এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ভ্রমণ  শনিবারবেলা

  • দখিন হাওয়ার দেশ - ৬

    অরিন বসু
    ধারাবাহিক | ভ্রমণ | ২৪ অক্টোবর ২০২০ | ২৯৭৩ বার পঠিত
  • হারিয়ে যাওয়া মানুষ, এডওয়ার্ড পিটারসের গল্প


    মাউই আর তার সন্তানসন্ততিদের নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমার মনে হয়, যারাই সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নিউজিল্যান্ডে এসেছে এবং দেশটাকে আপন করে থেকে গেছে, তারা সবাই মাউই-এর সন্তানসন্ততি।

    তা বটে। তবে সবাই এদের মনে রাখেনি, মনে রাখে না। মাউই-এর মা-ই কি মাউইকে মনে রেখেছিলেন?

    কিছু মানুষ, চরিত্র, সময়ের মতো দেশও কখনো-কখনো আমাদের মন, আমাদের চেতনা থেকে হারিয়ে যায়—নানা কারণে। কখনও তাদের জানি না বলে, চিনি না বলে, কখনও তাদের দেখেও দেখি না। এই দেখুন না, আমাদের মধ্যে মহাপণ্ডিত যাঁরা, তাঁরাই ভাবেন না, মনে রাখেন না, তো অন্যে পরে কা কথা। আমাদের মনে, আমাদের লেখায়, সাহিত্যে তাদের উল্লেখ দূরের কথা, তাদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনি না। আওতেরোয়া-নিউজিল্যান্ড মনে হয় এমন একটি দেশ, অন্তত ভারতীয় ও বাঙালিদের কাছে। সেদেশে পা রেখে আমি সেইসব কয়েকজন মানুষের কথা জেনেছি, আজকে এই লেখায় সেইসব প্রায় স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া মানুষ আর দেশ নিয়ে দু-কথালিখি। নিউজিল্যান্ড নিয়ে লিখতে গেলে এই মানুষগুলোকে স্মরণ না করলে অবিচার হবে। নিউজিল্যান্ড নিয়ে পড়ছেন যখন, তখন আসুন দুদণ্ড এইসব মানহারা, দেশত্যাগী, হারিয়ে-যাওয়া মানুষগুলোর কাছে দাঁড়াই।

    নিউজিল্যান্ডে ভারতীয়রা, বিশেষ করে বাঙালিরা নিয়ম করে ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিক থেকে ধারাবাহিক ভাবে এসেছেন, কিন্তু এনাদের আমরা চিনি না। এদের নিয়ে কেউ কখনও বাংলায় অন্তত লেখার কথা ভাবেননি। যেমন ধরুন, ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিক থেকে পূর্বভারতের বহু মানুষ ইংরেজের হাত ধরে, আড়কাঠির পাল্লায় পড়ে হোক, লস্কর-রা, সমুদ্র পাড়ি দেবার দক্ষতার কারণে হোক, দক্ষিণ সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁদের কারও জীবন কেটেছে ফিজিতে, কারও অস্ট্রেলিয়ায়, কারও নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রঘেরা রুক্ষ্ম-সবুজ দ্বীপভূমিতে কেটেছে জঙ্গল সাফ করে বসতি স্থাপন করার কাজে, কারও কয়লাখনিতে, কারও মেষপালনে, কারও সাহেবের অভিযানে শামিল হয়ে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাওরিদের মধ্যে মিশে গেছেন, কেউ কেউ পৌঁছেছেন প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য দ্বীপভূমিতে, ফিজি যেমন, সেখানে আখের খেতে, চিনির কলে ক্রীতদাসের জীবন কাটিয়েছেন, পরে মুক্ত হয়ে ফিজির ভূমিপুত্রদের সঙ্গে মিশে নতুন দেশ গড়েছেন, ইংরেজের কলোনির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এঁরা ছিলেন, এনাদের উত্তরসূরিরা আছেন। কিন্তু আমরা কি ভাবি এনাদের কথা? চিনি? জানি? আমাদের যাঁরা মনীষী, লেখক, বিদ্বান মানুষ, যাঁদের লেখার সূত্রে আমরা জগতের অনেকটা জানি, তাঁরা এনাদের কথা বলেন আমাদের? নাকি সযত্নে এড়িয়ে যান? নাকি তাঁরাও জানেনই না?

    যেমন রবীন্দ্রনাথ আমাদের বিশ্বকবি শুধু নন, এই মহামনীষীর লেখার সূত্রে আমরা অনেকেই জগৎ চিনেছি। অথচ কী আশ্চর্য, রবীন্দ্রনাথ পড়লে আপনার কখনও মনেই হবে না নিউজিল্যান্ড বলে কোনো কহতব্য দেশ আছে, বা সেদেশে ইংরেজ বাদে আর কেউ থাকে, বা আর কোনো পুরোনো সভ্যতা ছিল যার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলি ঘাঁটলে নিউজিল্যান্ডের মাত্র একটি উল্লেখ পাবেন ইংরেজের কলোনি প্রতিষ্ঠার সূত্রে একটি প্রবন্ধে। অথচ দেখুন, রবীন্দ্রনাথের সময়, তাঁর বাল্যকালে বহু ভারতীয় তথা বাঙালি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে পাড়ি জমিয়েছেন, নানা অবস্থায়। রবীন্দ্রনাথ কি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের কথা জানতেন না? রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক ক্যাথারিন ম্যানসফিল্ড (তখন ইংল্যান্ডে থাকতেন), নিউজিল্যান্ডে-জাত লেখিকা, রবীন্দ্রনাথ কি তাঁর কথা জানতেন না? নাকি মনে করার মতন কেউ নন বলে মনে করেননি? রবীন্দ্রনাথ বা তাঁর সমসাময়িক ভারতীয় বৈজ্ঞানিকরা বিলেতের রয়াল সোসাইটির অধ্যক্ষ নোবেলজয়ী কিউয়ি বৈজ্ঞানিক আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না? তাঁরা কি ভিয়েনা স্কুলের বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ দার্শনিক কার্ল পপারের নাম শোনেননি, নাকি জানতেন না যে পপারের পজিটিভ সমতত্ত্ব রচনার স্থান ক্রাইস্ট চার্চের ক্যানটারবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে? রবীন্দ্রনাথ বহু দেশ ঘুরেছেন, পৃথিবীর প্রায় কোনো মহাদেশ ভ্রমণ করতে বাকি রাখেননি, অথচ নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের মহাকবির পদধূলি পড়া বাদ দিন, সেখানকার মানুষজন, মাওরি, পাকিহা, ভারতীয় সম্প্রদায়, সৌন্দর্য, ইতিহাস নিয়ে আমাদের মনীষী, বিশ্বকবি একলাইনও লেখার অবকাশ পাননি।

    রবীন্দ্রনাথ হয়তো ফিজি পাপুয়া নিউগিনি নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী শ্রমিক ভারতীয়দের মর্মবেদনার কথা জানতেন না। না হলে যে রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকা কবিতায় সে মহাদেশের স্থানীয় মানুষের প্রতি পাশ্চাত্যের বর্বরতার নিন্দা করছেন, একই সময়ে নিউজিল্যান্ডে মাওরি-ইংরেজের একইরকম সংঘাত ঘটছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষদের প্রতিও প্রশান্ত মহাসাগরে বর্বরতা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় ফার্স্ট পিপলদের ওপর শ্বেতাঙ্গ সাহেব অত্যাচার করেছে, রবীন্দ্রনাথের কলম কিন্তু এই অত্যাচারিত মানুষগুলোর কথা উল্লেখ করেনি। খুব সম্ভবত তিনি মনে করতেন না যে সেসব দেশে ইংরেজ বাদে অন্য মানুষ থাকেন, তাঁরাও ইংরেজের আবির্ভাবের পূর্বে একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন। না হলে তিনি কি লিখতে পারতেন যে “য়ুরোপীয় সভ্যতা এক্ষণে বিপুলায়তন ধারণ করিয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। য়ুরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া—তিন মহাদেশ এই সভ্যতাকে বহন পোষণ করিতেছে।” (১) অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে কি শুধুই ইউরোপীয় সভ্যতা ছিল? বাংলার অন্যতম প্রধান মনীষী যদি এইভাবে ভাবেন, তাহলে আমরা কোথায় যাই?

    সে তো না হয় রবীন্দ্রনাথ। স্বাধীনতা-পরবর্তী যুগে দেখুন, ইউরোপ আমেরিকাকে নিয়ে বাংলায় যত লেখালিখি দেখতে পাবেন, তার কণামাত্র নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার জন্য বরাদ্দ হয়নি। অথচ, কলম্বো প্ল্যানের সূত্রে নিউজিল্যান্ড সরকার ভারতের দিল্লিতে এইমস-এর মতন আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরি করেছেন, ভারত-নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট খেলা হয়েছে নিয়ম করে, স্যার এডমন্ড হিলারি শুধু এভারেস্ট আরোহণ করেননি, বঙ্গোপসাগর থেকে গঙ্গোত্রী অভিযান করেছেন। এতৎসত্ত্বেও স্বাধীনতা-পরবর্তী যুগে মুজতবা আলী থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিদেশ নিয়ে লেখা বলতে গেলে এনাদের লেখায় দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড বেমালুম বাদ পড়ে গেছে। কে জানে, বোধহয় ভাবতেন অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের দেশগুলোয় মানুষ থাকে না, থাকলেও ওসব শুধুই শ্বেতাঙ্গদের দেশ। মাওরিদের সম্বন্ধে একলাইন লেখা দেখতে পাবেন না বাংলা ভাষায়। কেন? কলোনির উত্তরাধিকার? স্বাধীনতা-পরবর্তী যুগে ভারত থেকে যে সম্প্রদায় দলে দলে প্রায় অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডে এসেছিলেন, সেই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের নিয়ে পরবর্তী কোনো এক পর্বে লিখব। আপাতত থাক। আমরা কিনা দেশ দেখতে বেরিয়েছি।
    ধরুন নিউজিল্যান্ডে বেড়াতে এসেছেন ক-দিনের জন্য, ওটাগো প্রদেশে গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এমন সময় মধ্য ওটাগোয় গ্লেনোর নামে একটি জায়গায় এলেন। জায়গাটি ভারী মনোরম, সবুজ উপত্যকা, নদী, তাই গাড়ি থামালেন। ঘুরে ঘুরে দেখছেন,


    (পিটারসের স্মৃতিফলক, সূত্র: https://otagotaphophile.blogspot.com/2017/09/first-gold-in-otago.html?m=1)

    এমন সময় চোখে একটি সাইনবোর্ড পড়ল, দেখলেন লেখা আছে দেখলেন নদীর জলে নাকি সোনা পাওয়া যায়, এবং দেখলেন লেখা আছে এডওয়ার্ড পিটারসের নাম।

    ভারত থেকে আগত এই ইউরেশিয়ান ভদ্রলোক প্রথম এই অঞ্চলে নদীর জলে সোনা খুঁজে বার করেছিলেন, এবং তারপর এখানে স্বর্ণসন্ধানীদের ঢল নামে, রাতারাতি ওটাগো প্রদেশের জনসংখ্যায় বিস্ফোরণ ঘটে।

    ১৮৮৫ সালের পয়লা ডিসেম্বর, দ্য ব্রুস হেরাল্ড নামে একটি সংবাদপত্রে ভিনসেন্ট পাইক নামে এক ভদ্রলোক একটি চিঠি লেখেন, সেই চিঠিটিতে তিনি জানান যে
    “আমাদের মধ্যে এমন একজন আছেন, যিনি নিজেকে নিউজিল্যান্ডে স্বর্নখননের পিতৃত্বের দাবি রাখতে পারেন। তাঁর নাম এডওয়ার্ড পিটারস, বোম্বের নিবাসী, আমাদের এখানে পুরোনো বাসিন্দারা তাঁকে ‘কালো পিটার’ নামে চিনবেন। ওটাগোতে সোনা খুঁড়ে বার করে যে পয়সা করা সম্ভব, ইনি প্রথম দেখিয়েছিলেন; কিন্তু মানুষটা বিনয়ী, দরিদ্র, জানতেন না যে কী করে তাঁর আবিষ্কারের সূত্রে পয়সা করতে হয়। অতএব কয়েকজন বাদে তাঁর কথা কেউ মনে রাখেনি। যে সম্মান ও পুরস্কার তাঁর প্রাপ্য, তা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন, অন্যে সে পুরস্কার লাভ করেছে…

    কালো পিটার আজ পঙ্গু, বৃদ্ধ, অশক্ত, কোনোমতে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অতএব সুধীজনের কাছে আপিল করছি যেন আপনারা যাঁরা এঁর আবিষ্কারের সুযোগে ধনলাভ করেছেন, এগিয়ে এসে এই মানুষটির উপকারে অর্থ ব্যয় করুন।”

    এডওয়ার্ড পিটারের জন্ম হয়েছিল ১৮৩০ সনের কাছাকাছি কোনো সময়ে বোম্বেতে। ১৮৫২ সালে মাওরি নামের জাহাজে করে জাহাজের রাঁধুনি হয়ে এদেশে পোর্ট চামারসে এসেছিলেন এবং জাহাজ নোঙর করার পর উধাও হয়ে যান (এই ব্যাপারটা সেযুগে ভারতীয়দের মধ্যে খুবই প্রচলিত ব্যাপার, অনেকেই জাহাজ নোঙর করার পর জাহাজ থেকে পালিয়ে যেতেন)। ধরা পড়ে ছ-মাস জেল খেটে আরও দক্ষিণে বালক্লুথা অঞ্চলে চলে যান। সেঅঞ্চলে তখন জনমানব থাকতই না প্রায়। যারা থাকত তারা সব মেষপালক, তো সেখানে এডওয়ার্ড পিটারস মেষপালকদের মেষচারণের কাজ নিলেন। তবে এর আগে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকতেন, সেখান থেকে নদীর জল থেকে সোনা ছাঁচার কাজ কিছু শিখেছিলেন। তাই নদীর বালিতে সোনা খুঁজে বেড়াতেন। এরকম করে একদিন, ১৮৫৭ সালে সোনা সত্যি খুঁড়ে বার করলেন। সে সোনা বেচে কিছু পয়সাও হয়েছিল, সে খুবই সামান্য। এর বহু বছর পরে গেব্রিয়েল রিড আরও সোনা খনন করার কৃতিত্ব নেবেন, এবং ওটাগো অঞ্চলে নদীর জল ছেঁচে সোনা তোলার সূত্রে প্রভূত জনসমাগম হবে। এর মধ্যে এডওয়ার্ড পিটারস, যিনি সত্যিকারের সোনা আবিষ্কারের দাবি করতে পারতেন খুব সংগত ভাবেই, হারিয়ে যাবেন।

    পাইওনিয়ারগণ, এবং তাঁদের মৃত্যু, হারিয়ে যাওয়া, সব মিলিয়ে একটা যুগ, একটা সময়, একদল মানুষের গল্প উঠে আসে। এরা ভারতীয়, চৈনিক, সবাই অশ্বেতাঙ্গ, এদের কথা কেউ মনে রাখেনি। যেমন ধরুন ঊনবিংশ শতকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুর্ধর্ষ সব লস্করেরা, যারা ব্রিটিশ নাবিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্রিটিশ জাহাজে কলকাতা থেকে হংকং, সিঙ্গাপুর হয়ে নিউজিল্যান্ডের বে অফ আইল্যান্ডে পৌঁছে যেত। তারপর জাহাজ নোঙর করার পর জাহাজ থেকে উধাও। বে অফ আইল্যান্ডের মাওরিদের সঙ্গে থাকতে থাকতে সেখানেই তাদের জীবন কাটত। এদের কথাও কেউ জানত না। এরাও বাস্তবিক হারিয়ে যেতেন। কথিত আছে, এমন একজনের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন আদমসুমারি করতে যাওয়া এক সাহেব। সাহেব জানতে চাইলেন যে মাওরিদের সঙ্গে থাকতে থাকতে ফার্নের মূল খেয়ে মুখে রুচছে না আরও খাবারদাবার এনে দিতে হবে। লোকটি অকপটে জানিয়েছিল যে সে মাওরিদের মধ্যে সুখেই আছে, মিলেমিশে। আবার সবাই সেরকম নন। বহু ভারতীয়, প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত। যেমন, নিউজিল্যান্ডের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত গভর্নর জেনারেল স্যার আনন্দ সত্যানন্দের পূর্বপুরুষরা ভারত থেকে ফিজিতে আসেন, সেখান থেকে তাঁরা নিউজিল্যান্ডে। আনন্দ পরে নিউজিল্যান্ডের গভর্নর জেনারেল হন।

    মানুষগুলো আমাদের সামাজিক, চেতনায়, মননে অজানা, কেউ কেউ উপেক্ষিত। দেশটাও অনেকটাই অচেনা। তবুও সেখানে নানান জাতের মানুষের মেলবন্ধনে একটা আশ্চর্য নাছোড়বান্দা গোছের মানুষের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। কিউই মানুষজন সম্বন্ধে বলা হয়, তারা কোন্‌ কাজটায় তাদের সীমাবদ্ধতা, সেইটে জানে না। বাড়িতে বাড়িতে গ্যারেজের ঘরে ওয়ার্কশপ, সেখানে আট নম্বর তার (সেকথায় পরে আসছি এই সিরিজে), তাই দিয়ে সে যা চায় তাই করতে পারে। তাই তাদের মধ্যে থেকে এক-একজন এডমন্ড হিলারি, হ্যামিলটন (জেটবোট খ্যাত), মার্টিন জেটপ্যাক উঠে আসেন। বিচিত্র দেশ, বিচিত্র মানুষজন, খাওয়াদাওয়া, সরল কিন্তু অদ্ভুত সব জীবনকাহিনি।

    দক্ষিণ সমুদ্রের গহন থেকে উঠে আসা আশ্চর্য এক মায়াদ্বীপ আমাদের। সে গল্প চলবে।




    (১): প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা, জৈষ্ঠ ১৩০৮ বঙ্গাব্দে লেখা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৪ অক্টোবর ২০২০ | ২৯৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ramit Chatterjee | ২৪ অক্টোবর ২০২০ ০৯:১৮98838
  • পড়ে খুবই ভালো লাগল। কিন্তু শুধুশুধু রবীন্দ্রনাথ কে টেনে আনা কেন ? এ আপনার ভারী অন্যায়। সব দেশে কোথায় কে আছে উনি কি সব জেনে বসে আছেন। পাবলিক নলেজে যা ছিল উনিও তার বেশি জানতেন বলে আমার মনে হয় না। আগেকার কথা ছেড়ে দিন এখনো নিউজিল্যান্ডকে ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু ব্যাপারে অনেক বাঙালি চেনেই না। নিউজিল্যান্ডে রাগবি তো অনেক বড় খেলা, হকিও চলে ভালো এসব কজন খবর রাখে। এই মোয়ানা সিনেমাটা রিলিজের পর মাউরি , পলিনেশিয়ান মিথ গুলো সম্মনধে পাবলিকেের কিছু       হুুঁশ হয়েছে, চর্চায় এসেছে। 

  • অরিন | ২৪ অক্টোবর ২০২০ ১২:০২98854
  • রমিত, একদম ঠিক লিখেছেন, :-), রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে টানাটানির কোন দরকার ছিল না। আসলে এর সঙ্গে আমাদের একটা কল্পনার গল্প জড়িয়ে আছে। সেইটা লিখেই ফেলি। 


    আমাদের বাড়ি থেকে একটা পাহাড় দেখা যায়। আমরা সকালে কফি/চা খেতে খেতে দেখি আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করি, এইখানে যদি রবীন্দ্রনাথ থাকতেন, কি যে লিখতেন। তখন মনে হয়, ইস, তিনি তো আর এখানে পা রাখলেন না, :-(

  • Ranjan Roy | ২৪ অক্টোবর ২০২০ ১৫:০২98862
  • কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মত মহামনীষীদের লেখার জন্যেই আমাদের (অন্ততঃ আমার) মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল -- তাহল অস্ট্রেলিয়া হল ইংরেজদের মাসতুতো ভাই, ব্যস। আর  নিউজিল্যান্ড? অস্ট্রেলিয়ার খুড়তুতো ভাই। ফলে স্কুলে এডমন্ড হিলারি ছাড়া কোন নিউজিল্যান্ডবাসী বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের নাম শুনিনি। এর পরে এল ক্রিকেট।


     কালো পিটারস এর কথা ছেড়ে দিন , রাদারফোর্ড এবং কার্ল পপার যে নিউজিল্যান্ডের লোক তাও  এই প্রথম জানলাম। অথচ পপারের বৈজ্ঞানিক সত্যের  'ভুল প্রমাণিত হওয়ার আবশ্যিক শর্ত'  নিয়ে চায়ের দোকানে কত বাকতাল্লা মেরেছি!


    নিউজিল্যান্ড ভারতের মতই কমনওয়েলথের সদস্য দেশ। ওদের সম্বন্ধে যে কিছুই জানা নেই তার কারণ সম্ভবতঃ আমাদের মননে ছোট্ট একটি দেশ, অল্প জনসংখ্যা নিয়ে একটু নাক সিঁটকানো ভাব আছে, হয়ত অচেতন ভাবে।

  • অরিন | ২৫ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০৯98904
  • রঞ্জনবাবু, আপনি লিখেছেন, "রাদারফোর্ড এবং কার্ল পপার যে নিউজিল্যান্ডের লোক তাও  এই প্রথম জানলাম।"


    পড়ে দেখুন, উইকিপিডিয়াতে রাদারফোর্ড সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে প্রথমেই বলছে,


    তা, কার্ল পপার অবিশ্যি নিউজিল্যাণ্ডের স্থায়ী বাসিন্দা নন (জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান, সেই সূত্রে ভিয়েনার দর্শণের ইশকুল, :-) ), তিনি কয়েক বছর ক্যানটারবেরী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন, এবং "Open society and its enemies" বইটির চিন্তাভাবনার উৎস ক্যানটারবেরী বিশ্ববিদ্যালয়ে । 


    আমিও আপনার মতই মনে করি "ওদের সম্বন্ধে যে কিছুই জানা নেই তার কারণ সম্ভবতঃ আমাদের মননে ছোট্ট একটি দেশ, অল্প জনসংখ্যা নিয়ে একটু নাক সিঁটকানো ভাব আছে", তবে অচেতন ভাবে নয় (আপনি এক্ষেত্রে আপাদমস্তক ভদ্রলোক! মানতেই হবে), অত্যন্ত সচেতন ভাবে |  

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন