“জিন্দেগি কি সাথ ভি / জিন্দেগি কি বাদ ভি” -- মনে পড়ছে এই বুকের ভেতর নাড়িয়ে দেওয়া স্লোগানটা! বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত দুর্যোগ নেমে আসা কত পরিবারকে ভেসে যেতে দেননি এঁরা! পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটির অকাল-প্রয়াণে, আর্থিক ভাবে ধ্বস্ত, নিঃস্ব মানুষের পাশে দেবদূতের মত এসে দাঁড়িয়েছেন। হ্যাঁ, লাইফ ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন, মানে এলআইসির কথাই বলছি।
বা, সেই মানুষটির কথা ভাবুন। অফিস-ফেরত এক-কাপ চায়ের খরচ বাঁচিয়ে, সস্তা সাবানে দাড়ি কামিয়েও, প্রতিটি পাই-পয়সা তুলে রেখেছেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে। যাতে শেষ বয়সে টাকার জন্য বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসা, ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষা - আটকে না যায়। আর আজ কোনও এক শুভ্র, নির্মল সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি তিনি জানতে পারেন - এই প্রতিষ্ঠানগুলি বেমালুম ভ্যানিশ হয়ে গেছে, তাহলে তো তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ারই কথা।
হ্যাঁ, এটাই ঘটতে চলেছে। আমাদের আপাত-নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের আড়ালে নিঃশব্দে মাথা তুলেছে এক সর্বগ্রাসী সর্বনাশের আয়োজন। আসলে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে - আমাদেরই ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে বকলমা-সঁপে নিশ্চিন্তে ঘুম দেওয়া। তারই সুযোগে সে কতটা সিঁদ কেটেছে, তা দেখার পরিশ্রমও আমরা করিনি, বা মুসলমান তাড়িয়ে কল্পিত হিন্দুরাষ্ট্রের মায়াকাজল পরে তস্করের কাছেই সিন্দুকের চাবি গচ্ছিত রেখে দিয়েছি।
মোদি-সরকারের প্রতি এখনও যাদের অগাধ আস্থা, তাঁরাও আম্বানি-ভ্রাতৃদ্বয়ের নাম শুনেছেন। রাইট-ভ্রাতৃদ্বয়ের মত এই দু’ভাইও দেশে-বিদেশে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী। তো, আমাদের অনিল আম্বানির রিলায়েন্স নাভালকে ঋণ দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত আইডিবিআই ব্যাঙ্ক। অনিল আম্বানি অবশ্য গণেশ উল্টানোর ব্যাপারে বেশ করিৎকর্মা। রিলায়েন্স নাভালের গণেশও যথারীতি উল্টে গেল। সঙ্গে ডুবল আইডিবিআই-ও। এবার এই আইডিবিআই-এর পরিত্রাতা হিসাবে এগিয়ে এলো এলআইসি। কর্পোরেট ঋণে জর্জরিত আইডিবিআই এর একান্ন শতাংশ শেয়ার, ২১,০০০ কোটি টাকা খরচ করে কিনে নিল এলআইসি। যদিও তাতেও আইডিবিআই-এর সঙ্কট মিটল না। ঋণের ভারে আরও লোকসানে তলিয়ে গেল আইডিবিআই। এইবারে আইডিবিআই-কে বাঁচাতে ৯,৩০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করল কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে ৪,৭৪৩ কোটি টাকা দিতে হল এলআইসি-কে। বাকি টাকা দিল কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে শুধুমাত্র আইডিবিআই-তেই তারা ৩৫,০০০ কোটি টাকা লগ্নি করতে বাধ্য হল।
এলআইসি যেন গৌরী সেন। একইভাবে পিএনবি-এর সাহায্যার্থেও তাকে এগিয়ে আসতে হল। নীরব মোদীর ৮,০০০ কোটি টাকার ঋণ-খেলাপির ঘটনায় লোকসানে জর্জরিত পিএনবি-তে বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করতে বাধ্য করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের বিলগ্নীকরণের ঠেলায় পরে কোল ইন্ডিয়া, এনটিপিসি, কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার চড়া দামে কিনতে বাধ্য হল এলআইসি।
সব মিলিয়ে, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে, ৫ বছরে মোট ২২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে বাধ্য হয় এলআইসি। এর ফল হল মারাত্মক। ৬০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার, মাত্র আড়াই মাসে ৫৭,০০০ কোটি টাকা গাঁট-গচ্চা দিতে হয়েছে এলআইসি-কে। এ সবই আমার-আপনার শেষ জীবনের সঞ্চয়ের জন্য জমানো টাকা। এতটা টাকা একরকম জলে চলে যাওয়ার পর আর কি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব? এই সরকারের আমলে?
লাভজনক প্রত্যেকটা সংস্থা লোকসানের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে এই সরকারের আমলেই। অবস্থা এমনই, যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জরুরি তহবিল থেকেও টাকা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ব্যাঙ্ক-মার্জারের নামে ঋণ “রাইট অফ” করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অটোমোবাইল থেকে টেক্সটাইল - সমস্ত শিল্প এখন সঙ্কটে। বেকারত্বের হার বর্তমানে সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বিদেশি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলো শেয়ার বেচে দেশ ছাড়ছে। অর্থনীতির হাল ফেরাতে সরকারের কোনও পদক্ষেপ নেই। আর এই অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতে কাশ্মীর, ৩৭০, ধর্মীয় জিগির - এ নিয়েই এরা পড়ে আছে।
এখানেই শেষ নয়। আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘে ক্রমশ ঘন হয়ে উঠছে আকাশ। এলআইসিকে শেষ করার পর কি পিএফ-এর পালা? কারণ এই ফান্ডেও প্রচুর টাকা প্রতিনিয়ত জমা হয়। সরকারের নজর বহুদিন ধরে এই ফান্ডের দিকে। এই দু'টো সংস্থা যদি মুখ থুবড়ে পড়ে, ভারতের নব্বই শতাংশ মানুষের শেষ জীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে যাবে।
এবারে আসি আইপিও বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং এর বিষয়ে। এটা আসলে স্টক মার্কেট। এখানে বড় অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক ও খুচরো লগ্নি-কারীরা কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা করেন। এখানে একাধিক লগ্নি-কারী ব্যাঙ্কও যুক্ত থাকে।
আরও একটি তথ্য হল, বিগত বছরে এনপিএ বা নন পারফর্মিং অ্যাসেট গত মার্চ ’২০ তে ৬.১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৭ শতাংশ। এবং রেশিও ০.২৭ শতাংশ থেকে ০.৭৯ শতাংশে। নন পারফর্মিং অ্যাসেট হল এমন একটি ঋণ, যার সুদ বা আসল ৯০ দিনের আগে শোধ করতে হয় না। তার পরে শোধ করলেই চলে। কিন্তু এই ঋণগুলোই শোধ না হয়ে তামাদি হয়ে যাচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলো এই শোধ না হওয়া ঋণগুলিকেই সাব-স্ট্যান্ডার্ড, ডাউটফুল ও লস অ্যাসেটস্ ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছে ।
এই এনপিএ-র এর পরিমাণ একসময় থাকত ১.৫% থেকে ২%। সেখান থেকে এতটা বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী কে? এখানেও সেই করপোরেটের কারসাজি। এসার, পোর্ট, ভূষণ পাওয়ার, ভিডিওকন ইন্ডাস্ট্রি, আইএলএন্ডএফএস - এমন আরও কত শত শত গোষ্ঠী যে এর জন্য দায়ী, তার ইয়ত্তা নেই। আইডিবিআই-এর পুনরুজ্জীবনের নামে ২১,৬২৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হল। এক সময়ের নিউ ইন্ডিয়া অ্যাশিওরেন্স কোম্পানি, হ্যালের মত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শেয়ার-দর পড়ে গেছে অনেকটাই। এনটিপিসির দুরবস্থা তো রীতিমতো আলোচনার বিষয়। এই বিপুল ছ্যাঁদা মেরামত করতে বলি করা হচ্ছে জীবনবীমাকেই।
এবারের বাজেটেই অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারামণ বিমা-ক্ষেত্রে শতকরা ৭৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের সংস্থান রেখেছিলেন। এই মুহূর্তে ব্যাঙ্ক ও বিমা-কর্মীরা বল্গাহীন বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নীকরণের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু দেশব্যাপী প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে, ধর্মঘটের দু’দিন আগেই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই-এর সীমা ৭৪ শতাংশ করার অনুমতি দিতে সংসদে বিল পেশ করল মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা যথারীতি এই বিলে ছাড়পত্র দিয়েছে। নাম দিয়েছে - বিমা আইন ১৯৩৮ সংশোধনী বিল।
২০১৫ সাল পর্যন্ত বিমা-শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ছিল ২৬ শতাংশ। ওই বছরই মোদি সরকার ওটা বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করে। তখনও সংস্থার মালিকানা ও ম্যানেজমেন্টের নিয়ন্ত্রণ ভারতীয়দের হাতে রাখার শর্ত ছিল। এবারের সংশোধনীতে ৭৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। নামকাওয়াস্তে বলা হয়েছে বোর্ড অব ডিরেক্টরস্ ও ম্যানেজমেন্টের মূল ব্যক্তিদের অধিকাংশকেই ভারতের বাসিন্দা হতে হবে। কম করে ৫০ শতাংশ ডিরেক্টরকে স্বাধীন হতে হবে। লভ্যাংশের একটি নির্দিষ্ট অংশ জেনারেল রিজার্ভ হিসেবে জমা রাখতে হবে। সীতারামণ আরও বলেছেন - বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য একটা ইনভেস্টর চার্টার চালু করা হবে।
এর আগেই কেন্দ্রীয় সরকার ইনশিওরেন্স ব্রোকার, কনসালট্যান্ট, কর্পোরেট এজেন্ট - ইত্যাদি পরিষেবায় ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছিল। এবার যে বিলটা পাশ হল, তাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাই বেশির ভাগ শেয়ার কিনবে, আর রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা-ক্ষেত্রে তাদের অবাধ লুটপাটের দরজা খুলে গেল।
আবার একটু ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরি। ১৯৯১ সালে নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির হাত ধরে ১৯৯৪ সালে সরকার নির্ধারিত এক কমিটি সুপারিশ করে - জীবনবীমার ব্যবসার বাজার ব্যক্তি-পুঁজির জন্য খুলে দিতে এবং এলআইসি-র শেয়ার বিক্রি করতে। সেই সূত্র ধরে ২০০০ সালের এপ্রিলে, জীবনবীমা ব্যবসার বাজার দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য খুলে দেওয়া হল। এত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা সত্ত্বেও প্রায় ২৫ টি দেশি-বিদেশি কোম্পানির দল সকলে মিলে জীবনবীমা ব্যবসার মাত্র ৩০% বাজার দখলে রাখতে আজ প্রায় কুড়ি বছরেরও বেশী সময় ধরে হিমশিম খাচ্ছে। কেন জানেন? একমাত্র কারণ - “ব্র্যান্ড নেম” এলআইসি-র দেশজোড়া গুড-উইলের সামনে তারা কার্যত অসহায়।
আর সেই কারণেই, সরকারি সংস্থা এলআইসি-র শেয়ার বিক্রির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। যার ফলে গোটা দেশের মানুষ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছেন - তা আমরা এবার অল্প কথায় বুঝতে চেষ্টা করব।
দেশের একমাত্র সংস্থার নাম এলআইসি, যেখানে আয় এবং ব্যয়ের পরে যে টাকা হাতে অতিরিক্ত আকারে থেকে যায়, তার ৫ শতাংশের ভাগ পায় কেন্দ্রীয় সরকার, আর ৯৫ শতকরা টাকা বোনাস আকারে পলিসি হোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এলআইসি তার নিজের ঘরে একটি টাকাও রাখে না।
ধরুন, এখন যদি বছরে ১০০ টাকা অতিরিক্ত আয় হয়, তবে কেন্দ্রীয় সরকার পান ৫ টাকা, আর পলিসি হোল্ডাররা পান ৯৫ টাকা। ধরা যাক, যদি এই এলআইসি-র ২০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করা হয়, তবে হিসাবটা কেমন হবে ?
শেয়ার হোল্ডাররা ২০ টাকা নিয়ে চলে যাবেন, কেন্দ্রীয় সরকার পাবেন বাকি ৮০ টাকার ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪ টাকা, আর বোনাস আকারে পলিসি হোল্ডাররা পাবেন ৭৬ টাকা। এটা ঠিক, শেয়ার বিক্রি করে এককালীন মোটা টাকা সরকার পাবেন, কিন্তু প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পলিসি হোল্ডাররা, কারণ তাদের বোনাসের পরিমাণ কমবে।
সরকার তো এককালীন মোটা টাকা দিয়ে বড়লোকদের অনাদায়ী ঋণের টাকা বা বৈদেশিক ব্যবসার ঘাটতি মেটাবেন, কিন্তু সারা বছর ধরে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের যোগান দিতে যে বিপুল টাকা এলআইসি ফি-বছর যোগান দিয়ে থাকে, সেখানে ঘাটতি হবে, এবং সরাসরি বঞ্চিত হবেন দেশের সমস্ত স্তরের মানুষ। রাস্তাঘাট, সেচ, বিদ্যুৎ, পরিবহণ, পানীয় জল সরবরাহ-সহ প্রচুর জনকল্যাণমূলক কাজে এলআইসি-র যে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে, যে ৯০ কোটি মানুষ বিভিন্ন কারণে এলআইসি-র গ্রাহক না হওয়া সত্ত্বেও এই উন্নয়নমূলক সরকারি কাজের মাধ্যমে এলআইসি-র কাছ থেকে পরোক্ষে উপকৃত হয়ে থাকেন, মুখ্যত গরিব মানুষেরা, তাঁরাও কিন্তু বঞ্চিত হবেন।
একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে, জনসাধারণের পরিষেবা দেওয়ার টাকা সরকার পান দেশের জনগণের দেওয়া প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করের টাকা থেকেই। আর আজ সেই টাকা যদি দেশের মানুষের কাজে না লেগে, গুটিকয়েক বড় শিল্পপতির পকেটে ঢোকে শেয়ার কেনার মাধ্যমে, তবে সেটা মেনে নিতে পারবেন তো?
এলআইসি-র এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক - এলআইসি-র প্রায় ৪০ কোটি পলিসি হোল্ডার। তাঁরা কখনওই চাইবেন না, যে তাঁদের কষ্টের সঞ্চয় সাত ভূতে লুটেপুটে খাক। আর তাই এলআইসি-র শেয়ার বিক্রির কোনও অধিকারই নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। এই অপচেষ্টা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে আটকাতেই হবে, দেশের ১৩০ কোটি মানুষের স্বার্থে।
আর একটি গর্বের জায়গা ছিল আমাদের। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাতে তৈরি বেঙ্গল কেমিক্যাল। বাঙালিকে সৃষ্টিশীল ব্যবসামুখী করে তোলার এই অত্যন্ত সৎ প্রচেষ্টাটিকে একরকম গলা টিপে মেরে ফেলার সব আয়োজন সম্পূর্ণ করে ফেলেছে এই সরকার।
এ সরকারের ষড়যন্ত্রের যেন শেষ নেই। গোটা দেশটাকে সর্বপ্রকারে ধ্বংসের খেলায় পাগল হয়ে নেমেছে এরা। সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বিমান, রাষ্ট্রপতি ভবনের সংস্কারে বিপুল অর্থব্যয়, ব্যাঙ্ক তছরুপকারীদের কাছে টাকা খেয়ে ফ্রি প্যাসেজ দিয়ে বিদেশবাসী করা, নোট-বন্দীর নামে মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে ফেলে দেওয়া, অতিমারীর সুযোগে মানুষকে সর্বপ্রকারে পিষে মারা, কোটি কোটি টাকা খরচ করে এমএলএ-এমপি কিনে নিত্যদিন রাজ্যগুলিকে অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দেওয়া, এদের যেন গুণের ঘাট নেই। দেশের জিডিপির অবনমন শুধু তার আয়ের ওপর নির্ভর করে না, সরকারের অপচয় ও মিথ্যাচারও জিডিপির ওপর প্রভাব ফেলে।
এই পরিস্থিতিতে দেশের কোণে কোণে ধূমায়িত হচ্ছে বিদ্রোহের আগুন। মানুষের প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নিতে, তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে উদ্যত হয়েছে ওরা। গত বছর, গোটা শীতকাল জুড়ে শাহিনবাগের মায়েরা অত্যন্ত গৌরবময় লড়াইয়ের সাক্ষ্য রেখেছেন। মানুষ-মারা কৃষি-আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লীর বর্ডার আজ সাড়ে তিনমাস ধরে অবরোধ করে রেখেছেন পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকরা। এঁরা ধনী কৃষক, এঁরা খলিস্তানি, এঁরা সন্ত্রাসবাদী - সুতরাং ওঁদের ডাণ্ডা দিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে - এই প্রচার প্রাণপণে চালিয়েও এঁদের মনোবলে চিড় ধরানো তো দূরে থাক, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এঁদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। মানুষের প্রতিবাদের মুখে এনপিআর সাময়িক বন্ধ করলেও আবার তা চুপিসারে সেন্সাসের সঙ্গে করিয়ে নেবার তোড়জোড় করছে। তবে মানুষও প্রতিদিন সংহত সংগঠিত হচ্ছেন এদের রুখে দেবার জন্য।
আজ এক ভয়ঙ্কর ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দেশ। আমাদের সমবেত চেতনা ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ছাড়া এই অলাতচক্র থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও রাস্তা নেই।
গ্রাফিক্স ঃ জ্যোতিষ্ক দত্ত
খুব ভালো তথ্যবহুল লেখা।
তোদের আর হইলো না !
বিজেপিও থাকলো, তোরাও গেলি
বিকল্প দল মাথা তুলতে না পারলে এই সরকার পুরো দেশটাকেই ফতুর করে বেঁচে দেবে৷
সাধু সাবধান৷ এখনো সময় আছে৷
এইসময় এটা খুব দরকারী লেখা। এন পি এর বৃদ্ধি দেশের পক্ষে অশনিসংকেত।
খুব তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। প্রয়োজনীয়।
এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা চমৎকার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। লেখিকাকে ধন্যবাদ ।
সুন্দর লেখা। ঝরঝরে।
এর মাঝে মনে রাখতে বলবো, কর্পোরেট পুঁজি কিভাবে গোটা বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে একমেরু বিশ্ব হবার পরে। সরকারের দায়িত্ব কেবলমাত্র পুঁজির অবাধ বিচরণকে সুরক্ষিত রাখা। সামাজিক সুরক্ষা নয়।
এক নতুন ধরনের গভার্নেন্স এবং স্টেট প্যাটার্ন জন্ম নিচ্ছে। আমার একটি লেখার লিংক রাখলাম, বুঝতে সুবিধে হতে পারে।
উপযুক্ত বিরোধী দল যারা এরকম তথ্য ব্যবহার করে জনসচেতনা তৈরি করতে পারে এবং সরকারের ক্ষমতা শেষের কারণ হতে পারে এরকম না থাকার ফল এসব।
শুধু কি npa ? মনমোহন সরকার চলে যাওয়ার সময় যে ঋণ করেছিল এখন মোদী সরকারের আমলে সেই ঋণের পরিমাণ কত হয়েছে সেটাও জানান। এখন সব সরকারি সংথায় বিদেশি কোম্পানি ঢুকে পড়ছে। আত্মা নির্ভর ভারত গড়তে যেয়ে ব কলমে বিদেশি কোম্পানি গুলো চল আসছে। ডিফেন্স এ বিদেশি কোম্পানির শেয়ার 100 pc হয়ে গেছে। কৃষি ভারতের জিডিপি র 3 থেকে 4 sathanso দিছিল। এখন কৃষি কে প্রাইভেট প্লেয়ার এর হাতে তুলে দেয়া হলো। ব্যাংক গুলো টো সব প্রাইভেট করে দিচ্ছে । এডুকেশন কেও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি র ও বিদেশি ইউনিভার্সিটি র হাতে তুলে দিচ্ছে। সব কিছুর খরচ প্রচুর বেড়ে যাবে আর সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি সমস্যায় পড়তে হবে। এই বিষয় গুলো নিয়ে কিছু লেখা লেখি করুন।
আলোচনাটা বেশ হয়েছে, কিন্তু এটা শুধুই ভূমিকা। আসল কথাটা হচ্ছে আমরা সবাই অসহায় ভাবে কর্পোরেটের গুণ্ডা এই সরকারের গুণ্ডামিটা মেনে নেব কি? যদি শেষ পর্যন্ত মেনেই নি, তাহলে এ আলোচনা নিষ্ফল। এই গুণ্ডামির প্রতিবাদ নয়, শুধুমাত্র প্রতিরোধের কথাও নয়, একে বানচাল করতে হবে, করতেই হবে। মনে রাখতে হবে, বিরোধীদের ওপর ভরসা করে লাভ নেই, এরা যে সবাই কর্পোরেটের দালাল, তা অনেক আগেই প্রমাণ হয়ে গেছে। এবার চাই জনতার প্রতিরোধ৷ তার জন্যে চাই নিশ্চিদ্র পরিকল্পনা, এবং তার যথাযথ রূপায়ন।
একটা ব্রেন-স্টর্মিং চাইছি আপাতত। খোলাখুলি এই পরিসরেই শুরু হোক।
আমি চাই অপছন্দের সংকেত। কেনো নেই? এই লেখাটিকে শব্দ ব্যায় না করে, অপছন্দ জানতে চাই। সেটা পারলাম না।
যাকগে একটা বাজে লেখার তালিকায় রাখলাম।
সরকারি অর্থনীতির বিগত বছরের মোটামুটি রিভিউ বলা যেতে পারে। ভালো আর সহজ।
খুব তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। মোদী সরকার তো বলেই দিয়েছে , তারা বেসরকারীকরণ করছে তাদের বিশ্বাস থেকে, কোনো দায়বদ্ধতা থেকে নয়। এটা রোখার একমাত্র পথ জনসচেতনতা এবং ভয়ংকর গর্জে ওঠা।
অনামিকার মন্তব্য পড়ে সাহস সঞ্চয় করে বলছিঃ গর্জে ওঠাটা গর্জানোর মতই হওয়া দরকার। শাহীন বাগ মনে পড়ছে? ওরকম একটা কিছু।সত্যিকারের নাগরিকের প্রতিবাদ এবং রুখে দাঁড়ানো।