এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • কোথায় বা যাব তোকে ফেলে?

    কৌশিক দত্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১২ মার্চ ২০১৫ | ২৯৯০ বার পঠিত
  • কোনো কোনো বিষয়ে সকলেরই বক্তব্য থাকে, প্রতিক্রিয়া থাকে। কখনো তীব্র আবেগ, কখনো যৌক্তিক। অথচ প্রায়শঃ কারো কোনো কর্তব্য থাকে না। ধর্ষণের ক্ষেত্রে যেমন। বাক্য স্বাধীন। মনন দিগন্তপ্রসারী। দায়হীনতা সর্বগ্রাসী।

    যক্ষ্মাগ্রস্ত মেয়েটি তো নিজেই বেছে নিয়েছিল পাহাড়ি স্যানাটোরিয়ামে অপূর্ব মৃত্যু। এই ভাঙনকালে নীতার মাজাভাঙা বাবা যদি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে বলেন, “আই অ্যাকিউজ”, সাথে সাথে গান গাওয়া বড়দার মতো ঘাড় বেঁকিয়ে জিগাতেই পারি, “কাকে?” হেরো বাপের তখন একটাই উক্তি, “কারেও না।” বুক যতটা ঝাঁঝরা হবার হয়ে গেছে মেয়ের ও বাপের। ছলকে ওঠা রক্ত এখন আপনার পরীক্ষাগারে। যে কারো দিকেই, এমনকি “আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম” মেয়েটির দিকেও আঙুল তুলে বলতে পারেন, “আই অ্যাকিউজ”, বা চাইতে পারেন প্রেমিক, দাদা ও ছোট বোনের ফাঁসী।  নক্ষত্র যখন মেঘের আড়ালে আর ভাষা উন্মুক্ত, তখন মননে কোনো অন্যায় নেই। অকর্মণ্য আমিও, অতএব, কথা বলি।

    আমার একটা নিজস্ব কারাগার আছে। পেনাল্টি বক্স। আমি গোলকিপার। আক্রমণ ঠেকাতে জানি, তীক্ষ্ণ ফলা শানাতে শিখিনি। ঈগল বা স্ট্রাইকারের দৃষ্টিতে খেলাটা কী রকম, সেটা আমি সঠিক বুঝি না। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকি আর হেরে যাওয়া মানুষের গ্রীনরুমে দেখি আঘাত ও শুশ্রূষা। এই দেখা অসম্পূর্ণ, কে না জানে? তবু এই অর্ধেক দেখাটুকুর কথাই আমি বলতে পারি, কারণ এটুকুই প্রত্যক্ষ দেখেছি। প্রতিআক্রমণে বিপক্ষকে চুরমার করা বীরত্ব থেকে অনেক পিছনে দাঁড়িয়ে আমি শুধু গোল খেয়ে যাওয়া মেয়েটিকেই চিনেছি। 

    প্রতিটি ধর্ষণের পরে সেই ফুটবলটাই আবার খেলা হয় দেখি। স্পষ্ট দু-দলে ভাগ হয়ে সকলে বলে ওঠেন, “আই অ্যাকিউজ।” কারো তর্জনী মেয়েটির দিকে, কেউ উল্টোদিকে তাক করেছেন। সবার মুখে স্লোগান, “মুণ্ডু চাই।” কোনো কোনো ঘটনা এমনই, যে প্রতিক্রিয়া আগ্নেয় হতে বাধ্য। দোষ দেব কাকেই বা? সবাই তো আবেগতাড়িত। কিন্তু গোলকিপারের জন্য “মুণ্ডু চাই” স্লোগান নিষিদ্ধ। অগত্যা সে চলে যায় বিকল্প ভাবনায়।   

    ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ দিনটা মনে থাকার কারণ এই নয় যে জ্যোতি সিংহ পান্ডের আগে-পরে ভারতে কোনো মেয়ে ধর্ষিত হয়নি। এই বছরের প্রথম দুই মাসেই দিল্লী শহরে ৩০০ ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। ঘটনার বীভৎসতা মনে রেখেও বলতে পারছি না যে সেই ছিল সবচেয়ে জঘন্য অত্যাচারের শিকার। জননাঙ্গে পাথর সহ্য করা সোনি সোরি থেকে শুরু করে কদিন আগে হরিয়ানার ধর্ষিত-নিহত মনোরোগী তরুণী বা আজ সকালের কাগজে দেখা ছয় বছরের মেয়েটা, যার শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে চার ফুট এক লোহার রড... এরা সবাই জানাচ্ছে পুরুষতন্ত্রের অত্যাচারে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে কিছু হয় না। বিরলের মধ্যে বিরলতম যদি কিছু ঘটে থাকে, তা ছিল মানুষের প্রতিক্রিয়া। প্রথমবারের জন্য মনে হয়েছিল খেলার দুই দলের শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন এল বুঝি। মনে হয়েছিল মেয়েটির গোল লক্ষ্য করে ফ্রি কিক মারা দল যেন খেলোয়াড় হারাচ্ছে। দেওয়াল উঠছে জ্যোতিদের পেনাল্টি বক্সের সামনে। সেই মানব প্রাচীর দেখে দু-মুহূর্ত থমকে গেছে সেট-পিস অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার ও কোচ। জনগর্জনে চাপা পড়ে যাচ্ছে “মেয়েটির সরস্বতী মন্ত্র পড়া উচিত ছিল” বলে ফেলা ধর্ষণ-বিশেষজ্ঞ ধর্মগুরুর স্বর। আতঙ্কিত সরকার মেয়েটিকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে, যাতে দিল্লীর মাটিতে তার মৃত্যু ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্ম না দেয়। আইন সংশধনের তোড়জোড়। সেই প্রক্রিয়ায় শিক্ষিত মানুষের বিপুল অংশগ্রহণ। অনেকদিন পর সংশোধনাকারী বিচারকদের ভূমিকাও দায়িত্বশীল। 

    আমরা, যারা ইতিহাস থেকে কিছুই শিখি না, তারা ভেবেছিলাম এই প্রতিরোধ ও পরিবর্তন বুঝি থাকতে এসেছে। ভেবেছিলাম অত্যাচারের এই পিছু হটা শুরু। কিন্তু যতটা স্বপ্ন ছিল, ততটা শ্রম ছিল না আমাদের। প্রাচীরের ফুটো দিয়ে যখন ঢুকতে লাগল সমুদ্রের জল, তখন তর্জনীকে অভিযোগের বদলে প্রতিরোধের অস্ত্রে পরিণত করে অবিচল রইল না কোনো হান্স ব্রিঙ্কার। আমাদের আমস্টারডাম যথারীতি ডুবে গেল আবার। জাস্টিস জে এস ভার্মার মৃত্যু যেন ভাসানের ইঙ্গিত। সরকার অতঃপর ভেঙে দিলেন তাঁর ছেড়ে যাওয়া শঙ্খচূড়ের বিষদাঁত। ভারতের পবিত্রভূমি আবার নির্ভয় হল। আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের পরিণতির জন্যে মেয়েটিকে দায়ী করার পর সর্পভয়হীন এক আইনজীবি ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন আমাদের এই বিশ্বসেরা সংস্কৃতিতে নারীর কোনো স্থান নেই। সুগ্রীব দোসর ডাক দিলেন অবাধ্য মেয়েদের পুড়িয়ে মারার। অমনি গুরুজনেরা নেমে পড়লেন ধুলোটাকে কার্পেট চাপা দেবার কাজে। আর লঘুজনেরা কেউ কেউ বন্ধুকে চুপি চুপি বললেন, “ভুল কী বলেছে বল? আজকালকার মেয়েরা শালা...” কেউ কেউ আবার স্লোগান তুললেন, “মুণ্ডু চাই।” আবার আমি কোনো দলে নাম লেখাতে পারলাম না। পরদিন নাগাল্যান্ড থেকে চারজন জ্ঞানী ব্যক্তি সন্ধ্যাতারার পথ ধরে এসে পড়লেন আমাদের আস্তাবলে। তাঁদের হাতে সোনার থালায় সাজানো নরমুণ্ড। এই তো চেয়েছিলাম! 

    ধর্ষণ নিরোধী মনন-বিশ্বকে মাঝে মাঝে কুরুক্ষেত্র মনে হয়। কোন দণ্ড দিলে কেউ আর সাহস পাবে না, কী ভাবে অপরাধকে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্মূল্য করে দেওয়া যায়, ঘরে ঘরে শৌচাগার তৈরী করলে ধর্ষণের আশঙ্কা কমবে নাকি এ আসলে মেয়েদের গতায়াত রুদ্ধ করার এক সরকারী ষড়যন্ত্র, কোন পোষাক অনুপ্রবেশরোধী, কোনটা উত্তেজক, কী ধরণের সিনেমা বা সংস্কৃতি নিষিদ্ধ হলে এইসব অপরাধ আর হবে না, ইত্যাদি প্রভৃতি গম্ভীর বিষয়ে অজস্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, মতবাদ এবং চিৎকার আছে। আশ্চর্য ব্যাপার একটাই, সকলেই নিজের মতবাদে ১০০ ভাগ বিশ্বাসী এবং নিশ্চিত যে ঐ একটিমাত্র উপায় অবলম্বন করলেই কোনো তারা আর মেঘে ঢাকা থাকবে না। ব্যাপারটা অনেকটা মহান বিপ্লব, সত্যযুগের আগমন বা বিশল্যকরণীর মতো। এই বিপুল ব্যাপার নিয়ে দু-চার কথায় কিছুই বলা চলে না। বরং দু-চারটে সমস্যার মুখোমুখি হওয়া যাক। গোলকিপার হিসেবে যেভাবে এদের মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেইভাবে। অন্য কেউ অন্য কোনো অবস্থান থেকে অন্যভাবে এইসব বা অন্যান্য প্রশ্ন বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে অন্য কিছু সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্তহীনতায় উপনীত হতে পারেন। সেটা হবে তাঁদের জন্য ততটাই সত্য, যতটা আমার দেখা আমার জন্য। 

    এই পর্যায়ে নিজের বীক্ষণের আরো কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলে রাখি। 

    প্রথমতঃ আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে ব্যক্তির প্রতি। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তির দিকে এত নিবিষ্টভাবে নজর দিতে হয় যে বহুজনহিতায় কর্মসূচি অনেক সময় নাগালের বাইরে থেকে যায়। এই ব্যক্তি সাধারণত অসুস্থ বা আহত মানুষ। যৌন অত্যাচারের শিকার দু-চারজনের সাথে এইভাবেই পরিচয়। 

    দ্বিতীয়তঃ ঘটনাচক্রে অন্যায়কারী কিছু মানুষের জন্যেও একই ভূমিকা আমাকে নিতে হয়েছে দু-একবার। এই মানুষটির কাজ যত ঘৃণার্হই হোক না কেন, তাকে মানুষ হিসেবে বর্জন করার কোনো উপায় বা অধিকার আমার ছিল না। তার অপরাধ-প্রবণতার হাত থেকে তাকে এবং অন্য মানুষদের বাঁচাতে চেয়েছি। এই চেষ্টার শুরুতেই দেখেছি তাকে ঘৃণা করে এই কাজ করা সম্ভব নয়, বরং জরুরি “নোংরা” লোকটির সাথে “এমপ্যাথি” বা সমমর্মিতাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন। এইভাবে হোঁচট খেতে খেতে বাধ্য হয়েই মানুষকে মানুষ হিসেবে মেনে নিতে, চিনতে এবং ক্রমশ বুঝতে শিখেছি। তার মানে এই নয় যে এখনো মুকেশ সিংহকে মানুষ হিসেবে মেনে নিতে আমার অসুবিধে হবে না। প্রতিবারের মেনে এবং মানিয়ে নেওয়া এক জটিল প্রক্রিয়া, যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা অপ্রয়োজনীয়। সারসংক্ষেপ হল এই যে এই দীর্ঘ অভ্যেসের ফলে আমি এখন আর বিচারকের ভূমিকা নিতে পারি না। গোল খেয়ে যাওয়া মেয়েটিকে বাঁচিয়ে, তার ঘা সারিয়ে পরের ম্যাচের জন্যে সুস্থ করা নিয়েই আমার যাবতীয় মাথাব্যথা। আবার সে চোট না পায়, সেটা নিয়েও চিন্তা আছে। কিন্তু বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে আসার পরিকল্পনা করতে আমি অক্ষম। এই অক্ষমতা আমার ভাবনায় অবশ্যই প্রতিফলিত হবে। সেই ঘাটতি নিয়ে আমার কোনো অহংকার নেই। 

    এবার ভাবনা ও বিশ্বাসের সমস্যাগুলো দেখা যাক। 

     

    একঃ এই ওষুধে ক্যান্সার সারে -  

    এমন কোনো ওষুধ নেই যাতে সব ক্যান্সার সারে। ক্যান্সার পৌনে হাজার রকম। তার ওষুধ সাড়ে তিরান্নবই রকম। এক ধরণের ক্যান্সারের পাঁচ রকম ওষুধ হয়। তিন-চার রকম হয়ত এক সাথেই প্রয়োগ করতে হয়। সব ওষুধ সব রোগীর সহ্য হয় না। বেখাপ্পা ওষুধের ঠ্যালায় ক্যান্সারের চেয়েও তাড়াতাড়ি মরতে পারে। এইবার ক্যান্সারের জায়গায় নারীনির্যাতন, ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, ইত্যাদি কিছু একটা বসান পছন্দমতো। ব্যাপারটা একইরকম থাকবে। 

    যাঁরা সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা আরো ভালভাবে জানেন যে ক্ষেত্র যত বিস্তৃত আর জটিল হয়, ভবিষ্যদবাণী ভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা তত বাড়ে। সামাজিক ক্ষেত্রে তাই “অমুকটা করলেই তমুকটা হবে” বলা দুঃসাহসের পরিচয়। সঠিক হবার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ ত্রিশ শতাংশের কাছাকাছি। যত উদার ভাবে ভাববেন, অন্যের মতকে যত বেশী গুরুত্ব দেবেন, একটা মাস্টার কী-র বদলে একাধিক তালার একাধিক চাবি ব্যবহার করতে যত উৎসাহ দেখাবেন, দরজা খোলার সম্ভাবনা ততটাই বাড়বে। 

     

    দুইঃ “জিন্দা লাশ” -  

    জ্যোতি মারা যাবার পর এক দরদী রাজনৈতিক ব্যাক্তি এরকম বলেছিলেন... ভালই হয়েছে, মেয়েটা মরে বেঁচেছে। নইলে জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকত। যদি সমাজের কোনো একটা মানসিক বিকার নিয়ে আমার সত্যিকারের বিবমিষা থাকে, তাহলে এটা। মেয়েটির বেঁচে থাকার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় এই মনোভাব। শুধু অন্য লোকে এ কথা বিশ্বাস করলে সমস্যা ছিল না; অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েটি নিজেও তাই বিশ্বাস করে। সমষ্টি এবং ব্যষ্টির নিঃশ্বাসে মিশে যাওয়া এই বিষাক্ত বিশ্বাসকে আক্রমণ করা ধর্ষককে হত্যা করার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। 

    মেয়েটিকে আর তার পরিবারকে “কিচ্ছু হয়নি” বলে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আপাত দৃষ্টিতে একথা বলা অন্যায়। কিচ্ছু হয়নি মানে? এত বড় সর্বনাশের পর এই কথা? এই আরেকজন পুরুষতান্ত্রিক শূকর। সংবেদনশীলতার কণামাত্র নেই। এই সব অভিযোগ শুনেও আমি এই কথাটা বলতে চাই এবং বলে থাকি। যাঁদের বলেছি, তাঁরা প্রায় সকলেই আমাকে মার্জনা করেছেন। ব্যক্তিগত স্তরে যাঁদের সে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু যাঁদের এই কথাটা শোনা এবং বিশ্বাস করা প্রয়োজন, তাঁদের জন্য এখানে বলছি। “কিচ্ছু হয়নি।” অপরাধ নিতে পারেন। মার্জনা না করলেও চলবে। কিন্তু এই যে আপনার চরম অভিজ্ঞতাকে একরকম ট্রিভিয়ালাইজ করলাম, সেই অপরাধে আমাকে রোজ সকাল-বিকাল গালি দেবার ফাঁকে এই কথাটা নিজেকেও শোনান। শেষে যদি একদিন এটা বিশ্বাস করতে পারেন, দেখবেন বাঁচতে ইচ্ছে করছে। পাশের বাড়ির মেয়েটি যদি এসে গোপনে কাঁদে আপনার কাছে, তার কানে কানেও এই কথাটাই বলুন, “কিচ্ছু হয়নি। কোথাকার কে লম্পট কী করল, তার জন্য তোর জীবন যাবে? জীবন বুঝি এতই ফেলনা?” 

    ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে প্রাণদণ্ডের বিরোধিতা যাঁরা করেছেন, তাঁদের যুক্তি সাধারণত সংখ্যাতাত্বিক এবং আইনগত। রাষ্ট্র কারো জীবন নিতে পারে কিনা, সে এক তুমুল বিতর্ক। যে সব দেশে প্রাণদণ্ড আছে, সে সব দেশে ধর্ষণের সংখ্যা হ্রাস পাবার কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া প্রাণদণ্ডই যদি শাস্তি হয়, তাহলে অপরাধ প্রমাণ করার কাজটা আরো বেশী কঠিন হয়ে পড়বে, কারণ কোন বিচারকই বা সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে কলমের নিব ভাঙা রায়ে স্বাক্ষর করতে চাইবেন? সুতরাং প্রমাণাভাবে খালাস পেয়ে যাবার সম্ভাবনা বাড়বে বৈ কমবে না। এমনকি প্রমাণ লোপাটের জন্য নারীহত্যার সংখ্যাও বাড়তে পারে। এসব নিয়ে এত আলোচনা হয়েছে,  যে নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রাণদন্ডের বিরুদ্ধে গোলকিপারের আপত্তি অন্য কারণে। 

    ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যু হলে এ কথা স্পষ্ট স্বীকার করে নেওয়া হয়, যে ধর্ষণ মৃত্যুর সমতুল্য। এখানেই আমার সমস্যা। কদিন আগেই আমার পরিচিত এক মহিলা ইরাকের ইয়াজিদি মেয়েদের ওপর আইসিসের অত্যাচারের কাহিনী পড়ে বলেছেন, “এমন পরিস্থিতি এলে আত্মহত্যা করাই উচিত।” ধর্ষিত হবার অভিজ্ঞতা মৃত্যুর চেয়েও খারাপ। যার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেই জানে। খুব সত্যি কথা।

    কিন্তু আমার সামনে সেই মেয়েটি নেই যে ধর্ষকের হাতে নিহত বা আত্মঘাতী। আছে সেই মেয়েটি, যে মরেনি এবং মরতে চায় না, কিন্তু বুঝতে পারছে না সে সত্যি বেঁচে আছে কিনা। এবার যদি “ধর্ষণ = মৃত্যু”, এই সমীকরণটা মেনে নিই, তাহলে সেই মেয়েটিকে জানিয়ে দিতে হয় যে সে মরে গেছে। সুতরাং বেঁচে থাকার ফালতু চেষ্টা করে লাভ নেই। এই কথাটা তাকে বলে দেবার উপায় নেই, তাই নিতান্ত নিরুপায় হয়ে আমাকে এই সমীকরণটার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়েছে। সেই “ইকুয়াল” চিহ্নটাকে অগত্যা আমি নিষ্ঠুর তলোয়ারে মাঝ বরাবর কাটি। এমনভাবে কাটি, যাতে সে আর মেয়েটির জীবনে ফিরে না আসতে পারে। মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়ে বাধ্য হয়েই ধর্ষণ নামক নারকীয়তম অভিজ্ঞতাটির রাজসিংহাসন ভেঙে ফেলতে হয়। মুছে দিতে হয় মেয়েটির সর্বহারা স্ট্যাটাস। আর তার পর, কী আশ্চর্য, মেয়েটির ভাবনা ও ভাষা পাল্টে যায়! অমুকের পা কাটা পড়েছে রেলে, তমুকের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, তবু তো বেঁচে আছে। তাহলে আমি কেন মরতে যাব? ধর্ষিত হওয়াকে তখন মৃত্যুর বদলে গুরুতর একটা আঘাত বলে মনে হয়। যাকে কোনোমতে পেরিয়ে যেতে পারলে আবার বাঁচা যায়। 

    ধর্ষকের হাতে পড়লে আত্মহত্যা করার কথা যাঁরা ভাবেন, তাঁদের আতঙ্ক না বুঝতে পারার কিছু নেই। “এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে হয়ত মরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না” বললে মেনে নেব, যদি মুক্তির কোনো সম্ভাবনাই দেখতে না পাওয়া যায়। অত্যাচারের বদলে মৃত্যু বেছে নেবার অধিকার অবশ্যই মানুষের আছে। কিন্তু “আত্মহত্যা করাই উচিত” বললে আপত্তি করব। আপত্তি এই ঔচিত্যের তকমার বিরুদ্ধে। আত্মহত্যাই যদি উচিত হয়, তাহলে বেঁচে থাকার রাস্তা বেছে নেওয়া মেয়েরা অতিরিক্ত জীবন-লোভী নির্লজ্জ হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাদের বাঁচা “অনুচিত” হয়ে যাবে। ডেথ সার্টিকিকেট লিখে দেবার পরেও ওরা বাঁচে কোন সাহসে? 

     

    তিনঃ ড্যামসেলের ডিস্ট্রেস এবং মরদের গোঁফ - 

    এই যে আমি এতক্ষণ বকলাম, সে তো একটি বা কয়েকটি মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা। সে চেষ্টা কি আমি একাই করছি? মোটেই না। তাহলে এত বকার কী আছে? সবাই তো প্রাণ-পণ চেষ্টা করে চলেছেন ধর্ষিত হওয়া থেকেই তাঁদের বাঁচাতে। সেইজন্যেই লক্ষ্মণ সীতার চার ধারে এঁকে দিচ্ছেন পবিত্র গন্ডি, যা পেরোনো রাবণের অসাধ্য। বাবা-দাদা-ভাই-দেবর সবাই মিলে কন্যাকে পরিয়ে দিচ্ছেন দুর্ভেদ্য অন্তর্বাস। অন্তর্বাসের উপর শাড়ি, শাড়ির উপর বোরখা, বোরখাকে ঘিরে দেওয়াল, দেওয়ালের চারিপাশে সশস্ত্র রক্ষী... সেইসব ডানাওয়ালা ভাল পুরুষেরা, যাঁরা নারীর সম্মান রক্ষার্থে নীল প্যান্টের ওপর লাল জাঙ্গিয়া পরে লৌহ ডাম্বেল নিয়ে দিনরাত বাইসেপ্স-ট্রাইসেপ্স করে চলেছেন। এঁদের পাহারায় নারী নিশ্চিন্ত। ঠিক যেন লেঠেলের পাহারায় নিশ্চিন্ত জমিদারী। 

    সুপারম্যানেরা কেন নিজেদের দারোয়ান ভাবে, তা নিয়ে বিস্ময় ছিল তরুণ বয়েসে। সম্ভবত নিজের পেশীহীনতা জনিত অসুয়া থেকে এই বিস্ময়। কিন্তু এখন বুঝি, সম্পত্তি রক্ষা করতে গেলে দারোয়ান হওয়া ছাড়া উপায় নেই। জমি-জমা লেঠেলের জিম্মায় দেওয়া যায়, কিন্তু নিজস্ব নারী-রক্ষায় কি ভরসা করা যায় পরপুরুষের উপর? তাই পেশী, লাঠি... নিদেন পক্ষে গলার জোর আর ইয়া মোটা পাকানো গোঁফ। নারী-নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে গাদা গাদা সেলিব্রিটির ভিড়ে সবচেয়ে নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেছেন যে কয়েকজন, তার মধ্যে একজন ফারহান আখতার। তাঁর উদ্দেশ্য সত্যি মহৎ, এ নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বিখ্যাত “মর্দ” ক্যাম্পেইনে তিনিও আওড়ালেন সেই সুকুমার কাব্য... “গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি, গোঁফ দিয়ে যায় চেনা।” অতএব নারী সুরক্ষায় গোঁফহীন পুরুষের উপর আর ভরসা করা গেল না। 

    তা নয় হলই। আপত্তি কিসের? আপত্তি নয়, দু-একটা সমস্যার কথা শুধু মনে করতে চাইছি। এই গোঁফজোড়াকে অবলম্বন করেই পুংলিঙ্গ আর স্ত্রীলিঙ্গের পাকাপোক্ত ছবি তৈরী হয়ে যায়। রক্ষাকর্তা আর রক্ষণীয়ার স্টিরিওটাইপ। পুরুষ বা নারী, কারো উপায় থাকে না এই ছাঁচ ভেঙে বেরিয়ে এসে বন্ধু হবার বা সমান মানুষ হবার। লেঠেল দারোয়ান প্যাট্রিয়ার্কের গায়েই “আদর্শ” মার্কাটা সেঁটে যায়। সেই আদর্শ মহাপুরুষের নাম যদি হয় অ্যাডভোকেট এ পি সিং, (কী আশ্চর্য লোকটার পাকানো গোঁফ নেই!) তাহলে তিনি সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দিতে পারেন যে তাঁর কন্যা অরক্ষণীয়া হয়ে গেলে তিনি তাঁকে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারবেন। ধর্ষণ থেকে বাঁচানোর জন্য পুড়িয়ে মারা, খানিকটা মাথা ব্যাথার চিকিৎসায় শিরশ্ছেদের নিদান গোছের শল্যচিকিৎসা। 

    এই মডেলের মধ্যে আরো অনেক সমস্যা আছে। সেগুলো এখানে আলোচ্য নয়। দু-একটা সংক্ষেপে উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন, এই ব্যবাস্থায় নারী যেহেতু সম্পত্তি, তাই ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন-কানুনগুলো অনেক সময় পুরুষের সম্পত্তি রক্ষার আইনের মতো। কোনো দেশে প্রকট ভাবে, কোনো দেশে কম। সম্পত্তি রক্ষার জন্য সম্পত্তিকে দরকার মতো ছেঁটে বা ঘিরে নিতে কোনো অসুবিধা নেই। এই ব্যবাস্থার আওতায় গুঁফো মর্দের থেকে সম্মান পেতে হলে নারীকে হতে হয় দেবী, অথবা কারো মা-বোন-স্ত্রী। যাঁরা কোনো পুরুষের মা, বোন বা স্ত্রী নন, এমনকি হতেও চান না, তাঁরা বাই ডিফল্ট বীরভোগ্যা। পাড়ার ছেনো মস্তান থেকে বোকো হারাম অব্দি যে কেউ তাঁদের সাথে হারামিগিরি করতে পারে, তাতে হারাম হয় না। আর সরকারী ভাবে যদি সম্পত্তি আপনি কিনে থাকেন, অর্থাৎ মেয়েটি যদি হয় আপনার বিয়ে করা বৌ, তাহলে আপনার ভোগদখলের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে কোন সম্বন্ধী? গাছের বয়স পনেরো হলেই যত খুশি ফল খান। বৈবাহিক ধর্ষণ আবার কী বস্তু? 

    এইসব কারণেই এই দারোয়ান চুকন্দর সিং মডেলটাকে আমি ভয় পাই। আমার পরিচিত অনেক বাবা-দাদা-স্বামী-প্রেমিক দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষ। ভাল বডিগার্ড না হতে পেরে হীনমন্যতায় ভোগেন। তাঁদের বলি কী, কেন মিথ্যে সলমন খান হবার চেষ্টায় জীবনটা বরবাদ করছেন? ছেড়ে দিন না মেয়েকে, বোনকে, বৌকে। সামলে নেবে, দেখবেন। হোঁচট খাবে। কিন্তু আবার উঠবে। উঠে দাঁড়ালেই তো হল। সেই সময় হাত ধরুন। আর উপহার দিন অ্যান্টিসেপটিক বোরোলিন... জীবনের নানা ওঠা-পড়া যাতে সহজে গায়ে না লাগে। 

     

    চারঃ চিন্তার ভাষা - 

    অনেকেই মনে করেন ভাষা একটা সুপার-স্ট্রাকচার মাত্র। এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তার কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু মানুষের সমস্যা হল এই যে সে ভাষার বাইরে ভাবতে পারে না, যুক্তি সাজাতে পারে না। সুতরাং ভাষা, বিশেষত স্বগত কথনের ভাষা, আমাদের ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভাবনা আমাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের সম্মিলিত আচরণ সমাজের আচরণ হয়ে ওঠে। সুতরাং ভাবনার ভাষাকে খেয়াল করা প্রয়োজন। 

    ধর্ষণ বিষয়ে আমরা অকারণে কর্মবাচ্যে ভাবি এবং কথা বলি। যেহেতু ধর্ষিতা শেষ পর্যন্ত অপ্রতিরোধী বা প্রতিরোধে অক্ষম, হেরে যাওয়া, “প্যাসিভ” একটা শরীর মাত্র... যার ইচ্ছা-অনিচ্ছা-কণ্ঠ ইত্যাদি কিছুই ছিল না, বা না থাকা-না থাকায় কিছু যায় আসে না, তাই প্যাসিভ ভয়েসে ভাবা একটা দর্শক-সুলভ প্রবণতা। মেয়েটি নিজেও যেহেতু নিজেকে প্যাসিভ হিসেবে চিনে ফেলেছে সেই মুহূর্তে, তাই সেও এই ভাবনা পরম্পরায় যোগ দেয় প্রশ্নহীন। এটাই মারাত্মক। কর্মবাচ্যে ভেবে জীবনের কর্তৃত্ব নিজের হাতে নেওয়া যায় না। সামাজিক স্তরেও এই ভ্রান্ত বাচ্য নির্বাচন বিশেষ কুফলদায়ী। ভাষাটাকে একটু প্রশ্ন করা যাক। 

    বলুন দেখি “মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে” কথাটার মধ্যে গলদ কোথায়? এক্কেবারে গোড়ায়। নিজে নিজে কেউ ধর্ষিত হতে পারে, এরকম প্যাসিভ ভয়েসে? আপনি একা একা বুড়ো হতে পারেন, ক্ষয় রোগাক্রান্ত হয়ে মরে যেতে পারেন, কিন্তু নিজে নিজে খুন হতে পারেন না। সেটা অন্য কেউ করলে তবেই ঘটবে, নচেৎ নয়। অতএব বাক্যটিকে শোধরাতে শুরু করা যাক।

    প্রথম সংশোধনঃ “মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে।” (মন্তব্য ~ “করা হয়েছে” খুব আবছা বর্ণনা। তাছাড়া দুটির বদলে একটি শব্দেই বলা যায় কথাটা; “করেছে”)

    দ্বিতীয় সংশোধনঃ “মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে।” (মন্তব্য ~ অসম্পূর্ণ বাক্য; কর্তা অনুপস্থিত।)

    তৃতীয় সংশোধনঃ “অমুক ব্যক্তি মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে।” (মন্তব্য ~ প্রয়োজনের অতিরিক্ত তথ্য। কাকে করেছে, সেটা না বলেও একটি সম্পূর্ণ বাক্য রচনা করা যায়। তাছাড়া “মেয়েটি”-র জায়াগায় “ছেলেটি”, “মানুষটি” [লিঙ্গ উল্লেখ না করে], “প্রাণীটি”, ইত্যাদি যে কোনোটাই হতে পারে, এবং সেসব ক্ষেত্রেও অপরাধের ধরণ পাল্টায় না। অতএব “মেয়েটি” শবদটা বাতিল।) 

    চতুর্থ সংশোধনঃ “অমুক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে।” 

    এই চার ধাপে আমার-আপনার দৃষ্টির কোনো পরিবর্তন হল? হল। সার্চলাইটের ফোকাস মেয়েটির বদলে ধর্ষকটির মুখে গিয়ে পড়ল। এটা করতে পারার সুবিধে অনেক। দুটো উদাহরন দিই। 

    প্রথম সুবিধেঃ মোল্লা নাসিরুদ্দিন এক রাতে রাস্তার ল্যাম্প-পোস্টের তলায় আঁতি-পাতি করে কী যেন খুঁজছেন। লোকে জানতে চাইল ব্যাপারখানা কী? 

    “আমার চাবির গোছাটা খোয়া গেছে।” 

    “এখানেই পড়েছে বুঝি?”

    “না, হারিয়েছে তো বাড়িতে।”

    “তবে মিথ্যে এখানে খুঁজছেন কেন? এখানে কী করে পাবেন?”

    “ধুর মশাই, আলোটা তো এখানে।”

    সার্চলাইটের আলোটা আমাদের চিরাচরিত প্যাসিভ ভয়েসের দৌলতে অত্যাচারিতের মুখেই পড়ে আছে। অথচ চাবির গোছাটা সেখানে নেই। আলোটা ঘুরিয়ে ধর্ষকের মুখে ফেললে তবেই খোঁজার কাজটা ঠিকমতো শুরু করা যাবে। তখন “মেয়েরা কী কী কারণে ধর্ষিত হয়” জাতীয় বোকা বোকা প্রশ্ন ছেড়ে “পুরুষেরা কেন ধর্ষণ করে” জাতীয় প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া যাবে। প্রতিকারের ভাবনাও হবে অনেক যুক্তিপূর্ণ। ধর্ষণ রোধের জন্য ধর্ষককেই মন্ত্র জপ করতে বলবেন আসারাম বাপু... “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন যেন আমি ভাল হয়ে চলি।” নারীমাত্রকেই চ্যাস্টিটি বেল্ট পরানোর কুৎসিত ভাবনা যাঁরা ভাবেন, তাঁরা পুরুষদের সিয়াট বর্ন টাফ স্টিল রেডিয়াল জাঙ্গিয়া পরানোর ব্যাপারে গবেষণা করতে পারবেন। 

    এর মানে এই নয় যে ধর্ষকের মনস্তত্ব ধৈর্যের সঙ্গে বোঝার প্রয়োজন নেই। আলবৎ প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেটা করতে গেলে আলোটা আগে তার মুখে ধরতে হবে। ভাবতে হবে কর্তৃবাচ্যে। 

    দ্বিতীয় সুবিধাঃ “ইজ্জত” সম্বন্ধে ঐতিহাসিক ভুল ধারণাটা পাল্টে ফেলা যাবে। ইজ্জত নিঃসন্দেহে গুরত্বপূর্ণ সম্পদ। হারিয়ে ফেলা খারাপ। কিন্তু ইজ্জত যায় কার? মশাই, আমি যদি রাস্তায় উলঙ্গ নৃত্য করি, আপনার ইজ্জত কেন যাবে? ঘটনাচক্রে সেই সময় আপনি রাস্তায় ছিলেন বলে? আমি আপনার ঘাড়ের ওপর গিয়ে পড়েছিলাম বলে? কর্তৃবাচ্যে ভাবলে আপনার প্রথম প্রশ্ন হবে, “অপকম্মটি কে করেছে?” এর উত্তর জানার পর দ্বিতীয় প্রশ্ন, “তাহলে ইজ্জত কার গেল?” “অমুক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে” বাক্যটি থেকে অপ্রয়োজনবোধে মেয়েটির প্রসঙ্গ আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ইজ্জত নিয়ে সমস্যা এখন কেবলমাত্র ধর্ষকের। 

    এই দ্বিতীয় সুবিধেটা কিন্তু প্যাসিভ অকর্মণ্যতায় পাওয়া যাবে না। পরিশ্রম করে আদায় করতে হবে। ধর্ষিতার নয়, ধর্ষকের ইজ্জত যায়, এই প্রচার সামাজিক স্তরে বিরামহীন চালিয়ে যেতে হবে অন্তত দুই দশক। তারপর দশচক্রে ভূত ভগবান হবেন, যেভাবে ভগবান ভূত হয়েছিলেন হাজার হাজার বছর আগে। সাংবাদিকেরা এই জায়াগায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন। একজোট হয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাঁরা যদি খবরের বাচ্য এবং ভাষ্য পাল্টে ফেলেন, মেয়েটির চরিত্র বিশ্লেষণের বদলে ধর্ষকের নাড়ি-নক্ষত্র ছাপা আরম্ভ করেন, আর তার কাজের ফলে তার পরিবার পরিজনের ইজ্জত গেল বলে তুমুল হায় হায় করতে শুরু করেন (যেটা এখন ধর্ষিতার পরিবার নিয়ে করা হয়), তাহলে কিছু আশা আছে। সামাজিক স্তরে কোনো মানুষকেই লাঞ্ছনা করার বিরুদ্ধে আমি। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে যদি কিছু ধর্ষকের পরিবারকে অপমানিত হতে হয়, তাহলে দুঃখের সাথে মেনে নেব। ইজ্জতের ইজ্জত রক্ষার অন্য উপায় চোখে পড়ছে না। 

    অত্যাচারিত মেয়েটির কথা লেখা হোক কিছুদিন পরে। আহত শিকার হিসেবে নয়, তাঁর কাহিনী ছাপা হোক উদবর্তনের ইতিবৃত্ত হিসেবে। ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটাকে আনা হোক পাদপ্রদীপের আলোয়। সেটাকে অতি কঠিন এবং অসম্ভব ব্যাপার হিসেবে তুলে ধরে একজন মহিলাকে বিরল বিজয়িনী হিসেবে দেবী বানিয়ে তোলার বদলে, এই সংগ্রাম ও বিজয়কে সর্বজনসাধ্য বাস্তব হিসেবে তুলে ধরলেই ভাল হবে। আবার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে অসম্ভব লড়াইকে “সর্বজনসাধ্য” বলে তার মাহাত্ম্যহানি করছি বলে। করছি। জেনে শুনেই করছি। যিনি জিতে গেছেন তাঁর মূর্তি প্রতিষ্ঠার চেয়ে, যাঁরা লড়তে ভয় পাচ্ছেন, তাঁদের সাহস জোগানো বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। 

     

    পাঁচঃ ঐ চোর, ঐ চোর -  

    এই যে আলোটা অপরাধীর মুখে ফেলতে বললাম, তা কিন্তু এমন আশায় বুক বেঁধে নয় যে এর ফল সবটাই ভাল হবে। যেই না আলোটা একজনের মুখে ফেলতে পারব, অমনি সবাই সমবেত চিৎকারে মেতে উঠব “চোর চোর চোর চোর...”, আর সেই কোলাহলের সুযোগে আমরা লুকিয়ে পড়তে পারব অন্ধকারে, আমাদের সমস্ত কালো নিয়ে। 

    ১৬ ডিসেম্বর ২০১২-র ঘটনার পর দুবার অসুস্থ বোধ করেছিলাম। প্রথম, যখন ঘটনাটির বিষদ বিবরণ জানতে পারলাম। দ্বিতীয়বার, যখন বিভিন্ন মানুষের (পুরুষ এবং নারী নির্বিশেষে) প্রতিক্রিয়া পড়লাম নানা জায়গায়। যাঁরা আন্দোলনে যোগ দেননি, তাঁরাও নিজেদের বাড়ি থেকে আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন অনেকেই। “মুণ্ডু চাই” স্লোগানে গলা মিলিয়েছিলেন শতকরা ৯০ জন। পরিস্থিতি এমন ছিল, যে এই স্লোগানের বিপক্ষে বলার সাহস, এমনকি স্পৃহাও প্রায় কারোই ছিল না। এই অব্দি খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তার পর সামনে আসতে লাগল তাঁদের লেখাগুলো, যাঁরা নিজে হাতে এইসব নরপশুদের শাস্তি দিতে চান। কেমনভাবে খুঁচিয়ে বের করতে হবে ওদের চোখ, উপড়ে নিতে হবে আঙুলের নখ একটা একটা করে, কীভাবে চামড়া ছাড়িয়ে শিকে গেঁথে আগুনের উপর ঝুলিয়ে বার-বি-কিউ করতে হবে... সেসব বিবরণ এই জীবনে ভুলতে পারব না। এগুলো পড়েই বুঝেছিলাম, কেন পাঁচ-ছয়জনকে ফাঁসী দিয়ে পৃথিবী থেকে নৃশংস অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়। তার পরেও তো থেকে যাব আমরা, যারা মানুষের মাংস ঝলসে আমোদ করতে চাই। 

    এইসব অপরাধীদের পশু বা পিশাচ হিসেবে দাগিয়ে দিতে পারার মধ্যে এক মস্ত নিশ্চিন্তি আছে। প্রমাণিত হয় এইসব অপরাধ মানুষে করে না। আর আমরা যেহেতু ‘মানুষ’, তাই স্বভাবতই সন্দেহের তালিকার বাইরে। এইসব অবমানবের ফাঁসী চেয়ে নিজেদের নিরাপদ পুরুষ হিসেবে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা। মন্দ নয়। অপরাধীদের থেকে নিজেকে আলাদা করার ইচ্ছা তো স্বাভাবিক। কিন্তু সত্যি কি আমরা এত সহজে দায় এড়াতে পারি? এরা কি জঙ্গল বা নরক থেকে এসেছিল? শুধু একটা সামাজিক স্তর থেকে কি এরা আসে? দিল্লীর বাসের ধর্ষক আর দলিত বোনেদের ধর্ষকের আর্থ-সামাজিক পার্থক্য কি লক্ষ্য না করার মতো? একটাই মিল। এরা সবাই এই সমাজ থেকেই উঠে আসা পুরুষ। এরা আমাদেরই লোক। এরা আমারাই। এরাই আমরা। আমরাই এরা। আমাদের বিনোদনে, আমাদের গালি-গালাজের ভাষায় (প্রায় সব গালিই কোনো আত্মীয়াকে উদ্দেশ্য করে), আমাদের তামাসা-চুটকিতে (রেপ জোকস), আমাদের সিনেমা-বিজ্ঞাপণে, ক্রিকেটের ধারাবিবরণীতে আর ক্রিড়া সাংবাদিকের লেখনিতে (ক্রিস গেইল “রেপ” করে ছেড়েছেন বোলারদের), আমাদের দৈনন্দিনে, বহু যত্নে যে ধর্ষণের সংস্কৃতি আমরা নির্মাণ করেছি, এরা তারই প্রযোজনা মঞ্চস্থ করেছে মাত্র। পাদপ্রদীপের আলোয় এরা যখন জুতো-বৃষ্টির মোকাবিলা করছে, তখন আমরা একটু নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখি না কেন? এই সংস্কৃতি, এই মঞ্চ, এই নির্মাণকে ধ্বংস করার জন্য কোন কাজটা করেছি আমরা? 

    উল্টোদিকে “সব পুরুষই ধর্ষক” জাতীয় বক্তব্যও খুব সুবিধের নয়। এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য হয়ত ছিল পুরুষতন্ত্র যেভাবে দৃষ্টি দিয়ে, নীতি দিয়ে, লোভের আঙুল দিয়ে প্রতিদিন নারীকে বিপর্যস্ত করে, তার স্বরূপটা ধরা। (এটাই মেরিলিন ফ্রেঞ্চের বক্তব্য ছিল বলে মনে হয়।) কিন্তু যেভাবে কথাটা এখন ব্যবহৃত হয়, তার অলস ব্যাপ্তির প্রশ্রয়ে “বায়োলজিকাল ডিটার্মিনিজম” শিকড়-বাকড় ছড়ায়। “মেন উইল বি মেন” তত্ব বৈজ্ঞানিক সত্যের মতো শোনায় হঠাৎই। এ অতি অশুভ সংকেত। পুরুষ স্বভাবতই ধর্ষক হলে কারো আর দায় থাকে না জোর করে অস্বাভাবিক কিছু হয়ে ওঠার; অ-ধর্ষক হওয়া যেন প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ। সেই ফাঁকে যদুকুলপতি কোনো “মোলায়েম” রাজনৈতিক নেতা বলে ফেলতেই পারেন, ছেলে-পুলেরা তো এরকম করবেই! 

    না সব পুরুষ ধর্ষক নয়, বা হতে বাধ্য নয় প্রকৃতির নিয়মে। আমৃত্যু অ-ধর্ষক থাকার দায় এবং দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে নিজেদের সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে পারি। অন্যদের কথা বলতে পারি না, আমি নিজেকে সন্দেহ করি এবং পাহারায় রাখি। আজ অব্দি এ জাতীয় অপরাধ করিনি, কিন্তু তাতে কি প্রমাণ হয় যে আগামীকাল করতে পারি না? রাত দশটায় বাসের প্রত্যাশায় রাস্তার ধারে একা দাঁড়িয়ে থাকা তরুণী যদি আমাকে দেখে ভয় পায়, তাকে দোষ দেবার কোনো উপায় আছে? এই ভয় কাটানোর জন্য কী করেছি, কিছু মানুষের ভয়ঙ্কর হত্যার দাবী নিয়ে ফেসবুক লিখন ছাড়া? 

    আমাদের সেই শাস্তির দাবীর মধ্যে আসলে কী ছিল বা আছে? আমাদের সবার পাপ নিয়ে পাঁচ-ছয়জন মহিষাসুর বধ হোক, আর আমরা দুর্গার প্রসাদ পেয়ে আবার এক বছরের জন্য পবিত্র হই, এই আকাঙ্ক্ষা? ভবিষ্যত অপরাধীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টির অবাস্তব প্রচেষ্টা? (একথা জেনেও যে হাজারের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসী হলে আর নয়শ পঁচানব্বই জন খালাস পেয়ে গেলে অপরাধী নিজেকে ভাগ্যবানের দলেই ভেবে নিতে চাইবে!) নাকি রক্ত দেখার আদিম প্রবণতা... যা ধর্ষকামের মতোই কর্তৃত্ব করার, দাবিয়ে রাখার বা কষ্ট দেবার প্রবণতার এক প্রকাশ মাত্র। নাকি কিছু না করতে পারার আক্রোশ? হেরে যেতে যেতে হিংস্র হয়ে যাওয়া? 

    এই ক্রোধ সহজবোধ্য। হয়ত বা “জায়েজ”। কিন্তু কল্পনা করুন সেই পরিচিত দৃশ্য... রাস্তায় পড়ে আছে আহত এক বালক। সবাই ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ঘিরে ধরেছে। ছেলেটির পাশে কেউ নেই। মার মার শব্দের রোমাঞ্চকর আবহে প্রথমে মরে গেল আহত ছেলেটি। অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল, যে ছেলেটির শুশ্রূষায় সময় নষ্ট করল না কেউ। সময় অতীত হলে তার পরিত্যক্ত দেহ কোলে নিয়ে বসে থাকে তার মা... আর নীরবে চেয়ে থাকে কোনো এক গোলকিপার। 

    ফরোয়ার্ডেরা এগিয়ে যান। গোল দিয়ে আসুন। কিন্তু এই আহত মানুষ আর পেনাল্টি বক্স ছেড়ে গোলকিপার কোথায় আর যাবে? 


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১২ মার্চ ২০১৫ | ২৯৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • pi | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৪87052
  • শিউলি, 'মেয়েটির চরিত্র বিশ্লেষণের বদলে ধর্ষকের নাড়ি-নক্ষত্র ছাপা আরম্ভ করেন, আর তার কাজের ফলে তার পরিবার পরিজনের ইজ্জত গেল বলে তুমুল হায় হায় করতে শুরু করেন', আমার এটা পড়ে সেই আশঙ্কা জেগেছিল, লেখকের নিজেরও জেগেছে। আমি এটা নিয়ে স্বচ্ছন্দ নই। অপরাধীর পরিবারকে হিউমিলিয়েশনের পার্ট করাতে।
  • pi | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৫87053
  • এই ibn এর খবরটা কাল হু দেবার পরে দেখেছিলাম, একটু অদ্ভুত লেগেছিল, কারণ ডকু নিয়ে তাঁদের অভিযোগ, ভারতীয় সরকারের প্রতি আস্থা, এসব কিছুই অন্য খবরে প্রকাশ পায়নি। বরং উল্টোটা পেয়েছে। তবে ibn , না অন্যত্রও দেখলাম। কী কেস কে জানে
    http://www.ndtv.com/india-news/everyone-must-see-indias-daughter-says-nirbhayas-father-after-ban-in-india-744411

    http://www.ndtv.com/india-news/nirbhaya-rapist-blames-woman-says-she-should-not-have-fought-back-743720

    আর হ্যাঁ, ডকুতেই তো ওনারা নাম বলেছেন !

    যাইহোক, বাবা মা র আপত্তি থাকলে বা কোনো ধর্ষিতা বেঁচে থাকলে, তাঁর আপত্তি থাকলে নাম দেওয়া ঠিক না। কিন্তু এই নাম না দেওয়াটা আমার কাছে বেশ বড় ইস্যু। আগের পোস্টে যা নিয়ে লিখেছিলাম, তারই সূত্র ধরে আসে। আসলেতে একেবারেই এক ইস্যু। এর আগেও বলেছি। সত্যিই এই নাম না দেওয়া কেন, লজ্জা, অপমানের ভয়েই তো। কোন মেয়ে যদি শুধু খুন হয় তখন তার নাম পরিবর্তিত করার কথা নাম না দেওয়ার কথা আসেনা তো। কোন মেয়ে বা তার পরিবার নাম না দিতে চাইলে, সেটাকে আমার ঐ সমষ্টির বিষাক্ত বিশ্বাসের চাপেই মনে হয়। সুজেটের নিজের নাম ব্যবহার করা যেজন্য এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মনে হয়।
    মেয়েটির ব্যক্তি পরিচয়ের থেকে ফোকাস ঘোরানোর জন্য নাম বদলানো হয় বলে মনে হয়না। মেয়েটি কে কী করতো এই সবই যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে, নাম বদলেও। ফোকাস দিতে চাইলে তাকে নিয়ে আলোচনা না করলেই হয়। কখনো রেফার করার জন্য নাম দিলেও ফোকাস এসে পড়েনা বলেই আমার মনে হয়।
  • hu | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৬87054
  • bkp, আপনি কোন সূত্রে জানেন তা আমি জানি না। আমি মেয়েটির নাম জানতাম না। জানার প্রয়োজন আছে এটাও মনে হয়নি। মেয়েটি আমারই মত সাধারন একটি মেয়ে। আমার সাথেও এমন হতে পারত ভেবেই ভয় পেয়েছি।

    তবে, আপনি কোন সূত্রে নাম জেনেছিলেন এটা জানার কৌতূহল রইল। মিডিয়ায় নাম প্রকাশে যদি বাধা থাকে, পরিবারের যদি আপত্তি থাকে, তাহলে খুঁচিয়ে নাম খুঁজে বার করাটাও কিন্তু নোংরা কৌতূহলকেই প্রশ্রয় দেয়।
  • pi | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৫:০১87055
  • হু, এই নাম আগেও বহুবারই এসেছে। ওর বাবাই বলেছিলেন বলে পড়েছি। জ্যোতি পান্ডে নামে ফেসবুক পেজও আছে।

    ও, এইতো , পেয়ে গেছি।
    http://www.mirror.co.uk/news/world-news/india-gang-rape-victims-father-1521289

    ..But today, with permission of her devastated father, we can reveal her name: Jyoti Singh.

    Brave dad Badri, 53, told The Sunday People : “We want the world to know her real name.

    “My daughter didn’t do anything wrong, she died while protecting herself.

    “I am proud of her. Revealing her name will give courage to other women who have survived these attacks. They will find strength from my daughter.”..

    একদম সঠিক অ্যাপ্রোচ মনে হয়, স্যালুট জানাই। এখন এটা বদলে দিয়ে থাকলে দঃখ পাবো। কিন্তু NDTV র যে খবরগুলো আগে দিলাম, তারপরে ibn এর খবরটা পড়ে কেমন জানি মনে হচ্ছে, সরকারের থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জ্যোতির জাস্টিস প্রক্রিয়া নিয়ে এমন ১৮০ ডিগ অব্স্থান বদলানো দেখেও।
  • bkp | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৫:০২87057
  • khuchiye naam ber korbo ki kore? News ei peyechhi. Most probably Tv te noy, newspaper e ba net e news article e. Oneke janto. shudhu Jyoti Pandey jantam. singh ta bade jenechi. Baba bolechhilen amar meye sohid. Ami chai or naam protibader protik hoye uthuk. Exact shobdo mone nei. erokom katha chhilo. sei thekei amra sommaner songe or naam boli. nongra koutuhol khuje paowar icchhe tahkle tai paben.
  • hu | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৫:০২87056
  • পাই, আমি তোমার সাথে একেবারেই একমত। পরিবারের তরফে নাম প্রকাশ করতে না চাওয়াটা অনেক সময় সামাজিক লজ্জার চাপে। অনেক সময় অহেতুক হিতার্থীদের প্রশ্নবান থেকে বাঁচতে। সেজন্যই সুজেটকে ব্যাতিক্রমী মনে হয়। ঘটনার কিছুদিন পর তিনি এই চাপটা কাটিয়ে উঠেছিলেন।

    তবে এক্ষেত্রে, নির্ভয়ার পরিবারের যখন আপত্তি আছে তখন নাম প্রকাশ উচিত নয়। নির্ভয়ার আসল নাম ছাড়াও এতদিন চলে যাচ্ছিল। এখন নাম প্রকাশের পরেই সেই নামে ডাকতে শুরু করা দৃষ্টিকটু লাগছে।
  • hu | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৫:০৬87058
  • পাই, এই খবরটা দেখিনি আগে। আমাদের দেশের মিডিয়াতে কি প্রকাশ পায় নি?
  • pi | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৫:১৪87060
  • এটা দ্যাখো। আমার মনে হয়, বলিউড এখানে কাজের কাজ করেছিল। এই নাম জানানোকে এনকারেজ করে।

    Delhi's daughter's devastated dad has revealed his girl's name. Bollywood along with the entire nation salute Badri Singh Pandey's courage, on Twitter

    http://www.indiatimes.com/bollywood/bollywood-salutes-jyoti-singh-pandeys-father-53616.html
  • hu | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৫:১৬87061
  • ঠিক আছে। আমি তাহলে ibn এর খবরটা থেকে মিসলেড হয়েছিলাম। দুঃখিত।
  • anshumita | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৬:৪৪87062
  • অসম্ভব ভালো লেখা। আমার জীবনে পড়া সবচেয়ে গু্রুত্বপূর্ণ প্রবন্ধগুলির একটি। ভাষা আর শৈলীতেও অনন্য। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই অসাধারণ ভাবন। এভাবে কেউ ভাবেন জেনে বড় ভালো লাগলো। পৃথিবীর সব মেয়েদের তরফ থেকে লেখককে ধন্যবাদ।
  • anshumita | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৬:৪৫87063
  • * অসাধাধরণ ভাবনা * লিখতে চেয়েছি।

    আরো লিখুন।
  • :) | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৭:২৬87068
  • এইখানে নবারুণকে মনে পড়ে, যে লুম্পেন প্রোলেতারিয়েতদের রুখে ওঠা রিভেঞ্জ নেওয়া নিয়ে তাঁর আজীবন রোমান্টিসিজম, তারা বেসিকালি ক্রাইম করে চলেছে।
  • I | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৮:২৭87069
  • লেখাটি আগে পড়িনি। বিপর্যস্ত মন নিয়ে আজ পড়লাম। এবং, বেশ ঠিক লাগলো।
  • Les | ***:*** | ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৮:৫৯87070
  • ঋদ্ধ হলাম।
  • Sayantani | ***:*** | ২২ মার্চ ২০১৫ ০৯:৪৮87071
  • আমিও বহুদিন আগেই পরেছিলাম জ্যোতির বাবা বলেছিলেন তার মেয়ে কোনো দোষ করেনি তার নাম গোপন কেন হবে? IBN এর খবরটা বেশ misleading
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন