ক'দিন বেশ শরীর খারাপ ছিলো আমার। মেয়েরও। জ্বরভাব তো ছিলোই, ছিলো আরো নানাবিধ উপসর্গ। করোনা হল না তো!
এখন জ্বর কাশি হলেই মস্তিষ্ক এবং মন জুড়ে করোনার আতঙ্ক। যেকোনো প্রাইভেট হসপিটালে কোভিড টেস্টের খরচ ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা। কোথাও বা ৫০০০ টাকা। মানুষ মরিয়া হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে ছুটছেন বটে তবে কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন ইউনিটে খুব দায়িত্ব সহকারে কোভিড টেস্ট,ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার টেস্ট করা হচ্ছে বিনা খরচায়। সুগার টেস্টও হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে কোভিড টেস্টটাই জরুরি মোকাবিলার মতো করা হচ্ছে। জ্বর- সর্দি-কাশি হলে কোভিড টেস্ট জরুরি হয়ে পড়ছে। কোভিড যে হয়নি---সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে তারপর যে রোগটা হয়েছে তার উপযুক্ত চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়াটাই কাম্য। কোভিড পজিটিভ হলে বাড়িতে আলাদা থাকা এবং ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ মতো চলা উচিত।
বাড়িতে একটার বেশি ঘর না থাকলে রুগীর পরিজনদের সেফ হোমে থাকার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে কলকাতা পৌরসভা যেটার ব্যবস্থা আছে আনন্দপুরে এবং গীতাঞ্জলী স্টেডিয়ামে। রাজারহাটে আছে কোয়ারেন্টিন সেন্টার। সব কিন্তু একেবারে নিখরচায়। ধরুন বস্তির কারো কোভিড পজিটিভ ধরা পড়লো, তাঁকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হল রাজারহাটে। তারপর তিনি যখন একটু সুস্থ হলেন তখন তাঁকে সেফ হোমে পাঠানো হল। যেহেতু বস্তি অঞ্চলে দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে,তাই ওনার বাড়ির লোকজনকেও পরীক্ষানিরীক্ষার পর সেফহোমে রাখা হয়। চার পাঁচদিন পর আবার টেস্ট করিয়ে নেগেটিভ প্রমাণিত হলে তাঁদের বাড়ি রেখে আসা হয়। সেফ হোমে চারবেলা খাবারদাবারের এত সুবন্দোবস্ত,এবং চকচকে বাথরুম... এসবের মায়া ত্যাগ করে আসতে চান না তাঁরা। বলেন "আর কটাদিন থাকি না!"
নিউমার্কেট এবং কলকাতা কর্পোরেশনের নিকটেই রক্সি সিনেমা হলটা নিশ্চয় অনেকেই চেনেন। ওর সামনে দিয়ে কতোবার হেঁটে গেছেন অতীতে,যেখানে ওই সিনেমা হলটার উলটোদিকের ফুটপাতে সাব্বির ব্যাগওয়ালা বসতো নানানরকমের জুটের এবং কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে! মনে আছে? যেটাতেই হাত দিতেন, ঝাঁকড়াচুলো সাব্বির বলতো "ওনলি থ্রি হান্ড্রেড।" ওই রক্সি সিনেমা হলটা এখন কলকাতা কর্পোরেশনের স্থায়ী কোভিড টেস্টের সেন্টার। দারুণ ব্যবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। প্রত্যেক কর্মীই ভীষণ সহানুভূতি সহকারে এবং সুশৃঙ্খলভাবে নিজের নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে এই সেন্টারটার কথা জানেন না বলে গিজগিজে ভীড় নেই। আর সবচেয়ে বড়ো কথা ওই বড়ো বড়ো ঘরগুলোর কোথাও কোনো মন খারাপের ছায়া বা বিষণ্ণতা লুকিয়ে নেই। যাঁর কোভিড পজিটিভ ধরা পড়বে, তিনি ওখান থেকে ভয় নিয়ে বেরোবেন না। তাঁর মনে হবে কোয়ারেন্টিনে থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবো। আর হবেনও তাই। উচ্চবিত্তরাও কিন্তু নিশ্চিন্তে যেতে পারেন। পুরসভা,সরকারি,ঘিনঘিনে, গন্ধ,জানোয়ারের মতো ব্যবহার, ছোটলোকদের জায়গা...ওখানে গিয়ে দাঁড়ালে এসব কথা মনেই হবে না। ছুটি এবং লকডাউনের দিন ছাড়া বাকি সব দিন খোলা।
এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে কোয়ার্ডিনেটরের তত্ত্বাবধানে কোভিড টেস্ট হচ্ছে। একেক দিন একেকটা এলাকায়। এলাকার লোকজনকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে আপাতত রক্সি সিনেমা হলটা হল কোভিড টেস্টের স্থায়ী ঠিকানা।
আমি এবং আমার মেয়ে কাল ওখান থেকেই কোভিড টেস্ট করালাম। কাঠির মাথায় তুলো দিয়ে যেটা গলার মধ্যে ঢোকানো হচ্ছে,সেটা গলায় ঢুকলে ওয়াক হচ্ছে। বড়ো টাইপের ওয়াক না। ময়লার গাড়ি পাশ দিয়ে গেলে যেমন ওয়াক আসে তেমন। আর যে কাঠিটা নাকে ঢোকানো হচ্ছে... নাকে কাঠি ঢুকিয়ে হাঁচি দেওয়ার একটা বিলাসিতা আছে জানেন তো! নাকের যতদূর ঢুকলে সুড়সুড়ি টাইপের ভালো লাগে সেই অংশটা পেরিয়ে যখন কাঠি আরোও ভেতর দিকে যাচ্ছে তখন আরাম হারাম হয়ে চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। জলটা রুমালে না আঁচলের খুঁটে মুছবেন...এ কথাটা ভাবতে ভাবতে শুনবেন "হয়ে গেছে।" আমি এবং মেয়ে ওখান থেকেই কোভিড টেস্ট করিয়েছি।
আজ রিপোর্ট এসেছে। দুজনেই নেগেটিভ। আর হ্যাঁ, কলকাতা কর্পোরেশনের হয়ে এত ভালো ভালো কথা বলার জন্য আমাকে কেউ টাকা দেয়নি বা জোরজবরদস্তিও করেনি। নিজের চোখে যা দেখলাম এবং যা শুনলাম সেগুলোই ভাগ করে নিলাম আপনাদের সঙ্গে। কোভিড হয়েছে মনে হলে পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার, তার জন্য কোথায় যাব, কী করব, কতটা হয়রানি অপেক্ষা করছে, পজিটিভ এলেই বুঝি শিয়রে শমন, এনিয়ে আতঙ্কে না ভুগে নিখরচায় হাতের কাছে পরীক্ষার সুযোগটা নিয়েই ফেলুন।
Nasal swab টার নিয়েই তাই। চোখে জল না এলে ঠিক জায়গায় পৌঁছয় নি।
সাধে কি বলে "নাকের জলে, চোখের জলে?"
কিন্ত রক্সী হল কি ভেঙে গেছে
বাঃ বেশ পজিটিভ খবর। আমাদের কমপ্লেক্সের সব ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে ঘুরে ঘুরে পুরসভার কর্মীরা বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের খবর নিয়ে যাচ্ছেন। দেখলে বেশ ভাল লাগছে।