এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - প্রথম পর্ব

    কুশান গুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৩০৭ বার পঠিত

  • আজকের ল্যাপটপ/ ডটপেনের কবিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

    কবিদের হাতে কি থাকে এক অলৌকিক নিউটনীয় প্রিজম, যেখানে অসামান্য দক্ষতায় সাধারণ আলো ভেঙে জাত হয় সাতরঙা রামধনু? কি এক আশ্চর্য প্রক্রিয়ায় যে তাদের গুপ্ত খুপরিতে একটি ঐন্ন্দ্রজালিক ক্যালাইডোস্কোপ থাকে কে জানে। যদি তা না-ই হয়, এত বিচিত্র সব বর্ণময় ও ভিন্ন ভিন্ন শিশিরে ভেজা উর্ণনাভর দক্ষতায় বোনা মায়াবী প্যাটার্ন কিভাবে তৈরি হতে থাকে? জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা খুব একটা কিছুই বলেন না। তাঁরা যেন ইন্দ্রজালের ম্যানড্রেক। প্রাচীন অরণ্যের প্রবাদের মত একটি কথা তো আছেই: 'জাদুগররা বলে না।' অথচ সামান্য কিছু শব্দ, শস্তার ডটপেন বা শাদা কাগজ ছাড়া কি এমন বা পুঁজিই এইসব রাজ বা রাণী মিস্ত্রির? কালিদাসের থেকে রবীন্দ্রনাথ যদি বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন তাহলে আজকের কবিদের হাতে বড়জোর মোবাইল বা ল্যাপটপ জুটেছে। তাতে কি বা এসে গেল? সমকাল সবাইকে মোটামুটি একই রকম সুযোগ কি দেয় না? এখানে আমি সামাজিক/ অর্থনৈতিক বিভাজন বা বাণিজ্যিক/প্রান্তিক বিভাজন ব্যাপারটাকে মাথায় রেখেও বলছি, যদি সম্পন্ন কবির হাতে ল্যাপটপ জোটে, আর প্রান্তিক কোনো কবির হাতে থাকে বড়জোর বঙ্গলিপি টাইপের মলিন খাতা ও ডটপেন, তাহলে কি উৎকৃষ্ট কবিতায় উক্ত ল্যাপটপ ভূমিকা রাখতে পারে? তাহলে তো ল্যাপটপ হাতে কম সময়ে বেশি পরিমাণ কবিতা লেখাও যেত, গুণগত উৎকর্ষতাও মার্কসীয় নিয়মে বেড়ে যেত। যদি ধরা যায় বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত কবির ল্যাপটপ থাকে, তাহলে তো সাময়িক(কালিক অর্থে পড়ুন) অ্যাডভান্টেজ সবাই একইভাবে পেলেন, এক্ষেত্রেও বা কবিতার গুণে, মানে ফারাক থাকছে কেন?

    অন্যদিকে এক অভিযোগ এই: আধুনিক কবিতা এতদূর দুর্বোধ্য হয়েছে যে তা প্রায় সিন্ধুর খরোষ্ঠী লিপির নিহিত অৰ্থ বা ব্যাঞ্জনা বের করার মত দুঃসাধ্য ও অসম্ভব ব্যাপার। এই অভিযোগ কতদিনের বলা মুশকিল, তবে জীবনানন্দ থেকেই সম্ভবত এই নিয়ে বেশি শোরগোল শুরু হয়। পরে এই একই অভিযোগে আক্রান্ত হন বারবার যে কবি তাঁর নাম শক্তি চট্টোপাধ্যায়। এমনকি বুদ্ধদেব বসুর মত আধুনিক কবি, যাঁকে কবিতাবিষয়ক অন্যতম উদারমনা শ্রেষ্ঠ বোদ্ধা ধরা হয়, পঞ্চাশ-ষাটের দশকের দিকে এসে এই জাতীয় কথা বলতে শুরু করেন, 'এদের কবিতা এত দুর্বোধ্য যে কিছুই বোঝা যায় না'। শুনেছি উপর্যুপরি দুর্বোধ্যতার অভিযোগে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাচারী শক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনে কোথাও বলেছিলেন যে প্রকৃত ও শিক্ষিত পাঠক সবাই না।কবিতার গূঢ় অর্থ ও কূটাভাস নির্ণয়ে এক্ষেত্রে পাঠককে প্রস্তুত হতে হয়, এগিয়ে আসতে হয়। যদি ভাবেন পাঠকের প্রতি এটি এক নিছক কাব্যিক ও শাক্ত প্রত্যাঘাত তাহলে অধিক তর্কে না গিয়ে হালকা একটি কথা বলি, রাগসঙ্গীতের প্রকৃত ও সমঝদার শ্রোতা কারা? ডোভার লেনে বসলে আমজাদ আলির সরোদ ধরার ভঙ্গি নাহয় ধরে ফেললেন, কিন্তু রাগ উপভোগ করতে পারবেন তো? নাকি অপরাধবোধে ঘুম পাবে? যদি একজন ফুটবল খেলার দর্শক খেলার সাধারণ নিয়মকানুন না জানেন তাহলে কি তার কাছে খেলাটি সমান উপভোগ্য হবে? প্রশ্নটি তোলাই রইল।

    কবিতা কিন্তু নিবন্ধ নয়

    কি কবিতা আর কি কবিতা নয় এ-ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্তে আসা খুব সোজা না।নিবন্ধ রচনায় সাদামাটা লজিক বা এক ধরণের বিষয়মুখী ও নৈর্ব্যক্তিক পান্ডিত্য জরুরী।কিন্তু কবিতা ও নিবন্ধের মধ্যে মৌলিক ফারাক রয়েছে। কোনো জটিল বিষয়ে একটি নিবন্ধের কোনো হাইপোথিসিস নিয়ে পাঠক ও সমালোচক মহলে এক ধরণের বৌদ্ধিক তর্ক চলতে থাকে, তা হলো এই যে নিবন্ধকার কি সঠিক তথ্যসহ মৌলিক কথা বললেন? রেফারেন্স কি উপযুক্ত? তাঁর রচনায় কি কোনো বিশেষ ধরণের তত্ত্ব রয়েছে? উপসংহার কি যথাযথ? কিন্তূ, এইসব নিয়ে বিবাদ তথা ফাটাফাটি ও লাঠালাঠির দহরম মহরম শুরু হয়ে যায়। এমনকি এক এক সময়ে সাম্প্রদায়িক ঐক্য রাখাই দায় হয়ে ওঠে। আবহমান কাল ধরেই তা হয়ে আসছে।রচয়িতার মূল প্রকল্পের পক্ষে বা বিপক্ষে, মনন দিয়ে, যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্লেষণ দিয়ে অনেকেই দাঁড়ান। কি সঠিক বা কি বেঠিক এই নিয়ে আবার অনেক সময়েই দ্বিধাগ্রস্ততা কাজ করে কারুর কারুর।কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরেও বহু ম্যাচই অমীমাংসিত রয়ে যায়, কেননা টাইব্রেকারের ও নক আউটের নির্ধারিত নিয়ম সব খেলায় চালু নয়। এবং, যেহেতু, 'মেধার ভিতর শ্রান্তি বাড়ে অহর্নিশ', শক্তির উক্ত কবিতা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আমরা একসময় তর্ক স্থগিত রেখে ঘুমিয়ে পড়ি । ঘুম বললে স্বপ্ন তথা পাভলভ, ফ্রয়েড এসব হয়ত প্রাসঙ্গিক। কিন্তু, জীবনানন্দ কি বলেন নি: 'ভালো করে দরকার আছে ঘুমোবার'? রবীন্দ্রনাথ পড়ি বা না পড়ি, 'দিনের শেষে ঘুমের দেশে' আমরা চলে যাই, এদিকে রবি ঠাকুর ঘাটে বসে চিন্তিত হয়ে পড়েন, 'ঘরেও নহে পারেও নহে যে জন আছে মাঝখানে' তার জন্য। তথাপি, ঘুম ভেঙেই আবার তর্ক চলতে থাকে। অবিরত টক্কর চলে যুক্তি ও আবেগের মধ্যেও। নিরন্তর এই ঝগড়ার মধ্যে অনেকক্ষেত্রেই দুটি মতের কূট তর্ক থেকে তৃতীয় এক পরিসর তৈরী হয়, যেখানে নতুন ধারণা ও নতুনতর তর্ক শুরু হয়। বহু মামলারই চূড়ান্ত ফয়সালা হয় না, কেননা এক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্ট নামক কিছু এক্সপেন্সিভ সুবিধা হতে আমরা বঞ্চিত। তাছাড়া এইসব ধুলোখেলায় উকিল, মোক্তার ও সোৎসাহী দর্শক থাকলেও শেষ বিচারকের হুইসেল মারার হাফপ্যান্ট পরিহিত কোনো রেফারি নেই।এদিকে সময়ের স্বভাব ও তীর যেহেতু এনট্রপির নিয়ম মেনে একমুখী, সেহেতু, পৃথিবী পাক খেয়ে আহ্নিক সেরে নেয়, পশ্চিমে আবার ঢলেন সূর্য, ট্র্যাজিকতার নগণ্য সুতপুত্রের মুখে পড়ে শেষ বিকেলের আলো। কারুর যদি মনে পড়ে বি আর চোপড়া, কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য পড়েন।

    এসবের মধ্যে এক স্পাইরাল ডিএনএ র মতো সঞ্চারপথ বেয়ে পুরনো ধ্যান ও ধারনায় ভাঙন তৈরি হয়, গড়ার কাজও চলতে থাকে পাশাপাশি। নদী যখন পাড় ভেঙে পুরনো বসতি ভেঙে দেয়, তখনই যেমন জেগে ওঠে নতুন চরাচর।

    কবিতা লোকে এমনিই পড়ে, জল যেমন তেষ্টা পেলে এমনিই খায়। কবিতা নিয়ে নিবন্ধের মত বাদী বিবাদী হয়ে মুগুরভাজা কূট তর্ক ততোটা জরুরী নয়, তবু কবিতা বৌদ্ধিক চর্চার চিরকালই মুখাপেক্ষী।

    ~~~~~~

    কবিতায় ফিরি, কৃত্তিবাস থেকে আজ, কবির আত্মপরিচয় ও স্থানাঙ্ক

    ভাঙা, গড়া, নদী ও চর ভাঙার প্রসঙ্গ উঠেই যখন গেল তখন নিবন্ধের কথা স্থগিত রেখে কবিতাতেই ফেরা যাক। কুমুদরঞ্জন ও অজয় নদী প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠুক এখন। মনে পড়ুক কবির বাসস্থান: ' বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদীর বাঁকে'। কুমুদরঞ্জন ভিটেমাটি ছাড়েন নি অথচ নদী একটু একটু করে খেয়ে ফেলছে ঘরদোর আর সমস্ত অস্তিত্ব।এই নিয়ে বীতশোক ভট্টাচার্যের একটি অপূর্ব কবিতাও আছে। কুমুদরঞ্জনের প্রসঙ্গ আনা আকস্মিক ও অনুচিত মনে হলে বলি, কবি ও কবিতার স্থানাঙ্ক নিয়ে সামান্য দু' একটি কথা বলাই এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য মাত্র। সামান্য হলে প্রামাণ্য যে হবেই তার কোনো মানে নেই। তবুও কবির স্থানাঙ্ক যদি খুঁজতেই যাই, মধ্যযুগের কৃত্তিবাস ওঝা খুলে দেখুন, কবিরা আত্মপরিচয় দু'একটি কথায় বরাবরই ব'লে এসেছেন। কৃত্তিবাস, রামায়ণে লিখছেন:

    'আদিত্য বার শ্রী পঞ্চমী পুণ্য মাঘমাস
    তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস।'

    যদি বলেন সেকালে এরূপ আত্মপরিচয়, এমনকি পিতামাতার নাম দেওয়ার রীতিনীতি ছিল ভীষণ দরকারি, এবং, এই ধরণের ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে, কিন্তু এখন এর কোনো দরকার বা প্রাসঙ্গিকতাই নেই, তাহলে নিচের কবিতার অংশটুকু পড়তে অনুরোধ করি:

    "আর সেই চুয়ান্নর নভেম্বরে কোনো
    হাসপাতালের বড় বারান্দায় একটি নতুন বাবা-মার
    আশঙ্কা, উদ্বেগ, হর্ষ আজ এতদিন পর সে হাসপাতাল থেকে সরে
    এই এতদূর প্রায় পাড়াগাঁয়ে এসে
    একটি জানলার পাশে সারারাত বাঁশপাতা দোলাল..."

    এই কবিতার কবির নাম জয় গোস্বামী। কবিতাসংগ্রহের তিপান্ন পৃষ্ঠায় আবিষ্কৃত এই কবিতা খুঁজে মিলিয়ে দেখলাম তাঁর জন্মদিন ও সাল: ১০ ই নভেম্বর, ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ। মনে হয় তিনি কবিতা লেখার সময় নিজের জন্মের অনুষঙ্গ, সাল, মাস লিখতে কিছু সচেতন ছিলেন এবং তিনি যে মফস্বলে জাত এ-কথা এ-কবিতা পড়ে আন্দাজ করা যাচ্ছে। এই কবিতার গোঁসাইসুলভ মারপ্যাঁচ দেখে কারুর মনেও পড়ে যেতে পারে যে এমনকি রানাঘাট জাতীয় মফস্বলকে 'প্রায় পাড়া গাঁ' ভাবার এক ধরণের নাগরিক প্রবণতা কলকাতায় চিরকালই ছিল, এখন খুব কমেছে বলে মনে হয় না।

    মধ্যযুগীয় বাঙালি কবি কৃত্তিবাস এবং সত্তরের আধুনিক কবি জয় দুজনেই, আত্মপরিচয়, কবিতাতেই ব্যক্ত করলেন নির্দ্বিধায়। কিন্তু একজন স্বীয় নাম ও পদবী নিঃসংকোচে লিখলেন, আর একজন শুধু হালকা হিন্ট দিলেন। এই ধরণের হালকা গোপনীয়তা যেন আধুনিকতার এক পূর্বশর্ত। কিন্তু, গোপনীয়তা কি শুধুই নাগরিক প্রাইভেসি? গ্রামীণ ও প্রাচীন কালের মুখরিত লোকজীবনে কি সবই 'খুলে আম' জাতীয় ব্যাপার চলত? তাহলে রাধাকে কৃষ্ণের কাছে গোপন অভিসারে যেতে হত কেন? সেই সব ফাঁস করে দিতেন কি কেবল জয়দেব বা বিদ্যাপতি?বৈষ্ণব পদাবলিতে কি কোনো আড়ালই নেই?জানতে হলে পদাবলী পড়া আবশ্যক।
    এসব প্রশ্ন ফেলে ফিরে আসি কৃত্তিবাস ও জয় প্রসঙ্গে।একজনের কবিতায় বাংলার মাঘ মাস, অপরজনের কবিতায় খ্রিষ্টীয় নভেম্বর যেন এক ঐতিহাসিক ও সামাজিক নিয়মকেই মান্যতা দেয়। কিভাবে পাল্টে গেল বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রাসঙ্গিকতা? তবু কৃত্তিবাসের ও জয়ের কবিতার স্বভাব, কালিক ভাবে মাত্রাতিরিক্ত ভিন্ন হলেও কেন যেন মনে হয় কৃত্তিবাস এসে সহসা হাত ধরেন জয়ের।কৃত্তিবাসের নামধাম, বংশপরিচয় বলার স্টাইলে আবার আক্রান্ত আশি দশকের কবি জয়দেব বসু, কিন্তু তাঁর অন্য একটি কবিতা এখানে তুলে দিচ্ছি, দেখুনঃ

    “নাম জয়দেব, বেসুরো গান ধরেন/ কি ভালো যে তোমায় বাসি জানেন শুধু লরেন্স”

    এই প্রকাশভঙ্গী প্রেমের এবং অবধারিত লেডি চ্যাটারলিজ লাভ মনে পড়ে যায়। মিল কত আকস্মিক হতে পারে, কতটা সুমনীয় ‘ভীষণ অসম্ভব’ হতে পারে তাও যেন ধরা পড়ে এই দুই লাইনে।কিন্তু, এমনকি প্রেমের বিষয়ে যেন কবির, নিজের নাম লিখে দিতে কোনো গোপনতা নেই। বরং আভিজাত্যকে শ্রম দিয়ে জিতে নেওয়ার এমন তুখোড় রোমান্টিকতা, এই নির্লজ্জতা, কবিকেই মানায়।
    আগেই একথা বলা হয়েছে, আধুনিক কবিতা জটিলতার কারণে অত্যন্ত দুর্বোধ্য ও পাঠকের অগম্য হয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগের কথা। বুদ্ধদেব বসু বোদলেয়ার অনুবাদ করে ঠিক কাজ করেছিলেন, এরূপ অনেক কবির অভিমত।কিন্তু তারাই বেশি পরিমাণ জটিলতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। আবু সাইদ আয়ুব এই প্রবণতার বিরুদ্ধে কলম ধরেন। 'পান্থজনের সখা' ও রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক অন্যান্য গ্রন্থ লিখে তিনি 'বুদ্ধদেব বাংলা কবিতার ক্ষতি করেছেন'-এই জাতীয় অভিযোগ আনেন। এক্ষেত্রেও মার মার কাট কাট লেগে যায়। পাশাপাশি উদাসীন আধুনিক কবি সব কিছু এত বেশি গোপন করছেন, পাঠক কিছু ধরতেই পারছে না, এ-কথা যদি সাধারণভাবে মেনেও নিই, তাহলে একটি কবিতার একটি পংক্তিই উল্লেখ করছি মাত্র:

    'আমি মৃদুল দাশগুপ্ত, আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি'

    উক্ত পংক্তিটির রচয়িতা স্বয়ং মৃদুল দাশগুপ্ত, কিন্তু, নিজের কবিতাতে নাম প্রকাশে দ্বিধার জড়তা তো নেইই, বরং যেন এক সচেতন ও দৃপ্ত ঘোষণা আছে। এই কবিতা থেকে কবির পক্ষপাত কোনদিকে তা যেমন বোঝা যায় তেমনই অস্থির সমকাল উঠে আসে। প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে লেবানন ও প্যালেস্টাইন। তাছাড়া এও যেন মনে হয় রোম পুড়ে গেলে নিরোকে অভিযুক্ত যদি করা হয়, তাহলে নিরোর জায়গায় উদ্ধত মৃদুলের কিছু গৌরব কি প্রাপ্য নয়? এও প্রমাণিত হয়, কবিমাত্রেই উদাসীন নিরো, এই ধারনা ভুল। তাছাড়া এই একটি ছোট পংক্তিতে যেমন উঠে আসে রক্তাক্ত লেবানন বা প্যালেস্টাইন, এমনকি আজকের আক্রান্ত সিরিয়ার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হতে পারে। মৃদুলের এই পংক্তিটিতে 'মৃদুল দাশগুপ্ত' অংশটি বাদ দেন সন্দীপন। রচিত হয় এক উপন্যাস: 'আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি'।অর্থাৎ, কবিতা সমকালীন ঔপন্যাসিককে স্পর্শ ও প্রভাবিত করতে সক্ষম।

    বিনয় মজুমদারের একটি কবিতা পড়ে পাঠক ধাঁধায় পড়ে যেতে পারেন।এই কবিতার অংশবিশেষ চন্দ্রিল ভট্টাচার্য তাঁর বানানো ছবিতে ব্যবহার করেছেন। কবিতাটি এরকম:

    "ক্যালকুলাসের এক সত্য আমি লিপিবদ্ধ করি।
    যে কোনো ফাংকশানের এনেথ ডেরিভেটিভে এন
    সমান বিয়োগ এক বসিয়ে দিলেই
    সেই ফাংকশানটির ফার্স্ট ইন্টিগ্রেশনের ফল পাওয়া যায়
    এনেথ ডেরিভেটিভে এন
    সমান বিয়োগ দুই বসিয়ে দিলেই
    সেই ফাংকশানটির সেকেণ্ড ইন্টিগ্রেশন হয়-
    এনেথ ডেরিভেটিভ এন
    সমান বিয়োগ তিন বসিয়ে দিলেই
    সেই ফাংকশানটির থার্ড ইন্টিগ্রেশনের ফল পাওয়া যায়
    এই ভাবে সহজেই যে কোনো অর্থাৎ
    দশম বা শততম অথবা সহস্রতম ইন্টিগ্রেশনের
    ফল অতি সহজেই পাই।
    এই কবিতায় লেখা পদ্ধতির আবিষ্কর্তা আমি
    বিনয় মজুমদার। আমার পত্নীর নাম রাধা
    আর
    আমার পুত্রের নাম কেলো।"

    এটি কবিতা কি কবিতা নয় সে বিবেচনা পাঠক করবেন। কিন্তু, বিনয়ের গণিতে পান্ডিত্য কিছু তো ছিলই, এমনকি ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গণিতের ওপর তাঁর কিছু সিরিয়াস কাজ রয়েছে, সেই নিয়েও মূল্যায়ন করেছেন আই এস আইয়ের এক প্রাক্তন ছাত্র। সম্ভবত কবিতীর্থ পত্রিকায় বিনয়ের গণিতচর্চা নিয়ে তাঁর লিখিত এক নিবন্ধ আছে।গণিত, কবিতা ও বিনয় মজুমদার নিয়ে রণজিৎ দাশের একটি কবিতাও রয়েছে, কিন্তু তা খুঁজে পাচ্ছি না। রণজিৎ দাশের উক্ত কবিতা বিনয়ের কবিতামাধ্যমে এই গণিত চর্চাকে সমর্থন জানায়। এই কবিতায় রণজিৎ-যুক্তি হলো এরকম: কবিতা ও গণিত যেহেতু বিমূর্ত এবং সূক্ষ মাধ্যম, তাই তার মধ্যে যোগাযোগ থাকতেই পারে এবং সফল সৃষ্টি এক্ষেত্রেও সম্ভব। তাহলে, কবিতায় কবিরাও গাণিতিক যুক্তি খোঁজেন, একথাও বলা যেতে পারে।
    যাই হোক এই কবিতাতেও সৃষ্টিশীল বিনয় নিজের নাম ও পদবী ঘোষণা করেছেন।অর্থাৎ বাঙালি যেন তার স্বভাব অব্যাহত রেখেছে। কোথাও কোথাও তা জোরালো কোথাও বা আত্মগোপন করে আছেন তাঁরা। কিন্তু পত্নী রাধা ও পুত্রের নাম কেলো এক্ষেত্রে হয়তো বিশুদ্ধ ঠাট্টাই। এক্ষেত্রে যেন বিনয় রবীন্দ্রপংক্তি মনে করিয়ে দিলেন: 'ঠাট্টা করে ওড়াই সখী নিজের কথাটাই'। যতদূর জানি, বিনয় অবিবাহিতই ছিলেন। তবু, সব কি ওড়ানো যায়? রাধা ও কেলো কি নির্দিষ্ট কোনো নাম? ভাবনায় পড়ে যান পাঠক।
    লিখতে লিখতেই সুনীলের একটি কবিতা মনে পড়ে গেল, কিন্তু আর কোনো লাইন মনে পড়ছে না। অগত্যা এই একটি লাইনই লিখি:
    'আত্মপ্রকাশ উপন্যাসটা তোকে কে লিখতে বলেছিল, সুনীল?'

    এই কবিতায় দেখা যাচ্ছে 'আত্মপ্রকাশ' উপন্যাসের রেফারেন্স। এবং, সুনীল নিজের নাম লুকোননি, ব্যবহার করেছেন। উল্লিখিত উপন্যাস লেখার মাধ্যমে কবি সুনীলের উপন্যাসে হাতেখড়ি হয়। এরপর প্রচুর উপন্যাস সুনীল লিখতে থাকেন, এমনকি নীললোহিত নামেও তাঁর উপন্যাস প্রতি পুজো সংখ্যায় বেরোতে থাকে। বাড়তে থাকে ফ্যানের সংখ্যা। পাশাপাশি সুনীল কবিতা লিখতে থাকলেও, এত উপন্যাস লিখলে কি কবিতার মান কি এক থাকতে পারে? এইসব প্রশ্ন আসতেই পারে। কেউ পাল্টা লজিক দিতেই পারেন যে রবীন্দ্রনাথ তো অসংখ্য উপন্যাস লিখেছেন, তাহলে সুনীলই বা কি দোষ করলেন? কবি জীবনানন্দের মৃত্যুর অনেক পরে তাঁর লিখিত উপন্যাসগুলি প্রকাশিত হতে থাকে, এতেই বা কি প্রমাণ হয়, জীবনানন্দের কবিতার মান নেমে গেছে? কিন্তু দেখুন, 'আমাদের জন্য' নামক গানে কবীর সুমন যেন এক অভিযোগ আনছেন: 'সুনীল গাঙ্গুলির দিস্তে দিস্তে লেখা/ কত কবি মরে গেল চুপিচুপি একা একা'।অসংখ্য পুজো সংখ্যায় লেখা অজস্র উপন্যাস নিয়ে মণীন্দ্র গুপ্ত একটি নিবন্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে এতে সাহিত্যের ক্ষতি হয়, এমনকি পাঠকেরও তাতে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া সুমনের এই গানের কথাও মনে চলে এলো:

    'লেখকেরা লেখে আর প্রকাশক ছাপে
    সাহিত্য মরে পুজো সংখ্যার চাপে।'

    কিন্তু, শিকড় থেকে বিচ্যুত সুনীলের এই পংক্তি কি আক্ষেপ না জবাবদিহি তা বলা মুশকিল। মনে রাখতে হবে দেশভাগের পর রিফিউজি কলোনিতে বেড়ে ওঠা সুনীলের আইওয়া স্টেট যাওয়ার ইতিহাস আসলে সাফল্যের ছবি দেখালেও ভেতরে ভেতরে গোপন রক্তক্ষরণ এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।বাংলাদেশ বিষয়ে সুনীল ছিলেন খুব স্পর্শকাতর। শ্রেণী ও শিকড় থেকে সরে এলে যে তুমুল ক্রাইসিস হয় সেনসিটিভ কবির, সে বিষয়ে মহাশ্বেতা দেবীর লেখা 'কবি বন্দ্যঘাটি ঘাঞির জীবন ও মৃত্যু' প্রণিধানযোগ্য। এই উপন্যাস স্থানে কালে পাত্রে আলাদা হলেও এটি এক ধরনের কবিচরিত। কিন্তু, তা কোথাও সুনীলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও হতে পারে।

    ~~~~~~

    কবিদের আত্মগোপন
    'সূর্য পোড়া ছাই' জয়ের আশ্চর্য এক ব্যতিক্রমী গ্রন্থ। শীর্ণ এই বই পড়ে পাঠক ভাবনায় পড়ে যেতে পারেন। এই বইয়ে জয় গোস্বামীর এক কবিতায় অদ্ভুত এক কাব্যময় পংক্তি পাই, তা এরকম:
    "আমার মায়ের নাম বাঁকাশশী, আমার শ্যামের নাম ছায়া"
    এখানে যেন জয় নিজেকে ইন্ট্রোডিউস করতে গিয়ে কিছুটা গোপন ও রহস্যময় হলেন। নিজের মায়ের নাম লিখতে গিয়ে গীতা দত্তের নিশিরাতের 'বাঁকা চাঁদ' কিংবা কবি দীনেশ দাসের বাঁকানো চাঁদের সাদা ফালিটি জয়ের লেখায় বাঁকাশশী, জ্যোৎস্নার মত রহস্যময় এই লাইন। কিন্তু, 'আমার শ্যামের নাম ছায়া'- এখানে যেন মায়ের পাশাপাশি প্রেমিক বা প্রেমিকার নাম লিখতে উদ্যত গোঁসাইবাগানের কবি। শ্যাম প্রসঙ্গে মনে পড়তে পারে রাধা, ঝুলন ও মিঠে কানাকানি।
    যদি অবগুণ্ঠিত গোপনীয়তা ও নির্দ্বিধায় প্রকাশের এক আংশিক মিশেল কবিতা হয় সেক্ষেত্রে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের নিচের কবিতাটি প্ৰণিধানযোগ্য:

    "এদেশে নবীন নামে এক জেলে ছিল
    এদেশে মহুয়া খুব ভাল পাওয়া যায়
    এদেশে শুনেছে লোকে ওর কোলাহল
    ওর মত ভিক্ষাবৃত্তি কেহই করেনি
    একদিন চেয়েছিল হারমোনিয়াম"

    এই কবিতায় নবীন কে? দ্বিতীয় লাইনে হঠাৎ মহুয়ার প্রসঙ্গ কি, তৃতীয় লাইনে সেই নবীন কেনই বা কোলাহল করে? কেন বা সে ভিক্ষাবৃত্তি করে, হারমোনিয়াম প্রীতি কি তার সঙ্গীতস্পৃহা? অথবা হারমোনিয়াম কি ভিক্ষাবৃত্তির সহায়ক? যদি তা নাই হয় তাহলে আমরা লোকাল ট্রেনে হঠাৎ হারমোনিয়াম হাতে অদ্ভুত সব প্রান্তিক মানুষ দেখতে পাই কেন? কেন রণজিৎ দাশ লেখেন এই পংক্তি: 'যে কোনো গরীব দেশে ভিখারীরা সুগায়ক হয়'?
    তবে সন্দীপনের কোনো এক বইতে এই কবিতার অনুষঙ্গ ধরে তিনি লিখেছেন যে নবীন আর শক্তি এক্ষেত্রে সমার্থক, কেননা শক্তি অসম্ভব মহুয়া ভালবাসতেন। তাছাড়া, লক্ষ্য করুন, কবিতাটি যেন শক্তির বাউলমেজাজ ধরে ফেলে।
    কি দাঁড়াল তবে? অলজ্জ প্রকাশময়তা বা গোপনতার গভীর আড়াল, চকিত ঘোষণা, গণিতের আবিষ্কারের দাবি, নিজের উপন্যাসের নাম, সব কিছুর নিজস্ব কাব্যময়তা থাকতে পারে। এমনকি তা কবির স্থানাঙ্ক ও মেজাজ মর্জি ধরতে কখনো কখনো সক্ষম হতে পারে।

    ~~~~~~

    কি জরুরী, কোন মানদণ্ড?
    শুরুতেই নিবন্ধ প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছি।নিবন্ধের প্রসঙ্গে কিছু মানদন্ড বা তুলাদন্ড যদিও লাগে, তথাপি, কি কবিতা আর কি কবিতা নয় তা নিয়ে কিন্তু বিচার বিশ্লেষণ দিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসা দুরূহ ও কিছুটা অনুচিত, কেননা সেক্ষেত্রে ইঁট দিয়ে ভেলসিটি কষার বাতুলতায় ফুটোস্কোপ নামক অলীক যন্ত্র তৈরি করতে হয়। সুকুমার রায় হলে হয়ত বা পারতেন।কিন্তু এতে মগজে কারফিউ লেগে যাওয়ার আশু সম্ভাবনা।সবকিছু পাঠকের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
    পাঠকের রুচিতে ও পাঠে বিস্তর ফারাক থাকে। যা আমার প্রিয়, তা অন্যের ততোটা প্রিয় নাই হতে পারে, এমনকি তা সম্পূর্ণ অপছন্দের হলেও কার কী বা যায় আসে?এতদসত্ত্বেও অনেক পাঠকই অনেক সময়ে শুধুমাত্র কবিতাটি পড়েই তার সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে একমত হন, 'হায় হায়' করে ওঠেন, বলেন: 'এই যে একটি কবিতা পড়লাম, মন ভালো হয়ে গেল, আহা মন ভালো হয়ে গেল'। এক্ষেত্রে কি পাঠকের অতন্দ্র চোখ ও সতর্ক কান ছাড়া অতিরিক্ত কোনো তুলাযন্ত্র লাগে?
    এখানে কেউ যদি এর যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা খুঁজতে চান, খুঁজে পেতে পারেন, নাও পেতে পারেন। তা ছাড়া যুক্তি আর বোধ এই দুই শব্দের মধ্যে ফারাক আছে। বুদ্ধিমান হলেই যে একজন বোধশক্তির অধিকারী, তা নাও হতে পারে।কবিতা পড়তে গেলে প্রখর যুক্তিবাদী বা অকাট্য নাস্তিক হওয়ার কোনো প্রয়োজন বা যোগ্যতা লাগে না, সাধারণ মানবিক বোধটুকুই যথেষ্ট। সকলেই অবহিত আছেন যে জীবনানন্দ 'সকলের মাঝে বসে, নিজের মুদ্রাদোষের' প্রসঙ্গে হিসেবে তাঁর কবিতায় 'বোধ' শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। কি কারণে কবিতা ভাল লাগে তা অনেক সময় বোঝা যায় না। কিন্তু সার্থক কবিতা পড়ে অনেকেই অনায়াসে প্রেরণা পেতে পারেন।তবে এক্ষেত্রে কিছুটা হার্দিক সংবেদনশীলতা ও নিবিড় পাঠাভ্যাস জরুরী বলেই মনে হয়।


    ক্রমশঃ
    দ্বিতীয় পর্ব
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৩০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অনিরুদ্ধ সরকার | ***:*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৯85623
  • ভাই ব্যাপক সময়োপযোগী লেখা হয়েছে। সত্যি বলতে কি আমি কবিতা পড়া ছেড়ে দিয়েছি কারণ আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে কিছুই ঢোকনা।
    তোমার লেখার qউঅলিত্য তে মুগ্ধ হয়ে অনুরোধ করব তুমি কবিতা পোস্ত কর এখানে ।
  • Tapas Dey | ***:*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৪০85624
  • Osadharon lekha, asakori ei lekhata prochar share hobe...eto sundor bisleson aar sundor bhabe bornonar sathe sahaj bhabe satti kothata bola pathokder kachhe kub grohon joggota pabe amar mone hoi .

    Chalie jao...
  • ফরিদা | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৫85631
  • বাহ।

    কবিতা পঠনের সময় সে প্রায় পুরোটাই পাঠকের। "প্রায়" বললাম, কারণ পাঠক যতটুকু পেল সে কবিতাটি থেকে তারপরেও সে কবিতা ফুরোচ্ছে না, তার সৃষ্টি-মুকুল তখনও জীয়ন্ত। পরবর্তী পাঠে সে হয়ত অন্য পাতাটি ফোটাল, বা অন্য নতুন কুঁড়ি।

    সে কবিতা রোপন করে কবি তখন অন্যত্র, তিনি আর ফিরছেন না, ফিরলেও হয়ত রসিকের ছদ্মবেশে ফিরবেন, বা পাঠকের জামায়।

    কবির স্থানাঙ্ক নির্ণয় আগে এইভাবে দেখা হয় নি। এইভাবে দেখতে শেখানর জন্য কুশান কে ধন্যবাদ জানাই।

    "আমার ছায়ার নাম -শ্যাম" - না বোধ হয় পড়িনি, পড়লেও এভাবে আগে কেঁপে উঠিনি তা নিশ্চিত। পরে এ লাইন মনে পড়লে আবারও শিউরে উঠব হয়ত নতুন কিছু পেয়ে। ভাবি।

    আরও মনে হ'ল, জয় ও কৃত্তিবাস দু'জনা কিন্তু ভৌগোলিক ভাবে প্রতিবেশী। আগে মনে হয় নি কখনও।

    পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকব।
  • সুকি | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৪85632
  • ভালো লাগল লেখা.
  • শর্মিষ্ঠা ঘোষ | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:২৪85625
  • লেখাটি খুবই তথ্য সমৃদ্ধ ,লেখক অনেক পরিশ্রম করে এমন সুন্দর ও বোধগম্য করে পরিবেশন করেছেন ,পড়ে খুব ভালো লাগলো
  • Shibabrota Konar | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:০৮85626
  • খুব ভাল। কবিতা পড়তে উৎসাহিত হচছি
  • কুশান | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:০৯85627
  • মতামত দেওয়ার জন্য সবার জন্য ধন্যবাদ রইল। তবে, এই লেখা ঠিক আলোচনা বা বিশ্লেষণ নয়। আজকের কবিতার পক্ষে দাঁড়িয়ে কিছু কথা শুধু।

    পাশাপাশি, কবিতা থেকেই কবির স্থান, কাল, অবস্থান ও অভিপ্রায় ধরার চেষ্টা মাত্র।

    পরের পর্ব গুলিতে কিছু পাল্টা প্রশ্নও পাবেন।
  • শান্তনু | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:৫০85628
  • লেখাটি খুবই তথ্য ও ভালো মানের। এমন সুন্দর পড়ে খুব ভালো লাগলো তবে ঐই লেখা পুরোটা পরতে অনেক সময় লাগল
  • প্রতিভা | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:১১85629
  • এই লেখা পড়ার জন্য সময় দেওয়া যায়। অত্যন্ত সুবিন্যস্ত যুক্তিজাল ও মরমিয়া বিশ্লেষণ কিভাবে এক আধারে ধরা যায় তারও উজ্জ্বল উদাহরণ। কবিতা কখন কার কেন ভালো লাগবে এই অব্যাখ্যাত ধাঁধার চরিত্রচিত্রণটি বড়ই সুপাঠ্য হয়েছে, যদিও সংবেদনশীলতা কি করে বাড়াতে হবে সে রহস্য কোনো প্রাবন্ধিকের জানা নেই তা সবিনয়ে স্বীকার করা হয়েছে।
    কিছু ভুল চোখে পড়ল। যেমন খরোষ্ঠী লিপির সঙ্গে সিন্ধুলিপির দূরাগত আত্মীয়তাও নেই, তাহলে সিন্ধু খরোষ্ঠী লিপি এই কথাটির অর্থ কি !
  • কুশান | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৩১85630
  • লিপি সংক্রান্ত ভুলটি রয়ে গেছে, ধরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিভাদি কে ধন্যবাদ জানাই। খুব দ্রুত এই লেখা লিখেছিলাম, ঈপ্সিতার ডেডলাইন ছিল, ভুলটি থেকেই গেছে। দ্বিতীয় পাঠে তেমন কিছু বদলাইনি।
    আমি আসলে প্রাচীন লিপি ডিকোড করার মত দুরূহ যেন আজকের কবিতার নিহিত অর্থ বের করা, এমন একটা কথা বলতে চেয়েছি।
    সত্যিই খরোষ্ঠী ও সিন্ধুর লিপি স্থানে, কালে, উৎসে আলাদা, বিশেষজ্ঞরা তো বলেইছেন। তাছাড়া সিন্ধুর লিপি আজ অবধি কেউ ডিকোড করতে পারেনি।
    আমার এই লেখাতে আরো কিছু ভুল রয়ে গেছে হয়ত।

    ধন্যবাদ।
  • Moidul | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৩85634
  • Osombhob shoktishalee lekha...
  • ঝরা | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৮85633
  • এই লেখাটি পড়ে অনেকটা নতুন অংক করতে পারলে যেমন আনন্দ হয় তেমন মজা পেলাম। পরের পর্বের জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করব।
  • Tim | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:১৯85635
  • দ্বিতীয় পর্ব আসুক। লেখক খেটেখুটে লিখছেন, বিশেষতঃ কবিতা নিয়ে চর্চা ও ভাবনা সবসময়ই স্বাগত। কয়েকটি কথা বলার আছে, দ্বিতীয় পর্ব লেখা হলে তারপর লিখছি।
  • i | ***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:১৩85636
  • আমারই অপারগতা। এই লেখার উদ্দেশ্য, বিধেয়, অন্তর্নিহিত অর্থ কিছু থাকলে তাও- মানে কিচ্ছুই বুঝতে পারি নি । পর পর কিছু শব্দ, কিছু বাক্য কিছু কবিতার লাইন এই পড়ে গেলাম।
    আমারই অক্ষমতা হবে।
  • কুশান | ***:*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:২৭85637
  • ফরিদা, সুকি, সিকি,ঝরা, মইদুল, টিম ও i আমার কৃতজ্ঞতা জানবেন।
    আসলে লেখাটি একটু বড়। পরের পর্বগুলোতে কি কিছু প্রশ্ন থাকবে।
    I, অক্ষমতা আপনার না হয়ে আমারও হতে পারে।
    তবু যে আপনারা সময় দিয়ে পড়ছেন, এটাই অনেক।
  • Sangeeta | ***:*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৯85638
  • Khub boro lekha....but porlam dhorjo dhore....valo laglo je vabe tumi eto depth e giye explain korechho.....salute to your spirit of writing ......move on
  • মহুয়া | ***:*** | ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২২85639
  • আগেই পড়েছি। মতামত দিতে দেরী হল। আধুনিক কবিতার হয়ে খুব মরমী সওয়াল জবাব। ওটা "সিন্ধু বা খরোষ্ঠী" করে দাও।পরের কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম।
  • Sampad Roy | ***:*** | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫৩85640
  • অসাধারণ লেখা . তথ্যসম্মৃদ্ধ প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা.
    লেখক এর পড়াশোনা আর গভীরতার এক প্রামাণ্য
    দলিল. খুব দ্রুত ২ন্ড পার্ট তা পড়বো.

    এই লেখাটা পড়ার পরেও আমি মনে করি যেহেতু
    আমার মতো সাধারণ পাঠক এর পড়াশোনা কম , আধুনিক
    কবিতা পড়ার প্রস্তুতি কম তাই আমাদের সাথে আধুনিক
    কবিতার দূরত্ব বাড়ছে. এর দায় অবশ্য আমাদেরই.
    নিজেদের অজ্ঞানতায়, নিজেদের সময়-স্বল্পতায় , নিজেদের
    অপ্রস্তুতিতে তাই আমরা এখনো অন্তমিল খুঁজি.
  • কুশান | ***:*** | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৪৪85641
  • সঙ্গীতা, মহুয়া ও সম্পদ কে আমার ধন্যবাদ। দ্বিতীয় পর্ব পড়তে অনুরোধ রইল। এই লেখাটির দ্বিতীয় পর্বে অনেকের তরফে অনেকগুলি সঙ্গত প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং সেই নিয়ে অনেকে তথ্যনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করেছেন। তাঁদেরকে আলাদা করে ধন্যবাদ সেভাবে জানাতেই ভুলে গেছি।

    ভাল থাকবেন বন্ধুরা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন