মোদীর জয়জয়কার কেন?
ক। এবার বিজেপি জিতেছে মূলতঃ মোদী হাওয়ায়। পুরোটা না হলেও অনেকটাই। গত কয়েকটি নির্বাচনেই বিজেপি ১৫০+ আসন পাচ্ছিল। সেটা বিজেপির নিজের ভোটব্যাঙ্কের কারণে। এবারের আসন সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সেই বাড়তিটা মোদী হাওয়ার অবদান।
খ। মোদী হাওয়াটি কী? দুই বছর আগে সঙ্ঘ পরিবার নিজেদের ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে। এবং একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্বকে বিজেপির মুখ হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়। রাহুল বনাম মোদী -- এই স্লোগান সেই দুই বছর আগের সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি। এবং স্লোগানটিই মোদীর পক্ষে-বিপক্ষে মেরুকরণের হৃদপিন্ড।
গ। এই রাহুল বনাম মোদী মেরুকরণের মূল লক্ষ্যটি হল, মোদীর অ্যাজেন্ডাকেই জাতীয় রাজনীতির মূল অ্যাজেন্ডা বানিয়ে তোলা। তার পক্ষে বা বিপক্ষেই জাতীয় রাজনীতি ঘুরপাক খাবে। বাকি অন্য সবকিছু সেখানে গৌণ। এবং এজন্য প্রতিপক্ষটিকেও সযত্নে চয়ন করা হয়েছিল, যার নাম রাহুল গান্ধী। যিনি রাজনীতিতে নবাগত, উচ্চবর্গীয় এবং মাটির সঙ্গে সংযোগহীন। অতএব তিনি লিলিপুট। উল্টো দিকে মোদী লার্জার দ্যান লাইফ। শক্ত ও কাজের মানুষ।
ঘ। মোদী যে কাজের মানুষ, সেটা তুলে ধরার জন্যই রাহুলের বিরুদ্ধে তাঁকে তুলে ধরা। রাহুলের হাতে কোনো অস্ত্র নেই, মোদীর আছে গুজরাত। গুজরাত বলতেই আমরা সবার আগে দাঙ্গা ভাবি, কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে অন্য আরেকটি চালু ধারণাও ছিল। যে, গুজরাত মানে উন্নয়ন। এক মাসের নোটিসে সেখানে ন্যানো চলে যেতে পারে, কোনো গোলমাল ছাড়াই। সেখানে বিদ্যুৎ যায়না। প্রচুর লোকের চাকরি হয়। ইত্যাদি। -- এই ধারণাটাকে কাজে লাগানো হল।
ঙ। দাঙ্গা ইত্যাদি পিছনে চলে গেল, কারণ, খুবই বেশি করে কাজে লাগানো হল, অপদার্থ রাহুল ও মনমোহনের ইমেজকে। লিলিপুট রাহুল/মনোমোহন বনাম কাজের মানুষ মোদী -- এই হল প্রচারের মেরুকরণ। দিল্লীতে আন্নার দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশ, ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ, কেজরির জয়, সবই এই পর্বে রাহুলের বিপক্ষে, অতএব, মোদীর পক্ষে গেছে।। জনতার প্রতিষ্ঠানবিরোধী ক্ষোভ, যেখানে জোর ছিল, কাজে লাগিয়েছে আআপ। কিন্তু সর্বত্র তাদের জোর নেই। এই ক্ষোভের পুরোটাই গেছে মোদীর পক্ষে।
মোদ্দা কথা হল, নিজেদের পকেটের ধর্মীয় অ্যাজেন্ডা ছাড়াও, চারটে জিনিস মোদীর কাজে লেগেছে। এক, কংগ্রেসের তথা রাহুলের অপদার্থতা। দুই, সরকারি দুর্নীতি ও অকর্মন্যতাজনিত ক্ষোভ। তিন, কাজের মানুষ ইমেজ। চার, গুজরাতের ফুলে ফলে বেড়ে ওঠার "উন্নয়ন"এর ইমেজ।
মোদীর ইমেজ
কংগ্রেসের অপদার্থতা, সরকারি দুর্নীতি ও অকর্মন্যতা বাদ দিলে পড়ে থাকে মোদীর ইমেজ। "কাজের মানুষ" আর "গুজরাতের উন্নয়ন" এরা জিতেছে গুজরাতের দাঙ্গাকে অতিক্রম করে। এর পিছনে মিডিয়ার ভূমিকা, মোদীর প্রচারের কায়দা সবই আছে। কিন্তু সেটুকু বাদ দিলেও পুরোটাই কি হাওয়ায়? শুধুই প্রচার?
খুব সত্যনিষ্ঠভাবে বিষয়টির দিকে তাকালে আমরা দেখব, পুরোটা হাওয়ায় নয়। আমরা গুজরাট নিয়ে যা বলি, (অর্থাৎ মর্টালিটি রেট বা এইচ ডি আইতে গুজরাট অনেক পিছনে, শিক্ষা ও সাস্থ্য মোটেই সন্তোষজনক নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি), সবকটাই অক্ষরে অক্ষরে সত্য। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা যা বলিনা, সেগুলোও আছে। যথাক্রমে জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা এবং (তর্কাতীতভাবে নয়) তুলনায় গতিশীল প্রশাসন। গুজরাটের প্রত্যন্ত এলাকাতেও পাওয়ার কাট হয়না। খরাপ্রবণ এলাকাতেও যথেষ্ট জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এখানে লক্ষ্যণীয় এটা, যে, গুজরাটের উন্নয়নের যে স্বর্গীয় চিত্র মুখে-মুখে ছড়িয়েছে, সেটা বিদ্যুৎ-রাস্তা-পরিকাঠামোর উন্নয়নের গল্প। সেটা ভিত্তিহীন না। কিন্তু পিছনে পড়ে গেছে মানব-উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু চলরাশি।সেটাও ভিত্তিহীন নয়, বরং অধিকতর বাস্তব। কিন্তু তাও সেটা জনমানসে অধিক গুরুত্ব পায়নি।
এর সম্ভাব্য কারণ দুটি।
এক। বিদ্যুৎ বা রাস্তার সুফল সহজে দৃশ্যমান।
দুই। মানুষ এটাকে "উন্নততর প্রশাসনিকতা"র অংশ হিসেবে দেখেছেন। এবং এইটুকু যে করতে পারে, বাকিটা অন্তত কিছুটা হলেও সে পারবে, সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই, এইভাবে ভেবেছেন।
এখানে একটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। যে, "প্রশাসনিকতা" বা "সুশাসন" বিষয়টার উপর আজকের ভারতবর্ষ অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে। সেটাকে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। মোদী "প্রশাসনিকতা"র প্রশ্নটিকে অ্যাড্রেস করেছেন। শুধু সেটুকুই মোদীর জয়কে নিশ্চিত করেনি, করেছে, এর কৌশলী উপস্থাপনও।
মোদীর জয় কিভাবে নির্ধারিত হয়েছে?
রাজনীতিতে দীর্ঘকালীন জয়-পরাজয় শুধু একটি ভোটে নির্ধারিত হয়না। হয় দীর্ঘকালীন অ্যাজেন্ডা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে। যাকে বলা হয় মেরুকরণ। নির্বাচনে বিভিন্ন দলের হাজার হাজার অ্যাজেন্ডা থাকে। কিন্তু জনসমাজে সবকটিই গুরুত্ব পায়না। অল্প কয়েকটিই পায়। অর্থাৎ, জনতার চর্চার, তর্কের মূল বিষয় থাকে সীমিত সংখ্যক কিছু অ্যাজেন্ডা। যাকে ঘিরে মেরুকরণ তৈরি হয়। রাজনীতির দীর্ঘকালীন লক্ষ্যে তিনিই জয়লাভ করেন, যিনি নিজের অ্যাজেন্ডাকে জনতার অ্যাজেন্ডা হিসেবে তৈরি করতে পারেন (উল্টো ভাবে বলা যায়, জনতার অ্যাজেন্ডা তাঁর অ্যাজেন্ডা হয়ে ওঠে -- এর মধ্যে ডিম আগে না মুর্গি আগে, সে আলোচনায় এখানে ঢুকছিনা)। সেই অ্যাজেন্ডাকে ঘিরেই জনসমাজ এবং বাকি দলগুলি আবর্তিত হয়। পক্ষ ও বিপক্ষ নির্মিত হয়। স্বল্পমেয়াদে এটি সবসময় অ্যাজেন্ডা-রচয়িতার ভোটে জয় নির্ধারিত করে তা নয়, কখনও সখনও তিনি হেরেও যেতে পারেন, যদি মেরুকরণে উল্টো দিকের পাল্লার ওজন বেশি হয় (যদিও সাধারণভাবে সেরকম হয়না)। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে জাতি ও অন্যান্য দলগুলিকে নিজের অ্যাজেন্ডার চারপাশে আবর্তিত করতে পরা সাফল্যের একটি বড়ো সোপান।
নব্বইয়ের দশকে "মন্ডল রাজনীতি"র স্লোগানে এই মেরুকরণটি অনেকাংশে করতে সক্ষম হয়েছিলেন ভিপি সিং। সংরক্ষণের পক্ষে এবং মূলত বিপক্ষেই অজস্র আন্দোলন হয়েছে, এবং তৎকালীন ভারতবর্ষে একটা সময় এটিই ছিল মূল অ্যাজেন্ডা, যাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে গোটা জনসমাজ, প্রতিটি দলকে সংরক্ষণের বিপক্ষে বা (মূলত) পক্ষে অবস্থান নিতে হয়েছিল। ভিপি সিং, নিজে এই মেরুকরণের সুফল বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি। কিন্তু তবুও এটি তাঁর দীর্ঘকালীন জয়। কারণ তাঁর স্থির করা অ্যাজেন্ডা দীর্ঘদীন পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে গোটা হিন্দী বলয়ের রাজনীতিকে।
ভিপি সিং কে নিয়ে আলোচনা এখানে হচ্ছেনা, এটি খুব সংক্ষিপ্ত একটি বিশ্লেষণ ও ইতিকর্তব্য ধরণের চিঠি বা লিফলেট, এখানে আসল কথাটা হচ্ছে, এই নির্বাচনে মোদী এই মেরুকরণটি করতে সক্ষম হয়েছেন। এবারের নির্বাচন হয়েছে প্রশাসনিকতা ও কংগেস সরকারের অপদার্থতার ইস্যুতে। বাকি সমস্ত কিছু, এমনকি কুখ্যাত গোধরা ও তৎপরবর্তী দাঙ্গার ইতিবৃত্তও এবারের নির্বাচনী অ্যাজেন্ডায় আবছা হয়ে গেছে। জেগে থেকেছে শুধু "প্রশাসনিকতা" ও "অপদার্থতা"। এটি মোদীর অ্যাজেন্ডা। মোদী অতি অবশ্যই তাঁর শক্তির জায়গায় অ্যাজেন্ডাটি তৈরি করেছেন, বাদ দিয়েছেন দুর্বলতাকে। এবং সেই কাজে, যে করেই হোক, সাফল্যলাভ করেছেন। এবারের নির্বাচন মোদীর অ্যাজেন্ডার জয়। এবং বিপক্ষের নিজস্ব অ্যাজেন্ডাগুলিকে জনতার অ্যাজেন্ডা করে তোলার ব্যর্থতার ফল।
অন্য কারো পক্ষে প্রশাসনিকতার প্রশ্নে কংগ্রেসের বিকল্প হওয়া সম্ভব ছিল?
আমরা দেখেছি, চারটি জিনিস মোদীর পক্ষে গেছে। এক, কংগ্রেসের তথা রাহুলের অপদার্থতা। দুই, সরকারি দুর্নীতি ও অকর্মন্যতাজনিত ক্ষোভ। তিন, কাজের মানুষ ইমেজ। চার, গুজরাতের ফুলে ফলে বেড়ে ওঠার "উন্নয়ন"এর ইমেজ।
এর প্রথম দুটিকে, এক কথায় বিপক্ষের (অর্থাৎ পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকারের)অপদার্থতা বলা যেতে পারে। পরের দুটিকে (মোদীর) প্রশাসনিকতার আশ্বাস।
এর মধ্যে "বিপক্ষের অপদার্থতা" যে কারোরই অস্ত্র হতে পারত। হয়েওছে। কিন্তু যে জায়গাটিতে খামতি ছিল, তা হল "প্রশাসনিকতার আশ্বাস"। এমন নয়, যে, অন্যান্য পার্টিগুলির বিজেপির মতো সর্বভারতীয় উপস্থিতি ছিল। কিন্তু যেখানে উপস্থিতি ছিল, সেখানেও মানুষ মোদীর "প্রশাসনিকতা"র মডেলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় বিপক্ষ বলতে যদি বামদল আর আআপ কে ধরা হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে, যে, এদের নিজেদের গড়েই (দিল্লী এবং পশ্চিমবঙ্গ) মোদীর প্রশাসনিকতার স্লোগানের সামনে এরা উভয়েই মুখ থুবড়ে পড়েছে।
আপ বিজেপির সঙ্গে প্রশাসনিকতার প্রতিযোগিতায় পারেনি প্রাথমিকভাবে দুটি কারণেঃ
এক। সংগঠনের অভাব।
দুই। কেজরিওয়ালের দিল্লী সরকার থেকে পদত্যাগ, যা তাঁকে "কাজের মানুষ" এর বিপরীতে স্রেফ "আন্দোলনের মুখ" হিসেবে তুলে ধরেছে।
(লক্ষ্যণীয়, কেজরিওয়ালের প্রতিষ্ঠানবিরোধী ও দুর্নীতিবিরোধী মুখ ও বিশ্বাসযোগ্যতার কোনো খামতি এখনো দেখা যায়নি।)
বামরা এই কাজটি করে উঠতে পারেনি প্রাথমিকভাবে দুটি কারণেঃ
এক। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে তারা কখনই সক্রিয় হয়নি। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিকল্প হয়ে ওঠার এই সুযোগটি তারা হেলায় হারিয়েছে।
দুই। "কাজের মানুষ" ও "বিকল্প" হয়ে ওঠার বিশ্বাসযোগ্যতা পশ্চিমবঙ্গে বামরা হারিয়েছেন নন্দীগ্রাম পরবর্তীতে।
(লক্ষ্যণীয়, এর পরেও বামদের দেশের নানা প্রান্তে শক্ত সংগঠন আছে। এখনও।)
অতএব, মোদী যখন "কাজের মানুষ"এর স্লোগান তুলে সেটাকেই অ্যাজেন্ডা বানিয়ে ফেলেছিলেন, সেটা তাঁর নিজস্ব শক্ত মাটিতেই ছিল। "লৌহমানব" ও "কাজের মানুষ" -- এই প্রশ্নে মূল তর্কটি নিবদ্ধ থাকলে, "রাহুল বনাম মোদী" এই তর্কটি জনসমাজের মূল অ্যাজেন্ডাটি নির্ধারিত হলে, মোদীর জয়লাভ অবধারিত। এবং মোদী খুব সফলভাবে এই অ্যাজেন্ডাটিকে নির্বাচনের মূল অ্যাজেন্ডায় পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। উল্টোদিকে বিপক্ষের অ্যাজেন্ডাগুলি ভুগেছে দিশাহীনতায়। মোদীর সাম্প্রদায়িক মুখকে মূল অ্যাজেন্ডা করা যায়নি। "গুজরাত এর উন্নয়ন" এর মডেল ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে বিতর্ক। "সুশাসন" বা "প্রশাসনিকতা"কে মানুষ গুরুত্ব দিয়েছেন, মোদীও সেটাকেই হাতিয়ার করেছেন। তার জবাবে কোনো বিকল্প বিরোধীদের ছিলনা।
শুধুই প্রশাসনিকতা, সাম্প্রদায়িকতা নয়?
সাম্প্রদায়িকতা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তা নিয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে খামতিও ছিল। মোদীর সাম্প্রদায়িক মুখটি একেবারেই তুলে ধরা যায়নি, যা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অর্থনীতি নিয়ে কোনো বিকল্পও দেখানো যায়নি। এবং টপকে এবার মূল ইস্যু ছিল প্রশাসনিকতা। সেখানে বিপক্ষ হেরেছে। মোদী জিতেছেন।
এর মানে অবশ্যই এই নয়, যে, মোদীর সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই। অবশ্যই আছে। কিন্তু দেশের লোক যে প্রশাসনিকতাকে একটি প্রধান ইস্যুর মর্যাদা দিচ্ছেন, সেদিকেও অনেক অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাম্প্রদায়িকতাকেও প্রশাসনিকতার সঙ্গে একই সূত্রে গেঁথে জনমানসে উপস্থাপন করার প্রয়োজন আছে।
এখানে একটি জিনিস বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যে, প্রশাসনিকতা রাজনীতিবিযুক্ত কোনো সম্পূর্ণ পৃথক বিষয় নয়। রাজনীতি-অর্থনীতির অ্যাজেন্ডাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে প্রশাসনিকতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ দিয়ে বলা যে সরকারি উদ্যোগে গণবন্টন ব্যবস্থা রাখা উচিত না উচিত নয়, সেটি এই মূহুর্তের একটি রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু সরকারি গণবন্টন ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার প্রস্তাবে, যাঁরা তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে ভাবা হয়, তাঁদের দিক থেকে প্রত্যাশিত মাত্রার বিরুদ্ধতা পাওয়া যায়না। এর কারণ হল প্রশাসনিকতার অভাব। সাধারণ মানুষ নিজ অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, যে, গণবন্টন ব্যবস্থা থাকলেও দুর্নীতি বা অন্যান্য কারণে, সেই সুবিধে এমনিতেই তাঁদের কাছে পৌঁছয়না। অতএব ব্যবস্থাটি তুলে দিলে তাঁদের অধিকতর ক্ষতির মাত্রা কম। একই কথা প্রযোজ্য শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের বেসরকারিকরণ প্রসঙ্গেও। তাত্ত্বিকভবে "শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মানুষের অধিকার, সরকারের তা প্রদান করা উচিত" -- এই ধারণায় অনেকেই অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু বাস্তবে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে কোনো শব্দ শোনা যায়না, কারণ, সরকারি উদ্যোগে এই দুই ক্ষেত্রের হাল সম্পর্কে মানুষ সম্যক সচেতন। ক্ষেত্রদুটির বেসরকারিকরণে এমন কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি হবে বলে জনতা করেনা।
মোট কথা হল, প্রশাসনিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা -- এই প্রশ্নগুলিকে এড়িয়ে "অধিকার" নিয়ে কথা বলা যায়না। অধিকার ও প্রশাসনিকতা -- এদেরকে একই সঙ্গে অ্যাড্রেস করা প্রয়োজন। এই মূহুর্তের বাস্তবতা হল মোদী গুরুত্ব দিয়েছেন প্রশাসনিকতায়। আর তাঁর বিরোধীরা অধিকার এ। এবং জনতা " প্রশাসনিকতাহীন অধিকার" এর চেয়ে "অধিকারহীন প্রশাসনিকতা"কে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিকল্প কি?
চালু বামপন্থী মডেলে বিষয়টাকে এইভাবে দেখা যায়। "অধিকার"এর আন্দোলন ছিল থিসিস। "প্রশাসনিকতা" তার অ্যান্টিথিসিস। পরবর্তী পদক্ষেপে উভয়ের একটি সিন্থেসিস প্রয়োজন। অন্যভাবেও বিষয়টাকে দেখা যায়, যে, "অধিকার" ও "প্রশাসনিকতা"র একটি কথোপকথন প্রয়োজন। অধিকার ও প্রশাসনিকতা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এদেরকে আলাদা করে দেখা যায়না।
মডেল ছাড়িয়ে ট্যাকটিক্সে এলেও, সেই একই চিত্র পাওয়া যাবে। মোদী-বিরোধীদের দুর্বলতম জায়গা হল, তাঁরা "অধিকার" এর সঙ্গে "প্রশাসনিকতা"কে যোগ করেননি। মোদী তাই "প্রশাসনিকতা"র স্লোগান তুলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। কিন্তু তাঁরও দুর্বলতম জায়গা হল, তিনিও "প্রশাসনিকতা"র সঙ্গে "অধিকার"কে যোগ করেননি। এই কাঠামোয় এর এই মূহুর্তের কাউন্টার হল "অধিকার" ও "প্রশাসনিকতা"র যোগসাধন করে একটি রাজনীতি নির্মান।
প্রশাসনিকতা ব্যাপারটা কি এখানে একটু স্পষ্ট করে বলা দরকার। মোদীর "প্রশাসনিকতা" মানে "কাজের মানুষ" হওয়া। আআপ "প্রশাসনিকতা" বলতে যা প্রোজেক্ট করেছে, তা হল, দুর্নীতিবিরুদ্ধতা। লক্ষ্যণীয়, যে, "প্রশাসনিকতা"র এই চিত্রগুলি সবই খন্ডিত। এর বিপরীতে "প্রশাসনিকতা"র একটি বৃহত্তর মডেল তৈরি সম্ভব, যা তাত্বিক ও সিস্টেমেটিক। যেখানে প্রশাসনিকতা মানে শুধু "কাজের মানুষ" হওয়া নয়। যেখানে "প্রশাসনিকতা" মানে শুধু লোকপাল বিল নয়। প্রশাসনিকতার এই ধারণা, দুর্নীতি, স্বচ্ছতা, এবং কুশলতা, সবকটি মাত্রাকেই ধারণ করবে। অর্থাৎ, খন্ডিত ভাবে নয়, মানুষের কাছে দুর্নীতিহীন, স্বচ্ছ এবং দক্ষ পরিষেবা যাতে পৌঁছয় সেটি নিশ্চিত করার দাবী তুলবে। এক কথায় একদিকে শুধু তা গণবন্টন বা শিক্ষা-স্বাস্থ্বে সরকারি দায়িত্বের দাবী তুলবে তাই নয়, একই সঙ্গে তার সুফল পরিষেবা হিসেবে যাতে মানুষের কাছে পৌঁছয়, তার একটি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক মডেলও খাড়া করবে।
এই মডেলের একটি অবশ্য-প্রয়োজনীয় অংশ হতে হবে "প্রশাসনিকতা"র মাপকাঠি। যা দিয়ে "প্রশাসন" বা "পরিষেবা"র বিচার হবে। যে মাপকাঠি, এই মূহুর্তে মোদীর হাতে নেই। বিকল্প রাজনীতিতে এই মাপকাঠিটির নির্মান প্রয়োজন। তাঅত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক ভাবে। এবং সেটিকে ফোকাসে আনা প্রয়োজন। এই মাপকাঠিটিকে আমরা "কুশলতা" বলতে পারি।
কুশলতা কী?
কুশলতা, একদিকে প্রশাসনিকতার মাপকাঠি। অন্যদিকে পরিষেবার মান নির্ণয়ের যন্ত্র। প্রতিটি নাগরিকের যথাযথ ও স্বচ্ছ নাগরিক পরিষেবা পাবার অধিকার আছে। তথ্যের অধিকার (আরটিআই) ও লোকপাল বিল সেই অধিকার পাবার ভিত্তিভূমি তৈরি করে। কিন্তু সুনিশ্চিত করেনা। (necessary but not sufficient)।
একটি কল্পিত উদাহরণ নেওয়া যাক। ধরা যাক, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কোনো একজন নাগরিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার হালচাল নিয়ে যদি জানতে চান, তাহলে তিনি আরটিআই মারফত তা জানতে পারেন। কোনো একটি নির্দিষ্ট হাসপাতালের ডাক্তারসংখ্যা, ইত্যাদি নিয়েও খোঁজ নিতে পারেন। হাসপাতাল বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে, লোকপালের কাছে তদন্তের দাবী করতে পারেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও, একজন নির্দিষ্ট রোগী যথাযথ চিকিৎসা পেলেন কিনা, সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কারণ, "যথাযথ চিকিৎসা" নামক মাপকাঠিটিই এখনও নির্মিত নয়। "যথাযথ চিকিৎসা" পাওয়া গেল কিনা বিচার করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু মাপ (অর্থাৎ রোগীর ভর্তি হতে অসুবিধে হল কিনা, একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে ঠিক সময় ঠিক ওষুধ দেওয়া হল কিনা, তিনি দুর্ব্যবহারের শিকার হলেন কিনা) প্রথমে তৈরি করা প্রয়োজন। এই মাপকাঠিটি এক্ষেত্রে কুশলতার মাপকাঠি।
উদাহরণটি কল্পিত। কিন্তু সমাজের সর্বস্তরেই, সমস্ত পরিষেবাতেই এটি একই ভাবে কার্যকর। শিক্ষা, পুলিশ সহ সমস্ত সরকারি ক্ষেত্রে, এমনকি বেসরকারী ক্ষেত্রেও এই কুশলতর মাপকাঠিটি নির্মান করা প্রয়োজন। পরিষেবা পাবার অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ।
অতএব, প্রস্তাবটি এই, যে, শুধু তথ্যের অধিকার ও লোকপাল অধিকার সুনিশ্চিত করেনা। শুধু তার ভিত্তিভূমি তৈরি করে। পরিষেবা নিশ্চিত হচ্ছে কিনা, সেটা সুনিশ্চিত করার মতো কোনো মন্ত্র আমাদের জানা নেই। কারণ, এর কোনো মাপকাঠিই আমাদের জানা নেই। অতএব সেই মাপকাঠিটি নির্ধারণ প্রয়োজন, যাকে আমরা কুশলতা বলছি। বলাবাহুল্য, প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মাপকাঠিটি ভিন্ন হবে। হাসপাতালের ক্ষেত্রে যা, স্কুলের ক্ষেত্রে তা নয়। এর মধ্যে নানাবিধ চলরাশি থাকতে পারে। তার মধ্যে সমীক্ষা, অভিযোগ, সবই ঢোকানো যেতে পারে। কিন্তু মাপকাঠিটি প্রয়োজন। কুশলতার মাপকাঠি থাকলে তবেই আমরা বলতে পারব, কুশলতার নিরিখে অমুক হাসপাতাল, বা অমুক স্কুল, বা অমুক সরকার পিছিয়ে পড়ছে। এবার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এমনকি বে-সরকারি পাবলিক-ফেসিং প্রতিষ্ঠানগুলিকেও এর আওতায় আনা যেতে পারে। এটি খুব জরুরি দরকার, কারণ এটি ছাড়া বাকি যন্ত্রপাতি দিয়ে গরীব মানুষের পরিষেবা সুনিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই। শুধু তাইই না, এটি ছাড়া মোদীর "কাজের মানুষ" প্রশাসনিকতার মডেলের পাল্টা আর কিছু হওয়া কঠিন।
এই একটি অস্ত্র দিয়ে পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার যে গাফিলতিতে নিত্যদিন সাধারণ থেকে অসাধারণ সব মানুষই পড়ছেন, তাঁদের প্রত্যেকের দাবীকে নিজেদের দাবীতে পরিণত করা যায়। এমনকি সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নেও এই মুহূর্তে এটি একটি তীব্র অস্ত্র হতে পারে। সাম্প্রতিক একটি রায়ে বহুবছর জেলে কাটানোর পর "সন্ত্রাসবাদী" কার্যকলাপে যুক্ত বলে অভুযুক্ত কয়েকজন মানুষকে সুপ্রিম কোর্ট নির্দোষ বলে রেহাই দিয়েছেন। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছিল গুজরাত পুলিশ। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন পুলিশ ও গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকেরও তীব্র সমালোচনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এখানে বিস্তারিত বিবরণে যাবার প্রয়োজন নেই, কিন্তু কথাটা হল, এটি একই সঙ্গে গুজরাত সরকার ও গোটা বিচার ব্যবস্থার কুশলতার অভাবকে প্রতীকি ভাবে তুলে ধরছে। যে কুশলতার মধ্যে "জনতার পরিষেবা পাবার অধিকার" একটি অন্যতম চলরাশি। এই প্রশ্নটিকে তুলে ধরে একই সঙ্গে বিচার-ব্যবস্থা, মোদীর সাম্প্রদায়িক মুখ এবং কুশলতা, তিনটি বিষয়কেই এক সুতোয় গেঁথে ফেলা সম্ভব।
এখনও পর্যন্ত মোদী বিরোধী প্রধান দুই পক্ষ, আপ ও বামরা, কেউই এই প্রশাসনিকতার প্রশ্নটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিচার করেননি। আআপ খন্ডিতভাবে দুর্নীতি-বিরোধী আওয়াজ তুলেছে। মহল্লা সভা ইত্যাদির দাবীও তুলেছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বৃহত্তর প্রশাসনিকতার চাপ নিতে অস্বীকার করেছে (দিল্লীর সরকারে এসে)। বামরা "রিলিফ" তত্ত্বে বিশ্বাস করে প্রশাসনিকতার প্রয়োজনটিকেই তাত্ত্বিকভাবে ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এড়িয়ে গেছেন। অথচ, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে ঘিরেই আজ মোদীর উত্থান।
বাস্তব বিকল্প
এই মূহুর্তে, অবিলম্বে, মোদীর এই স্লোগানের জবাবে পাল্টা প্রশাসনিকতা ও কুশলতার একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ মডেল তৈরি করা প্রয়োজন। কার্যক্ষেত্রে, যা, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, এসবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে (সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই), এবং পাল্টা হিসেবে একটি বিকল্প প্রশাসনিকতা ও কুশলতার মডেলকে সামনে আনবে। অর্থাৎ, শুধু "ভরতুকি দিন" এই স্লোগান নয়, "প্রতিটি স্তরে কুশলতার মাপকাঠি তৈরি করে দেখান, যে, ভরতুকির কত অংশ মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে"। শুধু "ক্রোনি ক্যাপিটালিজম"এর নিন্দা নয়, কুশলতার মাপকাঠি প্রয়োগ করে দেখানো, যে, এর চেয়ে উন্নতর বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে।
সরকারি ক্ষমতায় থাকাকালীন আআপ বা বামরা এটা করে দেখাতে পারলে ভালো হত, কিন্তু এখনো খুব দেরি হয়নি। অ্যাজেন্ডা এবং দেশব্যাপী একটা বিকল্পের চিত্র তৈরি করলে মোদীনমিক্সকে এবং তৎসহ সাম্প্রদায়িকতাকে রোখা এখনও সম্ভব। এবং এটা যতটা সম্ভব ঐক্যবদ্ধভাবে করতে পারলেই ভালো হয়।
আমি নির্দিষ্ট করে বাম ও আআপের ভূমিকাই এখানে বলব। বামদের এই মূহুর্তে দেশকে দেবার মতো নতুন কোনো অ্যাজেন্ডা নেই, যা নতুন করে মানুষকে টানতে পারে। দুর্নীতিহীনতা, স্বচ্ছতা, সার্বিক ও ইনক্লুসিভ উন্নয়ন, এগুলোরই এই মূহুর্তে নতুন করে অ্যাজেন্ডা হয়ে ওঠার প্রভূত সম্ভাবনা। যার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকতে পারে প্রশাসনিকতা, কুশলতা ও অধিকার। বামরা এই অ্যাজেন্ডাগুলি আআপ এর থেকে গ্রহণ করতে পারেন। সেটি বামেদের পক্ষে ধরাবাঁধা ছকের বাইরে পা ফেলে বৃদ্ধির একটা সম্ভাবনা এনে দেবে।
অন্যদিকে আপ এই মূহুর্তে যথেষ্ট সংগঠিত নয়। এবং, তাদের দুর্নীতিবিরুদ্ধতা ও "জনতার শাসন" এর দাবীর সঙ্গে মেথডিকাল কুশলতা বৃদ্ধির পদ্ধতিকে তাত্ত্বিকভাবে বৃহত্তর রাজনীতির সঙ্গে যোগ করা প্রয়োজন। এবং এই প্রাথমিক দাবীগুলিকে নিয়ে একটি জাতীয় বিকল্প তৈরি করা প্রয়োজন। যে কারণে বৃহত্তর রাজনীতি ক্ষেত্রে আপ এর বামেদের সঙ্গে থাকা দরকার।
মোট কথা হল, ধরাবাঁধা রাজনীতি বদলে এমন একটি অ্যাজেন্ডা তৈরি করা, যাকে ঘিরে জাতীয় রাজনীতি আবর্তিত হবে, যেমন আজ হয়েছে মোদীকে ঘিরে। "ক্রোনি ক্যাপিটালিজম"এর বিরুদ্ধতা ও "কুশলতা" বা স্বচ্ছতার পক্ষে লড়াইকে সামগ্রিক ভাবে কুশলতা কেন্দ্রিক একটি তাত্ত্বিক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারলে, এমন একটি অ্যাজেন্ডা বা কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম বানানো সম্ভব। আপ ও বামরা (শুধু সিপিএম নয় বৃহদার্থে বাম), রাই এই মূহুর্তে এটা করতে পারে, যাতে আমার মতো লোকেরাও হাত লাগাতে পারে। কাজেই আআপ ও বৃহৎ বামেদের কাছে, আমার ও আমার মতো সমচিন্তাশীল অনেক মানুষের একটাই দাবী, এই যুগসন্ধিক্ষণে গোয়াঁর্তুমি ছেড়ে কাছাকাছি আসুন। পাশাপাশি আসুন। এখানে আআপ ও বামদের কথা বলা হল, কারণ, তাঁরা আকারে বড়ো। বাকিদের প্রতিও ওই একই দাবী। সঙ্গে আসুন, ছোটোবড়ো সব বামগোষ্ঠী।
অবশ্যপাঠ্য পুনশ্চ
এই লেখাটি অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে লেখা। কিছু কথা হয়তো বাড়িয়ে লেখা, কিছু জানা জিনিসে এমফ্যাসিস কম পড়েছে বা পড়েনি, তাও হতে পারে। অনেকগুলো তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ এখানে নেই, যাদের থাকা উচিত ছিল (যেমন কুশলতা বা প্রশাসনিকতা কেন ভারতের ক্ষেত্রে একটি অ্যাজেন্ডা, অধিকারের অন্দোলনের সঙ্গে এর যোগই বা কী)। এইসব খামতির জন্য এতদিনএটি একটি লেখা হিসেবে প্রকাশ করিনি। কিন্তু খসড়া হিসেবেই পরিচিত সবার কাছেই সার্কুলেট করছি। তার পরিপ্রেক্ষিতে নানা ফিডব্যাক পেয়েছি। তাদের মধ্য়্হে দুটি মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সে জন্য এখানে, লেখার মধ্যেই উল্লেখ করা প্রয়োজন।
১। লেখাটিতে কোনো পরিপূর্ণ তাত্ত্বিক কাঠামো নেই। কুশলতা বা প্রশাসনিকতা কেন প্রয়োজন, অধিকার রক্ষার সঙ্গে তার কীইবা সম্পর্ক, ভারতের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ কেন, সেসব প্রশ্ন একেবারেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
২। লেখাটি মূলতঃ কৌশল ও উপরিকাঠামো নিয়েই মন্তব্য করে গেছে। কাঠামোর গভীরে ঢোকেনি। এমনকি কাঠামো-পরিকাঠামোর চালু ধারণাকে নিয়ে প্রশ্নও তোলেনি। বিষয়টা স্রেফ এড়িয়ে গেছে।
দুটি সমালোচনাই, এই লেখকের মতে যথাযথ। এটি কোনোভাবেই "পূর্ণাঙ্গ" নয়। এবং শুধু পরিকাঠামো বা কৌশলের বাইরে কোথাও যায়ও নি। তবুও এটা শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করা হল। কারণ মূল দাবীটা এখানে পরিষ্কার। একটা বৃহত্তর বিকল্প তৈরি হোক। বিভিন্ন দলের কর্মীদের ও বাকি মানুষদের কাছে দাবী, এই যে, পছন্দ হলে, তাঁরাও সার্কুলেট করুন। কথাবার্তা হোক। বিভিন্ন গোষ্ঠী ও দলগুলির কাছে বার্তা যাক। একটা বৃহত্তর বিকল্প তৈরি হোক। সত্যি সত্যিই।