এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • তাতক্ষণিক তিন তালাকঃ সমস্যা ও সমাধান ভাবনা

    মীরাতুন নাহার লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৮ মার্চ ২০২০ | ১৪৫৯ বার পঠিত
  • ইসলাম ধর্ম বিশ্বের কনিষ্ঠ ধর্মগুলির একটি। এই ধর্মের প্রবর্তক তাই প্রথম থেকেই কিছু সংস্কারমূলক চিন্তাভাবনার পরিচয় দিতে সমর্থ হয়েছেন। বিয়ে সম্পর্কিত বিধানগুলিতে তার প্রমাণ মেলে। ইসলামধর্মসম্মত বিয়েতে পাত্রীর সমর্থসূচক মত না মিললে বিয়ে সম্পন্ন হতে পারে না এবং এই বিয়ের কারণে পাত্র ও পাত্রীর যে সম্বন্ধ স্থির হয় সেটি জন্ম জন্মান্তরের বা অন্য কোনো প্রকার 'বন্ধন' নয়। সেটি একটি 'চুক্তি' মাত্র যা গুরুত্বপূর্ণ কোন কারণ ঘটলে লঙ্ঘনযোগ্য এবং সেই লংঘনের বিশেষ বিধি সম্পর্কে ধর্মীয় নির্দেশ রয়েছে ধর্মশাস্ত্রে। সেই প্রকার চুক্তিলংঘনজনিত বিবাহ-বিচ্ছেদকে আরবি ভাষায় বলা হয় 'তালাক'।ইসলাম স্ত্রীর সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করতে পারে তার জন্য এক মাস অপেক্ষা করে তালাক-এর চূড়ান্ত অভিমত প্রকাশ করতে হবে। তারপর এক মাস এবং তারও পর এক মাস তাকে সেক্ষেত্রে কেউ গ্রহণ না করতে পারে তার জন্য এক মাস অপেক্ষা করে তালাক-এর ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্য প্রতীক্ষা করতে হবে। যদি দেখা যায় তারপরও সে মতের কোন পরিবর্তন ঘটে নি তাহলে উভয়ের শুভার্থী জনেরা একত্রে বসে আলাপ আলোচনা করে(অবশ্যই তাঁরা দেখবেন স্ত্রী সন্তানবতী কি না) স্ত্রীর জন্য ভরণপোষণের আর্থিক ব্যবস্থা এবং সন্তানের জন্য আর্থিক দায়ভার গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি পালনের লিখিত প্রমাণপত্র প্রস্তুত করে তবে তালাক অনুমোদন করবেন। সর্বমোট চারমাস সময়কালের মধ্যে এই তালাক সমস্যার নিষ্পত্তি ঘটে এবং তারপর মুসলমান সমাজভুক্ত মেয়েদের পুনর্বিবাহে কোন বাধা থাকে না- না সমাজমনে, না ব্যক্তিমানসে যেমনটি আধুনিক সময়কালে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মেয়েরাও এক বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে মুক্তি নিয়ে অন্য সম্পর্কে যুক্ত হওয়ার সংস্কারমুক্ত মন লাভ করেছে এবং সমাজও তা মেনে নিচ্ছে সুদীর্ঘ সময়কালের অযৌক্তিক সংস্কার ভুলে অথবা না মেনে।

    মুসলমান সমাজে তাই তিন তালাক তেমন মারাত্মক কোন সমস্যা সৃষ্টি করেনি যেমনটি ভেবে নিয়েছে ইতিমধ্যে নিজেদের ধর্মের সঙ্গে তুলনা করে হিন্দু সমাজের মানুষজন। মুসলমান সমাজে রয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামি, নেই সামাজিক কুসংস্কার অন্যদিকে হিন্দু সমাজে রয়েছে সামাজিক কুসংস্কার, নেই ধর্মীয় গোঁড়ামি। মুসলমান সমাজভুক্ত পুরুষরা তিন তালাক দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পেরেছে এবং মেয়েরা তালাক পেয়ে আবারও বিবাহিতা জীবন পেয়েছে, এমনকি সন্তান সমেত,যাতে কোন পক্ষই কুসংস্কার-জনিত অসুবিধায় পড়ে নি। সম্পর্ক নষ্ট হয় বলে সে সম্পর্ক টিকিয়ে না রেখে ধর্ম-বিধি মেনে পুরুষ ও নারী চুক্তি-মুক্ত হয়েছে। সমাজ-সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি সেক্ষেত্রে। বরং কম সময়কালের মধ্যে দাম্পত্যজীবনের অশান্তি সেভাবে দূর হয়েছে। আদালত, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদির সাহায্য নিতে গেলে যে দীর্ঘ সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয় সেসবের প্রয়োজনও দেখা দেয়নি। বিশেষত অর্থাভাবগ্রস্ত এবং গ্রামে বসবাসকারীদের জন্য এই ধর্ম-বিধি যথেষ্ট কার্যকর হয়েছে, দেখা গেছে। হিন্দু সমাজে বিয়ে জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধন হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার ফলে বহুবছর বয়সী সনাতন এই সমাজে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটানোর এমন সহজ সমাধান মিলত না। ফলে দেওয়ানি আইনের সহায়তা নেওয়া ভিন্ন পথ তাদের জন্য খোলা থাকে নি। ফলে দেওয়ানি আইনের সহায়তা নেওয়া ভিন্ন পথ তাদের জন্য খোলা থাকে নি। ঠিক এইখানটিতে হিন্দু সমাজের পুরুষ নারীর বিয়ে ও বিবাহ-বিচ্ছেদ সম্পর্কিত ধ্যানধারণার সঙ্গে মুসলমান সমাজে প্রযোজ্য এবং প্রচলিত বিধি-বিধান সম্পর্কিত বাস্তব চিত্রের অমিল ঘটে যায়। যে সমাজ-সংস্কার বহু কঠিন প্রয়াস গ্রহণে তাদের সাধন করতে হয়েছে হিন্দু ধর্ম সনাতন ধর্ম বলে, অন্যদিকে ইসলাম ধর্ম বহু পরে প্রবর্তিত ধর্ম বলে তেমন প্রয়োজন এই ধর্মাবলম্বীদের সমাজে দেখা দেয় নি। এই সহজ সত্যটুকু সহজে আমরা বুঝি না বলে আমাদের বহু ভ্রান্ত ধারণার জন্ম ঘটেছে এবং সেসব উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনদের মধ্যে সুসম্পর্ক গঠনের পথে বাধা হয়েছে প্রজন্ম-পরম্পরায়।

    তিন তালাক সম্পর্কিত অভিমত গঠনের ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা লক্ষ্য করা গেছে বরাবর। ফলে শীর্ষ আদালত সাম্প্রতিক সময়কালে এই তালাক সম্পর্কে রায় ঘোষণা করার পর দেশের দুটি প্রধান ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যেকার অপরিচয়ের দূরত্ব আবার নতুন করে স্পষ্ট হয়েছে এবং কিছু নিরপেক্ষ মত গঠনে বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক প্রাণে তা বেদনার হেতু হয়েছে। হেঁয়ালি মনে হলেও এই বাস্তবতাকে তুলে ধরাই বর্তমান নিবন্ধের লক্ষ্য।

    হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে আমাদের দেশীয় সমাজ পুরুষতন্ত্র কবলিত। মুসলমান সমাজের সদস্য পুরুষরা সেই পুরুষতন্ত্রের সর্ববিধ সুবিধা নিতে একটুও পিছিয়ে থাকে না সর্বাপেক্ষা পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত দেশবাসী হওয়া সত্ত্বেও। তাই নিজেদের ধর্মশাস্ত্রকে মাথায় করে রেখেও সেই শাস্ত্রের নির্দেশকে বিকৃত করেছে অক্লেশে পুরুষতন্ত্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই। তালাক সম্পর্কিত নির্দেশকে তারা তাতক্ষণিক তিন তালাকে পরিণত করেছে পুরুষ হওয়ার সুবিধা নিয়ে। এক নিঃশ্বাসে 'তালাক-তালাক-তালাক' বললেই বিবাহসূত্রে পাওয়া নারীকে ত্যাগ করে অন্য নারীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া যায় এবং সন্তানকেও রাস্তায় বের করে দেওয়া যায় -এমন অমানবিক কান্ডকে তারা ধর্মসম্মত বলে প্রচলন করতে চেয়েছে। এভাবে তারা নিজেদের ধর্মকে কলঙ্কিত করেছে এবং সেইসঙ্গে সমাজকেও। পাশাপাশি হিন্দু সমাজের পুরুষরা তা দেখে তাদের ধর্মসম্প্রদায় ও সমাজ সম্পর্কে হীন ধারণা পোষণ করেছে। আত্মসমালোচনা করা অথবা যুক্তিসম্মত অভিমত গঠনের পথ তারা মাড়ায় নি। সরাসরি বিশেষ ধর্মসম্প্রদায় এবং সমাজকেই তারা কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছে এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষের মনোভাবকে দৃঢ় করেছে। তারা তিন তালাক ও তাতক্ষণিক তিন তালাকের পার্থক্য বুঝে নেওয়ার কষ্টটুকু স্বীকার না করে গোটা সম্প্রদায়টাকেই বর্বরপ্রথা পালনে অভ্যস্থ বলে গণ্য করে দূরে থাকার ব্যবস্থাপনাকেই মান্যতা দিয়েছে।

    অতঃপর দেশের শীর্ষ আদালত সম্প্রতি তাতক্ষণিক তিন তালাককে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশবাসী সাব্যস্ত করে নিয়েছে যে, এটি একটি 'ঐতিহাসিক রায়'। প্রশ্ন হল, শীর্ষ আদালতের এই রায় 'ঐতিহাসিক রায়'বলে সহজেই গণ্য করা হয়ে গেল, কিন্তু কোন অর্থে ঐতিহাসিক তা স্পষ্টতার আড়ালে থেকে গেছে। কিরকম?

    বস্তুত একটি 'বর্বর প্রথা' মুসলমান সমাজ থেকে দূর করা সম্ভব হল বলে আলোচ্য রায়টিকে সেই অর্থে 'ঐতিহাসিক রায়' বলে অভিহিত করা কেননা এই প্রথাটি আদতে শাস্ত্রসম্মত নয়। এটি তিন তালাকের বিকৃতি বা অপব্যবহার এবং সেই সত্যটি মনে রাখা খুব জরুরী। বাস্তবে দেখা যায় যে মুসলমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কে কিছু করতে গেলেই যদি তা শাসক রাজনৈতিক দলকে 'ভোটব্যাঙ্ক' হারাবার আতঙ্কে ফেলে দেয়, তাহলে দলের হাত বন্ধ হয়ে যায়। যেমন, শাহবানু মামলার ক্ষেত্রে যখন দেশজুড়ে শিক্ষিত মুসলমান নাগরিকমহল অভিন্ন দেওয়ানী বিধির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে তখন অতে জল ঢেলে দেন ততকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। মুসলমান মহিলাদের লাগাতার আন্দোলন তবু বন্ধ হয় নি। অতঃপর বহুবছর বাদে বর্তমান কেন্দ্রিয় শাসকদলের চাওয়া সাপেক্ষে(!) তাতক্ষণিক তিন তালাক প্রাপ্ত পাঁচজন মুসলমান তরুনীর অভিযোগ পেয়ে শীর্ষ আদালত যথাযথ ভূমিকা নিয়ে এই তালাকের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরিমন্ডল পেয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতাসর্বস্ব শাসকদল যে বাধা বরাবর তৈরি করেছে এক্ষেত্রে তা ঘটেনি কেননা, বর্তমান কেন্দ্রিয় সরকার দ্বিবিধ লাভের হিসাব কষেছেন। একটি হল, যে সম্প্রদায়কে তারা বিষনজরে দেখে তাদের মধ্যে প্রচলিত 'বর্বর প্রথা'-কে সর্বসমক্ষে তুলে ধরা হল! এবং দ্বিতীয়টি হল, তাদের মুসলমান- বিরোধী 'অপবাদ ' ও ভোটলাভের স্বার্থে অনেকখানি দূর করা গেল!

    কিন্তু দেশবাসী সকলেই জানেন গুজরাটের ঘটনা। ভুলবার নয়। তারপরেও তাদের হিতৈষিতার প্রশংসা করা কারও পক্ষে সম্ভব? অন্যদিকে যে ব্যবস্থার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি হল সেটি ধর্মীয় নয়, সামাজিক মানুষের ক্ষমতা প্রকাশের কদর্য বাস্তবতা যে বাস্তবতা সব ধর্মসম্প্রদায়ে বিরাজমান। ফলে কোনদিক থেকেই এটিকে বহুকাল ধরে চলে আসা বিশেষ ধর্মীয় প্রথার বিলোপসাধন এবং সেটি সম্ভব করেছে বহুকাল বাদে বর্তমান শাসকদল এমনটি মানা যায় না। শীর্ষ আদালত প্রকৃত সত্যটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন একথা বলে যে, এটি সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মস্বীকৃত প্রথা নয়। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ থেকে যে সত্যটি অস্পষ্ট থাকে নি সেটি হল, তারা কোনভাবেই মুসলমান মেয়েদের হিতাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না।

    শীর্ষ আদালত মুসলমান মেয়েদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পুরুষতন্ত্র-প্রভাবিত তাতক্ষণিক তিন তালাক - এর মতো নিষ্ঠুর, অমানবিক প্রথাকে আইন প্রয়োগ করে দূর করতে চেয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে সুবিবেচনাপ্রসূত, এবং ধর্মনিরপেক্ষ দেশের জন্য সচেতনতাপ্রকাশক একটি রায়। এই রায় যদি আইনপ্রণয়নের পথে সিদ্ধিলাভ করে তাতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মসম্পর্কিত সংবেদনশীলতা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কথা নয়। বরং এটি সমগ্র দেশের পিছিয়ে থাকা একটি গোষ্ঠীর জন্য কল্যাণসাধক একটি আইনি পদক্ষেপ।
    তবুও কথা থেকে যায়। বাস্তববাদী মন বলে উঠবে, আইনের পর আইন তৈরি করে আজও দেশের সংখ্যাগুরু অগ্রসর সমাজের মেয়েদের হত্যা এবং আত্মহত্যা থেকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। পণ দেওয়া নেওয়াকে ঘিরে নিত্যদিন ঘটছে নারী-নিপীড়ন সর্ব- ধর্ম- নির্বিশেষে। অথচ পণপ্রথা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ এবং দেশের আইন অনুযায়ীও নিষিদ্ধ। ততস্তত্বেও মেয়েদের বাঁচানো যাচ্ছে না। আইনের এই সীমাবদ্ধতা সবাই জানে ও মানে। বস্তুত আইন অপরাধীদের ভয় পাওয়াতেও আজ ব্যর্থ- দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘসূত্রতা এবং এবং যথেষ্ট অর্থ-নির্ভরতা আইনকে দরিদ্র, অসহায়, অশিক্ষিত মেয়েদের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। যে পাঁচ কন্যার অভিযোগ এভাবে শীর্ষ আদালতে স্বীকৃতি পেল তা সম্ভব হত না এক আইনজীবী মহিলার কঠিন লড়াই এবং তারও পশ্চাতে বহুদিন ধরে চালিয়ে যাওয়া কিছু মহিলা সংগঠনের আন্দোলন সক্রিয় না থাকলে।

    পরিশেষে বলি, মেয়েরা, বর্তমান আলোচনায় অবশ্যই মুসলমান মেয়েরা, আত্মশক্তিতে বিশ্বাসী হওয়ার মতো শিক্ষা ও কর্মসংস্থান লাভের সুযোগ যতদিন না পাবে ততদিন কেবল আইনি সুরক্ষা ব্যবস্থা তাদের জন্য সহায়ক হতে পারবে না। স্বাবলম্বী মেয়ে 'তালাক', যা আসলে আরবি ভাষার মোড়ক খুললে বিয়ের সম্পর্ক থেকে বিচ্ছেদ, পেলে অসহায় ভাবে না নিজেকে। পুরুষ নির্ভর জীবনকে বরং ধিক্কার দিতে পারার সামর্থ্য অর্জন করে তালাক পেয়ে। নিজ-শক্তিতে বাঁচা এবং সন্তানকে বাঁচানোরও সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারে। অন্যথায় বিয়েকে জীবনের পরম লক্ষ্য গণ্য করে অর্থহীন জীবন যাপন করাতেই অভ্যস্ত মেয়েরা কখনও মুক্তির স্বাদ পাবে না। সেই কবে মহাপ্রাণা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বলে গিয়েছিলেন, বিয়ে মেয়েদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। সাতবর্ষ-এরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে তারপর। আজও ভারতীয় মেয়েরা তাঁর কথার সারার্থ বুঝে গ্রহণ করতে পারে নি।
    যেটি সকল মেয়েদের জন্য চাওয়ার সেটি হল, শ্রমজীবী মেয়েরা বিবাহিত জীবন থেকে সরতে বাধ্য হলে নিজ পরিশ্রমে আয়-রোকার করে বাঁচবে এবং শিক্ষালাভের সুযোগ পাওয়া মেয়েরাও একইভাবে কর্মসংস্থানের উপর নির্ভর করবে। কেবল বিয়ে-নির্ভর জীবন যেন মেয়েদের জন্য একমাত্র কাম্যজীবন না হয়।

    মোট কথা, আগে স্বাবলম্বন তারপর বিয়ে। তা যদি সম্ভব করা যায় তাহলে তালাক (বিবাহ-বিচ্ছেদ)-কে ভয় পাওয়া ব্যাপারটি বন্ধ হতে বাধ্য। কষ্ট মিলবে কিন্তু ভয় থাকবে না এবং আইনি সহায়তাও সেক্ষেত্রে নাগালের বাইরে থাকবে না।

    বস্তুত ভারতীয় মেয়েরা, মুসলমান মেয়েরা কেবল নয়, আজ একটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণের প্রতীক্ষায় কাল কাটাচ্ছে এবং সে প্রতীক্ষার অবসান, আমার বিশ্বাস, একদিন ঘটবেই। প্রতিজ্ঞাটি হল- নর-নির্ভর (একান্তভাবে)নারীজীবনের অবসান ঘটাতেই হবে। মূল গলদটি যে সেখানেই রয়ে গেছে!

    বলা বাহুল্য যে, আলোকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কিত কেন্দ্রিয় সরকার প্রস্তাবিত বিল সম্প্রতি বিতর্কের সূচনা করেছে কেননা, মুসলিম পুরুষ-নারীর বৈষম্য দূর করতে গিয়ে এই বিল বৈষম্য বাড়িয়ে দিতে চেয়েছে যা সমর্থনযোগ্য নয়। তাতক্ষণিক তালাক দেওয়া পুরুষরা জেলবাস করলে তালাকপ্রাপ্তা মেয়েরা কতখানি লাভবান হবে বা স্বস্তির জীবন পাবে -সেটি একটি প্রশ্নসূচক সমস্যা তৈরি করছে যা সমাধানের বদলে সমস্যাকেই আরও জটিল করে তুলবে- সে বিষয়ে সুনিশ্চিত হওয়া যায়।

    আমাদের কথা, তালাক নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ হোক, সে রাজনীতি অবশ্যই সংকীর্ণ গোষ্ঠী স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৮ মার্চ ২০২০ | ১৪৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r2h | 162.158.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ১৩:২৯92089
  • সাবিয়া খাতুনের লেখাটা পড়ে এখানে ফিরে এলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন