শুনলাম ভারত না কি অর্থনৈতিক শক্তিতে হু হু করে ওপরের দিকে উঠে চলেছে। উঠছে নিশ্চই তবে খুব মসৃণ উড়ান তো, তাই টের পাচ্ছি না।
ঠিক যেমন টের পায় নি দিল্লীতে না খেতে পেয়ে মারা যাওয়া তিনটে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা। জানতে পারলে নিশ্চই আরও দিনকতক অপেক্ষা করত কবে অর্থনীতির উপচোনো সমৃদ্ধি ট্রিকল ডাউনের তত্ত্ব মেনে তাদের মুখে পৌঁছবে। আরও শুনলাম তারা না কি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে দিল্লীতে গিয়েছিল। বলিহারি বাপু, এখানে চাদ্দিকে উন্নয়নের বন্যা বইছে, এসব ছেড়ে হিল্লিদিল্লী করার দরকারটা কি?
এই আচ্ছে দিনের বাজারে অবশ্য সবসময় উন্নয়নের হিসেব রাখা মুশকিল। কখন কোথা দিয়ে বিকাশ হয়ে যাবে, টেরটিও পাবেন না। ভাববেন আমের বাজারদর যাচাই করবেন, সরকারপক্ষ আপনার হাতে ধরিয়ে দেবে আমলকী ফলনের বার্ষিক হিসেব। যেমন ধরুন, কর্মসংস্থান। বিরোধীপক্ষ সরকারের কাছে জানতে চাইলেন গত চার বছরে কত নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। মোদীজি তার উত্তরে কতজন বছরে পাশ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, সি এ হচ্ছে তার হিসেব দিয়ে দিলেন। নাও, এবার ঠ্যালা সামলাও। তাই বলছি, হিসেব মেলানোর চেষ্টা না করাই ভালো।
তার ওপর আবার বেশি হিসেব চাইতে গেলে আপনার হিসেব নিতেই লোক চলে আসতে পারে। তখন কিন্তু আপনার জামার রং আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। ঠিক যেমন বাঁচাতে পারে নি স্বামী অগ্নিবেশকে। আর্য সমাজের এই গুরুকে শুধু গণপিটুনি খেতে হয়েছে তাই নয়, তাঁর নামেই আবার পুলিশের কাছে কেস ঠুকে দিয়েছে বিজেপি।
অবশ্য স্বামী অগ্নিবেশের কপাল ভালো তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। উত্তর কর্ণাটকের আইনজীবি-অ্যাক্টিভিস্ট অজিত নায়েকের কপাল এতটা ভালো ছিল না। বহুকাল ধরেই তিনি বালি মাফিয়াদের বিরূদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। দু দিন আগে তাঁকে কে বা কারা রাতের অন্ধকারে কুপিয়ে খুল করে। পুলিশ এখনো কিছু করে উঠতে পারে নি।
কর্ণাটকের পুলিশ কিছু না করলেও উত্তর প্রদেশের পুলিশ কিন্তু খুব তৎপর। অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখানোর অপরাধে তারা দুজন ছাত্রীকে চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। কে না জানে, পথের কাঁটা অমিতজির একদম পছন্দ নয়।
অমিতজির কথায় আরেক অমিতজিকে মনে পড়ে গেল। পানামা পেপার খ্যাত অমিতাভ বচ্চন। তিনি শুনলাম না কি একটি সততার বিজ্ঞাপন করেছেন। সততার প্রতীক। ভাগ্যিস, ভারতে ছিলেন। পাকিস্তান হলে হয়তো পানামা পেপারের জের ধরে এতদিনে জেল হয়ে যেত। যেমন হয়ে গেল পাক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের। পরের বার তাঁর জন্মদিন পালন করতে হলে মোদিজীকে জেলে গিয়ে সারপ্রাইজ ভিজিট দিতে হবে। অবশ্য বন্ধুদের দেখতে, উইশ করতে জেলে যাওয়ার অভ্যেস ওনার নিশ্চয় আছে।
হিসেবের কথাই যখন হচ্ছে তখন আরও কয়েকটা হিসেবে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। মোদী জমানায় ভারত থেকে গোমাংসের রপ্তানি নাকি দ্বিগুন হয়েছে। আর উচ্চশিক্ষায় অধ্যাপক শিক্ষকদের সংখ্যা কমেছে দু লাখেরও বেশি। অন্ধ্র থেকে ইউপি পৌঁছতে একটি মালগাড়ির সময় লেগেছে চার বছর। আচ্ছে দিনের ভারত পৌঁছতে সময় লাগছে বছর পাঁচেকের কিছু বেশি। কেরালা মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কারদের জন্য বানিয়েছে বাসস্থান, নাম "আপনা ঘর"। আপাতত তাতে ৬৪০ জন থাকতে পারবেন। অসমে সুতোয় ঝুলছে এক কোটির ওপর লোকের ভাগ্য। তাঁরা কি আরও একবার দেশহারা হবেন?
ও হ্যাঁ, গত সপ্তাহেও আরও কয়েকজন গণপিটুনিতে মারা গেছেন। এবার হিসেব রাখা সত্যিই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ খবর পেলাম, গণপিটুনির শিকার হয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের একজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে গুজরাটে। তার বন্ধুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
একেই বোধহ্য় বলে, সবকা সাথ, শবকা বিকাশ।