এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জল জঙ্গল you-টিউব (২)

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ জুন ২০২৫ | ২৮৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • |
    ইয়ুথ উইংস চ্যানেলে বস্তারের স্বাধীন ইউটিউবার বিকাশ (রাণু) তেওয়ারির সাক্ষাৎকারের শেষাংশ

    সঞ্চালিকা - যা হোক, আমরা ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো কোন সে বিশেষ মুহূর্ত যবে থেকে আপনি ঠিক করেন টাকাপয়সা নিয়ে খবর করার থেকে সরে এসে, এক সাংবাদিকের মতো আপনি সত্যি খবর করবেন।

    রাণু তেওয়ারি - কোন বিশেষ খবর করতে গিয়ে নয়, ছোট ছোট ঘটনা থেকে আমার মধ্যে পরিবর্তন আসে, বলে না - জীবনে একের পর এক পরিবর্তন আসে, ওসব কখনোই হয় না। হঠাৎ বদলাতে গেলে সব মুখ থুবড়ে পড়বে - বদল আসবে না। খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ কোন খবর করতে গিয়ে নয়। আমি এখনো পর্যন্ত এমন কোন খবর করিনি যা ঐতিহাসিক। শুধু কাজ করে যাচ্ছি, লোকে বলবে কোন খবর ঐতিহাসিক কোনটা নয়। দুহাজার চোদ্দ থেকে কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে আঠেরো, উনিশ কুড়ি থেকে আমার বদল এসেছে।

    সঞ্চালিকা - উনিশ কুড়ি থেকে বদল এলো আর একুশে বস্তার টকিজ শুরু। আচ্ছা, এই নকশালরা আপনাকেই শুধু ডেকে নেয় কেন ?

    রাণু তেওয়ারি – ডেকে নেয় না, এবারই প্রথম ডাকলো।

    সঞ্চালিকা – প্রথম বার ?

    রাণু তেওয়ারি - আপনি এমন বলছেন, আমাকে নকশালি মুখপত্র না বানিয়ে দেন !

    সঞ্চালিকা – ওরা তো যাকে তাকে ধারে কাছে ঘেঁষতে তো দেয় না।

    রাণু তেওয়ারি - সবাইকেই দেয়। আপনার মনে আছে ইংল্যান্ডের ওই ছেলেটার কথা - সাইকেলে আসছিল। সুকমায় মাওবাদীরা ধরলো। ও গুগুল ম্যাপ দেখে আসছিল, লোকেশনে যা দেখিয়েছে - ঢুকে পড়েছিল মাওবাদী এলাকায়। মাওবাদীরা ওর কোন ক্ষতি করেনি, সতর্কতার জন্য তিন চারদিন কথাবার্তা বলে নিঃশর্তে ছেড়ে দিয়েছিল। আপনিও যেতে পারেন, বলছিলাম না, খোলা মনে যান, মনে প্যাঁচ কষলে ঝামেলা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, কাল আপনাকে বলছিলাম না, যেটা নিয়ে আপত্তি ওঠে, তাতে আমি একমত যে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে কী হবে ? সমাজের জন্য তারা করেছেটা কী ? কিস্যু করেনি। লোকে বলবে বেশি জ্ঞানী হয়ে গেছে। ওর বস্তার টকিজ রমরমিয়ে চলছে - চার ছ লাখ সাবস্ক্রাইবার হয়ে গেছে - এখন এসেছে বাবা জ্ঞানচাঁদ হয়ে। সত্যিটা বলুন না - ওরা সমাজের জন্য কী এমন করেছে যে সাক্ষাৎকার নিতে হবে ? সবাই বলবে - আজ এই যেখানে এসেছি তার পেছনে এক কাহিনি আছে, সফল হলে সেটা কাহিনি আর ধ্যাড়ালে ধ্যাড়ানি। আমাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে কী হবে ? আমরা যদি সৎ ভাবে কাজ করতাম, সমাজের এই হাল হতো না। আমি তো এই কাজটা বেছে নিয়েছি। আমি বলছিলাম না এটা পেশা নয় তপস্যা। এই তপস্যার পথে এগিয়ে আপনি কাজের সঙ্গে বেইমানি করবেন আর আজ আপনি সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন। আমিও তো অনেক ক্ষেত্রে বেইমানি করেছি, তাই কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলি - আমার শুরু চাপ দিয়ে টাকা আদায় করে, যাতে কেউ দোষ না দেয় যে তুমি কোন গঙ্গা জলে ধোয়া। আমি এটাও বলি যে আজকের দিন পর্যন্ত আমি সৎ আছি, জানি না কাল থাকব কিনা। হতে পারে কেউ এমন দাম দিল যে আমি বিক্রি হয়ে গেলাম। যতদিন ঠিক আছি বলে যাব, বিক্রি হয়ে গেলে বলা বন্ধ করে দেব।

    সঞ্চালিকা – ভাই, এই বিক্রি হয়ে যাওয়া আর সৎ থাকার মধ্যেকার সীমারেখা নিয়ে আমরা কথা বললাম, কী দুঃখজনক একটা ঘটনা ঘটে গেল - মুকেশ চন্দ্রাকরের হত্যার ঘটনা।

    ( বস্তারের বিজাপুরে জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল বস্তার জংশনের কর্ণধার এই সাংবাদিককে খারাপ মাল দিয়ে রাস্তা বানানোর ব্যাপারে খবর করায় ফেঁসে যাওয়া, তাঁরই এক আত্মীয় ঠিকেদার আর তার সহযোগীরা নৃশংস ভাবে থেঁতলে মেরে ফেলে, সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর ঢুকিয়ে ঢালাই করে দিয়েছিল ২০২৫ এর পয়লা জানুয়ারি। কদিন পরে মুকেশের গলিত শবদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনায় স্থানীয় আর জাতীয় স্তরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল ফলে দোষীরা গ্রেপ্তার হয়েছে, বিচার চলছে। )

    রাণু তেওয়ারি - হ্যাঁ।

    সঞ্চালিকা - এইসব খবর, সত্যিটা জানিয়ে দেবার কাজটা বস্তারের সাংবাদিকরা করছে, তারপর এইসব ঘটনা - আপনি কী ভাবেন ?

    রাণু তেওয়ারি - মুকেশের ঘটনা আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি, অপূরণীয়। ব্যক্তিগত ক্ষতি কারণ আমি ওকে জানতাম। বিশ্বাস করুন, আমি তিনদিন বিজাপুরে ছিলাম, স্থানীয় কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখাটা পর্যন্ত করিনি। এর আগে যখন মুকেশ ছিল বিজাপুরে যেতাম, য়ুকেশ আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, নিজে কারুর সঙ্গে দেখা করিনি, তার মানে এই নয় যে কারুর সঙ্গে আমার - সকলের সঙ্গে আমার দারুণ বন্ধুত্ব। দেখা করিনি এজন্য যে সেই পুরোনো কথাগুলো এসে পড়বে, আলোচনা হবে। আমি ওর অফিসের সামনে গিয়েছিলাম, একটা ভিডিও বানিয়েছিলাম - এখানে ও বসতো, আজও একই রকম আছে। ওর ব্যাপারে আমার দুঃখের ভার এতো বেশি যে কী বলব - কী ভাববো আর কী যে ভাববো না সেটাই ভেবে পাই না। করতেই বা পারি কী ? শুধু দেখে যাই, তদন্ত হচ্ছে, চার্জশিট দিয়েছে। শুধু এটাই ভাবতে থাকি - আমার নিজের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

    সঞ্চালিকা - সেই যে বলা হয় না যে নিজের গলি মহল্লার ব্যাপারে আওয়াজ তোলা সব চেয়ে কঠিন। এই পুরো ঘটনায় সাংবাদিকের যে চরম হ্যাপা - মুকেশ চন্দ্রকারের মতো সাংবাদিককে হারানো - এর থেকে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে যে আমরা নিজের গলি মহল্লার খবর করতে পারি না। কিন্তু এই গলি মহল্লায় ঘুরে ঘুরে যখন খবর করেন আপনি, কতটা চ্যালেঞ্জিং লাগে ? ওই সব ঠিকেদারদের সঙ্গে লড়ে ?

    রাণু তেওয়ারি - দেখুন, এটা তো একদম ব্যক্তিগত ক্ষতির ব্যাপার ছিল যা মুকেশের খবরের ফলে ঠিকেদারের হয়। ওই খবরের ব্যাপারে আমি ভালো করে জানি মুকেশের উদ্দেশ্যই ছিল না ওই লোকটার কোন ক্ষতি করা। এমনি খুঁজতে খুঁজতেই রায়পুরে আমাদের এক সহ সাংবাদিকের নজরে পড়ে যায়, সে খবরটা করে দেয় তাতে মুকেশের কোনো ভূমিকাই ছিল না কিন্তু এন ডি টিভির সেই সাংবাদিক বন্ধু মুকেশকে বেছে নেয়। এন ডি টিভিতে খবরটা হয় আর সব রাগ গিয়ে পড়ে মুকেশের ওপর। প্রদীপ সৈনির একটা কবিতা আছে না স্থানীয়তার বিপদ সম্পর্কে - পড়েছেন হয়ত।

    সঞ্চালিকা - হ্যাঁ।

    রাণু তেওয়ারি - খুব মনে নেই কিন্তু মানে টা এরকম ছিল যে আপনি যত স্থানীয় হবেন বিপদও ততো বাড়বে। আমিও স্থানীয় খবর করছি, খুব চেষ্টা করছি সাংবাদিকতার এথিক্স মেনে চলতে, নিয়ম মেনে চলতে, চেষ্টা তো করি ভুল সংশোধন করতে - দুবার ভুল না করতে। আমার দিক থেকে এসবে ভুল হয় না, হবেও না - তবে কে বলতে পারে কোন কিছুই হবে না - আমি অবশ্য বলছি না জীবন সংশয় আছে, রিস্ক নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে - কথা একটাই যা এ নিয়ে তিনবার বলব - হই হে সই জো রাম রচি রাখা - যা হবার হবে। আপনার কিছু করার নেই। আমরা ভাবি আমাদের ওপরই সব নির্ভর করে। যদি সেটা হতো তবে - রাজুর ছেলে প্রধানমন্ত্রী হতো আর হড়মার ছেলে মন্ত্রী হতো না ! রাজু মানে রাজীব গান্ধী, হড়মা মানে কাবাসি লাখমার বাবা ! ওঁদের ইচ্ছেয় তো কিছু এসে যায়নি। আমি এরকমই ভাবি আরকি।

    ( ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলায় উপজাতি সংরক্ষিত বিধানসভা কেন্দ্র কোনতা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসি বিধায়ক কাবাসি লাখমা ১৯৯৮ থেকে নির্বাচনে জিতে আসছেন। ওই কেন্দ্র থেকে প্রাক্তন সিপিআই নেতা মনীশ কুঞ্জুম শেষবার জিতে ছিলেন ১৯৯৩ এ। তারপর থেকে ছবার ওই কেন্দ্র থেকে জিতছেন কাবাসি লাখমা। উনি ছত্তিশগড়ের ভুপেশ বাঘেলের কংগ্রেস মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ২০১৮ থেকে ২০২৩। ২০১৩ এর পঁচিশে মে সালওয়া জুডুম খ্যাত কংগ্রেসি নেতা মহেন্দ্র করমা, রাজ্য সভাপতি নন্দ কুমার প্যাটেল সহ তিরিশজন কংগ্রেসি নেতা সুকমার দারভা উপত্যকায় মাওবাদী এম্বুশে মারা যান। মারাত্মক আহত হয়ে পরে মারা যান প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্লা। ছোটখাটো চোট পেলেও, ওই এম্বুশে কাবাসি লাখমাকে মাওবাদীরা কেন ছেড়ে দিলো সে নিয়ে অর্থাৎ তাঁর মাওবাদী যোগ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল অনেক কিন্তু সরকারী ভাবে কংগ্রেস তা অস্বীকার করে। বিকাশ তেওয়ারি সূক্ষ্ম ভাবে সেই প্রশ্নটা উস্কে দিচ্ছেন। )

    সঞ্চালিকা - ঠিক। এতখানি এথিক্স - এসব কিছুর ঊর্ধে উঠে যখন দেখেন, সাংবাদিকতাকে কী ভাবে দেখেন?
    রাণু তেওয়ারি - কিসের ঊর্ধে উঠে, বুঝলাম না।

    সঞ্চালিকা - আমাদের যে ভয়ের পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে - সব কিছুর ঊর্ধে উঠে বলাটা ঠিক নয় - এসব কিছু মাথায় রেখে যে লোকের প্রত্যাশাপূরণের জন্য কাজ করে যেতে হবে - ভয়ের পরিবেশও কিছুমাত্রায় থেকে যাচ্ছে, আপনি বলছিলেন না। লোকের কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে হবে আবার টাকাপয়সার ব্যাপারটাও আছে, চ্যানেলের কিছু বাধ্যতা থাকছে কী দেখাবে, কী দেখাবে না এনিয়ে - এর বাইরে গিয়ে আপনি তো নিজের ইউটিউব চ্যানেল বানিয়েছেন - এখন কেমন চলছে ?
    রাণু তেওয়ারি - আপনার ?

    সঞ্চালিকা - মানে আমরা যা দেখছি সেসব দেখানোর চ্যালেঞ্জ কেমন?

    রাণু তেওয়ারি - খুব ছোটছোট আর অনেক বড় বড় সব চ্যালেঞ্জ। কখনো এমন হচ্ছে যে ডিজেলের পয়সা নেই, কখনো মনে হচ্ছে অন্যের সঙ্গে একসাথে গেলে বাজেট ম্যানেজ হবে, কখনো এমন হচ্ছে যে ক্যামেরা ধরার লোক নেই, কখনো সেলফি মোডে শুট করতে হচ্ছে। খবরটা বড় কিন্তু সেলফি মোডে নিজেই তুলছি যেমন হিডমার গ্রামে গিয়ে ওনার ছেলেবেলার বন্ধুকে পেলাম, যিনি ওঁর সঙ্গে গরু চরাতেন। ওটা পুরো সেলফি মোডে শুট করা, এই তো হালেই করলাম।

    সঞ্চালিকা - হ্যাঁ।

    রাণু তেওয়ারি - বিরাট চ্যালেঞ্জ নয় এসব কাজেরই অঙ্গ। চ্যালেঞ্জ বলাই ঠিক নয় - কাজের অঙ্গ, চ্যালেঞ্জ বলে এটাকে বিক্রি করা উচিত নয়। চ্যালেঞ্জ আছে, চ্যালেঞ্জ আছে বলা বন্ধ করুন।

    সঞ্চালিকা - চ্যালেঞ্জ থাকলে করছ কেন।

    রাণু তেওয়ারি - করছ কেন বাবা ! আমার বাড়িতে কেউ হত্যে দিয়ে বলেছিল - ভাইয়া আপনি বস্তার টকিজ করে আমাদের উদ্ধার করুন ! আজ বন্ধ করে দিলে, কাল থেকে দর্শক দেখাও বন্ধ করে দেবে । দিন তিনেক মনে রাখবে, আহা কত ভালো খবর করতো। পাঁচ দিনের মাথায় ঘরের ডাল - ভাত - আলু চচ্চড়ির চিন্তায় ডুবে যাবে। কেউ মনে রাখবে না। যে যার ইচ্ছেয় করছে, বলছে কত কামাবো - সব কিছু কমিয়ে যান - কেউ নাম কামাবে, কেউ পয়সা কামাবে। আমি বস্তার টকিজ করছি লোকে বলছে - আপনি কী দারুণ খবর করেন। মানুষ তো, ভেতরে ভেতরে গদগদ হয়ে যাই। সে শুনে প্রাণিত হয়ে আরো ঝুঁকি নিয়ে ভালো খবর করতে ছুটছি। এই যে করেগুট্টার পাহাড়ে এনকাউন্টার হলো, কেউ যেতেই পারছিল না, লুকিয়ে চুরিয়ে চলে গেলাম - গুলির আওয়াজ আসছে - কী দরকার এতো ঝুঁকি নেওয়ার ? শুধু এজন্যই - দর্শককে দেখাতে হবে আমি কত ঝুঁকি নিতে পারি।

    সঞ্চালিকা - হুম।

    রাণু তেওয়ারি - ওই এলাকায় বার বার যাচ্ছি - জানি যে জওয়ানরা যাচ্ছে - আই ই ডি বিস্ফোরণ হয়ে তারা ঘায়েল হচ্ছে - ডিটেক্টরই নেই ওসব এলাকায়, তবু যাচ্ছি পাগলের মতো। যখন যা কিছু হয়ে যেতে পারে। এই তো সে দিন অবুঝমাড়ের বড়গাঁও যাচ্ছিলাম, সেদিন মাথায় এক লাইন এলো - ইন্দ্রাবতী নদী শুখিয়ে গেছে - হিডমার গ্রামে গিয়ে দেখলাম কাটা কাটা গাছ পড়ে আছে - ফেসবুকে দু এক লাইন লিখে রাখি কখনো কখনো। মাথায় কটা লাইন এলো :
    শুখতি নদীয়া
    উজড়তে জঙ্গল
    বস্তার মে সব
    মঙ্গল মঙ্গল

    সঞ্চালিকা - হুম।

    রাণু তেওয়ারি - ভাবি এ কবিতার সঙ্গে একটা ছবি তুলে দিই। বড়গাঁওতে ইন্দ্রাবতী নদীর ধারে পাথরের ওপর বসে ফটো তুললাম। ওপরে উঠে মহিলা সংঘর্ষ সমিতির সভাপতি সরস্বতী বৈয়ামের সঙ্গে দেখা। যখনই যাই খুব আদর যত্ন করেন উনি - হাত মিলিয়ে বলেন, 'জোহার স্যার। '' খাওয়ান নিজের হাতে - ভাত আর আলুর দম। তিনদিনের মাথায় উনি বাসন ধুতে, আমি যেখানে বসে ছবি তুলেছিলাম, সেখানে গেলেন, মাওবাদীদের বোম পোঁতা ছিল ফেটে ছিটকে পড়লেন - একটা পা চলে গেছে। তবু করে যাচ্ছি। হতে পারতো আমি ওখানে গেলাম আর আমার পাই গিয়ে পড়ল - একহাত দূরে বোম পোঁতা ছিল, জলের ধারে যাবার দরকার নেই তাই যাইনি, উনি গিয়েছিলেন। এইভাবে আমাকে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। তো এইসব চ্যালেঞ্জ - কে বলেছে তোমায় করতে?

    সঞ্চালিকা - এসব যদি চ্যালেঞ্জ হয় তবে করো না।

    রানু তেওয়ারি - করো না।

    সঞ্চালিকা - ঠিক।

    রাণু তেওয়ারি - কী জন্য হেঁটে মরছো? কোন সমাজের জন্য হেঁটে মরছো? চন্দ্র শেখর আজাদ ছিলেন না?

    সঞ্চালিকা - হ্যাঁ।

    রানু তেওয়ারি - ওনার নামও তো ছিল না চন্দ্র শেখর তেওয়ারি?

    সঞ্চালিকা - হ্যাঁ।

    রাণু তেওয়ারি – ঠিক আছে, উনি কোন সমাজের জন্য - নিজের কাকার সঙ্গে জমি নিয়ে গণ্ডগোলের জন্য মারা গেলেন?

    সঞ্চালিকা – তাই তো।

    রাণু তেওয়ারি - দেশের জন্য মরেছিলেন। ভগৎ সিংও, আজ ওনার আত্মাকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলবেন, ''বলুন ! এদের জন্য মরলাম ! যারা ধর্মের জন্য মরে যাচ্ছে ! কর্মের জন্য নয় ধর্মের জন্য মরছে ! গরিব বড়লোকের ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরছে - এদের জন্য আমি মরলাম ! '' তবুও ইচ্ছে হয় তো করুন। কে যেচে পড়ে আপনাকে করতে বলছে। আপনি করা টরাকে এসব বলে বিক্রি করবেন যে - জীবনে কতই না চ্যালেঞ্জ ! তার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো ! গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ুন না ! (হাসি)

    সঞ্চালিকা - জীবনে কী চ্যালেঞ্জ - গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ুন না ! (হাসি) গলায় দড়ি দেওয়া কিন্তু অপরাধ তো …

    রাণু তেওয়ারি – সবাই তো অপরাধই করছে ! সব্বাই ! আমি সাংবাদিকতা শুরু করলাম চাপ দিয়ে টাকা আদায় করে - সেটাও তো অপরাধ ছিল ! অপরাধের মানদণ্ড আপনি - আমি ঠিক করার কে - যে এটা ছোট অপরাধ মাফ করা যায়, ওটা বড় অপরাধ যায় না ? সবেতেই তো অপরাধ, জন্মানোর পর থেকে আপনি অপরাধই তো করে চলেছেন ! (হাসি)

    সঞ্চালিকা – ঠিক। (হাসি) জীবনকে আমরা নানা দৃষ্টিতে দেখতে পারি।

    রাণু তেওয়ারি - দৃষ্টিভঙ্গী।

    সঞ্চালিকা - দৃষ্টিভঙ্গী। আমরা আলোচনার চেষ্টা করলাম ওনার দৃষ্টিতে বস্তার কেমন, কখন থেকে সাংবাদিকতা শুরু হলো, সাংবাদিকতা কী ভাবে যাপনের অঙ্গ হয়ে পড়ে। রোজকার খবর করাটাকে চাকরির মতো করে করতে আরম্ভ করা হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল - ভাইয়া বলেছেন উনি চাপ দিয়ে টাকা আদায় থেকে শুরু করেন। জীবন দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে আমাদের থেকে মূলবাসীরা ভালো আছে এখনো ওদের কাছে জল - জঙ্গল - জমিন আছে। তাই জীবন - আমাদের সঙ্গে তুলনা না করলে - ওদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, থাকার ছোট্ট ঘর আর হাওয়া আর জল আছে ঠিকঠাক। আমাদের ঘরে ঘরে এসি চাই - আগে লাগতো পাখা, কুলার তারপর এসি। যেমন আপনার চাহিদা, এই চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলবে - এরও কোন ঠিকঠিকানা নেই।

    রাণু তেওয়ারি - তাও আপনার অভাব থেকে যাচ্ছে, যেদিন যাবার সময় আসবে অনেক কিছু ছেড়ে যেতে হবে। কদিন আগে একটা কথা বলেছিলাম সেটা বলে আজ শেষ করব।
    সঞ্চালিকা - আচ্ছা।

    রাণু তেওয়ারি - কেউ একজন বলছিল, ''বস্তারে মাওবাদ শেষ হয়ে যাবে, বস্তারের মূলবাসীদের জীবনে নতুন সকাল আসবে। '' আমি বললাম, '' এখনো ওদের দিন হচ্ছে, রাতও হচ্ছে আপনার ঘরে যখন হয়, ওদের রাত বড় প্রশান্তির রাত। '' উত্তর পেলাম, '' আপনি ভুল করছেন। মূলবাসী ছেলেপিলেরা পড়াশোনা শিখবে, জীবনে উন্নতি করবে। '' আমি বললাম, '' যারা বিএড পাস করে বেরোচ্ছে আগে তাদের চাকরি দিয়ে দিন। ''

    সঞ্চালিকা - ঠিক কথা।

    রাণু তেওয়ারি - এতো শিক্ষিত যুব প্রজন্ম, যারা আন্দোলন করছে, আপনার হাতে যদি এতোই চাকরি যা আপনি এই মূলবাসীদের দেওয়ার জন্য রেখে দিয়েছেন - তাদের দিয়ে দিন। আগে ওদের দিয়ে দিন না। কাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন যে পড়াশোনা করলে চাকরি পাবে ? যারা করেছে তাদের তো দিতেই পারছেন না ! উন্নয়ন হবে, উন্নয়ন হবে - তো একটা কথা শুনে রাখুন কোভিডের সময় আপনাদের বড় বড় হাসপাতালে যখন পয়সাওলা লোক একমুঠো অক্সিজেনের জন্য শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যাচ্ছিল, তখন অবুঝমাড়ের মূলবাসীরা টেরও পায়নি কোভিড বলে কোনো রোগ আছে যার জন্য অক্সিজেনের দরকার পড়ে !

    সঞ্চালিকা - মনে হয় তারা সেসব গ্রামেরই লোক যারা জানেই না তিনটে গ্রামের পর চার নম্বর গ্রাম কোনটা।

    রানু তেওয়ারি - নিশ্চিন্তে, চার নম্বর ছেড়ে দিন তিন নম্বর গ্রামে কী আছে তাই জানে না।

    সঞ্চালিকা - প্রত্যেকেরই তিন গ্রামের পর কী আছে তার আলাদা আলাদা বোধ আছে যেমন আমি তিন গ্রামের পর এখনো পর্যন্ত বিজাপুরে এসে পৌঁছেছি। তবে মনে হয় ওখানের কোন লোক তিন গ্রামেরই লোক হয়ে পরম শান্তি পায়। ওদের ভালো হোক, হতে পারে যেমন আছে তাতেই খুশি থাকুক। রাণু ভাইয়ার সঙ্গে এতক্ষণ যা আলোচনার করলাম তার মূল বিষয় ছিল এখানের কী হাল হকিকত, কী করে উনি সাংবাদিকতা শুরু করলেন কারণ ওঁর চ্যানেল আমাদের খুবই অনুপ্রাণিত করে। ভাইয়া এইভাবে এগিয়ে যান, লোককে দেখানোর, শোনানোর, পরিস্থিতি বোঝানোর এটাই সঠিক পন্থা। ভাইয়া, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    রাণু তেওয়ারি - আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইলো। আশা করব আপনি লোকের কথা শোনাবেন, ওদের মুখে কথা বসিয়ে শোনাবেন না। যা আছে আছোলা আলুর মতো সমাজের সামনে রাখুন - ওটাই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। ওতে মশলা দিলে পেট খারাপ হবে। খবরে মশলা দিলে সেটা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর। ধন্যবাদ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন