এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  বিজ্ঞান সহজিয়া

  • তিনি দূরবিন দিয়ে আকাশে তাকালেন, আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম হল

    গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়
    পড়াবই | বিজ্ঞান সহজিয়া | ০৪ এপ্রিল ২০২১ | ৩২৩৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • গালিলেও গালিলেই। প্রথম নিখুঁত ঘড়ি, থার্মোমিটার, পতনশীল বস্তুর সঠিক নিয়ম আবিষ্কার, পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিণ তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল… বিজ্ঞানের প্রগতিতে তাঁর অবদান বিপুল। আর এ সবকিছুর মূলে ছিল ধর্মান্ধতাকে অস্বীকার করে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসায় তাঁর অবিচল আস্থা। তবু ছিলেন রক্তমাংসের মানুষই। চার্চের সঙ্গে সংঘাতে আপাত-পিছু হটেও, ধর্মীয় বিশ্বাসের মূলস্তম্ভে আঘাত অব্যাহত রেখেছিলেন গোপনে। একটি নতুন জীবনীগ্রন্থ। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কর্মসচিব, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়


    যে বই নিয়ে লিখতে বসেছি, তা গালিলেওর এক আধুনিক জীবনী। গালিলেও আমার মতো বহু লোকের কাছেই এক মহাকাব্যের নায়কোচিত চরিত্র। আলোচ্য বইটির লেখক ডেভিড উটন তাঁর অন্য এক বই দি ইনভেনশন অফ সায়েন্স (The Invention of Science)-এ দেখিয়েছেন যে সায়েন্স বা বিজ্ঞান বর্তমানে যে অর্থে ব্যবহার হয়, তা নিতান্তই আধুনিক। অবশ্য তিনিই প্রথম এই কথা বলেছিলেন তা নয়, কিন্তু উটন ইউরোপের বিভিন্ন ভাষাতে সায়েন্স, সায়েন্টিস্ট, ফ্যাক্ট, থিওরি ইত্যাদি শব্দ প্রথম কবে ব্যবহার হয়েছিল, তা দেখিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মলগ্নকে চিহ্নিত করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের মূল লক্ষণ হল পরীক্ষানিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ, এই দুয়ের উপর জোর দিয়ে গালিলেওই তার গোড়াপত্তন করেছেন। একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘গণিতের বর্ণমালাতে ঈশ্বর ব্রহ্মাণ্ড রচনা করেছেন’। বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান যে গণিতকে আশ্রয় করে বিকশিত হয়েছে, তার সূত্রপাতে আছেন গালিলেও। ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিরোধের প্রথম যুগের এককেন্দ্রীয় চরিত্র তিনি, চার্চের হাতে তাঁর নিগ্রহের কথা আমরা সবাই জানি।



    গালিলেও গালিলেই, অঙ্কবিদ। শিল্পী দোমিনেকো তিনতোরেত্তো। আনুমানিক ১৬০২-১৬০৭।
    সৌজন্য – ন্যাশনাল ম্যারিটাইম মিউজিয়াম, ব্রিটেন


    গালিলেও গালিলেই (১৫৬৪ – ১৬৪২) আধুনিক বিজ্ঞানের এক কেন্দ্রীয় চরিত্র, তাঁর জীবন নিয়ে আরও বহু বই আছে। গ্যালিলিও: ওয়াচার অফ দি স্কাইস (Galileo: Watcher of the Skies)-কে কোন্‌ ধরনের বই বলা যায়? জীবনী নিশ্চয়, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের স্রষ্টা বলে সাধারণ ভাবে যিনি পরিচিত, সেই গালিলেওর বিজ্ঞানে অবদান সম্পর্কে আলোচনা সংক্ষিপ্ত। যে পাঠকের জন্য লেখা, লেখক ডেভিড উটন ধরে নিয়েছেন যে তিনি গণিতের জটিল তাতে আগ্রহী নন। বিশেষ করে গালিলেওর সব থেকে পরিচিত বইগুলোর একটি, দি টু নিউ সায়েন্সেস (The Two New Sciences) সম্পর্কে আলোচনা খুবই কম। ইউরোপীয় রেনেশাঁর ঐতিহাসিক উটন ক্যাথলিক চার্চের সঙ্গে গালিলেওর বিরোধকে এক কেন্দ্রীয় স্থান দিয়েছেন। সেই আলোচনাতে যেখানে তথ্যের অভাব ঘটেছে, সেখানে উটন যুক্তিগ্রাহ্য অনুমানের আশ্রয় নিয়েছেন; বন্ধু ছাত্র বা পরিচিত বা প্রতিপক্ষদের কথাবার্তা, বই বা চিঠিপত্র থেকে গালিলেওর অবস্থানকে বিচার করার চেষ্টা করেছেন। তাই এই বইকে ইতিহাস বলাটাও বোধহয় ঠিক হবে না। প্রকাশের পর থেকেই বইটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিতর্কটা মূলত তুলেছেন বিজ্ঞানের ঐতিহাসিকরা, তাই খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিনের সমালোচকদের কাছে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেলেও অ্যাকাডেমিক মহল বইটিকে খুব একটা সুনজরে দেখেনি। বিভিন্ন জায়গায় উটনের অনুমানের উড়ান তাঁদের সমালোচনার পাত্র হয়েছে।



    গালিলেও-র বিচার। শিল্পী খ্রিস্তিয়ানো বান্তি। ১৮৫৭


    তাহলে এই বই নিয়ে আলোচনা করতে বসেছি কেন? প্রথমত অনেক সময়েই উটন যে কথা লিখেছেন, তা ঐতিহাসিকদের কাছে সুপরিচিত হতে পারে, কিন্তু আমার মতো সাধারণ পাঠকের কাছে তা বেশ নতুন। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমের পণ্ডিতদের কাছে উটনের অনুমানকে পিছনের যুক্তিকে দুর্বল মনে হয়েছে। আমাদের মতো দেশ, যেখানে ঐতিহাসিক তথ্য একান্তই দুর্লভ, সেখানে ইতিহাস লিখতে বসলে অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের অনুমানের আশ্রয় ছাড়া উপায় নেই। গতবছর প্রকাশিত এক সংকলনে বাংলাতে বিজ্ঞানচর্চার আদিপুরুষ অক্ষয়কুমার দত্ত শেষজীবনে ঈশ্বরে বিশ্বাসী না অজ্ঞেয়বাদী তা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ পড়লাম, এবং সমস্ত লেখককেই সেখানে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের উপরেই নির্ভর করতে হয়েছে। এঘটনা দেড়শো বছর আগের, গালিলেও ও চার্চের বিরোধের ইতিহাসের বয়স চারশো বছরের বেশি। অক্ষয়কুমার সরাসরি তাঁর ঈশ্বরবিশ্বাস সম্পর্কে প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি, গালিলেওর কালে অবিশ্বাসীকে পুড়িয়ে মারারও বিধান ছিল। এইধরনের পরিস্থিতিতে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করাতে আমার মতো ভারতীয় এবং ইতিহাসের কৌতূহলী কিন্তু সাধারণ পাঠক বিচলিত হবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।

    পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের একটা উদাহরণ দেখা যাক। গালিলেও বিয়ে করেননি, রক্ষিতার গর্ভে তাঁর তিন ছেলেমেয়ের জন্ম হয়। সেযুগেই তালিতে এ ছিল খুব সাধারণ ঘটনা, সন্তানদের তার জন্য সমাজে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়নি, গালিলেও তাদের পিতৃত্ব অস্বীকার করেননি এবং সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এ নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। এর বাইরে আনা বলে একটি মেয়ের সমস্ত দায়িত্ব গালিলেও নিয়েছিলেন; তার বিয়ের পণ, তার স্বামীর রোজগারের ব্যবস্থা, আনার মৃত্যুর পরে তার সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন গালিলেও। জীবনের প্রথম পাঁচ দশক বেশ দারিদ্র্যের মধ্যেই কাটিয়েছেন গালিলেও। ভাই, মা এবং নিজের ও ভাইয়ের সন্তানদের ভরণপোষণ, বোনেদের বিয়ের পণের ব্যবস্থা করা, মায়ের নানা অযৌক্তিক দাবি মেটাতে হয়েছে তাঁকে। পরবর্তী জীবনে অবশ্য অর্থ কোনো সমস্যা ছিল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও গালিলেও অনেক সময় নিজের ভাই বা ছেলের অন্যায় দাবি মেটাতে অস্বীকার করেছেন। তাহলে কেন তিনি আনা ও তার সন্তানদের দায়িত্ব নিলেন? উটন অনুমান করেছেন আনা গালিলেওরই সন্তান। অনুমান যে যুক্তিগ্রাহ্য সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রশ্ন উঠতেই পারে যে এইক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম ঘটল? কেন গালিলেও সন্তানকে স্বীকার করলেন না? এই প্রশ্নের উত্তর এখন পাওয়ার আশা নেই, তা বলে উটনের অনুমানকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

    এ কথা মানতেই হবে যেসব অনুমানের পক্ষে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ এত শক্তিশালী নয়। ১৬০৪ সালে এক সুপারনোভা দেখা দিয়েছিল, সেই নিয়ে সেক্কো দি রঞ্চিত্তির লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। নামটি স্পষ্টতই ছদ্মনাম, পণ্ডিতরা সবাই প্রায় একমত যে এটি গালিলেওর লেখা। আবার সেই পুস্তকের সমর্থনে প্রকাশিত এক পুস্তিকার লেখক ছিলেন আলিম্বার্তো মাউরি, কিন্তু এই নামের কোনো বিজ্ঞানীর সন্ধান পাওয়া যায় না। একটা মত প্রচলিত আছে যে এটির লেখক গালিলেও; গালিলেওর জীবন বিশ্লেষণ করে উটন তার সপক্ষে অনেকগুলি যুক্তি দেখিয়েছেন। গালিলেও দীর্ঘদিনই রোমে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আশায় ছিলেন আমরা জানি। কিন্তু সেই মুহূর্তে গালিলেও ছিলেন ভেনিসের নাগরিক, এবং ভেনিসের সঙ্গে রোমের পোপের সম্পর্ক ছিল খুব খারাপ। বইটি পোপের এক ঘনিষ্ঠ পার্ষদকে উৎসর্গ করা হয়েছিল, তার ভূমিকাতে লেখক বলেছিলেন যে তিনি নিজে এই বিষয় ও আরও নানা আবিষ্কার রোমে গিয়ে সাক্ষাতে জানাতে চান, কিন্তু তিনি নিরুপায়। উটনের মতে সেসময় ইউরোপে যে ক-জনের পক্ষে সেই বইটি লেখা সম্ভব ছিল, তাদের মধ্যে একজনেরই জন্যই এই কথাটা সত্য। হয়তো পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য, কিন্তু উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। চার্চ কর্তৃক গালিলেওর বিচার এবং তাঁর ভুল স্বীকারের বিষয়ে উটনের চিন্তাভাবনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কোনোভাবেই এই সংক্ষিপ্ত লেখাতে তার আলোচনা সম্ভব নয়। মধ্যযুগের চার্চের ইতিহাস, ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট ধর্মের বিরোধ, ইতালির বিভিন্ন নগররাষ্ট্র, রোম এবং স্পেন ও ফ্রান্সের রাজনৈতিক সম্পর্ক—গালিলেওর জীবনকে সেই পটভূমিতে দেখছেন উটন।

    পণ্ডিতদের বিতর্কের কথা দূরে সরিয়ে রেখে বইটা পড়লে গালিলেওকে কেন সাধারণ ভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয় সেসম্পর্কে এক স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। তার দু-একটি উদাহরণ দেখা যাক। এইসময় কোপার্নিকাস (১৪৭৩–১৫৪৩) ছাড়া আরও দুটি মডেলের কথা চালু ছিল। টলেমির (আনুমানিক ১০০–১৭০ সাধারণাব্দ) মডেলে পৃথিবী স্থির, বাকি সমস্ত গ্রহনক্ষত্র তাকে প্রদক্ষিণ করে। টাইকো ব্রাহে-র (১৫৪৬-১৬০১) মডেলে গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে; সূর্য আবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। গালিলেও তাঁর ডায়ালগ কনসার্নিং দি টু চিফ ওয়ার্ল্ড সিস্টেমস (Dialogue Concerning the Two Chief World Systems) কোপার্নিকাস ও টলেমির মতের বিতর্কেই সীমাবদ্ধ ছিল, টাইকোর কথা সেখানে আসেনি বললেই হয়।



    টোলেমি বর্ণিত বিশ্বজগতের শৈল্পিক নির্মাণ। শিল্পী মানচিত্রকর আন্দ্রেয়াস সেলারিয়াস। ১৬৬০


    ছাপার অক্ষরে প্রথম প্রকাশিত কোপার্নিকাসের ‘হেলিওসেন্ট্রিক মডেল’। ১৫৪৩


    টাইকো ব্রাহে-র বিশ্বজগতের মডেলের চিত্ররূপ। সপ্তদশ শতকে আঁকা।


    ১৬১০ সালে প্রথম প্রকাশ্যে কোপার্নিকাসকে সমর্থন করলেও গালিলেও যে আরও অনেক আগেই সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বে বিশ্বাসী ছিলেন সন্দেহ নেই। বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলারকে ১৫৯৭ সালে লেখা এক বিখ্যাত চিঠিতে গালিলেও সেই কথা লিখেছিলেন। বিজ্ঞানের ছাত্রের কাছে এ কথা অজানা নয় যে গালিলেও বস্তুর গতিবিধি আলোচনা করতে গিয়ে যে জাড্যধর্মের কথা বলেছিলেন, কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বের জন্য তা খুবই প্রয়োজনীয়। গালিলেও জোয়ারভাঁটাকে পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন; সন্দেহ নেই যে তা ছিল ভুল, এবং গালিলেও নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন যে জোয়ারভাটার অনেক মৌলিক চরিত্র তাঁর তত্ত্ব থেকে আসে না। সেযুগে পর্যবেক্ষণগত ভাবে গালিলেওর পক্ষে টাইকো আর কোপার্নিকাসের মডেলে তফাত করা সম্ভব ছিল না। উটন দেখাচ্ছেন যে গালিলেওর মূল আক্রমণের লক্ষ্য ছিল অ্যারিস্টটলের বিশ্ববীক্ষা এবং সেখানে টলেমি ও টাইকো দুজনেই এককথা বলেছেন, পৃথিবী স্থির।

    কোপার্নিকাসের মডেলের বিপক্ষে এক বড়ো যুক্তি ছিল যে চলমান পৃথিবী থেকে তারাদের অবস্থানের পরিবর্তন দেখা উচিত ছিল, কিন্তু কোনোভাবেই তা দেখা যাচ্ছে না। গালিলেও নিজেও বহু চেষ্টা করেছিলেন সেই পরিবর্তন দেখতে, কিন্তু আমাদের যন্ত্রপাতির সেই সুবেদিতা আসতে সময় লাগবে আরও দুশো বছর। গালিলেও বুঝেছিলেন কোপার্নিকাসের কথা মানলে নক্ষত্ররা অনেক দূরে আছে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আয়তন বিশাল, হয়তো বা অনন্ত। একই সঙ্গে নক্ষত্রদের আয়তনও হতে হবে বিরাট, তারা এক একটা সূর্যের সমান। খ্রিস্টধর্মের মূলে ছিল মানুষের জন্যই ঈশ্বর ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন এই বিশ্বাস। কোপার্নিকাসের অসংখ্য সূর্যবিশিষ্ট অসীম ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে মানুষের স্থান হয়ে দাঁড়াল অতি তুচ্ছ, নগণ্য। স্বাভাবিক ভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক খ্রিস্টধর্ম এই ধারণাকে সহজে মেনে নিতে পারেনি। আগের শতাব্দীতে এই কথা বলার জন্যই জিওদার্নো ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। তা জেনেও কেন গালিলেও কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মতকে সমর্থন করতে গিয়ে চার্চের বিরাগ ভাজন হয়েছিলেন?

    গালিলেওর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল অ্যারিস্টটলের দর্শন, কারণ তার সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের বিরোধটা খুব স্পষ্ট। গালিলেও ডায়ালগে এক অ্যারিস্টটলপন্থী দার্শনিকের কথা বলেছেন। যত্ন করে শবব্যবচ্ছেদ করে তাঁকে দেখানো হল যে সমস্ত স্নায়ু গিয়ে মস্তিষ্কে শেষ হয়েছে। তিনি বললেন যে যদি অ্যারিস্টটল যদি না বলতেন যে স্নায়ুর উৎস হল হৃৎপিণ্ড, তাহলে তিনি নিশ্চয় নিজের চোখকে বিশ্বাস করতেন। পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে গালিলেওর অ্যারিস্টটলপন্থী সহকর্মীরা দূরবিনের সাক্ষ্য হয় অগ্রাহ্য করেন, নয়তো তার ভিতর দিয়ে তাকাতেই অস্বীকার করেন– কারণ ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে যা বলার অ্যারিস্টটল তো আগেই বলে দিয়েগেছেন। অ্যারিস্টটলের অবরোহী যুক্তি ও দর্শনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অভিজ্ঞতাবাদের পক্ষে প্রথম যে বিজ্ঞানীরা জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আছেন গালিলেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারিস্টটলপন্থী পণ্ডিতদের আলোচনার ভাষা হল লাতিন, সচেতন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে তাঁর বইয়ের জন্য ইতালীয় ভাষা বেছে নিয়েছিলেন গালিলেও।



    ভেনিসের ডজে (প্রধান শাসক)-কে দূরবীক্ষণ দিয়ে দেখতে সাহায্য করছেন গালিলেও। শিল্পী গিউসেপ বের্তিনি
    (ঊনবিংশ শতক)


    অভিজ্ঞতাবাদী দর্শন বলে যেসমস্ত জ্ঞানের উৎস হল অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার অর্থ হল পরীক্ষানিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ। এই কথা আজ খুব স্বাভাবিক মনে হয়, কিন্তু গালিলেওর যুগে আপ্তবাক্য বা শাস্ত্রই ছিল সত্যমিথ্যা বিচারের ক্ষেত্রে শেষ কথা। উটন বলছেন হাতেকলমে পরীক্ষানিরীক্ষার উপরে গালিলেও যে পুরোপুরি নির্ভর করতেন তা ঠিক নয়, তিনি কিছুটা বাধ্য হয়ে অভিজ্ঞতাবাদী হয়েছিলেন। সেটা আশ্চর্য নয়, যে-কোনো বিষয়ে প্রথম যাঁরা শুরু করছেন, তাঁদের সকলের মধ্যেই এই দোদুল্যমানতাই স্বাভাবিক। কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রথম দুই জনক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ও আলবার্ট আইনস্টাইন সারাজীবন তাঁদের নিজেদের আবিষ্কারের তাৎপর্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। গালিলেও শেষপর্যন্ত অভিজ্ঞতাবাদের পক্ষেই গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, বিজ্ঞানের ইতিহাসের কাছে সেটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা। অ্যারিস্টটলের দর্শন খ্রিস্টধর্মের থেকেও প্রাচীন, তাকে পরবর্তীকালে খ্রিস্টধর্মের অঙ্গীভূত করা হয়েছিল। গালিলেও তাকে ধর্মের সঙ্গে এক করে দেখতেন না। তাঁর আশা ছিল যে তাঁর যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ অ্যারিস্টটলের ভ্রান্ত দর্শন থেকে খ্রিস্টধর্মকে মুক্ত করবে। গালিলেও বোঝেননি যে তা হওয়ার নয়; ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিরোধের সেই সূচনা।

    গালিলেও যেদিন দূরবিন আকাশের দিকে ফিরিয়েছিলেন, আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই উটনের বইয়ের এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে দূরবিনের কথা। দূরবিনের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ থেকেই গালিলেও দূরের নক্ষত্রদের সূর্য বলে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন; শুক্রের কলা, চাঁদের বুকে পাহাড় গহ্বর, সৌরকলঙ্ক ইত্যাদি দেখে আকাশের গ্রহনক্ষত্রদের সঙ্গে মাটির পৃথিবীর মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। দেখলেন চারটি চাঁদ যারা বৃহস্পতিকে প্ৰদক্ষিণ করছে। তাহলে পৃথিবীই ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে আর সমস্ত কিছুই তাকে প্ৰদক্ষিণ করে, একথা আর বলা যাবে না। কোপার্নিকাসের মতের চাক্ষুষ প্রমাণ দেখতে পেয়েছিলেন গালিলেও।

    অ্যারিস্টটলের মত খণ্ডন করতে গিয়ে গালিলেও বলবিদ্যার জগতে যুগান্তর নিয়ে আসেন। অ্যারিস্টটলপন্থীরা প্রশ্ন করতেন যে পৃথিবী যদি চলমান হয়, তাহলে কোনো বস্তুকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে তা ঠিক নীচে পড়বে কেন, তার তো পিছিয়ে যাওয়া উচিত। তাঁরা জানতে চাইলেন, পৃথিবী যদি গতিশীল হয়, তাহলে চাঁদ কেমন করে পৃথিবীর সঙ্গে সবসময় থাকে? গালিলেও তাঁদের বললেন, যে বৃহস্পতি যদি চারটি চাঁদকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারে, তাহলে পৃথিবী কেন পারবে না? তিনি উদাহরণ দিলেন যে চলমান জাহাজের মাস্তুল থেকে কোনো বস্তুকে নীচে ফেললে তা মাস্তুলের গোড়াতেই পড়ে, জাহাজের গতির জন্য পিছন দিকে চলে যায় না। তেমনি পৃথিবীতে পতনশীল বস্তু সোজা নীচের দিকেই পড়ে, পিছিয়ে যায় না। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন একটা ভারী ও একটা হালকা বস্তুকে একসঙ্গে ফেলে দিলে ভারীটা আগে মাটিতে পড়বে। গালিলেও পতনশীল বস্তুর সঠিক নিয়মগুলি আবিষ্কার করেন, এ বিষয়ে তাঁর করা পরীক্ষা কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রকল্প বা হাইপোথিসিস উত্থাপন ও পরীক্ষার মাধ্যমে তার সত্যতা যাচাই করার যে পদ্ধতি গালিলেও শুরু করেছিলেন, তা আধুনিক বিজ্ঞানের এক মূল স্তম্ভ।

    গালিলেওর চিন্তাতে স্বাভাবিক ভাবে এসেছিল শূন্যস্থানের ধারণা ও পরমাণুবাদ। মহাবিশ্ব যদি অসীম হয়, তাহলে তার অধিকাংশটা শূন্যস্থান বা ভ্যাকুয়াম হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার পরমাণুবাদের বিরুদ্ধে একটা প্রধান যুক্তি ছিল যে তাহলে পরমাণুদের মধ্যের জায়গা নিশ্চয় ফাঁকা, এবং অ্যারিস্টটল বলে গেছেন যে শূন্যস্থানের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। পরমাণুবাদ ও শূন্যস্থান দুইই ছিল সক্রেটিস প্লেটো বা অ্যারিস্টটলের না-পসন্দ, এবং খ্রিস্টধর্ম তাঁদের মতকে আত্মস্থ করেছিল। প্রোটেস্টান্ট ও ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে একটি বিরোধের জায়গা ছিল যে ক্যাথলিকরা বিশ্বাস করত প্রার্থনার ফলে রুটি ও মদ খ্রিস্টের দেহ ও রক্তে পরিবর্তিত হয়ে যায়। পরমাণুবাদ বলত যে এক পরমাণু কখনোই অন্য পরমাণুতে পরিবর্তিত হয় না, তাই পরমাণুবাদের উপর ক্যাথলিক চার্চ খড়্গ হস্ত ছিল। গালিলেও পরমাণুবাদের সমর্থন করতেন বলে তাঁর নামে চার্চের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল। গালিলেও অলৌকিক ঘটনার সম্ভাবনাকে অস্বীকার করেন এবং প্রকৃতিকে বাইবেলের উপরে জায়গা দিয়েছিলেন। এইদিকে থেকে তাঁকে কোনো আধুনিক বিজ্ঞানীর থেকে আলাদা করা যায় না, হয়তো বা আমাদের আশপাশের অনেকের থেকেই তিনি অনেক বেশি আধুনিক।

    প্রথম থার্মোমিটার বানিয়েছিলেন গালিলেও, ভ্যাকুয়াম বা শূন্যস্থান সম্পর্কে তাঁর মতকে এক বিখ্যাত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন তাঁর ছাত্র টরিশেলি। পেন্ডুলামের সূত্র আবিষ্কার করে প্রথম নিখুঁত ঘড়ি বানিয়েছিলেন গালিলেও। গালিলেও যখন বলছেন যে পরমাণুর একমাত্র আকার ছাড়া কোনো ধর্ম নেই, পদার্থের বর্ণ গন্ধ ইত্যাদি সমস্তই সেই আকার আমাদের ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে কেমন ভাবে ক্রিয়া করে তার উপর নির্ভর করে, তখন তাঁর কথায় যেন আধুনিক কণা পদার্থবিদ্যা ও কোয়ান্টাম তত্ত্বের ইঙ্গিত খুঁজে পাই।



    গালিলেও-র কম্পাস। আনুমানিক ১৬০৪ সালে তৈরি


    উটনের গালিলেও কোনো মহামানব নন, রক্তমাংসের মানুষ। কখনও উদার, কখনও স্বার্থপর, কখনও প্রচণ্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কখনও সাহসী, কখনও ভীরু, কখনও সুবিধাবাদী। ভেনিসের শাসকদের দূরবিনকে নিজের আবিষ্কার বলে দেখিয়ে চাকরিতে অনেক সুযোগসুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। আবার বিজ্ঞানের জন্য সময় পাচ্ছেন না বলে অর্থকষ্ট স্বীকার করেও ভেনিস থেকে ফ্লোরেন্স গেছেন। দুই মেয়েকেই করেছেন মঠের সন্ন্যাসিনী, আবার একজনের কাছাকাছি থাকবেন বলে বাড়ি পালটেছেন। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে অনেক কমবয়সি এক মহিলার প্রেমে পড়েছেন, তিনিও সাড়া দিয়েছেন; যদিও অন্তরঙ্গতা দূরে থাক, এক দশকে দু-ঘণ্টার বেশি তাঁদের দেখাও হয়নি। প্রকাশ্যে ক্যাথলিক ধর্মে তাঁর অটুট বিশ্বাসের কথা বারবার ঘোষণা করছেন, কিন্তু বাস্তবে সেই ধর্মের সব ক-টি মূলস্তম্ভেরই তিনি বিরোধী। নিজের মতপ্রচারে চার্চের নিষেধ মেনে চলার অঙ্গীকার করছেন, আবার গোপনে তাঁর বই বিদেশ থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন। উটন এক বহুবিতর্কিত অধ্যায়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন সেযুগের বিচারে গালিলেওকে আদৌ ধার্মিক বলা যায় না, তিনি শুধু চার্চের রোষ এড়ানোর জন্য উচ্চস্বরে নিজের ধর্মপ্রাণতার কথা বলতেন। গালিলেওর শৈশব এবং তাঁর উপর তাঁর মা ও বাবার প্রভাব আলোচনা করে গালিলেওকে বুঝতে চেয়েছেন লেখক। বহুবিতর্কিত বইটি তথ্যবহুল হলেও অনায়াসে পড়া যায়। উটনের সঙ্গে একমত না হতে পারেন, কিন্তু তাঁর কথাকে আপনি বিনাবিচারে উড়িয়ে দিতে পারবেন না।


    --

    Galileo: Watcher of the Skies
    David Wootton
    Yale University Press
    Rs. 280.25 (Kindle), Rs. 1847 (Paperback)


    গ্রাফিক্স: মনোনীতা কাঁড়ার
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ০৪ এপ্রিল ২০২১ | ৩২৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যদুবাবু | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৪104463
  • খুব-ই সুন্দর লেখা। গালিলেও-কে নিয়ে বা সেই সময়ের ইতিহাস নিয়ে যে কোনো লেখাই এতো মনোগ্রাহী যে বলার কথা নয়। সেই শতক-টাই আশ্চর্য ছিলো বোধহয়, ১৬১০-এ গালিলেও বললেন তিনি আবিষ্কার করেছেন "conergies of innumerable stars" আর তার অল্প সময় পরেই, ১৬৭৪-এ, লিউএনহুক-এর মাইক্রোস্কোপ-এ ধরা পড়লো শতলক্ষের বেশী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীব মাত্র এক ফোঁটা জলে। বিজ্ঞানের ইতিহাস কেমন স্টেপ ফাংশনের মতো, মাঝে মাঝে বেমক্কা অনেকটা সামনে এগোয়, তারপর দীর্ঘদিন আস্তে আস্তে একটু-একটু। 

    গালিলেও-র চরিত্রের একটিই দিক আমার খারাপ লাগে, তা এই যে তিনি ভাবতেন বিজ্ঞানের প্রগতি তাঁর সাথে সাথেই শেষ, আর কারুর কিছু করবার বাকি নেই। এক জায়গায় বলেছিলেন, "It was granted to me alone to discover all the new phenomena in the sky and nothing to nobody else". এখন দাঁড়িয়ে অবশ্য জাজ করা সহজ।

    যাহোক, লেখাটা পড়ে ভালো লেগেছে, আপনার বাকি লেখাগুলোও পড়ব্‌ আরও লিখুন ! 

     

  • বিজ্ঞানী | 47.***.*** | ০৫ এপ্রিল ২০২১ ১৫:১৯104495
  • এইসব আবাল মার্কা বইগুলো ছাপার দিন এবারে শেষ হয়ে আসছে।


    গ্যালিলিও বিজ্ঞানের আবিষ্কারক !!! এইটা বলাটাই বিজ্ঞানের অপমান !!! ওর জন্মের দশ হাজার বছর আগে থেকে ভারতে যে সব আবিষ্কার হয়ে এসেছে,সেসব এখনও লোকে উদ্ধার করে উঠতে পারছে না।


    অবশ্য সাদা চামড়ার পা চেটে পয়সা পেতে গেলে এইসব বই লিখতে হয় বৈকি :))))


    তার দিনও ফুরিয়ে আসছে, কারণ এনজিওর ফরেন ফান্ডিংও বন্ধ হবে

  • Amit | 14.202.***.*** | ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৩৪104504
  • ব্যাস। যথারীতি গরু এসে ল্যাজ নাড়াতে শুরু করে দিয়েছে। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন