পাশে দাঁড়ালেন - তাঁকে দেখলে ডাক্তার নাকি কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ ঠিক কী মনে হয়, বলা কঠিন - কিন্তু, তাঁর দিকে চেয়ে দেখলে, বিশেষ করে তাঁর বাবার ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্সের কথা ভেবে দেখলে আপনার রীতিমতো সমীহ হয়, হতে বাধ্য। এই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিমণ্ডল থেকে গ্রামের সাপে-কাটা রোগীর হেলথ-সেন্টার থেকে ব্লক হাসপাতাল, সেখান থেকে সাবডিভিশনাল হাসপাতাল, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চিকিৎসাহীন ঘুরতে ঘুরতে মরে যাওয়া মানুষগুলো অনেক অনেএএক দূরে।
না, এই বিল, বা এই বিলের পথ বেয়ে উঠে আসা প্রশিক্ষিত হাতুড়ে ডাক্তার, বা তাঁদের হাতে "চিকিৎসা-পরিষেবা" পেতে বাধ্য হবেন যে রোগীদের দল - তাঁদের কারো সাথেই আপনার হুট করে দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। বললামই তো, আপনি রয়েছেন পাঁচিলের এপাশে। ওপাশের মানুষগুলোর সাথে যাতে হঠাৎ করে দেখাসাক্ষাৎ হয়ে না যায়, সরকারবাহাদুর সে বিষয়ে সদাই তৎপর। চলছে পাঁচিলটি উঁচু করার কাজ, পাকাপোক্ত করার কাজ। এই ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বিল সেই মহান প্রকল্পের একটি অনিবার্য অঙ্গ মাত্র। আগেই বলেছি, বিচ্ছিন্নভাবে এই বিল পড়ে দেখলে স্বরূপটি উদঘাটিত হওয়া মুশকিল - সরকারের বাকি প্রকল্প, উদার অর্থনীতির বাকি সব এজেন্ডা, নতুন জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি এই সবকিছুর বৃহত্তর প্রেক্ষিতে বিল-টিকে দেখা জরুরী।
নব্যউদারবাদী নতুন জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির প্রেক্ষিত যেমন, ঠিক তেমনই কিছুদিন আগেই ঘটা মেডিকেল কারিকুলামের বদল, থুড়ি আধুনিকীকরণের কথাটুকুও মাথায় রাখা জরুরী এই বিলের মুলসুরটি উপলব্ধি করতে হলে। এদেশে চিকিৎসাশিক্ষার কারিকুলাম ঐতিহাসিকভাবেই এলিটিস্ট, অর্থাৎ উচ্চবর্গের মানুষজনের চিকিৎসার প্রয়োজন মেটানোর উপযুক্ত। এরই মাঝে কিছু বেয়াড়া সমাজমনস্ক ভাবনার ঠেলায় কারিকুলামটি হোলিস্টিক চিকিৎসাভাবনার অনুসারী হতে পেরেছিল - না, শুধুই কিছুটা, কোনোভাবেই পুরোপুরি নয় - কেননা, এই শিক্ষাব্যবস্থায়, এমনকি সমাজের প্রান্তিক অবস্থান থেকে এসে, সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেও একজন ছাত্র ডাক্তার হয়ে কর্পোরেট হাসপাতালে উচ্চবিত্তের স্বাস্থ্যসমস্যা শুনে মহার্ঘ্য নিদান জোগাতে যতখানি স্বচ্ছন্দ, ততখানি নন গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসমস্যার সমাধানে। এই প্রবণতা আরো অনেক বেশী প্রকট হত পোস্টগ্র্যাজুয়েট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বা এমডি/এমএস করার সময়। তবু যেটুকু পিছুটান ছিল, কাটানোর শুভ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিছুদিন আগেই, মেডিকেল শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করার নামে সিলেবাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বদল এনে। কাজেই, ভবিষ্যতের আধুনিক এবং "অ্যাট-পার-উইথ-ওয়ার্ল্ড" কারিকুলাম, প্রায় নির্লজ্জভাবেই, কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন যাঁরা, সেইসব মানুষের স্বাস্থ্যসমস্যার সমাধান করার কথা ভেবে এবং হাইটেক পরিকাঠামোয় পরিষেবা জোগানোর লক্ষ্যে সৃষ্ট।
তবুও, যেমন বললাম, আপনার অত না ভাবলেও চলবে। ইন ফ্যাক্ট, অত ভাবতে আপনার বয়েই গেছে। চিকিৎসকদের আন্দোলন-প্রতিবাদ ওসব চিকিৎসকদেরই করতে দিন। চিকিৎসকরা এমনিতেও সংখ্যায় কম, ভোটের হিসেবেই আসেন না - কাজেই সরকারেরও বয়ে গেছে ডাক্তারদের কথায় কান দিতে। আস্তে আস্তে সবই নিশ্চিত ধামাচাপা পড়ে যাবে।
কিন্তু, দেশে নতুন চাকরিবাকরি নেই। গাড়ির কারখানা থেকে কাপড়কল, এমনকি পাঁচ টাকা দামের বিস্কুটের প্যাকেটের বিক্রি - ধুঁকছে সবই - চলছে ব্যাপক ছাঁটাই। বিমান কোম্পানি থেকে টেলিফোন পরিষেবা - কাজ হারাচ্ছেন মানুষ। অনাদায়ী দেনার দায়ে ধুঁকছে ব্যাঙ্ক - আপনার আমানত আর কতোদিন সুরক্ষিত কেউ জানে না। এদিকে চাল-ডাল-শাকসব্জি তো বটেই, এমনকি আদা-কাঁচালঙ্কার দামও আকাশ ছুঁয়েছে। চাষীরা অবশ্য আত্মহত্যা করেই চলেছেন - সেই খবর গুরুত্ব হারাতে হারাতে সংবাদপত্রের সাতের পাতার নীচে বাঁদিকে ছোট করে ছাপা হয়, সেও মাঝেমধ্যে।
এসবের মাঝে, পাঁচিলটা যথেষ্ট উঁচু আর মজবুত হতে পারছে তো? আপনার পাঁচিলের এইপাশে থেকে যাওয়া খুব নিশ্চিত তো? কোনো দুর্বিপাকে ছিটকে যেতে হবে না তো ওইপাশে? হয়ে যেতে হবে না তো ক্ষমতাহীন হ্যাভ-নট-দের একজন? কবে একসময় জন রলস বলেছিলেন, মানুষ সাধারণত এমনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চান, যাতে তিনি যদি কখনও ক্ষমতাহীনও হয়ে পড়েন, তখনও যেন তাঁর স্বার্থটুকু সুরক্ষিত থাকে, আর সেইটাই যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তগ্রহণের পদ্ধতি।
আজ না হয় ভাবলেন না। কিন্তু, কাল যদি বিপাকে পড়েন, আপনার স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে তো? আপাতত গা বাঁচিয়ে চলার বা তলিয়ে ভেবে না দেখার সিদ্ধান্তটি যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে তো?