এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  বিবিধ

  • লা জওয়াব দিল্লী - ১০

    শমীক মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | বিবিধ | ১২ এপ্রিল ২০০৯ | ৯০৮ বার পঠিত
  • দিল্লিওয়ালা কী করে চিনবেন?

    একটা প্রচলিত জোক চলে বাজারে, কলকাতার বাঙালির হাতে পয়সা জমলে বাঙালি কী করে? না, এবারে পূজোয় কোথায় বেড়াতে যাবে, তার প্ল্যান করে। বম্বের মারাঠির হাতে পয়সা জমলে সে কী করে? না, কোন শেয়ারে সেই পয়সা লাগালে তার সবচেয়ে বেশি লাভ হবে, তার ছক কষে। আর দিল্লিওয়ালার হাতে পয়সা জমলে দিল্লিওয়ালা কী করে? ... কী আবার, প্রপার্টি কেনে।

    এই জোক্‌ যবে পয়দা হয়েছিল, তার পর ইউজ হতে হতে যেমন তার জৌলুশ হারিয়েছে, বাঙালিও পাল্টেছে, মারাঠিও পাল্টেছে, এখন বাঙালি পয়সা জমাতেও জানে, তাকে ঠিক জায়গায় ইনভেস্ট করতেও জানে, আর পূজোয় বেড়াতে যাওয়া ছাড়াও তার কাছে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাতছানি থাকে পয়সা খরচ করবার।

    কিন্তু প্রপার্টির ব্যাপারটা দিল্লিওয়ালার ক্ষেত্রে একেবারে অমলিন। দিল্লিওয়ালা যত ভালো প্রপার্টি বোঝে, চেনে, তত ভালো বোধ হয় আর কেউ বোঝে না। প্রপার্টি নিয়ে এখানে বড় মেজ ছোট সব রকমের ঘোটালা হয়, স্ক্যাম হয়, বেশ কিছু লোক সর্বস্বান্ত হয়, তার অনেক অনেক বেশি লোক আমীর হয়ে যায়। এবং আজও, রাজমা-রামনবমী-রাজভাষা গন্ডীর বাইরে বহুদূর পর্যন্ত পা ফেলেও আন্তর্জাতিক দিল্লিবাসী সামনে যখনই আরেকজন দিল্লিবাসীকে পান, দু-চাট্টি এ-কথা সে-কথার পর পঞ্চম কথাতেই চলে আসেন প্রপার্টির গল্পে। কিছুটা চাল, কিছুটা বিরিয়ানি, মিলিয়ে মিশিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা চলে প্রপার্টির ব্যাপারে কে কত ধনী কে কত চালাক, তা প্রতিপন্ন করার। এ যদি বলল, আরে আমার তো পিতমপুরায় একটা মকান আছে, কিনেছিলাম আজ থেকে মাত্র পাঁচ বছর আগে সাড়ে ন'লাখ টাকায়, আজ যদি বেচি তো কিছু না হোক ষাট লাখ পাবো। অন্যজন অমনি বলবেন, আরে আপনি এখনও "অগর'-এর ওপর ভরোসা করে বসে আছেন? প্রপার্টির বাজারে উতার চড়াও তো আছে, আমারই তো ফরিদাবাদে একটা ফ্ল্যাট ছিল, ছ বছর আগে মাত্র ছ লাখ টাকায় কিনেছিলাম, এই গতবছরেই সেটাকে ছেচল্লিশ লাখে বেচে ময়ূর বিহারে একটা ফ্ল্যাট কিনলাম। প্রাইম লোকেশন, সামনেই মেট্রোর লাইন বসছে, এখন সেই বাড়িরই দাম পঁচাত্তর লাখ।

    কে না জানে, পিতমপুরার থেকে, ময়ূর বিহারই এখন বেশি হট জায়গা, কারণ দিল্লিতে তো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বিশেষ এক্সিস্ট করে না, তাই যে যে জায়গায় আছে এই পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টের সুযোগ সুবিধা, সেই সেই জায়গায় প্রপার্টির দাম তাই বেড়ে যায়। তার ওপর, আসছে বছর এখানেই হবে কমনওয়েলথ গেম্‌স, তাই দিল্লির বর্তমান উন্নয়নী প্যাকেজের অধিকাংশই ময়ূর বিহার ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলকে ঘিরে, অতএব ইনি, প্রপার্টির ব্যাপারে, উনি-র থেকে বেশি বুদ্ধিমান প্রতিপন্ন হলেন।

    আর সব টেস্টেড মেথডের কথা জানি না, কিন্তু একটা কথা চোখকানবুজে বলে দিতে পারি, যদি দ্যাখেন লোকটি আপনার বাড়িতে এসে, জুতো না খুলেই সো-জা মশ্‌মশিয়ে আপনার ড্রয়িং রুম বেডরুম বা কিচেনে ঢুকে পড়ল, সে যতই না কেন পরিষ্কার হোক আপনার ঘরের মেঝে, নিশ্চিত জানবেন, সেই লোকটিই, সেই মহিলাটিই, সেই বাচ্চাটিই পাক্কা দিল্লিওলা। অ্যান্ড ভাইসি ভার্সা। তার বাড়িতে গিয়ে আপনি যখন দরজায় দাঁড়িয়ে একপা তুলে জুতোর ফিতে খোলায় রত, তখন যদি শোনেন গৃহস্বামী আপনাকে বলছেন জুতো না-খুলেই ভেতরে চলে আসতে, আপনি শিওর হয়ে যান, যাঁর বাড়ির দরজায় আপনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি অবশ্যই দিল্লিওয়ালা।

    ইয়ার্কি থাক। এই জুতো পরে কারুর আপত্তির তোয়াক্কা না-করেই ঘরের ভেতর চলে আসার ব্যাপারটা বাদ দিলে পরে, ঘর গুছিয়ে রাখার ব্যাপারে দিল্লিওয়ালাদের টেস্ট কিন্তু সত্যিই ঈর্ষণীয়। বেশ ভালো ভালো ফার্নিচার, ল্যাম্পশেড, কার্পেট, মডিউলার কিচেন ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রীর সুসমঞ্জস ডিস্ট্রিবিউশনে বেশির ভাগ লোকেরই ঘর এখানে ঝলমল করে। বাঙালির ঘর গোছানোর সাথে এর কোনওই মিল নেই। (গ্যাঁড়া জানে এই মন্তব্যের ওপর বেশ কিছু পাটকেল বাঁধা গোলাপ ফুল উড়ে আসতে পারে তার দিকে, কিন্তু কী করা, গ্যাঁড়ার যেমন মনে হয়েচে, গ্যাঁড়া আমাকে তাইই বলেচে)।

    লিখতে লিখতেই মনে হল, এই পর্বটাকে বরং একটা হাউ টু সার্ভাইভ ইন ডেলহি এপিসোড করে লেখা যাক। কী কী করবেন ও করবেন না, কী কী বলবেন ও বলবেন না, তার একটা কষ্টকৃত লিস্টি বানিয়ে ফেলা যাক সময় করে।

    প্রথমেই বলি, যদি আপনি কলকাতা বা বাকি বাংলার কোনও জায়গা থেকে আসা, এবং দিল্লিতে দীর্ঘসময় ধরে থাকতে চলা লোক হন, তা হলে এই হাউ টু আপনার খুব খুব কাজে আসবে। কয়েকটা জিনিস একটু মাথায় রেখে চলবেন, তা হলেই আর বিশেষ অসুবিধে হবে না। প্রথমত, দিল্লিতে এসে চেষ্টা করবেন প্রথম চান্সেই একটা গাড়ি কিনে ফেলার, নিদেনপক্ষে একটা টু হুইলার। দিল্লি পায়ে হাঁটার শহর নয়, এটা একান্তই গাড়ির শহর। রাস্তাঘাটে পথচারীদের সুবিধেও লিমিটেড, আপিস টাইমে জ্যাম এড়াতে ফুটপাথের ওপর উঠে পড়ে মোটরসাইকেল। শুধু রাস্তা পার হতে গিয়েই দিল্লিতে সারা বছরে প্রাণ হারান বহু মানুষ।

    দিল্লিতে কোনও শেয়ার অটো চলে না। অটো রিজার্ভ করতে হয়। এটুকু শুনেই যদি ঠোঁট বেঁকিয়ে বলেন, আমাদের কলকাতা বাপু শস্তার স্বর্গ। ওখানে মাত্র পাঁচটাকা দিয়ে শেয়ারের অটোতে শিয়ালদা থেকে বেলেঘাটা যাওয়া যায় ... তা হলে বলি, ওটা স্ট্যান্ডার্ড নয়। মেট্রোপলিটান সিটিতে অটোরিক্সা শেয়ারে চলার নিয়ম নেই, অটোরিক্সা রিজার্ভেশনে চলারই নিয়ম, প্রিপেড বা পোস্টপেড পদ্ধতিতে। কলকাতায় যে শেয়ারে অটো চলে সেটা নিয়মবিরুদ্ধ। অবশ্য দিল্লিতে যে রিজার্ভ করে অটো চলে সেটাও যে খুব নিয়মসিদ্ধ, তাও নয়। অটো চলার কথা মিটারে। কিন্তু সে মিটারে চলে না। আপনি কতটা মুরগী হবেন অটোওলার হাতে, তা নির্ভর করছে আপনি দিল্লির রাস্তাঘাট কতটা ভালো চেনেন, বিভিন্ন দূরত্বের জন্য সম্ভাব্য ভাড়ার আইডিয়া আপনার কতটা ভালো আছে, আর আপনি কতটা ভালো হিন্দিতে বাতচিত চালাতে পারেন, তার ওপর।

    প্রথম দিল্লিতে এসে, যদি আপনার দিল্লির বাসে চাপবার দরকার হয়েও থাকে, কলকাতার অভিজ্ঞতা খবর্দার কাজে লাগাবার চেষ্টা করবেন না। কলকাতায় আপনি পানের দোকানদার, নিদেনপক্ষে ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞেস করেও সঠিক বাসের নম্বর জেনে নিতে পারেন, কিন্তু দিল্লিতে পানের দোকান সুলভ নয়। অন্তত, সর্বত্র নয়। দিল্লির অধিকাংশ রাস্তাই পথচারীবিহীন, কেবলই গাড়ি চলে। দিল্লির প্রতিটা বাসস্ট্যান্ড ডেজিগনেটেড, সুন্দর ছাউনি করা, বসার জায়গা করা। সেখানে আপনি বাস ধরতে আসা অনেক লোককেই দেখতে পাবেন আপনার মত, কিন্তু তাদের কোনও একজনকে জিজ্ঞেস করবেন না, হ্যাঁ দাদা, এখান থেকে চিত্তরঞ্জন পার্কে যেতে গেলে কোন বাসটা ধরব? নিরানব্বই পার্সেন্ট চান্স আছে ভুল বাস নম্বর পাবার, যে বাস না-তো সেখান দিয়ে যায়, না সেটা চিত্তরঞ্জন পার্কে যায়। সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত কেটে যাবে আপনার, সে বাসের দেখা পাবেন না, যদি না আপনি বুদ্ধি করে অন্তত আরও চারজনকে একই প্রশ্ন করে কনফার্ম্‌ড হয়ে নেন, তারপরে বেস্ট অফ ফাইভ বেছে নিজের উত্তর পাবার চেষ্টা করেন। কনফিডেন্টলি ভুল উত্তর দেবার ব্যাপারে দিল্লিবাসীর খুব নাম। কোনও ডেস্টিনেশন, না-জানলে, দিল্লিওয়ালা কখনও বলবে না, জানি না। বরং আপনাকে মনগড়া কোনও একটা উত্তর দিয়ে দেবে। তাতে তার ব্যক্তিগত কোনও লাভ থাকুক বা না-ই থাকুক। এমন ঘটনা অনেক বার ঘটেছে গ্যাঁড়ার সাথে, গেঁড়ির সাথে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে আনরিলায়েবল হল দিল্লির বাসের কন্ডাক্টর। সরকারী এবং বেসরকারী। ধরুন, আপনি যাবেন সাউথ এক্স। একটা বাসের কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলেন, সে সাউথ এক্স যাবে কিনা। সরকারী ডিটিসির বাসে কেবল রুট নম্বর থাকে, স্টপেজের হদিস থাকে না। এখন সে বাস হয় তো যাবে লালকেল্লা, যা কিনা, পুউরো উল্টোদিকে। কিন্তু কন্ডাক্টর বিনা বাক্যব্যয়ে সাউথ এক্সগামী আপনাকে তুলে নেবে তার বাসে, টিকিট কেটেও দেবে (সরকারী বাসে কন্ডাক্টর ঘুরে ঘুরে টিকিট চায় না, গ্যাঁট হয়ে বসে থাকে পেছনের সীটে, যাত্রীকে পেছনের দরজা দিয়ে বাসে উঠে টাকা দিয়ে টিকিট কেটে জায়গায় বসতে হয়)। তারপর যতক্ষণে আপনার মনে সন্দেহের উদ্রেক হবে, ততক্ষণে আপনি চলে এসেছেন বহুদূরে, কন্ডাক্টরের সাথে তর্ক করেও বিশেষ আর লাভ হবে না, মাদার-চোদ ব্যাহেন-চোদ জাতীয় বিশেষণসমৃদ্ধ তার জাঠ হিন্দির সাথে আপনি পেরে উঠবেন না, পয়সাও ফেরৎ পাবেন না, ডবোল পয়সা খরচা করে আপনাকে ফিরতে হবে সঠিক গন্তব্যে। মাঝখান থেকে মুরগী হয়ে সারা দিনের মত আপনার মেজাজটাও বিগড়ে যাবে।

    জানেন কী? ডিটিসির বাসে চড়ার পর যদি মাঝরাস্তায় বাসের টায়ার পাংচার হয়ে যায়, কিংবা মাঝরাস্তায় কাউকে চাপা দেবার পর ঝামেলা হট্টগোলে বাস আর না চলে, তা হলে অন্য বাস ধরে গন্তব্যে পৌঁছবার দায়িত্ব আপনার নিজের। ডিটিসির ড্রাইভার অন্য বাস ডেকেও দেবেন না, আর আপনার পুরো গন্তব্যের পয়সার অংশও আপনি ফেরৎ পাবেন না। নতুন বাসে, নতুন করে টিকিট কেটে আপনাকে বাকি পথটা পেরোতে হবে।

    আরও জেনে রাখুন। দিল্লিতে ডাক্তারদের সচরাচর প্রাইভেট ক্লিনিক হয় না। সমস্ত ডাক্তারই কোনও না কোনও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, সেই হাসপাতালের ওপিডিতে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয়। লাখ টাকা দিলেও কোনও ডাক্তার আপনাকে বাড়িতে এসে দেখবেন না, সে আপনার অবস্থা যত করুণই হোক না কেন। দরকার হলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন, যেভাবেই হোক আপনাকেই হাসপাতালে পৌঁছতে হবে। ডাক্তার আপনার কাছে আসবেন না।

    ওষুধের দোকানের খোঁজ করতে গিয়ে "দাওয়াখানা' খুঁজতে বসবেন না। বরং খুঁজুন কেমিস্ট শপ, দিল্লির উচ্চারণে "ক্যামিস্ট শপ'। এখানে ওষুধের দোকানে ওষুধ ছাড়াও ক্রিম, সানস্ক্রীন লোশন, শ্যাম্পু, ভেসলীন, টুথপেস্ট, নারকোল তেল, অলিভ তেল, পাউডার, ডিও, পারফিউম ইত্যাদি বিক্রি হয়।

    দিল্লির ইংরেজি উচ্চারণে সমস্ত "এ'-ই "অ্যা'। পেন-কে বলে প্যান, টেন-কে ট্যান, সেভ্‌ন-কে স্যাভ্‌ন, চেক-কে চ্যাক, ইত্যাদি। দিল্লিওয়ালারা দক্ষিণ ভারতীয়দের ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে ঠাট্টা করে: অ্যাম কো বোলতে হ্যায় ইয়্যাম, অ্যান কো ইয়্যান। ইত্যাদি।

    দিল্লির হিন্দিতে পঞ্জাবী অ্যাক্‌সেন্টের আধিক্য বেশি, আবার পূর্বদিকে খাঁটি উত্তরপ্রদেশীয় হিন্দির চলও আছে। পঞ্জাবী হিন্দিতে "আপ আ জাও, আপ বঁহাপে চলে জাইও, হান্‌জী আপ বতাও' চলে অধিকাংশ দিল্লি জুড়ে, খাঁটি উত্তরপ্রদেশীয় হিন্দিতে এইটাই হয় "আপ আ জাইয়ে, আপ বঁহাপে চলে জানা, জী আপ বতাইয়ে'। ব্যস, প্রয়োজনমত অ্যাকসেন্টগুলো তুলে নেওয়া আর জায়গা বুঝে প্রয়োগ করা, এর দক্ষতার ওপরেই নির্ভর করছে আপনার নির্ঝঞ্ঝাট দিল্লিবাস।

    দিল্লি অত্যন্ত ওয়েল ডকুমেন্টেড শহর। রাস্তার প্রতিটা বাঁকে মাথার ওপর হোর্ডিংয়ে বিভিন্ন দিকের ডাইরেকশন লেখা দেখতে পাবেন। কলকাতায় যেমন আপনার পথ হারিয়ে ফেলবার চান্স অনেক বেশি, কারণ কলকাতায় রাস্তাঘাট সেই ভাবে ডকুমেন্টেড নয়। ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে জীবনে প্রথমবার কলকাতায় এসে যদি আপনাকে হেস্টিংস যেতে হয়, লোককে জিজ্ঞেস করে করে যাওয়া ছাড়া আপনার হাতে বিশেষ কোনও অপশনও নেই। ভারতের অন্যান্য বড় বড় শহর, যেমন চেন্নাই, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোরের সাথে দিল্লিরও রাস্তাঘাট চেনানোর জন্য প্রামাণ্য ম্যাপবই আছে: আয়েশার-এর। Eicher's Delhi City Map । শুধুমাত্র ঐ ম্যাপবইটার ওপর ভরসা করে আপনি দিল্লির যে কোনও প্রান্তে যে কারুর বাড়ির গেটে পৌঁছে যেতে পারেন, কাউকে জিজ্ঞেস না করেই। কলকাতার জন্য এমন কোনও প্রামাণ্য ম্যাপবই নেই। এই আয়েশার-এর ম্যাপবইটা সারা দিল্লি জুড়ে হটকেকের মত বিক্রি হয়। দিল্লি, পুরো না-হলেও অলমোস্ট একটা স্টেট, নয়ডা গুরগাঁও গাজিয়াবাদ ফরিদাবাদ মিলে তার উপগ্রহ শহর মিলে সাইজে সে আরও বড়, তাই এই ম্যাপবই কেবল নবাগত নয়, অনেক পাক্কা দিল্লিওয়ালার ঘরেও শোভা পায়।

    দিল্লি এনসিআরে প্রথমবারের জন্য এলে, সেই মিষ্টি ওজনে বিক্রি হবার মত ইউনিক জিনিসের মতই আরেকটা জিনিসও আপনার চোখে পড়বে, রিক্সা। বাংলার রিক্সা কাঠের তৈরি হয়, আর কিছুটা অ্যালুমিনিয়মের। এখানে, গুরগাঁওয়ের দিকে কিছু কাঠের রিক্সা দেখা যায় বটে, কিন্তু বাদবাকি দিল্লি নয়ডা গাজিয়াবাদে রিক্সা সম্পূর্ণ মেটালিক, লোহার রড দিয়ে তৈরি।

    সিএনজির ব্যবহার দিল্লির পরিবেশের জন্য এক মহান দান। প্রধানত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের হস্তক্ষেপে এবং সহায়তায় আজ দিল্লি এনসিআরের ৯৯ শতাংশ বাস, এবং একশো শতাংশ অটো ট্যাক্সি ইত্যাদি চলে সিএনজি গ্যাসে। সিএনজি হল এক রকমের বায়ো ফুয়েল, কমপ্রেস্‌ড ন্যাচারাল গ্যাস। এখন মুম্বই, আহমেদাবাদ ইত্যাদি অন্য অনেক শহরেই সিএনজির চল হয়েছে, ,পরিবেশবান্ধব এই গ্যাস দামেও অনেক শস্তা, মাইলেজও দেয় প্রচুর বেশি, এর পথিকৃৎ কিন্তু সেই দিল্লি। এখন গাজিয়াবাদ, গুরগাঁও, তথা হরিয়ানা ইউপি এবং রাজস্থান থেকে আসা কিছু বাস বাদ দিলে দিল্লির বাকি সমস্ত বাস সিএনজিতে চলে।

    আর কী? আরও খুচরো খাচরা অনেক কিছুই মনে পড়ছে, কিন্তু সে সব এখানে আলাদা আলাদা করে লিখতে গেলে লেখাটা অসঙ্গতিপূর্ণ হবে। যেমন ধরুন, টু হুইলারে হেলমেটের ব্যাবহার। পিলিয়ন রাইডারের হেলমেট পরা মাস্ট, যতক্ষণ আপনি দিল্লির পিনকোডে আছেন; বর্ডার পেরিয়ে নয়ডা গাজিয়াবাদ গুরগাঁও ফরিদাবাদে ঢুকে পড়লেই, আর পিলিয়ন রাইডারের হেলমেট পরা মাস্ট নয়। অপশনাল। পিলিয়ন রাইডার যদি মহিলা হন, এমনকি, টু হুইলার চালকও যদি মহিলা হন, তা হলে তাঁর হেলমেট পরা মাস্ট নয়। না-না, মহিলাদের জীবনের দাম কম ধরে এমন নিয়ম নয়, আসলে যখন নিয়ম হয়েছিল, দিল্লি তো পঞ্জাবী অধ্যুষিত শহর, তো সেই সর্দারনীরা এর প্রতিবাদ করেছিলেন এই জানিয়ে, যে দুপাট্টা ছাড়া আর কোনও রকমের শিরোভূষণ তাঁরা শিরোধার্য করতে অপারগ। সেই থেকে সমস্ত মহিলাদের জন্যই হেলমেট পরাটা অপশনাল হয়ে গেছে। আর সর্দারজীদের তো হেলমেট পরতেই হয় না। মাথা জোড়া পাগড়িটাই শিরস্ত্রাণের কাজ করে।

    এই সব খুচরো ইনফর্মেশন আপনার হয় তো কাজে লাগবেও না, ইন্টারেস্টও পাবেন না শুনে। তারচেয়ে যদি বোরিয়া বিস্তার লেকে দিল্লিতে এসে বাসা বাঁধার প্ল্যান করেন, কিংবা দিল্লিতে প্রপার্টি কেনার কথা ভাবেন টাবেন, তো গ্যাঁড়াকে ছোট্ট করে একটা ফোন ঘুমা লেনা। বিনামূল্যে সুলভে জ্ঞান বিতরণ করে দেবে গ্যাঁড়া। বাকিটা আপনার অ্যাক্‌সেন্ট আর হাতযশ।

    (আর এক কিস্তি দৌড়েগা, পরের কিস্তিতেই দৌড় খতম)

    এপ্রিল ১২, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১২ এপ্রিল ২০০৯ | ৯০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন