রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
status updated 1 week ago
সংবাদপত্রে চিটফাঁদের গিঁট পড়ে মনটা বড়ো বিচলিত হয়ে আছে। সেন-সেশনের প্রাবল্যে লোভ শুধু বেড়েই চলে, কোথাও তার তৃপ্তি হয়না। কিন্তু নারীর বলয়ের উপর সে লোভের সমস্ত দায় চাপিয়ে দেওয়া পুরুষের শক্তিরই অবমাননা। পুরুষের মোক্ষের পথে বাধা সৃষ্টি করা নারীর প্রবৃত্তি। ‘বিদায় অভিশাপ’ লেখার সময় এই বিষয়টি মাথায় ছিল। আজকের দেবযানী তো তা নয়। সে চিত্রাঙ্গদা। প্রকৃত অর্থে পুরুষের সহয়িকা। সে তার আগুন দিয়ে যেমন দীপ্তকে পুড়িয়েছে, শুদ্ধ করেছে, তেমনি প্রেমিকের কর্মের দাবানলে নিজেকে দগ্ধ করেছে। এই তার জীবনের সার্থকতা।
লাইকঃ (১৫) ডিসলাইকঃ(১২১) (২৭৮ কমেন্ট)
চ্যাংড়া বালকঃ এটা কি বল্লেন দাদু? ফেমিনিস্টরা ক্যালাবে যে। বিবাদী নারী দিকে ট্যাগ করলাম।
বিবাদী নারীঃ বাহ! তা মেয়েদের সার্থকতা আপনি ঠিক করে দেবার কোন হনু? লজ্জা করে না, ফ্রাইডে নাইট বৈষম্যের বীজ ছড়াচ্ছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ এটা জানা কথা যে বৈষম্যে শক্তিকে জাগরূক করে, সাম্যে আনে তার নিষ্ক্রিয়তা। শাস্ত্রে বলে সত্ব, রজ, তমোর ভেদ মিটলে ঘটে প্রলয়। আজকাল পুরুষাশ্রয়ের বিরুদ্ধে যে একটা কোলাহল উঠেছে, সেটা আমার অসঙ্গত এবং অমঙ্গলজনক মনে হয়। পূর্বকালে মেয়েরা পুরুষের অধীনতাগ্রহণকে একটা ধর্ম মনে করত, তাতে এই হত যে, চরিত্রের উপরে অধীনতার কুফল ফলতে পারতনা।
বিবাদী নারীঃ ইস হি ফর রিয়াল? দুদিনের জন্য রিমুভ করার দাবি জানালাম। জন্মদিনে আবার জয়েন করতে দিলেই হবে।
সুশীল কাকুঃ ডিসাপয়েন্টিং। আপনার থেকে অন্যরকম কিছু আশা করেছিলাম। আনফলো করলাম
রগচটা আঁতেলঃ আসল মুখটা বেরিয়ে পড়েছে। এনাকে চিনে রাখুন দাদা দিদিরা। ‘আধুনিক’ বলে প্যাকেজ করে এতদিন পাবলিককে খাওয়ানো হয়েছে যাকে, তার লেখাগুলো পড়া আছে তো? হুমায়ুন আজাদ ঠিকই বলেছিলেন, “রুশো-রাসকিনের মতোই, পুরুষতন্ত্রের মহাপুরুষ; নারী, প্রেম, কবিতা, সমাজ সংসার, রাজনীতি, জীবন, এবং আর সমস্ত কিছু সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলেন তিনি পশ্চিমের রোমান্টিকদের ও ভিক্টোরীয়দের কাছে; এবং সে সবের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ভাববাদ বা ভেজাল। রবীন্দ্রনাথের চিন্তায় মৌলিকতা খুবই কম; তাঁর সমাজ ও রাজনীতিবিষয়ক চিন্তার সবটাই বাতিল হওয়ার যোগ্য”।
কুল সফোঃ আরে ধুর, জনতা খোরাক নাও। দাদু একেকটা লাইন ছেড়ে চলে যাবে আর তোমরা উইকেন্ড ধরে বাওয়াল করবে। দেখগে যাও, শিলাইদহ না কোথাও একটা বোট থেকে বিয়ার খেতে খেতে পোস্ট করছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ শিলাইদহ, না সুন্দরবন। অমলা হুইস্কি আনছে সত্বর। সাগরজলে সিনান করি দুই বিদেশিনী এইমাত্র অটোগ্রাফ নিয়ে গেল। নিরাবরণ বক্ষে, নিরাভরন দেহে ... না না নিরাভরণ ... মদ্য সেবন করলে এই দুটো গুলিয়ে যায় খালি।
মরাল মাসিমাঃ অ্যাডমিনকে এলার্ট করলাম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ দেহ নিয়ে এখনো শুচিবাই? আমার প্রবন্ধে কিন্তু …
নিদারুণ সিঃ দাদুর চুল জুঁইফুল, দাদুর গান প্রাণ ভুলালো (তবু) রচনাবলীর পাতার মাঝে পড়ে থাকে যুগের ধূলো।
বিবাদী নারীঃ আপনি কি খুব মডার্ন নাকি? একটা ঢঙ রয়েছে শুধু। গিয়ে দেখুন বাংলা সিনেমায় নারী পুরুষকে কোলে তুলে নিয়েছে। আর আপনি নিজের দেহ তুলে ধরার জন্য লোক ডাকেন।
রেডদাঃ আমার মনে হয়, কবিগুরু ঠিকমত বোঝাতে পারছেন না। আমি একটু চেষ্টা করি?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ দোহাই লাল দাদা, ওটি দয়া করে করবেন না, বিঃনাঃ দেবী, তোলাই কি বড় কথা হল? বায়োস্কোপে নারী একটু জোর দেখালে, আর এই বুড়োটা কি দেখল জানো? ছোট্টো বৌঠান কিশোর রবিকে খেলার নিয়ম শেখাতে গিয়ে কান মুলে দিচ্ছে। শতবর্ষ আগের গ্রীষ্ম দ্বিপ্রহরের সেই জোর যে একটি খেলা বৈ কিছুই ছিল না, তা এই বৃদ্ধ হৃদয় জানে, তুমি মানবে কিনা জানি না। ঠিক তেমনি আজকের এই জোরজারি শুধুই বালখিল্য, অভিনয় – এতে হৃদয়াবেগের লেশমাত্র দেখি না। এই পরিহাসের নাটক দিয়ে নারীসত্তার কূল মাপতে গেলে ভারি ভুল হয়ে যাবে যে! চঞ্চল অনুব্রত কোল থেকে বেরুবার পথ শিগ্গির খুঁজে নেবে, এ বিশ্বাস তার উপর আমার আছে। কঠিন কাজটি কী জানো দিদি? রাখতে পারা। রূপের জালে, গুণের জালে যে ওঠে, সে কি অত সহজে নামে? প্রকৃতির এই নিয়ম আমি বিজ্ঞান আর আধুনিকোতর ধুয়ো তুলে পায়ে ঠেলতে পারি নে যে, বিঃনাঃ, সে তুমি আমাকে যতই ব্যান করাও।
নিদারুণ-সিঃ অমলের আছে চারু, গোপালের আছে নাড়ু
অতীনের আছে এলা, দাদু তবু একেলা
ফেসবুক করে যায়, খলি মনে পড়ে যায়
বৌঠান সনে সেই সুমধুর খেলা।
বিবাদী নারীঃ একি! কিন্তু আপনার পলিসি ছিল যে রূপে ভোলানো যাবে না। আর আমি আপনার দিদি নই। ফেসবুক ভামদের এই এক অখাদ্য স্টাইল হয়েছে। আরবিট মেয়েকে দিদি বলে খোকা সাজার চেষ্টা।
সুদিন দেঃ msg. urgent
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ এখানেই বল না বাপু।
সুদিন দেঃ আরে আপনি ফেবুকে বসে। ওদিকে আমাদের পুরো টিম আপনাকে খুঁজে হয়রান। এক্ষুনি এ-পক্ষ-ও-পক্ষ-তে আসুন। সুদীপ্ত সেন নিয়ে বাইট দেবেন চলুন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ উফ জ্বালালে। এখান থেকেই দিচ্ছি নাহয়।
সুদিন দেঃ না না, বাণীতে চলবে না, একটু পরশ লাগবে যে গুরু।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ লাভ করবার স্বাভাবিক অধিকার আছে বলেই লোভ করা স্বাভাবিক। কোনো কারণেই কিছু থেকে বঞ্চিত হব, প্রকৃতির মধ্যে এমন বাণী নেই। মনের দিক থেকে যেটা চাচ্ছে বাইরের দিক থেকে সেটা পেতেই হবে, প্রকৃতিতে ভিতরে বাইরে এই রফাটাই সত্য। এই সত্যকে যে শিক্ষা মানতে দেয় না তাকেই আমরা বলি নীতি, এইজন্যেই নীতিকে আজ পর্যন্ত কিছুতেই মানুষ মেনে উঠতে পারছে না।
সুদিন দেঃ এটা তো কেমন ধরি-মাছ-না-ছুঁই-পানি হয়ে গেল। দেখুন মানুষ যে সকাতরে কাঁদছে গুরুদেব। এই যে নৈরাজ্য, এই অত্যাচার, ছাত্রের অকালমৃত্যু, আর আপনার কলম নীরব। যেখানে কবীর সুমন অব্দি …
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ কণ্ঠ আমার ...
সুদিন দেঃ আরে ধুর, নতুন কিছু, টাটকা। বুঝছেন না কেন, আমরা ফ্রেশ সার্ভ করি। সবার আগে সবার কাছে। দিদিকে টাইট দিয়ে কিছু বলুন, নাহয় আমাদেরকেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ দিদির শাসন ভাঙবে তুমি এমন শক্তিমান, তুমি কি এমনি শক্তিমান,
বাঙালি ওঠে বসে তোমার কথায় এমন অভিমান তোমাদের এমনি..
রগচটা আঁতেলঃ আরে ছাড়ুন তো! রাজার সাথে দাদুর একটা আলাদা কেমিস্ট্রি আছে। সে যেই রাজা হোক, ইংরেজ, সিপিএম বা মমতা।
রেডদাঃ দাদু একটা কথা বলি? বুর্জোয়া কবি বলার জন্য সরি। সামনাসামনি বলে কি যে ভাল লাগছে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ আরে না না, এসব আবার কি কিন্তু আমি আসলে ফিউডাল না? তোমরা প্রোমোশান দিয়ে দিলে যে বড়
সুদিন দেঃ আচ্ছা ফাইনালি। এক কথায়। ছাত্র রাজনীতির পক্ষে না বিপক্ষে?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ ব্যক্তিগত জীবনে এ সংশয় আসেনি। কলেজে পড়িনি তো। রাজনীতি অতীন এলা ভূপতি অমূল্য সন্দীপ সবাইকে দিয়েই তো করালাম। অমূল্যর আত্মত্যাগ সন্দীপের দোষে ছোট যে হয় না, এটুকু বুঝি। তোমরা রাজনীতিকে বিরক্তিকর বলে যতই তুচ্ছ করো সে তুচ্ছতা তোমাকেই পশ্চাতে টানিবে। আমরা হোঁচট খেয়ে দোষ দিই চৌকাঠকে, মাতাল হয়ে দোষ দিই তালগাছকে। সে আঘাতে তালগাছের কোনো ক্ষতি হয় না, নিজের ক্ষুদ্রতাই প্রকট হয় কেবল। আর ক্ষুদ্র মানুষ কী করে প্রেমে পড়বে বলতে পারো?
বিবাদী নারীঃ এখনকার প্রেম কীভাবে দেখেন?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ দেখব কী করে? আমি হলাম সেই আলো যা দিয়ে কণার অবস্থান মাপতে গেলে, কানাটিকে হারাতে হয়। হয়তো দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি বসে আছে, আমার আলখাল্লা আর দাড়ি দেখে হো হো করে হেসে ফেলল। যখন সুক্ষ্ম শরীরে কারুর গলায় গান বা কোটেশান হয়ে আসি, অন্য মানুষটি কেমন শ্রদ্ধায় আড়ষ্ট হয়ে যায়। বিবাহযোগ্যা মেয়েরা হবু শাশুড়ির সামনে যখন নিষ্ঠাভরে আমার গান গায়, তখন মনে হয় আমার সব প্রেমের গান ব্যর্থ হয়েছে।
বিবাদী নারীঃ দাদু কী বলছেন কী? বাংলা ছবিতে রোমান্স দেখেন নি! লোকে আপনার গান গেয়ে দিব্বি প্রেম করে বেড়াচ্ছে। আর সামনাসামনি বসতেই বা কেন হবে। অন্তহীন দেখেছেন?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ দেখেছি। অন্তর্জালে হৃদয়ে হৃদয়ে পরিচয় আধো-খানিই রয়ে যায়, পূর্ণতা পায় না।
বিবাদী নারীঃ তা আপনি যে এত্ত এত্ত চিঠি লিখতেন সেগুলো তাহলে সিকি পরিচয়। এখানে তো রিয়াল টাইম কেস চলছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ অন্তর্জাল সর্ব অর্থেই ছলনাময়ী। যেমন আপনি বলুন বিঃনাঃ দেবী আমাকে চিনলেন কতটুকু?
বিবাদী নারীঃ ইভেসিভ , ভেগ, যেমনটি আশা করেছিলাম। আপনি আর বদলালেন না। যাগ্গে শুতে যাই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ আমিও যাই, মানে ফেকটাকে আরেকবার লগ-ইন করাই।
বিবাদী নারীঃ আপনার ফেক আবার কোনটা?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ কেন? নিদারুণ চমস্কি?
বিবাদী নারীঃ নিদারুণ আপনি? ও তো আপনার গানের সব নিদারুণ প্যারডি করে।
নিদারুণ সিঃ এইটা নতুন করেছি, শুনে যান।
‘সখি বয়ে গেল রাতি, শুধু চ্যাটাচাটি সে কি আর ভাল লাগে।
কবে আর হবে থাকিতে জীবন, তোমাতে আমাতে ফুল কলিশন।
মায়াজগতের ছলনায় ভুলি কোরো নাকো সব মাতি, সখি
ফেবু অর্কুট যত গ্যাঁড়াকল
অচিরে হইবে বাসী,
(জিমেল ইমেল সব যাঁতাকল)
তখন পড়িবে গলায় গানেরো খেলায়
আমারি প্রেমেরো ফাঁসি, সখি ...
বুড়ো হাড়ে যেই করিব পোক,
খিকখিকি করে হাসিবে ত্রিলোক
ভুলে যাব যত ব্লকিঙেরো শোক
বলে দিব ভলোবাসি, সখি
স্মাইলি বাজিবে সুরেলা রিয়াল,
সে নুপুরে ফাটিবে ছাতি,
(..)
নাহি আছে সেথা স্প্যামেরো প্রলয়
নেট-বিভ্রাটে ভাঙ্গে না হৃদয়,
খামোখা জটিল হবে নাকো প্রিয়ে
ইকুয়েশানটি পাতি।
সখি, বহে গেলো রাতি।।"
(৭৯৩ টি লাইক ও হুড়ুমতালে থ্রেডের সমাপ্তি)
লেখাটির সংক্ষিপ্ত রূপ প্রকাশিত হয়েছে ১২ই মে-র প্যাঁচা৯তে। পূর্ণাঙ্গ রূপটি এখানে দেওয়া হল।