
সিনেমায় পুরোনো আমলের হিন্দু বাড়ি যেরকম দেখায় সেরকম একটা দোতালা বাড়ি আমাদের। সত্যি সত্যি একবার একটা সিনেমার শুটিং হয়েছিল আমাদের বাড়িতে। আমি তখন খুব ছোট। ক্লাশ ফোরে পড়ি। সেই সিনেমাটাও ছিল একটা হিন্দু জমিদারকে নিয়ে। তখনো অবশ্য আমি জানতাম না, আমাদের বাড়িটা আসলেই একটা “হিন্দু বাড়ি”! আরো পরে জেনেছি, এই বাড়িতেই আমার মা এক সময় ঝিয়ের কাজ করতেন। আমার বাবা এ বাড়ির কেয়ারটেকারের ছিলেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের বছর আমাদের কপাল খুলে যায়। আমার বাবার মনিব শ্রী মণীশ কুমার রায় তার পুরো পরিবারকে ইন্ডিয়াতে পাঠিয়ে বিশ্বস্ত কেয়ারটেকার গোলাম রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি পাহাড়ায় থেকে যান। গোলাম রহমান আর তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী নিচতলার একটা ঘরে থাকত। সেই যুদ্ধের অনিশ্চিত দিনগুলোতে একদিন মণীশ বাবু হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান। গোলাম রহমান কোত্থেকে শুনলেন কর্তাবাবু “রায়টে প্রাণ ত্যাগ করেছেন”! সেই ভরা পাকিস্তান আমলে গোলাম রহমানের তারপর থেকে দিন ফিরতে শুরু করে। ছয় বছর পর ফের যখন দুই পাকিস্তানে যুদ্ধ লেগে গেলো তখনি আসলে গোলাম রহমানের প্রকৃত দিন বদলের শুরু। আমার বাবা রাজাকার বা শান্তি কমিটির লোক ছিলেন না। যুদ্ধের বছর তিনি ব্যবসা করেছেন। হিন্দু বাড়িঘর দখল করেছেন।… না, এটাও ভুল বলা হলো, বাবা দখলদারদের কাছ থেকে জলের দামে সেটা কিনে নিয়েছেন শুধু। এসব করতে যেয়ে রাজাকার থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সবাইকেই বখরা দিয়েছেন। তিনি নিজে কোনদিন কোন বাড়ি-ঘর লুট করতে যাননি। কেউ এসে প্রস্তাব দিয়েছে একটা হিন্দু বাড়ি আছে, বাবা গিয়ে তার দখল নিয়েছেন। এর জন্য তাকে কত জায়গায় দেনদরবার করতে হয়েছে। একবার মুক্তিযোদ্ধাদের একটা দল বাবাকে ধরে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। কয়েক বস্তা চাল-ডাল আর আনাজপাতির বিনিময়ে বাবাকে ছেড়ে দেয়। বাবা হয়ত বুঝাতে পেরেছিলেন তিনি পাকিস্তানের পক্ষে না। কপালটা এত ভাল যে নভেম্বর মাসের দিকে বাবাকে রাজাকার ক্যাম্পেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানেও ভাল কিছু বখরা দিয়ে ছাড়া পেয়েছিলেন। আজ যে বাবাকে স্বাধীনতা দিবসের দিনে আমাদের পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নিয়ে যায় এটা রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাবার জন্যই। যদি রাজাকাররা যুদ্ধে জিতে যেতো তাহলেও বাবাকে তাদের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে যেতো মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাবার ঘটনায়। বাবার কপালটা তাই ফাটাফাটি রকমের ভাল। যুদ্ধে যারাই জিতুক বাবা ঠিক তাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারতো…।
বাবা-মার সঙ্গমের ফলে যে সন্তান জন্ম নেয়- এই সত্য জেনে বালক বয়েসে যেরকম ধাক্কা খেয়েছিলাম, বাবা-মার প্রতি ঘৃণা জন্মেছিল, ঠিক এক বর্ষার দুপুরে স্বপন আমার মনে প্রথম আমাদের সম্পর্কে একটা ঘৃণা জন্মে দিয়েছিল। আমার পিঠাপিঠি স্বপন, চিলেকোঠায় ওর গবেষণাগার। বাড়ির পুরোনো নষ্ট রেডিও, টর্চ লাইট, ছোট্ট খেলনা মটর, এগুলো দিয়ে স্বপন যন্ত্র বানানোর গবেষণা করতো। ছুটিরদিন দুপুরবেলা স্বপন চিলেকোঠায় চলে যেতো। আমি ছিলাম ওর এসিট্যান্ট। মেঘলা দিন, বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। উঠোনো জল জমেছে। স্বপন একটা লঞ্চ বানাবে, একটা ছোট মটরের মাথায় পাখা লাগানো থাকবে। পেনসিল ব্যাটারীতে জুড়ে দিলেই মটরের পিনে লাগানো টিনের পাখাটা ভন ভন করে ঘুরতে থাকে। এখন একটা পাতলা টিনের নৌকার মত কিছু বানাতে পারলে, আর মটরটা সেটার পিছনে কায়দা মত বসিয়ে দিতে পারলেই তো হয়ে গেলো ইঞ্জিনের নৌকা! পুরোনো একটা টাঙ্ক পড়েছিল চিলেকোঠায়। ভেতরে রাজ্যের পুরোনো বাতিল জিনিস। আমরা দুজন ডালাটা খুলে জিনিসপত্র ঘাটছি। স্বপন তখন হঠাৎ থেমে গিয়ে আমাকে ওর হাতে ধরা একটা পিতলের প্রদীপ দেখিয়ে বলল, এটা কি বলতো? স্বপনের মুখে মিটিমিটি হাসি। টাঙ্কের ভেতর থেকে স্বপন ছোট ছোট পেতলের খেলনা থালা-বাটি বের করে আনলো।
-এ দিয়ে তো মেয়েরা খেলে! বললাম আমি। এগুলো এখানে আসলো কোত্থেকে?
স্বপন বলল, এগুলো খেলনা না গাধা! এগুলো হিন্দুদের পুজায় লাগে।
-হিন্দুদের জিনিস আমাদের বাড়িতে কেন? ভুরু কুঁচকে গেলো আমার।
স্বপন আমার চেয়ে মাত্র এক বছরের বড় হলেও ও আমার চেয়ে অনেক বেশি জানে। ওর পেটে পেটে অনেক কথা। আমরা দুজনেই ক্লাশ এইটে পড়ি, অথচ ও এখনি দিব্যি সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে স্কুলে যায়! কি অবলীলায় পানের দোকানে গিয়ে সিগারেট চায়! আমি কুঁকড়ে দূরে সরে যাই। আমার খালি ভয় বাড়ির কেউ যদি দেখে ফেলে? স্বপনের এসবে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। আমাদের মা নেই। বড় ভাই কলেজে উঠে নিজের জগত নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের শাসন-টাসনে মন নেই। বাবার চোখ এড়াতে পারলেই হলো। ডানপিটে বলে বাবার কাছে প্রচুর মারও খায় স্বপন। বাবা একদিন বেল্ট দিয়ে এমন মারটা মারলো ওকে! কিন্তু দিনকে দিন স্বপন যেন কাউকেই আর পরোয়া করতে চায় না। আমাকে এখন পিতলের একটা ঘন্টা দেখিয়ে বলল, এটা আমাদের বাড়ি তোকে কে বলল? বলেই স্বপন বজ্জাতের মত হাসলো।
-আমাদের না? অবিশ্বাস নিয়ে তাকালাম ওর দিকে। স্বপনকে ঘৃণা হচ্ছিল আমার। আর খুব ভয় হচ্ছিল…
-তুই মণীশ রায়ের নাম শুনেছিস?
-না।
-এটা মণীশ রায়ের বাড়ি। বাবা ওদের দারোয়ান ছিল।
-তোকে এসব কে বলেছে?
-আহ-হা, আমি সব জানি!
হ্যা, এখন আমরা সব জানি। বাচ্চাদের একটা বয়স পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সব কিছু লুকিয়ে রাখা হয়। মনিশ রায়ও সেরকম একটা নাম ছিল। তবে পারিবারিকভাবে মণীশ ায়ের বিষয়টার একটা ব্যাখ্যা আমাদের আছে। বাবা মণীশ রায়ের কাছ থেকে এই বাড়িটা কিনে নিয়েছিলেন…। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী, এলাকাবাসী নিন্দুকরা আড়ালে বলেন, একটা হিন্দু বাড়ি দখল করেছিল বাবা…।
স্বপন মারা যাবার একমাস আগে অনেক চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। আর কি রকম পাগলের মত কথা বলত। একদিন আমাকে বলল- মণীশ জ্যাঠা এই বাড়িতেই আছেন-জানিস!
-এই বাড়িতে?
-হুঁ!
-কে বলল?
-রাতের বেলা ছাদে মণীশ জ্যাঠা খড়ম পায়ে পায়চারী করে! আমি নিজের কানে শুনেছি!
-ওটা যে মণীশ জ্যাঠা তোমাকে কে বলল?
-আমি ছাদে উঠে জ্যাঠাকে নিজের চোখে দেখেছি!
ভয়ে আমি ঢোগ গিললাম!
-তুমি মণীশ জ্যাঠার ভূত দেখেছো!
-কিন্তু মণীশ জ্যাঠার ভূতটা কেন এই বাড়ির মধ্যে ঘুরঘুর করবে বলতো? উনি তো রায়টের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। মুসলমানরা ওনাকে খুন করেছিল।
-তাহলে এই বাড়িতে কেন?
-সেটাই তো! আমাকে এটা বের করতেই হবে মণীশ জ্যাঠা ভূত হয়ে কেন এই বাড়ির মায়া ছাড়তে পারছেন না…
স্বপন বলার পর থেকে আমিও কোন কোন রাতে ছাদের উপর খড়মের শব্দ শুনতে পেতে শুরু করে দিলাম। যেন কেউ ধীর-শান্তভাবে ছাদের এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করছে। আমি ভয়ে কাঁথায় মাথা ঢেকে কুঁকড়ে যাই। স্বপন ওর ঘর থেকে দৌড়ে এসে বলে, ছাদে যাবি?
-নাহ্!
-চল, আড়াল থেকে মণীশ জ্যাঠাকে দেখবি।
-নাহ্!
আমরা তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের ছাদ থেকে বুড়িগঙ্গা দেখা যায়। অনেককাল আগে ছাদের মধ্যে যে তুলসি মঞ্চটা ছিল, এখন সেটা ক্ষয়ে ক্ষয়ে আমাদের বসবার জায়গা হয়ে গেছে। স্বপন একটা ফটোগ্রাফ দেখালো আমাকে। হলদেটে সাদাকালো একটা ছবি। ধুতি-পাঞ্জাবী পরনে একজন বয়স্ক মানুষ ক্যামেরার দিকে অস্বস্তি নিয়ে চেয়ে আছেন। স্বপন বলল, মণীশ জ্যাঠা।
-তুমি তাকে জ্যাঠা বলো কেন?
-বাবা উনাকে দাদা বলতো যে!
-স্বপন তুমি এসব নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দাও। কি লাভ?
-মাথার মধ্যে একটা রহস্য ঢুকে গেছেরে…। এর কূল-কিনারা না করে আমি শান্তি পাবো না…।
-কিসের রহস্য?
-তোকে এখন কিছু বলবো না। সবটা আগে বের করি, তারপর…
স্বপন মারা যাবার এক সাপ্তাহ আগে চাপা একটা উত্তেজন নিয়ে আমাকে বলল, আমাদের একতলার কোণার ঘরটা সব সময় তালা মারা থাকে নারে?
-হ্যাঁ।
-বাবা ওঘরে একা একা দরজা দিয়ে বসে থাকে কেন?
-আমি কি জানি?
-বাবা যে পীর সাহেরের মুরিদ তিনি সেই ঘরে একদিন জিকির-টিকির করলেন খুব- মনে আছে?
-হুঁ।
-আমার মনে হয় বাবাও এ বাড়িতে মণীশ জ্যাঠাকে দেখতে পায়, শুধু আমরাই না।
মণীশ জ্যাঠাকে যে আমিও দেখতে শুরু করেছি সেটা স্বপন জানে। আমাদের বাড়ির পিছনের বুনো ঝোপঝাড়ে এক মেঘলা দিনের নীলচে সন্ধ্যায় প্রথম মণীশ জ্যাঠাকে দেখতে পাই আমি। যেন বুড়ো মানুষটা অনিচ্ছাকৃত আমার সামনে পড়ে গেছেন-এমনই একটা ভাব, বিব্রত একটা শারীরিক ভঙ্গি করে ঝোপের আড়ালে চলে গেলেন। আমি ভয়ে জমে গিয়েছিলাম। স্বপনকে ঘটনাটা বলতেই স্বপন বলল, জ্যাঠাকে ভয় পাস কেন, উনি কোন ক্ষতি করবেন না। আমি তো উনার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি!
-তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে! একটা মৃত মানুষের সঙ্গে কথা বলবে?
-উনারকে জিজ্ঞেস করবো, বাবা তাকে খুন করে একতলার কোণার ঘরের মেঝেতে পুতে রাখার সময় আর কে কে সেখানে ছিল! আমার মা কি এসব ঘটনা জানতো? এ ঘটনার দ্বিতীয় সাক্ষি কে?
-বাবা মণীশ জ্যাঠাকে ঘরের মধ্যে খুন করে পুঁতে রেখেছে!
-হ্যাঁ, এই জন্যই মণীশ জ্যাঠা এ বাড়ির মায়া ছাড়তে পারছেন না।
-তোমাকে এসব কে বলল?
-আমি শুনেছি।
-কার কাছে?
-বাবা একতলার ঘরে দরজা বন্ধ করে কার সঙ্গে যেন কথা বলছিল। আমি কান পেতে শুনলাম…
-কার সাথে কথা বলছিল?
-মণীশ জ্যাঠার সাথে…
-তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে…
-বাবা গালাগালি করছিল…
-আমি বিশ্বাস করি না…
-বাবা দাঁতে দাঁত চেপে বলছিল, তোকে আবার পুঁতে রাখবো…কেন এই ঘর থেকে বের হলি… কি চাস তুই…
স্বপন আত্মহত্যা করল যেদিন সেদিন বাবা একটুও চোখের পানি ফেলল না। কিন্তু সেদিন থেকেই একদম বুড়ো হয়ে গেলো! সব কিছু থেকে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিলেন। কারোর সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলাই বন্ধ করে দিলো। স্বপন যে কিছু একটা করতে যাচ্ছে বুঝতে পারছিলাম। ওর চোখ দুটো অস্থিরভাবে সব সময় ঘুরতে দেখতাম। ওর চাউনির মধ্যে একটা বুনো-পাগলাটে দৃষ্টি এসে গিয়েছিল। কিন্তু কখনো আত্মহত্যা করতে পারে ভাবিনি। স্বপন এভাবে চলে যাবার পর আমার জীবনে বড় একটা পরিবর্তন আসে। আমি একদম নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি। স্বপন আমার ভাই নয়, যেন বন্ধু ছিল। ওর এই অস্বাভাবিক মৃত্যু, এর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক অতীতের একটা যোগসূত্র আছে- যা শুধু আমিই জানি- এসব আমাকে অন্যরকম এক বাস্তবতায় নিয়ে ফেলে। মণীশ জ্যাঠাকে সেদিন থেকে আমিও একদম ভয় পাই না। তার খড়মের শব্দ অনেক নির্ঘুম রাতে শুনতে শুনতে রাত ভোর করে দেই। বাড়ির পিছনের ঝোপছঝারে আজো মণীশ জ্যাঠার বিব্রত চাউনি, মিলিয়ে যাওয়া এখন আর কোন গা ছমছমে বিষয় নয়। বরং সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে প্রায় শুনি বাবা চেঁচাচ্ছেন, শুয়োরের বাচ্চা! একদম একশ হাত মাটির নিচে পুঁতে রাখবো! আর বের হতে পারবি না!...
বাবা একদিন মরে পরে রইলেন চেয়ার মধ্যে। যে কাঠের চেয়ারটায় রোজ বসে থাকতেন বারান্দা, একদিন দেখা গেলো মাথাটা হেলে আছে চেয়ারের কাধে, মুখ দিয়ে ফেনা গড়াচ্ছে…। খুব বড় আয়োজন করে বাবার কুলখানি করলেন বড় ভাই। আমাদের ডালডা আর তেলের কারখানাটা বড় ভাইই চালান। ভাবী আমাদের এখানে থাকতে চান না বলে উত্তরায় ফ্ল্যাট কিনে ভাই-ভাবী সেখানেই থাকেন। এই বাড়িতে এখন আমি একা। পুরো একটা বাড়িতে একা থাকতে আমার একটুও একা লাগে না। কেন লাগে না জানি না। স্বপন যে ঘরটাতে ফাঁস দিয়েছিল সেঘরটা তালা দেয়া থাকে। মাঝে মাঝে খুলে ভেতরে ঢুকি। চেষ্টা করি স্বপনের কোন অস্তিত্ব অনুভব করতে। আজ ২২ বছর স্বপন নেই! মণীশ জ্যাঠার যেমন বয়স আটকে আছে মহাকালের ফ্রেমে, স্বপনও সদ্য যৌবনের চেহারা নিয়ে এ্যালবামে আটকে আছে। কি অদ্ভূত, মণীশ জ্যাঠা এ বাড়ির মায়া আজো কাটাতে পারলেন না কিন্তু স্বপনকে কতদিন প্রত্যাশা করেছি শুধু একবার দেখবো…। কিন্তু স্বপন যে দূর কোন দেশের অধিবাসী। স্বপন চলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি…।
এক ছুটিরদিন বিকেলে বড় ভাই এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। ওর লাল ট্যাক্সিটা গেইটের বাইরে হর্ন দিচ্ছিল। কাজের লোকটা গেইট খুলে দিলো। আমি দোতালার বারান্দায় রেলিংয়ে ভর দিয়ে ওকে আসতে দেখলাম। বারান্দাতে দুজন বসলাম। ও আমার শরীর-স্বাস্থ্যের খবর নিলো। গেল মাসেই হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছি ও সেটা জানে। এটা-সেটা আবল-তাবল নিয়ে আমার কথা বললাম। চা খেলাম। তারপর দুজনেই হাই তুলতে লাগলাম। চলে যাবার আগে হঠাৎ মনে পড়ে গেছে এরকম একটা ভাব করে বড় ভাই বলল, বুঝলি, বাড়িটা একটা কোম্পানিকে দিয়ে দিলাম। ওরা এপার্টমেন্ট করবে এটাকে…।
-কোন বাড়িটা?
-এটাকে। ওদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে আমরা দুটো করে ফ্ল্যাট পাবো আর…
-এই বাড়ি ভেঙ্গে ফেলবে?
-হ্যা, ভেঙ্গে একদম নতুন আধুনিক ফ্ল্যাটবাড়ি হবে!
-না…
-কি, না?
-এ বাড়ি ভাঙ্গা যাবে না…
-বুড়োদের মত কথা বলছিস দেখি…
-যেমন আছে তেমন থাকতে দাও।
-তুই বললেই হলো!...জানিস কত লাভ হবে আমাদের?
-পুরো বাড়িটাই খুড়ে ফেলবে ওরা?
-তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!
আমার মাথার মধ্যে কেউ যেন খড়ম পায়ে অস্থির পায়চারী করছে। মাথার দু’পাশটা টিপে ধরলাম।
-তোর শরীর খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো?
-না, আমি ঠিক আছি। তুমি যাও।
-তুই একটা ফ্ল্যাট পাবি। আর…
-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি যাও।
-আসল কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম…
-কিছু বলার লাগবে না। তুমি যা বলবে তাই হবে সে তো আমি জানিই।
-আরে তুই আমাকে দোষ দিচ্ছি নাকি? কি ভাবছিস, ঠকাচ্ছি তোকে? একটা ফ্ল্যাট পাবি আর নগদ…
-প্লিজ ভাইয়া তুমি যাও।
-ঠিক আছে যাচ্ছি, শোন, সামনের মাসে ওরা কাজে হাত দিবে। ততদিন তুই উত্তরায় আমার কাছে গিয়ে থাকবি। যদি যেতে না চাস, তাহলে কাছেই কোথাও বাসা ভাড়া করে দিবো। যতদিন ফ্ল্যাট না হচ্ছে ততদিন সেখানেই থাকবি…।
লোভীটা ভাবছে শুধু এইসব…। আমি জানি আমার কোন রকম আপত্তি আর টিকবে না। আমি আধপাগলা, নেশাটেশা করি…। সবাই ওর কথাই মানবে।
বড় ভাই চলে গেলো। বিকেল পড়ে আসছে। চারদিক ফের নিঃস্তব্ধ। বারান্দায় বসে বসে ভাবছি, এভাবে এই বাড়িতে এই হয়ত শেষবার…।
যে রাতে আমার ঘুম হয় না সেসব রাতে মণীশ জ্যাঠার খড়মের শব্দ ছাদে শোনা যায়। কিন্তু আজ কি হলো? মণীশ জ্যাঠার কোন সাড়াশব্দ নেই! বিছানায় শুয়ে শুয়ে পিঠ ব্যথা হয়ে গেলো। পায়ে সেন্ডেল গলিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠলাম। সাদা জোৎস্নায় পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে। এখন আর ছাদ থেকে বুড়িগঙ্গা দেখা যায় না। কিন্তু ঐদিকের ছাদের রেলিংয়ে বিপদজনকভাবে মণীশ জ্যাঠা শুয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছেন। ওর পা নাচছে। বুড়ো আজ খুব খুশি।…
nita | unkwn.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৪৮86722
PM | unkwn.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৪১86723
ও | unkwn.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৫ ০৭:২৫86724
ও | unkwn.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৫ ০৭:৩৮86725
Atoz | unkwn.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৫ ০৮:২৫86726
অনির্বাণ | unkwn.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৫ ০৯:২৬86727
sswarnendu | unkwn.***.*** | ১১ আগস্ট ২০১৫ ১০:০২86728
রাজীব | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০১:৩০86729
নিশান | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০১:৫৬86730
byaang | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০২:২২86731
ম | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০২:২৮86732
Arpan | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০২:৩৩86733
manas bhowmik | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০৩:২১86738
সুষুপ্ত পাঠক | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৫৯86734
PM | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০৪:১২86735
রৌহিন | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৪১86739
shakyomuni | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৫৩86736
চুনি ব্যানার্জ্জী | unkwn.***.*** | ১২ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৫৬86737
I | unkwn.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৩৮86743
Arindam | unkwn.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৩৭86740
de | unkwn.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৪৬86741
AP | unkwn.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৭:০৩86742
Ekak | unkwn.***.*** | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৫৮86744
দ | unkwn.***.*** | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৭:০৫86745
salil | unkwn.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৩৫86746
ranjan roy | unkwn.***.*** | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:২৪86747
আরণ্যক রাখাল | unkwn.***.*** | ২৩ আগস্ট ২০১৫ ১০:৫৭86748
h | unkwn.***.*** | ২৪ আগস্ট ২০১৫ ০২:৩৯86749
Santanu Kumar das | unkwn.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১২:৩৪86750