ভয়াবহ বন্যার পর কোচি বিমানবন্দর সবে দুদিন হল খুলেছে। এতোদিন বিশাল বিশাল উড়োজাহাজ পেটের ভেতর নিয়ে কাদাজলের ভেতর হাবুডুবু খাচ্ছিল। উন্নয়নের ঝালরঝোলানো ঢাকে শুধু কাঠি পড়লেই হয় না প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে একটি বেদবাক্য আছে। সে প্রতিশোধ যে কতো ভয়ানক হতে পারে আজ কেরালা আর কর্ণাটকের কোদাগু বা কুর্দ জেলা বুঝেছে, কাল হয়ত বুঝবে কলকাতা।
কোচি দিয়ে শুরু করলাম, কেননা ওই ব্যস্ত বিমানবন্দরটি তৈরি হয়েছে ধানক্ষেত আর জলাভূমি বুজিয়ে, যেমন পাহাড় আর জঙ্গল ধ্বংস করে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর। কেরালার দীর্ঘতম নদী পেরিয়ারের প্রান্তসংলগ্ন এই নাবাল জমির চরিত্র পরিবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতিকে তছনছ করে ব্যস্ত মানুষের নামা ওঠার কারণে যে ক্ষতি তা বন্যার পর অর্থমূল্যে দাঁড়িয়েছে ৫০০কোটি ভারতীয় মুদ্রা।
এই পেরিয়ার ছাড়া কেরালাতে আরো ৪৩ টি নদী আছে। তাদের ওপর রয়েছে ৬১ টি বাঁধ। মুশকিল হল, প্রচলিত ধারণা অনুসারে বাঁধ বন্যা রোধ করে। কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে ঘটে ঠিক উল্টো। বড় বন্যা হলে বাঁধগুলো হয়ে যায় দুধারী তলোয়ার। বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে পড়ে এদের জন্য।
২০১৭ সালে জানা গেছিল এই ৬১টি নদীবাঁধের একটিতেও বিপর্যয় রোধের এমার্জেন্সী অ্যাকশন প্ল্যান নেই। সম্ভবত এ দেশের বেশির ভাগ নদীবাঁধ ও জলাধারেই তা অনুপস্থিত। প্রাক্ বর্ষা এবং বর্ষা-উত্তর অবস্থায় এদের নিরাপত্তা অটুট রাখবার জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ, কখনো তা নেওয়া হয়েছে কিনা তাও কেউ জানে না। অথচ যতো দূষণ বাড়ছে, যতো প্রখর হচ্ছে উষ্ণায়ণ, ততই পালটে যাচ্ছে জলবায়ুর চেনা ধরণ। আর বেড়ে যাচ্ছে খেয়ালী এবং চূড়ান্ত বৃষ্টিপাত। রাজস্থানে বন্যা হচ্ছে আর উত্তরবঙ্গ পুড়ছে। যেখানে পরিমিত বৃষ্টি বা বৃষ্টির আকাল ছিল সেখানে প্রবল ও হঠাৎ বর্ষণের সম্ভাবনা বাড়তেই থাকবে। এই পর্যায়ে এটা স্পষ্ট যে উপকূলীয় এবং নদীঘেঁষা শহরগুলিতে এই কারণে ও আরো অন্যান্য দূষণে বন্যা সম্বৎসরের অতিথি। খুবই উচিত কোন বিমানবন্দর নাবাল জমি বা নদীর কোল ঘেঁষে না বানানো। কিন্তু মুম্বাই এয়ারপোর্ট বানানো হল মিঠি নদী বুজিয়ে। চেন্নাই এয়ারপোর্ট তার একটি রাণওয়েকে ঠেলে পাঠিয়েছে সিধে আদিয়ার নদীর বুক চিরে। বাৎসরিক বন্যা বা প্রবল বৃষ্টিপাতে এরা বিপুল আর্থিক ক্ষতি বার বার সহ্য করতে বাধ্য হবে।
এই একই কান্ড প্রায় ঘটতে চলেছিল খাস কলকাতার বুকে। কোনওরকমে আটকানো গেলেও আইনের নানা ফাঁকফোকর দিয়ে সেটি যে আবার ঘটানো হবে না তা কখনোই বলা যায় না। কলকাতার বর্তমান মহানাগরিক ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিবেশ দপ্তরটি হাতে পেয়েই ফরমান জারি করেন, পূর্ব কলকাতা জলাভূমির বিস্তীর্ণ অংশ বুজিয়ে ঝাঁ চকচকে ফ্লাইওভার বানানো হবে। নিউটাউনের আধুনিক প্রসারকে পায়ের নীচে রেখে তার গন্তব্য হবে কলকাতা বিমানবন্দর। ঠিক হল আন্তর্জাতিক প্রসিদ্ধি লাভ করা এই রামসার সাইটে অসংখ্য জলাভূমি ও ভেড়ি বুজিয়ে তোলা হবে একশ চল্লিশটি থাম্বা যার ওপর শরীর এলিয়ে পড়ে থাকবে এই পাঁচকিমি লম্বা ফ্লাইওভার। সেইমত দ্রুত কাজও শুরু হয়ে যায় এবং দশটি জলাভূমিকে সম্পূর্ণ/আংশিক বুজিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবেশবিদরা আপত্তি জানালে এ রাজ্যের আরেক মহাবলী মন্ত্রী ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন যে এই তথাকথিত পরিবেশকর্মীরাই দেশের বড় শত্রু। মজার ব্যাপার হল, এই কাজে ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (EKWNA) সংস্থাটির অনুমতি নেওয়া জরুরী জেনে মহানাগরিক প্রথমেই সেই সংস্থাটির কর্তা হয়ে বসেন এবং ‘In Principle’ ক্লিয়ারেন্স অতিদ্রুত বার করে দেন। উপায়ান্তর না দেখে হাইকোর্টে কেস হয়, যদিও ১৯৯২ সালেই জাস্টিস উমেশ বন্দোপাধ্যায়ের দেওয়া রায় অনুসারে উল্লিখিত জলাভূমি ও সেখানে বাস করা মানুষজনের হিতার্থে ছাড়া আর কোনওভাবেই এর কোনও পরিবর্তন করা যাবে না। এই রামসার সাইটে জলবাসী প্রানী ও প্রান্তবাসী মানুষ পরিবেশ শৃঙ্খলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে। এটি সম্প্রদায়ভিত্তিক জলাভূমি ব্যবহারের (Community Based Use of Wetlands) একটি দূর্লভ আন্তর্জাতিক নজির।
এছাড়াও আছে ওয়েস্টবেঙ্গল ফিশারিজ অ্যাক্ট ১৯৮৪। এতে জলাভূমি বোজানো একেবারেই বারণ। যদিও তলে তলে দীর্ঘদিন ধরেই ভেড়ি বোজানো হচ্ছে, হাতবদল হচ্ছে এবং ল্যান্ডস্কেপে অবাঞ্ছিত পরিবর্তন আসছে। যেমন সেচদপ্তর বাসন্তী হাইওয়ের ধার বরাবর বাঁশ ও কাঠের সাঁকোগুলিকে কংক্রিটের ব্রিজে রূপান্তরিত করছে। পরিবেশবিদদের ধারণা মৎস্যজীবীদের চলাচলের সুবিধে করে দেওয়ার জন্য এই ‘উন্নয়ন’ নয়। বরং যাতে ভারী ট্রাক নির্মাণ সংক্রান্ত মালমশলা দ্রুত নিয়ে যেতে পারে তার জন্যই এই পরিবর্তন।
এরই মধ্যে পালাবদলের পালার শেষে দেখা যাচ্ছে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী পরিবেশ দপ্তরটি পেয়েছেন এবং সেন্ট্রাল ওয়েস্টল্যান্ড অথরিটির কাছে ক্লিয়ারেন্স নেবার জন্য ফ্লাইওভার ফাইলটি গেছে। কিন্তু হাইকোর্ট বলে দিয়েছে সেই ক্লিয়ারেন্স মিললেই ফ্লাইওভার তখনই শুরু করা যাবে না। ফ্লাইওভার হবে কি হবে না তার ফয়সালা হবে হাইকোর্টে। পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণে লুকিয়ে আছে কলকাতা শহরের সুস্থতার প্রাণভোমরা -- একথা সরকার বাহাদুর যত তাড়াতাড়ি বোঝেন ততই মঙ্গল।
একথা ঠিক যে কেরালাতে এবার অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে এবং গত একশ বছরে এরকম বন্যা হয় নি। কিন্তু এই বন্যার পেছনে মানুষের লোভী হাতের ছায়াও বড় গভীর। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা সংরক্ষণ কমিটির চেয়ারম্যান মাধব গ্যাডগিল ২০১১ সালেই সতর্ক করেছিলেন যে উন্নয়নের নামে যত্রতত্র ভারী শিল্প স্থাপন, খনিমুখ খনন চলবে না। বলেছিলেন তথাকথিত উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করতে হবে স্থানীয় জনসম্প্রদায় এবং গ্রামপঞ্চায়েতের অনুমতি নিয়ে এবং তাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে। প্রবল বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও বন্যার এই ভয়াবহতা অনেক কম হত যদি আগেই গ্যাডগিলের কথা শোনা হত। এই কমিটি চেয়েছিল বাস্তুতন্ত্র বৈচিত্রে ধনী পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, যার বিস্তার কেরালা সহ ছয়টি রাজ্যজুড়ে, তাকে পরিবেশ-সংবেদী (Ecologically Sensitive) বলে ঘোষণা করা হোক।
দূর্ভাগ্য যে এই ছ’টি রাজ্যই ওই কমিটি রিপোর্টের প্রবল বিরোধিতা করে। উন্নয়নের মোহে প্রবল স্থানীয় চাপ সৃষ্টি হয়। তাই কে, কস্তুরীরঙ্গন কমিটি গঠন করে গ্যাডগিল কমিশনের সুপারিশগুলোতে প্রচুর জল মেশানো হয়। গতবছর কেন্দ্রীয় সরকার পুরো পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পরিবর্তে মাত্র ৫৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশ-সংবেদী ঘোষণা করে। অর্থাৎ ওই এলাকায় কোনও খনন, বৃহৎ শিল্পনির্মাণ, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পস্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরমধ্যে মাত্র ১৩,১০৮ বর্গকিলোমিটার পড়েছিল কেরালার ভাগে, স্থানীয় বাধায় সেটিও কমে হয় ৯,৯৯৩.৭ বর্গকিলোমিটার। শেষ অবধি এইটুকু নোটিফায়েড এরিয়া সংরক্ষিত বলে ঘোষিত হয়।
কর্ণাটকের কুর্গ বা কোদাগু জেলায় প্রবল বৃষ্টিতে জলবন্দী ছিল হাজার-হাজার মানুষ। পাহাড়ি এলাকা বলে বৃষ্টিপাতের ফলে ধস নেমেছে এবং বাড়ি, সেতু, রাস্তা, কারখানা, অফিস সমস্ত নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষ জানে না নদী ঝর্ণা বুজিয়ে নির্মাণ চালালে, বিশেষত তা যদি হয় উৎসমুখের কাছে, তাহলে তা ডেকে আনবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বৃষ্টিতে ধ্বস নামা আটকাতে হলে পাহাড়ের ঢালে গাছ কেটে যথেচ্ছ রাস্তা বাড়ি, পাথর ভাঙার ফ্যাক্টরি বানালে চলবে না। ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের অন্তর্গত ডিসাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট চিফ ডঃ মুরলী থাম্মারুকুন্ডির সুপারিশ অনুযায়ী অভূতপূর্ব বন্যা যা হয়ত শতাব্দীতে একবার ঘটে তা মানুষ ভুলে যায় এক দশকের মধ্যেই। তারপর নদীর মনোরম শোভা এবং অন্যান্য কারণে তার গা ঘেঁসে গড়ে উঠতে থাকে হোটেল, রিসর্ট, পেস্টিসাইড ফ্যাক্টরি বা অন্য কিছু। কিন্তু এটা ঘটনা যে আবার ঐরকম বন্যা হলে আবার জল উঠে আসবে আগের জায়গায়, বা উষ্ণায়নের ফলে তার চেয়েও বেশি উচ্চতায়। নদীর কাছ থেকে যে জমি মানুষ কেড়ে নেবে, কখনো না কখনো নদী সেই ভূখন্ডে নিজের দাবী জানাবেই। প্রয়োজন হলে ঘরে ঢুকেও। তাই বন্যার জল কখনো উঠেছিল এমন জায়গায় ফ্ল্যাট, সুপার মার্কেট না বানানোই ভালো।
১৯২৪ সালে কেরালায় প্রবল বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তার রেকর্ড ঘাঁটলে বোঝা যাবে এবার তার থেকে খুব বেশি কিছু হয়েছে কিনা। কিন্তু সেসব ভুলে যেই পেরিয়ার নদীতে ড্যাম বানানো সম্পূর্ণ হল, অমন লোকে তীর ঘেঁষে “সুন্দর, সুন্দর“ বাড়ি বানাতে লাগল। আজ সেগুলো কোথায় !
বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য মাত্র। নদীর স্বাভাবিক চলনের জন্য যে জায়গা দরকার তাকে তা দিতে হবেই। বন্যায় বিস্ফারিত হবার জায়গাও দিতে হবে। বন্যার পরে নদী উপত্যকায় ভূগর্ভস্থ জলের ভান্ডারের নবীকরণ হবে, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের ভান্ডার ভরে উঠবে। মানুষের লোভ থাবা না বসালে সেই বন্যা হয়ত এতো বিধ্বংসীও হবে না।
প্রকৃতির এই রুদ্ররোষের সঙ্গে পেরে ওঠা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, এটা বুঝেই গোটা পৃথিবীজুড়ে শুরু হয়েছে তথাকথিত উন্নয়নের পিছু হটা। নাইরোবিতে চরম পদক্ষেপ নিয়ে অসংখ্য কংক্রিটের বিল্ডিং ধূলোয় মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু এগুলো সবই তৈরী হয়েছিল জলাভূমি বুজিয়ে, জমা জল বেরোবার পথ না পেয়ে বছরকার বন্যায় তলিয়ে দিচ্ছিল সবকিছু। সিওলে পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় ভেঙ্গে দেওয়া হল লম্বা এক হাইওয়ে, যার ভিত ছিল একটা ছোট নদীর বুক জুড়ে। হয়ত এর ফলে ট্রাফিক কিছু কমেছে, কিন্তু দেখা গেছে বাতাস ৩৫% দূষণমুক্ত হয়েছে আর কমেছে আরবান ‘হিট আইল্যান্ড’ এফেক্ট। ছ’গুণ বেড়ে গেছে জীববৈচিত্র। দূষণমুক্ত এলাকায় জমির দাম শহরের অন্যান্য অংশ থেকে অনেকগুণ বেড়েছে।
মজে যাওয়া নদী, শুকিয়ে যাওয়া ঝরণার কলতান যে ফিরিয়ে আনা যায় তা প্রথম হাতেকলমে প্রমাণিত হয়েছিল জুরিখে, এখন এই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। নিউইয়র্কে স’ মিল নদীকে পুনরায় জীবিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। লন্ডন এবং শেফিল্ডে স্থানীয় ছোট নদীগুলোকে পুনর্জীবন দেওয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে ফিরে পাওয়া একটি নদীকে নাগরিকের সম্মান প্রদান করা হয়েছে।
এই প্রচেষ্টার অর্থনৈতিক দিকও হেলাফেলার নয়। ফিরে পাওয়া নদী, ঝরনা দেখতে আসে দলেদলে পর্যটক। বাড়তি পাওয়া যায় জীববৈচিত্র, দূষণমুক্তি, স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনের গুণমান বৃদ্ধি আর ভবিষ্যত প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলার জন্য মজবুত হাতিয়ার। যত ক্ষতি চেন্নাই বা কেরালার বন্যায় হয়েছে তাকে কমাতে পারলেই তো অর্থকরী লাভের পাল্লা বহুগুণ ভারি হয়।
দুঃখের বিষয়, ট্রেনে চেপে পূর্ব ভারত থেকে কন্যাকুমারিকা অবধি গেলে এমন একটিও নদী দেখা যাবে না যার বুকে ট্রাকের টায়ারের দাগ নেই। অবৈধভাবে বালি তোলা, মাটি ও জঞ্জাল ফেলে নদী বুজিয়ে দেওয়া এদেশে সবই জায়েজ। পশ্চিমঘাট পর্বতে হাতি চলাচলের রাস্তায় সারিসারি গড়ে ওঠা আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন রিসর্ট বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও সদর্থক পরিবেশবান্ধব খবর হালে চোখে পড়েনি। বরং পরিবেশযোদ্ধাদের অস্তিত্বের উপরেই আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু ২০১৬ সালেই ১৬ জন পরিবেশবাদী খুন হয়েছেন। এই তালিকায় নবতম সংযোজনটির কথা একটু বিশদেই বলা যাক।
কর্ণাটকে ছোট্ট নদী কালি, মাত্র ১৮৪ কিমি লম্বা। এর উপরেই বানানো হয়েছে ৬টি বাঁধ। সপ্তমটির তোড়জোড় যখন তুঙ্গে তখন পরিবেশবিদ অজিত মানেশ্বর নায়েক স্থানীয়দের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু লোক্যাল মাফিয়াদের হাতে কালি নদীর জীবনের বিনিময়ে তার নিজের প্রাণটি হারাতে হয়।
বরুণ বিশ্বাসের মৃত্যুর পেছনে অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ এমন কোনও অভাগা নদীকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা বলে শুনেছিলাম যেন। এ রাজ্যেও উঠে আসছে চূর্ণী নদীর মৃত্যু, ৫৪ বিঘার ভাবাদিঘী বোজানোর প্রচেষ্টা আর যশোর রোডে ৩৬৫টি প্রাচীন গাছের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা। জাতীয়স্তরে চলছে আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমিন ছিনতাই আর আম্বানী আদানীদের গ্লেসিয়ারের ওপর দিয়ে চূড়ান্ত পরিবেশবিরোধী ফ্লাইওভার নির্মাণের হাস্যকর প্রচেষ্টা।
কার নিন্দা কর তুমি,
এ আমার এ তোমার পাপ!