গত পর্বে লিখেছিলাম যে আবেল টাসমান নিউ জিল্যাণ্ড না দেখেই এবং এদেশে পা না রেখেই এখান থেকে বিদায় নিলেন। এর পর আরো ১২৬ বছর নিউজিল্যাণ্ডে আর ইউরোপীয়দের পা পড়েনি। মাওরীরাও কোথাও আর নতুন করে পাড়ি দেননি। ১৭৬৯ সালে ক্যাপটেন জেমস কুকের জাহাজ এনডেভার নোঙর ফেলল। তবে এবার ইংরেজের সঙ্গে মাওরীদের সাক্ষাৎ অনেক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে হয়েছিল তার একটা কারণ, ক্যাপটেন কুক তাঁর জাহাজে বটানিস্ট জোসেফ ব্যাঙ্কসের পরামর্শে তাহিতি থেকে টুপাইয়া নামের এক দক্ষ নাবিক এবং পথপ্রদর্শককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। মাওরীদের সাংস্কৃতিক ব্যাপারটা অনেকটা আমাদের বাঙালীদের মতন, চেনাজানা কাউকে পেয়েছেন, কাজেই টাসমানের বেলা যেমন আক্রমণ হয়েছিল, কুকের প্রাথমিক অভ্যর্থনা যুদ্ধবিগ্রহের মধ্যে হয়নি। এবং টুপাইয়া’র সূত্রে মাওরীরা তাঁদের ফেলে আসা পূর্ব পলিনেশিয় অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সূত্র স্থাপিত হল। টুপাইয়ার এবং ক্যাপটেন কুকের সম্পর্ক এবং অভিযান নিয়ে প্রচুর লেখালিখি হয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যাণ্ড নামে দেশটিতে ক্রমাগত মানুষের আবাহন হয়েছে, এবং পৃথিবীতে মানুষের কলোনী তৈরি ও বসবাসের সব চেয়ে নবীন দেশ যদি কোন দেশকে চিহ্নিত করতে হয়, তাহলে সেই দেশ অবশ্যই নিউজিল্যাণ্ড। সব গল্প হয়নি।
মানুষ এই দেশটিতে নানান কারণে এসেছে। মাওরীদের লোককথা পড়ে মনে হয় যে তাঁরা হয়ত আকস্মিক দেশটিকে আবিষ্কার করেন, এবং তারপর এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন, কারণ একবার আসার পর চারপাশে সমুদ্রে ঘেরা দেশটি থেকে পুনরায় পুরনো দেশে ফেরৎ যাওয়া হয় সম্ভব হয়ে ওঠেনি, না হলে হয়ত ফেরৎ যাবেন না বলেই আর ফেরৎ যান নি। তার কী কারণ, এর সম্যক কোন পরিচয় বা গবেষণা পাওয়া যায়নি। এখন আর সেটি সম্ভবও নয়। ইউরোপীয়রা এসেছিলেন আবিষ্কারের কারণে, হয়ত নতুন কলোনী স্থাপনের উদ্দেশ্যে। তাঁদের সে অভিপ্রায় সার্থক হয়েছে। আজকাল আবার উষ্ণায়নের প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের জল বেড়ে দ্বীপপুঞ্জগুলোর অনেকে জায়গাই, বিশেষ করে তটের কাছে সমুদ্রের গ্রাসে ডুবতে বসেছে, সেই সব জায়গা থেকে বহু মানুষ স্রেফ পরিবেশের সংকটে ত্র্যস্ত হয়ে নিউজিল্যাণ্ডে চলে আসছেন। এঁরাই পরিবেশ-উদ্বাস্তু হয়ে, এঁদের একদল ২০১৮ এ পৃথিবীর প্রথম পরিবেশ রিফিউজির দল ভানুয়াতু থেকে নিউজিল্যাণ্ডে প্রবেশ করেন। এঁরা অভিযাত্রী নন, বেঁচে থাকার দায়ে এখানে এসেছেন। এঁদের গল্প কেউ লেখে না।
এই রকম আরো অনেক মানুষের গল্প অকথিত রয়ে যায়, কখনো সখনো গবেষকদের স্বল্পপঠিত গবেষণায় বা ওই ধরণের লেখায় পড়ে থাকে, শেষ অবধি জানা হয় না, যদিও সেই সব কাহিনিও খুবই আকর্ষণীয়, সেখান থেকেও মানুষের যাতায়াত, দেশ দেখার অভিজ্ঞতার বিস্তর রসদ মেলে। যেমন ক্যাপটেন কুকের অভিযান বা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ইউরোপীয় অভিযানের গল্প অন্য অনেকে বলেছেন, তাঁরা টে আনুর, ব্রায়ান বোরুর আর মরগ্যান ম্যাকমারেদের গল্প বিশেষ বলেন নি। সেই সব গল্পে যাবার আগে একটা নিতান্ত ব্যক্তিগত কথা ও কাহিনি শোনাই। মাওরীদের নিউজিল্যাণ্ডে আগমন এবং বসবাসের কাহিনি, বা ইংরেজ ও ইউরোপীয়দের নিউজিল্যাণ্ডে আসা এবং কলোনী গড়ে তোলার কাহিনি জানা থাকলেও এইরকম একটি “ভ্রমণকাহিনি”তে লেখার একটি উদ্দেশ্য আছে আপনি যখন একটি দেশে বেড়াতে হোক, বা কাজের সূত্রে আসেন, তখন আপনার সঙ্গে সেই দেশের সাধারণ মানুষের একটি যোগসূত্র স্থাপিত হয়। এই যোগসূত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে মানুষের কৌতূহল কাজ করে। স্বভাবতই অনেকে প্রশ্ন করেন, আর কে কে, যাদের আমরা নিজেদের লোক বা নিজেদের দেশের লোক বলে মনে করি, তেমন কেউ আছেন কি না।
নিউজিল্যাণ্ডে বসবাস শুরু করার পর যখন কলকাতায় আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম, তখন তাঁরা সম্ভবত কৌতূহলের বশে জিজ্ঞাসা করতেন নিউজিল্যাণ্ডে আমরা আর ক’জন বাঙালীর দেখা পেয়েছি, দূর্গাপুজো হয় কি না, মাছ পাওয়া যায় কি না, ইত্যাদি নানা রকমের ব্যাপার জানতে চাইতেন। আজকাল বিশ্বায়নের আমল, যদিও নিউজিল্যাণ্ড অতি অল্প মানুষের বসবাসের দেশ, তাহলেও বহু শতাব্দী জুড়ে অনেক বাঙালি পরিবারের বসবাস। এখানে একটা ব্যাপার বলার যে, বাংলা, বিশেষ করে কলকাতার বা বাংলার বন্দরের বসবাসকারী বাঙালীদের সঙ্গে নিউজিল্যাণ্ডের একটি আদি অকৃত্রিম যোগাযোগ রয়েছে। এই ব্যাপারটা ভারতের অন্য প্রদেশের মানুষদের সঙ্গে, বিশেষত পাঞ্জাবী, গুজরাটি, বা দক্ষিণ ভারতের, এমনকদি তট/বন্দর এলাকার মানুষদের সঙ্গে দেখা যায় নি। তার অবশ্য কয়েকটি কারণ আছে। ক্যাপটেন কুকের নোঙর ফেলার আর ইংরেজ রাজত্ব বা বাণিজ্য বিস্তারের বছর পঞ্চাশ-ষাটের মধ্যে মনে করা হয় বাঙালী নাবিকরা সম্ভবত হাজির হয়েছে ও রীতিমতন ১৮২৬ সালে বেঙ্গল হুরকারু জানাচ্ছে যে দু’জন মাওরী কলকাতা আর ব্যারাকপুরের লাটসাহেবের বাড়ি ঘুরে গেছে পুজোর সময়ে। সচরাচর এই পুরনো আমলে যাঁরা ভারত থেকে নিউজিল্যাণ্ডে এসেছিলেন, তাঁদের দেখা পাবেন না, কিন্তু তাঁদের জীবনের গল্প অতি বিচিত্র এবং নিউজিল্যাণ্ডে যদি ঘোরাঘুরি করেন, বিভিন্ন স্থাননাম থেকে বুঝতে পারবেন ভারতের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
বছর দশেক আগে ক্রাইস্টচার্চে থাকাকালীন কমলা দেবী (নাম পরিবর্তিত) নামে এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, তিনি তখন একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করতেন। কথাপ্রসঙ্গে তিনি জানালেন যে তাঁর পূর্বপুরুষ উনবিংশ শতকের শেষের দিকে বর্ধমান জেলার কোন একটি গ্রাম থেকে ইংরেজ জাহাজে নিউজিল্যাণ্ডে এসেছিলেন। তখন শুনে মনে হয়েছিল এঁরাই বুঝি খুব সম্ভবত প্রথম দিকের ভারতীয় অভিবাসী, তবে এই মানুষদের সম্বন্ধে খুব কম জানা যায়। যে সময়ে ইনি এনার পূর্বপুরুষদের আসার কথা বলছেন, সেই সময়টিতে বাংলা বিহার পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন গাঁ-গঞ্জ থেকে বহু মানুষকে “ধরে” নতুন দেশে ভালো করে বাঁচার লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হত। অমিতাভ ঘোষ মশাই তাঁর “আইবিস ট্রিলজি” তে এঁদের নিয়ে লিখেছিলেন, যদিও সেই সব গল্পে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের কথা ছিল না। যাই হোক, এইসব কলোনীতে আসার পরে কিন্তু তাঁদের জীবন বড় কঠিন; এঁদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে , বিশেষ করে ফিজিতে আখের ক্ষেতে কুলির কাজ করতেন। কালক্রমে এঁরা কয়েক শতাব্দী ধরে রয়ে গেলেন, স্থানীয় অধিবাসী হলেন। শুধু তাই নয়, ফিজিতে যেমন, যখন সে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই ভারতীয়-ফিজিয়ানদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অথচ দেখুন, যখন নিউজিল্যাণ্ড বা অন্যান্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে কারা প্রশান্ত মহাসাগর দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসী বলে চিহ্নিত করা হয়, তখন এই মানুষগুলোকে সেই হিসেবে আর ধরা হয় না। আবার অন্য দিকে এঁরাও ভারতীয় মহাদেশ থেকে অন্যান্য আগত মানুষদের গিরমিটিয়া নাম দিয়ে আত্মীয়তা স্থাপন করে ফেলেন। যার জন্য নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের মানুষেরা মিলে বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতির একটি মিশ্র এবং অনন্য সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। তবে না খুঁজলে এঁদের দেখা পাওয়া ভার। কমলা দেবীর গল্পে ফিরি। ভদ্রমহিলার পূর্বপুরুষ বর্ধমান থেকে নিউজিল্যাণ্ডে এসেছিলেন, এবং যথাসম্ভব নিজেদের দেশীয় “সংস্কৃতি” ধরে রাখবার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি নিজে বাংলা ভাষা জানতেন না বটে, তবে বর্ধমান জেলার গ্রামগঞ্জ নিয়ে তাঁর অদম্য কৌতূহল। সেদিন বলেছিলেন কলকাতায় যাবেন, এবং আরো কয়েক বছর পরে বললেন যে কলকাতা শহর ঘুরে গেছেন এবং শহরটি দেখে তিনি আপ্লুত।
সময়সারণী বেয়ে আরেকটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। সাল ১৮১০, কলকাতা থেকে সিটি অব এডিনবরা নামে একটি জাহাজ পাড়ি দিল নিউজিল্যাণ্ডের উদ্দেশ্যে এবং বে অফ আইল্যাণ্ডে নোঙর ফেলল। যাত্রী তালিকায় নাম পাবেন না, এমনকি জাহাজের ইংরেজ আর অন্যান্য ইউরোপীয় নাবিকদের তালিকাতেও তাকে খুঁজে পাবেন না, সে এক লশকর। উনবিংশ শতকের সে কালে লশকরদের জাহাজে, বিশেষ করে দক্ষিণ গোলার্ধের মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার জাহাজে বিশেষ খাতির। তাদের নাম-ধাম জানা নেই, শুধু জানা আছে তার সাকিন খুব সম্ভবত বাংলার কোথাও। সে জাহাজ নোঙর করা মাত্র উধাও হয়ে গেল। সেই অঞ্চলে তখন কোরোকোরো নামে মাওরীদের দলের নেতার (রাঙাটিরা) মস্ত প্রভাব, তিনি সেই যুবককে তাঁদের কাছে (নঙাপুহি) আশ্রয় দিলেন। টোনি ব্যালানটাইন তাঁর Webs of Empire বইতে লিখছেন, ১৮১৪ সালে জন লিডিয়ার্ড নিকোলাস, যিনি পথিকৃৎ স্যামুয়েল মারসডেনের সঙ্গে অ্যাকটিভ নামের জাহাজে বে অফ প্লেনটি বলে জায়গাটিতে মিশনারিদের সঙ্গে গিয়েছিলেন, সেখানে এই যুবকটির সাক্ষাৎ পান। সে ততদিনে দিব্যি মাওরীদের সঙ্গে মিশে ভাল রয়েছে, বিয়েও হয়েছে তার। নিকোলাস নাকি জিজ্ঞাসা করেছিলেন ফার্নের কন্দমূল মুখে রুচছে কিনা, তার উত্তরে সে জানায় দিব্য আছে। এঁর নাম আর নিকোলাস লিখে যাননি, তবে টে আনুর গল্পটা করতেই হয়। (সে অবিশ্যি আনু না অনু, আমি ঠিক জানি না )।
টে রেও (মানে মাওরীদের ভাষা) তে “টে” কথার ব্যঞ্জনা “The”। আমরা হয়ত “শ্রী” বলতে পারি, সেই সূত্রে “টে আনু” কে শ্রী আনু বলা যেতে পারে, এ নামের আক্ষরিক অর্থ হল শ্রী শীতল। এও ১৮১৪ সালের গল্প, এখানেও ইংরেজ জাহাজে এসে জাহাজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার গল্প এবং মাওরীদের সঙ্গে মিশে তাঁদের আতিথেয়তায় তাঁদেরকে আপন করে থেকে যাওয়ার কাহিনি। মাতিলদা নামের একটি ব্রিটিশ জাহাজে করে অনু (?) নামের এক লশকর দক্ষিণ দ্বীপের ওটাগো অঞ্চলে কোন একটি বন্দরে অবতরণ করেন, এবং তারপর উধাও হয়ে যান। সেই অঞ্চলে তখন কাই টাহু ফানুই বা জাতির রাজত্ব বা দাপট (“মানা” টে রেও ভাষায়), তাঁরা মানুষটিকে আপন করে নিলেন এবং তাঁর নতুন নাম হল টে আনু। এর বাইরে তাঁর আসল নামধাম কি ছিল, কিছুই জানা যায় না। এনার গল্প আমরা জানছি Herries Beattie’র লেখায়। হেরিস আবার শুনেছিলেন টামে পরাটা নামে এক কাই টাহু মুরুব্বীর কাছে। পরাটাই তাঁকে বলেছিলন যে টে আনু হচ্ছেন একজন “টাকাটা-পোরা” (পোরা মানে জাহাজ, “জাহাজ ভাই”?), এবং তিনি জন্মসূত্রে কলকাতা অঞ্চলের লশকর। এই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা টে আনু কে বাঙালী বলে ধরে নিতে পারি। টে আনু মাওরীদের মাঝে মিশে যাবার পর উল্কি আঁকিয়ে পাক্কা মাওরী জীবন যাপন শুরু করলেন, মাওরী নারীকে বিবাহ করলেন এবং তাঁদের জর্জ টুরি নামে একটি পুত্রসন্তানও হয়েছিল। জর্জ টুরির আর সন্তান সন্ততি হয় নি। টে আনু কথার মানে শ্রী শীতল।
টে আনু নামটি তাঁকে কাই টাহু সম্প্রদায়ের মাওরীদের দেওয়া কারণ ব্রিটিশ জাহাজের রেকর্ডে আমি যতদূর দেখেছি এই নাম পাওয়া যায় না। উনবিংশ শতকের এই সময়টিতে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যাণ্ডে ব্রিটিশ জাহাজের আনাগোনা অনেকটা বেড়ে যায় তার একটা বড় কারণ, আমেরিকার কলোনী ব্রিটিশের হাতছাড়া হবার পর, ভারতে কলোনী বিস্তার এবং ভারত/চীন থেকে জিনিসপত্র ( বিশেষ করে বাংলা থেকে উৎকৃষ্ট রাম আর চীন থেকে চা এ অঞ্চলের তিমি শিকারী আর সিল শিকারীদের ভারি প্রিয় ছিল), অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যাণ্ডের নতুন কলোনীতে বেচার সুযোগ। তাছাড়া এ অঞ্চল থেকে সীলের চামড়া আর তেল নিয়ে চীন বা ইউরোপে চমৎকার ব্যবসা বাণিজ্য করার সুযোগ ছিল।
টে আনু একজন লশকর, তাঁকে কোন এক জাহাজের সারেং ব্রিটিশ জাহাজে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলেন।এইরকম আরো ১৭ জন লশকরের সঙ্গে টে আনু মাটিলডা নামে ব্রিটিশ জাহাজে সিডনি থেকে সীলের চামড়া বোঝাই জাহাজে প্রথমে নিউজিল্যাণ্ডে আসেন। কিন্তু সে জীবন কি সহ্য হয়? টে আনুর সঙ্গে ছ’জনে মিলে জাহাজ থেকে পালালেন। মাটিলডা জাহাজের কাপ্তেন স্যাম ব্রাউন সাহবে লোক পাঠালেন এই ছ’জনকে ধরে নিয়ে আসতে, কিন্তু তাঁরাও এঁদের ধরতে পারলেন না। যাই হোক, এই পলাতক লশকরেরা কাই টাহুর দলের হাতে পড়লেন। তিন জনকে পাকড়াও করে বন্দী করে কাই টাহুর দল কেটেকুটে খেয়ে ফেলল, টে আনু আর দু’জন বেঁচে গেলেন। বাকি দু’জনের যে কি হল আর কেউ জানেনা। শুধু টে আনুর খবর পাওয়া গেল। এই যে টে আনু কে কাই টাহু বুকে টেনে নিলেন, এবং এদের কাছে এতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠলেন, এটি কিন্তু কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কারণ কাই টাহু সম্প্রদায় বরাবরই অন্যান্য মাওরী সম্প্রদায়ের তুলনায় অ-মাওরীদের (পড়ুন ইউরোপীয়দের যাদের চলতি নাম “পাকিহা”) নিজেদের মধ্যে আত্তীকৃত করে নিয়েছে। কাই টাহু নিশ্চিত কোনভাবে নিজেকে এঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন। নিউজিল্যাণ্ডের ব্লাফ অঞ্চলে গেলে দেখবেন টে রাউ আরোহা নামে একটি মারায়ে রয়েছে (মারায়ে হল মাওরীদের মিলনস্থল, সভাগৃহ), সেখানে এঁদের এই বিজাতীয় মানুষগুলোর মূর্তি খোদাই করা রয়েছে। এখন হয়ত টে আনুর মূর্তি পাবেন না, কিন্তু এই বিচিত্র মাওরীভূমিতে এক অজানা অচেনা ভারতীয়ের জীবনকাহিনি আমাকে বেশ অবাক করে দিয়েছিল।
এ তো শুধু একদিকের গল্প বললাম। অন্যদিকে নিউজিল্যাণ্ডের মানুষ, এমনকি সেযুগে মাওরীরাও ভারতে এসেছিল। এবং নিউজিল্যাণ্ড স্থাননামে ভারতের প্রভাব রয়েছে। সে গল্প এর পর।
ভালো লাগেনি। একটু এলোমেলো মনে হল
লেখার পরে পড়ার সময় আমারও এলোমেলো খাপছাড়া লাগছিল।
এই সপ্তাহটায় মন মেজাজ বিক্ষিপ্তে ছিল , ভাল লাগছিল না।
লেখাটায় তার প্রভাব পড়েছে।
পড়ার জন্য এবং কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ , a ।
আমি গোটা লেখাটা নিয়ে বলছি।
আমার ধারণা অধিকাংশ বাঙালিই নিউজিল্যান্ডের ব্যাপারে ঠিক আমারই মত।; মানে ক্রিকেট , মাওরি এবং কিউয়ি এই তিনটে শব্দ ছাড়া বিশেষ কিছু জানে না । এটা অবশ্যই লজ্জার কথা।
এই লেখা শেষ হলে যদি বই হয় , বিশেষ করে হার্ডকভার এবং অরিনের তোলা ছবিগুলোর ভাল প্রিন্ট সমেত,, তাহলে একটা কাজের কাজ হবে।
অরিনসাহেব - এটার পুনর্লিখন হোক
পুনর্নিমাণ বলা উচিত
রঞ্জনবাবু, আপনি একেবারে ঠিক, আমি নিজেই নিউজিল্যান্ডে এই দেশের অনেক কিছুই জানতাম না । তার পরে এসে একটা বড় শহরে থেকে জানা এক রকম, একটা অপেক্ষাকৃত ছোট জায়গায় থেকে দেশটাকে চেনার আরেক রকম অভিজ্ঞতা । জানিনা এই অনুভূতিটার কতটুকু লেখা যাচ্ছে ।
@অনুরোধ, এটাকে আরেকবার লেখার ইচ্ছে আছে । পুনর্লিখন আপনি যেরকম লিখলেন । তবে বাকি কথাগুলো শেষ হোক ।
অরিন , এটা এক্কেবারে ঠিক। আজকের দিনে আম্রিগা হোক বা অস্ট্রেলিয়া -নিউ জিলান্ড - মনে হয় বড়ো শহরে থেকে সেই দেশকে এভাবে জানা টা একটু কঠিন। বড়ো শহরগুলো সবই বড়ো কসমোপলিটান। এক যদি না নিজের এসব নিয়ে সেরকম পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকে আর সেরকম ভাবে লোকাল লোকের সাথে মেশা যায়।
লোকাল লোকেরা কতটা মেনস্ট্রিমে মিশে আছে সেটাও একটা ফ্যাক্টর মনে হয়। আমার নিজের যে সামান্য অভিজ্ঞতা এখানে ,অস্ট্রেলিয়ার আবরিজিনালস দের ইন্টিগ্রেশন এখনো অবধি বেশ কম, যাদেরকে আমি চিনি চাকরিসূত্রে , তারা সকলেই পুরোপুরি ওয়েস্টার্নজেড। নিজেদের কালচারের সাথে যোগাযোগ খুবই কম। আমি দুএকবার জিগিয়ে দেখেছি আলোচনা করতে সেরকম পছন্দ ও করেননা। আর যারা রিমোট রিজিওন গুলোতে থাকেন নিজেদের কমিউনিটিতে দল বেঁধে, সেসব জায়গায় বাইরের লোকের সরাসরি যাওয়াটাও একটু মুশকিলের। অনেক জায়গাতেই আলাদা পারমিশন নিতে হয় কেন যেতে চাইছে এক্সপ্লেন করে।
হয়তো ইন্ডিয়াতে রিমোট জায়গা যেমন আন্দামান -এসব জায়গারও একই কাহিনী।
বেশ নতুন একটা ব্যাপার জানলাম nz এর বাঙালির সম্মন্ধে।