আমি হয়তো সেদিনই মরে যেতাম। ভাগ্যিস পলাশ এসে দাঁড়িয়েছিল সেদিন।
আসলে আমি মাঝে মাঝেই অদ্ভুত সব শব্দ শুনতে পেতাম। সেই যে যখন রুমঝুম হল, মেটারনিটিতে ওকে নার্স প্রথম আমার কাছে নিয়ে এল আর ঠিক তখনই আমি কোথা থেকে ভেসে আসা নূপুরের আওয়াজ পেলাম। নার্সকে জিজ্ঞাসা করতেই বলল, এখানে নূপুরের আওয়াজ কোত্থেকে আসবে? আপনার অ্যানেস্থিসিয়া এখনও পুরোপুরি ভাবে রিকভার হয়নি। এজন্য ভুলভাল শুনছেন।
আমি বুঝে গেলাম নার্সকে আর কিছু বলে লাভ নেই। কোলের পাশে শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে ডাকলাম, রুমঝুম।
তবে এইসব অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ শোনার ব্যাপারটি আমার সাথে কিন্তু সেদিনই প্রথম ঘটেনি। বলতে গেলে তারও মাস আটেক আগে থেকে এমন শুরু হয়েছে।
সেদিন সৈকত একটু দেরি করেই অফিস থেকে ফিরেছিল। আমি তখন প্রেগন্যান্সির মর্নিং সিকনেসে ভুগছি। কিছু খেলেই হড়হড় করে বমি। আর বমি হবার পরে শরীর এত ভেঙে আসত যে, মনে হত যেন আর কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারব না।
ও মা, উঠে না দাঁড়ালে কী উপায় আছে? এমনিতেই পর পর দু-দুটো মিসক্যারেজের পর এবার তৃতীয়বার। তাই প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসতেই সৈকতের কড়া হুকুম, চাকরিতে রিজাইন দাও।
হ্যাঁ, দিলামও তাই। চাকরি জীবনে অনেক পাওয়া যাবে। কিন্তু সন্তানবিহীন একটি পরিবার ঠিক পিকচার-পারফেক্টের দলে পড়ে না তো। তাই খুব সাধের কর্পোরেট জবটি ছেড়ে ঘরে ঢুকে গেলাম সুড়সুড় করে।
তবে সেঘরে কিন্তু একা থাকা চলবে না।
তোমাকে ডাক্তার এবার খুব সাবধানে থাকতে বলেছে, তাই আম্মাকে আসার জন্য বলে দিলাম, সৈকত বেশ হাসি হাসি মুখে জানিয়ে দিল।
খুব যত্নবান স্বামীর দায়িত্বে সৈকত চিরকালই অগ্রগামী।
তো ঘরে যখন দেখভাল করার জন্য প্রায় সত্তোরোর্ধ্ব শাশুড়ি থাকেন, যিনি সারাদিন বসে হাই ভলিউমে জি বাংলার সিরিয়াল দেখেন আর সুযোগ পেলেই ছেলের অযত্ন হচ্ছে বলে আপশোশ করেন, তাঁর সামনে ঠিক শরীর খারাপের প্যারিমেটার প্রেগন্যান্সি সিমটোম হতে পারে না।
“আরেহ্, সারাদিনই তো শুইয়া থাকো। এইরকম গ্যাট হইয়া শুইয়া থাকলে পেটের বাচ্চা পঙ্গু হইব তো।”
অথবা “আমি তো সৈকত হওয়ার দিন সকালেও একমণ ধান সেদ্ধ করছি। শোনো, প্যাট কাটার লাইগ্যা ডাক্তার ওইসব বেডরেস্টের কথা কয়।”
আর এতেও কাজ না হলে সর্বোচ্চ ভলিউমে সিরিয়াল, দ্যাখছ কইছিলাম না রোশনিই আসলে হারামি বাইর হইব। আরেহ্, সারাজীবন এইরকম মাইয়া কত দেখছি, অন্যের সংসারে ঘুরতে আইস্যা সতীন হইয়া যায়।
আমি গা গোলানো ভাব নিয়েই বিছানা থেকে উঠে পড়ি। মনে মনে বলি, আম্মা সিরিয়ালের শব্দে আমার গা গোলানো ভাব বেড়ে যায়।
কিন্তু মুখটা স্বাভাবিক করে অল্পসময় শাশুড়ির কাছে গিয়ে বসি। উনি সিরিয়াল দেখেন, বান্ধবীর কাছে রোশনি অপমানিত হলে খুশির চোটে হাততালি দিয়ে ওঠেন অথবা রোশনির সাথে নায়কের পরকীয়ায় বিরক্ত হয়ে শাপশাপান্ত করেন।
ওনার এসব কাণ্ডকারখানায় মায়া হয় আমার। বেচারি কত অল্পবয়সে স্বামীকে হারিয়েছেন! তখন সৈকত মাত্র হাঁটতে শিখেছে। শুনেছি, নদীতে গোছল করতে গিয়ে সৈকতের আব্বা ডুব দিয়ে আর ওঠেননি। নদীতে যাবার আগে বাড়িতে সেদিন নাকি খুব অশান্তি হয়েছিল। সৈকতের ছোটো খালা অনেকদিন পর সেদিন এসেছিল ওদের বাড়িতে। অবশ্য সেবারই শেষ। এরপর আর কোনোদিন ছোটোখালা ওদের বাড়িতে আসেননি। এমনকি আম্মাও নিজের ছোটো বোনের নাম মুখে আনেননি আজ অবধি।
আব্বার মৃত্যুর কথা উঠলেই আম্মা বলেন, “ভালোমানুষ ভাত খাইয়া নদীতে ডুব দিতে গেল, কিন্তুক পানির তলা থ্যাইকা আর উঠল না।”
সৈকত বলে, “আব্বা মনে হয় পানির ভেতরেই হার্ট অ্যাট্যাক করেছিলেন। এজন্যই সাঁতার জানা সত্ত্বেও তলিয়ে গিয়েছিলেন।
আমি প্রথম প্রথম অবাক চোখে তাকাতাম, “মনে হয় হার্ট অ্যাট্যাক করেছিলেন মানে কী? হাসপাতালে নেওয়া হয়নি ওনাকে?”
“আরেহ্, তখন হাসপাতাল ছিল তিন গ্রাম পর। আর গ্রামের ডাক্তার দেখে তো বলেইছিল, ঘণ্টাখানেক আগেই মারা গেছেন।”
সেইদিন থেকে আমার শাশুড়ি একাই সৈকতকে বড়ো করেছেন।
শুনেছি, জীবনে অনেক পরিশ্রম করেছেন। সৈকতের বাবার জায়গাজমি টাকাপয়সা তেমন কিছু ছিল না। যেটুকু ছিল তাও ভাইয়েরা বিচার-সালিশ বসিয়ে দখল করেছে, সৈকতের বাবার দেনার হিসেব সেসব।
তবে আমার শাশুড়ির কবিরাজি হাত ভালো ছিল। দশ গ্রামের লোক তাঁর রুগি ছিল। ওই কবিরাজিতেই সংসার চলত।
আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, সৈকতের আব্বার মৃত্যুদিন এলেই আম্মা নিজের বোনকে সারাদিন অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করেন। এরপর মাগরিবের নামাজে আল্লাহ্র কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চান।
এই অদ্ভুত আচরণে অবাক হয়ে একবারই সৈকতকে বলেছিলাম, সারাদিনে উনি একবারও মৃত স্বামীর জন্য শোক করলেন না।
আমার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে সৈকত বলেছিল, আম্মার ব্যাপারে কোনোরকম অশ্রদ্ধা আমি মেনে নেব না।
ব্যস, সারাজীবনের আত্মসম্মানী আমি সেদিনই এব্যাপারে ভাবা বন্ধ করে দিয়েছি।
তবে একাকী এই মানুষটির ছেলেকে বড়ো করার শ্রমকে আমি সম্মান করি।
টিভির সিরিয়ালের তো শেষ নেই। একটার পর একটা শুরু হয়। আমার শাশুড়ির মনোযোগে ব্যাঘাত না ঘটিয়েই ওনার পাশ থেকে উঠে রিডিংরুমে চলে যাই। সে শুধু নামেই রিডিংরুম। মূলত কম্পিউটারে কাজ করতেই সেই রিডিংরুমে যাওয়া হয় বেশি। তাই বলে রিডিংরুমে বই নেই তা কিন্তু নয়। তবে এক আলমারি বইয়ের ধুলা শেষ কবে ঝেড়েছি তা অবশ্য ভুলে গেছি।
আমি এরপর অভ্যাস মতোই গিয়ে কম্পিউটার অন করি। এরপর অফিসের কিছু পুরাতন ফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে স্মৃতি রোমন্থন করি। গা গোলানো ভাব তখন একটু কমে এসেছে। আমি জীবনে সেসময় সদ্যআগত ফেসবুকে আয়েশি ভঙ্গিতে লগইন করি। তখনও ফেসবুকের প্রতি খুব একটা আগ্রহ তৈরি হয়নি। সেসময় পর্যন্ত মনে হয় কেউই ফেসবুকের অতল জগতের আহ্বান বুঝে উঠতে পারেনি। আমি নিজের হোম পেইজে কিছুক্ষণ স্ক্রল করে আগ্রহ হারিয়ে, সৈকতের আইডি-তে লগইন করি।
হ্যাঁ, ফেসবুকের সেই শুরুর দিনগুলোতে এর পাসওয়ার্ডের গুরুত্বও বুঝে উঠিনি আমরা। একসাথে বসে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করেছিলাম দুজন, তাই সৈকতের পাসওয়ার্ড জানাই ছিল।
সৈকতের হোম পেইজেও তেমন কিছু নেই। আমি জানালায় গ্রিলে দুটো চড়ুই পাখির ঠোকাঠুকি দেখতে দেখতে আনমনে স্কল করে যাই। হঠাৎ চ্যাটবক্স পপ আপ হয়।
'”কী করছ সোনা?” আইডি-টা আমার খুব পরিচিত। আমার বান্ধবী স্বর্ণার আইডি। মেসেজ দেখে ভুলে গিয়েছিলাম সৈকতের আইডিতে আমি আছি। কিছু লেখার জন্য কিবোর্ডে আঙুল দিতেই ভৌতিক ভাবে সৈকতের আইডি থেকে উত্তর চলে যায়,
“অফিসে খুব বোরিং লাগছে। ক্যান উই মিট টুডে, সোনা? ইট'স বিন লং টাইম টু সি ইউ।”
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না কী ঘটে চলেছে আমার সামনে। একের পর এক মেসেজ আমার চোখের সামনে লাফিয়ে উঠছে।
সৈকতের কথার উত্তরে ওপাশ থেকে আহ্লাদি আহ্বান আসে।
“আমার আজ প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে।”
সাথে সাথেই দায়িত্বশীল সৈকতের উত্তর,
“আমি লাঞ্চব্রেকে তোমার কাছে চলে আসছি। কড়া করে কফি বানিয়ে দেব, দেখবে মাথাব্যথা পালিয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, মালয়েশিয়া ট্যুর থেকে আনা সেই ড্রেসটা পরলে তোমায় কেমন লাগে দেখতে ইচ্ছে করছে।”
ওপাশের আদুরে মেয়েটির এরপরের উত্তর,
“তোমার অপেক্ষায় রইলাম, সোনা।”
থেমে যায় মেসেজগুলোর লাফালাফি।
কিছু সময় লাগে আমার পুরো ঘটনা বুঝতে। আর বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই ঘর ভাসিয়ে বমি করে ফেলি আমি।
সিরিয়ালের মায়া ত্যাগ করে শাশুড়ি ছুটে আসে, “হায় হায় ঘর তো ভাসাইয়্যা ফেলছ। ক্যামনে পরিষ্কার করবা এখন?”
আমি উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ বিবশ দাঁড়িয়ে থাকি।
এরপর ভাবলেশহীন হয়েই রিডিংরুম পরিষ্কার করি, শাশুড়িকে সন্ধ্যার চা বানিয়ে দেই, বারান্দা থেকে সৈকতের শুকনো জামাকাপড় তুলে আনি।
এরও অনেকপর সৈকত ফেরে। ঘরে ঢুকেই কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, “সোনা আমাদের বেবিটা কি আজও তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে?” আমি কিছুক্ষণ নিশ্বাস বন্ধ করে থাকি।
এরপর আচমকা সৈকতের দিকে ঘুরে জিজ্ঞাসা করি, “অনেকদিন পর আজ স্বর্ণার সাথে দেখা হল তোমার। আচ্ছা মালয়েশিয়া থেকে এনে দেওয়া ড্রেসটাতে ওকে কেমন লাগল? তুমি ওর কাছে যাবার পরও কি ওর মাথাব্যথাটা ছিল?”
আমার এই অনাহুত আক্রমণে প্রথমে সৈকত থতমত খেয়ে যায়। এরপর একরাশ বিরক্তি চোখে মুখে এনে প্রশ্ন করে, “তুমি আমার আইডি লগইন করেছিলে কেন?”
আমি যেন সেদিন প্রস্তুতই ছিলাম।
ক্রোধ আড়াল করে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলেছিলাম, “ইশ, তোমার পরকীয়া কেমন ম্যাড়মেড়ে করে দিলাম।”
ব্যস, পরকীয়া শব্দটি শুনেই সৈকতের কিছু একটা হল। গায়ের সব শক্তি দিয়ে একটা কষে থাপ্পড় মারল আমাকে। ছিটকে বিছানায় পড়ে যেতে যেতেই আমি শুনতে পাই বিরান মাঠে ঘূর্ণি তোলা বাতাসের হু হু শব্দ।
সেই শুরু।
এরপর যতবার সৈকত আমার গায়ে হাত তুলেছে, বাতাসের সেই শব্দটি হু হু করে আমার মস্তিষ্কে গিয়ে ধাক্কা মেরেছে।
এরপর থেকেই নানারকম শব্দের আনাগোনা আমার চারপাশে।
সেসব দিনে শাশুড়ি কাছে আসলেই কাকের কা কা শব্দ পেতাম। গভীর রাতে বারান্দায় বাঁশির আওয়াজ পেতাম। কোনো দুঃসংবাদ পাবার আগে কান্নার আওয়াজ পেতাম। শব্দগুলো কেন যেন বেছে বেছে আমাকেই ঘেরাটোপে ফেলত। অথচ আমার চারপাশে থাকা কেউই কিন্তু সেসব আওয়াজ শুনতে পায় না।
রুমঝুমকে সেদিন প্রথম কাছে আনতেই নুপূরের শব্দ পেয়েই আমি বুঝেছিলাম, এই মেয়ে আমার জীবনে এক অন্য সুর আনতে চলেছে।
রুমঝুম ছোটো থেকেই খুব লক্ষ্মী বাচ্চা। তেমন কান্নাকাটি করত না। খিদে পেলে একটু খুনখুন করত, এই যা। আর বাকি সময় একদিকে ঘাড় কাত করে শুয়ে থাকত।
আমার জন্য এই ব্যাপারটা আসলে ছিল আশীর্বাদের মতো।
সেই যে শাশুড়ি প্রেগন্যান্সির সময় এলেন আর তো ফিরে গেলেন না। অন্যদিকে সৈকতের অফিস ট্যুর ক্রমাগত বাড়তেই লাগল। মাসের মধ্যে পনেরো দিনই ও বাড়িতে থাকত না। তাই শাশুড়িকে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নই আসে না। একা ছোটো বাচ্চা নিয়ে আমি হিমশিম খাব যে!
হ্যাঁ, হিমশিম আমি খেতাম ঠিকই তবে রুমঝুমকে নিয়ে নয়, বরং উলটো শাশুড়িকে নিয়ে।
“আইজ বেশি কইর্যা লাল মরিচ দিইয়্যা গোশত পাকাও। সাথে মাস কলাইয়ের ডাল আর বেগুন পোড়াইয়্যা ভর্তা করো। শহরের খাওনে জিহবার স্বাদ চইল্যা গ্যাছে।”
কিংবা
“আমি রাত এগারোটাই ভাত খামু আইজ। ‘সুহাসিনী' সিরিয়ালের মেগাপর্ব হইব। আইজ ওই রূপসা পেতনির পর্দা ফাঁস হইব বুইজছ।”
আহা রে, পোস্ট প্রেগন্যান্সিতে আমার যত্ন কে নেয়, তা না আমি এখন রাতদুপুরে বসে থাকি ওই সিরিয়ালের মেগাপর্ব নিয়ে।
আমার শাশুড়ির এসব দায়িত্বহীন আচরণে এরই মধ্যে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে রুমঝুমটার জন্য মায়া হয়। মেয়েটার কোনো আবদার নেই বলে কেউ ওকে সেভাবে সময়ই দেয় না।
সারাদিন ক্রিবেই শুয়ে থাকে। আমাকে দেখলে চোখ ঘুরিয়ে একটু চঞ্চলতা প্রকাশ করে। বুঝে গেছে বাবা আর দাদির জীবনে ওর আগমন তেমন একটা ছাপ রাখেনি। তাই ওকে নিয়ে কারও কোনো হেলদোল নেই।
তবে এরকম নিরাসক্ত মা আর ছেলে খুব বেশিদিন থাকতে পারল না।
রুমঝুমের নিয়মিত গ্রোথ চার্টে ডাক্তার যখন বারবার লিখতে লাগল ‘কনসার্ন অ্যাবাউট রেসপন্স’ তখনই মা আর ছেলের সব আগ্রহ হামলে পড়ল আমার মেয়েটির উপর।
“এখনও শব্দ শুনলে তাকায় না। আর হাতপা-ও তো নাড়ায় না। কী বাচ্চা হল এটা।”
ছেলের সাথে তাল মিলিয়ে মা-ও সুর চড়ায়।
“ক্যামন কইর্যা নে তাইয়্যা থাকে। পোলাপাইন হাসব, খেলব তা না সারাদিন ফ্যালফ্যাল কইর্যা তাকাইয়্যা থাকে। আজব বাচ্চা।”
আমি যতই ওদের বোঝানোর চেষ্টা করি রুমঝুম আমাদের স্পেশাল কিড, ততই বিরক্ত হয়ে সৈকত বলে, “আরেহ ওসব ইংরেজি বললেই কি ল্যাংড়া-নুলা সব জাতে উঠে যায়?”
আমার বুক ফেটে কান্না আসে। আমি রুমঝুমকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে গুনগুন করি,
“আমার সোনা চাঁদের কণা”
এরপর সৈকত শুধু হাবেভাবে নয়, স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দেয় রুমঝুমকে নিয়ে আদেখলাপনা করার সময় নেই ওর।
ও যতই আদেখলাপনা বলুক না কেন, আমার কাছে তা শুধুই চেষ্টা। রুমঝুমের সকল সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বোচ্চ ভালো রাখার চেষ্টা।
এজন্যই খাবার খাওয়ানোর সময় গল্প বলা, সকাল-বিকাল নিয়ম করে অ্যাপার্টম্যান্ট লাগোয়া ছাদে ওকে নিয়ে হাঁটা, বারবার কানের কাছে মুখ নিয়ে রুমঝুম বলে ডাকা—সব করতাম আমি শুধুমাত্র রুমঝুমকে ওর মতো করেই স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ দিতে।
এসব দেখে শাশুড়ি মুখ বেঁকিয়ে বলত, “ওই সব কইর্যা কিছু হইব না। আমি ওষুধ জানি এইসব রুগির। দুইটা বড়ি বানাইয়্যা দেই, খাওয়াইলেই উপকার বুঝবা।”
আমি ওনার কথা না শোনার ভান করে রুমঝুমকে অভিনয় করে গান শোনাই,
“লাল ঝুঁটি কাকাতুয়া ধরেছে আজ বায়না
চাই তার লাল ফিতে চিরুনি আর আয়না।”
রুমঝুম ভাবলেশহীন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর আমি চারপাশ অগাহ্য করে হেসে হেসে গেয়ে চলি এই আশায়, আমার রুমঝুম হাতপা নেড়ে খিলখিল করে হেসে উঠবে একদিন।
না, তা হয় না।
শুধু পাশ থেকে ছুটে আসে কয়েকটা শব্দের তীর,
“ও কি গান শুনতে পায়? ও তো হইল বোবাকালা।”
আমি শুধু ঠান্ডা গলায় উত্তর দিতাম, রুমঝুম বোবাকালা নয়, স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার আছে ওর।
হ্যাঁ, ততদিনে প্রায় নিজ উদ্যোগেই রুমঝুমের ইভ্যালুয়েশন করিয়ে ফেলেছি আমি। সৈকত রাজি ছিল না। আমার জোরাজুরিতে শুধু বলেছিল, “এই অ্যাবনর্মাল বাচ্চার পেছনে সময় দেবার ইচ্ছা নাই আমার।”
আমি জানি, অফিস বাদে বাড়তি সময়ের হিসাব আগে থেকেই ঠিক করা থাকে সৈকতের।
তাই সেসময়ের অপচয় না করিয়ে আমিই রুমঝুমকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে চেম্বারে দৌড়াতে লাগলাম।
ইভ্যালুয়েশন শেষে যখন দেখা গেল রুমঝুমের স্পিচ থেরাপি থেকে শুরু করে ফিজিক্যাল থেরাপি সবই লাগবে, তখন সৈকত রাগে গজগজ করতে করতে জানিয়ে দিল, চিকিৎসার নামে সব টাকা পানিতে ফেলার ষড়যন্ত্র করছি আমি।
আমিও মুখ বুজে না থেকে উত্তর দিয়েছিলাম, অন্যের জন্য অহেতুক দামি দামি গিফটগুলোও কিন্তু টাকা পানিতে ফেলারই শামিল।
এর উত্তরে কয়েকটি থাপ্পড় ঠিক চোখের কোলে কালশিটে দাগ হয়ে থেকে ছিল কয়েক দিন।
সেই কালশিটে দাগ যত্ন করে লুকিয়ে আমি সেদিন গিয়েছিলাম রুমঝুমকে নিয়ে স্পিচ থেরাপির জন্য একটি অটিজম রিহ্যাব সেন্টারে। রুমঝুমকে স্ট্রলারে রেখে মন দিয়ে ওদের ব্রশিয়োরগুলো পড়ছিলাম। আর ঠিক তখনি কোথা থেকে বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দ ভেসে এল। কতদিন এমন সুরেলা শব্দ শুনতে পাই না। চোখ বন্ধ করে সেই শব্দকে আর-একটু আয়েশ করে উপভোগ করতে চাইছি, ঠিক তখনি হ্যাঁচকা টানে কেউ আমাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিল।
পলাশ। পলাশ আহমেদ। অটিজম রিহ্যাব সেন্টারের পরিচালক ও স্পিচ থেরাপিস্ট।
আসলে বৃষ্টির শব্দে মগ্ন হয়ে যাওয়ায় বুঝতেই পারিনি, পাশে বসা দশ বছরের অটিস্টিক বাচ্চাটি ফোনে ব্যস্ত মায়ের মনোযোগ না পেয়ে ভায়োলেন্ট হয়ে উঠেছে। হাতের কাছে পাওয়া কাচের একটি ভারী শোপিস তুলে আমার বরাবর ছুড়ে দিয়েছে। পলাশ এসে আমাকে সরিয়ে না দিলে সেইদিনই হয়তো আমার মৃত্যু হত।
তবে মৃত্যু নিয়ে ভাবার সময় তখন কই?
প্রায় আট বছর পর পলাশকে দেখছি। একই পাড়ায় বড়ো হয়েছি আমরা। স্কুলকলেজ সব এক। তবে ইউনিভার্সিটিতে ভরতি হবার পর পলাশের সাথে আর যোগাযোগ থাকেনি। আর আব্বা মারা যাবার পর সেই পাড়া থেকে উঠে গিয়ে আম্মা নানাবাড়িতে থাকা শুরু করলেন। তাই সেই পাড়ার যোগসূত্রটাও হুট করেই ফুরিয়ে গিয়েছিল।
আমি আশপাশ সব ভুলে প্রায় চিৎকার করে উঠি, “পলাশ তুই!”
ব্যস, সেই অটিজম রিহ্যাব সেন্টার হয়ে উঠল আমার বন্ধুবেলার তেপান্তর।
পলাশের কাছে অটিজম সেন্টারটি ছিল প্রার্থনার জায়গার মতো। অদ্ভুত ব্রত নিয়েছিল ছেলেটি। নিজের অটিস্টিক এক বোনকে হারিয়ে শহরের সকল অটিস্টিক বাচ্চাকে আত্মীয় বানিয়ে নিয়েছে। এজন্য এই রিহ্যাবে আসা প্রত্যেকটা বাচ্চার প্রতি ওর যত্ন ছিল চোখে পড়ার মতো। আর রুমঝুম তো অল্পদিনেই ওর খুব আপন হয়ে উঠল।
“রু...ম... ঝু... ম” হাতের মধ্যে রাখা ঘুঙুরের শব্দ আর পলাশের ডাক কেমন মিলে মিশে আমার মেয়েটাকে চঞ্চল করে দিত। আমি ছাড়া একমাত্র পলাশের ডাকেই রুমঝুম চোখ ঘুরিয়ে তাকাত।
আর পলাশও যেন ধনুকভাঙা পণ নিয়েছিল, ছ-মাসের মধ্যেই রুমঝুম জিহ্বা ঠোঁট নেড়ে বাতাসে অস্পষ্ট শব্দের বুদবুদ ওড়াবে।
হলও তাই। রুমঝুমের ‘বু... বু... বু’ শব্দের আনন্দ আমার চোখে বান হয়ে নামল। আমার রুমঝুমের প্রথম শব্দ। আমার রুমঝুম কিছু বলছে। আমি রুমঝুমকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠি।
তবে এই আনন্দ খুব বেশি সময় জায়গা পেল না আমার জীবনে।
রুমঝুম খুব দ্রুত ইমপ্রুভ করছে দেখে ওর রেগুলার ডাক্তার রিহ্যাব সেন্টারে আরও বেশি সময় রিকম্যান্ড করল। প্রতিদিন ঘণ্টা ছয়েক থাকতে হবে রিহ্যাবে।
ধরতে গেলে সারাদিনই বাড়ির বাইরে। সংসার তা মানবে কেন? যতই বোবাকালা বাচ্চার মা হই না কেন, সংসারের আর সবার প্রতিও তো একটা দায় থাকে না কি?
সংসার বলতে ওই তো মধ্য রাতে বাড়িতে ফেরা স্বামী, লাউড ভলিউমে সিরিয়াল দেখা শাশুড়ি আর কয়েকটা ঘর। তা সে যেমনই হোক না কেন, সব কিছুর দায় মিটিয়েই আমাকে মেয়ের চিকিৎসা করাতে হবে।
কিন্তু তা কেমন করে হয়? আমার কাছে তো সব কিছুর আগে রুমঝুমকে ভালো রাখা।
ব্যস, গুরুত্ব নির্বাচনে ভুল করায় মাসুল তো দিতেই হবে।
“আজ না ফিরলেই হত। কে আছে ওই রিহ্যাবে যে বাড়ি ফিরতেই মন চায় না।”
অথবা,
“তাই বইল্যা ঘরের রান্নাবান্নাতেও গোঁজামিল দিইব্যা? তাড়াহুড়াই গোশতে হলুদের জায়গায় দুইবার মরিচ দিছ। মাইয়্যার লাইগ্যা কি সংসার ভাসাইয়্যা দিইব্যা?”
মা-ছেলের ফোড়নগুলো শুরুতে অবজ্ঞা করতাম। কিন্তু আমার এই অবজ্ঞা ওদের কাছে পরাজয় মনে হতে শুরু করে।
আর একই সাথে নিজের নোংড়ামোকে ন্যায়সংগত করার সুযোগটিও হাতে এসে যায় সৈকতের।
“পলাশ কি শুধু মেয়েরই যত্ন নেয়, না মায়েরও?”
ঘৃণায় গা রি রি করে ওঠে আমার। “সবাইকে নিজের মতো ভাবা বন্ধ করো” এতটুকু বলতেই অশ্রাব্য গালির সাথে উড়ে আসে থাপ্পড়।
আমি কান্না গিলে রুমঝুমকে নিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়।
আবার কখনও,
“মেয়ের তো কোনো উন্নতি নাই, বোবাকালাই আছে। ভালোই হয়েছে, মেয়ে অবুঝ বলে পলাশের সাথে তোমার সময় কাটানোয় কোনো সমস্যা হয় না তোমার।”
আমি অসহ্য হয়ে চিৎকার করে উঠি।
“থামো, আর-একটাও বাজে কথা বলবে না ?”
এরপর আমার চিৎকারের ডেসিমাল হিসাব করে চড়, থাপ্পড় বা ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে কপাল ঠুকে দেবার উপায় বেছে নিত সৈকত।
মাঝে মাঝে অবাক হতাম এটা ভেবে, এই নোংড়া আর নির্দয় ছেলেটি কীভাবে অন্য মেয়েদের সাথে অত সুন্দর করে কথা বলে।
তবে সেসব সময় রুমঝুমকে ভালো রাখার ভাবনায় এত মগ্ন ছিলাম যে, সৈকতকে নিয়ে অকারণ ভাবনাগুলো হুট করেই হারিয়ে যেত।
আর এসবের মাঝে নিজেকে নিয়ে ভাবনার ফুরসত তো ছিলই না।
তবে আমাকে নিয়ে একজনের ভাবনা মাঝে মাঝেই চরম বিরক্তির উদয় করত।
“ওই মাইয়্যাই তোমার সংসার খাইব।ওই রোগ তো সারনের না। তাইলে মাইয়্যার জইন্য স্বামীরে অবহেলা কর ক্যান?”
দাঁতে দাঁত কামড়ে আমি তখন চুপ করে থাকতাম। কিন্তু তাতেও কি শান্তি পেতাম? এরপর শুরু হত নিজের কবিরাজি বিদ্যা জাহির করা।
“এই বড়িতে ধুতরার বীজ আছে এক চিমটি। কয় রাত ঘুম হয় না। এই বড়ি কিন্তুক খুব সাবধানে খাইতে হয়। বেশি খাইলেই তো মরণঘুম।”
আমি দীর্ঘশ্বাস চেপে রুমঝুমকে নিয়ে বারান্দায় চলে যেতাম। আকাশের তারা দেখিয়ে গুনগুন করি,
“আকাশ ভরা সূর্য তারা
বিশ্ব ভরা প্রাণ,
তাহার মাঝখানে আমি পেয়েছি
মোর স্থান।”
আমার সুরে রুমঝুম কী পেত বুঝতাম না। তবে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকত আমার মুখের দিকে। আর আমি ওকে শক্ত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে সুর চড়াতাম,
”বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান”
তবে ওটুকুনই, এরপর বাজখাঁই গলায় একজন বলে উঠত,
“হইছে রাতদুপুরে গান বাদ দিইয়্যা ঘুমাও যাও। মাইয়্যার লগে তুমিও পাগল হইছ।”
আমি কীভাবে বুঝাই ওই ঘর আমার বা রুমঝুমের কারওই না। সারারাত সৈকতের ফোন ভাইব্রেট হয়ে জানিয়ে দেয়, কেউ একজন একটু পর পর ওকে ভালোবাসার কথা লিখছে। আর সৈকতও মাঝে মাঝেই বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় সুখগল্প করতে।
এর মধ্যে রুমঝুম একটু কেঁদে উঠতেই, “আরেহ থামাও ওইটাকে; রাতের বেলাও ট্যাঁ ট্যাঁ করে মাথা খাচ্ছে।” এরপরেই দড়াম করে বন্ধ হয়ে যায় বারান্দার দরজা।
আর সেই শব্দে কেঁপে উঠে পুরো ঘর।
তবে সময়ের কী অদ্ভুত খেয়াল।
ক-দিন আগেও শব্দের সাথে যে ঘরের ছিল ওতপ্রোত সম্পর্ক, আজ কেমন নিঃস্তব্ধতা আঁকড়ে ধরেছে সে ঘরের দেয়াল।
হুট করেই রুমঝুমের শরীর খুব খারাপ করল। তেমন কিছু নয়, ওই তো একটু জ্বর হল শুরুতে। কিন্তু দিন তিনেকের মধ্যেই নিউমোনিয়া আর ফুসফুসে ইনফেকশন নিয়ে হাসপাতালে ভরতি করতে হল ওকে।
না, আর বাড়ি ফিরল না রুমঝুম। হাসপাতাল থেকেই সোজা সৈকতের গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে।
জীবদ্দশায় যতই সন্তানকে অবহেলা করুক না কেন, মৃত সন্তানের প্রতি লোকদেখানো দায়িত্ব কি অবহেলা করা যায়?
সৈকত আর তার মায়ের ইচ্ছায় রুমঝুমকে ওদের পারিবারিক কবরে শুইয়ে দেওয়া হল।
না, না, এতে করেই যে সেই ঘরে নিঃস্তব্ধতা নেমে এল, তা কিন্তু নয়।
বরং আমার সেই আলটপকা শব্দ শোনা আরও বেড়ে গেল। প্রায়ই দূরে কোথাও বাচ্চা কান্নার শব্দ পাই তো, আবার সৈকতের মোবাইল থেকে বিদ্রুপ হাসির শব্দ পাই।
সাধারণত সৈকত কখনও মোবাইল হাতছাড়া করে না। সেদিন ভুল করে মোবাইল রেখে বাইরে গিয়েছিল। তবে বেশি সময় নয় কিন্তু। মিনিট তিরিশের মধ্যেই সৈকত বুঝে গিয়েছিল ওর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি বাসায় ফেলে এসেছে।
তবে সেই তিরিশ মিনিট আমার কাছে অনন্তকাল মনে হচ্ছিল।
ওদিকে আমার শাশুড়ি চেঁচাচ্ছে তরকারিতে লবণ হয়নি বলে, আর এদিকে সৈকতের ফোনের রিংটোন অনবরত বেজেই যাচ্ছে। তবে তা রিংটোন হলে মনে হয় সমস্যা ছিল না কিন্তু ওই যে বললাম বিদ্রুপের হাসি।
ফোন থেকে অনবরত সেই হাসি আবার মাথায় এসে টোকা মারছে।
আমি আছড়ে ফেললাম সৈকতের ফোন। টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারাঘর।
ব্যাস, থেমে গেল সবরকম আলটপকা শব্দ।
ফোন হারানোর ব্যথায় নাকি আমার প্রতি বিরক্তি, জানি না কোন্টা কাজ করেছিল সৈকতের মনে।
আমার শরীরে এখনও কালশিটে পড়া দাগগুলো খুব স্পষ্ট। তবে অদ্ভুত ভাবে তাতে এতটুকুও ব্যথা নেই। শুধু ব্যথা কেন, কোনো অহেতুক শব্দও নেই আজ আমাকে ঘোরটোপে ফেলতে।
এই যে আজ বিকেলে ব্যথায় শরীর যখন বিবশ হয়ে আসছিল, তখন আমার হাত থেকে কাচের গ্লাস পড়ে খান খান হয়ে ছড়িয়ে গেল। সেই শব্দও আমার অবধি পৌঁছাল না।
শব্দহীন এবাড়িতে এখন শুধু আছে একটাই শব্দ। খুনখুন কান্নার শব্দ।
আমার শাশুড়ি খুনখুন করে কাঁদছে আর ফিসফিস করে বলছে, “ওই বড়িগুলান কি আমি তোমারে খাইতে দিছিলাম? ধুতরা বীজের বড়িগুলান ওর বাপেরে দিতে আমার হাত কাঁপে নাই কিন্তুক পুতেরে দিতে তো বুক কাঁপে।”
আমি এই প্রথম মানুষটাকে প্রাণ ভরে ডাকি, “আম্মা।”
কিন্তু আমার সেই ডাক বাতাস কেটে আমার শাশুড়ির কাছে পৌঁছায় কই?
শেষটার সাথে মন মিলল না। ধুতুরার বীজ শাশুড়ির পুতেরেই খাইতে দেওয়া ঠিক হইত। বাকিটার বুনন খুব ভালো লেগেছে।
ভালো লাগল।
এক নি:শ্বাসে পুরো গল্প পড়ে নিলাম।
অসাধারণ। মুগ্ধ।
ভালো লাগল
পড়লাম।একদমে পড়ে ফেলা যায়।সুন্দর।
বুকের ভেতর চাপ চাপ কষ্টগুলো কেমন করে মেনে নেয় নারী...ভীষণ ভালো লেগেছে..তবে আর কোন গল্পে কিংবা বাস্তব জীবনে নারী বোবা কষ্টগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে জীবনটাকে কি সুন্দর করতে পারে না।।
পুতের বৌটাকেই মারা লাগল। কেন পুতেরে দিতে সমস্যা কি?