এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জাল

    সুষুপ্ত পাঠক লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ জুন ২০২৪ | ২৪৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অনেক বিয়ার গেলা হয়েছিল। ফলে যা হয় সবাই খুব হাসছিলাম। হাসতে হাসতে মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। একটা পুরোনো বাড়ির অন্ধকাচ্ছন্ন ঘরে বিয়ারের আড্ডা। আমি ছাড়া বাকীদের তেমন চিনি না। একজন ছোলা ব্যবসায়ী ছিলেন এবছর যিনি ছোলা ডাবল দামে বিক্রি করে লাল হয়ে গেছেন। একজন মানুষের মাংস বিক্রেতা, ডাক্তার, প্রকৌশলী আর রাজনীতিবিদ। আলাদা আলাদা টেবিলে বিয়ার খেতে খেতে কি করে যেন একটা টেবিলে কখন এসে গেছি জানি না। দেখি সবাই ইয়ার দোস্তের মত হাসছি। ঠাট্টা করছি। অশ্লিল গালি দিচ্ছি। পায়ের জুতো খুলে মারার ভান করছি। সবই ঠাট্টার ছলে।

    আমাদের মাঝে একজন লেখক আছেন। আমাকে দেখিয়ে রাজনীতিবিদ বললেন অন্যদের। তার চোখে কী রকম একটা বজ্জাতি ছিল। ছোলা ব্যবসায়ী ঠোট দিয়ে ফড়ফড় শব্দ করল বাতাস ছেড়ে অবজ্ঞা প্রকাশ করতে।

    মানুষের মাংস বিক্রেতা তখন বলল, তাহলে একটা খেলা হয়ে যাক। পরীক্ষা হয়ে যাবে কে কাপুরুষ। কার কত সাহস আছে।

    সবাই হাসতে লাগল। আমিও। তবু ওরা পাঁচজন যেন কোথাও কোনভাবে একটা দলে। আমি একা। এই প্রথম আমি বুঝতে পারলাম। ওরা পূর্ব থেকেই একজোট। আমি জানতাম না।

    আমি রাজি। ডাক্তার বলল।

    আমিও। প্রকৌশলী হাত তুলে বলল।

    এসব তো আমাদের প্রাক্টিস আছে। জীবন নিয়ে জুয়া। আমি রাজি। রাজনীতিবিদ বললেন।

    ছোলা ব্যবসায়ী খুবই কনফিডেন্সের সঙ্গে বলল, আমি রাজি।

    সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। আমার না করার কোন উপায় নেই। বললাম, রাজি আছি...

    তখন রাজনীতিবিদ তার কোমরে গোঁজা একটা দেশী পিস্তল বের করে টেবিলে রাখলেন। এখানে মাত্র একটা গুলি আছে। চেম্বারটা ঘুরিয়ে দিবো লটারির মত। যার কপালে থাকবে তার মাথায় গিয়ে ঢুকবে গুলিটা। এর মানে হচ্ছে আমাদের মধ্যে একজন আজ নিশ্চিত মারা যাচ্ছে!

    পাঁচজন শরীর দুলিয়ে হাসতে লাগলা। কেবল আমি মুখের ঘাম মুছতে লাগলাম। তারা এমন কনফিডেন্সের সঙ্গে হাসছিল যে আমি ভড়কে গেলাম।

    তাহলে প্রথমে লেখককে দিয়েই শুরু হোক! মানুষের মাংস বিক্রেতা প্রস্তাব রাখলো। ইয়েস ইয়েস বলে বাকী চারজন পুরো ঘরটা কাঁপিয়ে দিলো। যেন কাঙ্খিত কারোর ফাঁসির রায়ে তারা উল্লাস করছে!

    আমার নেশা কেটে গিয়েছিল। ঘামছিলাম। সবাই আমার দিকে চেয়ে দেখছিল কৌতুকের চোখে। টেবিল থেকে পিস্তলটা তুলে নিলাম। মাথার বাম পাশে পিস্তলের নল ঠেকিয়ে একটু সময় নিলাম। ঘরে পিনপতন নিরবতা। কেবল কয়েকটা ধূর্ত নিঃশ্বাসের উঠানামা শুনতে পাচ্ছিলাম। শেষবারের মত কিছু ভাবতে চাইলাম। আর  মাত্র একটা সেকেন্ড, এরপর আমি বেঁচে থাকবো নয়ত মারা যাবো। এরকমই একটা অনিশ্চিত জীবন সবাই কাটাই আজ যেন তার আস্তর ছাড়া নাট্যরূপ চিত্রায়িত হচ্ছে। নাহ্, শেষ সময়ে এসে এমন কিছু মনে এলো না, এমন কিছু যা চেতনা চিরতরে নিভে যাবার আগে আমি ভাবতে ভালো বাসব। কেবল বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না। তবু সেই বেঁচে থাকার জন্যই এখন আমাকে টিগার চাপতে হবে। ভাগ্যচক্রে পার পেয়ে গেলে আমার জীবন নিশ্চিত। সেই জীবনের লোভেই আমি টিগার চেপে দিলাম...।

    খট্ করে একটা শব্দ হলো। বুলেট বের হয়নি! পিস্তল টেবিলে রেখে আমি হাঁফ ছেড়ে চেয়ারে পিঠ এলিয়ে দিলাম।

    তখন ঘর জুড়ো পাঁচজনের অট্টহাসিতে সরগরম হয়ে গেলো। তারা হাসছে। যেন খুব মজার একটা নাটক দেখছে তারা।

    ফূর্তির সঙ্গে মানুষের মাংস বিক্রেতা পিস্তল হাতে নিয়ে বলল, এবার আমার পালা...। একটুও দেরি না করে সে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে টিগার চেপে দিলো। খুট্ করে শব্দ হলো। বুলেট বের হয়নি।

    হাসি আর কারোর থামছে না। রাজনীতিবিদ পিস্তল হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে টিগার চেপে দিলো।  পিস্তল টেবিলে রেখে দিলো হাসতে হাসতে। যেন তারা এই খেলায় অভ্যস্ত। যেন তারা জানে এরপর কি হবে। তেমন করে ডাক্তার প্রকৌশলী পিস্তল নিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে টিগার চেযে দিলো আর অবজ্ঞায় পিস্তলটা টেবিলে শব্দ করে রাখছিল খিকখিক করে হাসতে হাসতে।

    ছোলা বিক্রেতা ছয় নাম্বারে। বেচারার নিশ্চিত মৃত্যু। অবধারিতভাবে এটা এখন হবেই। চেম্বার ঘুরে ঘুরে এবার একমাত্র বুলেটটি তার মাথায় বিঁধতে রেডি হয়ে আছে। ছোলা বিক্রেতার সে দিকে কোন হুঁশ নেই। সে অন্যদের গায়ের উপর হাসতে হাসতে পড়ছিল। যেন মৃত্যু খুবই কৌতুকর একটা বিষয়।

    ছোলা বিক্রেতা পিস্তল হাতে তুলে নিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে টিগার চেপে দিলো।...

    খট্...

    কোন বুলেট বের হলো না। ঘর কাঁপিয়ে ওরা পাঁচজন হাসতে লাগলো আমার দিকে চেয়ে।

    অসম্ভব এটা হতেই পারে না! চিত্কার করে উঠলাম আমি।

    খুব সম্ভব। রাজনীতিবিদ বললেন। আমাদের দেশী অস্ত্রে এরকম ঘটনা হরহামেশাই ঘটে।
    কিন্তু... বাক্য শেষ করতে পারলাম না। কিছু ভেবে পেলাম না কি বলবো।

    কিন্তু আবার কী? মানুষের মাংস বিক্রেতা বলল, খেলার নিয়ম অনুযায়ী এবার আপনার পালা। প্রথমবার বেঁচে গেছেন বলে খেলা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এটা চলতেই থাকবে যতক্ষণ না এখান থেকে একটা বুলেট বের হচ্ছে!

    কিন্তু এটা জোচ্চুরি! বললাম আমি। আমি ধরে ফেলেছি! সব চালাকি আমি ধরে ফেলেছি! এই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এই মানুষের মাংস ব্যবসায়ী, এই ছোলা ব্যবসায়ী, এই লিডার সবাই একটা সিন্ডিকেট! জোচ্চোর! সব জোচ্চোর!

    বেশ তাহলে খেলা ছেড়ে আপনি উঠে যান। চলে যান এখান থেকে...। রাজনীতিবিদ বললেন চিবিয়ে চিবিয়ে।

    হতাশায় চারদিক চেয়ে দেখলাম। সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি জানি সব পথ বন্ধ হয়ে দুটো পথই এখন আমার জন্য খোলা। হয় খেলা থেকে উঠে গিয়ে কাপুরুষ ভীতু হিসেবে সকলের চোখে বেঁচে থাকা। না হয় মৃত্যু। এর বাইরে আর কোন পথ তারা খোলা রাখেনি। তারা উল্লসিত এর যে কোন একটি আমাকে করে দেখাতে হবেই! এটাই আমার নিয়তি। এরকম নিয়তি পিস্তলের চেম্বারে অনেক আগেই তারা আমার জন্য সেট করে রেখেছে। তাদের চক্রান্ত আমি ধরে ফেলেছি...
     
    লেখক:সুষুপ্ত পাঠক

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Hasina Rahman | ০২ জুন ২০২৪ ১০:৩৮532591
  • এভাবেই আমাদের জীবন বন্দী এইসব সিন্ডিকেটের জিম্মায়
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন