নবারুণ ভট্টাচার্য ও তাঁর লেখালেখি নিয়ে শর্মিষ্ঠা রায়-এর বিশ্লেষাত্মক দুটি লেখা এখানে একত্র রইল, প্রকাশের কালানুক্রমে। লেখিকার ভাবনা ও বক্তব্যের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনায়। স্মৃতিচারণটি (‘নবারুণদা’) রইল আলাদা, ‘স্মৃতিকথকতা – স্মৃতি, কত কথা...’ অংশে।
বাংলা সাহিত্যের কেয়ারি করা ফুলবাগানে নবারুণ যেন ফণিমনসার বেয়াড়া ঝাড়
সব লক্ষণ মিলে যাচ্ছে। একটি একটি করে।
সরকারি কোপে শুয়োরের দল। আদিগঙ্গা পেরিয়ে কাদামাখা শুয়োরের পালের পলায়নদৃশ্য মনে করিয়ে দিতে পারে ডানকার্কে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসখ্যাত ‘পশ্চাদপসরণ’কে। আবার নেহাত বরাতদোষে যে শুয়োররা ধরা পড়েই গেল, তাদের ঠাঁই হয়েছে মশারি, টেবিলফ্যান, সিসিটিভি সম্বলিত ফাইভ স্টার কয়েদখানায়। কলকাতা শহরের খাল, নর্দমা, বর্ষায় গলে যাওয়া বস্তিগুলোয় শুয়োরের মতো গাদাগাদি করে বাস করা মানুষগুলোর অবশ্য এত সৌভাগ্য হয়নি। মশা-মাছি-চোলাই-সাট্টা নিয়ে তাদের জীবন আগের মতোই কাদাঘোলা জলে বহমান।
‘কাঙাল মালসাট’-এ ফ্যাতাড়ু ও চোক্তারদের যৌথ বিপ্লবের সূচনার আগে এমনই হাড় হিম করা কিছু ঘটনা পর পর ঘটে চলেছিল। কাকতালীয় কি না জানি না, নবারুণ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর প্রাকমুহূর্তে এমনই কয়েকটা বিচিত্র দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইল শহর কলকাতা ও গোটা বিশ্ব। তা না হলে কী ভাবেই বা ব্যাখ্যা করা যায় গাজায় ঈদের দিনটাকে? বন্ধুদের নতুন জামা জুতো দেখাবে বলে রাস্তায় বেরিয়ে যে ছোট্ট মেয়েটা আর ঘরে ফিরতে পারল না, নতুন জামার রক্তমাখা লেসের টুকরো দেখেই তো ধ্বংসস্তূপ থেকে তাকে চিনতে পেরেছিলেন বাবা। অথবা, মেজর বল্লভ বক্সীর মতোই ইজরায়েলের মাটির নীচে সুরঙ্গ খুঁড়ে নুনু কামানের খুচরো গোলায় গাজায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে চলেছে হামাস।
নবারুণের মৃত্যুর জন্য তাঁর মতো করেই মঞ্চটাকে সাজানোর কাজ সম্পূর্ণ করেছিল অলক্ষ্যে থাকা কেউ একজন। সে ঠিক কে, তাকে খোঁজার কোনও সচেতন প্রয়াস কোনও দিনও করেননি নবারুণ। কিন্তু তার গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায় তার অমোঘ উপস্থিতি। তার অঙ্গুলিহেলনেই কাঙালদের মালসাটে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বড়িলাল। অথবা, ফ্যাতাড়ুরা মন্ত্র পড়ে ঘুড়ির মতো আকাশ উড়াল দেয়। নবারুণের সাহিত্য ও জীবনযাপনে এই অলক্ষ্যে থাকা কেউ একজন হল ইতিহাস, মহাকাল। তাঁর গোটা জীবন, তাঁর সাহিত্য, এমনকি তাঁর মৃত্যুতেও যার স্বাক্ষর প্রতি ছত্রে ছত্রে। ইতিহাসের সঙ্গে নবারুণের যোগাযোগ আজন্ম। সদ্যোজাত স্বাধীন ভারতের সন্তান তিনি। বাঙালি মেধার দুই অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি, বিজন ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র সন্তান নবারুণ পারিবারিক সূত্রেই পেয়েছিলেন প্রতিবাদ আর সৃজনশীলতার অভিজ্ঞান। বাবা বিজন ভট্টাচার্যের প্রভাব তাঁর বেড়ে ওঠায় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তাঁর মাতৃকুল, বিখ্যাত ঘটক পরিবারের উত্তরাধিকারকেও সগৌরবে বয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি। বিশেষত, ঋত্বিক ঘটকের। দ্বিধাবিভক্ত বাংলাদেশের বহরমপুরে ১৯৪৮ সালে তাঁর জন্ম। কিন্তু বিজন ও ঋত্বিকের সূত্রে সেই খণ্ডিত বাংলাদেশের জন্য আমরণ একটা তিরতিরে যন্ত্রণা বয়ে গিয়েছে তাঁর ধমনীতে। ছিন্নমূল, যন্ত্রণাদীর্ণ ঐ বাংলাদেশই কখনও সোভিয়েত রাশিয়া, কখনও গাজা-প্যালেস্তাইন, কখনও কম্বোডিয়ার অখ্যাত গ্রাম, কখনও বা আদিগঙ্গার তীরবর্তী কলকাতা হয়ে উঠেছে তাঁর সাহিত্যে। এ এমন এক ভূখণ্ড, যেখানে মানুষকে চেনা কঠিন মানুষ হিসেবে। কখনও তারা মুণ্ডহীন বিকৃত লাশ, কখনও তারা পুলিশের বুলেট বুকে নিয়ে পড়ে থাকা তরুণ স্বপ্ন, কখনও নাম পরিচয়হীন খুলির পাহাড়, কখনও ডানা মেলা ফ্যাতাড়ু।
নবারুণের লেখায় বাস্তব ও পরাবাস্তবের এমন বিচিত্র গুরুপাক বাংলা সাহিত্যে একক ও বিচ্ছিন্ন। বস্তুত এই বিচ্ছিন্নতাই বোধহয় সাহিত্যিক ও ব্যক্তি নবারুণের একমাত্র পরিচয়। বাংলা সাহিত্যের কেয়ারি করা বাগানে তিনি যেন বেয়াড়া এক উপদ্রব। রাজবাড়ির বাগানে, বাবুর মজিমাফিক কাটছাঁট করে নেওয়া ঘাসের গালিচা আর মেরুদণ্ডহীন লতানে গাছের ভিড়ে তিনি যেন উৎকটভাবে মাথা তোলা এক ফণিমনসার ঝাড়। সর্বাঙ্গে কাঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নিঃসঙ্গ। নবারুণের সাহিত্যের আকাশ শরতে মেঘের ভেলা ভাসানো সুদৃশ্য চিত্রকল্প নয়। তাঁর সাহিত্যের আকাশ ঘোলাটে, ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। কখনও কখনও সেই আকাশ বেয়ে নেমে আসে প্যারাসুটে ঝোলানো নিউক্লিয়ার বোমা অথবা পাঁঠার মাথার পচা ঘুগনির ভাঁড়। এমন বিচিত্র ও বহুগামী সাহিত্যিককে যে তার সমকাল ও সমসাময়িকরা সব সময় বুঝে উঠতে পারবেন না সেটাও খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। খ্যাতির প্রলোভন, স্বীকৃতি, অর্থানুকূল্যে বা রাজপ্রসাদের কাছে নুয়ে পড়াই যখন বাংলা সাহিত্যের প্রধান চালিকাশক্তি, সে সময় মেরুদণ্ডটি সোজা রেখে, প্রতিষ্ঠানকে সোচ্চারে দূরে ঠেলে নবারুণ যে গত চার দশক ধরে নিজের মতো করে লিখে গিয়েছেন এবং শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তাঁর নিজস্ব একটি পাঠকসমাজ তৈরি করতে পেরেছেন সেখানেই তাঁর সাফল্য। এবং সেই কারণেই বাংলা সাহিত্যে তিনি অনন্য।
বামপন্থা ও বামপন্থী আন্দোলন তাঁর জীবন ও সাহিত্যের অন্যতম ভরকেন্দ্র। দূরে বসা দর্শকের দৃষ্টিতে নয়, বামপন্থাকে তিনি দেখেছেন একজন ইনসাইডার হিসেবেই। তার নিজের কথায় ‘রাজনৈতিক — এই কথাটা আমি সবসময়েই একটা দার্শনিক অবস্থান থেকে দেখি, অস্তিত্বর যথার্থতা বজায় রাখার একটা তাগিদ সেখানে থাকে, অস্তিত্বর ভেতরে ও বাইরের যে বিস্ফোরক অন্ধকার ও জায়মান আলো রয়েছে সেটাকে মেনে নিয়েই’ (মুখবন্ধ, অন্ধবেড়াল ও অন্যান্য গল্প, জানুয়ারি ২০০৯)। প্রকৃতপক্ষে ১৯৬৮ সালে ‘ভাসান’ গল্পে যে নবারুণ আত্মপ্রকাশ করলেন তিনি অনেক বেশি বিজন ভট্টাচার্যের সন্তান। কলকাতা শহরের হাঘরে, পাগল, ভিখারি মানুষকে নিয়ে লেখা তাই তাঁর পক্ষে অনিবার্য ছিল। বরং এর অনতিপরে কবিতায় যে নবারুণকে দেখতে পাওয়া যায়, তিনি সত্তরের দশকের রাগী তরুণ, বিশ্বজোড়া যুদ্ধ-ধ্বংস ও বামপন্থী আন্দোলনের আগুনে পুড়ে তপ্ত কাঞ্চনের মতো উজ্জ্বল। ১৯৭২ সালের মে মাসে লেখা ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতাতে যে নবারুণ ধরা দেন তিনিই আমরণ আমাদের সঙ্গে রয়ে গেলেন। কালের অদ্ভুত নিয়মে তাঁর অস্তিম সময়টিতেও পৃথিবী বড় বেশি মৃত্যুগন্ধে ভারাক্রান্ত। সম্ভবত সেই কারণেই সময়ের আগেই এই মৃত্যু উপত্যকা ছেড়ে চলে যেতে হল তাঁকে।
ষাট ও সত্তরের দশকের আগুনে সময়ে বামপন্থী আন্দোলনকে সামনে থেকে দেখেছেন তিনি। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্বপ্ন দেখা তরুণ নবারুণ প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করেছেন সোভিয়েত ইনফর্মেশনে। সেই সূত্রে সোভিয়েত রাশিয়াকে অনেক বেশি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তাঁর। ঠাণ্ডা যুদ্ধ, বার্লিন প্রাচীরে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাওয়া বিশ্বকে তিনি দেখেছেন তার ভালো ও খারাপ দুটো চশমা দিয়েই। ১৯৮৪ সালে সংক্ষিপ্ত মস্কো ভ্রমণে কমিউনিস্ট রাশিয়ার ঘুণধরা চেহারাটা আরও প্রকট হয়েছে তাঁর চোখে। গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকা সত্ত্বেও সেই রাশিয়া এসে দাঁড়িয়েছে অনিবার্য ভাঙ্গনের মুখে। এর পর ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতনের পর রুশ সংবাদ সংস্থার চাকরিটিও খোয়ান তিনি। বিশ্বজোড়া কমিউনিজমের পতনের সঙ্গে মিশে যায় তাঁর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডিও। পরবর্তী সময়ে চিনে গিয়েও প্রায় একই অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। তবে সোভিয়েত চীন — দুই দেশেই যে তাঁর স্বপ্নের সাম্যবাদের মৃত্যু হয়েছে তা বুঝতে সময় লাগেনি তাঁর।
কমিউনিজমের পতনকে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি মনে করতেন নবারুণ। কিন্তু আস্থা হারাননি বামপন্থায়। তাঁর গভীর বিশ্বাস ছিল দুনিয়ার হেরে যাওয়া, মার খাওয়া, অন্ধকারে বাস করা পোকামাকড়ের মতো মানুষেরা একদিন গর্জে। উঠবেই। তাদেরই প্রতিনিধি হয়ে কানাগলি থেকে আকাশে উড়াল দিয়েছিল ফ্যাতাড়ুর দল। তাদের আয়ুধও তাদেরই মতো। পচা নর্দমার জল, ভাঙা ভাঁড়ের টুকরো, সেলুনের কাটা চুলে বা মর্চে পড়া পুরোনো ছুরি দিয়েই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ার সাহস দেখায় ফ্যাতাড়ু আর চোক্তার বাহিনী। কিন্তু এমন অসম লড়াইয়ের ফলাফল নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না তাঁর। কেবলমাত্র স্থবিরতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে, স্থিতাবস্থার সঙ্গে অন্তর্ঘাত করতে পারাতেই ফ্যাতাড়ুদের সাফল্য। বস্তুত নয়ের দশকের গোড়ায় আবিশ্বে কমিউনিজমের যে পতনকে ট্র্যাজেডি মনে করেছিলেন নবারুণ, পশ্চিমবঙ্গে তিন দশকের বামপন্থী সরকারের পতনের সময় সেটাই তাঁর চোখে হয়ে উঠেছিল চরম কমেডি। একেবারে প্রবচন মেনেই। যে কারণে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের শেষের দিনগুলোতেই নানা ঘটনাক্রমের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে ফ্যাতাড়ুদের বিচিত্র কার্যকলাপ।
তবে নবারুণের সাহিত্য মানেই ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক বা কুম্ভীপাক ভেবে ভুল করার লোকের অভাব নেই এই বঙ্গদেশে। তাঁদের দোষ দেওয়াও যায় না। নবারুণের মতো কৃপণ লেখকের, ক্ষীণতনু গল্প বা কবিতার বইগুলো অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। বৃহৎ প্রকাশনা সংস্থার প্রচারের আলো থেকে সচেতনভাবে নিজেকে দূরে রাখা নবারুণ নিজের সীমিত গণ্ডির মধ্যেই তাঁর যে পাঠকবৃত্ত গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা বরাবরই সংখ্যায় কম। কিন্তু সেই বেড়াটা ভেঙে গিয়েছিল ১৯৯৫ সালে ‘হারবার্ট’ প্রকাশের পর। ষাট-সত্তরের উত্তাল কলকাতায় অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া ছেলেদের দল, যারা অকালে মরে ভূত হয়ে গিয়েছিল, সেই ভূতেদের সঙ্গেই তো কথা বলে হারবার্ট। এই উপন্যাসের আকাশছোঁয়া সাফল্য, তার প্রথাভাঙা ভাষা নবারুণকে বাঙালি পাঠকের কাছাকাছি এনে দিয়েছিল অনেকটা। এই উপন্যাস তাঁর জন্য বয়ে এনেছিল পুরস্কারের স্বীকৃতি। নরসিংহ দাস, বঙ্কিম, এমনকি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারও। কিন্তু ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে গুলি চালনার প্রতিবাদে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের দেওয়া বঙ্কিম পুরস্কার ফিরিয়ে দিতে এক মিনিট সময়ও নষ্ট করেননি তিনি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পরবর্তী সময়ে বাংলার বহু বিশিষ্টজনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে পথে নেমেছিলেন তিনিও। মনে প্রাণে কমিউনিস্ট হয়েও তিন দশকের বামফ্রন্টের অপশাসন থেকে রাজ্যের মুক্তির জন্য সুর চড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ‘পরিবর্তন’-এর পর আবার নিজের নিঃসঙ্গ বিচ্ছিন্নতায় ফিরে এসেছেন। লাল বা সবুজ, দুই জমানাতেই শাসকের সন্দেহের তালিকায় উপরের দিকে থেকেছে তার নাম।
‘হারবার্ট’ বাংলা সাহিত্যে যে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে বাসা বেঁধেছে বারুদ। ‘হারবার্ট’ সেই ঠাসা বারুদে একটা দেশলাই কাঠি ছুঁড়ে দিয়েছিল খালি। কথা সাহিত্যিক হিসেবেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন নবারুণ। কিন্তু তাঁকে চেনার চাবিকাঠি তাঁর কবিতা। যে কবিতাকে তিনি রাষ্ট্রের দিকে কামানের গোলার মতো ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ১৯৭২-এ, সেই কবিতাই ২০১৩-তেও একইরকম অগ্নিবর্ষী, মৃত্যুর একবছর আগেও।
‘কোথায় গেলে শান্তি পাবে বুকের মাঝে রক্তনদী
কোন আড়ালে মুখ লুকোবে সারাটা দেশ শহীদ বেদী
রক্তপলাশ দু-হাত ভরে ফুটছে ফুটুক, হে রাত্রিদিন
আগুন জ্বলুক, আগুন জ্বলুক, আগুন জ্বলুক বিরামবহীন। ...’
(এদেশে, বুলেটপ্রুফ কবিতা, ২০১৩)
দু-হাত ভরা রক্তপলাশ আর দু-চোখ ভরা আগুন নিয়ে নবারুণ বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন আলপথের সূচনা করে দিয়ে গেলেন। কেয়ারি করা ফুলের বাগান এড়িয়ে, চোরাকাঁটায় ভরা সেই পথে আগামী দিনে বাংলা সাহিত্য এগিয়ে যাবে কি না, তার উত্তর দেবে ভাবীকাল।
(লেখাটি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘আজকের দেশব্রতী’(অনিমেষ চক্রবর্তী সম্পাদিত) কাগজে ৭ আগস্ট ২০১৪ (খণ্ড ২১ সংখ্যা ২৫) তারিখে পূর্ব-প্রকাশিত)
লেখাটি ছাপা হয়েছিল সংঘমিত্রা রায় ছদ্মনামে। পূর্ব-প্রকাশিত বলে বিশেষ পরিমার্জনা না করে, লেখিকার অনুমতিক্রমে এখানে তাঁর নিজের নামেই লেখাটি রাখা হল।
সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য
পাতলা ঝিমিঝিমে নেশা। গলার কাছটা জ্বালা করে ওঠা টক জলের ঢেঁকুর, পেঁয়াজনুনের সস্তা চাট আর জল মেশানো মদের গন্ধ মেশা সন্ধেবেলা। বা কাদা প্যাচপ্যাচে, ঘাসহীন মাঠে পেচ্ছাপখানার গড়িয়ে আসা জলের দাগ লাগা দুপুরও হতে পারে। অথবা হতেই পারে বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের সাজানো ড্রয়িংরুমের একপাশে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা দুধসাদা ডিপফ্রিজের মধ্যরাত। যেখানে বরফের চাদর মুড়ি দিয়ে শীতঘুমে শুয়ে থাকে সমুদ্রের বিশাল কাঁকড়া, তখনও যার গায়ে লেগে আছে সুন্দরবনের আবাদজমির নোনামাটি আর বঙ্গোপসাগরের নুন। কিংবা মাথার উপর পরমাণু বোমার মাশরুম মেঘের ছাতা পরে দাড়িয়ে থাকা শহরের প্রখর মধ্যাহ্নই বা নয় কেন! এ সব কিছুই হতে পারে নবারুণ ভট্টাচার্যের সাহিত্যের স্থান-কাল।
আর পাত্ররা?
তারা আর যাই হোক ভদ্রলোক নয়। সেই গোড়ার দিন থেকেই। নয় নয় করে চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় বাংলা সাহিত্যের অলিতে গলিতে যাতায়াত করেছেন নবারুণ। কিন্তু ১৯৬৮ সালে প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প ‘ভাসান’ থেকেই তাঁর সাহিত্যের চরিত্ররা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। তারা কেউ পথের পাশে পড়ে থাকা আধমরা ভিখিরি, বুড়ি পাগলি, পরের বউ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া এল আই সি-র এজেন্ট বা বাস কন্ডাক্টর অথবা ফকিরের মতো কেউ। কারখানার মালিকের ফাইফরমাস খাটা চাকর, বয়স্ক ফকিরের বউ লোকের বাড়ি রান্না করে, মেয়েটা স্কুলে যায়। তাকে একটাকা দিয়ে দুটো ডালিমের হজমি কিনে দিতে পারা ফকিরের জীবনের অন্যতম সাফল্য। তবু কারখানার গেটে বাড়তি মজুরির দাবিতে আন্দোলন করা শ্রমিকদের দেখে পুরোনো একটা কথা মনে পড়ে যায় ফকিরের। রাতে বাড়ি ফিরে, বরাদ্দ একটা বিড়ি শেষ করে বাঁশের বাতায় গোজা ঝুলকালি মাখা, পাতা হলদে হয়ে আসা একটা বই নামিয়ে আনে ফকির।
‘সারা দুনিয়ার সর্বহারা এক হও!’
তলায় লেখা—
দেশব্রতী প্রকাশনী
বইটির প্রথম মুদ্রণ – জুলাই, ১৯৬৯
২য় মুদ্রণ – নভেম্বর, ১৯৬৯
৩য় মুদ্রণ – মে, ১৯৭১
২০১০ সালে বারোমাস পত্রিকায় লেখা ‘ফকিরের জীবনের কোনো একটি শনিবার’ নামের এই গল্পটিকে নবারুণ ভট্টাচার্যের সাহিত্যের একটি সংক্ষিপ্তসার বলা যেতেই পারে।
সহজ ও অ্যান্টি বড়লোক। নিজের কবিতার চরিত্র সম্পর্কে এ কথা বলেছিল পুরন্দর ভাট। পুরন্দরের স্রষ্টা নবারুণ ভট্টাচার্য কতটা সহজ এ নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, কিন্তু তাঁর সাহিত্য যে অ্যান্টি বড়লোক এ নিয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই এতটুকু। বিজন ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতাদেবীর একমাত্র সন্তানের পক্ষে সাহিত্যের একটি পথ খুঁজে নেওয়া খুব সহজ কাজ ছিল না। কারণ বাংলা সাহিত্যে তারা দুজনই এমন কিছু রাস্তা ধরে হেঁটেছেন যে পথ দিয়ে আগে কেউ কখনও চলার সাহস দেখায়নি। সুতরাং সাহিত্যিক নবারুণের পক্ষে একটি নতুন পরিসর খুঁজে বের করা যতটা জরুরি ছিল, ততটাই ছিল দুর্গম, কিছুটা দুষ্প্রাপনীয়ও বটে। তবে সে কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল রাজনীতি। বাবা-মায়ের পরিচয়ের বিশাল পাঁচিল ডিঙিয়ে নিজের জন্য যে তৃতীয় পরিসর তিনি গড়ে নিয়েছিলেন তার পিছনেও অবশ্য মিশে ছিল এই দু-জনেরই বিদ্রোহী, ব্যতিক্রমী, মাটিছোঁয়া সত্যানুসন্ধান। এবং অবশ্যই ঋত্বিক ঘটকের সীমাহীন পাগলামি।
গত শতাব্দীর ছয়ের দশকের আগুনে, উত্তাল সময়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সাহিত্যিক নবারুণ। সেই আগুনের আঁচ সারা জীবন রয়ে গিয়েছে তার সাহিত্য জুড়ে। কোনও বাজারি পত্রিকা তাকে কোনওদিন গ্রাস করতে পারেনি। তাই লেখার ব্যাপারে অমিতাচারী হতে হয়নি তাকে। কারও দাবি মেটানোর জন্য কখনও কলমে শান দিতে হয়নি তাঁকে। নবারুণের সাহিত্য তাই আমৃত্যু স্বতন্ত্র এবং স্বেচ্ছাধিকারী। মধ্যবিত্ত, কলমপেষা বাঙালি গার্হস্থ্য জীবন থেকে আরও একধাপ নীচে নেমে, নর্দমার নোংরা মাখা, ফুটপাথের ধুলোয় গড়াগড়ি দেওয়া, ঝুপড়ি-বস্তির পঙ্কিল মানুষগুলি প্রথম দিন থেকে হয়ে উঠেছে তার সাহিত্যের খোরাক। ১৯৬৮ সালে লেখা প্রথম ছোটগল্প ‘ভাসান’ থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, ২০১৪ সালের অসম্পূর্ণ ‘মবলগে নভেল’ পর্যন্ত নবারুণের সঙ্গে থেকেছে তারাই। এরা কেউ রাস্তার পাগল, বুড়ো ভিখিরি, বেশ্যাপাড়ার দালাল, বাংলা মদের ঠেকে পুলিশ কেস খাওয়া মিউচুয়াল ম্যান। বহু ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে আসা শব্দগুচ্ছ ধার করেই বলতে হয়, অস্ত্যজ, সাব অল্টার্ন মানুষ। এই রোগা, সিড়িঙ্গে মানুষগুলোর যাত্রাপথ ধরেই প্রায় চার দশক ধরে চলা সময়ের একটি অমোঘ বিবরণী তৈরি করে গিয়েছেন নবারুণ। ‘ভাসান’ গল্পে সাধুভাষায় একটি ভিখারির মৃত্যুবিবরণী লিখে কথাসাহিত্যিক নবারুণের জন্ম। সেখান থেকে ‘মবলগে নভেল’-এর ফ্যাতাড়ুদের মুখে খিস্তির ফোয়ারা নির্ধারিত করে দেয় তাঁর সাহিত্যের ভাষার চলনকেও। মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের প্রাতাহিকতার ক্লেদ, সামান্য বিলাসের চাহিদায় খুচরো পাপের ইঙ্গিতকে ইচ্ছাকৃতভাবে পাশে সরিয়ে রেখে আজীবন মাথা নিচু করে থাকা মানুষের পাশে থেকে গেলেন নবারুণ। প্রতিদিনের নিদারুণ সীমাবদ্ধতা, অতি সংবেদনশীল মানুষকেও যা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে, তাকে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন তিনি, শুধুমাত্র ‘ভদ্রলোক’ থেকে যাওয়ার গ্লানি বহন করতে চাননি বলে।
১৯৯৭ সালে ‘হারবার্ট’ সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পাওয়ার পর বাংলা সাহিত্যে যে বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার পর অনেকেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছিলেন, বাধ্য হয়েছিলেন সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্যকে নতুন করে দেখতে। বিজন ভট্টাচার্য-মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র সন্তানের পরিচয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর নিজস্ব একটি পাঠককুলের গড়ে ওঠাও হয়তো তারপর থেকেই। কিন্তু, ততদিনে পাল্টে গিয়েছে অনেক কিছু। গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে যাত্রা শুরু করেছিলেন যে রাগী তরুণ, তিনি ততদিনে পক্ককেশ প্রৌঢ়। ঠান্ডা যুদ্ধ, লৌহ যবনিকায় আড়াআড়ি ভাগ হয়ে থাকা দুনিয়া ততদিনে ইতিহাস। সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক দেশটি পরিণত হয়েছে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় ইউটোপিয়ায়। সমাজতন্ত্রী চিনে ছাত্রদের আন্দোলন গুঁড়িয়ে দেওয়া ট্যাঙ্কের গা থেকেও শুকিয়ে ঝরে গিয়েছে রক্তের দাগ। ভোগবাদের প্রমোদে ঢেলে দেওয়া শরীর আর মনে জমেছে অশেষ ক্লান্তি।
এমন এক বিচিত্র সময়ে কী করছিলেন নবারুণ? যে মৃত্যু উপত্যকাকে নিজের দেশ বলে মানতে তীব্র অস্বীকার করেছিলেন তিনি, সেই মৃত্যু উপত্যকাই তাঁর সাহিত্যের জরুরি মোটিফ হয়ে রইল সারা জীবন। বহু ব্যর্থতা, অনাচার, জীর্ণ পোকায় কাটা অস্তিত্ব দেখেও আমরণ বামপন্থায় আস্থা হারাননি তিনি। তাঁর সাহিত্যের পাত্ররা তাই সময়মতো পাল্টে নিয়েছে নিজেদের একটু একটু করে। হারবার্টের বিনুর মতো তারা আর গুলি খেয়ে মরার মতো বোকামি করে না। ভূতের সঙ্গে কথা বলে বলে ক্লান্ত হারবার্ট কবজির শিরা কেটে বরফ জলে হাতটা ডুবিয়ে দিয়েছিল। তার বিছানার নীচে রাখা ডিনামাইট চুল্লির ভিতর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কী হুলুস্থূল বাধিয়ে দিল তা আর দেখে ওঠা হয়নি হারবার্টের। অতখানি কল্পনাশক্তিও ছিল না তার।
কিন্তু পরবর্তী সময় ফ্যাতাড়ুরা আর ভবিষ্যতের জন্য কিছু ফেলে রাখেনি। তারা বিনুর মতো সমাজ পাল্টাতে গিয়ে প্রাণ দিয়ে বোকার মতো মরে যায়নি। বরং বড়লোকের বিয়েতে পচা গেঁড়িগুগলির মারণবোমা ছুড়ে সবকিছু পণ্ড করে দিয়েছে। পোড়া বইমেলায় পুলিশের গায়ে পচা নর্দমার জলবোমা, এন আর আই কবিদের সাহিত্যবাসরে ড্রেনের আরশোলা বা রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কোলাব্যাঙ ছেড়ে দিয়ে সবকিছু ভণ্ডুল করে দিয়ে বিকট হাসি হেসেছে। নবারুণ বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর শেষ কমিউনিস্টের মৃত্যু হলেও সাম্যবাদের মৃত্যু হবে না। ফ্যাতাড়ু আর চোক্তারদের নুনু কামান নিয়ে এই লড়াই লড়াই খেলা বোধহয় সেই বিশ্বাসেরই সবচেয়ে জরুরি ইস্তাহার।
তবে বহু আলোচিত ফ্যাতাড়দের নিয়েই নবারুণের সাহিত্যকে বিশ্লেষণ করলে তাঁর প্রতি সুবিচার করা হবে না। কথাসাহিত্যিক নবারুণের উত্তরণে সময়ের স্বাক্ষর স্পষ্ট। নকশাল আন্দোলনে উত্তাল কলকাতা শহরের অলিগলি ঘুরে ফিরে এসেছে তার গল্পে-উপন্যাসে-প্রবন্ধে। সাম্যবাদের প্রতি যে গভীর বিশ্বাস নিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল, সময়ের ক্ষত তার সেই বিশ্বাসকে করে তুলেছে ব্যঙ্গতিক্ত। কিন্তু কবিতায় তরুণ নবারুণ যে অঙ্গীকার নিয়ে উত্তোলিত আকাশে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন সূর্যের গ্রেনেড, সেই আগুনে ঝলসানো তীব্রতা তাঁর কবিতা বহন করে চলেছে সারাজীবন। যে মৃত্যু উপত্যকাকে নিজের দেশ বলে স্বীকার করতে চাননি তিনি, আবিশ্ব ছড়িয়ে থাকা সেই মৃত্যু উপত্যকাই বারবার উঠে এসেছে তাঁর কবিতার ছত্রে। তিয়েনআনমেন স্কোয়ার থেকে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা-প্যালেস্তাইন বা সিরিয়া, সাম্প্রতিক অতীতে রক্তঝরানো নন্দীগ্রাম-লালগড় বা দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত গুজরাট — তার কবিতা একই দৃপ্ততায় গজে উঠেছে এই রোগশয্যাতেও।
ক্লাসিক সাহিত্য বা পাঠকের চোখের আড়ালে পড়ে থাকা বিচিত্র বিষয় নিয়ে লেখা বই বুভুক্ষুর ক্ষুধা নিয়ে পড়েছেন তিনি। বিশ্বসাহিত্যের জটিলতম অলিগলিতেও ছিল তাঁর অবাধ, মুক্ত যাতায়াত। কিন্তু সমসাময়িক বাঙালি সাহিত্যিকদের থেকে বরাবর দূরত্ব বজায় রেখেছেন তিনি। বাজারি, ফরমায়েসি সাহিত্য জগৎও তাঁকে কাছে টেনে নেওয়ার দুঃসাহস দেখায়নি। এই পরজীবী সাহিত্যগোষ্ঠীর প্রতি নিজের ঘৃণা উজাড় করে দিতে কখনও কুণ্ঠা করেননি নবারুণও।
‘আমি একটি ইতরের দেশে থাকি
এখানে বণিকেরা লেখকদের উদ্ভাবন করে
এবং লেখকেরাও উদ্ভাবিত হয়।
আমি একটি ইতরের দেশে থাকি
যে দেশের বুদ্ধিজীবী অধ্যুষিত সরকার
শীতের ইথারের মধ্যে
গরিব মানুষের ঘর ভেঙে দেয়।’’
(ইতরের দেশ / রাতের সার্কাস)
বস্তুত বাংলা সাহিত্যে নিজের অবস্থানকে খুব স্পষ্ট করেই ঘোষণা করে গিয়েছেন নবারুণ ৷
‘হঠকারী, বেহিসেবী, গোল্লায় যাওয়া খতরনাক
বেপাত্তা, হাঘরে, ফেরার, স্বপ্নচারী —
এদের পাশ থেকে আমাকে
কোনোদিনও তুমি সরাতে পারবে না।’
(ব্যক্তিগত ম্যানিফেস্টো / বুলেটপ্রুফ কবিতা)
গেরস্ত বাঙালির আটপৌরে জীবনযাত্রায় কোনওদিনই খাপ খাননি নবারুণ, নিজেকে খাপ খাওয়াতেও চাননি। বাংলা সাহিত্যের মাংস-ভাত, দিবানিদ্রার সুখী দুপুরবেলায় অম্বলের চোঁয়া ঢেঁকুরের মতোই অস্বস্তি দিয়ে চিরকাল বাঙালিকে খোঁচা দেবেন নবারুণ। তাঁর সাহিত্যের তৃতীয় পরিসরের সার্থকতা সেটুকুই।
(লেখাটি অমিত দাশুগুপ্ত, তপন সেন, শান্তনু ভট্টাচার্য ও বাবুনি মজুমদার সম্পাদিত ‘নবান্ন’, ২৫ বর্ষ, ৩য়-৪র্থ, বইমেলা সংখ্যা ১৪২১ (২০১৫) পত্রিকায় নবারুণ ভট্টাচার্য স্মরণ অংশে পূর্ব-প্রকাশিত)
পূর্ব-প্রকাশিত বলে বিশেষ পরিমার্জনা না করেই লেখাটি রাখা হল।