ডাক্তার চশমাটা নাকের ওপর ঠেলে বললেন, "পেটে ব্যথা তো হবেই। এতদিনের কুপথ্য, অত্যাচার যাবে কোথায়? তবে একবার যখন আমার কাছে এসে পড়েচো, আর ভয় নেই। দু দাগ ওসুদ দিয়ে দোব, অজীর্ণ-অম্বল দু-হপ্তায় বাপ বাপ বলে পালাবার পথ পাবে না। নাও, হাঁ করো। চোক বোজো আর নাক টেপো। নাও, এবার সোনামুক করে তেতো ওসুদটা কোঁৎ করে গিলে ফ্যালো দিকি।"
এক হপ্তা পর আবার গেলুম ডাক্তারের কাছে। পেটে ব্যথা তো কমেই নি, উল্টে মনে হচ্ছে চুল পড়ে যাচ্ছে। ডাক্তার নাড়ী টিপে চোখ বুজে গম্ভীর ভাবে বার দুয়েক মাথা নাড়ালেন। তারপর গোটাকতক হুম্, হুম্ করলেন। তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন, "রোগখানা তো সহজ বাধাও নি হে। তবে চিন্তা কোরো নে কো, চুল উঠছে মানে ওসুদ ধরেছে। এরপর যে চুল উঠবে, সেই চুল হবে ঘন আর রেশম কালো। এটা আসলে নতুন চুল ওঠার ওসুদ। চুল পড়ে নতুন চুল উঠলে পেটে ব্যথা নিজেই বন্ধ হয়ে যাবে। তুমি ওসুদ বন্ধ কোরো না যেন। এক কাপ চা খাবে?"
অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, চুল পড়ার সাথে পেটে ব্যথার কী সম্পর্ক ? ডাক্তার বলল, "সম্পক্ক নেই বললে হবে? ধরো সিয়াচেনে বরপ পড়ল, তাতে দিল্লিতে ঠাণ্ডা হল, তাতে কুয়াশায় ট্রেন বেলাইন হয়ে গেল, তাতে বিকাশের নাগপুর পৌঁছতে দেরি হয়ে গেল। তাওলে? হল সম্পক্ক?"
মাথা চুলকোতে চুলকোতে বাড়ি চলে এলাম।
তার দু’হপ্তা পরের কথা। এই দু’হপ্তায় আমার শরীর আদ্দেক হয়ে গেছে। মাথায় আর চুল বিশেষ অবশিষ্ট নেই। তার মধ্যে মুখে কী সব গুড়িগুড়ি বেরোনো শুরু হয়েছে। আমার সুহৃদরা ডাক্তার পাল্টাতে বলছে। কেউ কেউ বলছে একটা সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিতে। কথাটা ডাক্তারকে বলতেই ওনার চোখদুটো ছলোছলো হয়ে গেল। কান্নাভেজা গলায় বললেন, "অন্তত আর দুটো হপ্তা দাও আমায়?" ওই কাঁদোকাঁদো মুখ দেখে আমার মনে ভদ্রলোকের জন্য মায়া হল। ভাবলাম, যাক গে দুটো সপ্তাহর তো ব্যপার। ডাক্তার বলল, "রেডিও শুনবে?"
তার পরের সপ্তাহে অবস্থা যখন আরো খারাপের দিকে গড়াল, তখন ওনার চেম্বারে গিয়ে আর ওনার দেখা পেলাম না। ওনার সঙ্গী কম্পাউন্ডার সব শুনে বললেন, "ওই ওষুধটা তো পেট খারাপের ছিলই না।"
-তবে কি চুল গজানোর ছিল?